মনের গহীনে শুধুই তুমি পর্ব-১৩+১৪

0
1670

#মনের_গহীনে_শুধুই_তুমি
#পর্ব_13+14
#Mst_Meghla_Akter_Mim

মেঘ রোদের চোখের দিকে তাকিয়ে যেন কোনো ভিন্ন জগতে হারিয়ে যেতে লাগলো। ওদের দুজনের মাঝে এক সমুদ্র ভালো লাগা কাজ করছে। দুজন একে অপরকে মুগ্ধতায় বন্ধ করছে যেনো। এই মুগ্ধতা ভেঙ্গে হঠাৎ ই আবারো রোদের চোখে রাগ দেখা দিলো। রোদ মেঘ কে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দিলো। মেঘ অবাক হয়ে বললো,

-” আরে মশাই আপনি পাগল হয়ে গেছেন আমি নিশ্চিত। এভাবে কেউ ফেলে দেয়? আমার কত ব্যথা লাগলো।”

মেঘ কপালে হাত বুলিয়ে রোদ এর দিকে আসতে নিলো। রোদ তখনই মেঘ কে দেয়ালের সাথে জাপটে ধরলো আর মেঘের হাত খুব শক্ত করে ধরলো। মেঘ নিজের হাত ছারানোর চেষ্টা করেও পারল না। রোদ ওর দিকে শুধু তাকিয়ে ই আছে কোনো কথা বলছে না। মেঘ এইবার বিরক্তি নিয়ে বললো,

-” উফ ছাড়ুন না আমায়! কি হয়েছে টা কি আপনার বলবেন? একটাও কথা বলছেন না হা করে তাকিয়ে আছেন। ছাড়ুন বলছি…”

রোদ একবার চোখ বন্ধ করে রাগ সামলানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু এতে যেনো ওর রাগ আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। মেঘের হাত আরো শক্ত করে ধরলো। মেঘ ব্যথায় আহ্ করে উঠে কিছু বলতে নিবে তখনই রোদ বললো,

-” লাগছে তোমার তাইনা? আমার তাকিয়ে থাকা বিরক্ত লাগছে এখন। আমাকে এত কাছাকাছি দেখে গা ঘিনঘিন করছে বুঝি? তুই ঈশান কে জড়িয়ে ধরেছিলি কেন বল? আমাকে ভালো লাগে না? নিজের স্বামীর সামনে একটা ছেলেকে ছিঃ! ঘৃণা হচ্ছে আমার।দিহানকে ভালোবাস বল আবার আমারই ভাই কে জড়িয়ে ধর! আজ থেকে ওই দিহান আর ঈশান কে যেনো তোমার আশেপাশেও না দেখি বলে দিলাম। আর কলেজে আমার সাথে যাবে আবার আমি নিয়ে আসবো। তুই মাথায় ঢুকে নে সব কথা নাহলে….”

বলতে নিয়ে থেমে গেলো রোদ।

মেঘ রোদের দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছিল। আর অবাক এর চরম পর্যায়ে যাচ্ছিল কেনো রোদ এতো রাগ করছে। অবশেষে রোদের থেমে যাওয়ার পর মেঘ রোদের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

-” নাহলে কি বলুন? থেমে গেলেন কেনো?”

রোদ রাগী দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকালো কিন্তু মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে আর রাগ নিয়ে থাকতে পারল না। মেঘের থেকে সরে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো,

-“নাহলে তোমাকে এই ঘরে বন্দি করে রাখবো। আর তুমি ওই দিহানকে ভালবাস তাইনা?”

মেঘ দু পা রোদের দিকে এগিয়ে এসে শান্ত স্বরে বললো,”আমি কাউকে ভালোবাসলে আপনার কি রোদ?! আপনি তো আমায় নিজের স্ত্রী বলে মানেন ই না। তারচেয়ে বড় কথা আপনি তো অন্য একজন কে ভালবাসেন। তাহলে আমি কাকে কি বললাম বা করলাম তাতে আপ্নার কেনো খারাপ লাগে রোদ? এত রাগ হয় কেনো? আপনি কি জানেন যখন মানুষ কাউকে ভালোবাসে তখনই এমন হয়!”

রোদ এক দফা থমকে গেলো। কিন্তু মেঘ কে তা বুঝতে না দিয়ে আমতা আমতা করে বললো,

-” মানি না তো তোমায় আমি। কিন্তু সবাই তো জানে তুমি আমার স্ত্রী তাই এইসব বলেছি অন্য কিছু ভাবার দরকার নেই। আর আমি তোমাকে ভালবাসি না মাথায় রেখে দাও। আমি শুধু একজন কেই ভালোবাসি যে আমার পুরো হৃদয় জুড়ে আছে। কিন্তু…”

–“কিন্তু কি?”

রোদের চোখের কোণে খানিকটা পানি চলে এসেছে। রোদ কিছুনা বলে দ্রুত ঘর থেকে চলে গেলো। মেঘ রোদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে,

-” কিছু তো একটা আছেই আপনার জীবনে যা খুব কম মানুষ জানে। কিন্তু আজকের ব্যবহারে আমার যে বারবার মনে হচ্ছে আপনি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছেন।”
.
রোদ বাড়ি থেকে চলে গেলো। ড্রাইভ করছে আর চোখ থেকে অঝরে পানি পড়ছে। একা একা বলছে, “আমি কি সত্যি মেঘের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি? পায়েল কোথায় তুমি? আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি প্লিজ ফিরে আসো আমার কাছে।”
____________
কলেজ ক্যাম্পাস পুরো ফাঁকা। ক্যাম্পাসে শুধু চারজন রয়েছে ঈশান, অর্চি আর নির্ঝর-সাপা।পুরো ক্যাম্পাসে নীরবতা বিরাজ করছে সাপা আর নির্ঝর সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে। সাপার চোখ থেকে বৃষ্টির ধারা বয়ে যাচ্ছে আর ওর চোখে অপরাধীর ভাব পুরো স্পষ্ট। ঈশান আর অর্চি দাঁড়িয়ে আছে। ঈশান জোর করেই নির্ঝর কে সাপার সামনে এনেছে। কয়েক মিনিট এইভাবেই দুজন দুজনের সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে। নির্ঝর বারবার হাত মুষ্ঠি বদ্ধ করছে কিন্তু সাপা কে আঘাত করে কিছু বলার সাহস হচ্ছে না। নির্ঝর সাপার কান্না কখনো সহ্য করতে পারত না আর আজও তার ব্যতিক্রম নয়। নিজেকে শক্ত করে নিজের যতো ঘৃণা আছে সবকিছু ঢেলে দিয়ে নির্ঝর বলে উঠলো,

-“অভিনয় করে কান্না দেখানোর জন্য আমায় ডেকেছ তুমি? তোমার এই কান্না আমার মন ছুঁতে আর পারবে না। নিজেকে পরিবর্তন করো আর এই কান্না বন্ধ করে কিছু বলার থাকলে বল নাহলে আমি চললাম!”

সাপা একটু এগিয়ে এসে কান্না করতে করতে বললো,”ক্ষমা করে দাও আমায় একটাবার। আমি এই ভুল আর কখনোই করব না। একটা সুযোগ দাও আমায় প্লিজ।”

নির্ঝর তাচ্ছিল্য করে হাসি দিয়ে বললো,” তোমার এই কথা আমার বিশ্বাস করতে হবে? আমি আগের সেই মানুষ নেই যে তোমার এই মিথ্যা অভিনয় কে সত্যি ভেবে সবকিছু ভুলে যাবো। আর তোমাকে সুযোগ দেয়া যায় না। তুমি মানুষের মন নিয়ে খেলতে জানো শুধু। নিজের হাতে আবারো হৃদয় ভাঙ্গার দায়িত্ব দেয়ার মত বোকামি আর করব না আমি।”

সাপা নির্ঝরের পায়ে পড়লো। আর বললো,” বিশ্বাস করো আমি অভিনয় করছি না। আমি তোমায় ভালোবাসি, আমি নিজেও বুঝতে পারিনি আমি কতো বড় ভুল করেছিলাম ॥প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। এই কয়টা মাস আমি তোমায় অনেক খুঁজেছি নির্ঝর।”

নির্ঝর পা ছাড়ানোর চেষ্টা করে সরে গিয়ে বললো,”আমাকে স্পর্শ করবে না তুমি। ভালোবাসি কথাটা তোমার মুখে মানায় না তাই ভালোবাসা শব্দ কে অপমান করো না তোমার ওই মুখে ভালোবাসি বলে।”

-” কি করতে হবে আমার বল তুমি? সব করব কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমায় ভালোবাসি নির্ঝর। প্রতিটা মুহূর্ত আমি তোমার বিরহে মরে যাচ্ছি।”

নির্ঝর হাসার চেষ্টা করে বললো,” বিরহ! তোমার কথাগুলো তোমার কাছেই রাখো আর এই অভিনয় দেখার মত ধৈর্য আমার নেই। ”

নির্ঝর যেতে নিলো। নির্ঝরের চোখ থেকেও পানি ঝড়ছে। সাপা পেছন থেকে গিয়ে নির্ঝর কে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। সাপা জড়িয়ে ধরে বললো,

-” ভালোবাসি বিশ্বাস করো। আমার প্রতিটা ক্ষণে তুমি শুধুই তুমি। ”

নির্ঝরের বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখা সেই ভালোবাসা কে আবারো আপন করার ইচ্ছা হচ্ছে কিন্তু যে তার সাথে খেলা করেছে তাঁকে সে আর মানতে পারে না।ভালোবাসি কথাটা যেনো সব অভিমান দূর করে দেয় নিমিত্তে। কিন্তু এইবার ভালোবাসার চেয়ে অভিমান বেশি ই ছিল। নির্ঝর সাপাকে ছাড়িয়ে সাপার দিকে ফিরে তাকালো। সাপা নির্ঝরের চোখে পানি দেখে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নির্ঝর সাপা কে একটা থাপ্পড় দিলো। সাপা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নির্ঝর বললো,

-“আমার জীবনে আর আসতে চেয় না তুমি। আমার চোখের জল দেখে তোমার উদারতা চাই না আমি। তোমার জন্য আমার চোখের জল অনেক পড়েছে কিন্তু তা ভালোবাসার নয় ঘৃণার। তোমার মতো মেয়ের জন্য ছেলেরা মেয়েদের বিশ্বাস করতে পারে না।”

ঈশান আর অর্চি ওদের কাছে এলো। ঈশান নির্ঝরকে বললো, “ভাই সাপা কে বিশ্বাস কর প্লিজ। ”

অর্চি বললো,” হ্যাঁ ভাইয়া একবার বিশ্বাস করো ওকে। ও তোমায় ভালোবাসে। ”

সাপা ওদের কে থামতে বলে বললো,” ছেড়ে দে তোরা। আমি যা করেছি তার শাস্তি তো আমার পেতেই হবে। নির্ঝর তুমি ঠিক বলেছ আমাকে ভালোবাসা যায় না, শুধু ঘৃণা করা যায়। আমি তোমার অনেক ক্ষতি করেছি। ভালো থেকো তুমি এইটাই চাওয়া। ”

নির্ঝর মৃদু হেসে বললো,” জীবন কে শেষ করে বলে ভালো থেকো।”

নির্ঝর চলে যাওয়ার জন্য হাঁটতে নিলো। ঈশান ডাকছে তবুও শুনছে না। সাপা চোখ মুছে ঈশান কে বললো,

-” যেতে দে। অনেক কষ্ট দিয়েছি আমি ওকে। ”
__________
মেঘ বেডে বসে চুপ করে আছে। বারবার মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন জাগছে কি লুকানো সত্যি আছে রোদের? রোদ বাহিরে থেকে আর ভেতর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা কেনো? মেঘ উঠে আলমারির দিকে এগিয়ে গিয়ে একা একা বললো,

-“আপনার রহস্যের সমাধান এই আলমারি থেকেই শুরু আমি জানি। কিন্তু চাবি কোথায়?”

চাবি পুরো ঘর খুঁজেও পেলো না মেঘ। নিজে নিজে বললো, – “কোথায় চাবি টা? দরকারের সময়ে সবকিছু এমন কেনো হয়ে যায়?”

“কিসের চাবি খুঁজছো ভাবি?” – আয়রা ঘরে আসতে আসতে বললো।

আয়রা কে দেখে মেঘ কথাটা লুকিয়ে বললো,” কিছুনা আয়রা এসো ঘরে এসো। ”

আয়রা ঘরে এসে বললো,” জানি আমায় মিথ্যা বললে কিন্তু তুমি যায় করো না কেনো তুমি যেনো তোমার লক্ষে সফল হও এইটাই আমার চাওয়া। ”

মেঘ তবুও আয়রা কে বলতে গিয়েও বললো না। ভাবলো সবকিছু এখন না বলায় ভালো কিছুদিন যাক আগে নিজেই দেখুক। মেঘ আয়রা কে বসিয়ে বললো,

-” আমার ননোদীনি একেবারে বড়দের মতো কথা বলে দেখছি।”

-” জীবনের কিছু পরিস্থিতি মানুষ কে বড় করে দেয় ভাবি।এই যেমন আমাকে.. ”

আয়রা থেমে গেলো। মেঘ আয়রার দিকে তাকিয়ে বললো,”আয়রা তোমার কি হয়েছে আমায় কি বলা যায়? কয়েকদিন তোমাকে অন্য রকম লাগছে কিন্তু তোমাকে তো অনেক হাসিখুশি দেখেছি আমি তাইনা? ”

-” না না আমার কিছুই হয় নি ভাবি। আমার আবার কি হবে হুম? কিন্তু ভাইয়ার সাথে তোমার কি হয়েছে তা বল? হুট করে এলো আবার চলে গেলো কিছুই বুঝলাম না। ”

মেঘ উল্টে কিছু জিজ্ঞেস করলো না। মনে মনে বললো,”আজ বলছো না কিন্তু আমি ঠিক জেনে নিব আয়রা। ”

ভাবনা থেকে বেরিয়ে মুখে হাসি টেনে বললো,” তোমার ভাইয়ার তো মাথায় প্রবলেম সেই প্রথম দেখেই বুঝেছিলাম। আজকে এমনিতেই কিছু হয়নি। আর তুমি ছোট মানুষ এইসব শুনতে নেই বুঝলে। ”

আয়রা মেঘের কাঁধে হাত রেখে বললো,” বললেই হলো আমি ছোট? আমি তোমার মাত্র তিন বছরের ছোট। ”

-” তিন বছর মাত্র হয় হুম? পাকনা বুড়ি হয়েছ তুমি। আর ঘর তো সাজানো কে সাজিয়েছে? ”

-” আমি ভাবি জী আমি। ”
আয়রা হেসে উঠলো। কিছুক্ষণ এভাবেই গল্প করে কাটলো আয়রা আর মেঘের। ঈশান বাসায় এসে মেঘ কে সবকিছু বললো।মেঘ সবকিছু শুনে বললো,

-” একেবারে সবকিছু ঠিক হবে না। ওদের একটু সময় দে ঠিক হয়ে যাবে। আর শোন তুই আমার সাথে বেশি কথা বলিস না তোর ভাই আবার…”

বলতে নিয়ে আর বললো না। ঈশান বললো, “হুম বুঝেছি থাক আমি ফ্রেশ হয়ে নেই।”
.

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো কিন্তু রোদ একবারও বাড়িতে এলো না। আদিল চৌধুরী, রোজা চৌধুরী, আয়রা আর মেঘ ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছে। আদিল চৌধুরী আর রোজা চৌধুরী মেঘের সাথে অনেক বন্ধুর মতো হয়ে গেছে। গল্পের মাঝে বারবার মেঘ দরজার দিকে তাকাচ্ছে। মেঘ কে বেশ চিন্তিত লাগছে। আদিল চৌধুরী বলে উঠলো,

-“মেঘ মা কিছু চিন্তা করছো কি? আমাদের বলতে পারো আমরা তো তোমার বাবা মা ই তাইনা?”

মেঘ স্বাভাবিক হয়ে বললো,” না বাবা কিছু চিন্তা করছি না মানে… ”

রোজা চৌধুরী মেঘের মাথায় হাত দিয়ে বললো, “কি হয়েছে মা বল।”

“না মানে মা আপনার ছেলে সারাদিন বাড়িতে আসলো না সেজন্য আর কি। “-মেঘ মাথা নিচু করে বললো।

আয়রা হেসে উঠে বললো,” ভাইয়া কে ভাবি তো এখন চোখে হারাচ্ছে।”

মেঘ কিছুটা লজ্জা পেলো। আদিল চৌধুরী আয়রা কে ইশারা করে থামতে বলে মেঘ কে বললো,” মা রোদ এমন ই প্রায় দিন বাড়ির বাহিরে ই থাকে। ”

–” পুরো দিন বাহিরে কি করে উনি? অফিসে থাকে? আপনাদের কোম্পানির সবকিছু কি ও হ্যান্ডেল করে যে বাসায় আসে না? ”

আদিল চৌধুরী একটু থেমে বললো, “না সারাদিন ও অফিসে যায় না। কোথায় যায় আমরা কেউ জানি না। কিন্তু পুরো কোম্পানির কিছু কিছু কাজ ও করে কিন্তু তা রাতে। ”

মেঘ অবাক হয়ে বললো,” উনি কোথায় যায় আপনাদের বলে না কেনো? আচ্ছা আজ আমি জেনেই ছাড়ব। ”

ইশা চৌধুরী সিরি দিয়ে নামতে নামতে বললো, “হাতি ঘোড়া গেলো তল, মশা বলে কত জল! ”

উনার দিকে সবাই তাকাল। আয়রা দাঁত চেপে বললো,”এসে গেলো কাবাবে হাড্ডি। ”

ইশা চৌধুরী মেঘের কাছে এসে হেসে বললো, “আমরা এতো বছরেও জানতে পারলাম না রোদ কোথায় যায় কেনো যায় আর তুমি দুদিন ধরে এসেই জেনে যাবে?”

.

ইশা চৌধুরীর কথায় আদিল চৌধুরী আর রোজা চৌধুরী কিছুটা বিরক্ত হলো। রোজা চৌধুরী বিরক্তি নিয়ে বললো,

-“ছোট তোর কথায় কি বিষ ছাড়া কিছুই থাকে না? একটা মেয়ের সাথে কিভাবে কথা বলছিস তুই?”

ইশা চৌধুরী কথাগুলো শুনে কিছুটা রাগ করলো কিন্তু তা প্রকাশ না করার চেষ্টা করে আদিল চৌধুরী কে বললো,”ভাইয়া আপনার সামনে ভাবি আমায় এভাবে কথা বললো আপনি কিছু বলবেন না? আমি ভুল কী বলেছি? এই মেয়ে দুদিন ধরে এসে কি সাপের পাঁচ পা দেখে ফেলতে চায় নাকি?”

ইশা চৌধুরী সামান্য চেঁচিয়ে কথা গুলো বললো। আয়রা বিরক্তি মুখে নিয়ে উঠে চলে গেলো। মেঘ কিছুই বলছে না শুধু শুনেই যাচ্ছে। আয়রার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আরেকটু চেঁচিয়ে ইশা চৌধুরী বললো,

– এই হয়েছে আরেক মেয়ে! আমি যে ওর চাচী সে কথা মনে হয় জানে ই না। আমাকে এই মেয়ের একদম সহ্য হয় না, ঘরেই এমন মেয়ে থাকতে আর কার কথা বলব!”

আদিল চৌধুরী শান্ত গলায় বলল, -” ইশা তুমি মনে হয় ভুলে যাচ্ছ আয়রার বাবা – মা দুজন ই তোমার সামনে। আমাদের সামনে আমাদের মেয়ে – বউ মা কে তোমার যা ইচ্ছা হয় বলবে আর আমরা তোমাকে সমর্থন করব?”

” ভাই…. “-ইশা চৌধুরীর কথা আটকে আদিল চৌধুরী বললো,

-“ইশা নিজেকে বদলে ফেলো। মেঘ এই বাড়ির বউ ওর সাথে একটু আদর মিশ্রিত ভাবে কথা বলবে। আর রইলো আয়রার কথা! দেখো ইশা তুমি আয়রা কে ছোট থেকে দেখেছ, ও এইরকম চিৎকার চেঁচামেচি পছন্দ করে না। তাই আমার মেয়ে সম্পর্কে বলার আগে ভেবে বলবে।”

ইশা চৌধুরী বললো, “ভাইয়া আপনি বাহিরের মেয়ের সামনে আমায় এভাবে বলতে পারলেন?”

রোজা চৌধুরী মেঘের পাশে এসে বললো,” কে বাহিরের মেয়ে ছোট? ও বাহিরের মেয়ে হলে আমি আর তুই ও তো বাহিরের মেয়ে।”

মেঘ একটু মুচকি হেসে রোজা চৌধুরীর দিকে তাকালো। ইশা চৌধুরী মেঘের দিকে আঙুল তুলে বললো,” দেখব তুমি কিভাবে রোদ কোথায় যায় জানতে পারো। নিজেকে কি না কি ভাবতে আর আজকে এদের কথায় আরো উপরে উঠতে সুবিধা হবে।”

মেঘ মৃদু হেসে ইশা চৌধুরী কে বললো,-” চাচী মা আমি নিজেকে কিছুই ভাবি নি। আমি একটা সাধারণ মেয়ে আর এই বাড়ির বউ যেমন আপনি ও এই বাড়ির বউ! আর রোদ কোথায় যায় এইটা আপনারা এত বছরেও জানতে পারেন নি কিন্তু বলা তো যায় না আমি জেনে যেতেও পারি। কারণ সবাই খোঁজার চেষ্টা করলেও উনার তো স্ত্রী ছিল না। আমি উনার অর্ধাঙ্গীনি তাই হয় তো আমি জেনে যেতেও পারি। অনেক সময় যুদ্ধে জেতার জন্য সামান্য একটা গুলি ই যথেষ্ঠ হয় চাচী মা!”

মেঘের কথা শুনে আদিল চৌধুরী মুগ্ধতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রোজা চৌধুরীর মুখে হাসি ফুটে উঠলো কিন্তু ইশা চৌধুরী রাগে গদগদ হয়ে বললো,” তোমার ব্যবস্থা আমি করব।”

মেঘ, রোজা চৌধুরী আর আদিল চৌধুরী কেউ আর কিছুই বললো না। মেঘ শুধু নীরবে একটু হাসল।
.
ইশা চৌধুরী ঘরে এসে রাগে ফুসছে। ওর মনে হচ্ছে মেঘ কে এখনই মেরে ফেলতে। হাতের কাছে থাকা মিনি ফুলদানী নিয়ে ছুড়তে নিতেই অবুঝ চৌধুরী ধরে ফেলে বললো,

-“কি করতে যাচ্ছিলে তুমি? আমায় মেরে ফেলবে নাকি?”

–“তোমাকে না ওই মেঘ কে মেরে ফেলব আমি।”

–“কূল ডাউন ইশা। কি হয়েছে তা বল।”

ইশা চৌধুরী অবুঝ চৌধুরী কে সবকিছু বললো। অবুঝ চৌধুরী হাতের ঘড়ি খুলে রেখে ইশা চৌধুরীর সামনে এসে বললো, – “এইটা তুমি একদম ঠিক করো নি ইশা!”

ইশা চৌধুরী মোটেও ভাবে নি অবুঝ চৌধুরী এই কথা বলবে। উনার মনের মাঝে আরো রাগ জোরালো হল। ইশা চৌধুরী অবুঝ চৌধুরীর কলার ধরে বললো,

-“তুমিও ওদের পক্ষ নিয়েছ? তোমার কথায় সারাজীবন সবকিছু করেছি আর আজকে আমার দোষ বের করছ তুমি!”

অবুঝ চৌধুরী আস্তে করে ইশা চৌধুরীর হাত ধরে বসিয়ে একটু হেসে বললো, “উম হুম আমি তোমার দোষ ধরছি না ইশা। অনেক সময় নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে হয় কারণ রাগ প্রকাশ করলে শত্রু সতর্ক হয়ে যায়। শত্রু কে ঘায়েল করার জন্য রাগ নয় তার বিশ্বাস অর্জন করতে হয় যেমন আমি করেছি এত বছর।”

ইশা চৌধুরী শান্ত হয়ে গেলো। অবুঝ চৌধুরী আবারো বললো, “মেঘ তোমার সম্পর্কে খারাপ ধারণা করার আগেই ওর মনে নিজের একটা ভালো জায়গা করে নেয়ার চেষ্টা করো। তারপর যা করার….”

অবুঝ চৌধুরী আর কিছু না বলে শয়তানী হাসি দিলো। ইশা চৌধুরী একটু হেসে বললো,” বুঝতে পেরেছি।”
.
রাত নয় টায় রোদ বাড়িতে এসে নিজের ঘরে গেলো। ঘরে উকি দিয়ে দেখল মেঘ নেই। মনে মনে বললো,” বাহ নেই তো। শান্তিতে ফ্রেশ হয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘুমাব। ”

বলে রোদ ফ্রেশ হতে গেলো। ওদিকে মেঘ বেলকনীতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে একটু হাসছে। মনে হচ্ছে ও কারো সাথে কথা বলছে এমন মুখভঙ্গী। আস্তে করে বলে উঠলো,

-” পৃথিবী বড়ই বিচিত্র তাইনা? আকাশের তারা গুলো শত সহস্র কিলোমিটার দূরত্বে কিন্তু তাদের কতটা কাছে দেখায় তেমনই জীবনও বটে। আমি আর রোদ কাছাকাছি দেখা গেলেও আমাদের মাঝে সহস্র বছরের দুরত্ব।”

শেষের কথা বলে মেঘ মৃদু হাসল। চোখের কোণে মেঘের অজান্তে ই পানি জমেছে। চোখের জল আসার কারণ মেঘ নিজেও জানে না। ঘরের দিকে আসতে আসতে নিজে নিজে বললো,” আমার চোখের যে আবার কি হয়েছে কে জানে। চোখে পানি কেনো যে আসলো ,চোখের ডক্টর দেখানো লাগবে এইবার।”

মেঘের কোনো চোখের প্রবলেম হয় নি হয়েছে মনের! তা মেঘ বুঝেও বুঝে না। ঘরে প্রবেশ করতেই টেবিল এর উপরে রিভলভার দেখে মেঘের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। গলা শুকিয়ে এলো, ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো। এর মাঝেই রোদ ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে তারপর খেয়াল করলো রিভলভার ও বাহিরে ই রেখে দিয়েছে। মেঘ বাবা বলে চিৎকার দিতে নিতেই রোদ গিয়ে মেঘের মুখ চেপে ধরলো। মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে আছে, রোদ কে অপরূপ সৌন্দর্য যেনো ঘিরে রেখেছে। রোদ আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললো,

-” চুপ! একটাও কথা বলবে না।”

মেঘ একটু সাহস পেলো। রোদের হাত আলতো করে ছুয়ে দিতেই রোদ মেঘের মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো। মেঘের ছোঁয়া আজ রোদের বড্ড চেনা মনে হচ্ছে। রোদ মেঘের দিকে তাকালো কিন্তু মেঘ চোখ বন্ধ করে নিলো। রোদ ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“আবার কি হলো আপনার? ভয় পাওয়ার কিছুই নেই এই রিভলভার দিয়ে তোমাকে কিছু করবো না।”

মেঘ চোখ বন্ধ রেখে বললো, “আপনি খালি গায়ে আছেন তাই চোখ বন্ধ করেছি।”

রোদ জামা পরে নিয়ে বললো, “আমি যখন ঘরে এসেছিলাম তখন তো তুমি ছিলে না তাই ওয়াশ রুম এ শার্ট ওর টি শার্ট নিয়ে যায় নি। এখন চোখ খুলে ফেলো। বাই দ্য ওয়ে তুমি কি ভূত? ঘরের বন্ধ দরজার ভেতর দিয়ে কেমন করে আসলে?”

মেঘ চোখে খুলে ভ্রু কুঁচকে রিভলভার টার দিকে তাকালো। রোদ হাতে নিয়ে আছে। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললো,” আমি কোনো ভূত না। আমি আগে থেকেই ঘরে ছিলাম, বেলকনীতে। কিন্তু আপনি কে তা কি আমায় বলবেন রোদ? আপনার কাছে রিভলভার কেনো? আর সারাদিন কোথায় ছিলেন?”

–” আমি রোদ্দুর চৌধুরী তা তো তুমি জানো ই। আর রিভলভার কেনো তা তোমার না জানলেও চলবে।”

–“আমার জানতে হবে রোদ। আমি আপনার স্ত্রী ভুলে যাবেন না। আর রিভলভার টা আমায় দিন।”

বলে মেঘ রোদের হাত থেকে রিভলভার নেয়ার চেষ্টা করল। রোদ হাত সরিয়ে মেঘ কে এক হাতে ধরে রিভলভার টা আলমারি তে রেখে দিলো। মেঘ রাগী রাগী হয়ে বললো,

-” আলমারি তে কেনো রাখলেন? বাবা কে আমি সবকিছু বলে দিবো।”

রোদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,” ওটা খেলার কোনো জিনিস না যে তোমার সাথে হাতাহাতি করব তাই রেখে দিলাম। আর মেঘ একটা কথা রাখবে?”

মেঘ মুখ ফুলিয়ে বললো,” বলে ফেলুন।”

রোদ মেঘের হাত ওর হাতের মাঝে নিলো। মেঘ চমকে উঠলো। রোদ নিচু আর নরম গলায় বললো,” আমার কাছে রিভলভার আছে এটা প্লিজ কাউকে বল না। কিছু জিনিস একান্তই ব্যক্তিগত রাখতে হয় কখনো আমাদের কোনো উদ্দেশ্য পূরণ করতে আবার কখনো শত্রুর চোখে ধোঁয়াশা লাগাতে।”

মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে বললো, “কিন্তু কি এমন কারণ আছে আমি কি জানতে পারি না? আপনি কোথায় থাকেন সারাদিন আমাকে কি বলা যায় না? আমি জানি আমাদের মধ্যে কেউ কাউকে মানি না কিন্তু একটা বন্ধু হিসেবে তো জানতে চাইতে পারি আমি।”

রোদ মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,”তুমি এত অদ্ভুত কেনো? কখনো আমার পাশে থাকো আবার কখনো আমায় রাগীয়ে দিতে চাও। আমাকে তো তোমার ভালো লাগে না কিন্তু এখন আবার বন্ধু বলছো!”

মেঘ রোদের থেকে সরে গিয়ে অন্য দিকে হয়ে বললো,” সে আমি যেমনই হয় তাতে আপ্নার কি? বন্ধু বলেছি মানে বন্ধু আর কোনো কথা শুনতে চাই না। এখন বলুন আমায় সবকিছু নাহলে কিন্তু আমি….”

মেঘ রোদের দিকে তাকাতে নিলো আর দেখল রোদ ওর সামনে। আর কথা বলতে পারলো না মেঘ। রোদের থেকে আবারো সরে গেলো। রোদ বললো,

-“আচ্ছা তুমি আমার থেকে এতো সরে যাচ্ছ কেনো? আমি কি বাঘ নাকি সিংহ? এখনই বললে বন্ধু ভাবতে আবার এখনই মনে হচ্ছে আমি তোমার শত্রু।”

মেঘ বললো, -” আসলে তা না মানে….”

রোদ মেঘ কে থামিয়ে দিয়ে বললো, “থাক আর বলতে হবে না বুঝেছি। তো খেয়েছো?”

–“হুম খেয়েছি কিন্তু আপনি উত্তর দিলেন না এখনো।”

রোদ মেঘের বাহু ধরে বললো,-” মেঘ তোমাকেই সবার আগে বলব আমি কে কিন্তু তার আগে কাউকে কিছু বলো না। আমি এখন তোমাকে কিছুই বলতে পারব না প্লিজ জেদ করো না। আর আমার সম্পর্কে কিছু জানতে চেয় না।”

–” কিন্তু আপনি তো মিথ্যা বলেন।”

–” কি মিথ্যা বলেছি?”

–” আপনি বলেছিলেন আপনার গার্ল ফ্রেন্ড আছে কিন্তু আপ্নার তো কোনো গার্ল ফ্রেন্ড নেই।”

রোদ মুচকি হেসে বললো,” সব জেনে ফেলেছ তাহলে। আমার কোনো গার্ল ফ্রেন্ড নেই কিন্তু একজন কে ভালোবাসি।”

মেঘের বুকের মাঝে মোচর দিয়ে উঠলো। অতি উৎসাহের সঙ্গে বললো, “কে সেই মেয়ে? আমাকে বলুন আমি হেল্প করব তাঁকে বলে দিতে যে আপনি ভালবাসেন। তার ছবি দেখান না আমায় একটা।”

রোদ একটু হাসল। একটু কাশির ভান করে বললো,” এত প্রশ্ন কেনো? তুমি আমায় ভালোবেসে ফেললে নাকি?”

মেঘ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রেগে বললো, “আপনাকে আমি কখনোই ভালোবাসব না মিস্টার রোদ্দুর চৌধুরী। আপনি কেনো এই পৃথিবীর কোনো ছেলে কেই আমি ভালোবাসতে রাজি নয়। এই পৃথিবীতে একা থাকার চেয়ে সুখের আর কিছুই হতে পারে না।”

–” রেগে গেলে কেনো? আমি মজা করছিলাম। আর তুমি কাউকে ভালোবাসবে না তো কারণ তোমার দিহান আছেই তো।”

মেঘ রেগে বালিশ নিয়ে নিচে রেখে বললো,” আমার যেই থাকে থাক আপনার এত বলতে হবে না।”

মেঝেতে চাদর বিছিয়ে বললো,” টেবিলে খাবার রেখেছি খেয়ে নিতে হলে নিন নাহলে না নিন। আমি ঘুমালাম।”

রোদ আস্তে করে বললো,” রেগে গেছে সত্যি তো।”

একটু জোরে বললো,” নিচে ঘুমালে কেনো? তুমি উপরে ঘুমাবে না?”

–“না আপনি ঘুমান। দুদিন আপনার অনেক ঘুমের প্রবলেম হয়েছে। আমি কারো প্রবলেম করতে চাই না।”

রোদ মেঘের দিকে উঁকি দিয়ে বললো,” কখনো মেঝেতে থেকেছ বলে মনে তো হচ্ছেনা। তুমি চাইলে উপরে আমার সঙ্গে থাকতে পারো।”

রোদের কথা শেষ না হতে ই মেঘ রাগী দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকাল। রোদ মুখ বাঁকা করে বললো,” আমার সাথে না মানে মাঝে একটা কোল বালিশ রেখে থাকার কথা বলেছি।”

মেঘ চাদর মুখের উপরে দিয়ে বললো,” আপনার কোল বালিশ, আপনার বেড আপনার কাছেই রাখুন আমার লাগছে না।”

রোদ আর কিছু বললো না। খেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে আর দেখছে মেঘ ঠিকভাবে ঘুমাতে পারছে না।
.
সকালে মেঘ কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বসে আছে। রোদের সাথে এখনো কোনো কথায় বলেনি। রোদ আজ ওকে কলেজে রেখে আসবে। রোদ রেডি হয়ে ওকে নিয়ে গাড়ির কাছে যেতে নিলো কিন্তু লক্ষ্য করলো মেঘ আস্তে আস্তে আসছে। রোদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো মেঘের দিকে কিন্তু মেঘ মুখ ভার করে গাড়িতে উঠল। মেঘ আজ একটাও কথা বলছে না। কিছুক্ষণ পর রোদ নীরবতা ভেঙে বললো,

-“শরীর ব্যথা করছে একটা মেডিসিন খেয়ে নিলে কি হতোনা?”

–“আপনি কিভাবে জানলেন আমার শরীর ব্যথা করছে?”

রোদ একটা মেডিসিন মেঘের সামনে ধরে বললো, “এইটা খেয়ে নাও। আর মেঝেতে থাকার অভ্যাস নেই তাই জোর করে আর থাকতে হবে না। আমার দু একটা কথা শুনলে কিছু হবে না। আমি মানুষ, তুমি যতোটা খারাপ ভাবো ততটা না।”

মেঘ মেডিসিন খেয়ে নিয়ে আস্তে করে বললো,” হুম কিন্তু আমি ছেলেদের বিশ্বাস করি না।”

রোদ মুচকি হাসি টেনে বললো,” কাউকে ভালোবাসতে?”

মেঘ শান্ত গলায় বললো,” কখনোই না।”

–” তাহলে তো তুমি কখনো কারো সাথে জীবন জড়িয়ে দেখ নি তাই এইসব বলছো। অবশ্য আমিও কখনো relation এ যায় নি এমন কি কারো দিকে তাকিয়েও দেখিনি।”

মেঘ বিড়বিড় করে বললো,” আমার দিকে তো ঠিক তাকানো হয়।”

রোদ ড্রাইভ করতে করতে বললো,” কিছু বললে??”

মেঘ মাথা নাড়িয়ে না বললো।

রোদ আবারো বললো,” মেঘ তবে তুমি একটা মিথ্যা বললে! তুমি ছেলেদের বিশ্বাস করো না বললে কিন্তু আমি কি মেডিসিন দিলাম না দেখেই খেয়ে নিলে এইটা কি বিশ্বাস না মেঘ?”

মেঘ থমকে গেলো। সেই তো মেঘ না দেখেই খেলো তাহলে কি মেঘের রোদের প্রতি বিশ্বাস আছে। মেঘ কিছু উত্তর দেয়ার পাচ্ছিল না। রোদ গাড়ি থামিয়ে বললো,

-” থাক আর চিন্তা করতে হবে না। তোমার কলেজ এসে গেছে। কয়টা ক্লাস আছে তোমার? ক্লাস শেষে আমি এসে নিয়ে যাব।”

মেঘ গাড়ি থেকে নেমে বললো, “পাঁচ টা ক্লাস আছে। চার ঘন্টা পর আসুন। আর যেখানেই যান সাবধানে থাকবেন।”

রোদ চোখ নিয়ে ইশারা করে হাসি টেনে বললো, “ওকে।”
.
মেঘ ক্লাস এ গেলো কিন্তু আজ পাঁচ টা ক্লাস এর জায়গায় তিন টা ক্লাস হল। মেঘ একবার ভাবছে রোদ কে কল করছে আবার ভাবছে ঈশানের সাথে যাবে। কিন্তু ঈশানের সাথে দেখলে রোদ আবার রাগ করবে তাই ঈশানের সাথে না গিয়ে মেঘ রোদ কে কল করলো। কিন্তু রোদ কল তুলছে না। কিছুক্ষণ দেরি করার পর মেঘ কলেজ থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। একা একা বলছে, “নিজেই বলে কল করবে আবার কল তুলছে না। নবাব আসছে উনার কথার বাহিরে ও আবার কিছু করা যাবে না।”

বলতে বলতে সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা ছেলে রাস্তা পার হচ্ছে। ছেলেটা দেখতে চৌদ্দ পনেরো বছরের, গায়ের রং ফর্সা। ছেলেটা রাস্তা পার হচ্ছে কিন্তু ওর পেছনে একটা গাড়ি ও খেয়াল ই করেনি। মেঘ বারবার ছেলেটা কে সতর্ক করার চেষ্টা করছে কিন্তু ছেলে টা যেনো কিছুই শুনতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত মেঘ গিয়ে ছেলেটা কে সরিয়ে নিয়ে এলো। ছেলেটা মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,

-“তুমি আমাকে টেনে নিয়ে আসলে কেনো?”

মেঘ হাপিয়ে বললো, “তোমার পেছনে গাড়ি ছিল। কখন থেকে সরে যেতে বলছি কিছুই শুনছিলে না তাই…”

মেঘের কথা শেষ না হতেই ছেলেটা বললো,” ও মাই গড! Thank you আপু তোমাকে ।আমি কখনো এমন রাস্তায় আসিনি তো তাই বুঝতে পারিনি।”

-“ঠিক আছে। তো তোমার নাম কি?”

ছেলেটা উত্তর দেয়ার আগেই ছেলেটার ফোন বেজে উঠল। ছেলেটা মেঘ কে বললো,” আপু আমার যেতে হবে পড়ে কথা হবে।”

বলেই ছেলেটা দৌড়ে একটা গাড়ির দিকে চলে গেলো। মেঘ একা একা বললো,

-” পরে আবার কখন বলবে? আমায় তো চিনে ই না।”

মেঘের কথা শেষ হইতে না হইতে ওর সামনে একটা গাড়ি আসলো।

.
.
চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে