মনের গহীনে শুধুই তুমি পর্ব-২+৩+৪

0
2083

#মনের_গহীনে_শুধুই_তুমি
#পর্ব_2+3+4
#Mst_Meghla_Akter_Mim

সাপা, অর্চি আর মেঘ পেছন ফিরে তাকালো। দেখলো রোদ গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হাত দুটো পকেটে দিয়ে। মেঘ নরম কন্ঠে বললো,

–“এখন আবার কি চাই আপনার? আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সেটা ভুলে যান। আমি কোনো অধিকার নিয়ে যাব না আপ্নার কাছে।”

রোদ ধীর গতিতে এগিয়ে এসে বললো, – “এখন আমার তোমাকে চাই।”

মেঘ অবাক হয়ে বললো,-” মানে!”

–“মানে আর কিছুই না আমার সাথে তুমি যাবে এখন।”

–“না আমি যাবো না।”

মেঘ সাপা আর অর্চির দিকে তাকিয়ে বললো,” এই তোরা দাঁড়িয়ে না থেকে চল।উনার সাথে কোনো কথায় বলতে চাই না। ”

কিন্তু ওরা দুজন হা করে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্চি রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,

–” দোস্ত তোর বর তো হেভি সুন্দর। উফ তোর সাথে বিয়ে না হয়ে যদি আমার সাথে হতো!”

মেঘ অর্চির মাথায় মেরে বললো, – “যাঁকে দেখিস তাকেই তোর চাই তাইনা?”

রোদ অর্চির কথায় আরো ভাব নিয়ে চুল ঠিক করছে।
মেঘ রোদের দিকে দেখিয়ে বললো, “একে আবার সুন্দর বলে নাকি একটা আস্ত বাঁদর!”

মেঘের কথায় সাপা আর অর্চি হেসে উঠে। রোদ মেঘের কথা শুনা মাত্র রেগে মেঘের দিকে তেড়ে এসে চেঁচিয়ে বললো,

–“এই আমাকে তুমি বাঁদর বললে! তুমি বাঁদরনী এই জন্য আমিও বাঁদর হব নাকি হ্যাঁ? যেতে বলছি আমার সাথে চলো।”

মেঘ দ্বিগুণ চেঁচিয়ে বললো,” বাঁদর কে বাঁদর বলব না তো হনুমান বলবো? অবশ্য আপনি হনুমান ও। আর আপনাকে বললাম না আমি যাবো না আপ্নার সাথে।”

–“এই মেয়ে…

রোদ কথা শেষ না করতেই সাপা থামিয়ে বললো, “এইবার থাম তোমরা। কি শুরু করেছো? এইযে মেঘ উনি বাঁদর হোক না হয় হনুমান হোক উনি কিন্তু এখন তোর স্বামী। যেমন ভাবেই হোক বিয়ে তো হয়েছে।”

অর্চি অতি উৎসাহের সাথে বললো,-” হুম দোস্ত! যেমনই হোক না কেনো ও তো তোরই।”

মেঘ বললো, – – “তোরা আমার বন্ধু নাকি শত্রু আমি এখন বুঝতে পারছি না। আর উনাকে আমার দরকার নেই বুঝেছিস। অর্চি যা তোকে দিয়ে দিলাম ওকে।”

মেঘের কথা শুনে রোদ অবাক হয়ে বললো, -” আমি কি কোনো জিনিস যে তুমি দিয়ে দিলে? আর কি যেনো বললে আমাকে তোমার দরকার নেই! তাহলে শোনো তোমাকেও আমার দরকার নেই।”

মেঘ হেসে বললো, -” তাহলে আমাকে আপ্নার নিয়ে যাওয়ার কারণ কি? আমাকে দরকার কি বলুন?”

–” শখ করে কেউ এমন পেত্নীর কাছে আসে! তোমাকে না নিয়ে গেলে বাবা বাড়িতে ঢুকতে দিবে না সেজন্যই এত বার বলছি। নাহলে তোমাকে এইভাবে বলতাম নাকি।”

মেঘ শান্ত গলায় বললো, -” দেখুন আমার মা – বাবা আমার জন্য চিন্তা করছে তাই আমি আপনার সাথে যেতে পারবো না। এইটা আমার বা আপনার কারো ইচ্ছা তেই বিয়ে হয়নি তাই আমার এখন আপনার সাথে যাওয়া সম্ভব না। ”

রোদ মেঘের হাত ধরে বললো, -” বিয়ে হয়েছে মানে আমি তোমার স্বামী! আর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে তোমার উপর তাই এখন তুমি আমার সাথে যাবে। ”

সাপা আর অর্চি বললো, -” এইসব কি করছেন? মেঘের হাত ছাড়ুন। ”

মেঘ নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,” ছেড়ে দিন আমায় লাগছে। ”

–“কিছু হয়নি তোমার হাতে। আমার কথা শুনলে কি হয় হ্যাঁ? ”

এর মাঝেই অর্চি ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো, -” মেঘ মেঘ আঙ্কেল কল করেছে। কি বলব!”

এদিকে রোদ মেঘ কে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে গেলো। মেঘ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। সাপা ও রোদ কে আটকানোর চেষ্টা করল কিন্তু পাড়লো না! রোদ মেঘ কে গাড়িতে উঠিয়ে নিলো। মেঘ ওখান থেকেই কাঁদতে কাঁদতে বললো,

–“তোরা পাপ্পা কে গিয়ে সব বুঝিয়ে বল প্লিজ। ”

রোদ মেঘ কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ড্রাইভ করা শুরু করে দিলো। সাপা আর অর্চি ওর দিকে ছল ছল চোখে তাকিয়ে আছে।
______
আদিল চৌধুরী রোদের সাথে কথা বলেই খুশিতে মেতে উঠে ড্রয়িং রুম এ এসে হাক ছাড়ল,” কোথায় কে তোমরা তাড়াতাড়ি এসো। রোদের মা কোথায় তুমি? ”

রোজা চৌধুরী রান্না ঘরে সবজি কাটছিল। আদিল চৌধুরীর ডাক শুনে হাতে সবজি কাটার ছুরি নিয়ে আসতে আসতে বললেন, “কি হয়েছে এতো তারা দিয়ে ডাকছো কেনো?”

আদিল চৌধুরী উনার স্ত্রী রোজা চৌধুরীর বাহু ধরে হাসতে হাসতে বললো,” অনেক খুশির একটা কাজ হয়েছে। বলব কিন্তু সবাই কে আসতে দাও আগে।”

রোজা চৌধুরী কে ছেড়ে সিরির কাছে গিয়ে বললেন,”আয়রা (রোদের ছোট বোন) কি করছিস ডাকছি শুনতে পারছিস না? ইহানা(রোদের চাচাতো বোন) নিচে আসতে পারছিস না! আর ছোট বউ (রোদের চাচী) তুমি কোথায়?”

আয়রা বই পড়ছিল আর ইহানা সাজতে ব্যস্ত। আদিল চৌধুরীর ডাকে আয়রা নিচে আসলো আর বললো, “বাপি এত জোরে ডাকছো কেনো?”

ইহানা নেইল পোলিশ দিতে দিতে নিচে নেমে বললো,” বড় আব্বু তোমার এত কিসের আনন্দ যে এতো হাসছ! ”

আদিল চৌধুরী মহা খুশি নিয়ে বললেন,” খুশি হওয়ার ই দিন আজকে। আয়রা তোর ভাইয়া বিয়ে করে বাড়িতে বউ আনছে!”

ইহানার হাত থেকে নেইল পোলিশ পরে গেলো। ঈসা চৌধুরী (রোদের চাচী) আসতে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। আয়রা আর রোজা চৌধুরী কথাটা শুনা মাত্র খুশিতে মেতে উঠলেন। আয়রা খুশিতে লাফিয়ে বললো,

–” অবশেষে ভাইয়া বিয়ে করলো। ”

ঈসা চৌধুরী নিচে এসে বললো, -” এতো খুশি হওয়ার কি হলো তাতে? কাকে না কাকে বিয়ে করেছে।”

ইহানা ওর মায়ের দিকে কাঁদো কাঁদো হয়ে তাকালো। রোজা চৌধুরী আদিল চৌধুরী কে বললো,” হ্যাঁ গো মেয়ে টা কে? আর তোমাকে কে জানালো?”

আদিল চৌধুরী সবকিছু বললো। রোজা চৌধুরী একটু চিন্তিত হলেন। ঈসা চৌধুরী রোজা চৌধুরীর পাশে গিয়ে বললো,

–” ভাবি এইটা কোনো বিয়ে ই না এত লাফালাফি করে কি হবে। কেউ কাউকে আগে মানুক তো!”

রোজা চৌধুরী মুহূর্তেই মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,” ছোট সে চিন্তা তোকে করতে হবে না। বিয়ে হয়েছে তাই আমার বউ মা আর ছেলে কে ঠিক বুঝিয়ে নিবো।”

ঈসা চৌধুরী রেগে উনার মেয়ে ইহানা কে নিয়ে ঘরে চলে গেলেন। আয়রা ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

–” ঠিক হয়েছে। সারাদিন আমার ভাইয়ার দিকে নজর দিয়ে বসে থাকা। ও বাপি ভাবি কখন আসবে? ”

–” এই আসলো বলে! ”

রোজা চৌধুরী ব্যস্ত হয়ে বললেন,” হায় আল্লাহ আগে বলবে না আমায়! বরণ করতে হবে তো বউ মা কে আর গয়না বের করি যায় আমি।”

আদিল চৌধুরী আর আয়রা বসে বসে রোদ আর মেঘের আসার অপেক্ষা করছে।
_____
সাপা আর অর্চি কিছুক্ষণের মধ্যে মেঘের বাড়িতে গিয়ে সবকিছু বললো। সবকিছু শুনে মেঘের বাবা প্রতীক হাসান বললেন,” তোমরা তো ওর সাথে ছিলে তাহলে ও পথ হারালো কিভাবে আর বিয়েটাই কিভাবে হয়! ”

মেঘের মা মিমি হাসান কাঁদছে এইসব শুনে। কপাল চাপরে বলছে, “আমি যেতে দিতেই চাইলাম না তবুও জোর করে গেলো। এখন কি হবে? ছেলেটা কেমন, কে, কিছুই জানিনা চিনিনা তার সাথে বিয়ে হয়ে গেলো।”

অর্চি মিমি হাসান এর পাশে গিয়ে বললো,” আন্টি ছেলেটা কে দেখে মনে হল ছেলেটা ভালো। আর ভালো বাড়ির ছেলেও।”

মিমি হাসান আরো কেঁদে বললেন, “মানুষকে দেখে মানুষ চীনা যায় নাকি? সারা বছরেও মানুষ চিনতে পারা যায় না আর সেখানে এইরকম এক অজানা ছেলে! ”

প্রতীক হাসান মিমি হাসান কে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,”আহা কান্না থামাও এখন। ছেলেটা খারাপ হলে বিয়েটা ভেঙ্গে দিবো এইটা তো ইচ্ছা করে বিয়ে না তাইনা?”

মিমি হাসান চোখের জল আচল দিয়ে মুছে বলছে,” বিয়ে একবার হয়ে গেলে এইসব করে সম্মান কমবে বাড়বে না। ”

–” সম্মান এর কথা ভেবে আমার একমাত্র মেয়েকে একটা অনুপযুক্ত ছেলের সাথে সারাজীবন রাখতে তো পারিনা। তুমি শান্ত হও, আমি খোঁজ খবর নিয়ে এখনই যাবো।হয়তো ছেলে ভালো বলা তো যায়না।”

–“সাথে আমাকেও নিয়ে যাবে তো?”

–” হ্যাঁ বাবা তোমাকেও নিয়ে যাবো। ”

সাপা রোদের ফেসবুক প্রোফাইল অনেক কষ্টে খুঁজে পেলো। রাস্তায় থেকে ও রোদ এর প্রোফাইল খোঁজায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কিন্তু খুঁজে পাচ্ছিল না। কারন ‘রোদ’ নাম শুধু জানতো। সাপা প্রোফাইল খুঁজে পেয়েই সবাই কে তারা দিয়ে বললো,

–” পেয়ে গেছি! ”

মিমি হাসান চোখের জল মুছে বললো, “তাড়াতাড়ি বল। আর আমাকে দেখা।”

প্রতীক হাসান বললো, – “পরে দেখবে আগে দেখো adress দেয়া আছে কি না।”

সাপা মুখে হাসি টেনে বললো, “সব আছে। ছেলের নাম “রোদ্দুর চৌধুরী”। আদিল চৌধুরীর একমাত্র ছেলে আর রোদ্দুর গ্রুপ & ইন্ডাস্ট্রিজ এর মালিক।”

সাপার কথা শেষ না করতেই প্রতীক হাসান বললো,”আদিল চৌধুরীর ছেলে! আমি উনাদের বাড়ি চিনি আর কিছু বলতে হবে না এখনই বেরিয়ে পড়ি।”

উনারাও চৌধুরী বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলেন।
______
মেঘ গাড়ি থেকে উঠে থেকে কান্না করছে। একটু পর পর নাক টেনে টেনে কান্না করছে। রোদ বিরক্ত হয়ে বললো,

–” সত্যি সত্যি বাপের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছ না যে এতো কাঁদতে হবে। কান্না থামাও কান আমার শেষ করে দিলে।”

–“কাঁদব না তো কি করব হ্যাঁ? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়? আর আমার কান্না আপনি শুনতে পারছেন নাকি যে কান শেষ হলো?”

–“জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছি না নিশ্চিত থাকো। আর আমি তোমাকে নিয়ে যাব তারপর বাবার সাথে দেখা করে তুমি চলে আসো আর যা খুশি করো কোনো প্রবলেম নেই। এখন কান্না থামাও, এই কাঁদো কাঁদো মুখে তোমাকে সত্যি সত্যি পেত্নীর মত লাগলে বাড়ির সবাই আমাকে বলবে আমার বউ পেত্নী তা আমার ভালো লাগবে না। ”

মেঘ কান্না থামিয়ে বললো,” আমি আপনার বউ না বুঝতে পেরেছেন! আমাকে যা খুশি লাগুক! ”

রোদ ড্রাইভ করছে, সামনে তাকিয়ে বললো, -” সে তো আমিও মানি না তুমি আমার বউ। কিন্তু আমার বাড়ির সবাই যে তাই বলবে। ”

মেঘ মুখ ভার করে বললো, -” বুঝেছি। কিন্তু আর কতদূর যেতে হবে? ”

–“আর মাত্র পাঁচ মিনিট। ব্যাপার কি শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার তারা কেনো এতো? আমার প্রেমে পড়ে গেলে নাকি?”

মেঘ রেগে রোদ এর গলা টিপতে গিয়ে বললো,”ফাজলামি করেন! মেরেই ফেলব আপনাকে। ”

রোদ ড্রাইভ করতে করতে বললো , – – “এই accident হয়ে যাবে। সরি বাবা সরি। ”

মেঘ হাত সরিয়ে রাগে গদগদ হচ্ছে। রোদ তখনই গাড়ি ব্রেক করে বললো,” যাক বাবা আমার কাজ শেষ। এই মেয়ে তো আস্ত রাক্ষসী!”

মেঘ খেপে বললো, – “আবার বলছেন বাজে কথা আমি তো আপনাকে….”

বলে রোদের দিকে এগিয়ে যেতে নিলো তখনই রোদ গাড়ি থেকে নেমে গেলো। রোদের সাথে সাথে মেঘ ও গাড়ি থেকে নামল রোদ কে উত্তর মধ্যম দেয়ার জন্য কিন্তু গাড়ি থেকে নেমেই দেখলো সামনে সুবিশাল একটা বাড়ি। আর আদিল চৌধুরী, রোজা চৌধুরী আর আয়রা চৌধুরী বরণ ডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উনাদের মুখে খুশি লেগে আছে যেনো।

মেঘ আর রোদ কে দেখে গাড়ির দিকে এগিয়ে আসলেন রোজা চৌধুরী। মেঘ উনাদের দেখে নিজেকে একটু শান্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। রোজা চৌধুরী আসার সাথে সাথে মেঘ উনাকে সালাম করল। রোজা চৌধুরী মেঘের গালে হাত দিয়ে বললেন,

–” কি মিষ্টি মেয়ে। ও মা নাম কি তোমার?”

মেঘ উত্তর দিতে যাবে তার আগেই রোদ বললো, “আমার যম!”

মেঘ অগ্নি দৃষ্টিতে রোদ এর দিকে তাকাল। রোজা চৌধুরী রাগী রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রোদ এর দিকে আর বললো,” রোদ মেয়েটার সাথে এ কি ব্যবহার তোমার!”

আদিল চৌধুরী রোদ এর কান ধরে বললো,” ব্যাটা বিয়ে করেছিস আর এখন তাঁকে যম বলিস।”

–“বাবা ছাড় লাগছে। আমি ইচ্ছা করে বিয়ে করিনি জানোই তো। শুধু তোমার জন্য এই মেয়েকে খুঁজে খুঁজে নিয়ে এসেছি। এখন আমি বাড়িতে গেলাম।”

রোদ একা বাড়ির ভেতরে যেতে নিলো।
আয়রা রোদ কে আটকে ঠেলে নিয়ে মেঘের পাশে দাঁড় করালো।

রোদ অবাক হয়ে বললো,” বাবা আমার সাথে অন্যায় করতেই পারে কিন্তু তুই আমার বোন হয়েও বাবার সঙ্গ দিচ্ছিস।”

আয়রা কোমরে হাত দিয়ে বললো,” ভাইয়া এখন আমি তোর কিংবা বাপি কারো সঙ্গ দিবো না কারণ আমার একমাত্র ভাবি চলে এসেছে। তোকে দাঁড় করলাম কারণ তোদের বরণ করবে আর আমি ছবি তুলব।”

মেঘ এদের কান্ড গুলো দেখছে আর মুচকি হাসছে। আয়রা মেঘের সামনে গিয়ে বললো,” ভাবি এখনও নাম বললে না তুমি।”

মেঘ মুচকি হেসে বললো,” মেঘলা আকতার মিম। মেঘ বলে সবাই ডাকে।”

আয়রা রোদ এর কাঁধে একটা মেরে বললো,” বা ভাইয়া বা! সত্যি তো তোর যম ভাবি! রোদ আর মেঘ ।বাহ বেশ হয়েছে নাম দুটো।”

রোজা চৌধুরী হাসি টেনে বললো,” অনেক সুন্দর নাম তোমার।”

আদিল চৌধুরী বললো,-” পরে সব কথা হবে এখন বরণ করো। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে। অনেক ধকল গিয়েছে এমনিতেই” ।

রোজা চৌধুরী ওদের বরণ করে মেঘ কে একটা হার পড়িয়ে দিতে নিলেন তার আগেই রোদ রোজা চৌধুরীর হাত আটকে বললো,

–” আম্মু আর যাই করো এই হার এমন কাউকে দিও না যাকে আমি নিজের স্ত্রী হিসেবে মানি না।”

মেঘ এক গাল হেসে বললো,-” আন্টি এ হার রাখুন, উনার পছন্দের কাউকে উনি বিয়ে করলে তাঁকে দিবেন। আর এমনিতেও দুর্ঘটনায় আমাদের বিয়ে। উনি চাইলে আজকেই divorce হবে!আর আমিও চাই না উনার মতো একটা মানুষের সাথে থাকতে। ”

আদিল চৌধুরী মেঘের কাছে এসে বললো,-” না না। বিয়ে যেভাবেই হোক তুমি এখন সারাজীবন আমার বউ মা বুঝলে।”

মেঘ বিড়বিড় করে বললো,” কিন্তু ওই বান্দর এর সাথে থাকা যায় নাকি!”

রোজা চৌধুরী সহ সবাই হেসে উঠলো। রোদ রেগে মেঘ কে বললো,” এই মেয়ে লিমিট ক্রস করে যাচ্ছ এইবার তুমি।”

রোজা চৌধুরী মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,” বাঁদর টা কে মানুষ করার দায়িত্ব আজ থেকে তোর।”

মেঘ রোদ এর দিকে তাকিয়ে শয়তানী হাসি দিলো।

–” উফ ভাবি এখন ভেতরে চলো।”

মেঘ ভেতরে যাওয়ার আগে বললো, – – “আঙ্কেল আপনার ছেলে আমাকে জোর করে নিয়ে এসেছে। আমার বাড়ির সবাই খুব চিন্তা করছে আর আমার ফোনে চার্জ নেই একটা কল করা যেতো?”

আদিল চৌধুরী বললো,” অবশ্যই কিন্তু আগে ভেতরে চলো, একটু ফ্রেশ হও তারপর।”

ভিতরে গিয়ে মেঘ চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। রোদ আগেই ঘরে চলে গিয়েছে। রোজা চৌধুরী রোদ আর মেঘের জন্য খাবার রেডি করতে গেলো। মেঘ আয়রা কে আস্তে করে বললো,

–” তোমার নাম তো জানা হলো না। আর এই বাড়িতে তোমরা চার জন ই থাকো নাকি আরো কেউ আছে?”

–” আমি আয়রা তোমার একমাত্র স্বামীর এক মাত্র ছোট বোন। আর এই বাড়িতে আরো কয়েকজন আছে কিন্তু বাহিরে আসে নি ভেতরে ভেতরে পুরছে বুঝলে।”.

আয়রা মুখ চেপে হাঁসল। মেঘ কৌতুহল নিয়ে বললো,”পুরছে মানে বুঝলাম না। ”

–” ভাবি সে পড়ে বলব। তুমি শুনলে হাসি আটকে রাখতেই পারবে না। ”

আদিল চৌধুরী মেঘের সামনে বসে বললো, -” মা তোমার বাবার নাম কি? উনার নাম্বার দাও আমি উনার সাথে কথা বলছি। ”

মেঘ বলতে যাবে তখনই কেউ একজন বললো,” আর কল করতে হবে না মিস্টার চৌধুরী আমি নিজেই এসেছি। ”

মেঘ তাকিয়ে দেখলো ওর বাবা – মা আর অর্চি এসেছে। ও বসা থেকে উঠে বললো, “পাপ্পা!”
_______
ইশা চৌধুরী ইহানার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। ইহানা গালে হাত দিয়ে বললো,” মা তুমি আমাকে মারলে? আমার গালের makeup নষ্ট হয়ে গেলো। ”

ন্যাকি কান্না শুরু করলো।
ঈসা চৌধুরী ওকে ধমক দিয়ে দাঁত চেপে বললো, “কাঁদো এখন তোমার কান্না করার ই সময়। এই মেয়ে তুই এতদিন কি করলি যে রোদ তোকে না বিয়ে করে অন্য কাউকে বিয়ে করে আনলো।”

ইহানা বললো,-” সে কি ইচ্ছা করে বিয়ে করেছে নাকি? মানুষ জোর করে বিয়ে দিয়েছে। আর ওকে আমার প্রেমে ফেলার জন্য সারাদিন ওর সামনে ঘুরঘুর করি তাও তো ও পাত্তা দেয় না। ”

ইশা চৌধুরী ইহানার মাথায় মেরে বললো, -” তোর মাথায় গোবর আছে এই জন্য তোকে পাত্তা দেয় নি। শুধু সেজে থাকলে রোদের মন জয় করা যায় না কতবার বুঝাব তোকে। ”

–” এখন এইসব ছাড় না মা! নতুন বউ কে দেখব আগে। ”

–” সবকিছু শেষ হয়ে গেলো যে মেয়ের জন্য তাকেই দেখার জন্য নাচতেছে মেয়েটা। এ কি গাধা আমার পেটে ছিল।”

ইহানা ওর মায়ের কাঁধের উপরে মুখ দিয়ে বললো,” মা আমি তোমার আর বাবার মেয়ে তাই এতটাও বোকা নয়। দেখো মা রোদ ওই মেয়েকে ইচ্ছা করে বিয়ে করেনি তাই ওই মেয়েকে তারানোর জন্য ওর সাথে দেখা তো করতেই হবে। ”

ইশা চৌধুরী শয়তানী হাসি দিয়ে বললো,” এই না হলে আমার মেয়ে। আর ওদিকে এক ছেলে হয়েছে আমার কোনো কিছু বুঝে না। যেই শুনেছে রোদ বিয়ে করেছে লাফাতে লাফাতে আসতেছে মনে হয়। ”

–” মা ভাইয়ার কথা ছাড়। এখন নিচে গিয়ে আমাদের কাজ শুরু করি। ”
________
প্রতীক হাসান বাহিরে থেকে আদিল চৌধুরী কে সালাম দিলো। আদিল চৌধুরী দরজার কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

-” আরে বেয়ায় আসুন আসুন ভেতরে আসুন। আমার বুকে আসুন। ”

প্রতীক হাসান, মিমি হাসান আর অর্চি ভেতরে আসলো। মিমি হাসান মেঘের কাছে গিয়ে কান্না করে বললো,” তুই ঠিক আছিস মা? তোকে বলেছিলাম যাস না কিন্তু এখন কি হলো দেখ।”

মেঘ নিজেও কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে তবুও মিমি হাসান কে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করে বললো,” মাম্মা যা আমার ভাগ্যে ছিল তাই হয়েছে।”

আদিল চৌধুরী বলল, “যা হয়েছে ভালই হয়েছে বুঝলেন। আমার তো আমার বউ মা কে খুব পছন্দ এখন আপনাদের জামাই কে আপনাদের পছন্দ হলেই হয়ে যায়।”

প্রতীক হাসান শান্ত স্বরে বলল, “আপনারা কি আমার মেয়েকে মেনে নিয়েছেন? আপনাদের ওকে মেনে নেয়ার আগে ওর পরিবারের সম্পর্কে জানাও প্রয়োজন।”

মিমি হাসান উনার এই কথা শুনে কেমন যেনো অন্য মনুষ্য হয়ে বললো,” কি জানাতে চাও তুমি? ”

প্রতীক হাসান মিমি হাসান কে বললো,” তুমি মেঘের সাথে কথা বলো আমি শুধু আমাদের পরিবারের সম্পর্কে উনাকে জানাতে চাই। ”

আদিল চৌধুরী বলল,” বেয়ায় আগে বসুন তো। আত্মীয় যখন হয়েছি সবকিছু তো জানতে হবে ই কিন্তু এর সাথে আমার মতামতের কোনো সম্পর্ক নেই। ”

ইশা চৌধুরী আর ইহানা চৌধুরী নিচে নামছে। ইশা চৌধুরী বললো,” তা বললে কিভাবে হয় ভাইয়া? আমাদের লেভেল এর কি না উনারা তার উপরেও তো নির্ভর করছে সম্পর্ক টা।”

আদিল চৌধুরী বিরক্তি নিয়ে বললো,” ছোট বউ মা আমার আর উনার মধ্যে কথা হচ্ছে এর মাঝে তুমি এসো না। আর আমি মানুষকে লেভেল দিয়ে কোনোদিন বিচার করিনি।”

আয়রা মেঘের কানে ফিস ফিস করে বললো,-” এইতো ভাবি দুই ডায়নি চলে এসেছে।”

–” আয়রা উনারা বড় এইসব বলতে নেই।”

আয়রা মুখ বাঁকা করে বললো, – “ডাইনি কে ডাইনি না বললে পাপ হয়।”
মেঘ, মিমি হাসান আর অর্চি হাসছে আয়রার কথায়।

প্রতীক হাসান একটু মুচকি হেসে বললো,” আমরা আপনাদের মত এত বড় লেভেল এর মানুষ না। আমি একজন ডাক্তার। আর খুব সাধারণ আমরা।”

আদিল চৌধুরী মুচকি হেসে বললো, – “যে মানুষ মানুষের সেবা করে তার চেয়ে বড় আর কেউ হতে পারে না। আর এমন একজন মানুষের মেয়ে অবশ্যই অনেক ভালো হবে। বিয়ে যেহেতু হয়েই গেছে আপনারা মেনে নিন প্লিজ।”

–” এইটা আমার মেয়ের উপর নির্ভর করছে। ও যদি মানতে চায় তাহলেই আমরা মেনে নিবো।”

–“আমি থাকতে চাই না এইখানে।”

আদিল চৌধুরী বললেন, -” এ কি বলো মা?”

রোজা চৌধুরী এসে বললো,” প্লিজ আমাদের বউ মা হয়ে থাকো।”

-” কিন্তু আপনার ছেলে….

–“আমার ছেলে ওরকম ই কয়েকদিন গেলে অমনি ঠিক হয়ে যাবে।”

“কোনো কিছু ঠিক হবে না। আঙ্কেল আপনি আপনার রাক্ষসী মেয়েকে নিয়ে যান।” – রোদ সিরি দিয়ে নামতে নামতে বললো।

মেঘ রেগে বললো, “আবার আপনি আমায় রাজ্ঞসী বললেন! এইবার সত্যি সত্যি রাক্ষসীর মত আপনার রক্ত খেয়ে নিবো।”

রোদ হেসে বললো, -” তা আর পারবে না কারণ আঙ্কেল তোমায় নিয়ে যাবে। আর আমি তো মেনে নিব না এ দেখে আর মেনে নেয় নাকি আঙ্কেল – আন্টি।”

ইশা চৌধুরী আর ইহানা চৌধুরী শয়তানী হাসি দিলো।

মিমি হাসান মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,” মা বিয়ে আল্লাহ লিখে রাখে তাই যেভাবেই বিয়ে হোক না কেনো তুই এখন এ বাড়ির বউ। কি করবি আবারো ভেবে বল।”

–হ্যাঁ মা তুমি যেও না।(রোজা চৌধুরী)

–না এইখানে মেঘ কে রেখে যাবো না। রোদ নিজেই তো মানছে না।(প্রতীক হাসান)

মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে রেগে সবাই কে বললো, “না আমি এই বিয়ে কে মানি। যেভাবেই হোক এইটা বিয়ে ই তো তাই আমি উনাকেই স্বামী হিসেবে মানছি।”

সবাই খুশি হলেও ইশা চৌধুরী আর ইহানা খুশি হলো না। রোদ রেগে তেড়ে আসল মেঘের দিকে। কিন্তু অনুরোধ করে বললো,

–“তুমি কেনো মেনে নিবে? দেখো আমি মানছি না তুমি চলে যাও প্লিজ।”

মেঘ ওর কথা গুলো শুনে মনে মনে বলছে,-” তোকে ঠিক করব তারপর যা করার করব।”

মেঘ সবার দিকে তাকিয়ে বললো,” আপনারা উনার কথা বিশ্বাস করবেন না। আমাকে নিয়ে আসার সময়েই উনি বলেছে উনি আমাকে মেনে নিয়েছে।”

–“এই…”

অর্চি বললো, – “একদম! আমরা ছিলাম ওখানে, উনি নিজের মুখে কথাটা বলেছে।”

রোদ মনে মনে ভাবছে, “বললাম নিজের কাজ হাসিল করার জন্য আর এখন আমাকেই ফেসে দিলো।”

মেঘ রোদ এর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে ভাবছে,”কেমন লাগে এখন!”

আদিল চৌধুরী বললো, – “মিয়া বিবি রাজি তো কিয়া করেগি কাজী! বেয়ায় আর কোনো কথা না এখন আমরা আমরাই তো।”

প্রতীক হাসান হেসে বললো,” হুম এখন আর কি করার। ওরা দুজন ভালো থাক এইটাই চাওয়া। কিন্তু বেয়ায় বিয়েটা যেহেতু এভাবে হয়েছে আমি চাই মেঘ কে নিয়ে গিয়ে ধুম ধাম করে বিয়ে দিতে। আমার একটাই মেয়ে তো।”

রোদ হঠাৎ চেঁচিয়ে বললো,” না!”

আদিল চৌধুরী রোদের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, “এখন আবার কি প্রবলেম তোমার?”

রোদ উত্তর দেয়ার আগে মেঘ বলে উঠলো, “আঙ্কেল ও বলতে চাইছে যে অনুষ্ঠান পরে হবে আগে আমরা একে অপরকে ভালোভাবে চিনে নেই। বিয়ে তো হয়েই গেছে।”

রোদ মাথা চুলকে মেঘের সাথে তাল মেলানোর অভিনয় করে বললো, “হ্যাঁ বাবা এইটাই বলতে চাইছিলাম।”

ফিসফিস করে বললো,” এই মেয়েটা আমায় বাঁচিয়ে দেয় নাকি ফাঁসিতে দেয় কিছুই বুঝি না।”

আদিল চৌধুরী ভ্রু কুঁচকে বললো,” ঠিক তো এইটাই বলতে চাইছিলি?.”

রোদ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো।

–“আচ্ছা মেনে নিলাম কিন্তু বউ মা আমায় আঙ্কেল নয় বাবা বলতে হবে কিন্তু। ”

–“ওকে বাবা।”

প্রতীক হাসান বললো, এ” ইটা কেমন জানি হলো না। তবে এইটাও ঠিক ওদের একে অপরকে জেনে নেওয়া দরকার।”

মিমি হাসান প্রতীক হাসান এর সামনে এসে বললো,”যেমনই হোক কিছুদিন ওদের সময় দেওয়াও দরকার। ”

রোজা চৌধুরী হেসে বললো,” বেয়ায়, বিয়ান ওদের একটু সময় দেয়া দরকার কিন্তু ওদের বন্ধুদের ওদের বিয়ের কথা জানানো প্রয়োজন আছে। ”

রোদ আর মেঘ একসাথে বলে উঠলো,-” না না ওদের জানানোর কোনোই দরকার নেই।”

–“তাহলে সবাই কে জানিয়ে অনুষ্ঠান করা হোক! পছন্দ তোমাদের, অপশন দুইটা।” (রোজা চৌধুরী)

মেঘ আর রোদ একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুখ ভার করে বললো, -” ঠিক আছে শুধু বন্ধুরা। ”

অর্চি পাশে থেকে বললো, “মেঘ আমাদের বন্ধু দের আমি জানিয়ে দিচ্ছি। ”

–” আর আমি আমার আর ভাইয়ার বন্ধুদের জানিয়ে দেই।-(আয়রা)

আদিল চৌধুরী বললো, “সবাই কে আজ সন্ধ্যায় দাওয়াত দিয়ে দাও। ”

অর্চি আর আয়রা ওদের কল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। প্রতীক হাসান বললো,

–“আজ আমরা আসি। আমার মেয়েকে একটু দেখে রাখবেন।” (প্রতীক হাসান)

–এখন যাবেন কেনো ! দুপুরে সবাই একসাথে খাবো তারপর যাওয়ার কথা। আর রাতে তো আপনাদের থাকতেই হবে। (আদিল চৌধুরী)

–না ভাই এখন আর দেরি করতে পারবো না। রাতে অবশ্যই আসব মেঘের সাথে তো ওর প্রয়োজনীয় কিছুই নেই। সেগুলো দিতে আসতেই হবে। (প্রতীক হাসান)

–কোনো কিছু লাগবে না। সবকিছু আমি বউ মার জন্য কিনে আনব আমার একমাত্র বউ মা বলে কথা। তবে আমাদের আসতেই হবে কিন্তু। (আদিল চৌধুরী)

–জী অবশ্যই আসব কিন্তু আপনাদেরও কাল কে দুপুরে আমাদের বাসায় আসতে হবে। মেয়ে জামাই তো বিয়ের পরের দিন আসতে হয়। (প্রতীক হাসান)

–অবশ্যই যাবো আমরা। (আদিল চৌধুরী)

মিমি হাসান রোজা চৌধুরীর হাত ধরে বললো, “বেয়ান আমার মেয়েটা কে নিজের মেয়ের মত বানিয়ে নিয়েন। ওকে আমরা বিয়ে দেয়ার কোনো চিন্তায় করিনি কখনো। আমার মেয়েটা একটু বেশিই মিশুক একটু মানিয়ে নিবেন।”

রোজা চৌধুরী বললো, “বেয়ান কোনো চিন্তা করবেন না। ওকে মাথায় করে রাখব আমরা। আমার ছেলের জন্য যে ওর মতো একটা মেয়েরই প্রয়োজন ছিল। ”

মিমি হাসান আর প্রতীক হাসান যাওয়ার জন্য বেরোতে নিতেই অবুঝ চৌধুরীর(রোদের চাচা) সাথে ধাক্কা খেলো। প্রতীক চৌধুরী উনার সাথে ধাক্কা খেয়েই কেমন যেনো অন্য রকম হয়ে গেলো। উনি ছটপট করতে নিলেন আর মেঘের দিকে একবার তাকালো। আদিল চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে বললো,

–” অবুঝ তুই এসেছিস! ভালোই হলো, বেয়ায় এইটা আমার ছোট ভাই।”

উনারা কুশল বিনিময় করে খুব দ্রুত বাড়ি থেকে চলে গেলেন প্রতীক হাসান আর মিমি চৌধুরী। গাড়ি তে যেতে যেতে মিমি চৌধুরী বললো,

–“কি গো তুমি উনাকে দেখে এইরকম করছো কেনো?”

প্রতীক হাসান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, -” কিছু হয়নি। চিন্তা হচ্ছে আমার মেয়েটার জন্য।”
__________
অর্চি কে আয়রা আর যেতে দিলো না কারণ বিকেলে আবার আসতেই হবে। তাছাড়াও আয়রা আর অর্চি কি যেনো প্ল্যান করছে। মেঘ কে ওরা পাত্তাই দিচ্ছে না। অবুঝ চৌধুরী এসে হাসি মুখে মেঘের সাথে কথা বললো যেনো উনিও খুব খুশি হয়েছে। বাড়িতে সবাই খুশি শুধু ইহানা আর ইশা চৌধুরী ছাড়া। মেঘ আর রোদ মনে মনে বিরক্ত হলেও মুখে তা প্রকাশ করছে না। অবুঝ চৌধুরী মেঘের সাথে কথা বলে ঘরে গেলেন। উনার সাথে উনার মেয়ে আর স্ত্রী ও গেলেন। রোজা চৌধুরী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,

–“একটা বাজবে তো এখন। তোমরা এতক্ষণ আমার বউ মা কে এইখানে রেখেছ। এমনিতেই না খাওয়া তার মধ্যে এতো সমস্যা।”

–না আন্টি কোনো প্রবলেম নেই।(মেঘ)

রোদ বিড়বিড় করে বললো, “প্রবলেম থাকবে না তো কারণ ও নিজেই একটা প্রবলেম।”

মেঘ কিছু বললো না মুখে হাসি রাখল। মনে মনে বলছে,” বান্দর তোকে কি করব বুঝতে পারছিস না। এমনি এই বাড়িতে থেকে গেলাম নাকি।”

রোদ আচমকা বললো,” কিছু বললে আমায়!”

মেঘ বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে বললো, “মনের কথাও শুনতে পারে নাকি ও আবার।”

রোজা চৌধুরী আয়রা কে ডেকে বললো, “আয়রা বউ মা কে তোর ঘরে নিয়ে যা। আর শোন আমার আলমারি তে শাড়ী আছে ওখান থেকে শাড়ী কোন টা ভালো লাগে তোমার পরে নিও বউ মা। ”

মেঘ মুচকি হেসে বললো,” ঠিক আছে আন্টি।”

আয়রা আর অর্চি মেঘ কে নিয়ে ঘরে গেলো। রোদ ড্রয়িং রুম এর সোফা থেকে উঠে ওর ঘরের দিকে যেতে নিলো। তখনই আদিল চৌধুরী ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো,

–” ঘরে গিয়ে কাজ নেই কারণ চাবি আমার কাছে। ”

–” মানে? ”

–” মানে এখন তোর তোর ঘরে যাওয়া চলবে না। কাজ চলবে ঘরে। ”

–” কিন্তু বাবা কেনো? আমার ঘর টাও এখন তুমি নিয়ে নিলে!”

–“আরে ছেলে তোর ঘর নিবো কেন! কিছুক্ষণ আমার ঘরে রেস্ট নে কিন্তু রাতের আগে ঘরে যাবি না। এইটা আমার আদেশ। ”

রোদ দাঁত চেপে বলল, -” তুমি যা বলবে। আমি তো মানুষ না একটা রোবট। ”

রোদ আদিল চৌধুরীর ঘরে গেলো। আদিল চৌধুরী ফোন রেখে রোদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

–মন থেকে তুই তো রোবটই হয়ে আছিস রোদ। তোর সেই মন কে আবার প্রাণ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য এতকিছু করা আমার।”

রোজা চৌধুরী আদিল চৌধুরীর পাশে বসে উনার কাঁধে হাত দিলেন। ছল ছল চোখে বললো,

–” মেঘ পারবে তো রোদ কে ওর ভালোবাসায় আবদ্ধ করতে? মেঘ নিজেও তো ছেলেদের পছন্দ করেনা। ”

–” আমার উপরে বিশ্বাস রাখো রোজা। মেঘ নিজেও জানেনা ও কিসে জড়িয়ে পড়েছে আর রোদ ও জানে না। তবে মেঘ এর গুনে রোদের মন আবারো নতুন প্রাণ ফিরে পাবে তা আমি নিশ্চিত।”
_______
ইশা চৌধুরী হন হন করে অবুঝ চৌধুরীর কাছে গিয়ে বললো,

–” বেশ খুশি হয়েছ দেখছি। এতো বছরের সব চেষ্টা একদিনে মাটি হয়ে গেলো। ”

অবুঝ চৌধুরী ভ্যালেজার খুলে ইহানার হাতে দিয়ে বলল,-” খুশি! আমি মোটেও খুশি হয়নি কিন্তু নিজের ভেতরের রাগ দেখাতে গিয়ে চিরকালের জন্য ভাইয়ার চোখে খারাপ হতে পারবো না ইশা।”

–তো এখন কি করবে বাবা। রোদ তো বিয়ে করেছে। (ইহানা)

–” বিয়ে তো করেছে কিন্তু তার সাথে সম্পর্ক শেষ করানোর বা সেই মেয়েকে বাড়ির বাহিরে বের তো আমরা করতেই পারি। কিন্তু একটু ধৈর্য্য ধর সঠিক সময়ের জন্য। ”

ইশা চৌধুরী, অবুঝ চৌধুরী আর ইহানার মুখে শয়তানী হাসি ফুটে উঠলো।
_______
রোদ আদিল চৌধুরীর ঘরে গিয়ে বেডের উপরে ফোন ফেলে দিলো। গায়ে থাকা টি-শার্ট খুলে ফেলে দিয়ে বেডে বসে মাথায় হাত দিয়ে নিচে দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ ওভাবে থাকার পর শুয়ে পড়লো। মনে মনে কিছু প্রশ্নের আনা গোনা হচ্ছে বারবার। কে দরজা বাহিরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছিলো? এইসব ঘটে গেলো যেনো মুহূর্তেই। রোদ মনে মনে বললো,

–” তোমাকে আমি কখনো মেনে নিব না। আর আমার তো মনে হয় তুমিও আমাকে মানবে না তবে কেনো থেকে গেলে!”
_______
মেঘ গোসল করে একটা নীল রঙের শাড়ী পড়লো। আয়নার সামনে চুল ঠিক করছে মেঘ। আয়রা ওর বন্ধুদের সাথে ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত। অর্চি পেছন থেকে বললো,

–” মেঘ তুই এই বিয়েটা মেনে নিলি যে! তুই তো কখনো বিয়েই করতে চাসনি। ”

মেঘ চিরুনি রেখে বললো, -” মেনে নেই নি তো। রোদ আমাকে রাক্ষসী বলেছে তাই রাজ্ঞসীর মতো ওকে কয়েকদিন জালাবো তারপর নিজের বাড়িতে চলে যাবো।”

–“শেষে নিজেই ওর মায়ায় আটকে পড়বি না তো?”

–“জানা নেই কিন্তু মনের গভীরে কেউ জায়গা করে নেয়া খুব কঠিন বুঝলি। তাই নিশ্চিত থাক আমি ওর মায়ায় পড়ব না। ”

অর্চি মেঘের হাত শক্ত করে ধরলো। কেউ একজন বাহিরে থেকে বললো,

–” মে আই কাম ইন ম্যাম! ”

মেঘ আর অর্চি তাকিয়ে দেখল ঈশান। ওরা চমকে উঠে বললো,” ঈশান তুই!”

অর্চি অবাক হয়ে বললো,-” তোকে তো এখনো কল করিনি আমি তাহলে তুই আসলি কেম্নে? ”

ঈশান কিছু না বলে মেঘের আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করছে। আয়রা ফোন কানে দিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে ঈশান কে দেখে ফোন রেখে দৌড়ে এসে ঈশান কে জড়িয়ে ধরল। মেঘ আর অর্চি বড় বড় চোখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়রা ঈশান কে ছেড়ে বললো,

–” ছোট ভাইয়া তুই এত দেরি করলি কেন হুম? ”

মেঘ বলে উঠলো,-” ভাইয়া মানে…!”

আয়রা এগিয়ে এসে বললো,” হুম ভাইয়া কে তো ভাইয়া ই বলব।”

ঈশান ঘরে এসে জোরে জোরে হেসে বললো, “তাহলে তুই আমার ভাবি!”

মেঘ ঈশানের মাথায় মেরে বললো,” ওই কি বলিস ঠিকভাবে বল কিছুই বুঝছি না।”

ঈশান হাসি থামানোর চেষ্টা করে বললো,” তুই তাহলে বাস থেকে হারিয়ে গিয়ে আমার ভাবি হয়ে গেলি। দেখ দোস্ত আমি ভেবেছিলাম আমি তোরে বিয়ে করমু কিন্তু তুই এ কি করলি!”

আয়রা কিছু না বুঝে বললো, -” এইবার আমিও কিছু বুঝছি না।”

ঈশান বললো, “সব বুঝিয়ে বলছি বোন টি আমার। আমি ভার্সিটি 2nd year এ পড়ি আর তোর ভাবি মেঘও আমার সাথেই পরে আর আমার খুব ভালো বন্ধু। আর এইযে মেঘ আমি আপনার বরের একমাত্র চাচাতো ভাই।”

মেঘ তো খুশিতে শেষ প্রায়। হাফ ছেড়ে বললো, “তোরে দেখে আমার এখন কত শান্তি লাগছে বুঝাতে পারবো না।”

ঈশান হেসে বললো,” উমহুম শান্তি পাস না। এইখানে আমি always দাভাই এর পক্ষে। ”

অর্চি আর মেঘ বললো,” তোর মতো বন্ধু চাই না আমার যা। ”

আয়রা মেঘের কাছে গিয়ে বললো,” আরে ভাবি আমি always আছি তোমার সাথে ।”

মেঘ আয়রা কে জড়িয়ে ধরে বললো,” আমার ননদ থাকলেই আমার চলবে হুম।”
_______
সন্ধ্যার আগেই রোদের বন্ধু রাহুল, রবি, রুদ্র সহ আরো অনেকে চলে আসলো। এদিকে মেঘের বন্ধু রাও চলে এসেছে। ওদের মধ্যে আছে অর্চি, সাপা, বৃষ্টি, দিহান আর ঈশান তো মেঘের দেবর এখন। সন্ধ্যায় সবার সাথে কুশল বিনিময় পর আদিল চৌধুরী রোদ কে নিয়ে ঘরে গেলেন। সাথে রাহুল আর রুদ্র কে নিলেন আর রবি আগেই চলে গেছে। আলমারি থেকে একটা সুন্দর শেরয়ানী বের করে বললেন রোদ কে পড়িয়ে সুন্দর করে রেডি করতে। রোদ রেগে শেষ কিন্তু ওর বাবার উপর দিয়ে কিছু বলতে না পাড়ায় রাজি হয়ে যায়। আদিল চৌধুরী ঘর থেকে গেলো। রুদ্র আর রাহুল ওকে শেরয়ানী পড়িয়ে দিলো। রোদ মুখ গোমরা করে আছে। রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,

–“বাহ ভাই তোকে একদম বর বর লাগছে। আর ভাবীও তো বেশ সুন্দর।”

রাহুল গালে হাত দিয়ে বললো,” তাহলে আজ থেকে আমাদের দায়িত্ব শেষ। তোর সেই লেডি বাইকার খুঁজতে হবে না আর আমাদের।”

রোদ চোখ বন্ধ করে বললো, “তোদের আর কিছুই করতে হবে না তোরা বাহিরে যা।”

রুদ্র রোদের হাত আলতো করে স্পর্শ করে বললো,” রাগ করে আছিস! ”

রোদ বসে পড়ল। ওর চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে। রাহুল ওর পাশে বসে বললো,” ভাই কাঁদছিস কেনো? ”

–তোর আজকে ওই লেডি বাইকার এর কথা বলার কি কোনো দরকার ছিল? (রুদ্র)

ওদের কথার মাঝেই কেউ দরজায় knock করলো। রোদ চোখের জল মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল।রুদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে