#মনের_গহীনে_শুধুই_তুমি
#পর্ব_24+25+26
#Mst_Meghla_Akter_Mim
চারদিকে বাতাস বইছে। দুপুরে রোদের মাঝেও বাতাস অনেক বেশি ভালো লাগছে মেঘের। মেঘ অনেক খুশি এখন কারণ ওর রোদ শুধু ওকে ই ভালোবাসে। ড্রাইভ করছে মেঘ একবার ভাবলো সে প্রথমে মৌ ইসলামের সাথে দেখা করবে। নিজের বাবা মা কে ফিরে পাওয়া অনেক বেশি সুখকর তার সাথে সাথে একটা মা বাবার দুঃখেরও অবসান হবে। মেঘ ভাবছে,
–“মামনি আমার মা এই জন্য উনার কষ্টে আমার কান্না পাচ্ছিল। মামনি, আঙ্কেল না না বাবাই তোমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে কিন্তু আর তোমরা কষ্ট পাবে না। আমি ই যে তোমাদের পায়েল। উফ আমারও একটা ভাই আছে। আমার ভাই টা এত সুন্দর মনে হচ্ছে এখনই গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলি ভাই আমি তোর আপু রে ভাই। ”
এইসব ভাবতে ভাবতে মেঘের মুখ মলিন হয়ে গেলো। মাথার ভেতরে প্রতীক হাসানের বলা কথা নাড়া দিলো।মেঘের মনে একটাই প্রশ্ন জাগছে কে ওকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল? প্রশ্নের পরে প্রশ্ন আর রহস্যের পরে যেনো রহস্য রয়ে ই যায়। মেঘ ঠিক করলো এর পেছনে থাকা মানুষকে ঠিক খুঁজে বের করবে কিন্তু কিভাবে করবে? মাথা চাপ দিতে শুরু করলো আর নিতে পারলো না গাড়ি পার্ক করলো রাস্তার ধারে। গাড়িতে এখন দম বন্ধ হয়ে আসছিল মেঘের। রাস্তার ধারে একটু হাঁটা হাঁটি করলো। ভাবছে কিভাবে কি করা যায়। হঠাৎ মেঘের মনে হলো এখন তার পরিচয় সবাই কে দেয়া ঠিক হবে না। জানতে হবে অনেক কিছু এখনো। আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“মা, বাবা, ভাই তোমাদের আর কয়েকটা দিন আমার জন্য কষ্ট করতে হবে। তোমাদের আমার পরিচয় দিলে হয়তো আমারই জীবন বিপদে পড়বে আর তোমাদের শত্রু কে তা যে জানতেই পারবো না।”
সূর্য মাথার উপরে দেখা যাচ্ছে। মেঘের কাছে ঘড়িও নেই কিন্তু বুঝতে পারলো দুপুর হয়ে গেছে হয়তো দুই টা বাজে। মেঘ ঠিক করলো এখন সে বাসায় যাবে। ড্রাইভ শুরু করলো আর ভাবছে মামনিদের না বললেও রোদ কে বলা উচিত তার। রোদ তার মনমহিনী কে খুঁজে সে আর কেউ না মেঘ ই। মেঘ যাবতীয় চিন্তা বাদ দিয়ে ঠিক করলো আগে রোদ কে কিভাবে বলবে সেই তার ভালোবাসার মানুষ।
___________
মেঘ কে বেরিয়ে যেতে দেখে রোজা চৌধুরী চিন্তিত হয়ে পড়েছে। মেঘ কে কল করলেও ও ফোন তুলছে না। আয়রার মনের মধ্যে ভয় কাজ করছে। আয়রা রোদ কে কল করে বললো মেঘ কাউকে কিছু না বলে কোথায় যেনো গিয়েছে। আয়রা পায়েলের ছবির কথা রোদ কে জানালো না হয় তো রোদ রাগ করবে সেজন্য।রোদ হস্তদস্ত হয়ে বাড়ি তে এলো এসে কারো সাথে কথা না বলে ঘরে চলে গেলো। ঘরে গিয়ে দেখলো মেঘের ফোন বিছানার উপরে, তার পাশে পায়েলের ছবি। ফোন বাসায় দেখে আরো চিন্তা হানা দিলো আর ছবিটা দেখে। কিন্তু রোদ কে দেখে খুশি খুশি লাগছে। রোদ একা একা বললো,
–“ও মাই গড ফোন তো বাসায়। কোথায় গেলো মেয়েটা! কোনো কিছু করে বসে নি তো! কি হয় মেয়েটার কখন বুঝি না। কেউ কিছু বলেছে কি না। আমাকে চিন্তায় না ফেললে তো উনার ভালো লাগেনা।”
বলে দ্রুত পায়ে নিচে গেলো। রোজা চৌধুরী এগিয়ে এসে বললো, “এসে আবার কোথায় যাস।”
–“মেঘের ফোন বাড়িতে আম্মু তাই কল করে ওকে কোনোই লাভ নেই। আমি খুঁজতে বেড়চ্ছি।”
রোজা চৌধুরী আরো চিন্তিত হয়ে বললো,” যা তাড়াতাড়ি যা।”
রোদ বাড়ি থেকে বেরোতে ই দেখলো মেঘ গাড়ি পার্ক করছে। রোদ দৌড়ে গাড়ির পাশে যেতেই মেঘ গাড়ি থেকে নেমে রোদ কে দেখে মুচকি হাসি দিলো। রোদের চিন্তিত মুখ মেঘের ভালো লাগছে কারণ সে যে শুধু পায়েল নয় মেঘ কেউ ভালোবেসে ফেলেছে তা ওর মুখ ই প্রমাণ দিচ্ছে। রোদ মেঘের বাহু চেপে চিৎকার করে বললো,
–“কোথায় গিয়েছিলে তুমি না বলে?”
রোদের চিৎকারে রোজা চৌধুরী আর আয়রা বেরিয়ে এলো। রোজা চৌধুরী বললো,
–“কোথায় গেছিলে তুমি? কত চিন্তা হচ্ছিল জানো। কিছু হয়েছে কি?”
মেঘ কে কোনো উত্তর দেয়ার সুযোগ না দিয়েই রোদ আবারো বলে উঠলো,” কথা বলছো না কেনো? তোমায় একা কোথাও যেতে কে বলেছে হ্যাঁ?”
মেঘ আস্তে করে বললো, “রোদ আমার লাগছে।”
রোদ মেঘ কে ছাড়ল।মেঘ বললো,
–” মা শুনলাম পাপ্পার নাকি শরীর খারাপ তাই অনেক চিন্তা হচ্ছিল। সরি মা কিছু বলে যেতে পারিনি।”
রোদ মেঘের দিকে তাকালো রোদ জানে মেঘ মিথ্যা বলছে কারণ রোদ প্রতীক হাসানের কাছে কল করেছিলো। রোদের তাকানো দেখে মেঘ বললো,
–” আপনি এতো চিন্তা করছেন কেনো? আমি একদম ঠিক আছি।”
এইবার রোদের চোখ মেঘের হাতের দিকে গেলো। হাত কেটে গিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ হলেও রক্ত জমাট বেঁধে আছে সেদিকে মেঘ খেয়াল ই করেনি। রোদ রাগে চিৎকার করে বললো,
–“ঠিক আছো তাইনা? হাতের কি হয়েছে?”
মেঘের রোদের কথায় হুস এলো যে ওর হাত কেটে গেছিল।রোজা চৌধুরী আর আয়রাও জিজ্ঞেস করলো কিন্তু মেঘ হাসার চেষ্টা করে বললো,
–” কি জানি খেয়াল করি নি।”
রোদের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো কেনো মেঘ নিজের দিকে নজর দেয় না। রোদ মেঘ কে সোজা হাত ধরে ঘরে নিয়ে গেলো। ঘরে গিয়ে মেঘ কে বেডে বসিয়ে বললো,
–“চুপ করে বসে থাকবে এখানে?হাতে মেডিসিন লাগাতে হবে।”
মেডিসিনের কথা শুনে মেঘ ভয় পেলো। বললো,” না না আমার কিছু হয় নি কোনো মেডিসিন লাগবে না।”
বলেই উঠে যেতে নিলো। রোদ ওকে আটকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ধমক দিয়ে বললো,
–” সবসময় বেশি বুঝ কেনো?এক পা গিয়ে দেখো পা ভেঙ্গে দিবো।”
মেঘ মুখ ফুলিয়ে বললো,” তাহলে আপনাকে যে সবাই বলবে আপনার বউ পঙ্গু!”
রোদ অবাক ওর কথায়। রোদ ধমক দিয়েছে আর এই মেয়ে রসিকতা করছে! একে বোঝা বড় দায়! রোদ মেঘের হাতে মেডিসিন লাগিয়ে দিতে দিতে বললো,
–“আমার বউ পঙ্গু হলে আমার সমস্যা নেই কিন্তু আমার একটাও কথা না শুনলে সমস্যা। তোমাকে তো আমি বলিনি যে কথা শুন সব কিন্তু এভাবে না বলে যাওয়া কি ঠিক। রাস্তা ঘাটে যদি কিছু হতো। তোমার জন্য চিন্তা করছে আম্মু আয়রা।”
মেঘ রোদ কে দেখছে। রোদ কে দেখে হাজার বছর পার করতে ইচ্ছা করছে। মেঘ আবেগ মিশ্রিত গলায় বললো,
–” আর আপ্নার চিন্তা হয় নি?”
রোদ মেডিসিন লাগানো থামিয়ে বললো,” আমার চিন্তা হলেই কি আর না হলেই কি তোমার তো কোনো যায় আসে না।”
মেঘ মৃদু হেসে বললো,” সব জেনে বসে আছেন।”
–“আমি সব ই জানি।”
–“আচ্ছা তাহলে আপ্নার পায়েল কই আপনি জানেন না কেনো?”
রোদ কেনো যেনো ঠোঁট চেপে হাঁসল। তার পর বললো,
–“বড্ড বেশি কথা বলছো এখন। হাত কেটে শেষ করছো তো এই জন্য ই। একদম পানি লাগাবেনা হাতে ব্যান্ডেস করে দিলাম।আর চুলের কি অবস্থা করছো, খাও নি তো। চলো খেয়ে নিবে।”
মেঘ রোদের সামনে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,” এই হাত তো ডান হাত আর খাবো কিভাবে?”
রোদ দেখলো মেঘের ডান হাত কেটে গেছে। রোদ আয়রা কে ডেকে ঘরে খাবার দিতে বললো। মেঘ বললো,
–” আমি খাবো কিভাবে তা বলুন।”
রোদ চিরুনি এনে মেঘের পাশে এসে বললো,” আমি খাইয়ে দিবো। আর ফ্লোরে বসো।”
মেঘ অবাক হয়ে বললো, “কেনো?”
–” চুল তো পাগলীদের মত করে রাখছ। হাত কেটে গেছে তাই চুল বাঁধতে পারবে না আমি বেঁধে দিবো।”
–“আয়রা বেঁধে দিবে আপনি পারবেন না।”
রোদ জোর করে মেঘ কে ফ্লোরে বসিয়ে দিয়ে ও বেডে বসে বললো, “বলছি আমি দিবো তারপরে ও এতো কথা কেনো? রোদ্দুর চৌধুরী সবকিছু পারে।”
মেঘ মুখ বাঁকা করে বললো,” আমার চুল বেনী করে দিন দেখি কত পারেন।”
–” হুম দাঁড়াও।”
বলে রোদ মেঘের চুল আছড়ে দিতে নিলো। মাঝে মাঝে রোদের হাতের ছোঁয়া লাগতে ই মেঘ কেঁপে উঠছে। রোদ আপন মনে চুল বেনুনী করে সামনের দিকে দিলো। মেঘের ঘাড়ের দাগে ইচ্ছা করে একবার হাত দিলো রোদ আর মৃদু হাঁসল। রোদের আচরণে মনে হচ্ছে রোদ জানে মেঘের পরিচয় কিন্তু প্রকাশ করছে না। মেঘ রোদের স্পর্শ পেয়ে বললো,
–“উফ কাঁধে কেনো হাত দিলেন বেনুনী তো করা শেষ।”
রোদ শয়তানী করে বললো, “না না ইচ্ছা করে তো হাত দেই নি। তোমার চুল তো হালকা বাদামী কিন্তু তার মাঝে কালো দাগ দেখে ভাবলাম এইভাবে চুলের অযত্ন করে উঁকুন হয়েছে বোধহয়।”
মেঘ রেগে গেলো। বললো, “উঁকুন আপনার মাথায়! আমার জীবনে উঁকুন ছিল না।”
–” না আমি দেখলাম তো চুলের ভেতরে!”
বলে রোদ হাসছে। মেঘ রাগ কমানোর চেষ্টা করে বললো,
–” দেখুন ওইটা আমার এমনি দাগ মজা করলে কিন্তু এখন ভালো হবে না।”
রোদ সরু চোখে তাকিয়ে বললো,” বেশি ভালো ভালো লাগে না আমার।”
এর মাঝেই আয়রা খাবার নিয়ে এসে বললো,” ভাইয়া তোর আবার কি ভালো লাগে না।”
রোদ এই মুহূর্তে আয়রা কে দেখে বললো, “তোকে এখন ভালো লাগছে না।”
“ভাইয়া…”
মেঘ ভ্রু কুঁচকে বললো,” আয়রা কে আপনি একদম দেখতে পারেন না কেনো হ্যাঁ?”
রোদ খাবার নিয়ে মেঘের সামনে ধরে বললো, “পরে বলবো এখন খেয়ে নিবা।”
মেঘ আয়রার দিকে তাকালো। মেঘের লজ্জা করছে আয়রার সামনে রোদের হাতে খেতে। আয়রা একটু হেসে বললো,
–” আমি যাচ্ছি দুজন প্রেম করো।”
বলেই আয়রা হাসতে হাসতে চলে গেলো।মেঘ আরো লজ্জা পেয়ে গেলো কিন্তু অনেক ভালো লাগছে আজকে। আরেকদিন রোদ খাইয়ে দিলেও সেদিন মেঘ ভেবেছিল রোদ অন্য কাউকে ভালোবাসে কিন্তু আজ মেঘ জানে রোদ শুধুই তার।
___________
বিকেল পাঁচ টা বাজে। একটু আগেই বাড়ি থেকে নিজের সিআইডি অফিসে আসছে রোদ। আগে থেকে রুদ্র এসে গেছে। রোদ কে দেখে রুদ্র গেম খেলতে খেলতে বললো,
–“এতো দেরী করলি কেনো?”
রোদ বসে বললো, “আর বলিস না মেঘ হুট করে বাবার বাড়িতে চলে গেছিল। হাত কেটে একাকার কান্ড করেছে। চিন্তা হচ্ছে এখন যে কি করবে। তবে আজ অনেকটা খুশি লাগছে আমার।”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বললো, “মেঘের হাত কেটেছে বলে তুই খুশি! ভাই তুই মানুষ তো! কখনও খুব চিন্তা করিস আবার খুশি তুই।”
রোদ রুদ্র কে ধমক দিয়ে বললো,” চার লাইন বেশি বুঝিস কেনো তুই? আমি এখনো বলিনি কেনো খুশি লাগছে। আর মেঘের জন্য আমার যথেষ্ট চিন্তা হয় বুঝলি। ও আমার বউ ভুলে যাস না।
–” তো তুই কি বাইকার লেডি কে খুঁজে পেয়েছিস নাকি পায়েল কে?”
রোদ আনমনে বললো, “আমি তো আমার পায়েল কে অনেকদিন আগেই খুঁজে পেয়েছি রে!”
–“কি! আমায় তো বলিস নি। কোথায় সে?”
রোদ জ্বীবে কামড় দিয়ে বললো, “যাক তোকে তো বলে ফেললাম।”
–“তারমানে তুই আমার থেকে লুকিয়ে রেখেছিস। এখনই বল কোথায় পায়েল? আমার সাথে দেখা করা প্লিজ। আর পায়েল কে পেয়েছিস মানে তো লেডি বাইকাকেও পেয়েছিস! নাকি লেডি বাইকার অন্য কেউ?”
.
রোদ টেবিলের উপরে হাত রেখে বললো, “একসাথে কত প্রশ্ন করবি তুই! আমি কি আসামী নাকি?”
–“তুই এখন আসামী ই। পায়েল কে পেয়েছিস কিন্তু এখনও আমার সাথে দেখা করাসনি তুই আমার বন্ধু ভাবতেও পারছি না।”
রোদ রুদ্রের দিকে ঝুঁকে বললো, “তোর সাথে অনেক আগেই দেখা করিয়ে দিয়েছি।”
রুদ্র পুরোই অবাক হয়ে বললো, “কে সে? এত ভনিতা না করে বল তাড়াতাড়ি। ”
রোদ চোখ বন্ধ করে বললো,” সে আর কেউ না আমার বিয়ে করা বউ মেঘলা! ”
রোদের কথা শেষ হতে ই রুদ্র অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো। বললো,
–“তুই মজা করছিস আমার সাথে তাইনা? মেঘলা কিভাবে পায়েল হয়?”
আমি তোর সাথে মজা করছি না সত্যি বলছি।
রুদ্র রোদের পাশে গিয়ে বসে বললো, “কিভাবে জানতে পারলি তা বল। আর ভাবি জানে তো? ”
রোদ রুদ্রের দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে জানালার পাশে গেলো। বললো,
–“তোর ভাবি জানতো না কিন্তু আজ জেনে গিয়েছে সে নিয়ে আমি একটু চিন্তায় আছি।”
–“কিসের চিন্তা? এইটা তো আরো ভালো খবর।”
–“হুম ভালো খবর কিন্তু তার সাথে সাথে দুশ্চিন্তারও! কারণ মেঘের লাইফ রিস্ক আছে।”
রুদ্র কিছুই বুঝছে না। রোদের পাশে গিয়ে বললো,” ভাই আমি কিছুই বুঝছি না। কিসের লাইফ রিস্ক? আর তুই কিভাবে জানলি তা বল? ”
রোদ মুচকি হেসে বসে বললো,” বস আগে শান্ত হয়ে। লাইফ রিস্ক কেনো তা একটু ভেবেই পাবি আর আমি কিভাবে জানলাম তা বলি, কিন্তু রুদ্র এই কথা তুই আর আমি ছাড়া কেউ যেনো না জানতে পারে এমন কি তোর গার্লফ্রেন্ড ও না! ”
রুদ্র রোদের সামনে বসে বললো,” অর্চি তো ভাবীর বান্ধবী তাহলে শুনলে ক্ষতি কি?”
–“অনেক ক্ষতি। মেঘের পরিচয় এখন কাউকে দেয়া যাবে না। এমন কি মেঘ জানে আমিও জানি না তার পরিচয়। ”
–” ঠিক আছে এখন বল কিভাবে জানতে পেরেছিস? ”
রোদ বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো, “মেঘের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক তা আমি প্রথম দেখাতেই বুঝেছিলাম। ওকে যখন প্রথম দেখি আমার হৃদ স্পন্দন যেনো বেড়ে গিয়েছিল কিন্তু কেনো তার কারণ তখন বুঝিনি।
দ্বিতীয়বার যখন দেখা হলো ও ঘুমিয়ে ছিল ওর ঘুমন্ত চেহারার মায়ায় যেনো আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছিলাম আমি। কিন্তু সেই ঘোর কিংবা মায়া কেনো হয়েছিলো আমি নিজেও জানি না। আমি সেই মায়া লুকানোর চেষ্টায় ওর সাথে ঝগড়া করলাম কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস সেই দিনেই গ্রামের মানুষ আমাদের বিয়ে দিয়ে দিলো। বিয়ের পরে শুধু এইটাই মাথায় ঘুরছিল আমার পায়েল ফিরে এসে যদি দেখে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করেছি সে তো আমায় ভুল বুঝবে। তবুও বাবার জন্য মেঘ কে আমি বাসায় আনি তখনও বিন্দুমাত্র বুঝিনি মেঘ ই আমার পায়েল।
আমাদের বাসর রাতে ঘরে প্রবেশ করেই আমি কিছুটা স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম মেঘের চুল দেখে। মেঘ কে প্রথম যখন দেখেছি ওর চুল দেখার সৌভাগ্য আমার হয় নি কারণ ও হিজাবে ছিল। সেই একই রঙের চুল পায়েলেও। প্রথমে ভাবি হয়তো কালার করা চুল কিন্তু আমার ভুল ভাঙ্গে যেদিন মেঘের বাড়িতে যায় সেদিন। মেঘ একটু বাহিরে যায় আমি ওর রুমে শুয়ে ছিলাম হঠাৎ চোখে পড়ে বেড সাইড টেবিলে মেঘের ছোট বেলার ছবি! না মেঘের বললে ভুল হবে মেঘ রুপি পায়েলের ছবি! ওর ছোট বেলার ছবি আর এখনকার একটা ছবি ছিল। ছবিটা দেখে আমার আকাশ পাতাল উলট পালট হয়ে যাচ্ছিল আর সাথে অনেক আনন্দ ও। ”
রুদ্র মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শোনার পর বললো,”তাহলে তো ভাবি ই পায়েল তাহলে তুই লেডি বাইকারকে খুঁজতে আমার কল এ চলে এসেছিলি কেনো?”
রোদ নিঃশব্দে হাসি দিলো। চেয়ার থেকে উঠে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘আমি নিশ্চিত জানতে চেয়েছিলাম আমার সন্দেহ করা বাইকার লেডি ই কি আমার পায়েল আর মেঘ। কিন্তু তার দেখায় তো পেলাম না।তবে মেঘের ঘাড়ের দাগ আমি অনেক আগেই দেখেছিলাম ও যখন ঘুমিয়ে ছিল। তবে কিছুই সিওর না বাইকার লেডি নিয়ে। ”
রুদ্র কে একটু চিন্তিত দেখাচ্ছে। গালে হাত দিয়ে বললো,”একটা ছবি দেখে তুই কিভাবে নিশ্চিত মেঘ ই পায়েল? হতেও তো পারে হয়তো চেহারার মিল আছে শুধুই! ”
রোদ রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে ঘরে পায়চারি শুরু করলো। বললো,” রুদ্র আমি সিআইডি তাই একটা ছবি তে বিশ্বাস করার মানুষ আমি না তুই ও জানিস ।”
–“তাহলে আর কি কারণে বুঝলি? ”
–” মেঘের ছবি দেখার পরই তুই কল করিস তাই আর সময় পাই নি সেদিন সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে। পরের দিন মেঘের বাবার হাসপাতাল এ যায় আর তার সাথে কথা বলি এই ব্যাপার নিয়ে কিন্তু তিনি প্রথমে কিছুই বলতে রাজি নন। আগে থেকে আমি সবকিছু খোঁজ নিয়ে রেখেছিলাম উনাদের ব্যাপারে উনাদের কখনো সন্তান হবে না এই রিপোর্ট তাঁকে যখন দেখালাম তিনি ঘেমে যাচ্ছিলেন। তিনি তখনও বলতে রাজি নন কিন্তু আমি যে মেঘের প্রেমে পড়ে যাচ্ছি কিন্তু পায়েলের কথা ভেবে মেঘ কে মানতে পারছি না এইসব শুনে উনি সবকিছু বলতে রাজি হোন। কিন্তু উনি খুব ভয় পেয়ে ছিল তাই উনাকে আমার সিআইডি এর পরিচয় টা দেই আর উনি আমায় সবকিছু বিস্তারিত বলেন। মেঘ কে উনি একটা নদীর ধারে পেয়েছিল। ”
–” তারমানে তুই অনেক আগেই জেনে গিয়েছিস ভাবীর আসল পরিচয়। বাহ্ ভাই বাহ্ তুই তো সুপার খিলারী! ভাবি জানলো কিভাবে তুই বলেছিস? ”
–” আরে না আমি বলিনি। ও নিজেই জানতে পেরেছে সে অনেক কান্ড। আমিও চেয়েছিলাম ও নিজেই জানুক কিন্তু প্রবলেম একটাই যদি কাউকে বলে ফেলে? ”
–“তাও তো। চিন্তা করিস না ভাবি অনেক বুদ্ধিমতী এমন কিছু করবেনা। তবে কে ভাবীর ক্ষতি করতে চায় তাঁকে তো তুই চিনে গেছিস তাহলে শাস্তি দিবি কবে? আর একটা কথা ভাবীর থেকে জিজ্ঞেস করবি বাইক চালাইতে পারে নাকি তাহলে সব প্রবলেম solve! ”
–‘জেনেছি কিন্তু আমি দেখতে চাই তারা আর কি কি করতে পারে। প্রমাণ দরকার রুদ্র। আর আমার কেনো যেনো মনে হয় মেঘ ই সেই বাইকার কারণ মেঘ কার ও চালাইতে পারে। তবুও ভালো কথা বলেছিস জিজ্ঞেস করতে হবে।”
রুদ্র রোদের কাঁধে হাত রেখে বললো,” সবসময় আমি তোর পাশে আছি।”
______________
টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। বাতাসে স্নিগ্ধ গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে। বেলকনীতে এখন মেঘের পছন্দ মত রকিং চেয়ার, উপন্যাসের বই আর ফুলের গাছ রয়েছে। মেঘ কখনো রোদ কে বলেনি এসবের কথা কিন্তু রোদ কেনো যেনো কয়েকদিন আগে বেলকনী নতুন ভাবে সাজিয়েছে। মেঘ কিছু বলেনি কিন্তু মনে মনে অনেক খুশি হয়েছে। ভালোবাসার মানুষ মনের কথা না বলতেই বুঝে যাওয়া টা মনে হয় সবচেয়ে বড় পাওনা জীবনে। মেঘ বেলকনীতে বসে গ্রিলের মাঝে দিয়ে বৃষ্টির পানিতে হাত ভেজাচ্ছে। কিন্তু ডান হাত ভেজাল না কারণ ব্যান্ডেস করা। মেঘের বৃষ্টিতে ভেজা হয় নি তেমন টা কারণ বৃষ্টিতে ভিজলে মেঘের মাথা ব্যাথা আর জ্বর বাঁধে। কিন্তু আজ এই বৃষ্টি প্রচণ্ড ভালো লাগছে মেঘের। মাঝে মাঝে নিজে নিজে হাসছে। আজ তার সবকিছু ভালো লাগার ই কথা কারণ সে তার নিজের পরিচয় আর ভালোবাসার মানুষ কে পেয়েছে। হাত ওরনায় মুছে রকিং চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে রোদের কথা ভাবছে। রোদ কে মেঘ তার পরিচয় কিভাবে জানিয়ে অবাক করে দিবে সে প্ল্যান করছে। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছে না কিভাবে কি বলবে। রোদ কে মেঘের পরিচয় দেয়ার পর দুজন মিলে অপরাধী কে খুঁজবে তাই ভাবলো মেঘ। উঠে দাঁড়ালো মেঘ। হাসি মুখে গ্রিলের দিকে এগিয়ে গেলো। বৃষ্টির জল অল্প অল্প আসছে মুখে। কিছুক্ষণ পর একা একা বললো,
“বৃষ্টি তুমি ই বল না কিভাবে বলবো রোদ কে সবকিছু? ভালোবাসি বলতে আমি পারব না সেই শক্তি আমার নেই কিন্তু আমি ই যে উনার ভালোবাসার মানুষ তা তো জানানো প্রয়োজন। আমার কাল অব্দি অনেক কষ্ট ছিল ওই আলমারির চিরকুট আর শাড়ি দেখে কিন্তু আজ দশ গুণ বেশি ভালো লাগছে। আচ্ছা ওই শেষের শাড়ি টি পড়ে ঠিক যেভাবে রোদ চেয়েছে সেভাবে রোদের কাছে পরিচয় দেয়া যায় তাইনা? তাহলে রোদ অনেক চমকে যাবে। কিন্তু কবে বলব? ”
বলে মেঘ মুখ ভার করলো। এমন সময়ে আয়রা বেলকনিতে গিয়ে বললো,” একা একা কি বিড়বিড় করো ভাবি? ”
মেঘ আয়রার কথায় আয়রার দিকে তাকিয়ে দেখলো আয়রার হাতে কফি। মেঘ মুচকি হেসে বললো,
–” কিছুনা আয়রা বৃষ্টির পানি দেখছি। ”
আয়রা কফি মেঘ কে দিয়ে দুজন বসল। আয়রা একটু হেসে বললো,
–“হুম তা বুঝলাম কিন্তু হাত কিভাবে কেটে গেছে? আর তোমার আজ বেশ মন খারাপ তাইনা ভাবি?”
মেঘ কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো, “এই সময়ে কফি খুব মিস করছিলাম ভালো লাগছে। আর ননদী আজ আমার মন অনেক ভালো যা বলে বুঝাতে পারবো না। তবে কিভাবে হাত কেটে গেলো আর কেনো মন ভালো এই প্রশ্ন করবে না কারণ এখন আমি উত্তর দিতে পারবো না। ”
আয়রা অভিমানী কন্ঠে বললো,” আমি তো তোমার নিজের বোন না সেজন্য বলবে না বুঝেছি। ”
মেঘ আয়রা কে কিছুটা জড়িয়ে নিয়ে বললো,” আমার বোন নেই কিন্তু তুমি তো আমারই বোন আয়রা। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি আজ নিরুপায় সময় আসলে সবকিছু বলব। আর মনে রেখো তুমি আমার জন্য খুব স্পেশাল।”
আয়রার মুখে হাসি ফুটল। হেসে বললো,” ঠিক আছে ভাবি জিজ্ঞেস করব না কিন্তু একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
–“হুম করো।”
–“ভালোবাসো ভাইয়া কে? ”
মেঘ আয়রার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বললো,” হুম। ”
বলে আর এই বিষয়ে কথা বাড়াতে চাইলো না মেঘ। তাই কফির কাপে আরেকটা চুমুক দিয়ে বললো,
–“আয়রা দারুণ হয়েছে কফি টা। কিভাবে বুঝলে আমি কফি খাই? ”
আয়রা কাপ রেখে বললো, “আমি জানতাম তুমি কফি খাও কিন্তু এখন খাও জানতাম না। ভাইয়া যাওয়ার সময়ে বলে গেছিল তোমায় এই সময়ে কফি দিতে।”
মেঘ কথাটা শুনে অবাক রোদ এতকিছু কিভাবে বুঝে! মেঘ মুচকি হেসে বললো,
–” বাহ রোদ এতকিছু জানে জানতাম না। আচ্ছা আয়রা তোমার ভাইয়ার জন্মদিন কবে?”
“ভাইয়ার জন্মদিন! ”
বলে একটু ভেবে আয়রা বললো,” ভাবি ভাইয়ার জন্মদিন তো একদিন পরেই। ”
একদিন পর শুনে মেঘ কেনো যেনো হাঁসল। মনে মনে ঠিক করলো কাল কে রোদ কে জানাবে সেই তার পায়েল। তারপর দুজন মিলে জন্মদিন পালন করবে। রোদ হয়তো অনেক খুশি হবে।
___________
রাত দশ টা বেজে তেরো মিনিট রোদ এখনও বাসায় আসে নি। মেঘ বারবার কল করছে কিন্তু ফোন অফ দেখাচ্ছে। পুরো ঘরে পায়চারী করছে মেঘ, চিন্তায় অস্থির হয়ে গেছে। এর মাঝেই দরজা খোলার শব্দ শুনতে পারল মেঘ। উদগ্রীব চোখে তাকিয়ে দেখলো রোদ এসেছে, দ্রুত পায়ে রোদের কাছে গেলো মেঘ। রোদ মেঘের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসি দিলো। মেঘ সাথে সাথে রাগী ভাবে বললো,
–“এইখানে হাসার কি হলো হ্যাঁ? এতক্ষণ কই ছিলেন?”
রোদ মেঘের চিন্তিত মুখ দেখে হাসি চেপে রেখে বললো,”একটা মেয়ের সাথে ডেটিং এ গেছিলাম।”
বলে ফোন চার্জে দিলো।
মেঘের ভীষণ রাগ হচ্ছে কিন্তু ও জানে রোদ মিথ্যা বলছে। তবুও ইচ্ছা করছে রোদ কে কয়েকটা মাইর দিতে। মেঘের রাগী মুখ দেখে রোদের ভালো লাগছে। মেঘ কিছু না বলে রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,
–” তো মেয়েটা আপনার দিকে একটুও নজর রাখে নি বুঝি? মাথায় যে বৃষ্টির পানি পড়েছে তা দেখেনি।”
রোদ মাথায় হাত দিয়ে বললো, “উফ আমি তো ভিজে গেছি। আসলে ওর সাথে বৃষ্টির পানি তে ভিজছিলাম তো!”
এইটাও রোদ এমন ভাবে বললো যেনো সত্যি বলছে। মেঘ এখনও কিছু না বলে চুপচাপ নিজের ওরনার আঁচল দিয়ে রোদের মাথার পানি মুছে দিতে লাগলো। রোদ কিছুটা অবাক হলো মেয়েটা এত ক্যায়ারিং তা আগে বুঝতে পারেনি। মাথার পানি মুছে দেয়ার পর মেঘ বললো,
–” বৃষ্টিতে ভিজলে শরীর খারাপ করবে আর ভিজবেন না।”
মেঘের রাগ প্রকাশ না দেখে রোদ পুরোই অবাক। মেঘের মুখের কাছে গিয়ে বললো, “আমার মনমহিনী তো বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ভালোবাসে তাই আমি হয়তো তোমার কথা রাখতে পারব না মেঘ।”
মেঘ রাগে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করলো। কিছুক্ষণ নীরব থাকলো এর মাঝে রোদ গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে আসলো। রোদ ভাবলো এত নীরব কেনো মেঘ? একটু ভয়ও করলো ঝড় আসার আগের সময়ের মতো নীরবতা দেখে। ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো মেঘ খাবার নিয়ে বসে আছে। রোদ কে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
–“আপনি মনে হয় আপনার সেই মনমহিনীর সাথে ডিনার করে এসেছেন।”
রোদ শয়তানী হাসি দিয়ে বললো,” তুমি কিভাবে বুঝলে?”
মেঘ মুচকি হেসে বললো, “আমি না বুঝলে আর কে বুঝবে বলুন? তো আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন আমি খেয়ে নেই।”
রোদ ভেবেছিল মেঘ রোদ কে জোর করবে খাওয়ার জন্য কিন্তু তা করলো না। এদিকে রোদের পেটের মাঝে ক্ষুধায় ইঁদুর দৌড়ানো শুরু হয়ে গেছে। তবুও মেঘ কে না বুঝতে দিয়ে বললো,
–” তুমি তো একা খেতে পারবে না এসো তোমায় খাইয়ে দেই।”
মেঘ কোনো উত্তর না দিয়ে হাতের ব্যান্ডেস খুলতে শুরু করলো। রোদ অবাক হয়ে ওকে আটকে বললো,
–” কি করছো তুমি? হাত এখনও ঠিক হয়নি তো।”
মেঘ হাত ঝাড়ি দিয়ে বললো, “আমার হাত না হয় কেটে ফেলে দেয়া লাগুক তাতে আপ্নার কি? যার সাথে এতক্ষণ ছিলেন তার খেয়াল রাখবেন কিন্তু আমার না একদম বলে দিলাম।”
রোদের আর বুঝতে বাকি রইলো না মেঘের প্রচণ্ড অভিমান হয়েছে। রোদ মেঘের হাত আলতো করে ধরে বললো,
–” তুমি তো আমার বউ তাহলে তোমার খেয়াল তো রাখতেই হবে।”
আবারো মেঘ হাত সরিয়ে উঠে বললো,” কিসের বউ! আমি কারো বউ না। চলে যাবো আমি বাড়ি থেকে।”
রোদ মেঘ কে পেছন থেকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরলো। আজ প্রথম রোদ মেঘ কে জড়িয়ে ধরেছে। মেঘ কেঁপে উঠলো সাথে সাথে রোদের জড়িয়ে ধরায় অবাক হয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। মেঘ কে কিছু না বলতে দিয়ে রোদ মেঘের কানের কাছে মুখ রেখে বললো,
–” অভিমান হয়েছে আমার বউ এর বুঝি? আমি তো কারো সাথেই কোথাও যাই নি। দেখছিলাম আমার বউ রাগ করে কি না।”
মেঘ একটু সরে গিয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো, “জানি আমি তা। কিন্তু আপনি সবসময় কাউকে না কাউকে নিয়ে মিথ্যা বলে আমায় রাগাবেন কেনো?”
রোদ মুচকি হেসে মেঘের বাহু ধরে রোদের দিকে ঘুরাল। মেঘের চোখে পানি ছল ছল করছে। এইবার রোদের খুব খারাপ লাগছে তবে বুঝতে পারলো মেয়েটা তাকে প্রচণ্ড ভালোবেসে ফেলেছে। শান্ত কন্ঠে রোদ বললো,
–” ভালোবাসি!”
ভালোবাসি শুনে মেঘের হৃদয়ে যেনো ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেলো। চোখ থেকে দু ফোটা পানি পড়ে গেলো। রোদের দিকে তাকিয়ে আছে সে ।হুট করে রোদের এ কথা আশা করেনি সে। মেঘের দিকে তাকিয়ে রোদ লক্ষ্য করলো মেঘ এখন পুরোপুরি শান্ত। এতটা শান্ত মেঘ কে কখনোই দেখা যায় নি। রোদ তখন ই হাসি দিয়ে বললো,
–” এইযে মেঘ তোমায় বলিনি ভালোবাসি ।আমি পায়েলকে ভালোবাসি তাই বলেছি।”
মেঘ এইবার কথাটা শুনেই তেলে বেগুনে হয়ে উঠে রোদের বাহু তে দুইটা মেরে বললো,” কথা বলবেন না আমার সাথে। শয়তান ছেলে কোথাকার।”
বলে বেডে গিয়ে বসলো।
রোদ খাবার হাতে নিয়ে বললো, “খাইয়ে দিবো?”
মেঘ রাগী গলায় বললো,” নিজেও খাবেন আর আমাকেও খাইয়ে দিবেন। আমার হাত ঠিক না হওয়ার পর্যন্ত আপনাকেই খাইয়ে দিতে হবে এই কথা কি আমার বলে দিতে হবে বারবার! ”
রোদ এইবার হাসি দিলো মনে মনে। মেঘ এখনও ছোট দের মতই আছে স্বভাবে।
______________
.
চলবে….