#মনের_গহীনে_শুধুই_তুমি
#পর্ব_21+22 (#স্পেশাল_পর্ব)
#Mst_Meghla_Akter_Mim
“প্রিয় আয়নাময়ী,
অবাক হয়েছ সম্বোধন শুনে? সবাই তোমাকে আয়রা বলে ডাকে কিন্তু তুমি আমার কাছে আয়নাময়ী! কারণ কি জানো? তোমাতে আমি নিজেকে যেনো দেখতে পাই! আমার মনে কার বসবাস জানতে চেয়েছিলে কিন্তু এইটা কি বুঝতে পারো নি এই মনে শুধু তোমারই বসবাস!…”
এইটুকু পড়ে আয়রা যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। ও যাঁকে ভালোবাসে সে ও ওকে ভালোবাসে তা যেনো বিশ্বাস যোগ্য হতে ই পারে না কিন্তু এই লেখা তো মিথ্যা না। আয়রার চোখ থেকে আনন্দের অশ্রু বইছে। আয়রার চিঠিটা পুরো পড়া হয়নি। আরো কি লিখেছে জানতে খুব ইচ্ছা করছে। আয়রা আবারো পড়তে শুরু করলো,
“তোমার চোখে অশ্রু কেনো আয়নাময়ী? তোমার চোখে অশ্রু মানায় না। ভাবলে কেমন করে বুঝলাম তুমি কাঁদছ? জানতো কাউকে ভালোবাসলে সে কখন কি করছে কোনো এক অদৃশ্য শক্তিতে তা যেনো দৃষ্টির সামনে প্রতীয়মান হয়। তবে তোমাকে কান্না করতে এখন বারণ করব না! কারণ এ কান্না তোমার আনন্দের।
আয়নাময়ী!
ভালোবাসবে আমায়? জিজ্ঞেস কেনো করছি? আমি তো জানি তুমি আমায় ভালোবাস কিন্তু তা প্রকাশ করতে কেনো এতো ভয়? জানতো আয়নাময়ী আমার হৃদয়ের আয়নায় শুধু একজন ই আছে সে আর কেউ না তুমি। ভালোবাসি বলবে একবার? তারপর তোমার সমস্ত নীরবতাও সাদরে গ্রহণ করতে প্রস্তুত আমি। কোনো একটা চন্দ্রালোকিত রাতে কোনো এক প্রেম উপন্যাস পড়ে শুনাতে চাই তোমায়। তুমি আমার কোলে মাথা রেখে সেই উপন্যাসের প্রতিটি বাক্য উপলব্ধি করবে আর শুরু হবে আরেকটা নতুন উপন্যাসের ‘আমাদের প্রেম প্রণয়’! সে সুযোগ দিবে আয়নাময়ী? উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম আর আবারো বলি ‘ভালোবাসি’! আমার মনের গহীনে শুধুই তুমি!
ইতি,
দিহান… ”
চিঠিটা পড়ে আয়রার কান্নার বেগ আরো যেনো বেড়ে গেলো। চিঠিটা বুকে জড়িয়ে কান্না করছে আয়রা। চোখের পানিতে চিঠিটা অর্ধ ভেজা হয়ে গেছে। মেঝেতে বসে কিছুক্ষণ কেঁদে কান্না প্রায় থামিয়ে ফেললো আয়রা। একা একা বললো,
–” কেনো ভালোবাসলেন? হারিয়ে ফেলি যদি আপনাকে! ভয় করে আমার খুব জানেন তো। ভাইয়ার কষ্ট দেখে আর যে কষ্ট নিজে পেতে চাই না। না আমি আপনাকে বলব না ভালোবাসি তাহলে যদি হারিয়ে যান।”
চোখের জল মুছে সুন্দর করে চিঠিটি রেখে দিলো আয়রা। নীরবে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে আছে।
________________
বিকেল পাঁচ টা বেজে পাঁচ মিনিট এখন। আছরের নামাজ পড়ে মেঘ জায়নামাজ উঠিয়ে রাখলো। জায়নামাজ রাখতেই খেয়াল করলো পায়ের পাশে কি যেনো পড়লো। মেঘ মেঝেতে তাকিয়ে দেখলো কয়েকটা চাবি। কিন্তু এ চাবি মেঘের পরিচিত নয়। মেঘ চাবি তুলে ভালোভাবে দেখলো বুঝতে পারলো এটিই আলমারির চাবি! মেঘ চাবি টা দেখে রেখে দিতে নিয়ে বললো,
–“কোথায় কি রাখেন নিজেও জানেন না। একটু ঠিকভাবে রাখতে জানে না মনে হয়।”
চাবি রাখতে নিয়ে আর রাখলো না মেঘ। মুখে কোনো কিছু প্রাপ্তির হাসি ফুটে উঠলো। একা একা বললো,
–” আমি তো ভুলেই গেছিলাম। ধন্যবাদ রোদ! আলমারি তে কি আছে আজ জানতে পারবো আমি।”
তৎক্ষণাৎ আলমারি খুলতে গেলো। মেঘের একটু ভয় লাগছে কারণ সে জানেনা কি আছে এতে। তবুও আলমারির লক খুলেই ডোর খুলতেই মেঘের সামনে আলমারি ভর্তি অনেকগুলো শাড়ী দেখতে পেলো। মেঘের পায়ের নিচে থেকে যেনো মাটি সরে যাচ্ছে। এতগুলো শাড়ি কার? আর সেদিন রোদ মেঘ কে একটা শাড়ি দিয়েছিল তা কি তাহলে রোদেই কেনা? মেঘ ভাবনার জগতে হারিয়ে যাচ্ছে। এ সব জল্পনা কল্পনা থেকে বেরিয়ে মেঘ শাড়ি গুলো দেখতে নিলো, বিশ ত্রিশেক শাড়ি রয়েছে এখানে। আর শাড়ি গুলো অনেক সুন্দর। মেঘ শাড়ি ভালোভাবে হাতে নিয়ে দেখতেই শাড়ির ভেতর থেকে একটা চিরকুট পড়ে গেলো। শাড়ি রেখে মেঘ চিরকুট তুলে নিয়ে খুলল। নীল কালী তে লেখা আছে,
“মনমহীনি আজ তোমার পনেরো তম জন্মদিন কিন্তু তোমাকে দেখতে কেমন আজও জানিনা। কিন্তু এইটা জানি সদ্য কৈশোরে পদার্পণ করেছো তুমি। তোমাকে দেখতে অনেক ইচ্ছা করছে পায়েল। কিন্তু এতদিনেও তোমায় খুঁজে পেলাম না। তবে এই শাড়ি টি তোমার জন্মদিনের উপহার! লাল রঙের শাড়ি টি পড়ে তোমায় বেশ লাগবে। ”
মেঘের হাত কাঁপছে। তাহলে শাড়ি গুলো পায়েলের জন্য। মেঘের চোখে পানি জ্বলজ্বল করছে। ভালোবাসার মানুষের অন্য কাউকে ভালোবাসা খুব কষ্টের হয়। ঠোঁট চেপে মেঘ কান্না আটকে আবারো অন্য একটা শাড়ি দেখতে নিলো। এবারের শাড়ি টি গোলাপি রঙের। শাড়ির ভাঁজে আবারো একটা গোলাপি চিরকুট। তাড়াহুড়ো করে কাগজ খুলে দেখলো,
“তোমাকে বোধহয় পেয়েও হারিয়ে ফেললাম মহিনী! এবারের জন্মদিনে তুমি আর আমি একসাথে থাকতে পারতাম যদি একবার তোমার মুখ দেখতে পারতাম। তবে তুমি অনেক সুন্দরী হয়েছ পেছন থেকেই বুঝতে পেরেছি। তোমার মধ্যে সেই তেজ আর প্রতিবাদী মনোভাব আমায় মুগ্ধ করে দিয়েছে। গোলাপি রঙে তোমায় গোলাপ রানী লাগবে। তবে এবার আরেকটা জিনিস আছে তোমাকে দেয়ার সেটা আমি নিজের হাতে দিবো। কি ভাবতে পারছ? না আমি বলব না। তোমাকে যেভাবে দেখেছি ঠিক সেই জিনিস ই দিবো তোমায়। ”
মেঘ চিঠিটি রেখে আবারো আরেকটা নীল শাড়ি পেলো। সেখানে চিরকুটে লেখা,
” এখনও খুঁজে পেলাম না তোমায় প্রায় তেরো বছর কেটে গেলো আর তোমাকে খুঁজেও পেলাম না পুরো দের বছরে। এই নীল শাড়ি টি তোমার সতেরো তম জন্মদিনের উপহার।”
এভাবে কয়েকটা শাড়ি দেখলো মেঘ। মাথায় এক তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। অবশেষে আলমারির ঠিক উপরের কাবাডে একটা প্যাক করা কিছু দেখলো। প্যাক করা কিছু তাই আর খুলে দেখলো না কিন্তু উপরে লেখা আছে, ‘সেই স্পেশাল জিনিস টি আছে যা তোমায় ষোলোতম জন্মদিনে দিতে চেয়েছি।’
তার পাশে একটা চাবি দেখলো কিন্তু সেদিকে খেয়াল না করে মেঘ পাশে থাকা একটা সাদা শাড়ি দেখে তা দেখতে নিলো। শাড়ি টি সাদা আর গোলাপির মিশ্রণ, বেশ সুন্দর। আর এই শাড়ি টির ঠিক উপরে সাদা চিরকুট!
“তোমাকে আজ কি বলে সম্বোধন করব খুঁজে পাচ্ছি না। তুমি আমার মনের রাজ্যের রানী। এই শাড়ি আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ। ভালোবাসার আবেশে হারিয়ে যেতে চাই তোমাতে আমি। কোনো একদিন তুমি প্রদীপ হাতে অন্ধকারে এই শাড়ি পড়ে অপেক্ষা করবে আমার জন্য। আমি অবশ্য ইচ্ছা করেই তোমায় অপেক্ষা করাব! কারণ তোমাকে দূর থেকে দেখতে চাই আগে। তোমার অপেক্ষা রত চেহারায় বিরক্তি নাকি চিন্তা থাকবে তা দেখতে চাই। তোমার সব রূপ আমি দর্শন করতে চাই মনমহিনী। জানতো আমি…… ”
চিরকুট টি আর পড়তে পারল না মেঘ। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে মেঘের। কোনো মতে শাড়ি গুলো ঠিক করে দেখে দিলো। চোখ থেকে বিন্দুমাত্র পানি পড়ছে না। নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও দেখতে নিলো আলমারি টা। ড্রায়ারের দিকে তাকিয়ে দেখলো ছোট একটা কাগজে লেখা আছে “তোমার অলংকার”! যদিও তোমার পছন্দ হবে কি না জানিনা।
মেঘ ড্রায়ার খুলে দেখলো অনেক গয়না। সাথে কোণে একটা বক্সে কয়েক জোড়া নূপুর। সাথে আরো একটা কাগজ। লেখা, “সাদা শাড়ির সঙ্গে পড়বে এইসব তুমি।”
মেঘ আর নিজেকে সামলাতে পারছে না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো দেখতে দেখতে দু ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। পা হাত আরো বেশি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। এর মাঝেই আরো পায়ের শব্দ শুনে মেঘ তড়িঘড়ি আলমারি বন্ধ করে দিলো। এক পা যেনো হাঁটতে পারছে না ও। দু পা এগিয়ে গিয়ে চাবি ঠিক আগের জায়গায় রাখতেই রোদ ঘরে প্রবেশ করলো। মেঘ কে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,
–“বিবি সাহেবা আপনি!”
মেঘ কেঁপে উঠলো। আচমকা হুট করে কারো কথা আর এমনিতেই অনেক বড় ধাক্কা খেয়েছে। মেঘ কাঁপা কন্ঠে বললো,
–“আপনি!”
রোদ ফ্যানের স্পিড বাড়িয়ে দিয়ে বসে বললো, “হুম আমি কিন্তু তুমি এত তাড়াতাড়ি চলে এসেছ কেনো? কই আসবে আমায় তো বললে না।”
মেঘ কোনো উত্তর দিলো না। ভাবনার রাজ্যে পারি দিয়েছে মেঘ। রোদ কাউকে এতটা ভালোবাসে তা মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে আলমারি না দেখাই ভালো ছিল। মেঘের খুব ইচ্ছা করছে সেই ভাগ্যবতী মেয়েকে দেখতে, কারণ মেঘ যে রোদের স্ত্রী হয়েও রোদ কে পেলো না। মেঘের চুপ থাকা লক্ষ্য করে রোদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। মেঝের দিকে তাকিয়ে দেখলো রোদের একটা ফাইল পড়ে আছে। রোদ বুঝতে পারলো মেঘ নির্ঘাত আলমারি খুলেছিল। কিন্তু রোদ রেগে গেলো না কিংবা মেঘ কেউ রেগে কিছু বললো না। একটু নিজে নিজে নীরবে হাসল। তার পর মেঘের সামনে গিয়ে ওর দু বাহু ধরতে ই মেঘ কেঁপে উঠলো, ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসলো। চোখের কোণে আসা পানি এখনও আছেই। মেঘ নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বললো,
–“কিছু বলবেন?”
রোদ অপলক দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,”এতক্ষণ তো বলছিলাম কিন্তু কিছু কি শুনেছো তুমি?”
মেঘ চোখ নামিয়ে নিয়ে রোদের থেকে দূরে গিয়ে বললো,”না মানে….”
রোদ মৃদু হেসে বললো, “চলে এলে এত তাড়াতাড়ি কেনো?”
–“কেনো আপ্নার কি খুব সমস্যা করে ফেললাম?”
রোদ ভাবেনি মেঘ এভাবে বলবে। রোদ হাসি মুখে বললো,”হুম খুব প্রবলেম করে ফেললে আমার।”
মেঘ রাগী দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,” কেনো আপনার গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে প্রবলেম বুঝি? সারাদিন কই ছিলেন?”
রোদ মেঘের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,” তা প্রবলেম নয়। প্রবলেম হচ্ছে আবার আমার উপর খবরদারী শুরু করে দিবে, যেমন এখনই শুরু করেছো!”
মেঘ আরো রাগল। রেগে বললো,” এই এতো কাছে কেনো আসছেন? সরুন বলছি। সারাদিন কোথায় না কোথায় ঘুরাঘুরি করা আর জিজ্ঞেস করলেই দোষ তাইনা? যান আগে ভালো ভাবে হাত মুখ ধুয়ে আসুন। না হাত মুখ ধুয়ে নয় গোসল করে আসুন, ফ্রেশ লাগবে অনেকটা।”
রোদ মাথা নাড়িয়ে বললো,” বুঝলাম। কিন্তু তুমি কেনো আসলে বললে না তো!”
মেঘ ঠেলে রোদ কে বাথরুমে পাঠিয়ে বললো,” বক বক কম করেন আগে গোসল করেন।”
রোদ আর কথা বাড়াল না জানে মেঘ কিছুতেই কিছু বলবে না। কেনো যেনো রোদ আজ অনেক খুশি আর গান গাইতে গাইতে শাওয়ার নিচ্ছে।
মেঘ রোদ কে পাঠিয়ে দিয়ে আর যেনো নিজের সাথে পেরে উঠলো না। শরীরে কোনো বল পাচ্ছে না, বেডে বসে পড়লো, চোখ থেকে পানি পড়ছে অঝরে। আস্তে করে বললো,
–“ভালোবাসি আপনাকে !”
_____________
রাত দশ টা বেজে চল্লিশ মিনিট। রাতে সবাই খেয়ে নিয়েছে কিন্তু রোদ এখনও খায় নি। ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে আর কি যেনো করছে।মেঘ কয়েকবার ডেকে গিয়েছে কিন্তু রোদ যায় নি। রোদ খায় নি তাই মেঘ ও কিছু খায় নি এখনো। মেঘ রেগে মেগে ঘরে এসে দেখলো রোদ এখনও ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। মেঘ কিছু না বলে ল্যাপটপ নিয়ে নিলো।রোদ মেঘের থেকে ল্যাপটপ নেয়ার চেষ্টা করছে আর বলছে,
–“প্লিজ দাও একটা প্রয়োজনীয় কাজ করছি।”
মেঘ ল্যাপটপ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো কোনো প্রয়োজনীয় কাজ না বরং গান শুনছে রোদ। মেঘ ল্যাপটপ রেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,
–“গান শোনা জরুরি কাজ?”
রোদ হাসার চেষ্টা করে বললো, “না না আরো একটা কাজ করছিলাম তোমাকে বলব না।”
বলে ল্যাপটপ নিয়ে আবারও বসে মেঘের দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো। মেঘ বিরক্ত হয়ে বললো,
–“খাবেন না? সারাদিন বাহিরে ছিলেন আর এখন রাত কয়টা বাজে দেখেছেন?”
রোদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে বললো, “সে তো অনেক বেজে গেছে কিন্তু আমার অনেক কাজ বাকি যে। ক্ষুদা লাগছে খুব কিন্তু খাবো কিভাবে? দু হাত দিয়ে তো কাজ করছি।”
–“পাঁচ মিনিট পরে কাজ করলে কিছু হবে না।”
–” না না তুমি বুঝতে পারছ না। এক মিনিট ও দেরী হওয়া যাবে না। কিন্তু আমার না খুব ক্ষুদাও পেয়েছে।”
মেঘ সরু চোখে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে। রোদ মুচকি হেসে বললো,” একটা কথা বলব শুনবে? তাহলে তাও আমার খাওয়া হবে।”
মেঘ অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,” কি?”
–” আমায় খাইয়ে দিবে?”
মেঘ চোখ বড় বড় করে ফেললো। রোদ ওর হাতে খাবে এইটা স্বপ্ন না তো! মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগেই রোদ ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
–“প্লিজ না করো না। আমার পেটে ব্যথা শুরু হয়ে যাচ্ছে আর এখন এই একটাই উপায় আছে।”
মেঘ কিছু বললো না। খাবার নিয়ে আসলো। মেঘের আনন্দ হচ্ছে বটে কিন্তু তা প্রকাশ করলো না। মেঘ রোদ কে খাইয়ে দিচ্ছে আর রোদ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে আর মাঝে মাঝে আর চোখে মেঘের দিকে দেখছে। খাওয়ার মাঝামাঝি সময়ে রোদ বললো,
–” তুমি খেয়েছ?”
মেঘ বললো,” হুম খেয়েছি।”
রোদ ল্যাপটপ রেখে বললো, “মিথ্যা বলছো কেনো? তুমি খাও নি আমি জানি।”
–“খেয়ে নিব আগে আপনি খেয়ে নিন।”
রোদ মেঘের থেকে প্লেট নিয়ে এক লোকমা মেঘের দিকে বাড়িয়ে বললো, “এখনই খাবে, হা করো।”
মেঘ কোনো কথা বলতে পারছে না। আনন্দ হচ্ছে খুব কিন্তু এ আনন্দ পুরো জীবন ধরে থাকবে না তাও ভাবছে। রোদ আবারো বললো,
–” হা করতে বলেছি।”
মেঘও রোদের হাতে খেয়ে নিলো। ওদের দুজন কে দেখে মনে হচ্ছে সত্যি ওরা দুজন দুজন কে খুব ভালোবাসে ।
.
ফজরের নামাজ শেষ করে মেঘ ঘর থেকে বেরল। রোদ ও মসজিদ এ গেছে। মেঘের আজ ইচ্ছা করছে নিজের হাতে রান্না করতে তাই সবাই ঘুম থেকে উঠার আগে নিজে রান্না ঘরে গেলো। সকালের নাস্তা মোটামুটি রেডি করে মেঘ সবার জন্য চা বানিয়ে সবার ঘরে দেয়ার জন্য গেলো। এই প্রথম সবার জন্য চা বানিয়েছে মেঘ এর আগে শুধু আদিল চৌধুরীর জন্য বানিয়েছে। মনের মধ্যে খুত খুত করছে সবার ভালো লাগবে তো চা টা? প্রথমে আদিল চৌধুরী আর রোজা চৌধুরী কে চা দিলো আর তারা রীতি মত প্রশংসাও করলো। ইশা চৌধুরী আর অবুঝ চৌধুরীর ঘরে যেতে মেঘের মন একটুও সায় দিচ্ছে না। তবুও না গেলে তো হয় না কিন্তু ঘরের সামনে এসে মেঘ থেমে গেলো তাদের কথোপকথন শুনে। মেঘের আরি পাতার কোনো অভ্যাস নেই কিন্তু উনাদের কথার মাঝে যাওয়া ঠিক হবে না তাই দরজার পাশে দাঁড়িয়ে পড়লো। মেঘের কানে উনাদের কথা গুলো আসছে…..
“কি নাটক শুরু করেছো তুমি? বিরক্ত লাগছে এখন আমার।” – ইশা চৌধুরী রাগী গলায় বললো।
কিন্তু অবুঝ চৌধুরীর কোনো উত্তর নেই। ইশা চৌধুরী আরো ক্ষিপ্ত হয়ে বলছে, “বুদ্ধির সাথে সাথে কানও গেছে তোমার?”
এখন অবুঝ চৌধুরীর গলা শোনা গেলো। উনি আস্তে করে বললেন, “শুনছি তো!”
–” কি শুনছি শুনছি করছো? হাত পা গুটিয়ে বসে আরো কতদিন থাকবে? এদিকে ভালো মানুষের মত সেজে থাকতে আর পারছি না আমি। তুমি কিছু করো নাহলে আমি ওকে যা করার করব।”
–” তোমার কিছু করতে হবে না। আমি হাত পা গুটিয়ে মোটেও বসে নেই! শুধু দেখতে থাকো কি হয়।আমি সবকিছু ভেবেই রেখেছি। ”
–” তুমি ভাবতে ভাবতে ওই মেয়েটা আরো জেঁকে বসুক এই বাড়িতে। ”
এইটুকু কথায় উনাদের কথা থেমে গেলো। মেঘ বিন্দুমাত্র বুঝতে পারলো না উনাদের কথা। শুধু মনে মনে ভাবছে কি বলছেন উনারা? উনারা কি মেঘের কথায় বলছে? কিন্তু কিছুক্ষণ পর আর চিন্তা না করে অবুঝ চৌধুরীর দরজায় নক করলো। দরজায় নক করার সাথে সাথে ঝাঁজালো কন্ঠে ইশা চৌধুরী বলে উঠলো,
–“কে? কে এসেছে?”
মেঘ বললো, “চাচী মা আমি মেঘলা!”
ইশা চৌধুরী দরজা খুলে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো,”মা তুমি কখন আসলে?”
–“এখনই আসলাম চাচী মা।”
অবুঝ চৌধুরী হাসি দিয়ে বললো,” চা এনেছ নাকি? বাহ এত সকালে উঠে গেছো তুমি!”
মেঘ উনাদের চা দিয়ে বলল, “নামাজ পড়ে ভাবলাম সবার জন্য চা বানিয়ে ফেলি। আমি তো এ বাড়ির বউ কিন্তু এখনও কোনো কাজ ই করিনা তাই আজ একটু চেষ্টা করলাম। কখনো সেভাবে কিছু বানায় নি তো চা কেমন হয়েছে জানিনা।”
অবুঝ চৌধুরী চা তে চুমুক দিয়ে বললো,” ফার্স্ট ক্লাস বানিয়েছ।”
বলে একটু হাসি দিলো আর মেঘ ও একটু মুচকি হাসল।
ইশা চৌধুরী বললো,
–” মা তুমি কেনো কাজ করতে গেছো? কোনো কাজ করতে হবে না তোমার। আমরা আছি তো।”
–” তেমন কিছু করিনি তো চাচী মা। আচ্ছা ইহানা চা খায় নাকি গ্রিন টি?”
অবুঝ চৌধুরী চা খেতে খেতে বললো,” ওকে তুমি চা দিতে যেও না রেগে যাবে তোমার উপরে। আর ও নয়টার আগে উঠে না।”
মেঘ একটু চুপ থেকে বললো,” ঠিক আছে। আমি আসি তাহলে।”
–” হুম যাও মা।”
মেঘ উনাদের ঘর থেকে বেরিয়ে হাঁটছে। আজ উনাদের ব্যবহার একটু বেশিই ভালো লাগলো। অবুঝ চৌধুরী ভালো করেই কথা বলে কিন্তু ইশা চৌধুরীর হল কি? হয়তো উনি মেঘ কে মেনে নিচ্ছেন তা ভেবে মেঘ আর চিন্তা করলো না।
আয়রার ঘরের সামনে আসলো। দরজায় নক করতে গিয়ে দেখলো দরজা খোলা। তাই মেঘ ঘরে প্রবেশ করে দেখলো পুরো ঘর অন্ধকার, জানালা বন্ধ, কোনো লাইট দেয়া নেই। মেঘ লাইট অন করে দেখলো পুরো ঘর এলোমেলো। আয়রা বিছানায় শুয়ে আছে, চুল গুলো এলোমেলো, বালিশ নিচে পড়ে আছে। বই খাতা ছড়ানো। এই অবস্থা দেখে মেঘের খটকা হল আয়রার কিছু হয়নি তো। তৎক্ষণাৎ টি ট্রে রেখে আয়রা কে ডাকতে শুরু করলো। আয়রার মাথায় হাত বুলিয়ে মেঘ ডাকছে,
–“আয়রা উঠবে না? অনেক বেলা হয়েছে তো।”
একটু পর আয়রা চোখ একটু একটু খুলে বললো, “সকাল হয়ে গেছে?”
–“হুম সকাল হয়ে গেছে। শরীর খারাপ তোমার?”
–“না ভাবি।”
বলেই তড়িঘড়ি উঠে বসল আয়রা। খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসল। মেঘ আয়রার দিকে তাকিয়ে বললো,
–” মন খারাপ? পুরো ঘর এলোমেলো কেনো? কি হয়েছে বলবে না?”
আয়রা নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে বললো,” সত্যি কিছু হয়নি ভাবি।”
বলেই আহ করে একটু শব্দ করলো। মেঘ আয়রার দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর চোখ মুখ ফুলে আছে। মেঘের বুঝতে বাকি রইলো না আয়রা কান্না করেছে। আয়রা ঘর গোছানোর জন্য উঠতে নিতেই মেঘ আয়রার হাত ধরে বসিয়ে দিলো। আয়রা উঠার চেষ্টা করে বললো,
–“ঘর গুছিয়ে রাখি ভাবি।”
মেঘ আয়রার গালে হাত দিয়ে বললো, “কিছু করতে হবে না আমি আছি না?”
–“কিন্তু….”
–“কোনো কিন্তু না। যাও আগে ফ্রেশ হয়ে আসো। তার পর চা খেয়ে নাও মাথা ব্যাথা কমে যাবে।”
বলে মেঘ মেঝে থেকে বালিশ তুলতে নিলো। আয়রা বললো,
–“আমার মাথা ব্যাথা করছে তুমি কেমন করে বুঝলে ভাবি?”
মেঘ মুচকি হেসে বললো,” বুঝেছি আর আমি আরো অনেক কিছু বুঝতে পারি ননদী।”
আয়রার মুখ অন্য রকম হয়ে গেলো। মেঘ বললো,” যাও ফ্রেশ হয়ে আসো তাড়াতাড়ি।”
–” হুম ।”
.
মেঘ পুরো ঘর সুন্দর করে গুছিয়ে দিলো। দিহানের দেয়া বই টা ও চোখে পড়লো কিন্তু আয়রা কে এ নিয়ে কিছুই জিজ্ঞেস করলো না। কিন্তু আয়রার কি হয়েছে মেঘের আর বুঝতে বাকি নেই। মেঘ ভাবলো দিহানের থেকে আগে সবকিছু শুনবে তারপর আয়রার সাথে কথা বলবে এসব নিয়ে।
______________
রোদ ড্রেস পড়ছে। মেঘ আনমনে ঘরে প্রবেশ করে রোদের সাথে কোনো কথা না বলে কলেজে যাওয়ার জন্য বই বের করছে। রোদ মেঘের চুপ থাকা লক্ষ্য করে সু পড়তে পড়তে বললো,
–“ঘরের পরিবেশ এত শান্ত কেনো? ঘরে থাকা মেয়েটির কি আজ মন খারাপ?”
মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,” আমাকে বললেন?”
–“হুম। ঘরে তুমি ছাড়া আর কে আছে। মন খারাপ কেনো?”
মেঘ রোদের পাশে বসল। বললো, “আমার মন খারাপ না কিন্তু ভালো লাগছে না ।”
–“কেনো?আমায় কি বলা যাবে?”
–” বলা যাবে। জানেন তো আয়রা কে নিয়ে আমার একটু চিন্তা হচ্ছে। মেয়েটার কিছু একটা হয়েছে।সারাক্ষণ কিছু একটা চিন্তা নিয়ে কিংবা নিজেকে আড়াল করে।”
রোদ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। একটু পর ভ্রু কুঁচকে বললো,
–” কই আমি তো কোনো অস্বাভাবিক আচরণ দেখি নি। সবসময় তো আগের মতই থাকে।”
মেঘের যেনো রোদের উপরে রাগ হলো। মেঘ রাগী গলায় বললো,” জানবেন কেমন করে সারাদিন তো বাড়িতে থাকেন না। বাড়িতে কার কি হচ্ছে তা জানার কোনো দরকার নেই।”
রোদ মেঘ কে রাগতে দেখে মেঘের ঘড়ি এগিয়ে দিলো। মেঘ ঘড়ি নিয়ে পড়লো। রোদ বললো,
–” ঠিক আছে মেনে নিলাম আমি ভুল। আয়রার কি হয়েছে তুমি ই খুঁজে নাও আর সমাধান করো। তোমার উপর পুরো দায়িত্ব দিলাম।”
–” আপ্নার দায়িত্ব দিতে হবে না। আমার নিজের ই দায়িত্ব আছে।”
–” ওকে বিবি সাহেবা চলুন এখন নাহলে কলেজ টাইম পার হয়ে যাবে।”
–“হুম চলুন।”
–“আচ্ছা শুন আমি এগারো টা ত্রিশ এ তোমায় নিতে যাবো আন্টির বাসায় যেতে হবে তো।”
–” ঠিক আছে। আজকে আমার ক্লাসও বেশি নেই।”
______________
চির হাস্যজ্জ্বল মেয়ের মুখে আজ কোনো হাসি নেই। কলেজ ক্যাম্পাসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে কিন্তু সাপা একা কমন রুমে বসে আছে। মন টা বেশ খারাপ আর মুখ যেনো শুকিয়ে গেছে। জানালা দিয়ে বারবার উকি দিচ্ছে কাউকে দেখার জন্য। মেঘ এসে সাপাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। সাপা চমকে উঠল। মেঘ ভ্রু কুঁচকে বললো,
–” কি ব্যাপার তুই একা কমন রুমে কেনো? অর্চি আসে নি? আর তুই বাহিরে কি দেখছিলি রে?”
সাপা হাসার চেষ্টা করে বললো, “ভালো লাগছে না রে তাই বসে আছি। আর অর্চি কে কল করেছিলাম কিন্তু ফোন ব্যস্ত দেখলাম।”
–” কেনো ভালো লাগছে না?”
বলে মেঘ জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলো ইশান আর নির্ঝর বসে আড্ডা দিচ্ছে আর ওদের সাথে দিহানও আছে। মেঘ সাপা কে বললো,
–” একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”
–“হুম কর।”
–” নির্ঝর ভাইয়া কে ভালবাসিস সত্যি তুই? সবকিছু ঠিক হয়ে যাক চাস তুই?”
সাপা ক্লান্ত চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে শুধু বললো,”হুম।”
তারপর কিছুক্ষণ নীরবতা চলল। মেঘ সাপাকে আর কিছু না বলে ওর হাত ধরে নিয়ে যেতে নিলো। সাপা বারবার বলছে,
–” মেঘ কোথায় নিয়ে যাস তুই আমায়?”
কিন্তু মেঘ কোনো উত্তর দিলো না। ঈশান, দিহান আর নির্ঝরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। নির্ঝর সাপা কে দেখে চলে যেতে নিলো কিন্তু মেঘ বললো,
–“নির্ঝর ভাইয়া তোমার সাথে আমার কথা আছে কোথাও যাবে না।”
নির্ঝর মেঘের কথায় দাঁড়িয়ে গেলো। মেঘ সাপার হাত ছাড়তেই সাপা যেতে নিয়ে বললো, “আমার কাজ আছে যেতে দে।”
মেঘ সাপার হাত আবারো শক্ত করে ধরে বললো, “চুপ করে দাঁড়াবি তোর কাজের নিকুচি করি।
ঈশান, দিহান তোরা হা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?”
ঈশান আর দিহান কিছু না বুঝে বললো, “আমাদের কি করতে হবে বল। আমরা আবার কি করলাম।”
–“দিহান তুই অনেক কিছু করেছিস সেগুলো পড়ে তোর সাথে বুঝে নিবো। কিন্তু তোরা সাপাকে দেখতে পারছিস? ওর চেহারা কি হয়েছে দেখ একবার। নির্ঝর ভাইয়া আর ওর প্রবলেম solve করতে পারিস নি কেনো তোরা?”
ঈশান বললো, ‘আমরা চেষ্টা করেছি কিন্তু নির্ঝর….’
বলে নির্ঝরের দিকে তাকালো। নির্ঝপ নির্লিপ্ত ভাবে বললো,
–” মেঘ এসব নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। আমি নিজেই চাই না সবকিছু ঠিক হোক।”
সাপা মন খারাপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, “মেঘ বাদ দে প্লিজ।”
মেঘ একটু জোরে জোরে বললো, “কি বাদ দিবো বল ।তোকে বাদ দিতে বলছিস। ভালোবাসিস আর তার জন্য নিজে কষ্টে মুখ বিষ করে রাখবি আর আমরা তা দেখে চুপ করে থাকব।
এই নির্ঝর ভাইয়া তোমার কি ব্যাপার বলবে? কি হয়েছে তোমার? ভালোবাসায় ভুল বুঝা বুঝি থাকলে তা মিটিয়ে না নিয়ে দুজন কষ্ট পাবে তা কি ঠিক?”
–“আমি কারো জন্য কষ্ট পাই না। আমি কারো খেলার জিনিস নয়।”
নির্ঝরের তীব্র অভিমান জন্মেছে। মেঘ বললো,
–” হ্যাঁ তুমি জানো যে তোমার সাথে খেলা করা হয়েছে তাইনা। ভালোবাসলে তাঁকে সুযোগ দিতে হয়, মানুষ মাত্রই তো ভুল। আর সাপা তো তোমার সাথে কিছুই করেনি প্রথমে মজা করে relation এ গেছে এইটা ওর ভুল ছিল কিন্তু পরে তো ভালোবেসেছে। কিন্তু তুমি কি করলে? প্রথমের ঘটনা শুনে সাপার উপর অভিমান করে দেশ ছেড়ে ই চলে গেলে। ভালোবাস তো তাই একটা বার সুযোগ দাও ওকে। নতুন করে শুরু করো সবকিছু।”
–” যাঁকে আমি ভালোবাসি না তাঁকে সুযোগ দেয়ার কোনো মানেই হয় না।”
–” আমি যদি প্রমাণ করতে পারি তুমি ভালোবাস তাহলে সুযোগ দিবে? “-মেঘ বাঁকা হেসে বললো।
নির্ঝর একটু হাসি দিয়ে চলে যেতে নিলো আর এদিকে মেঘ সাপার পায়ে পা বেজে দিলো এমন ভাবে যে সাপা পড়ে গিয়ে ‘আহ্’ করে উঠলো। মেঘের আচরণে সবাই অবাক হয়ে গেলো। ইশান, দিহান চোখ বড় বড় করে ফেললো। দিহান বললো,
–” কি করলি তুই!”
মেঘ আঙুল দিয়ে ওদের চুপ করতে বলে সাপা কে আস্তে করে বললো, “সরি যা করছি তোর ভালোর জন্য ই করছি।ভুল বুঝিস না আমায়।”
সাপা মেঘের কথায় কিছুই বুঝলো না কিন্তু ভাবলো মেঘ যখন বলছে কোনো কারণ নিশ্চয় আছে।
মেঘ ওকে একটা চিমটি কাটলো। আর এইবার সাপা একটু জোরেই ‘আহ্’ করে উঠলো। এইবার আর নির্ঝর চলে যেতে পারল না। ছুটে এসে সাপার সামনে বসে চিন্তিত গলায় বললো,
–” লেগেছে তোমার। দেখে চলতে পারো না? দেখি কোথায় লেগেছে?”
সাপা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সাথে ইশান আর দিহানও। মেঘ কোমরে হাত দিয়ে বললো,
–“তাহলে হিসেবে কি দাঁড়ালো ভাইয়া?”
নির্ঝর হুসে ফিরল। উঠে দাঁড়িয়ে বললো,” না মানবিকতা থেকে বলেছি কিছু ভাবার দরকার নেই।”
মেঘ সাপা কে উঠিয়ে বললো, “ভাইয়া তুমি ওকে ভালোবাস নিজেও জানো আর আজকে তো প্রমাণ ও দেখালাম। ওর সামান্য আহ্ শব্দ শুনেই এতটা উদ্বিগ্ন হয়ে গেছো তুমি তাহলে তাকে ছেড়ে কত কষ্ট পাও তা কি বুঝতে পারি না আমরা?”
নির্ঝর চুপ করে আছে। মেঘ আবারো বললো,” দুজন দুজন কে আরেকবার সুযোগ দাও নতুন করে বুঝার জন্য।”
ইশান নির্ঝরের কাঁধে হাত রেখে বললো,” হ্যাঁ একবার সুযোগ দে রে।”
সাপা অসহায় মুখে নির্ঝরের দিকে তাকালো। এই চাহনি তে যেনো নির্ঝরের অভিমান গলে গেলো। নির্ঝর আস্তে করে বললো,
–“হুম।”
সবাই খুশি হয়ে গেলো ওর কথায়। মেঘ সবাই কে তারা দিয়ে বললো, “ওদের কথা বলতে দে একটু চল এখন।”
নির্ঝর আর সাপার মান অভিমানের পালা অবশেষে শেষ হল। ঈশান মেঘ কে বললো,
–“বাহ সব ঠিক করে দিলি তো।”
মেঘ ঈশান কে মেরে বললো, “তুই এতদিনে পারলি না কেনো তা বল।”
ইশান মুখ ভার করে বললো, “তুই আমার ভাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস তাই এত পাকা আর আমি তো জীবনে একটাও প্রেম করলাম না তাহলে কেমন করে ঠিক করব বল। ভাবছিলাম তোকে বিয়ে করব কিন্তু তুই তো আর সুযোগ না দিয়ে ভাইয়ার বউ হয়ে গেলি।আর আমি দেবদাস রয়ে গেলাম। ”
দিহান হেসে বললো, “ওরে আমার দেবদাস। চিন্তা করিস না তোর নায়িকা ও এসে যাবে।”
–“হ যেদিন আমার দুনিয়াতে শেষ দিন সেদিন।”
মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঈশান কে একটা ছেলে ডাকল আর মেঘ ঈশান কে বললো, “যা আগে শুনে আয়।”
ঈশান যাওয়ার পর মেঘ অগ্নি দৃষ্টিতে দিহানের দিকে তাকালো। দিহান বললো,
–“কি করলাম আমি?”
–“তুই আয়রা কে ভালোবাসিস? তোদের মধ্যে ব্যাপার কি তা বল।”
দিহান মেঘ কে সবকিছু বললো ।দিহান কখনো মেঘ কে মিথ্যা বলেনি আর আজও বলতে পারলো না। মেঘ দিহানকে বললো,
–“আগে আমায় না বলে চিঠি দেয়ার দরকার কি ছিল। মেয়েটা কে স্বাভাবিক লাগছিল না আমার।”
দিহান চিন্তিত হয়ে বললো, “কি হয়েছে বল আমায়?”
মেঘ বললো, “কিছুনা তুই চিন্তা করিস না। আমি সামলে নিব কিন্তু শোন তুই আপাতত আয়রার সাথে দেখা করার কোনো ইচ্ছা পোষণ করিস না। সবুর কর।”
____________
.
চলবে……..
ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।