ভালোবেসে ঠাঁই দিও পরাণে পর্ব-০২

0
656

#ভালোবেসে_ঠাঁই_দিও_পরাণে

#পর্ব_০২

#নুজাইফা_নূন

-“তুমি কিন্তু বড্ড বেশি কথা বলো মেয়ে। আমার থেকে তুমি দূরত্ব বজায় রাখবে ব্যাস।আমার কোনো জিনিসপত্রে ভুলেও যেনো তোমার টাচ না লাগে। রুকু একথা শোনা মাত্রই রাদের সামনে এসে রাদ কিছু বুঝে উঠার আগেই রাদ কে জড়িয়ে ধরলো। রুকুর এহেন কার্যে রাদ যেনো হতভম্ব হয়ে গেলো।সে ভাবতে ও পারে নি একটা মেয়ে প্রথম সাক্ষাতেই তাকে জড়িয়ে ধরবে।না মেয়েটার সাথে আগে কখনো তার কথা হয়েছে।না তারা একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে। তবু ও মেয়েটা বিনা বাক্যে তাকে জড়িয়ে ধরলো।হাউ স্ট্রেঞ্জ? রাদ বিরক্ত হয়ে রুকু কে এক ঝটকায় তার নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,

-” হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস হয় কি করে রাদিয়াত মির্জা কে জড়িয়ে ধরার?”

-” এখন তো শুধু মাত্র জড়িয়ে ধরলাম। এরপর যদি আর কখনো আমাকে টাচ করবে না , আমার জিনিসপত্রে হাত দিবে না এটা বলেন তাহলে আপনার গালে ঠাস ঠাস করে চুমু দিয়ে দিবো।আপনি তো আবার অশিক্ষিত লোকেদের মতো কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন।আপনার হিসাব মতে আমি আপনাকে চুমু দেওয়ার ফলে আমার এই শ্বেতী রোগ যখন আপনার হয়ে যাবে তখন বুঝতে পারবেন কতো গমে কতো আটা হয়?”

-” তুমি আমাকে থ্রেট দিচ্ছো? এই রাদিয়াত মির্জা কে? তোমার সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছি না। তুমি কি নিজেকে আমার স্ত্রী ভাবতে শুরু করেছো?ভুলেও এটা করবে না। শুধু মাত্র তোমার বাবার উপর দয়া করে তোমাকে আমি বিয়ে করেছি।নতুবা তোমার মতো মেয়ে আমার পায়ের তলায় থাকার ও যোগ্য না।”

-“বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে কাউকে বিচার করা উচিত নয়। মানুষ কে মানুষ ভাবতে শিখুন।আমি সত্যিই আপনার মতো একজন শিক্ষিত , বিচক্ষণ মানুষের থেকে এটা আশা করি নি।জানেন আমার এই শ্বেতী রোগের জন্য কেউ আমার সাথে মিশতো না ।আমার সাথে খেলতো না।সবাই আমাকে এড়িয়ে চলতো। এমনকি স্কুলে গেলে আমার পাশেও কেউ বসতো না।আমি একা একটা বেঞ্চে বসতাম। স্কুল , কলেজে থাকাকালীন আমার কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো না।আমি সবসময় চাইতাম আমার জীবনে এমন কেউ আসুক সে যেনো আমার এই আস্ত আমি টাকে ভালোবাসে , আমার বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়।তমা আন্টির থেকে যখন আপনার কথা শুনেছিলাম এক মূহুর্তের জন্য মনে হয়েছিলো আপনি হয়তো সেই ব্যক্তি যাকে আমি আমার মোনাজাতে চেয়েছি।আপনি হয়তো সেই ব্যক্তি যার বুকে মাথা রেখে আমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারবো। আমার সুখ দুঃখ গুলো অকপটে আপনার নিকট তুলে ধরতে পারবো।বড্ড বোকা ছিলাম আমি। আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো আমার সবটা জেনে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু না ।আমি ভুল ছিলাম। পুরুষ মানুষ আসলে সৌন্দর্যের পূজারী।আপনি ডিভোর্স চেয়েছেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।যতো দ্রুত পারেন ডিভোর্স পেপার রেডি করেন।আমি চোখ বন্ধ করে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিবো। শুধু শুধু একটা মিথ্যা সম্পর্কে জড়িয়ে থাকার কোনো মানে হয় না।”

-” বোঝার জন্য ধন্যবাদ। অনেক রাত হয়েছে।এখন ভালোই ভালোই আমার রুম থেকে বিদেয় হ‌ও।ঘুমোবো আমি।”

-” আমি কোথায় ঘুমোবো ?”

-“এটা আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করছো মেয়ে? আম্মুকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো।”

-” বিয়ে টা আপনার সাথে হয়েছে । আপনার আম্মুর সাথে না। তাছাড়া সমস্যা যেহেতু আপনার সেহেতু সমাধান ও আপনাকেই করতে হবে।”

-” রাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো , বাসায় অনেক মেহমান রয়েছে।কোনো রুম খালি নেই।আজকের মতো ফ্লোরে বিছানা করে শুয়ে থাকো।সকালে আম্মুকে বলে তোমাকে রুমের ব্যবস্থা করে দিবো।”

-” আমি ফ্লোরে শুতে পারবো না । আপনি বরং আজকের মতো ফ্লোরে থাকুন বলে রুকু বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।রাদ নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে দরজায় লা’থি মে’রে দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।”

___________________________________

-” ফজরের আযানের মিষ্টি ধ্বনি কর্ণপাত হয় রুকুর। মসজিদ থেকে মিষ্টি কণ্ঠে ভেসে আসছে (আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম) অর্থ : ঘুম থেকে নামাজ উত্তম!!আযান শুনে রুকু বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় রাদ কে নামাজ পড়তে যাওয়ার জন্য মসজিদে যেতে বলে। কিন্তু রাদের কোনো ‌সাড়া শব্দ পায় না । রুকু এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে রুমে এসে কোথাও জায়নামাজ পায় না। রুকু বাধ্য হয়ে ওয়াশরুম থেকে এক মগ পানি এনে রাদের মুখের উপর ঢেলে দিলো। মুখের উপর পানির পড়ার সাথে সাথে রাদ ধড়ফড় করে উঠে বসে পড়লো।যা দেখে রুকু খিলখিল করে হেসে উঠলো।রুকুর হাসি দেখে কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো রাদ।সে যেনো অন্য এক রুকু কে দেখছে।রুকুর পরণে সুতি একটা থ্রি পিস রয়েছে। মাথায় ঘোমটা টেনে রেখেছে মেয়েটা‌ ।চোখে মুখে পানি মুক্ত দানার মতো চকচক করছে। রুকুর হাসি দেখে রাদের মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু রাদের যখনি রুকুর মুখমণ্ডল এর দিকে নজর গেলো তখনি তার মনটা বিষিয়ে উঠলো।রুকুর মুখে , চোখের পাশ দিয়ে ,নাকের দুই পাশে , ঠোঁটের কোণ দিয়ে অসংখ্য শ্বেতীর সাদা সাদা ছোপ রয়েছে।যা তাকে শ্রীহীন করে তুলেছে।এই শ্রীহীন মেয়েটায় তার বিবাহিত স্ত্রী ভাবতেই রাদের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।রাদ সোফা ছেড়ে উঠে এসে রুকু কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো, তুমি কি আমার হাতে খু’ন হতে চায়ছো?একে তো নিজে সারারাত নাক ডেকে ঘুমিয়েছো। তোমার নাক ডাকার শব্দে আমি সারারাত এপাশ ওপাশ করেছি ।একটু ও ঘুমোতে পারি নি। শেষ রাতে যখন একটু চোখ লেগে এসেছে আর তখনি তুমি আমার মুখের উপর পানি ছুঁড়ে দিলে। তুমি কি ভাবছো এসব করলে আমি তোমাকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবো?তোমাকে ভালোবেসে পরাণে ঠাঁই দিবো? কক্ষনো না।”

-” রুকু এক হাত দিয়ে নাকে কাপড় চেপে ধরে বললো, ওয়াক থু!কি বিশ্রী গন্ধ রে বাবা। আপনার আমাকে খু’ন করে খু’নী হতে হবে না ভাই।আপনি ব্রাশ না করে আর একবার যদি আমার মুখের সামনে কথা বলেন আমি এমনিতেই আপনার মুখের গন্ধে শহীদ হয়ে যাবো।এরপর প্রেস , মিডিয়া , সাংবাদিকরা খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে মির্জা প্যানেলে ছুটে চলে আসবে। আজকের হেডলাইনে বড় বড় অক্ষরে লেখা থাকবে প্রফেসর রাদিয়াত মির্জার মুখের গন্ধে তার ওয়াইফ রুকু মির্জা নিহত হয়েছেন।সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাবেন আপনি।”

-” স্টপ অল দিস ননসেন্স। অনেকক্ষণ যাবৎ তোমার আজে বাজে কথা সহ্য করছি।আর একটা বাজে কথা যদি বলো তোমাকে আমি … বাকিটা বলতে পারলো না রাদ ।তার আগেই রুকু রাদ কে নিজের থেকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো, আপনার মতো এমন পিচটে পুরুষ জীবনে আর দুইটা দেখি নি। আমার তো মনে হয় আপনি শীতকালে দিনের পর দিন গোসল না করে কাটিয়ে দেন। আপনার এসব অপকর্মের ব্যাপারে যদি আগে থেকে জানতাম বিশ্বাস করেন আমি সারাজীবন কুমারী রুকু থাকতাম ,তবুও আপনাকে বিয়ে করতাম না বলে রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেল রুকু। রুকুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রাদ বললো,

-” এই মেয়েকে যতটা অবলা নারী ভেবেছিলাম ততটা অবলা সে নয়। জেনে শুনে খাল কে’টে শুধু কুমির না, কুমিরের চৌদ্দ গুষ্টি তুলে নিয়ে এসেছি। যত্তসব ফালতু মেয়ে। আমার পাটা আমার নোরা আমার ভে’ঙ্গে দিলো দাঁতের গোড়া।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে