#ভালোবাসি_ভালোবাসা ♥️
#written_by_Liza_Moni
#part_3
সকাল ৯টায় ঘুম ভাঙলো সাদাফের। আড়মোরা ভেঙ্গে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায় ওয়াস রুমে।ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমে এসে দেখে তার আম্মু মিসেস ফাহমিদা আহমেদ তার আব্বু সোহেল আহমেদের সঙ্গে কোনো এক বিষয়ে আলোচনা করছেন।সাদাফ তাদের দিকে এগিয়ে যায়।
মিসেস ফাহমিদা সাদাফের দিকে তাকিয়ে বললেন,
.
সাদাফ এসেছিস, এদিকে আয়। আমার পাশে বোস।
.
কেন আম্মু কিছু বলবে?
.
শুনলাম তোর বন্ধু আছে না ঐ কি জানি নাম
.
রিয়ান?
.
হ্যাঁ ওর বোনের নাকি বিয়ে ভেঙে গেছে।বর যাত্রী নাকি এক্সিডেন্ট করেছে?
.
হুম ঠিক শুনছো।
.
মেয়েটার কপালটাই খারাপ।কী মায়াবী একটা মেয়ে তার সাথে এমন হওয়ার কথা ছিল বুঝি। আফসোসের স্বরে বললেন সোহেল আহমেদ।
.
তোমরা কার কাছে শুনলে?
.
আরে পাশের বাসার শায়লা বেগম আছেন না,উনি নাকি ছেলের কেমন আন্টি হোন, তিনি বললেন।
.
ওহ।
যা বুঝছি আম্মু আব্বুর মাইন্ড এখন ফ্রেশ আছে।ঝোপ বুঝে কোপ মারতে হবে এখনই। মনে মনে ভাবলো সাদাফ।
.
হিয়া মেয়েটা ভীষণ ভালো।দেখা হলে কত নম্র ভদ্র ভাবে কথা বলে। ভালো মানুষের কপালটাই খারাপ হয়। বললেন সাদাফের আম্মু।
আব্বু আম্মু একটা কথা বলবো শান্ত কন্ঠে বলে সাদাফ।
.আমার ছেলে এতো ভদ্র হলো কবে? কিছু বলবে তার জন্য আবার অনুমতি চাচ্ছে। মায়ের কথা শুনে সাদাফ মুচকি হাসলো।
বলে ফেল। আমরাও শুনে ফেলি।
আসলে,,
আসলে আব্বু আম্মু আমি,,,,
আরে বাবা কী বলবি বল ? বিরক্ত হয়ে বললেন সাদাফের আব্বু।
আমি হিয়া কে বিয়ে করতে চাই।
সাদাফের কথায় তারা যেন আকাশ থেকে পড়ল।
.
কীসব আবোল তাবোল বলছিস তুই? তোর মাথা ঠিক আছে তো? কয়দিন পর অনিমার সাথে বিয়ে তোর।সে কথা মাথায় আছে তো?চিল্লিয়ে বললেন সাদাফের আম্মু।
.
আম্মু দেখো অনিমার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।যেটা চাইলে ভেঙে দেওয়া যায়।
.
বিয়ে কী ছেলে খেলা নাকি। চাইলেই ভেঙে দিবি আবার চাইলেই আরেকটা করবি?
বললেন সাদাফের আব্বু।
.
আমার কথাটা একটু বুঝার চেষ্টা করো। হিয়া কে নিয়ে এই সমাজের মানুষ যা বলে বেড়াচ্ছে তাতে যদি হিয়া সুইসাইড করার চেষ্টা করে।এইসব যদি ও সহ্য করতে না পারে? তাহলে রিয়ান আর আন্টির কি হবে? মেয়েটার বাকি জীবনটা পড়ে আছে। বিয়ের জন্য অন্যকেউ আসলে সমাজ তো সে বিয়েটা ভেঙে দিবে।
.
তাহলে অনিমার কী হবে? বললেন সাদাফের আম্মু।
.
অনিমার সাথে বিয়ে ঠিক করা আছে বিয়ে তো আর হয়নি।আর আমাদের বিয়ের কথা শুধু আমাদের দুই ফ্যামিলি জানে।
.
তুই অনিমার সাথে কথা বলে যদি বিয়েটা ভেঙে দিতে পারিস তো তাহলে আমার আর তোর মায়ের হিয়া কে তোর বউ হিসাবে মেনে নিতে আপত্তি নেই।
আমি না হয় অনিমার বাবার সাথে কথা বলে নিবো।
.
সাদাফ খুশিতে তার বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে বলে তোমরা আমার বেস্ট আব্বু আম্মু।লাভ ইউউউউউ।
.
পাগল ছেলে।
সাদাফ তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে তার রুমে চলে যায়।আজকেই সে অনিমার সাথে দেখা করবে।
সাদাফের আব্বু সাদাফের মাকে বলে বুঝলাম কিছু সাদাফের মা?ডালমে কুছ হোতা হ্যায়।
হাসতে লাগলেন তাঁরা।
রুমে গিয়ে সাদাফ ফোন নিয়ে অনিমার নাম্বারে কল দেয়। দুই বার রিং হওয়ার পর অনিমা ফোন ধরে।
.
হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম।
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছেন?
.
আলহামদুলিল্লাহ, আপনি
.
হুম ভালো। আজকে আমার সাথে দেখা করতে পারবেন?
.
হঠাৎ দেখা করার কথা বলছেন যে?
.
দরকার ছিল। আপনি পারবেন দেখা করতে?
.
হুম। কখন দেখা করতে হবে?
.
বিকাল সাড়ে চারটায় আপনি আপনার বাড়ির সামনে থাকিয়েন আমি যাবো।
.
আচ্ছা ঠিক আছে।
.
রাখছি আল্লাহ হাফেজ।
সাদাফ কল কেটে দিল।
.
.
রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে হিয়া। কিছুতেই তার মনে একটু ও শান্তি লাগছে না। গতকালের ঘটনার পর তো নিজেকে একটু শক্ত করেছে। সকালের সেই লিখা কাগজটা তার সব শান্তি কেড়ে নিয়েছে। কাউকে কিছু বলেও নি কাগজটার ব্যাপারে।
আম্মু আর ভাইয়ার মন এমনিতেও ভালো নেই। এই কাগজটা দেখিয়ে তাদের মন আরো ভেঙে দেওয়ার দরকার নেই।
আমাকে নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে এই অজানা আগুন্তক কে। আমার সাথে শত্রুতা করে চারটা নির্দোষ মানুষের কীভাবে এমন অবস্থা করতে পারে? আল্লাহ তুমি তার বিচার করো।
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ভাবনায় ছেদ পড়ল হিয়ার।
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে মিসেস সাবিনা হিয়া কে ডেকেই যাচ্ছে।
হিয়া,ও হিয়া মারে দরজা খুল।
বিছানা থেকে নেমে হিয়া দরজা খুলে দিল।
মিসেস সাবিনা খাবার নিয়ে রুমে ঢুকে গেলেন।
.
উঠব আম্মু তোমাকে বলছি ও আমি খাবো না তবুও কেন খাবার আনছো?
.
ঠাসসস করে এক চড় দিবো। কালকে সারাদিনে কিছু খাস নাই রাতে ও খেলি না। এখন যদি আর একটা কথা বলিস তো তোর খবর আছে মেয়ে।
ভাত মাখিয়ে হিয়া কে খাইয়ে দিতে লাগলেন তিনি।
হিয়া ও চুপচাপ খেয়ে নিচ্ছে।যত কষ্টই থাকুক না কেন মায়ের হাতে ভাত খাওয়ার মজাই আলাদা।
হিয়া কে ভাত খাইয়ে চলে গেলেন মিসেস সাবিনা।
.
.
ঘড়িতে তখন সাড়ে তিনটা বাজে।সাদাফ রেডি হয়ে বাইক নিয়ে অনিমা দের বাড়ির দিকে রওনা হয়।মোড় ঘুরানোর সময় কোথা থেকে একটা ফুল স্পিডে চালানো গাড়ি সাদাফের বাইকের সাথে ধাক্কা লাগতে লাগতে লাগেনি।সাদাফ বাইক পিছিয়ে নিয়ে ছিল।
.
আরে এই ভাই ফুল স্পিডে কেউ গাড়ি চালায়। মানুষ মারার প্লেন করেন নাকি। শালা মদ গাঁজা খাইয়া কে যে এডিরে গাড়ি চালাতে কয়।
.
সাদাফ অনিমা দের বাড়ির সামনে এসে বাইক দাঁড় করিয়ে অনিমাকে কল দিতে ফোন হাতে নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে অনিমা আসছে।
.
আসসালামুয়ালাইকুম কেমন আছেন?
.
ওয়ালাইকুম আসালাম। এই তো ভালো। আপনি?
.
আমি ও। বাড়ির সবাই কেমন আছেন?
.
ভালো। আপনার?
.
জী ভালো। বাইকে উঠুন।
অনিমা বাইকে উঠে বসে।সাদাফ একটা রেস্টুরেন্টের সামনে বাইক থামায়। ভিতরে চলুন।
ভিতরে এসে বসে দুইজন।
.
কী খাবেন?
.
মে গরম পড়ছে ঠান্ডা কিছু হলে মন্দ না।
.
ওয়েটার কে ডেকে সাদাফ দুটো কোল্ড ড্রিং অডার করে।
.
কী দিয়ে কথা শুরু করবে বুঝতে পারছে না সাদাফ।ওয়েটার কোল্ড ড্রিং দিয়ে যায়।
সাদাফ একটা কোল্ড ড্রিং অনিমার দিকে এগিয়ে দেয়।
.
সাদাফ বলতে শুরু করে,,
আজকে আপনার সাথে দেখা করার জন্য একটা কারন আছে। আসলে আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।
সবে মাত্র কোল্ড ড্রিং টা মুখে নিয়েছে অনিমা।সাদাফের কথায় কাশি উঠে যায় তার। চোখের মধ্যে পানি জমতে শুরু করে। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। এতো দিন যাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতো সে,আজ সেই বলছে এই বিয়েটা সে করবে না।নিজেকে ধাতস্থ করে অনিমা সাদাফ কে জিগ্যেস করে
আমার কী কোনো ভুল হয়েছে? আমি কী কোনো দোষ করেছি?যার জন্য আপনি বিয়েটা ভেঙে দিতে চান?
.
না অনিমা। আপনার কোনো ভুল কিংবা দোষ কিছুই নেই। আপনি ভালো একটা মেয়ে।
.
তাহলে আপনি কেন বিয়েটা ভেঙে দিতে চাচ্ছেন?
.
আসলে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। তার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল।সে যাকে ভালোবাসে তার সাথে।
তার উপর জিদ করে আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করতে বলি আমার আব্বু আম্মুকে।
.
তার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তাহলে?আর সেকি জানে আপনি তাকে ভালোবাসেন?
.
না। আমি তাকে ভালোবাসি সে এই কথা জানে না।সে আমান নামের কাউকে ভালোবাসে। এমনকি তার সাথে বিয়ে ও হয়ে যাচ্ছিল গতকাল। কিন্তু ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন। তার হবু বরের গাড়ি মারাত্মক ভাবে এক্সিডেন্ট করে।তার সাথে বিয়ে হবার কথা ছিল সে মৃত্যুর সাথে লড়াই করেছে। কোমায় চলে গেছে। এবং তার এক বন্ধু মারা যায়।
.
সাদাফের মুখে পুরো কাহানি শুনে অনিমা কী বলবে বুঝতে পারছে না। তার এখন ঠিক কী করা উচিত তার মাথায় আসছে না।যেদিন তার আর সাদাফের বিয়ে ঠিক হয়ে ছিল সেদিন থেকেই সে সাদাফ কে একটু একটু করে ভালোবাসতে শুরু করে। তার ও তো ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
.
কী হলো কিছু বলছেন না যে?
.
আমি কখনো চাইবো না আপনি আমায় বিয়ে করেন। আমি তাকেই বিয়ে করুন যাকে আপনি ভালোবাসেন। আমি হয়তো বলতে পারি আপনি একজনের উপর জিদ করে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে বলছেন বিয়ে করবেন না। আপনি একবার ও আমার কথা ভাবছেন? তবে আমি বলবো আপনি ঐ মেয়েকেই বিয়ে করুন। এই অসময়ে তার পাশে থেকে তাকে আপনার ভালবাসায় রাঙিয়ে তুলুন।আসি দোয়া রইলো আপনাদের জন্য।
অনিমা আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না।সি এন জি করে বাড়িতে চলে গেল।
রেস্টুরেন্টের বিল পে করে সাদাফ ও বাইক নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেল।
বাড়িতে এসে মা বাবা কে সব বললো।অনিমা রং জন্য খারাপ লাগছে সবারি। কিন্তু হিয়ার থেকে বেশি না।
.
আজকে সন্ধ্যায় তাহলে হিয়াদের বাড়িতে গিয়ে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে আসবো।কী বলো সাদাফের আম্মু?
.
তোমার যা ভালো মনে হয়।
.
বলছি কী আপু আর আমার পুচঁকি টাকে আস্তে বললে হতো না?
.
না হতো না। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হলে না হয় বলবো সাদিয়া কে।
বললেন সাদাফের আম্মু।
.
তোমাদের ইচ্ছে।
বলে সাদাফ তার রুমে চলে যায়।ড্রয়ার থেকে হিয়ার একটা ছবি বের করে তাকে বুকের বাঁ পাশে রেখে বলে তুমি আমার হবে হিয়া পরী।
হিয়ার ছবিটা দেখতে দেখতে সাদাফ ভাবনার মধ্যে ডুব দিল,,,,,
.
.
৫ বছর আগের কথা,,,
সময়টা তখন শরতের। আকাশে মেঘের ভেলা ভাসছে। ভার্সিটির বন্ধুদের জোড়া জুড়িতে কাশবন গিয়ে ছিলো সাদাফ। সেখানে গিয়ে বিরক্ত হচ্ছিল সে।এ দিক সেদিক তাকিয়ে দেখার সময় চোখ পড়লো ৭-৮ টা মেয়ের দিকে। তাদের মধ্যে হালকা আকাশি রঙের শাড়ি পরা একটা মেয়েকে দেখে বুকের বাঁ পাশে ধক করে উঠে তার। কাশফুলের রাজ্যের রাজকন্যা মনে হচ্ছিল মেয়েটাকে। বান্ধবীদের সাথে খুনসুটিতে মেতে ছিল মেয়েটি।সাদাফ সেদিন মোবাইল দিয়ে মেয়েটার কিছু ছবি তুলে নেয়।
তখন কোথা থেকে একটা ছেলে এসে মেয়েটাকে তার সাথে করে নিয়ে যায়।
এক বছরের চেষ্টায় অনেক কষ্টে মেয়েটার ভাইয়ের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
মেয়েটা কখনোই তার সাথে তেমন কথা বলতো না।তার জন্য তার ভালোবাসার কথা আজও বলতে পারেনি।
হুম মেয়েটা হিয়া।
হঠাৎ চার মাস আগে সাদাফ শুনে হিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।হিয়ার উপর তার খুব রাগ হতো।যখন হিয়া আমানের সাথে দেখা করতে যেতো।কত সময় তো রিয়ানের জন্য হিয়া কে সাদাফ ড্রাইভ করে নিয়ে যেতো আমানের সাথে দেখা করতে। তখন যেন সাদাফের কলিজা টা ছিঁড়ে যেতো।সে হিয়া কে নিজের করে পেতে চাইতো। তবে আমানের জীবনের বিনিময়ে নয়। হিয়া হয়তো তাকে বাধ্য হয়ে বিয়ে করবে।কারন সাদাফ যে জানে হিয়া আমানকে ভালোবাসে,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,