#ভালোবাসি_প্রিয় (১২)
#অপরাজিতা_রহমান
কারন আমার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমার প্রাক্তন শাফিন। বিয়ের এতো গুলো দিন পরে শাফিনের মুখোমুখি হব এমন টা কখনো ভাবিনি। ওকে দেখে আমার পুরোনো ক্ষত টা আবার তাজা হয়ে গেল। আমি শাফিন কে ঘুটিয়ে ঘুটিয়ে দেখতে লাগলাম। অনেক পরিবর্তন হয়েছে শাফিনের । আগের থেকে অনেক টা শুকিয়ে গিয়েছে । মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি গজিয়েছে।হয়তো দাড়ি রেখে দিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ শাফিন আমাদের বাসায় কেন? কিন্তু পরক্ষণেই চোখ গেল শাফিনের পাশে থাকা দুইজন মধ্যবয়স্ক নারী পুরুষের দিকে। তাদের হাতে রয়েছে মিষ্টি সহ আরো নানা ধরনের ফলমূল। আমার বুঝতে বাকি রইল না শাফিন ই শীতল কে দেখতে এসেছে। বাহ্ বড় বোনের সাথে পাঁচ বছরের রিলেশন করে ছোট বোনকে দেখতে এসেছে।অবশ্য শাফিন যেমন মেয়ে চেয়েছিল শীতল একদম শাফিনের মনের মতো হবে। এতোক্ষণে হুশ হলো আমার। দুইজন মধ্যবয়স্ক লোককে এতোক্ষণ দরজায় বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছি ভাবতেই নিজের উপর নিজেরই রাগ হলো। আসসালামুআলাইকুম ।
ওয়ালাইকুমুস সালাম। তুমি কুয়াশা?
জ্বি । আপনারা কিভাবে জানলেন?
তোমার বাবার থেকে তোমার অনেক গল্প শুনেছি। তুমি গল্পের থেকে ও মিষ্টি একটা মেয়ে।
ধন্যবাদ। ভেতরে আসুন আপনারা।
শাফিনদের বসতে দিয়ে আমি উপরে চলে এসেছি । যদিও শীতল বারবার বলেছিল,ওর সাথে নিচে যেতে , আমি যায় নি। ভেতর থেকে যেন কান্না গুলো দলা পাকিয়ে আসছে।তবে আশ্চর্য করা বিষয় হলো আমার যতটা কষ্ট লাগার কথা ততটা কষ্ট লাগছে না ।হয়তো রাজের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি বলেই শাফিন কে এতো কাছে থেকে দেখেও আমার কষ্ট হচ্ছে না। কিন্তু রাগ লাগছে।এই বাড়িতে আর এক মূহুর্তের জন্য ও থাকতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু রাজ তো বলে দিয়েছে আজ নিতে আসবে না। আমার এই বাড়িতে আর এক মূহুর্তের জন্যও থাকা সম্ভব নয়। কোন কিছু না ভেবেই আমি রওনা দিলাম শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে।
আসসালামুআলাইকুম।
ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছো মা?
সালাম উত্তর শুনে সামনে তাকিয়ে একটা পরিচিত মুখ দেখতে পেলাম। আঙ্কেল আপনি এইখানে?
হ্যাঁ মা। আমি সেই ব্যক্তি যার কথায় তুমি ঐ লম্পট ছেলেটাকে থা*প্প*ড় দিয়েছিলে। আমি সেদিন ই তোমার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি তুমি আমার ই বন্ধুর মেয়ে। তাই এমন একটা মিষ্টি মেয়েকে আমার ছেলের বউ করার লোভ সামলাতে পারি নি। এইটা আমার ছেলে শাফিন। একজন বিসিএস কর্মকর্তা।ওর জন্যেই আমরা তোমাকে চয়েজ করেছি।
আঙ্কেল এর কথায় ছেলের দিকে তাকিয়ে আরেক দফা চমকে উঠলাম।আরে এইটা তো সেই ছেলে যে সেদিন আমাকে রাস্তায় সাহায্য করেছিল। বাহ্ বাবা ছেলে দুইজন একই ঘটনার সাথে জড়িত।
আমাদের দুইজনকে উপরের রুমে পাঠিয়েছে আলাদা কথা বলার জন্য। কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই। অবশেষে নিরবতা ভেঙ্গে আমি বললাম, আপনি কি জানতেন যে আমাকে দেখতে আসবেন।
না।তবে সেদিন আমি তোমার চোখে আমার স*র্ব*না*শ
দেখেছিলাম। তোমাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়েছি।আজ পাত্রীর জায়গায় তোমাকে দেখে আমি কতটা খুশি হয়েছি কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না। তোমার কি আমাকে বিয়ে করতে কোন আপত্তি আছে?
আমি নিজেকে হারাম রিলেশন থেকে মুক্ত রেখেছি। সবসময় চেয়েছি আল্লাহ যেন আমাকে চক্ষু শীতলকারী জীবনসঙ্গী দান করে। আমি চেয়েছি আমার জীবনে এমন একজন আসুক যে আমার সুখে দুঃখের সাথী হবে।যার সাথে আমি শুধু ইহকালে নয় পরকালেও একসাথে জান্নাতে যেতে পারি।
দেখ শীতল আমি ইসলাম সম্পর্কে খুবই কম জানি। তোমার যদি এই বিয়েতে আপত্তি না থাকে বিয়ের পরে তুমি আমাকে জানাবে ইসলাম সম্পর্কে। আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব ইসলাম সম্পর্কে জানার এবং মানার। তুমি কি আমাকে সেই সুযোগ টুকু দেবে শীতল? কিছু তো বল?চুপ থাকা সম্মতির লক্ষণ।তবে কি আমি ধরে নিব যে তুমি এই বিয়েতে রাজি?
।
।
।
।
কুয়াশা তুমি এভাবে আমাদের না জানিয়ে একটা চিরকুট রেখে চলে গেলে কেন?
আসলে আম্মা, আমার তো দুই তারিখ থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। অনেক পড়া বাকি আছে।তোমরা সবাই ব্যস্ত ছিলে তাই না জানিয়ে আমার রুমে একটা চিরকুট রেখে চলে এসেছি,যাতে আমাকে নিয়ে কোন টেনশন না করো। সমস্যা নেই আম্মা আমি আল্লাহর রহমতে সুস্থ ভাবে পৌঁছে গেছি।তবে বাসায় এসে বকা খেতে হয়েছে শ্বশুর শ্বাশুড়ির কাছে ।
কেন?
একা একা চলে এসেছি তার জন্য। ঐদিকের কি খবর আম্মা?
শীতল কে সবার পছন্দ হয়েছে। তারা পাকা কথা বলে গিয়েছে।সবাই চাচ্ছে এই শুক্রবারে ঘরোয়া পরিবেশে বিয়েটা হোক।
আলহামদুলিল্লাহ ভালো খবর। আচ্ছা আম্মা রাখছি এখন বাই।
ঠিক আছে মা।
আম্মার সাথে কথা বলা হতেই শ্বাশুড়ি আম্মার আগমন ঘটল। আম্মা এমন সময় বোরকা পরেছেন, কোথাও যাচ্ছেন নাকি?
হ্যাঁ মা। আমাদের একটু গ্ৰামে যেতে হবে। আমরা যখন গ্ৰামে থাকতাম সালেহা খালা আমাদের বাড়িতে টুকটাক কাজ করে দিত। অনেক ভালোবাসত আমাকে ।আজ দুপুরে নাকি খালা স্ট্রো*ক করে মা*রা গেছে।শুনে অনেক খারাপ লাগছে।তাই ভাবলাম একবার গিয়ে শেষ দেখা দেখে আসি। আমি রান্না করে ফ্রিজে রেখে দিয়েছি। তুমি আর রাজ গরম করে খেয়ে নিও।
ঠিক আছে আম্মা। সাবধানে যাবেন।
আম্মা,বাবা চলে গিয়েছে।পুরো বাসায় আমি একা।পড়ার টেবিলে ও মনোযোগ দিয়ে পারছি না। পরক্ষণেই মনে হল রাজ তো লুচি আর ছোলার ডাল ভুনা অনেক পছন্দ করে।রাজের জন্য লুচি আর ছোলার ডাল ভুনা করলে মন্দ হবে না। কিচেনে এসে ইউটিউব এ ভিডিও প্লে করে আমি আটা মাখতে শুরু করলাম। কিন্তু পানি বেশি দিয়ে ফেলেছি যার ফলস্বরূপ মনে হচ্ছে আমি আটার মধ্যে সাঁতার কা*ট*তে পারব।এরই মধ্যে কলিং বেল বেজে উঠল। আমি তড়িঘড়ি করে হাত মুখ না ধুয়েই দরজা খুলতে চলে গেলাম। দরজা খুলার সাথে সাথেই রাজ আমাকে দেখে হো হো করে হেসে উঠলো।এই প্রথম রাজকে মন খুলে হাসতে দেখলাম।যে হাসিতে হাজার হাজার মেয়ে খু*ন হতে বাধ্য। দেখতে খারাপ লাগছিল না তবুও আমি একটু মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বললাম,আশ্চর্য ! আপনি ফ্রিতে টিকটক দেখলেন নাকি? এভাবে রাজহাঁসের মতো হাসার কারন কি?
বাহ্ কুয়াশা তোমাকে তো একদম পাক্কা গৃহিণী লাগছে। একেবারে কোমরে আঁচল গুঁজে আটা ময়দা মাখতে শুরু করেছ। কিন্তু তুমি এইখানে কেন? তোমাকে তো সকালেই বাবার বাড়ি দিয়ে আসলাম।আর বিকালের মধ্যেই শ্বশুর বাড়ি এসে হাজির হয়েছ।নাকি বর ছাড়া থাকতে পারছ না তাই চলে এসেছ? ও মাই গড তোমার এই ঘটনা যদি পাশের বাসার মহিলারা জানতে পারে তোমাকে তো বর পাগলা বলবে।
আমার বয়েই গেছে আপনার জন্য আসতে। আমি শুধুমাত্র পরীক্ষার জন্য চলে এসেছি।
তুমি বলতে পারতে আমি গিয়ে তোমার বইখাতা দিয়ে আসতাম। তুমি শুধু শুধু কষ্ট করে আসতে গেলে।
ঐখানে থাকলে তো আর আপনাকে পেতাম না।
কিছু বললে ?
বলছিলাম যে ঐখানে থাকলে যদি আমার ম্যাথে প্রবলেম হতো তাহলে তো সলভ করার জন্য আপনাকে পেতাম না।
ও আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু তোমার এই অবস্থা কেন?মুখ ভর্তি আটা ময়দা।
আসলে লুচি আর ছোলার ডাল ভুনা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আটা মাখতে গিয়ে পানি বেশি হয়ে গিয়েছে। আপনি দরজার বাইরে এসে দাঁড়িয়ে থাকবেন এইটা কেমন দেখায় তাই হাত মুখ না ধুয়েই দরজা খুলে দিয়েছি।
ইদানিং দেখছি বরের কথা খুব ভাবছো।ভালোটালো বেসে ফেললে নাকি? তাহলে আর দেরি না করে একটা টাইট হাগ দিয়ে বলেই দাও #ভালোবাসি_প্রিয় ।
চলবে ইনশাআল্লাহ….
#ভালোবাসি_প্রিয় (১৩)
#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)
তাহলে আর দেরি না করে একটা টাইট হাগ দিয়ে বলেই দাও #ভালোবাসি_প্রিয় ।
আমি সত্যি রাজকে ভালোবাসি কি না আমি নিজেই জানি না।তবে এইটা জানি রাজের আশেপাশে থাকতে আমার ভালো লাগে,ওর কথা ভেবে অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠে।ওর সামনে গেলেই বুকের ধুকপুক শুরু হয়ে যায়। ইদানিং ইচ্ছে হয় রাজের জন্য নিজেকে সাজাতে। ইচ্ছে হয় নিজের হাতে ওকে রান্না করে খাওয়াতে।ওর সামন্য ইগনোর ও আমাকে অনেক কষ্ট দেয়। আম্মা বলেছিল বিয়ে পবিত্র বন্ধন ভালোবাসা আপনা আপনি হয়ে যায়। সেই পবিত্র বন্ধনের জোরেই হয়তো শাফিনের সাথে আমার পাঁচ বছরের রিলেশন, পাঁচ বছরের ভালোবাসা ভুলতে পেরে রাজের প্রতি নতুন করে অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে। রাজের প্রতি আমার এই অনুভূতির নাম যদি ভালোবাসা হয় তাহলে আমি রাজকে ভালোবাসি। হ্যাঁ আমি এই আনস্মার্ট, অশিক্ষিত, লোকটাকে ভালোবাসি। খুব করে ভালোবাসি।আর সাহেব যেন ন্যাকা । কিছুই বোঝে না। ব্যাটা মাদ্রাসার ছাত্র হয়ে হিসাববিজ্ঞান বোঝে অথচ আমাকে বোঝে না। ক্যারে তুই পারিস না জোর করে টাইট হাগ দিয়ে বলতে ভালোবাসি_প্রিয়। আমাকেই কেন মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা বলতে হবে? আমিও মুখ ফুটে কখনো তোকে বলব না ভালোবাসি_প্রিয় । [মনে মনে বললাম]।
কুয়াশা তুমি কি এতো ভাবছো বল তো? আমি তোমাকে এইখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চলে আসলাম, কিন্তু তুমি ঠিক সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছ।
আসলে ভাবছিলাম আটাতে তো পানি বেশি হয়ে গিয়েছে। তাহলে এখন লুচি বানাবো কিভাবে?
কোন ব্যাপার না। তোমার এই বিষয়ে ভাবতে হবে না।এর জন্য তো তোমার বর আছে তাই না। আমি দেখছি কি করা যাই।
অতঃপর রাজ সুন্দর করে আটা মেখে লুচি বানালো। আমাকে ও দেখিয়ে দিল কিভাবে লুচি বানাতে হয়। এরপর ছোলার ডাল ভুনা করল। টোনাটুনির সংসারে বেশ ভালোই লাগছে। রান্না শেষ করে দুইজন খেতে বসেছি। অসম্ভব সুন্দর হয়েছে রান্না। আসলেই আপু ঠিকই বলেছিল রাজ একজন অলরাউন্ডার।দুজনেই খাচ্ছি কারো মুখে কোন কথা নেই হঠাৎ করে রাজের ফোনে একটা কল আসল।ঐ পাশ থেকে বলতে শুনলাম,রাজ পরীক্ষার তো বেশি দিন বাকি নেই, তোর প্রিপারেশন কেমন? অবশ্য তুই ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট তোর কোন টেনশন নাই। পরীক্ষার কথা বলতেই রাজ খাবার ছেড়ে উঠে চলে গেল। আমি বুঝতে পারলাম না কি এমন কথা বলছে যার জন্য রাজের খাবার রেখে চলে যেতে হলো?
একা একা বসে খাচ্ছিলাম । হঠাৎ রাজের প্লেটের দিকে আমার নজর গেল। তখন আমার রাজের বলা কথা টা মনে পড়ে গেল স্বামী স্ত্রী একই প্লেটে খাবার খেলে নাকি ভালোবাসা বাড়ে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আয়শা (রা)এর সাথে একই প্লেটে খাবার খেয়েছেন। যখন উম্মুল মু’মিনীন আয়শা (রা) গ্লাসে করে পানি খেতেন, আল্লাহর রাসুল (সা) ঠিক সেই সহধর্মিণীর ঠোঁ*ট লাগা অংশে ঠোঁ*ট লাগিয়ে পানি পান করতেন।যখন আয়শা (রা) গোশত খেতেন, তখন আল্লাহর রাসুল (সা) আয়শা (রা) হতে গোশতটা টান দিয়ে নিয়ে নিতেন, এবং ঠিক আয়শা (রা) যেদিকটায় ঠোঁ*ট লাগিয়ে খেয়েছেন, একই স্থান থেকে তিনি ও খাওয়া শুরু করতেন। আমি ও কিছু না ভেবে রাজের রেখে যাওয়া খাবার টুকু খেয়ে নিলাম। মনে হলো যেন কোন অমৃত খেলাম। খাওয়া শেষ করে প্লেটগুলো ধুয়ে রুমে এসে পড়তে বসলাম।যত দিন যাচ্ছে ততই পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসছে।তবে মনে হচ্ছে এইবার ভালো রেজাল্ট করতে পারব ফাস্ট ইয়ারের তুলনায়।সাত টা সাবজেক্টেই মোটামুটি ভালো প্রিপারেশন হয়েছে।তবে অংশীদারি হিসাবে একটু সমস্যা রয়েছে। তাই অংশীদারি হিসাব থেকে কয়েক টা ম্যাথ সলভ করলাম।আরে বাহ্ সম্পদের হিসাব আর দায় ও মালিকানাস্বত্বের হিসাব মিলে গিয়েছে। আহা কি যে ভালো লাগছে। একমাত্র হিসাববিজ্ঞানের ছাত্র ছাত্রীরা জানে একটা ম্যাথ সঠিক হওয়া ঠিক কতোটা আনন্দের , কতটা সুখের।অন্য অধ্যায়ের একটা ম্যাথ করতে যাবো তখন ই দেখি জামিয়ার কল। ফোন রিসিভ করতেই জামিয়া বলল,
আই অ্যাম ইন লাভ কুয়াশা!
সিরিয়াসলি জামিয়া?যেই জামিয়ার পেছনে হাজার ছেলের লাইন লেগে থাকে অথচ কোন ছেলেকে পাত্তা দেয় না, সেই জামিয়া কি না অনার্স লাইফে এসে প্রেমে পড়েছে ,ভাবা যায় এগুলো?
ভালোবাসা কখনো বয়স দেখে আসে না কুয়াশা। হুট করে হয়ে যায়। তেমনি আমিও শত বারণ থাকার পরেও প্রেমে পড়েছি এক নিসিদ্ধ মানবের। বিশ্বাস কর দোস্ত আমি তার প্রেমে পড়তে চাই নি সে বাধ্য করছে প্রেমে পড়তে তার কথা, ব্যবহার আচরন দ্বারা। তুই তো রাজকে ভালোবাসিস না , যখন ভালোবাসতে শুরু করবি তখন দেখবি রাজের আশেপাশে থাকতে তোর ভালো লাগছে,তার একটু ছোঁয়া পেতে তুই উতলা থাকবি ,দিন শেষে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে হবে #ভালোবাসি_প্রিয়।
জামিয়া তুই কি কোন ভাবে শায়ান ভাইয়ার প্রেমে পড়েছিস?
বাহ কুয়াশা!তোকে না বলতেই তুই আমার মনের কথা বুঝে গিয়েছিস। এজন্যই তো তোকে এতগুলো ভালোবাসি। ইস্ তোর মতো করে যদি শায়ান ভাইয়াও আমাকে একটু বুঝতে পারতো।
আমার না বোঝার কোন উপায় আছে বল?এই এক মাসে তোর মুখে শায়ান ভাইয়ার কথা শুনতে শুনতে আমার কান পচে গেছে। কিন্তু নিসিদ্ধ মানব মানে কি?
ভাইয়া তো কোন মেয়েকেই পাত্তা দেয় না। কিছু দিন আগে একটা মেয়ে ভাইয়া কে প্রপোজ করেছিল। ভাইয়ার সে কি রাগ। মেয়েটাকে তো প্রাইভেট থেকে বাদ দিতেই চেয়েছিল।পরে ভাইয়া বলল যে, আমি এক নারী তে আসক্ত। পরনারীর প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই।
তার মানে ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে?
শুধু গার্লফ্রেন্ড না যদি ওনার স্ত্রী ও থাকে তবুও আমার কোন সমস্যা নেই। আমি ওনার দ্বিতীয় স্ত্রী হতেও রাজি আছি। ওনার মতো মানুষের জীবনসঙ্গী হতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব। তুই আমার একটু হেল্প করে দিবি কুয়াশা। আমার হয়ে শায়ান ভাইয়াকে একটু বলে দিবি?
আরে ইয়ার!এতো তাড়াহুড়ো করার কি দরকার? কিছু দিন পরে বলিস।
নারে । ভালোবাসা প্রকাশ করার জিনিস, লুকিয়ে রাখার নয়। এমন ও তো হতে পারে আজ বলব ,কাল বলব, করতে করতে আর বলাই হলো না।
ঠিক আছে আমি তোর হয়ে শায়ান ভাইয়া কে বলে দিব।তবে এখন নয়। আমাদের পরীক্ষা শেষ হোক তারপর।না হয় যদি তোকে প্রাইভেট থেকে বাদ দিয়ে দেয় , তাহলে তো তোর রেজাল্ট খারাপ হবে।
এইটা অবশ্য তুই ঠিক বলেছিস।
আচ্ছা দোস্ত রাখছি রে বাই।ভালো থাকিস।
আমি অনেক ভালো আছি দোস্ত বিশ্বাস কর। জীবনের প্রথম প্রেমে পড়েছি। আশেপাশের সবকিছু ভালো লাগছে। সেদিন ভাইয়ার কথা ভেবে একা একা হাসছিলাম আম্মা এসে বলল,কিরে জামিয়া তোকে আবার দুষ্টু জ্বিনে আঁচড় করল নাকি? একা একা গাগলের মতো হাসছিস কেন?
তোমার জামাইয়ের দেখা পেয়েছি আম্মা।তার কথা ভেবেই হাসছিলাম। পরক্ষণেই মনে হলো আল্লাহ! কাকে কি বলে দিলাম। প্রেমে পড়ে নির্লজ্জ , বেহায়া হয়ে গেছি। ভাইয়া যখন ম্যাথ বুঝায় তখন বেহায়ার মত তার দিকে তাকিয়ে থাকি।
জামিয়া ফোন রাখবি তুই। আমার মাথা ব্যথা হয়ে গেছে তোর একতরফা প্রেমের কাহিনী শুনতে শুনতে।
ঠিক আছে দোস্ত বাই।
জামিয়ার বকবক শুনে এখন আর পড়ার টেবিলে মন বসছে না। ভাবলাম এখন শুয়ে পরি সকাল সকাল উঠে পড়তে বসব। কিন্তু বিছানায় এসে মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি চেপে বসল। আমি মাঝখানের কোলবালিশ আর একটা কাঁথা আলমারিতে তুলে রেখে আসলাম।এরই মধ্যে রাজের আগমন ঘটল।
একি কুয়াশা! মাঝখানের কোলবালিশ কই?
আসলে কোলবালিশে ময়লা হয়েছিল তাই ধুয়ে দিয়েছি।
চলবে ইনশাআল্লাহ….
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।