ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-১৮

0
1620

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১৮
#অদ্রিতা_জান্নাত

মাঝখান দিয়ে কেটে গেল আরো দুই দিন ৷ এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে বসলো অরূপ ৷ আজ সকালের ফ্লাইটেই কানাডা এসেছে ও ৷ গাড়ি চালিয়ে সোজা যেতে লাগলো ওর গন্তব্যের দিকে ৷ বেশ কিছুক্ষন গাড়ি চালানোর পর হঠাৎ ওর গাড়ির সামনে একটা মেয়ে এসে পরলো ৷ জোরে ব্রেক কষে গাড়ি থেকে নেমে চলে গেল ওই মেয়েটার কাছে ৷ মেয়েটার হাত ধরে ওর দিকে ঘুরিয়ে রেগে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“এই মেয়ে? দেখেশুনে চলতে পারো না? রাস্তা দিয়ে এভাবে পাগলের মতো দৌঁড়াচ্ছো কেন?”

মেয়েটা হাত ছাড়িয়ে নিল ৷ অরূপের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার স্ক্যান করে বলে উঠলো,,,,,,,

“দেখে তো ভদ্র বাড়ির ছেলে মনে হচ্ছে ৷ তো কথা বার্তা এতো অভদ্রদের মতো কেন?”

“কি? একি তো আমার গাড়ির সামনে মরতে এসেছো ৷ আবার বড় বড় লেকচার দিচ্ছো?”

“আমি কি আপনার টিচার যে আপনাকে লেকচার দিব?”

“ইডিয়ট!”

বলেই অরূপ গাড়ির দিকে চলে গেল ৷ মেয়েটা পেছন থেকে চিল্লিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,

“ইউ’র বংশ ইডিয়ট!”

অরূপ রেগে পিছনে একবার তাকিয়ে কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসে চলে গেল ৷ মেয়েটা ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,

“সব গুলা ছেলে এমন ৷ একদিক ভালো হলে আরেকদিক খারাপ ৷ ছেলেটার চেহারা ভালো কিন্তু ব্যবহার খুবই খারাপ ৷ ধূর আমার তো লেট হয়ে গেল এই ত্যাড়া ছেলেটার জন্য ৷ উফ কেন যে আজ ভার্সিটি আসতে গেলাম ৷”

বলেই চৈতি ওর বাড়ির দিকে যেতে লাগলো ৷




আজ তুহিন আর শ্রেয়ার অ্যাঙ্গেজমেন্ট ৷ সেই জন্য বাড়িতে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ৷ পুরো বাড়ির বাহিরের দিক সঙ্গে ভিতরের দিক অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ৷ চারদিকে অনেক মানুষ ৷ সবাই খুব সুন্দর করে সেজে রয়েছে ৷ একটা রুমে বসে আছে শ্রেয়া ওর গাঁয়ে ডিজাইন করা ডার্ক পারপেল কালারের একটা ভারী গাউন ৷ কানে গলায় আর হাতে মেচিং জুয়েলারী ৷ মুখে হালকা মেকআপ ৷ তবে এসব কিছুর মধ্যেও ওর মুখে কোনো হাসি নেই ৷ কিছুক্ষন পর ওর মা এসে ওকে নিচে নিয়ে গেল ৷ তুহিনের পাশে দাঁড় করানো হলো ওকে ৷ কালো শার্টের উপর ডার্ক পারপেল কালারের কোর্ট প্যান্ট পরেছে ও ৷ স্টেজে দাঁড়িয়ে চৈতির বাবা বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন ৷ সবার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন তিনি ৷ শ্রেয়া তুহিনের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে ৷



নিজের বাড়ির সামনে সেই সেইম গাড়িটা দেখে অবাক হলো চৈতি ৷ তবুও বেশি কিছু না ভেবে দ্রুত ভিতরে চলে গেল ৷ দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই অরূপের সাথে ধাক্কা খেল ও ৷ পেছনে ঘুরে অরূপকে দেখে অবাক হলো ৷ অরূপও অবাক হলো চৈতিকে দেখে ৷ চৈতি সামনে গিয়ে সিকিউরিটিকে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“কি হয়েছে আঙ্কেল? এই ছেলেটা কেন এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে?”

লোকটি চৈতিকে বললো,,,,,,

“দেখো না মা ইনভিটেশান কার্ড ছাড়া চলে এসেছে ৷ আর এখন ভিতরে যাওয়ার জন্য জোর জবরদস্তি করছে ৷ সাহেব তো আগেই বলে দিয়েছিল কার্ড ছাড়া কেউ এলাউ না ৷”

“হুম সেটাই যান আপনি এখান থেকে ৷”

চৈতির কথা শুনে অরূপ রেগে বলে উঠলো,,,,,,,,

“এই তুমি কে? আমাকে তাড়িয়ে দেবার তুমি কে? আর তুমিও বা এখানে কেন? সরো সামনে থেকে ৷”

বলেই যেতে নিলে সিকিউরিটি লোকটি আটকে নিলো অরূপকে ৷ চৈতি আবার বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,

“এই যে মিস্টার ঘাড়ত্যাড়া! আপনার ত্যাড়ামি অন্য জায়গায় দেখান গিয়ে ৷ এটা আমার বাড়ি ৷ সো এভাবে গুন্ডামি করলে পুলিশ ডেকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিব একদম ৷ আঙ্কেল কার্ড ছাড়া ভেতরে ঢুকতে দিবেন না একে একদম ৷”

বলেই চৈতি ভিতরে চলে গেল ৷ ভিতরে ঢুকেই শ্রেয়াকে খুঁজতে লাগলো ৷ শ্রেয়াকে এক জায়গায় তুহিনের সাথে দেখতে পেয়ে চৈতি সেদিকে চলে গেল ৷ ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালে শ্রেয়া ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,

“এতোক্ষনে আসার সময় হলো?”

“আর বলো না দেরি হয়ে গেল একটু একটা ত্যাড়া ছেলের জন্য ৷”

শ্রেয়া কপাল কুচকে ফেললো ৷ চৈতি হালকা হেসে বললো,,,,,,,,

“তোমাকে না অনেক সুন্দর লাগছে ৷ আমি যাই একটু সেজে আসি হুম?”

আমি মাথা নাড়াতেই চৈতি দৌঁড়ে উপরে চলে গেল ৷ কিন্তু কার কথা বললো ও? সেটা বুঝতে পারলাম না ৷ হঠাৎ আমাকে আর তুহিনকে স্টেজে ডাকা হলো ৷ আমি তুহিনের দিকে তাকালে উনি ওনার বাম হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন ৷ উপস্থিত সবার চোখ এখন আমাদের দিকে ৷ জোরে একটা শ্বাস নিয়ে তুহিনের হাত ধরে স্টেজে উঠে গেলাম ৷




এদিকে অরূপকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হলো না ৷ ও রেগে সেখান থেকে চলে যেতে নিতেই একটা লোকের হাতের ইনভিটেশান কার্ডের দিকে চোখ গেল ৷ ও লোকটাকে ডেকে একটু দূরে এনে টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে কার্ডটা ওকে দিয়ে চলে যেতে বললো ৷ লোকটা প্রথমে যেতে না চাইলে অরূপ আরো কিছু টাকা তার হাতে ধরিয়ে দিল ৷ লোকটা কিছু একটা ভেবে চলে গেল ৷ আর অরূপ সেই কার্ডটা নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেল ৷ বাড়ির ভিতরে যেতেই শ্রেয়াকে তুহিনের পাশে দেখে অবাক হলো ৷ সঙ্গে রাগও ৷ চারপাশে একবার তাকিয়ে মুখে একটা মাস্ক পরে অাবার শ্রেয়ার দিকে তাকালো ৷

চৈতি রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো ৷ শ্রেয়ার সামনে এসে দাঁড়ালো ও ৷ তখনি ওর চোখ যায় অরূপের দিকে ৷ মুচকি হাসলো ও ৷

কিছুক্ষন পর গান বেজে উঠলো ৷ উপস্থিত সবাই জোরেজোরে হাত তালি দিতে লাগলো আর চিয়ারআপ করতে লাগলো ৷ সেই গানের তালে তালে আমি তুহিনের সাথে নাঁচতে লাগলাম ৷ অবশ্য এটার কোনো ইন্টারেস্ট নেই আমার ৷ তবুও করতে হচ্ছে ৷ কিন্তু এখন আমার একটা অদ্ভুত ফিলিং’স হচ্ছে ৷ যেটা বুঝতে পারছি না আমি ৷ এরকম কেন লাগছে? কেন এতো অস্থিরতা হচ্ছে আমার ৷ আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে লাগলাম ৷ কিন্তু কাকে? সেটা জানা নেই আমার৷

মিউজিক বন্ধ হয়ে গেলে তুহিন আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো ৷ ডানহাতে একটা আংটি আর বাম হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে মুখে হাসি নিয়ে বসে আছে ৷ উপস্থিত সবার দৃষ্টি আমাদের দিকে ৷ কিন্তু আমার এই দু চোখ অন্য কাউকে খুঁজছে ৷ বারবার মনে হচ্ছে অরূপ আছেন এখানে ৷ কিন্তু সামনে আসছেন না কেন? হাত বাড়িয়ে তুহিনের হাতের উপর হাত রাখতেই উনি অামার হাতে রিং পরিয়ে দিলেন ৷

এদিকে অরূপ রাগে ফুসছে ৷ পারছে না স্টেজে চলে আসতে ৷ এখন সবার সামনে কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাচ্ছে না ও ৷ কোনো রকমে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যাচ্ছে ৷ আর অন্যদিকে চৈতি অরূপকে এভাবে রেগে যেতে দেখে কপাল কুচকালো ৷ ও বুঝতেই পারছে না শ্রেয়া আর তুহিনকে একসাথে দেখে অরূপের এতো রাগ হচ্ছে কেন? আপাতত এসব বিষয় বাদ দিয়ে হাতে একটা রিং বক্স নিয়ে স্টেজে উঠে শ্রেয়ার সামনে ধরলো সেটা ৷ তারপর ইশারা করে রিংটা নিতে বললো ওকে ৷ শ্রেয়া রিংটা হাতে নিয়ে চারপাশে তাকাতে লাগলো বারবার ৷ কিন্তু কাউকেই পাচ্ছে না ৷ তাহলে ওর মন কেন এতো টানছে? কেন এতো ছটফট করছে?

অরূপ আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না ৷ হনহনিয়ে বাড়ির বাইরের দিকে চলে এলো ৷ গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো গেইট টায় হাত দিয়ে জোরে চেপে ধরলো ৷ গোলাপের কাঁটায় অরূপের হাত কেঁটে রক্ত পরছে ৷ ও আরো জোরে চেপে ধরলো ৷ ওর ইচ্ছা করছে নিজেকে ক্ষত বিক্ষত করে দিতে ৷ ওর একটা ভুলের শাস্তি শ্রেয়া কেন ওকে এভাবে দিচ্ছে? এতো বড় ভুল করে ফেলেছে ও? যেটা ক্ষমার অযোগ্য?

দ্রুত গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো ৷ গাড়ির গ্লাসে কয়েক বার হাত দিয়ে ঘুষি দিতে লাগলো ৷ তবুও রাগটা কমাতে পারলো না ৷ রক্তাত্ত হাত দিয়ে নিজের মাথাটা চেপে ধরে বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“কেন শ্রেয়া কেন? এতোটাই ঘৃনা করো আমাকে? এই একবছর তো দূরে থেকেছো অামার থেকে আবারও দূরে যাওয়ার চেষ্টা কেন করছো? একটা সুযোগ কি দেবে না আমায়? মানুষ তো ভুল থেকেই শিক্ষা নেয় ৷ আমিও নিয়েছি ৷ অতীতকে ভুলে কি আমার কাছে ফিরে আসা যায় না? এতোটাই খারাপ আমি?”




তুহিনের হাতে আংটিটা পরিয়ে দিয়ে আমি সোজা স্টেজ থেকে নেমে বাহিরের দিকে চলে গেলাম ৷ পিছন থেকে কেউ ডাকলেও শুনলাম না আমি ৷ দৌঁড়ে বাহিরের দিকে চলে এলাম ৷ তখনি আমার চোখ গেলো একটা ধবধবে সাদা রঙের গাড়ির দিকে ৷ গাড়ির ভিতরে কেউ একজন আছে ৷ কিন্তু কে আছে সেটাই দেখতে পারছি না ৷ আমি ছুটে চলে গেলাম সেদিকে ৷ গাড়িটা ধরবো এমন সময় গাড়িটা সামনের দিকে এগিয়ে গেল আমাকে ফেলেই ৷ আমি সেটার পিছনে দৌঁড়ে গেলাম ৷ কিন্তু মাঝরাস্তায় হোঁচট খেয়ে পরে গেলাম ৷ আর গাড়িটা আমার চোখের আড়াল হয়ে গেল ৷

তখনি চিল্লিয়ে বলে উঠলাম,,,,,,,,,,

“অরূপ যাবেন না ৷ আপনি এসেছিলেন সেটা জানি আমি ৷ প্লিজ আমাকে না নিয়ে যাবেন না…”

বলেই সঙ্গে সঙ্গে মাথায় হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে ‘আহ’ করে উঠলো শ্রেয়া ৷ তুহিন ছুটে চলে এলো শ্রেয়ার কাছে ৷ ওর পিছে পিছে বাড়ির সবাইও চলে এলো ৷ তুহিন শ্রেয়া মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে শ্রেয়ার গালে হালকা থাবা দিতে দিতে বলে উঠলো,,,,,,

“এই শ্রেয়া কি হলো তোমার? এরকম করছো কেন তুমি? শ্রেয়া?”

শ্রেয়া মাথায় হাত দিয়ে আবারো চিৎকার করে উঠলো ৷ চোখের কোণ বেয়ে পরতে লাগলো নোনা পানির কণা ৷ চোখ খুলার চেষ্টা করেও চোখ খুলে রাখতে পারলো না ৷ সমস্ত ভার ছেড়ে দিল তুহিনের উপর ৷ তুহিন দু হাতে শ্রেয়াকে আগলে নিয়ে পাগলের মতো একেকজনকে ডাক্তার ডাকতে বললো ৷

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে