ভাবিনি ফিরে আসবে
পর্ব-০২
রোকসানা আক্তার
আস্তে আস্তে গভীর রাত নেমে আসে।আমি বেলকনিতে দাড়িয়ে আকাশের পানে পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছি।সাদা ওই আকাশের মাঝে তারাগুলো কী সুন্দর নিবৃত্তি ঘুমচ্ছে আর জেগে উঠছে!!হৃদয়টা সুকমলে ছুঁয়ে যাচ্ছে।মন বলে,
মানুষ না হয়ে যদি তারা হতাম?তাহলেতো নিব্যি সবাইকে দেখতে পেতাম। নিরবতা মানুষগুলোর কষ্টের ভাগিদার হতাম।কখনো এত আঘাত পাওয়ার বেদনা শুঁকতে হতো না।
পেছন থেকে কারো কাশির আওয়াজ কানে বাঁজে।তাকিয়ে দেখি মা খাবার প্লেট হাতে দাড়িয়ে আছেন।
মাকে দেখে আমার চোখগুলো ঝিকঝিক করে উঠে।কারণ,আমার লাইফর প্রতিটি দুর্ভোগ মুহূর্তে ,সর্বদা মা আমার পাশে থেকে আশ্বাস জুগিয়েছেন।নাহলে,কবে যে পৃথিবী থেকে বিদেয় নিতাম!
মা আমার দিকে মুঁচকি হেঁসে প্লেট হাতে নেওয়ার ইশারায় ইঙ্গিত দেন।
-নাহ,মা আমি কিছু খাবো না।তুমি এসব ফিরিয়ে নিয়ে যাও।
-পাগল হয়েছিস,শাওন?সে দুপুর থেকে অনাহারে।এখন যদি মুখে কিছু না তুলিস তাহলেতো অসুখ পড়বে বাবা।
আমি ছলনাময়ী হাসির রেখা টেনে বলি,
-অসুখ পড়লে আর কি,মরে যাবো।
-চুপ একদম!পাঁজি ছেলে কোথাকার!
-কেন!!!আমি মরে গেলে কুলাঙ্গার ছেলের জন্যে সমাজে হেয় হওয়া লাগবে না।একটা আপদ বিদেয় হবে।চরিএহীন ছেলে থেকেও কি লাভ!!
আমার কথায় মায়ের চোখ দু’টো সরু হয়ে যায়।আর ঝরঝরে চোখের পানি বেয়ে পড়তে থাকে।আমি জানি,আমার জন্যে মায়ের অনেক কষ্ট হয়,কিন্তু নিরুপায় মা বাবার অবাধ্য হয়ে কিছু করতে পারেন না।বাবা মাকে খুব কঠোর নজরদারিতে রাখেন,নিজে চাইলেও মুখ ফুঁটে স্বাধীনভাবে কোনো কথা বলতে পারেন না।
আমি ধীরপায়ে হেঁটে আমার কাছে যেয়ে হাতের আঙ্গুল দিয়ে দু’চোখের পানি মুছে দিই এবং কপালে একটা চুমু বসাই।আর জড়িয়ে বলি,
-আমার লক্ষী মা,একদম কাঁদবে না।তুমি জানো না?তুমি কাঁদলে আমি ভীষণ আঘাত পাই,আমার হৃদয় রক্তক্ষরণ হয়।
মুখটা সামনে এনে আবার বলি,
এই দেখো,আবার কাঁদে।বললাম না আর কাঁদবে না!!
-শাওন,বাবা?আজ ওরা কিভাবে তোকে মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসালো! আমি জানি,আমার শাওন কখনো অন্যায় করতে পারে না।
-আমি জানি মা,তুমি অন্তত আমায় বুঝবে কেউ না বুঝুক।
মা চোখের পানি মুছে বলেন,
-আয় বাছা,তোকে আমি আজ নিজ হাতে খাইয়ে দিই।
-সত্যি মা আজ আমায় খাইয়ে দিবে?
চোখগুলো ঝলমল করে ওঠে আমার।আজ কতদিন পর মায়ের হাতে খাবার খাবো।সেই যে ৫ম সেমিস্টারের সময় বাড়ি থেকে বিদেয় হলাম,আর বাড়ি আসা হয়নি।এবার ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে বাড়ি আসি।।
মা নালা তুলে যেই মুখে দিতে যাবে,ওমনি বাবার ডাক পড়ে,
-ফাহাদের মা?ফাহাদের মা?কোথায় গেলে তুমি,কোথায়?
বাবার চিল্লানিতে মা তড়িঘড়ি ভাতের প্লেট বিছানার উপর রেখে কাপড়ের আঁচল মাথায় টেনে রুম থেকে বের হয়ে যান।কারণ,মাকে এখন বাবা আমার রুমে দেখতে পেলে বিপদ হতে পারে।
মা চলে যাওয়ার পর আমি ভাতের প্লেটের দিকে তাকিয়ে থাকি,আর আমার চোখ দিয়ে দু’ফুটো মোটা অশ্রু গাল বেয়ে পড়তে থাকে।
আজ ও বুঝি মায়ের হাতের খাবার খাওয়া হলো না।এই একটা আক্ষেপ সবসময় আমায় তাড়িত করে।কারণ,বাবা সবসময় চাইতেন মা আমার থেকে বড়ভাইয়াকে বেশি আদর করুক।আমি কখনো এমন একপাক্ষিকতার মানে বুঝতাম না বাবা কেন এমনটি করতেন!
ছোটবেলায় মা আমাকে রেখে ভাইয়াকে খাইয়ে দেওক,ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়ার সময় রেডি হওয়ার জন্যে মা আমার আগে ভাইয়াকে গোছগাছ করে দেওক,কোনো বায়না আমার আগে ভাইয়ার পূরণ করুক ইত্যাদি। বাবার এরকম অসমতল দৃষ্টিকটু আমাকে অনেক ক্ষুব্ধ করতো।
একটা সময় নিস্তব্ধতা পরিবেশে একা বসে থাকলে,দিনশেষে মা যখন আমায় কোলে নিয়ে আদরের পরশ আমার চোখে,মুখে,মাথায় ছোঁয়াতেন আমি তখন সব ভুলে যেতাম।ছোটবেলায় বাচ্চারা মায়ের আদরের পূজারী হয়!এটাই বাস্তব!
পরক্ষণে এসব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে ভাতের প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে বিছানায় উদাসমনে শুয়ে পড়ি!!এরইমধ্যে রাজ্যের ঘুম মাথাচাড়া দিতেই ঘুমের দেশে তলিয়ে যাই।।
ভোরের পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সকাল দশ’টা বাঁজে। তাহলে রাত অনেক ঘুমোলাম!
আজ বউভাত। ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে মেহমান আসবে।।বাড়ির কাজের লোক তাড়াতাড়ি রেডি হওয়ার জন্য রুমে এসে বার বার নক করে যায় ।।
আমি ওদিকে কর্ণপাত না করে দরজাটা বন্ধ করে ফেলি।
কিছুক্ষণ বাদে মা এসে দরজায় নক করেন,জানি নাস্ত হাতে নিয়েই রুমে এসছেন।আমি রুমের ভেতর থেকেই মাকে কড়া বারণ করে দিই,
-মা খাবো না।দয়া করে প্লিজজ জ্বালাতন করো নাতো!
মা অনেকক্ষণ ধরে দরজায় কড়া নাড়তেই থাকেন।আর আমি অনড় হয়ে নিজের সিদ্ধন্তে অটল।পরে,মা বিরক্ত হয়ে চলে যান।
এভাবে বিভিন্ন চিন্তায় বসে থাকতে থাকতে ১ টা বেঁজে যায়। আমি বাথরুমে গিয়ে গোসলটা সেরে আসি।সাথে ওযুটাও।
জায়নামাজটা নিয়ে জোহরের নামাজে দাড়াই।
নামাজ শেষ করে মোনাজাতে হাত রাখতেই চোখ দুটো বেয়ে গড়গড়িয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে।আর বিধাতার কাছে অনেক অভিযোগ দাড় করাতে ইচ্ছে হচ্ছে।কিন্তু বলতে যেয়েও পারছি না বিধাতার কাছে বিচার তুলতে।
চোখের পানি আগলে মোনাজাতটা শেষ করে জায়নামাজটা ভাঁজ করে ড্রেসি টেবিলের মধ্যে রেখে দিই।।
হঠাৎ করে নিচ থেকে হৈ-হুল্লোড়, চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ আসতে থাকে।আমি দৌড়ে বেলকনিতে যাই।ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজন বাড়ি না ঢুকতেই হাঙ্গামা শুরু করছে।।
ওরা এমনভাবে ধাক্কাধাক্কি করছে যেন কার আগে কে ঢুকতে পারে তার প্রতিযোগীতা চলছে।।
আমি এসব আজাইরা কাজকারবার না দেখার প্রয়াশে মাথাটা সামান্য হেলতেই একটা মেয়ের উপর নজর পড়ে!!
মেয়েটি কে দেখে মনে হলো, কোথায় যেন দেখেছি ওকে!কোথায় যেন দেখেছি!!
ঠাহর করতে পারতেছি না।।কিন্তু আমার মন বলছে,এই মেয়েটার সাথে আমার কোনো অতীত জড়ানো।যেটার জন্যে আজও পথের দিশা খুঁজে পাই না।খুঁজতে গেলে দুকূল হারিয়ে ফেলি।আমি আর একমুহূর্ত এখানে না দাড়িয়ে থেকে নিচে নামতে থাকি।
দ্রুত পদক্ষেপে নিচে নেমে উদগ্রীব হয়ে যেই সদর দরজার দিকে পা বাড়াবো,ওমনি বাবার কটু দৃষ্টি পড়ে।।চোখ দিয়ে ইশারা করে ভেতরে যেতে বলেন।
আমি চোখগুলো বুঁজে ব্যর্থমনে আবার আমার রুমে ফিরে আসি।মনটা খারাপ হয়ে যায় মেয়েটিকে যে দেখার সুযোগ হলো না।
।
।
প্রায় ১০ মিনিট পর,
শাওন ভাইয়া?সবাইকে দেখলাম আপনাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন?
তড়বড়িয়ে পেছনে ঘুরে তাকাতেই চোখগুলো আমার ছানাবড়া!! এতো সেই মেয়ে যাকে কিছুক্ষণ আগে নিচে দেখলাম।কিন্তু মেয়েটিকে খুব অচেনা মনে হচ্ছে।
আমি খুব কৌতূহলী হয়ে আস্ক করি,
-তুমি আমায় চেন?.
মেয়েটি মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।মেয়েটির বয়স ১৪/১৫ হবে।আমি ভ্রু কুঁচকে আবার বলি,
-কিভাবে চেন আমায়?কোথাও দেখেছ?
-জ্বী!
এবার আমার চোখগুলো খাড়া।খুব উৎসুক হয়ে বলি,
-কোথায় দেখলে?
-ভাইয়া আপনার মনে আছে?একদিন যে আমি স্কুল যাওয়ার পথে আপনার হাতে একটা চিরকুট দিয়েছিলাম।আপনার চেহারাটি আমার খুব করে মনে আছে।তাই আপনি এখন যে নিচে নামলেন,আমি আপনার চেহারাটা তীর্যকভাবে পরক্ষ করতে পেরেছি।
আমি অনেকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলি,
-কিসের চিরকুট দিয়েছিলে আমার হাতে তুমি!?!
-আরেহ ভাইয়া,আপনিতো সবই ভুলেই গেলেন। ওইযে দিবানি আপু দিয়েছিল,ওই চিরকুটটা।
এই মেয়েটির কথায় আমার দু’কান বেয়ে ঘামের বৃষ্টি ঝরতে থাকে।যখন মেয়েটি চিরকুটটি আমার হাতে দিল তখন অনেক ছোট্রি ছিল।আর এখন মাশাল্লাহ অনেক বড় হয়ে গিয়েছে,এজন্যই বোধহয় চিনি নি।
আমার অনেকগুলো অতীত যেন ধীরে ধীরে স্মৃতির পাতা খুলছে।নিজেকে সংযত রেখে বলি,
-তোমার দিবানি আপু এখন কোথায়?
মেয়েটি আমার দিকে ড্যারা চোখে তাকিয়ে যেই ঠোঁট নাড়বে,ওমনি ভাইয়ার বউ আমার রুমে এসে হাজির!!.
-আরে পৃথুলী,তুই এখানে!সবাই যে তোকে খুঁজছে!!তুই এখানে কি করিস!?
-ন-না মানে,আপু।
-আচ্ছা হয়েছে ন-ন্ন-না করা লাগবে না।যা নিচে যা।
ওর নামটি এখন জানলাম “পৃথুলী”। বাহ,খুব সুন্দর নাম।পৃথুলী ভদ্র মেয়ের মতো মাথা হেলিয়ে নিচে চলে যায়।আর ভাইয়ার বউ আমার দিকে হয়তো তাকিয়ে আছে।আমি এখন অন্যদিক মুখ করে তাকিয়ে আছি।উনার দিকে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করিনা।
উনি হুট করে বলে উঠেন,
-লজ্জা পেলে হবে না!এখনো তোমার সাথে অনেক কিছু করার বাকি আছে।সবেতো এই বাড়ি পা রাখলাম,বাদবাকির মিশন সামনে গোয়িং অন!
এ বলেই চলে যান।।।
আমি যতটা অবাক,ততটা ধাঁধায় পড়ে যাই।পৃথুলী ভাইয়ার বউয়ের কেমন আত্মীয় হোন!আমিতো আগে কখনো জানতাম না!! হায় আল্লাহ,সব মাকড়সার জালের মতো সব পাকড় একসাথে।যেখানে যাই,সেখানে আটকাই!!
অতঃপর,আবার মনস্থির করি,
-নাহ!!যে করেই হোক।এটির রহস্য উদঘাটন করবোই!!
এসব অনেকক্ষণ যাবৎ ভাবতে থাকি।আমার ভাবনার স্মৃতিরা যেন ঘোর কাটে না।মনখারাপ বিধায় হাতে একটা গল্পের বই নিই পড়ার জন্যে।
-আরে শাওন?কিরে?নিচে সবাইকে দেখতে পাচ্ছি,কিন্তু তোকে যে দেখা যাচ্ছে না!দিনকে দিন এত দেমাক বাড়ছে ক্যান তোর, হুম?(শিমলা)
-আরে শিমলা আপু আর বলবেন না,উনাকে দেখলে আমরা আবার ক্রাশ খেয়ে যামু তো তাই সেই ভয়ে বের হয় না।(সাথী)
-হুম,কিউটের ডিব্বা হলে এমনই!!!(শিমলা)
বিরবির কথার শোরগোলে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার একগাদা কাজিন আমার দরজার সামনে এসে হাজির!!!
ওদের দেখে চোখগুলো বড় করে ফেলি।
-কি ভাইয়া,সারপ্রাইজড হলে বুঝি? (সাথী)
-ন-না,এখানে সারপ্রাইজড হওয়ার কি আছে!!
-সারপ্রাইজড তো সাথী!এর চেয়ে আর কি বাকি শাওন?(শিমলা)
শিমলার কথায় সব একতালে হেঁসে ওঠে।আর সাথী লজ্জায় মাথা নিচু করে আনে।কারণ,সাথী আমায় মনে মনে অনেক ভালোবাসে।আমি ওকে শুধু আমার ছোটবোন হিসেবেই দেখি।ওর সাথে ফ্রীলি বিধায় সবাই ভাবে আমিও সাথীকে পছন্দ করি।
সাথীর লাজুকতায় শিমলা বলে ওঠে,
-ও ললনাবতী,লজ্জ্বা পেলে গো নাকি?
আবার খিলখিল হাসির আওয়াজ সবার।আমিও একটু মুঁচকি হাসি ওদের দুষ্টুমিতে।
-হয়েছে,হয়েছে!তোমরা আর মান-সম্মান রাখলে না!!গেলাম আমি!!
সাথী অভিমানে প্রস্থান করে।।আর ওদের মুখেতো হাসির লেশটুকু লেগেই আছে।আমি চোখ ঝাঁটা দিয়ে বলি উঠি,
-আজতো হাসির মাংস রান্না করা হয়নি যে যার কারণে এত্ত হাসিস!
-ভাঁজা মাছতো তুমি উল্টে খেতে যানো শাওন ভাইয়া!!মনে মনে মনকলা খাও,আর এখানে এসে মহানন্দের গীত গাও।(রাকিব)
এবার আমি অনেকটা রাগ হয়ে ওদের দিকে কটুকথা ছুটে দিই।
-এখান থেকে যাবি তোরা?নাকি ঘাড় ধরে সবগুলারে বাদরের মতো ঝুলাতে বাধ্য করবো!?
-ওর-রে,এই ছ্যামরা আমাদের বাদর বানালো রে ।আমরা কি কানা চোখে তাকিয়ে থাকবো নাকি রে শাওন!! (শিমলা)
-আপু,তুমি আমায় একবার আদেশ দাও।আমি শাওন ভাইয়ার শায়েস্তা করতেছি।
-তোরতো হাতির শরীর!যে কেউ দেখলেই ১০মাইল দূরে পিছপা!!(আমি)
-আচ্ছা, যদি এতই ভয় পাও।তাহলে আমাদের ট্রিট দাও।আমরা ভদ্র,সাবলীলভাবে তোমার রুম ত্যাগ করব।কি বলিস তোরা?এবং কি বলেন শিমলা আপু??(রাকিব)
-রাইট!কানাকুয়ো আমাদের সেই ২/৩ বছর ধরে কোণ আইসক্রিম খাবাবে খাবাবে বলে ঘুরিয়েছে,আজও আমাদের বায়না মেটাতে পারলো না।ওকে কি আমরা সোঁজা -সাপ্টা ছেড়ে দিব!?.(শিমলা)
-দেখ ভাই,এখানে এত্ত কোলাহল না করে।তোদের বায়নার টাকা দিয়ে দিচ্ছি।তোরা ভালোই ভালোই চলে গিয়ে আমায় একটু শান্তিতে থাকতে দে।।
-রুমে তো এসি চলছে এখানে আবার অশান্তি কিসের!?(শিমলা)
দাৎ আবার কথা বাড়ানোর জম!আমি মুখটা বাঁকা করে অন্যদিক তাকিয়ে থাকি।এরফাঁকে শিমলা বলে উঠে,
-মন খারাপ নাকি রে তোর?
শিমলা এবং আমি পিঠাপিঠি। দুজন-দুজনের সাথে অনেকটা মিশুক।যেদিন দুজন এক হই,সেদিন গল্প-গুজব করতে করতে কখন যে বেলা ফুরিয়ে যায় বলা মুশকিল।সে আমার লাইফের সব ইতিহাস জানে।আমার মনের সকল অব্যক্ত ভাষা শিমলার সাথে শেয়ার করি এবং ঝগড়া করতে সদা বলীয়ান দুজন।আর মিলে গেলে ঝগড়া টগরা সব ধূলোয় ধূলিসাৎ।
শিমলার কথায় আমি হালকা মাথা নাড়ি আর বলি,
-তোর সাথে কথা আছে শিমলা আমার!
-ওকে,শুনবো।এর আগে ওদের বিেয় কর।বাচ্চা-পোলাপান, জানিসতো জ্বালিয়ে মারবে।
শিমলার কথায় ওদের দিকে এক হাজার টাকার নোট এগিয়ে দিয়ে বলি,
-এই নে….
রাকিব আচমকা হয়ে বলে,
-সে-কি ভাইয়া, এত্ত কম টাকা নিবো না।আমাদের ৩ হাজার চাই!!
সবাই একতাল বাঁজিয়ে রাকিবের সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠে,
-হ্যা ৩ হাজার চাই।
শিমলা ওদের চিল্লানিতে কানে হাত দিয়ে রাখে।আমিও অনেকটা বিরক্ত নিয়ে আর বাকি ২ হাজার টাকা মানিব্যাগ থেকে বের করে ওদের বিদেয় করি।
ওরা টাকাগুলো পেয়ে খুশির তালে নাচতে নাচতে চলে যায়।শিমলা মুঁচকি হেঁসে বিছানায় বসতে বসতে বলে,
-এবার বল,কি হয়েছে তোর এবং কি কথা আমার জন্যে এতদিন জমিয়ে রেখেছিস?
-শিমলা,আমরা মনটা ভীষণ খারাপ রে।আচ্ছা,বলতো মন ভালো করার কোনো ওষুধ আছে।।
শিমলা আমার দুঃখে কাতর না হয়ে খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে।।
-আরে,হাসছিস কেন??
-তো হাসবো নাতো কি কাঁদবো?আমার কি মনে হয়, জানিস?
-কী?
-তোকে সাইকোলজিস্ট দেখাতে হবে!!!
-কেন?(চোখ বড় করে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলি)
-মাঝে মাঝে তোর এমন উদ্ভট কথায় খোলাকাশে মনখুলে হাসতে মন চায়।
-তুই না বুঝে কি আজিব কথা বলছিস!তুই জানিস?আমার সেই ভার্সিটি লাইফের কালো অধ্যায়ের দিনগুলো বার বার আমার মনে হানা দেয়।আমি নিঃশ্বাস নিতে পারতেছি না,বিলিভ কর শিমলা!?
শিমলা ভ্রু কুঁচকে আবার উদ্ভট কথা বলে উঠে,
-এরে শাওন,ব্যাপার কী!সোহানা আবার তোর লাইফে ব্যাক করলো নাকি?
-এইতো দিচ্ছিস মাথাটা গরম করে।বলবো ভাতের কথা আর তুই উঠাচ্ছিস মাংসের কথা।
-আচ্ছা আচ্ছা। এবার মনোযোগ দিয়ে সবশুনবো,বল!
-শিমলা,দিবানির ব্যাপারে আজ….এই বলেই থেমে যাই।কারণ কথা বলতে দিলো না আমার রুমের দরজার সামনে দাড়ানো কাল রাতের সেই মেয়েটি এবং সেই ছোট্রি পৃথুলী ।তারা অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
শিমলা আমার কথা আর না শুনতে পেয়ে আমার চোখ অনুসরণ করে দরজার দিকে চায়। ওদিকে তাকিয়ে মুঁচকি হেঁসে বলে,
-আরে শিবহানা পৃথুলী, ভেতরে আসো?ওখানে দাড়িয়ে আছো কেন?
রাতের মেয়েটির নাম তাহলে শিবহানা।শিবহানা মৃদু হেঁসে ভেতরে আসে।কিন্তু পৃথুলী ভয়ে কুকড়ে কেন জানি শিমুলার হাত ছেড়ে দেয় এবং দৌড়ে নিচে চলে যায়।আমি অনেকটা ভড়কে যাই এইরকম কান্ড দেখে!!
শিবহানা আমাদের সামনে এসে শিমুলাকে বলতে থাকে,
-শিমলা আপু,তোমরা কি নিয়ে কথা বলতেছো?
-আর বলো না,ও ওর দাদার আমলের ইতিহাস তুলেছে।
মেয়েটি হিহিহি হেসে বলে,
-তাই নাকি??
-হু।
আচ্ছা,শিমলা ও কে?
শিমলা আমার এমন প্রশ্নে অবাক দৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
-যে কাল থেকে তোদের বাড়ি।তুই তাকে এখনো চিনছিস না?
-কি করে আর চিনবো!আমিতে আর কারো সাথে তেমন কথা বলিনা।
– কথা বলবেই বা কি করে উনি,শিমলা আপু?যে ঝিমা মুরগির মতো রুমে বসে ডিমে তা দিচ্ছে তার আর কথা বলার প্রয়োজন হয় নাকি?
আমি মেয়েটির কথায় আর কোনো রেওয়াজ তুলিনি। চুপ হয়ে থাকি।।
মেয়েটা আবার হাই তুলতে তুলতে বলে,
-যাইহোক আমি পরিচয়টা দিয়ে দিচ্ছি।আমি হলাম আপনার ভাবীর মামাতো বোন।মানে আপনার বেয়াইন।কাল রাত অবশ্য বলতে চেয়েছিলাম,কিন্তু ওই সময়টি আর দেননি।
এর মধ্যে পাবাজের ডাক পড়ে।
-আরেহ,শিমলা এবং শিবহানা তোমাদের সবাই খুঁজতেছে আর তোমরা শাওনের সাথে গল্পে মর্ত?
-নাহহ,এমনি।আপনার জানের জান দোস্ততো নববধূ সাঁজছে,তাই আর কি দেখতে আসলাম।(শিমলা)
আচ্ছা,চলুন ভাইয়া।(শিবহানা)
হাত ইশারা দিয়ে শিবহানা সামনের দিকে হাঁটতেছে আর পেছন ফিরে আমার দিকে ড্যারাড্যারা চোখে তাকিয়ে শতানী ছলে মুঁচকি হাসতেছে।।।
সবার খাওয়াদাওয়া শেষ হলে একে একে সবাই বাড়ি থেকে বিদেয় নেয়।আর অপেক্ষা করে কণেপক্ষরা কণেকে বাড়ি নেওয়ার জন্যে।।
কণেপক্ষের সবাই বলতে থাকে
আজ যেহেতু বউভাত ছিল।বউভাত উপলক্ষে বরপক্ষ লোকজন উনাদের বাড়ি যেতে।এ নিয়ে তান্ডব শুরু হয়ে যায়।
আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। যদি আমাকে যেতে বলে,তাহলে তো ব্যাপারটা অন্যরকম দেখাবে।আমি ভীতমনে দরজাটা বন্ধ করে ফেলি।
কথা আছে,যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধা হয়।
দরজা বন্ধ করতে না করতেই দরজায় ঘনঘন কড়া নাড়ার শব্দ হয়।
জেদ করে গিয়ে দরজা খুলতেই চোখগুলো কপালের দিকে উঠে যায়।
ভাইয়ের বউ শতানী হাসি টেনে চোখটিপ মেরে ভ্রু কুঁচকায় আমার দিকে চেয়ে,আর বলে
-আমার সাথে এখন আমাদের বাড়ি যাবে।নো আরি,নো এক্সকিউজ। ওকে?
এই বলে উনি হেলেদুলে আমার রুমে ঢুকে ওয়াড্রবের দরজা খুলে আমার জামাকাপড়ে হাত লাগাতেই আমি উনাকে বাঁধা প্রদান করি।
-দেখেন,কাউকে জোর করার আপনার কোনো অধিকার নেই।আমি যাচ্ছি না আপনার বাড়ি,বের হোন আমার রুম থেকে!!
উনি হতভম্ব হয়ে বলেন,
-আহারে দেওরা,তুমি জানো? শ্বশুর-শাশুড়ী এবং তোমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে যেয়ে তোমায় অনেক কষ্টে ম্যানেজ করেছি,প্রাণতো আমার ওখানে অর্ধেক গেলো।
-আচ্ছা,সত্য করে বলেনতো আপনি কি চাচ্ছেন এই বাড়িতে?কি এমন স্বার্থে নিচুকতার পরিচয় দিচ্ছেন!?
উনি আমার দিকে খোলসহীন চোখ দিয়ে বলেন,
-এখন এত কথা না বলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও তো।আজাইরা প্যাঁচাল পারে!!
-আমি কি আপনার পালিত বিড়াল?যে বললেই সব মেনে নিবো!
-যদি না মানো,তাহলেতো জানোই আমার হিংস্রতা,আমি কি করতে পারি!!
-আপনি কি আমায় থ্রেট দেখাচ্ছেন?
-নো,নো সোনা থ্রেট নয়!এটা জাস্ট ভালোবাসা!!আর তুমি আমায় একটু ভালোবাসলে কি এমন ক্ষতি হবে তোমার?তোমার সর্বাঙ্গ আমায় নেশায় ফেলেছে।নেশায় আসক্তি ভালোবাসা মাখামাখি তুমিও আরাম পাবে এবং আমিও।। এতে,তো তোমার কোনো লস নেই।।।
আমার দাঁত খিঁচে আসে এই মহিলাকে কষিয়ে দু’গাল লাল করে দিতে।কিন্তু,এধরনের লোলুপ মহিলারা তিল কে তৈল বানিয়ে সমাজকে ন্যাস্য করে দিতে পারে নিজেকে অনেক কষ্টে দমিয়ে বলি,
-আপনি কিন্তু লিমিটেশন ক্রস করতেছেন!!
এ বলে আমি উনাকে ইগনোর করে রুম থেকে বেরিয়ে আসি।আর দ্রুত পদক্ষেপে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকি। ওখানে নামতেই সবাই আমার দিকে চোখতুলে তাকায়।কেউ তাকায় হাসোজ্জ্বলে,কেউবা কটু দৃষ্টি এড়ে!!!
আমাকে দেখে বাবার চোখগুলো লাল হয়ে যায়!!আমি বাবার দিকে না তাকালেও ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করতে পেরেছি।
আমি সবার সামনে দাড়িয়ে বলে উঠি,
-দেখেন,আমার ভার্সিটির এসাইনমেন্ট,কুইজ,প্রেজেন্টেশন ঝুলে আছে,কালই আমায় ঢাকায় ব্যাক করতে হবে।ওগুলোর প্যারায় আমার মাথা হ্যাং।এই মুহূর্তে কোথাও বেড়ানোর ধৈর্য আমার নেই।ক্ষমা করবেন সবাই।
এ বলে চলে আসি,সবাই অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।আর সিড়ির উপরে দাড়িয়ে ভাইয়ের বউ মুখ খিঁচে এবং দু’হাত মুঠ করে ক্রোধে ফুঁপে ওঠে।
চলবে….
১ম পর্বে আমার একটু মিস্টেক ছিল।তা হলো,আবির+শাওন দুটো নাম ব্যবহার করেছিলাম।আসলে আবির হবে না,নায়কের নাম শাওন। আর এখনো গল্পের প্রধান কাহিনীতে আসিনি,সবকিছুই অজানা,সে পর্যন্ত গল্পের সাথে থাকুন।
তাছাড়া, সবাই নিরব দর্শকের মতো গল্প পড়ে চলে যাবেন না।গঠন মূলক মন্তব্য করবেন যাতে আপনাদের চাহিদানুযায়ী গল্পটি ফুঁটিয়ে তুলতে পারি।