#বেলা_শেষে। [২৯+৩০]
তোমার ছোট্ট একটা কিউট বোন চাই তাইনা বাবা। অভিকে অতি আদর করে জিগ্যেস করলো আরাভ। বাবার এমন আদর পেয়ে কোন কিছু না বুঝেই মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সুচক জবাব দিলো অভি। হ্যাঁ তারও ছো্ট্ট একটা সুইট কিউট গুলুমলু বোন চাই। অভির স্বিকারোক্তি পেয়ে আরাভ ভূমির দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচালো। ঠোঁঠের কোনে ফুটে উঠলো তার বিজয়ী হাসি।ছেলেটাও যে তার কথার সায় দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আরাভের মুখে এই বিজয়ী হাসি বেশীক্ষণ টিকে রইলো না। অভির বলা কথায় মুহূর্তেই আরাভের মুখের হাসি উবে গেলো।
-না আমার কোন বোন চাই না। আমি একা পাপার আদর খাবো।
অভি তখন কিছু না বুঝেই তার বাবার কথায় তাল মিলিয়ে বলেছিলো তার সুইট কিউট বোন চাই। পরক্ষনেই যখন কালকের ঘটনা মনে পড়লো তার। আরাভ তাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে মিষ্টিকে কোলে নিয়ে আদর করছে তখনি মন খারাপ হয়ে যায় অভির। তারমানে অভির যখন বোন হবে তখন তার পাপা তাকে আর আদর করবে না। সব আদর বোনকে দিবে। কিন্ত সে তো তার পাপার আদর কারো সাথে ভাগ করবে না। তাই সে তড়িৎগতিতে বলে উঠে আমার কোন বোন চাইনা।
অভির কথা শুনে আরাব ও ভুমি দুজনেই বড় বড় চোখ করে অভির দিকে তাকায়। ভূমি মনে মনে বলে, এই ছেলেটার মনে এখনি এত হিংসা। বড় হলে না জানি কি কি ঘটাবে।
দুই বছর তিন মাস চারদিন পর আজ অফিসে এসেছে আরাভ। আজকের দিনটা সেলেব্রিট না করলে কেমন হয়। অফিসের সকল স্টাফ একটা ছোটখাটো পার্টির আয়োজন করেছেন। আর এদিকে আরাভ নিজের কেবিনে বসে গভীর চিন্তায় ডুবে আছে। এমন একটা দুর্ঘটনার পরেও আরাভ বেঁচে আছে। তার পরিবারের সকলে তার সাথে আছে সেই আনন্দে কোন দিকে মন দিতে পারে নি সে। পরিবার নিয়েই মেতে ছিলো সে। মাহিনের কথাটাও জানা হয়নি তার। মাহিন এখন কোথায় আছে কেমন আছে সেটাও জানে না আরাভ। তবে মাহিন যেখানেই থাকুক না কেন তাকে খুজে বের করে শাস্তি দিবে আরাভ। পৃথিবীর যে প্রান্তেই লুকিয়ে থাকুক না কেন আরাভ তাকে খুজে বের করে নিজের হাতে শাস্তি দিবে। ওর মতো একটা নরকের কীট বেঁচে থাকার কোন অধীকার নেই। ওকে মরতেই হবে। চেয়ার হেলান দিয়ে বসে দু-চোখ বন্ধকরে ভাবছে আরাভ।
বাহিরের সব কাজ চুকিয়ে রাকিব আসে আরাভের কেবিনে আরাভকে ডাকতে। আরাভের জন্যে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে আরাভ বা থাকলে পার্টি শুরু হবে কি করে। আরাভকে ডাকতেই এখানে আসে রাকিব। কেবিনে ডুকে আরাভকে এমন চিন্তিত অবস্থায় দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায় রাকিব। আরাভের মনের ভেতরে এখন কি চলছে সেটা বুঝতে বাকি রইলো না রাকিবের। আরাভের হাতের মুঠিতে মুচড়ানো কাগজ দেখেই বুঝতে পারছে রাকিব। রাকিবের ধারনা যদি সঠিক হয় তাহলে আরাভের কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে তাকে। কিন্ত এই মুহূর্তে রাকিব সেটা করতে চাচ্ছে না। সে আরাভের কোন প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে না। চোরের মতো পালিয়ে যাচ্ছে রাকিব। এমনি সময় একটা চেয়ারের পায়ার সাথে রাকিবের পা লেগে যায়।যার পরে চেয়ারের থেকে একটু শব্দ হয়।এই শব্দে কানে আসতেই চোখ খুলে আরাভ। রাকিব পরে যেতে যেতে নিজেকে সামলিয়ে নেয়। আরাভ ভ্রু কুচকিয়ে রাকিবের দিকে তাকাতেই রাকিব ইনোসেন্ট মুখ করে আরাভের দিকে তাকায়,
-রাকিব তুই এখানে?? কখন এলি??
-এইতো এখনি এলাম।
-ওহ।
-ওদিকে সবাই তোর অপেক্ষা করছে, তুই গেলেই পার্টি শুরু হবে। কথাটা বলেই রাকিব কয়েক কদম এগিয়ে যায় চলে যাওয়ার জন্যে। তখন আরাভ রাকিবকে পিছন থেকে ডাক দেয়। আরাভে এমন গভীর গলা শুনে থমকে দাড়ায় রাকিব। ঠিক যেন এই ভয়টাই পাচ্ছিলো সে। শুকনো একটা ডুক গিলে পিছনে ফিরে তাকায় রাকিব। আরাভ তার চেয়ার ছেড়ে রাকিবের পাশে এসে দাঁড়ায়। খোঁচা খোঁচা চাপ দাঁড়িয়ে হাত বুলিয়ে নেয় সে।তারপর রাকিবের মুখের দিকে দৃষ্টি স্থির করে ভয়েজ দৃঢ় করে বলে,
-মাহিন এখন কোথায়?? আরাভের প্রশ্নশুনে আবারও শুকনো ডুক গিলে রাকিব। ভয়ার্ত চোখে আরাভের দিকে তাকায় সে। কিন্তু আরাভের প্রশ্নের কোন জবাব দেয় না।
-তোকে কিছু জিগ্যেস করছি রাকিব। হোয়ার ইজ মাহিন? আ্যানসার মি।
রাকিব এবারো তার মুখ খুলে না। শুধু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে আরাভের মুখপানে। বিরক্ত হয়ে আরাভ রাকিবের দুই বাহুকে শক্তকরে চেপে ধরে। ক্রোধান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সে রাকিবের দিকে তারপর চেঁচিয়ে বলে,
-রাকিব চুপ করে থাকিস না। বল মাহিন কোথায় আছে। দেখ ও যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন ওকে খুজে আমি বের করবোই। আমার ভূমির গায়ে হাত দেওয়া শাস্তি আমি ওকে দিবোই। ওর কলিজায় কত সাহস না। ওর কলিজাটাই বে করে নিবো আমি। দেখ রাকিব এমনিতে আমার জিবন থেকে দুই বছর চলে গেছে। আর সময় নষ্ট করতে চাই না আমি। তুই যদি জেনে থাকিস মাহিন কোথায় আছে সেটা বল আমাকে।
-মাহিনের শাস্তি হয়েছে। বলিষ্ঠ কন্ঠে বলল রাকিব। রাকিবের কথা শুনে আরাভের হাত আলগা হয়ে আসলো। সে রাকিবের বাহু ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। বাতাশে প্রতিধ্বনির মতো এখানো কথাটা তার কানে বাঝছে। রাকিবের শাস্তি হয়েছে। এই বাক্যটা তার কাছে এত ভারী কেন লাগছে। আরাভ তো চাইছে নিজের হাতে মাহিনকে শাস্তি দিতে। তার কলিজাটা বের করে নিতে।মাহিনের শাস্তি হয়েছে মানে তো সে মাহিনকে আর কিছুই বলতে পারবে না। রেগে হাতের শক্ত মুঠি করে নিলো সে। তারপর টেবিলের উপর ঘুসি মারলে। সেখানে কাচ লাগানো ছিলো তাই আরাভের হাত কেটে যায়। আর সেখান থেকে রক্ত পরতে থাকে। রাকিব ওর হাত ধরতে চাইলে সে হাত উচু করে রাকিবকে আটকিয়ে দিবে বলে,
-এ তো সামান্য। সেদিন এর থেকেও বেশী রক্ত ঝড়ছে আমার ভূমির শরীর থেকে।
-আর তোর?? তোর শরীর থেকে কোন রক্ত ঝড়েনি। রাকিবের কথার কোন জাবাব দিলো না আরাভ। সে হাতটা ঝকিয়ে নিলো। অতঃপর বলল,
-মাহিনের শাস্তি হয়েছে মানে কি?? কিসের শাস্তি হয়েছে ওর!! আর কে ওকে শাস্তি দিলো??
-রিল্যাক্স আরাভ। একসাথে এত প্রশ্ন করলে কোনটার জবাব দিবো বল। তুই শান্ত হো বস এখানে। তারপর রাকিব আরাভকে তার চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলে,
-মাহিনের শাস্তি হয়েছে। আইনি ভাবে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে। আর ওকে এই শাস্তি কে দিয়েছে জানিস??
-কে? রাকিবের মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু সুরে বলল আরাভ।
-ভূমি। হ্যাঁ তোর ভূমি নিজে কোর্টে ওর প্রতিপক্ষ লো- ইয়ার হয়ে ওকে শাস্তি দিয়ে। আর কি শাস্তি দিয়েছে জানিস?? একজন ধর্ষণের শাস্তি হয়েছে ওর। রাকিবের কথা শুনে হাসলো আরাভ। এই শাস্তি তার পছন্দ হয়নি। সে তো মাহিনকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দিতে চেয়েছিল। বিরক্তি প্রকাশ করা ভঙ্গিতে বলল,
-কি শাস্তি হয়েছে ওর। যাবজ্জিবন কারাদণ্ড।
-নাহ মৃত্যুদণ্ড। মেয়েদের ভালোবাসার ফা্ঁদে ফালিয়ে তাদের সম্মান নেওয়া, চারজনকে ধর্ষণ ভূমিকে দুইবার ধর্ষন করার চেষ্টা আর তোকে প্রানে মেরে ফেলার চেষ্টা করার কারনে আদালত ওকে মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করেছে।
আইনের ৯/১ ধারায় ধর্ষণের জন্য সাজা ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এটি সংশোধন করে ১২ অক্টোবর ২০২০ মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী।
এখন থেকে ধর্ষণের শাস্তি হবে হয় মৃত্যুদণ্ড না হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
আরাভ এখন কিছুটা শান্ত হয়েছে।মাহিনের মৃত্যুর খবর শুনে এবার ভালো লাগছে তার।এখন অন্ততপক্ষে মেয়েরা নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারবে। মাহিনের মৃত্যুটা যদি আরো আগে ঘটতো তাহলে এতগুলো মেয়ে ধর্ষণের স্বীকার হতো না।
অফিসের পার্টিতে যোগ দিয়েছে ভূমি অভি নয়না ও তার মেয়ে মিষ্টি। পার্টি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ওরা অফিসে আসে। আসলে অফিসে পার্টির কথা নয়নাকে আগেই জানানো হয়েছিল কিন্তু সময়টা বলে দেয়নি ওদের।তাই আসতে লেট হয়েছিলো। পার্টি চলাকালীন সময়ে আরাভ ভূমিকে নিয়ে ও রাকিব নয়নাকে নিয়ে কাপল ডান্স করে। এদিকে মিষ্টি একা একা এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে কিছুক্ষণ। তারপর সে অভির কাছে এগিয়ে যায়। আসলে তখন অভির হাসে একটা চকলেট বক্স ছিলো। আর সেটা দেখেই মিষ্টি অভির কাছে এগিয়ে যায়। মিষ্টিকে দেখে অভির খুব রাগ হয়। তাই সে মিষ্টির দিকে ক্রোধান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তাতে মিষ্টি ভয় পাওয়ার পরিবর্তে খিলখিল করে হেসে দেয়। আসলে অভির ভ্রু কুচকিয়ে কপালের ভাজ আর নাক ফুলানো দেখে বেশ আনন্দ পায় মিষ্টি তাই সে হেসে দেয়।
দমকা হাওয়ায় ঘুরপাক খেয়ে,
ঘুটঘুটে অন্ধকারে শূন্যতায় পতিত আমি।
আদুরে মিষ্টি সুরে কেউ সমবেদনা জানায়নি,
ভালোবাসার আঁচলে বাঁধা হইনি তাই হয়তো
ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস আমাকে ছাড়েনি।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে রেলিংএ হাত রেখে বাহিরের অন্ধকারে ডেকে থাকা শহরের দিকে তাকিয়ে একমনে বলল ভূমি। মাথার মধ্যে হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে তার। রাকিব তো আরাভকে সবটা বলে দিয়েছে। এই নিয়ে আরাভ যদি ওকে কোন প্রশ্ন করে তাহলে কি বলবে ভূমি। আরাভকে তো সব সত্যিটা বলতে পারবে না সে। তাহলে আরাভ উল্টো রিয়্যাক্ট করবে। এই লুকোচুরি আর ভালোলাগছে না তার। বিশেষ করে আরাভের থেকে কোন কি আড়াল করতে তার একদমই ভালো লাগে না। কিন্ত ভূমি এখন কি করবে। আরাভ যদি তাকে তার ক্যারিয়ার নিয়ে কোন প্রশ্ন করে তখন কি বলবে ভূমি। সত্যিটা বলে দিবে। হ্যাঁ এটাই ভালো। অন্ততপক্ষে আরাভের থেকে কিছু আড়াল তো হবে না।
আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও আরাভ। আমি পারিনি তোমার কথা রাখতে। মানুষের ক্ষমতার কাছে নিজের স্বপ্ন নিজের ক্যারিয়ার সব কিছু বিক্রি করে দিয়েছি। পারিনি নিজের স্বপ্নকে পূর্ণতা দিতে। তবে অপরাধীকে শাস্তি দিয়েছি। তোমাকে যে মৃত্যুপথে ঠেলে দিয়েছিলো তাকে শাস্তি দিতে পেরেছি এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
অভির হাত ধরে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে আরাভ। ডিনার শেষে বাপ ছেলে মিলে বাহিরে গিয়েছিল। অভির অনেদিনের ইচ্ছে চিলো সে তার পাপার কাদে উঠে রাতের শহর দেখবে। অভির সেই ইচ্ছেকে পূর্ণতা দিতেই আজ ওরা বাহিরে গিয়েছিলো। আরাভ যখন অভির হাত ধরে রুমে আসে তখন পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে ভূমিকে দেখতে পায় না। বারান্দার দিকে চোখ পড়তেই দেখে ভূমি রেলিং এর উপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। শাড়ির আচল নিচে পরে ফ্লোরের সাথে লেপ্টে আছে। জানালা দিয়ে বাহিরের ধমকা হাওয়া এসে বারবার নাড়িয়ে দিচ্ছে ভূমির চুল। আরাভ মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেইদিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। আনমনেই সে বলে উঠলো,
-এলোকেশরী। আমার এলোকেশরী
পাপা চল আমরা ঘুমাবো। আরাভের হাত টেনে বলল অভি।অভির কথায় ঘোর কাটে আরাভের। সে অভির দিকে তাকিয়ে বলে,
-তুমি বেডে যাও আমি আসছি। অতঃপর অভি চলে যায়। আরাভ আবারও তার দৃষ্টি স্থাপন করে তার এলোকেশরীর দিকে। বুকের উপর হাত গুজে দিয়ে মৃদু হাসলো আরাভ। তারপর মনে মনে বলল,
-আর কত ভাবে কত রুপে তোমার প্রেমে পড়বো বলতে পারো এলোকেশরী।আই এমন অলরেডি ম্যাডলি ইন লাভ উইথ ইউ। এখন কি সন্যাসি হবো নাকি।
-পাপা আসো না। বিছানা থেকে ডাক দিলো অভি। আরাভ অভির দিকে তাকিয়ে বলল, আসছি। অতঃপর আরাভ অভির কাছে যায়। আর ওকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুৃম পাড়িয়ে দেয়। অভিকে ঘুম পাড়িয়ে আরাভ ভূমির কাছে চলে যায়। ভূমি এখনো আগের অবস্থাতেই দাড়িয়ে ছিলো।
রেলিংএ থাকা ভূমির হাতের উপর হাত রাখে আরাভ। ভূমি কিৎচিত মাথা নাড়িয়ে বলে,
-ছেলেকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো শেষ।
-এখনো ঘুমাও নি কেন??
-ঘুম আসছে না।
আরাভ ভূমির দুই বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে দাঁড়ালো। আবছা আলোতে ভূমির মুখটা সে স্পষ্ট দেখতে না পেলেও বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে ভূমি কোন কিছু নিয়ে বেশ চিন্তুিত আছে। আরাভ এক হাতে ভূমির চিবুক ধরে মাথটা উঁচু করে নিলো।
-কি হয়েছে ভূমি?? তোমাকে এত চিন্তিত কেন লাগছে।
-ক-কই না তো। কি যে বলো না তুমি আরাভ। এখন আর কি নিয়ে চিন্তা করবো আমি। তুমি তো আমার পাশেই আছো তাই না। আরাভের বুকে মাথা রাখলো ভূমি। আরাভ দু-হাতে তার প্রিয়সীকে আলতো করে জড়িয়ে নিলো।
পরের দিন সকালে সবাই মিলে ব্রেকফাস্ট করছে এমনি সময় ড্রয়িংরুমে থাকা ল্যান্ডফোনটা বেজে উঠলো। এখন আবার কে কল করলো। খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় জুবাইদা। কারন বাড়ির ল্যান্ডফোনে সাধারণত তার শুভাকাঙ্ক্ষী ছাড়া অন্যকেও কল করে না। তাই জুবাইদা উঠে গেল কল রিসিভ করতে। কিন্ত কল রিসিভ করে জুবাইদা বেশ হাসিখুশি হয়ে আপনে আগ্গে সম্বোধন করে কথা বলে। তারপর জুবাইদা খবার টেবিলে বসে আরাভকে বলে উঠে,
-আজ তোমার অফিসে যাওয়ার দরকার নেই। আরাভ কাটা চামচ দিয়ে এক টুকরো সালাদ মুখে পুরে বলে,
-আবার কার সাথে দেখা করতে যেতে হবে বলো। আরাভের কথা শুনে জুবাইদা বেশ চটে গেলেন। এই ছেলেটা সবসময় মজা করে।
-ভূমির বাবা কল করেছিল। তিনি তোকে আর ভূমিকে তার বাড়িতে ডেকেছে। আর আজ তুই সেখানেই যাবি
-আর আমি!! আমি যাব না তোমাদের সাথে। দুধের গ্লাস রেখে বলল অভি। অভির কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। খন্দকার জুবাইদা অভির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-তুমিও যাবে দাদুভাই। আর হ্যাঁ তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে কেমন। দাদু কিন্ত তার ইয়াং বয়ফ্রেন্ডকে ছাড়া বেশীদিন থাকতে পারবে না। অভি মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক জবাব দিলো।
ভূমির গ্রামের বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধাহয় ওদের। সারাদিন জার্নি করে খুব টায়ার্ড হয় সকলে তাই রাতে ডিনার করে আগেই ঘুমিয়ে পরে। পরেরদিন সকালে ভূমি অভিকে নিয়ে তাদের গ্রামটা ঘুরে ঘুরে দেখায়। গ্রামের এই সবুজ স্যমল ফিরোজা রুপালি প্রাকৃতিক দৃশ্যবলি দেখে মন ভরে যায় অভির। বইয়ের পাতায় গ্রামের দৃশ্যবলি দেখেছে সে। কিন্ত বাস্তবে গ্রাম দেখতে এত মনোরম সেটা বুঝতে পারেনি। গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠো পথে হাঁটার সময় অভি লক্ষ্য করে, রাখাল মাঠে গরু নিয়ে যাচ্ছে। হাতে তার বাঁশের বাঁশি। কৃষকেরা ভাটিয়ালি গান গাইতে গাইতে মাঠে কাজ করছে। মুহূর্তে মনে পড়ে আ.ন.ম. বজলুর রশিদের কবিতার আংশিক অংশ,
রাখাল বাজায় বাঁশি কেটে যায় বেলা,
চাষী ভাই করে চাষ কাজে নাই হেলা।
সোনার ফসল ফলে ক্ষেত ভরা ধান,
সকলের মুখে হাসি গান আর গান।
-ইটস্ প্রিটি আম্মু। কত সুন্দর গ্রাম। ছেলের কথা শুনে হাসলো ভূমি। প্রতিউত্তরে সে বলল,
-হুম, আমাদের গ্রামটা অনেক সুন্দর।
ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে দেখে আরাভ মাত্রই ঘুম থেকে উঠেছে। ঘুমঘুম চোখে উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে। হায়তো ছেলে আর বউকে দেখতে না পেয়ে তাদের জন্যেই অপেক্ষা করছে। আরাভকে দেখে অভি আরাভকে জড়িয়ে ধরে বলে, জানো পাপা গ্রাম কত সুন্দর। আচ্ছা পাপা আমরা এখানেই থেকে যায় না। ছেলের কথা শুনে মৃদু হাসলো আরাভ। তারপর তাকে কোলে তুলে নিয়ে রওনা দিলো অন্দরমহলের দিকে।
আগামি কাল ভূমির বাবা তার চাকরি থেকে অবসর গ্রহন করবেন। তাই স্কুলের পক্ষ থেকে একটা ছোটখাটো অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়েছে। ভূমির বাবা চায় তার কর্ম জিবনের শেষ দিনের সাক্ষী হয়ে থাকুক তার আপনজনেরা। তাই তিনি ভূমিদের এখানে ডেকেছেন।
পরেরদিন সবাই সকাল সকাল তাদের গ্রামের সেই ছো্ট্ট স্কুলে উপস্থিত হোন। মাঠে পেন্ডেল করে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে স্কুলের মাঠ। স্কুলের চারদিকে লাইটিং করা হয়েছে।সামর্থের মধ্যে বেশ ভাল করে সাজিয়েছে তারা স্কুলটিকে। একে একে অতিথি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয় প্যান্ডেলের ভিতর। এত বছর পর স্কুলের আঙিনায় পা রাখতেই ভূমি অনুভব করে তার ছেলেবেলা। মনে পড়ে যায় শৈশবের সেই সোনালি দিনের স্মৃতি। দু চোখ বন্ধ করে সেই সোনালি দিনের স্মৃতি মনে করতে থাকে সে। মনে মনে ভাবে ইশ,আবার যদি ফিরে পেতাম সেই ছেলেবেলা। আরভ বুঝতে পারে ভূমির অনুভূতিগুলো। সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ভূমির দিকে।
চোখ মেলে সামনে তাকাতে বড়োসড়ো একটা ঝটকায় ভূমি। কে কাকে দেখছে সে। নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ভূমির। দুহাতে চোখ কচলিয়ে আবার সামনে তাকায় সে। না তার চোখের ভুল নয় সে সত্যিই দেখছে। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব।
চলবে,,,,,
#লেখিকা- মাহফুজা আফরিন শিখা।
[রিচেক করা হয়নি তাই ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]