#বিষাক্ত_প্রেম
#পর্ব_5
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
মুরতাসিম বিরক্ত মাখা মুখে সামনে তাকিয়ে আছে।
মুরতাসিমের সামনে খাবারের বক্স রেখে হাসি হাসি মুখে তাকালো ইভা।
মুরতাসিমঃ তুমি এখানে কেনো..?
ইভাঃ আন্টি বললো তুমি নাকি সকালেও কিছু খাওনি।
মুরতাসিমঃ এটা অফিস…
” জানি জানি এটা অফিস যখন তখন এভাবে চলে আশা ঠিক নয়। কিন্তু তুমি এই কাজের ফাকে ভুলে যাচ্ছো তোমার নিজের যত্ন নেওয়া উচিত। ”
মুরতাসিমঃ তোমার কথা শেষ হলে এই গুলো নিয়ে বের হও।
ইভাঃ আমি নিজ হাতে তোমার জন্য ভালোবেসে রান্না করেছি মুরতাসিম।
মুরতাসিম নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো।
ইভাঃ আমি জানি তুমি খাবে। তোমার খুব খিদে লেগেছে তাই না..?
মুরতাসিম শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘ খাবার নিয়ে বেরিয়ে যাও। ‘
মুরতাসিমের এই শান্ত কন্ঠ শুনে ইভার চোখে জল চিকচিক করে উঠলো। সে খুব ভালো করেই মুরতাসিমকে চিনে। হয়তো পৃথিবীতে সেই সবচেয়ে বেশি মুরতাসিম কে চিনে। শান্ত ভাবে কথা বলেছে মানে মুরতাসিম রেগে আছে৷ কিন্তু কেনো..? মুরতাসিম কেনো ওর সাথে এমন করে!! চোখ থেকে টপ করে এক ফোঁটা জল পরলো মুরতাসিম দেখার আগেই ইভা মুছে নিলো।
ইভা খাবারের বক্সটা হাতে নিয়ে মুরতাসিমের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,’ তুমি আজ একটু জলদি বাসায় এসো আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। আজ আমার….বলতে গিয়েও থেমে গেলো ইভা। ‘
মুরতাসিম কিছু বললো না। সে তো আজ বাসায় যাবে না। এই মেন্টাল মেয়েকে দেখলেই ওর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
ইভা চোখের জল মুছে খাবার বক্স হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। আজ ওর জন্মদিন কিন্তু মুরতাসিমের সেটাও মনে নেই। দুই দিন আগেও কল দিয়ে বলেছে আজ ওর জন্মদিন তাও ভুলে গেলো!!!..
ইভা হালিমা বেগমের বেস্ট ফ্রেন্ডের মেয়ে। হালিমা বেগম নিজের মেয়ের মতো আদর করেন ইভাকে। উনি চান এই মেয়ে এই বাড়ির আরেকটা মেয়ে হয়ে আসুক কিন্তু মুরতাসিম তো ইভাকে দেখলেই রেগে যায়। ইভা জেনো ওর বিষাক্ত এলার্জি।
______________
ম্যানেজার ফাইল দেখা শেষ করে তিতিরের দিকে তাকালো।
তিতির তো গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেছে।
ম্যানেজার এতক্ষন নিজের কাহিনী বলে ছিলো। বেচারার খেয়ালই ছিলো না তিতির উনার কথা না শুনে ঘুমাচ্ছে।
ম্যানেজার তিতিরকে ডাকতে নিলেই এক গম্ভীর কণ্ঠ ম্যানেজারকে থামিয়ে দিলো৷
ম্যানেজার বুঝতে বাকি নেই আজ উনার চাকরির শেষ দিন।
ভয়ে ভয়ে পেছন ফিরে দেখে মুরতাসিম প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
ম্যানেজারঃ স্যার আপনি!!..
মুরতাসিমঃ আপনার সাথে আমি পরে কথা বলবো। এখন আসুন।
ম্যানেজার কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,’ সরি স্যার..’
মুরতাসিমঃ আপনি জানেন এক কথা দ্বিতীয় বার রিপিট করা আমার পছন্দ না।
ম্যানেজার ভয়ে ভয়ে চলে গেলো। আজ তো এই মেয়ের চক্করে চাকরিই চলে গেলো।
মুরতাসিম টেবিলের উপর থেকে পানির বোতল নিলো। তিতিরের কাছে গেলো একদম কাছ থেকে কিছু সময় ওর মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো৷ মেয়েটা ঝগড়ুটে হলেও অনেক কিউট। বলেই ওর মুখে পানি ঢেলে দিলো৷
গভীর ঘুমে তলিয়ে থাকা তিতির চোখে মুখে পানি পরতেই লাফিয়ে উঠলো।
তিতিরঃ বৃষ্টি! বৃষ্টি! ছাঁদ ছিদ্র হয়ে গেছে!!!
মুরতাসিম তিতিরের রিয়াকশন দেখে হেঁসে উঠলো।
তিতির সামনে তাকিয়ে দেখে সবাই অবাক হয়ে তিতিরের দিকে তাকিয়ে আছে৷
তিতির কিছুটা লজ্জা পেলো। অফিসে এসে বোকার মতো ঘুমিয়ে পড়লো তাও প্রথম দিন। সবাই কি ভাবছে। সামনে তাকিয়ে দেখে মুরতাসিম ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
মুরতাসিমঃ আপনি আমার ক্যাবিনে আসুন মিস তিতির।
সবাইকে কাজে মন দিতে বলে মুরতাসিম গেলো।
মুরতাসিম যেতেই একটা মেয়ে বলে উঠলো, ‘ এই প্রথম কোনো মেয়ে স্যারের এসিস্ট্যান্ট হয়েছে তাও প্রথম দিনেই চাকরি থেকে বাদ হয়ে যাবে। মনে করো তোমার চাকরির আজ প্রথম আবার আজ শেষ দিন। ‘
তিতিরের ঘুম আকাশে উড়ে গেছে সব গুলো ফাইল নিয়ে মুরতাসিমের ক্যাবিনে গেলো।
মুরতাসিম ফাইল গুলোর দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই তিতিরের ফোনটা বেজে উঠলো।
তিতির ভয়ে ভয়ে মুরতাসিমের দিকে তাকিয়ে আবার মোবাইলের দিকে তাকালো সাইফ কল দিয়েছে। তিতির কল কেটে দিলো৷
তিতিরঃ সরি স্যার…
মুরতাসিমঃ এই ফাইল গুলো কি আপনি দেখেছেন..?
তিতির ভয়ে চুপসে গেলো। আসলে তো সে একটা ফাইলও দেখেনি।
মুরতাসিমঃ কথা বলুন।
মুরতাসিমের এই গম্ভীর কণ্ঠ শুনে তিতির কেঁপে উঠল।
তিতিরঃ আস..লে..
মুরতাসিমঃ আমি প্রথমেই বলেছি আমি আমার কাজে অবহেলা একদম পছন্দ করি না। কাজ ঠিক ভাবে সম্পূর্ণ না হলে তার জন্য শাস্তি অবশ্য দেওয়া হবে। কাজটা আপনার ছিলো ম্যানেজারের না!!
তিতিরঃ কাজ থেকে বের করে দিলেই তো হয়। এটাই তো সব থেকে বড় শাস্তি ।
ভয়ে ভয়ে চোখ বন্ধ করে সবটা বলে মুরতাসিমের দিকে তাকালো তিতির৷
মুরতাসিম বাঁকা হেঁসে বললো,’ আপনি অলরেডি কোম্পানি থেকে ৫০হাজার টাকা নিয়েছেন। ‘
তিতির মনে হলো নিজের গালে নিজেই থাপ্পড় বসাতে।
মুরতাসিমঃ আপনি এখন আমার জন্য এবং অফিসের সবার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসুন।
তিতির বিরক্ত হয়ে কিনা বলবে তার আগেই আবার সাইফ কল দিলো৷
তিতির এবারও কলটা কেটে দিলো৷ এই সাইফের বাচ্চাও কল দেওয়ার সময় পেলো না!!
তিতিরঃ আমার কাজ এটা নয়!
মুরতাসিমঃ এটা আপনার শাস্তি।
তিতিরঃ এটা কেমন শাস্তি!! আমি কফি বানাতে পারি না।
মুরতাসিম বসা থেকে দাঁড়িয়ে তিতিরের সামনে আসলো।
তিতির ভয়ে চুপসে গেলো। এখন এই লোক আবার কি করবে।
মুরতাসিম তিতিরের থেকে বেশ কিছুটা দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে বললো,’ আপনি যদি এখন আমার কথা না শুনেন তাহলে আপনাকে এক্ষন এই সাততলা থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিবো।
তিতিরঃ আমাকে কে কি বাচ্চা মনে হচ্ছে আপনার!!। যে আমি ভয় পেয়ে যাবো!!
মুরতাসিমঃ আপনি একটু বেশি কথা বলেন৷ এখানের নিয়ম এটা। আপনি নিজ ইচ্ছায় ভুল করেছেন। আপনি এখন নিজের শাস্তি মেনে না নিলে কোম্পানি থেকে আপনাকে কোনো টাকা দেওয়া হবে না।
টাকার কথা শুনেই তিতির চুপ হয়ে গেলো। মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো, ‘ টাকা বড় কথা নয় স্যার। শাস্তি তো শাস্তি সবাই মানলে আমি কেনো রুলস ফলো করবো না। এখনি যাচ্ছি স্যার।
তিতির যেতেই মুরতাসিম বাঁকা হাসলো। এই মেয়ে নিজেকে সব সময় বাঘিনী রাখতে চায় কিন্তু যখন টাকার কথা আসে তখনি বাঘিনী থেকে বেড়াল হয়ে যায়।
তিতির সবার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসলো। এক এক করে সবাইকে কফি দিলো৷
একটা মেয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘ তুমি এইসব কি করছো..?’
তিতির ও মেয়েটার মতো ফিসফিস করে বললো,’ এটাই তোমাদের আজব অফিসের আজব নিয়ম। ভুল করলে শাস্তি দেওয়া হয়। ‘
~ হুম ভুল করলে শাস্তি দেওয়া হয় তবে এমন শাস্তি নয়।
তিতিরঃ কেমন শাস্তি দেওয়া হয়..?
~ অফিস থেকে একদম বের করে দেওয়া হয়।
তিতির একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো তাহলে ওকে কেনো বের করছে না!!। এই লোকের মাথায় কি চলছে!!..?
তিতির কফি নিয়ে মুরতাসিমের সামনে যেতেই মুরতাসিম বলে উঠলো, ‘ আমি যার-তার হাতে কফি খাইনা। বলেই কাউকে কল দিয়ে বললো ওর জন্য কফি নিয়ে আসতে।’
তিতিরের মন তো চাচ্ছে এই সবটা কফি মুরতাসিমের মাথায় ঢেলে দিতে। যার-তার হাতে খায় না!!যতসব ডং!
তিতির কফিটা নিয়ে মুরতাসিমের সামনে সোফায় বসে নিজেই খেয়ে নিলো।
মুরতাসিম শান্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাতেই হেঁসে বললো, ‘ দুঃখিত স্যার.. আপনি যার-তার হাতে কিছু খাননা তাই নিজেই খেয়ে নিলাম। এতো কষ্ট করে বানিয়েছি ফেলে দেওয়ার জন্য নাকি!
মুরতাসিমঃ খাওয়া শেষ..?
তিতিরঃ জ্বি স্যার।
মুরতাসিমঃ তাহলে এখানে কিছু ফাইল আছে এইগুলো ভালো করে দেখে নিয়ে আসুন। ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল এই গুলো।
তিতির ফাইল গুলো নিয়ে চলে যেতে নিলেই মুরতাসিম ওকে থামিয়ে বললো,’ মোবাইল আর ইয়ারফোন এখানে রেখে যান। ‘
তিতিরঃ কেনো স্যার…
মুরতাসিমঃ অফিসে মোবাইল ব্যাবহার করা নিষিদ্ধ।
তিতির ঠোঁট উল্টে মোবাইল সোফার উপর রেখে বেরিয়ে গেলো।
তিতির যাওয়ার কিছু সময় পর ওর মোবাইলে বার বার রিং হচ্ছে।
মুরতাসিম মোবাইল তাকিয়ে দেখে সাইফ দিয়ে সেভ। সে ভাবলো হয়তো তিতিরের বয়ফ্রেন্ড বার বার কল দিচ্ছে। বিরক্ত হয়ে তিতুরকে ঢেকে বললো মোবাইল নিয়ে জেনো আর কখনো অফিসে না আসে৷ মোবাইল বন্ধ করে যেতে।
তিতির ও বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
অফিস শেষে তিতির গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছে ।
ওর সামনে দিয়ে একটা গাড়ি গেলো।
তিতির গাড়িটার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ দেখতে ঠিক ওই গাড়িটার মতো।’
ওর মনে পড়লো ইসস আমি তো ওই ছেলেকে টাকা নেওয়ার জন্য ফোন করিনি।
তিতির বেশ কয়েক বার কল দিলো৷
রিসিভ হতেই তিতির বলে উঠলো, ‘ ভাই আপনার টাকা এসে নিয়ে যান।’
~ কোথায় আপনি..?
“এমন কিপ্টে লোক আমার জীবনেও দেখিনি বিরবির করে বলে বললো আজ নয় কাল ঠিকানা আমি পাঠিয়ে দিবো। বলেই কল কেটে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে রইলো। ”
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।