বাড়িওয়ালার রাগি মেয়ে?
?পর্ব:৫
লেখা : Sakib Nisi??
.
সারারাত ব্যাথায় ঘুম হলো না।
গীটার টাও ধরতে পারছিনা।
নানান চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,,
সব উল্টো পাল্টা লাগছে।
সব তো ঠিকই ছিল তাহলে কেন এমন হলো হটাৎ??
সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হলো।
আজ আর ভার্সিটি যাবো না। তাই ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে রুমে শুয়ে আছি এমন সময় আন্টি এলো আমাদের বাসায়।
আম্মু বললো আমি এক্সিডেন্ট করেছি তাই শুনে আন্টি রুমে এলো দেখতে। তাকেও একই কথা বললাম। সত্যি কথাটা কাওকে না জানালোই ভালো। তাতে অপিকে সবাই খারাপ ভাববে৷ অপিকে কিছুদিন ক্লাস নিব না বলে দিলাম। আন্টি কিছু সময় কথা বলে চলে গেলো।
বিকেলে একটু ছাদে যাব ভাবলাম তাই মেহজাবিনকে নিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠছি। অপিদের রুমের সামনে দিয়ে জলদি উঠে গেলাম যাতে ওর সাথে দেখা না হয়।
কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয়,,, ছাদে গিয়ে দেখি অপি ওখানে দাড়িয়ে আছে।
মেহজাবিন ওকে দেখে আমার কাছ থেকে ওর কাছে চলে গেলো। অপি মেহজাবিনকে কোলে নিয়ে আমার দিকে তাকাতেই আমি মাথা নিচু করে চলে আসলাম। ওর সামনে যাবার কোন ইচ্ছে নেই আমার।
> আন্টি জানো চাচ্চু কাল রিকশা থেকে পড়ে ব্যাথা পেয়েছে,, সারারাত ঘুমায়নি।
অপি আর কিছু বললো না মেহজাবিনকে।
সন্ধ্যা হয়ে গেলে মেহজাবিনকে বাসায় রেখে যায় অপি।
আমিও আর কোন কিছু আমলে নিলাম না।
৫ দিন পর আমি মোটামুটি সুস্থ। বিকেলে গীটার নিয়ে বসলাম বন্ধু দের সাথে। কিছু সময় পর একটা মেয়ে এলো আমাদের সামনে….
> আপনি আবির তাইনা??
> জি,, কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না।
> আমি মাহি,, আপনার গান শুনেছিলাম সেদিন আমার বান্ধবীর ফোনে। আপনার বাবাও ছিলেন সাথে।।
> ওহহ আচ্ছা।
> আপনার গানের গলা ভালো। মুগ্ধতা ছেয়ে যায়। এতদিন এখানে খুজতে আসতাম আজ পেলাম আপনাকে।। এতদিন কি আসেন নি??
> আমি একটু অসুস্থ ছিলাম তাই আসিনি।।
> ওহহ এখন কেমন আছেন?
> আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।।
> আমি এখানেই থাকি।। ইন্টার পড়ছি।। আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো। একটা রিকুয়েষ্ট করব রাখবেন??
> জি বলেন।
> আপনি যখন এখানে এসে গানের আড্ডা দিবেন আমাকে একটু জানাবেন আপনাদের সাথে বসে আড্ডায় ভাগ বসাবো।।
> সত্যি বলছেন??
> হুমম সত্যি বলেন জানাবেন??
> ওকে আপনার নাম্বার টা দিন।
> ওকে…
> আমরা তো বন্ধু হতে পারি তাহলে?
> হুমম অবশ্যই।।
> আরেকটা রিকুয়েষ্ট করব।
> বলেন।
> আপনার বাবার সাথে ও পরিচয় করিয়ে দিবেন।
> হাহাহা আচ্ছা।
মাহিকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। ওদিনকার আড্ডা খুব জমে ছিল। মাহি অনেক মিশুক মেয়ে। ভদ্র স্মার্ট বন্ধুসুলভ। আর চেহারাটাও খুব মায়াবী।
রাতে বাসায় ফিরার সময় গেটের সামনেই দেখি অপি দাড়িয়ে আছে। আমি দুর থেকে ওকে দেখে সামনে যাচ্ছি না।। অপি মনে হয় কারো জন্য অপেক্ষা করছে। আমারও তাড়া নেই বলে দাড়িয়ে আছি। এভাবে কিছু সময় থাকার পর আম্মুর ফোন এলো বাসায় যেতে বলছে তাই আর দেরী না করে সোজা চললাম। গেটে ঢুকে পা রাখতেই অপি আটকালো আমাকে।
> আবির শুনো?
> আমি চুপ করে পা বাড়ালাম।।
> আবির প্লিজ শুনো,,, আমি সেদিন খুব ব্যবহার করেছি তোমার সাথে।। im SRY”!!
> আমি চুপ করে আছি।
> প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ভুলেই গিয়েছি তুমি আমার জীবন বাঁচিয়েছো। আর আমি তোমাকে সবার সামনে হাত তুলে অপমান করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।। তুমি তো চাইলে আম্মুকে বলতে পারতে তবুও বলোনি।।। এ কয়দিন তোমাকে দেখিনি। তোমার সেই বিরক্ত করা গুলোকে খুব মিস করেছি।
> শুনুন,,, আপনি কোন ভুল করেননি। আমার মত ছোটলোক রাস্তার ছেলের জন্য এটাই উচিত ছিল। ভুলেই গিয়েছিলাম আপনি বাড়িওয়ালার মেয়ে আমি ভাড়াটিয়া। আমি ক্ষমা চাচ্ছি আমাকে ক্ষমা করবেন। আর আমি আপনার সামনেও আসতে চাইনা।
অপি আমার হাত ধরতে গেলে আমি ছাড়িয়ে চলে এলাম। কয়েকবার ডাকলো আমি কানে তুলিনি।
রাতে খাবার সময় অপি আবার বাসায় এলো। একটা চিরকুট আমার রুমে ছুড়ে দিয়ে কিছু সময় পর চলে গেলো।
আমি চিরকুট খুলে পড়লাম।
“””তোমাকে জ্বালানোর জন্য ওই ছেলের হাত ধরে হেসেছিলাম। ও আমারই ক্লাসমেট। আমার কোন বফ নেই। তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য সরি। কাল থেকে একসাথে যাব। সিড়িতে অপেক্ষা করব সকালে,, না এলে কপালে শনি আছে “”।
এখন আমি পড়লাম আরেক টেনশনে,, এখন আমি কি করব??
একেকসময় একেকরকম আচরন কিছু ই বুঝতে পারিনা। আবার কোন নাটক সাজিয়ে আমাকে মারবে কে জানে।
হটাৎ মেসেজের টুং-টুং শব্দ এলো। মাহির মেসেজ এলো। কল দিলাম… বেশ কিছু সময় কথা বললাম। মনটা ফ্রেশ হয়ে গেলো।
পরদিন সকালে বের হতেই দেখি অপি দাড়িয়ে আছে। আমি ওর দিকে খেয়াল না করেই সোজা নেমে গেলাম। ও আমাকে ডাকলো শুনলাম না। রিকশা নিয়ে জলদি চলে গেলাম। হয়তো অপি কষ্ট পেয়েছে তাতে আমার কি। আর কষ্ট পাবার কি আছে?? তারমতে আমিতো রাস্তার ছেলে একটা।
যাইহোক দুপুরে ফিরার সময় দেখি ভার্সিটির সামনে মাহি আর ওর বান্ধবী দাড়িয়ে কথা বলছে,,, মাহিকে ডাক দিতেই ও অবাক হয়ে গেলো…..
> আবির তুমি এখানে।
> হুমম আমার ভার্সিটি এটা,,, তুমি এখানে কার জন্য?? বফ আছে এখানে??
> আরে ধুররর কি বলো,,, শপিং এ এসেছিলাম বাসায় যাব এখন।
> তো চলো একসাথে যাই।
> ওকে।
মাহি ওর বান্ধবী কে বিদায় জানিয়ে আমার সাথে হাটছে। দুজনে হাসতে হাসতে হাটছি।
ভাবলাম আজ একটু আমিও নাটক করব অপির সামনে। আমাকে জ্বালানো তাইনা?? আমিও জ্বালাতে পারি।
অপির স্কুলের সামনে আসতেই মাহির হাত ধরে হাটছি আর ইচ্ছের বাইরে হাসছি ওর দিকে তাকিয়ে।
> চলো ফুসকা খাই।
> হুমমম চলো।
ফুসকার দোকানে বসতেই দেখি অপি আমার সামনে হাজির। ওর চেহারাটা তখন দেখার মত,,, এত রাগ আগে দেখিনি,, মনে হচ্ছে ওর রাগে ভস্ম হয়ে যাব। পাত্তা না দিয়ে মাহির দিকে তাকিয়ে আছি।৷
> জানো মাহি,,, তোমার চেহারায় একটা মায়া আছে,, নিষ্পাপ চেহারা,,, কোকিলের মত তোমার কন্ঠ যেন ডাকলেই বসন্ত জেগে ওঠে মনে। আর অবিরত ঝরতে থাকে কৃষ্ণচুড়া মন প্রান্তরে………..
মাহি মুগ্ধ হয়ে গেছে একথা শুনে,,, লজ্জা পাচ্ছে তাকাতে আমার দিকে। আর ওদিকে অপি??? খুন করতে পারলে বাচে……
আমি মাহিকে ফুসকা খাইয়ে দিলাম।।। যেন হাজার বছরের তিলে তিলে সঞ্চিত প্রেম আমাদের,, আহা।
অপিকে জ্বালানোর জন্য এর বেশি কিছুর দরকার নেই। কিন্তু আমার বুঝতে বাকি রইলো না সামনে আমার কপালে সত্যি খুব শনি আছে……
মাহিকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে আমি খুশি মনে কিছু টা লাফিয়ে লাফিয়ে হাটছি…. আমার প্রতিশোধ সাকসেসফুল….
কিন্তু বাসার কিছু টা আগেই অপি দাড়িয়ে আছে হাতে হকিস্টিক…. ওর চোখদুটো লাল হয়ে গেছে রাগে। এখন আমি কই যাব???
ভয় পাচ্ছি আবার পাচ্ছি না।। হাসিমুখ নিয়ে বুক ফুলিয়ে অগ্রসর হলাম,,,, অপি সোজা এসে হকিস্টিক দিয়ে পায়ে সজোরে বসালো দু তিনটা,,, পড়ে গেলাম।
মেয়ে নিয়ে ঘুরিস তাইনা,??? কোকিলের ডাকে কৃষ্ণচুড়া ঝরাস??? এখন দেখবি ভালোবাসাও ঝরাবো………………
চলবে……….