বালিকা বধূ পর্ব-০৩

0
855

#বালিকা_বধূ
[৩য় পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

চিৎকার চেচামেচি শুনে ঘুম ভেঙে গেলো নাঈমার। সে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে রাকিব তার পাশে নেই। নাঈমা তাড়াতাড়ি করে উঠে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলো নিজের রুম থেকে। রুম থেকে বের হতেই নাঈমার কানে একটা আওয়াজ ভেসে আসলো। কথা টা বলছিল নাঈমার শ্বাশুড়ি। নাঈমার শ্বাশুড়ি একটা মধ্যবয়সী মহিলার সাথে কথা বলছে।

মসহিলা টা বলল — তোমার ছেলের বউ কই? তাকে তো দেখতে পারছিনা।

— মনে হয় পড়েপড়ে ঘুমাচ্ছে। মনে হয় বড়লোক বাড়ির মেয়ে। সকাল ৯ টা বাজে এখনো উঠে নাই। মনে হয় বাসার কাজ করার জন্য সে কাজের লোক নিয়ে আসছে।

— এখন কার বউ গুলা এমনি হয়। কি আর বলবো?

নাঈমা কথা গুলো শুনেও না শোনার বান করে তার শাশুড়ির দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। নাঈমার শ্বাশুড়ি নাঈমাকে দেখে পাশের মহিলাকে বলল — আইতাছে নবাবের বেটি।

মুখ ভেংচি দিয়ে কথাটা বলল। তারপর নাঈমা ওনাদের সামনে এসে সালাম। তারপর তারা কিছুক্ষণ কথা বলল মহিলা টা নাঈমাকে বলল — নতুন বউ এতো লেট করে ঘুম থেকে উঠা ঠিক না। উনি এমন আরো কিছু কথা বলে চলে গেলো।

নাঈমার শ্বাশুড়ি সালমা বেগম মোটেও তেমন একটা ভালো না। সালমা বেগম নাঈমাকে বলল আমার জন্য একটু চা করে নিয়ে আসো তো বউমা।

নাঈমা চা বানাতে চলে গেলো রান্না ঘরে। কিন্তু কোথায় কি রাখা আছে সে কিছুই জানেনা। এই বাড়িতে আজ নাঈমার প্রথম দিন। কোথায় কি আছে তার পক্ষে এসব জানার কোথাও না। তারপরেও সে খুঁজতে থাকে। এসব খুজতে খুজতে একটা সময় নাঈমার হাতের সাথে ধাক্কা খেয়ে একটা চায়ের কাপ পড়ে ভেঙে যায়। নাঈমা মনে মনে অনেক ভয় পেয়ে গেলো। সালমা বেগম কিছু পড়ে ভেঙে যাওয়ার শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি করে রান্না ঘরে ছুটে আসেন। আর এসে দেখে এই অবস্থা। এই দিকে নাঈমা অনেক ভয় পেয়ে আছে।

সালমা বেগম বলল — কি ভাবে ভেঙে গেলো এইটা?

— মা আমি খেয়াল করিনি আমার হাতের সাথে লেগে কাপটা পড়ে ভেঙে গেলো।

— প্রথম দিনি এই অবস্থা? বাকি দিন কি করবে আল্লায় ভালো যানে। ঠিকঠাক ভাবে কি কাজ করতে পারোনা? সামান্য একটু চা বানাতে বললাম এর জন্য এতো কিছু?

নাঈমা মাথা নিছু করে দাড়িয়ে আছে। সালমা বেগম নাঈমাকে আরো অনেক কথা বলে চলে গেলো। একটু পরে নাঈমা নিজের রুমে গিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকে। অনেক্ষন পরে রাকিব বাসায় ফিরে আসে। রাকিব বাসায় এসে দেখে নাঈমা মন খারাপ করে বসে আছে। রাকিব নাঈমার পাশে বসে নাঈমাকে জিজ্ঞেস করলো — কি হয়েছে তোমার? মন খারাপ কেন?

— কই মন খারাপ? ঠিক আছি আমি। আপনি ঘুম থেকে কখন উঠিলেন?

— আমি তো সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে উঠে গিয়েছি কেন কি হইছে?

— কিছু হয়নি। আপনি আমাকে ডাকেন নাই কেন?

— আসলে অনেক রাতে ঘুমালে তাই ভাবলাম আরো কিছুক্ষণ ঘুমাও, তাই আর ডাক দিলাম না। আচ্ছা আমি ফ্রেশ হবো আর হ্যাঁ আমরা বিকালে ঘুরতে যাবো ঠিক আছে?

রাকিবের মুখে ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে অনেক খুশি হয়ে গেলো নাঈমা। ফ্রেশ হয়ে রাকিব বের হয়ে আসলো ওয়াশরুম থেকে। তারপর রাকিব নাঈমার পাশে এসে বসে বলল — এখানে তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে?

— না।

— তুমি মুখে না বললেও আমি বুঝতে পারছি। আর এটা কোনো ব্যাপার না। এক যায়গা থেকে আরেকটা নুতুন যায়গায় আসলে একটু অসুবিধা হতেই পারে। তবে তোমাকে সব কিছুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। দেখবে কিছুদিন পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।

নাঈমা কিছু না বলে চুপচাপ হয়ে গেলো। নাঈমার মুখে কোনো কথা নেই দেখে রাকিব বলল — এমন মনমরা হয়ে বসে আছো কেন?

— এমনি। আচ্ছা একটা প্রশ্ন ছিলো?

— কি প্রশ্ন?

— আপনি কি বিয়ের আগে আমার ব্যপারে সব খোঁজ খবর নিয়ে ছিলেন?

— না, আমি বিয়ের আগে তোমাকে দেখিও নি।

— কেন?

— কারণ আমি বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আর আমি বিয়ে করতে রাজিও ছিলাম না। তাই এতো কিছু দেখিনাই। মা-বাবা জোর করেই আমাকে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছে। তাই তাদের ইচ্ছেতেই আমি বিয়ে করার জন্য রাজি হলাম। পরে তোমাকে প্রথম বার দেখেই আমি মনে মনে অনেক খুশি হলাম।

— খুশি হলেন কেন?

— কারণ আমি যেমন মেয়ে ছেয়েছিলাম তুমি ঠিক তেমনি। তোমাকে প্রথম দেখেই ভালো লেগে যায়। তবে তুমি সত্যি সবার থেকে অনেক আলাদা। তোমার বয়েস কম হলেও তোমার কথায় চলাফেরায় ম্যাচুরিটি একটা ভাব আছে। তোমার কথা শুনলে কেউ বলবে না তোমার বয়স এতো কম। তোমাকে নিয়ে আমি আমার জীবন আলোকিত করতে চাই। আমাদের এই সংসার আমাদের সাজাতে হবে।

অনেক্ষন দুজনে মিলে অনেক কথা বলতে থাকে। রাকিবের কথা শুনে নাঈমা রাকিবের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছে। তারা নিজেদের মধ্যে কথা শেষ করে রাকিব বাহিরে চলে গেলো। নাঈমা নিজের রুমে বসে রইল। সালমা বেগম নাঈমার রুমে এসে দেখে সে রুমের ভিতরে শুয়ে আছে। নাঈমা তার শ্বাশুড়িকে দেখে তাড়াহুড়ো করে উঠে বসে গেলো। সালমা বেগম নাঈমাকে বলল — সারাদিন শুয়ে থাকলে তো হবেনা বাসায় অনেক কাজ আছে। ওই গুলাও করতে হবে।

— হুম আমি আসছি মা।

–আর একটা কথা!

— কি কথা মা?

— তুমি সারাক্ষণ রাকিবের পাশে পড়ে থেকো না। তার সাথে সময় কোম কাটানোর চেষ্টা করবে। সারাক্ষণ রুমে ভিতরে বসে থাকবেনা। আর রাকিবের সাথে যতো পারো কম সময় কাটাবে।

সালমা বেগম একজন শ্বাশুড়ি হয়ে ছেলের বউকে কি ভাবে এসব বলতে পারে? অনি এমন একটা মানুষ তার মুখে কোনো কিছুই আটকায় না। আর মনে হচ্ছে রাকিবের সাথে নাঈমাকে সালমা বেগম সহ্য করতে পারছেনা। না হলে নিজের ছেলের বউকে কেউ কি ভাবে এসব বলতে পারে?

সালমা বেগমের কথা শুনে নাঈমা নিশ্চুপ হয়ে আছে। একেতো নতুন বউ সেই জন্য কিছু বলতেও পারছেনা। সব কিছুই মাথা নিছু করে মেনে নিচ্ছে। এই ঘটনার পরে দেখতে দেখতে বিকাল হয়ে আসলো। তখন রাকিব নাঈমাকে বলল — রেডি হয়ে নাও আমরা বের হবো। নাহলে আমাদের ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে।

— আমি যাবোনা আমার ভালো লাগছেনা। আপনি যেতে পারেন।

— কেনো কি হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ নাকি নাঈমা?

— না, আমি ঠিক আছি।

— তাহলে যাবেনা বলছ কেন? তখন তো বললে যাবে। আমার মনে হচ্ছে তোমার শরীর খারাপ দেখি আমি।

এই কথা বলে রাকিব নাঈমার কপাল হাত দিবে এমন সময় নাঈমা রাকিবের হাত এক ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিল। রাকিব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল নাঈমার দিকে।

নাঈমা বলল — আমাকে স্পর্শ করবেন না। আমাকে স্পর্শ করার অধিকার আমি আপনাকে দেইনি এখনো। ভুল করেও আমাকে স্পর্শ করতে আসবেন না। আমাদের কাগজে কলমে বিয়ে হলেও আমি আপনাকে মন থেকে স্বামী হিসেবে এখনো মেনে নেইনি। আশা করি আমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন।

নাঈমার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাকিব। তার মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছেনা।আর সে বুঝতেও পারছেনা নাঈমা তার সাথে এমন ব্যবহার করছে কেন?

চলবে,,

ভুল হলে ক্ষমা করবেন রি- চেক করা হয়নি। ধন্যবাদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে