বালিকা বধূ পর্ব-০২

0
1141

#বালিকা_বধূ
(২য় পর্ব)
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

বধূর সাজে তেরো বছরের ছোট্ট বালিকাটি মাথায় বড় একটি ঘোমটা দিয়ে বসে আছে! ভয়ে সে নড়াচড়া করার মতো শক্তি টুকুও হারিয়ে ফেলেছে!
কিছুক্ষণ পর বরের বেশে রাকিব রুমে প্রবেশ করলো। সে রুমের দরজা লক করতেই দেখলো মেয়েটি ঈষৎ কেঁপে উঠল। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাকিব বাসর ঘরে প্রবেশ করলো। রাকিবের হাতে একটা বেগ ছিলো। রাকিব বেগ টা নাঈমার দিকে দিয়ে বলল- এটা তোমার জন্য। আর কতক্ষণ এই মোটা শাড়ি টা পড়ে থাকবে চেঞ্জ করে নাও এবার। এই কথা বলে রাকিব ওয়াশরুম চলে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য। রাকিব চলে যাওয়ার পরে নাঈমা বেগ টা হাতে নিয়ে খুলে দেখে একটা সুতি ওয়ান পিচ জামা সাথে একটা প্লাজু সাথে একটা প্যাকেট করা জিনিস। প্যাকেট খুল দেখে যে একটা ন্যাপকিনের প্যাকেট। কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে হয়ে বসে রইল নাঈমা । মাথায় কিছুই আসছে না। লোকটা বুঝলো কি করে?নাঈমার মাথায় শুধু এটাই ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে রাকিব ও ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসলো। আর খাটের এক কোণে বসে বসে ফোন টিপছে। কেউ কোনো কথা বলছেনা। একটু পরে নাঈমা লাজুক কন্ঠে বলল — আপনি জানেন কি ভাবে আমার যে এটা লাগবে?

রাকিব একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল — আসলে আমি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। যখন তোমাকে আমার পাশে বসানো হয়েছিলো। আমি তখনই তোমার অস্থিরতা দেখেই বুঝতে পেরেছি।

— ওহ বাট অস্থিরতার তো অন্য কারণ ও থাকতে পারে তাইনা?

— হুম বাট বার বার পেটে হাত দেওয়ার কারণ তো আর অন্য কিছুই হতে পারেনা?

রাকিবের কথা শুনে নাঈমা তো পুরাই অবাক হয়ে গেলো। নাঈমা মনে মনে ভাবতে থাকে লোকটা তার এতো কিছ খেয়াল করলো! অথচ সে বুঝতে ও পারেনি।

নাঈমাকে চুপচাপ থাকতে দেখে রাকিব বলল – ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তুমি আমার স্ত্রী আর সব থেকে বড় কথা হলো কারো ভালো স্বামী হতে গেলে আগে ভালো বন্ধু হতে হয়। তুমি আমার কাছে তোমার সব কিছুই শেয়ার করতে পারো কোনো সমস্যা হবে না।

নাঈমা রাকিবের কথা শুনে একটু খুশি হলো। তার ভিতরে ভয় কাজ করছে। রাকিব নাঈমাকে বলল —

-নাম কি তোমার?

মেয়েটি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো–জ্বি আমার নাম নাঈমা।

রাকিব বুঝতে পারলো নাঈমা ওকে প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে। তাই সে নাঈমার ভয় দূর করার জন্য বললো-
–মাথায় এতো বড় একটা ঘোমটা টেনে রেখেছো কেনো? লজ্জায়?

নাঈমা আগের মতোই কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো- জ্বি না!

–তাহলে এমন জড়সড় হয়ে মাথায় ইয়া বড় একটা ঘোমটা টেনে বসে আছো কেনো? নরমাল ড্রেস পরে নাও।

নাঈমা তবু আগের মতোই বিছানার এক পার্শ্বে গুটিশুটি মেরে বসে রইলো। মেয়েটা খুব ভয় পাচ্ছে। ভয়ে কোনো কথাও বলছেনা। নাঈমার এমন আচরনে এবার রাকিবের কিছুটা হাসি পেলো। কিন্তু সে হাসি চেপে রেখে বললো- ভয় নেই! আমি তোমায় স্পর্শ করবোনা। তুমি নির্দ্বিধায় ড্রেস চেঞ্জ করে এসে ঘুমুতে পারো!
রাকিবের কথায় যেনো নাঈমা প্রান ফিরে পেলো। সে গুটি গুটি পায়ে ওয়াশ রুমে গেলো ড্রেস চেঞ্জ করতে। কিছুক্ষণ পরে নাঈমা ড্রেস চেঞ্জ করে এসে খাটের এক কোণে বসে রইল। নাঈমার মন থেকে ভয় অনেক খানিই কেটে গেলো। রাকিব নাঈমাকে বলল– এই রাত টা আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ একটা রাত। এই রাত আমরা টা স্পেশাল করে রাখতে পারি। রাকিব নাঈমাকে বলল — আজ আকাশে খুব সুন্দর চাদ উঠেছে সাথে তারা ও জলছে চল আমরা ছাদে গিয়ে গল্প করি।

নাঈমা (মনে মনে খুব খুশি) – হুম চলুন আপনাকে ও আমার কিছু বলার আছে

ছাদের এক কোণে দুজনে বসে আছে। রাকিব নাঈমাকে বলল — আজ আকাশ ও চাদকে যতটা সুন্দর লাগছে তার চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে তোমাকে, ঠিক যেন আমার স্বপ্নপরি যাকে আমি চেয়েছিলাম জীবনে। তাকে আমি পেয়েছি। তোমার রেসমি কালো চুল গুলা যদি খুলে দিতে তাহলে আর ও ভাল লাগত!

রাকিবের মুখে এমন কথা শুনে নাঈমা খুব লজ্জা পেয়েছে খুশিতে মনটা ভরে উঠেছে। সে চুল গুলা খুলে দিল হালকা বাতাসে উড়সে চুল গুলু রাকিব সেই সৌন্দর্য অপলকে উপভোগ করছে।

— আজ থেকে তোমার আমার নতুন জীবন শুরু। এতদিন তুমি ছিলে একটা বাড়ির মেয়ে আর আজ থেকে তুমি একটা বাড়ির বউ, একজনের স্ত্রী। আজ থেকে তোমার জীবন কাটামো অন্যরকম ভাবে শুরু করতে হবে। তোমার হাতে তুলে দেয়া হল একটা সংসারের চাবিকাঠি। আজ থেকে তোমার অনেক দায়িত্ত্ব। নাঈমা তুমি ভয় পেও না। এই সংসার যোদ্ধে তুমি একা নয় আমি তোমার সহযোদ্ধা। আমরা দুজনে মিলে গড়ে তুলব একটি সুন্দর সুখি পরিবার। নাঈমা এ বাড়ির সবার সাথে তোমাকে মিলে মিশে চলাফেরা করতে হবে। ছোট বড় সবার সাথে বিশেষ করে আমার মা বাবার সাথে তোমাকে ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে এমন সম্পর্ক গড়ে তুলবে যাতে সবাই তোমাকে এ বাড়ির বউ মনে না করে এ বাড়ির মেয়ে মনে করে তোমার ভালবাসার মায়া জাল দিয়ে ধরে রাখবে সবাইকে। দেখবে তোমার জীবন খুব সহজ হয়ে যাবে।
আমরা শুধুই ভাল স্বামী স্ত্রী হব না, আমরা খুব ভাল বন্ধুও হব সুখে দুঃখে দুজনে মিলে মিশে রব একহয়ে। সংসার জীবনে অনেক রাগ অভিমান হতে পারে তাই বলে আমরা ভুল বুঝে একে অপরকে ছেড়ে দুরে যাব না বিশ্বাস নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব অল্প রাগ হালকা অভিমান মাঝে মাঝে একটু জগ্রা অটুঠ বিশ্বাস আর অপুরন্ত ভালবাসায় ভরপুর থাকবে আমাদের জীবন।

– আপনি আমার উপর বিশ্বাস রাখবেন আমার পাসে থাকবেন ভালবাসা দিয়ে সুখ দুঃখে বুকে আগলে রাখবেন। আজ থেকে এই সংসারের দায়িত্ত্ব আমার। নিজের মনের মত সাজিয়ে আপন করে নিব এই সংসারকে আমি আপনার ভালবাসায় আল্লাহর রহমতে সবার দোয়াতে এই সংসারকে সবসময় সুখি রাখতে চেষ্টা করব।

– তোমার কথা শুনে আমার মন ভরে গেল। এবার তোমার কথা বল??

– আমাকে খুব ভালবাসতে হবে কখন ও অবহেলা করতে পারবেন না। আপনার বুকে ঠাই দিবেন আপনাকে পাচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করতে হবে,
ভোর বেলা আমার পাসে বসে আমার কন্ঠে কোরয়ান তিলায়াত শ্রবণ করতে হবে।
আমি আপনাকে খুব শাসন করব,
জ্বালাবো আপনাকে,
অনেকটা অগোছালো থাকতে হবে
আমি গোছিয়ে দিব বলে, আপনার কাছ থেকে আমি বেশি কিছু ছাই না আমার ছোট ছোট আবদার গুলা পুরন করলেই আমি খুব খুশি হব। আপনার ক্লান্ত মুখের ঘাম আমার শাড়ির আচল দিয়ে মুছতে দিবেন, তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবেন আমার চুলের খুপায় বেলিফুল গেতে দিবেন
আর হে আমাদের রুম এর জানালার পাসে বেলিফুল আর হাসনাহেনা ফুল গাছ লাগাবেন, চাদনি রাতে ছাদে গিয়ে আমেকে গান, কবিতা, গল্প শুনাতে হবে। মনে রাখবেন নীল রং আমার খুব প্রিয় আর হে জন্মদিন বিবাহ বার্ষীকীতে আমাকে শুভেচ্ছা জানাতে ভুলবেন না।
মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে বেড়াতে যেতে হবে নদীর তীরে হাতে হাত রেখে হাটতে হবে , ব্রিষ্টির দিনে কিন্তু আমাকে নিয়ে ভিজতে হবে, আর বেশি কিছু বলতে চাইনা বাকিটা আপনার ভালবাসা দিয়ে বুঝে নিবেন
আমি আপনার সব কিছুতেই বিরাজ করতে চাই, আমি শুধু আপনার হব আপনি শুধু আমার হবেন

– আমি আমার কল্পনাতে আমার স্বপ্নে আমার মনের মাঝে এই রকম মেয়ে সাজিয়ে রেখেছিলাম, তুমি সেই আমার স্বপ্নের রাজকুমারি, আমার সুখের ব্রিষ্টি। আমার বাহু ডোরে বুকের মাঝে সারাজীবন শুধু তুমি রবে

– আপনি আমার স্বপ্ন পুরুষ যাকে নিয়ে আমি স্বপ্ন সাজিয়েছি আপনার তরে নিজেকে মেলে দিতে চাই, আপনার পদতলে আমার জান্নাত খুজে নিতে চাই

রাকিব নাঈমার কপালে চুম্বন একে দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিল একে অপরকে খুব শক্ত করে ধরে আছে। কিছুক্ষণ পরে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে কারোর চিৎকারের শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেলো নাঈমার। পাশে তাকিয়ে দেখে রাকিব নেই।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে