বালিকা বধূ পর্ব-০৪

0
768

#বালিকা_বধূ
[পর্ব-৪]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

হঠাৎ নাঈমার এমন ব্যবহার দেখে অবাক হয়ে গেলো রাকিব। রাকিব বুঝতে পারছেনা হঠাৎ করে কি এমন হলো যে নাঈমা এমন ব্যবহার করছে?সকালে তো সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো তাহলে হঠাৎ করে এমন করছে কেন? আমি কি কোনো ভুল ভুল করেছি? নাকি এমন কিছু বলছি যার জন্য সে রাগ করেছে। কিন্তু এসব কোনো কিছুই তো করেনি রাকিব। তাহলে এসবের কারণ কি?

রাকিব নাঈমাকে বলল — কি হয়েছে তোমার আমাকে বলবে একটু প্লিজ?

— কি হবে আমার? কিছুই হয়নি।

— তুমি আমার সাথে যাবে বলে আমি সব কিছু ঠিক করে আসলাম হঠাৎ করে না করে দিলে কি ভাবে হবে? হয়তো তোমার মন খারাপ তাই এমন করছো আমার সাথে চলো দেখবে মন ভালো হয়ে গেছে।

রাকিব নাঈমাকে অনেক বুঝিয়ে অবশেষে রাজি করিয়ে নিলো। এসময় কোথায় যাচ্ছিস তোরা?

— মা নাঈমাকে নিয়ে একটু বের হলাম। আর কিছু শপিং করতে হবে নাঈমার জন্য।

সালমা বেগম মুখে একটা হাসি নিয়ে বলল — ঠিক আছে যা সাবধানে যেও।

তারপর নাঈমা আর রাকিব বের হয়ে গেলো। তারা বের হওয়ার সাথে সাথে সালমা বেগমের মুখের হাসিটা গায়েব হয়ে গেলো। রাকিব নাঈমাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া টা ভালো ভাবে মেনে নিতে পারেনি। সালমা বেগম তাদের দুজনকে এক সাথে দেখতেই পারেনা। রেগেমেগে তারপর তিনি তার রুমে চলে গেলো। অন্য দিকে রাকিব আর নাঈমা রিকশার জন্য অপেক্ষা করে দাড়িয়ে রইল।অনেক্ষন হয়ে গেলো কিন্তু রিকশা এখনো তারা পাচ্ছেনা। তখন নাঈমা বলল — চলেন এই ভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে আমরা হাটা শুরু করি। হাটার মধ্যে রিকশা পেলে আমরা উঠে যাবো।

নাঈমার কথা শুনে দুজনেই হাটা শুরু করে দিল। হাটতে হাটতে রাকিব বলল — আচ্ছা তোমার পছন্দের খাবার কি?

নাঈমা বলল — আমার সব থেকে পছন্দের খাবার হলো ফুচকা। ফুচকা আমার অনেক বেশি ভালো লাগে।

— ওহ।

হাটতে হাটতে একটা রিকশা দেখতে পায় তারা। তারপর দু’জনেই রিকশায় উঠে বসে। রিকশা একটা শপিংমলের সামনে গিয়ে থামে। রিকশা বাড়া মিটিয়ে তারা শপিংমলের ভিতরে চলে যায়। তারপর নাঈমার জন্য কিছু শপিং করে তারা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে তাদের নিজেদের মতো খাবার অর্ডার করে। তারপর তাদের সামনে তাদের খাবার চলে আসে। তবে নাঈমার মন এখনো খারাপ। সালমা বেগমের বলা কথা গুলা নাঈমার মনে পড়ছে। সেগুলো মনে করতেই নাঈমা চুপচাপ হয়ে গেলো। খাবার সামনে রেখেও খাবার খাচ্ছেনা। রাকিব নাঈমাকে দেখে বুঝতে পারে নাঈমা কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত। তখন রাকিব বলল – নাঈমা তুমি খাবার খাচ্ছো না কেন? খাবার তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

রাকিবের বলা কথা নাঈমার কান অব্দি যায়নি। যে তো অন্যমনস্ক হয়ে সালমা বেগমের কথা ভাবছে। রাকিব এইবার একটু জোরেই কথা বলল। তখন নাঈমা বলল — কি হয়েছে?

— তোমার কি হইছে বলোতো? তখন থেকে খেয়াল কুরছি তুমি অন্যমনস্ক হয়ে কি যেনো ভাবছ! কি হয়েছে কোনো সমস্যা হলে আমকে জানাতে পারো।

— না কিছু হয়নি।

তারপর রাকিব আর কোনো প্রশ্ন করলোনা। তার দুজনেই খাবার খেয়ে একটা নদীর পাড়ে চলে গেলো। নদীর পাড়ে যেতেই তাদের পুরো শরীর শীতল হয়ে উঠলো। ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশ। আর বাতাস আসছে। দুজনেই হাটতে থাকে। কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছেনা। নদীর পাড়ে এসে নাঈমার মন কিছুটা ভালো হয়ে গেলো। রাকিব নাঈমার দিকে তাকাতেই দেখে। বাতাসের সাথে নাঈমার চুল ও হাওয়ায় ভাসছে। খুব সুন্দর লাগছে নাঈমাকে। হঠাৎ করে নাঈমা একটা ফুচকার দোকান দেখে নিজের অজান্তেই এই প্রথম সে রাকিবের হাত ধরে ফেললো। নাঈমার হাতের ছোয়ায় রাকিব শিউরে ওঠে। নাঈমা ব্যাপার টা বুঝতে পারে আর সে রাকিবের হাত ছেড়ে দিয়ে সরি বলে এক দৌড়ে চলে গেলো ফুচকা দোকানের দিকে। আর এই দিকে বেচারা রাকিব তার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। নাঈমা একা একা ফুচকা খাচ্ছে। খেতে খেতে দুই প্লেট খাইছে। তাও সে রাকিবকে জিজ্ঞেস করলোনা সে খাবে কিনা। তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে তারা বাসায় চলে গেলো। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রাকিব বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো। একটু পরে সালমা বেগম নাঈমার রুমে আসে। সালমা বেগমকে দেখেই নাঈমা খাটের ওপর থেকে নেমে দাঁড়িয়ে গেলো। নাঈমা বলল — মা কিছু লাগবে নাকি?

— কিছু লাগবেনা, তোমাকে আমি কি বলেছিলাম ভুলে গেলে? তোমাকে না বলছি রাকিবের সাথে কম মিসতে।

— জ্বী। আমি ওনার সাথে যেতে চাইনি উনি আমাকে জোর করেই নিয়ে গিয়েছে।

— সব বুঝি আমি। তুমি না চাইলে রাকিব কোনো ভাবেই নিতে পারেনা। যাই হোক ওয়াশরুমের ভিতরে কিছু জামা কাপড় রেখে এসেছি এসব একটু ধুয়ে রেখে দিয়।

সালমা বেগনের কথামতো নাঈমা সব জামা কাপড় ধুয়ে রেখে নিজের রুমে চলে যায় আবার। নাঈমাকে বসে থাকতে দেখে সালমা বেগম বলল — এই ভাবে শুয়ে বসে থাকলে বাসার কাজ কর্ম কি তোমার বাবা এসে করবে?

সালমা বেগমের কথা শুনে নাঈমা রেগে গিয়ে বলল — আপনাদের বলার সেটা আমাকে বললবেন। আমার বাবাকে কেনো টানেন? আমার বাবা কে নিয়ে কোনো কথা বলবেন না।

— বাবার জন্য যদি এতো টান হয় বাসার কাজ ফেলে রেখে সারাদিন রুমে বসে থাকো কেন? বাসায় কি তোমার আম্মু তোমাকে কিছুই শেখায়নি? আল্লায় যানে তোমাকে কোন পরিবার থেকে তুলে নিয়ে আসছে।

— দেখুন মা আমার পরিবার নিয়ে কথা বলবেন না। কারণ আমার পরিবার আমাকে এমন কোনো খারাপ শিক্ষা দেয়নি। আমি আমার মা বাবার কাছে সব সময় ভালো শিক্ষা লেয়েছি।

–তোমার এতো বড় সাহস আমার মুখে মুখে কথা বলছ?আজকে রাকিব বাসায় আসুক তারপর একটা কিছু হবে। হয়তো এই বাড়িতে তুমি থাকবে না হয় আমি থাকব।

এই কথা বলেই সালমা বেগম নিজের রুমে চলে যায়। একটু পরে রাকিব বাসায় ফিরে আসতেই নাঈমার নামে রাকিব কে অনেক কথা বলতে থাকে। রাকিব তার মায়ের মখে এসব শুনে সে রাগ করে নিজের রুমে চলে যায়। কিন্তু সে নাঈমাকে কিছুই বলেনা। খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে রাকিব।

নাঈমা রাকিবকে খাওয়ার জন্য ডাক দিলে রাকিব খাবনা বলে ঘুমিয়ে পড়ে। তারপর থেকে রাকিব নাঈমার সাথে আগের মতো কথা বলেনা। দরকার ছাড়া কথা খুব কমি বলে দুজনে।

নাঈমার বাবা রাকিব কে ফোন দিয়ে বলল তাদের ওই বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে। তখন রাকিব ভাবলো যে নাঈমা ওই বাড়ি থেকে ঘুরে আসলে ঠিক হয়ে যাবে। মন ও ভালো হয়ে যাবে। রাকিব নাঈমাকে সেটা বলল। নাঈমা যাওয়ার জন্য রাজি হলো। সেদিন রাতে রাকিব তার মাকে বলল তারা কাল সকালে নাঈমা দের বাসায় যাবে। এই কথা শুনে মনে হয় সালমা বেগমের গায়ে আগুন ধরে গেলো। তিনি আর কোনো কিছু না বলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে যায়। নিজের রুমে গিয়ে ভাবতে থাকে কি ভাবে ওদের যাওয়া আটকানো যায়। সালমা বেগমের মনের ভিতর একটা ভয় কাজ করে ওই বাড়িতে গেলে যদি তাদের মধ্যে আবার সব ঠিকঠাক হয়ে যায় আর যদি তারা দুজনেই এক সাথে বেশি বেশি সময় কাটায়? সালমা বেগম প্ল্যান করতে থাকে কি ভাবে এঁদের যাওয়া আটকে দেওয়া যায়। সালমা বেগম সারা রাত এটা ভাবতে থাকে। আর তার মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি ও চলে আসে। সালমা বেগম সকালের অপেক্ষা করতে থাকে।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে