#বাদলে_ঘেরা_আকাশ
#Part_2_
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha
আমি তোমায় আকাশ সমান ভালোবাসি তবে সাথে আকাশ সমান ঘৃণা ও করি। আর দুটোই তোমার সহ্য করতে হবে। তোমার হাতে আর কোন অপশন নেই বর্ষা। না আমার হাতে আর কোন উপায় আছে। তোমার ভালোবাসা হোক বা ঘৃণা তার জন্য পৃথিবীতে একমাত্র আমিই আছি। তুমি আর অন্য কারো হতে পারবে না।
বর্ষা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখে পানি দিচ্ছে আর কান্না করছে। কেমন হয়ে গেছে সুন্দর মুহুর্ত গুলো। যেখানে ভালোবাসার ছড়াছড়ি থাকার কথা ছিলো সেখানে ব্যাথা আর কষ্টের খেলা। যেখানে ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাবার আনন্দ করার কথা সেখানে প্রিয় মানুষকে পাবার কোন সুখ হচ্ছে না। বরং প্রতিনিয়ত ভিতরে কেউ ছুরিঘাত করছে মনে হচ্ছে। এমন অচেনা কেন হয়ে উঠে আকাশ কেন এমন দু’চরিত্র নিয়ে কাছে আসে?! বর্ষা কান্না করছে আর মুখে পানি দিয়ে যাচ্ছে৷ আকাশের এক চোখে বর্ষার জন্য জলধারা আর অন্য চোখে বর্ষার জন্য আগুন। কেন এমন করছে আকাশ?
আজ বর্ষা আর আকাশের এনগেজমেন্ট ছিলো। ঘন্টা কয়েক আগেই যখন আকাশ বর্ষাকে রিং পড়াবে বর্ষা হাত সরিয়ে আকাশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে তার বাবার দিকে চেয়ে
‘ আব্বু আমি এই বিয়ে করতে চাই না। ( চোখের পানি মুছে)
আকাশ অবাক হয়ে বর্ষার হাতে ধরে আকাশের দিকে ফিরিয়ে
‘ বিয়ে করতে চাই না মানে?
বর্ষার বাবা নাইম সাহেব হতভম্ব হয়ে
‘ কেন মা? কি হয়েছে?
বর্ষা নাইম সাহেবের কাছে কাছে ছুটে এসে উনাকে জড়িয়ে ধরে
‘ আমি করতে চাই না আব্বু এই বিয়ে আমাকে জোর করো না। আমি আকাশকে ভালোবাসি কিন্তু আমি এই বিয়ে করতে চাই না। আমি এই বিয়ে করলে…….. আমি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছি আব্বু। আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। আমার ভালো লাগে না কিছু আব্বু। আমার ভিষণ চাপ পড়ে মাথায়।
আকাশ দু পাটির দাঁত এক সাথে করে নাড়াচ্ছে। আর দু চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে।
‘কি হয়েছে বর্ষা? কেন এমন করছো? বিয়েটা কিন্তু তোমার মতামতের উপর ভিত্তি করেই ঠিক হয়েছে।
‘ আমি এখন এই বিয়ে করতে চাই না আকাশ। আমি তোমায় ভালো……
‘ জাস্ট শাট আপ এখন করতে চাই না মানে কি? তাহলে রাজি কেন হয়েছিলে? আমি কি তোমায় বিয়ে করার জন্য জোর করেছিলাম? এমন করার মানে কি সবার সামনে? আগে কেন বলোনি? আমার ভুল কোথায়?
নাইম সাহেব আকাশের দিকে তাকিয়ে
‘ আমার মেয়ে এই বিয়ে করতে না চাইলে তাকে আমি জোর করবো না। বর্ষা না চাইলে হবে না এই বিয়ে। আমার মা মরা মেয়েকে আমি অনেক কষ্টে আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছি।
‘ আংকেল আমি একটু বর্ষার সাথে কথা বলতে চাই প্লিজ না করবেন না। ও আমার সাথে অভিমান করে এই সব বলছে।
‘ আব্বু আমি করতে চাই না এই বিয়ে। আমি অনেক সাহস জুগিয়ে এই কথা বলেছি। আমি চাই না।
নাইম সাহেব মুখ গম্ভীর করে
‘ ঠিক আছে কিন্তু বর্ষা না চাইলে এই বিয়ে হবে না আমি বলে দিলাম।
( বাকিটুকু তো আপনারা জানেন ই )
বর্ষা চায়নি আজকে তাদের এনগেজমেন্ট টা হোক। চায়নি আকাশকে বিয়ে করতে। আকাশের এমন দু রকমের চরিত্র দেখে ভয় পেয়ে যায় বার বার বর্ষা তাই অনেক কষ্টে অনেক চিন্তাভাবনা করে ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করতে বর্ষা আজ না করে দেয়। কিন্তু আকাশ তা বরাবরের মতোই হতে দিচ্ছে না। বার বার কোন না কোন ভাবে কোন কিছু ক্রিয়েট করে বর্ষাকে মানিয়ে নেয়। বর্ষা চাইলে ও তখন আর তার শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারে না। বার বার হেরে যায় আকাশের কাছে।
বর্ষা নিচে নামতেই আকাশের আব্বু আশিক যুবায়ের বর্ষার দিকে তাকিয়ে
‘ বর্ষা মা তুই ঠিক আছিস?
বর্ষা কিছু বলার আগেই আকাশ এসে বর্ষার পাশে দাঁড়িয়ে
‘ হ্যা আব্বু ও ঠিক আছে৷ আসলে ও একটু…..
নাইম সাহেব বর্ষার দুই কাধে হাত দিয়ে
‘ এখন বল মা তোর ডিসিশন কি বল। তুই যা বলবি তাই হবে। তোর আব্বু কখনো তোর কথা ফেলেনি আজকে ও ফেলবে না। আমি তোকে খুশি দেখতে চাই।
বর্ষা একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে নাইম সাহেবকে জড়িয়ে ধরে
‘ আমি এই বিয়েতে রাজি আব্বু। আকাশের উপর রাগ করে বিয়ে করতে চাই নি। এখন সব ঠিক আছে অনুষ্ঠান শুরু করো। ( এক হাত দিয়ে চোখ মুছে)
‘ সত্যি বলছিস তো তুই?
‘ হুম আব্বু সত্যি।
আকাশের মুখে বিষ্ময়কর এক হাসি ফুটে উঠে এই হাসির কারন বর্ষা ধরতে পারে না, ছুতে পারে না হাসির মুগ্ধতা। এই হাসি বর্ণ বর্ষার কাছে অন্য রকম লাগে। এই হাসি খুব জোরে গিয়ে আঘাত করে মনে। এই হাসির কারন জানতে চায় বর্ষা।
আকাশ বর্ষাকে আংটি পড়াতেই বর্ষা আকাশকে আংটি পড়িয়ে দেয়। আর সবাই হাত দিয়ে কনগ্রেটস করে ওদের। বর্ষার মুখে কোন হাসি নেই। সে চিন্তায় বিভোর হয়ে আছে আকশের। আকাশ কি চায়? কেন করছে এমন? আকাশ কি ভালোবাসে না বর্ষাকে?
আকাশের ডাকে বর্ষার ধ্যান ভাঙে
‘ কি হলো বর্ষা কি ভাবছো? কতক্ষণ ধরে কথা বলছি উত্তর দিচ্ছো না।
‘ কিছু না।
‘ হাসি নেই কেন মুখে?
‘ একটু মাথা ব্যাথা করছে তো।
আকাশ ভ্রু কুঁচকে
‘ ডাক্তার বর সামনে রেখে ও মাথা ব্যাথা হয়? স্ট্রেঞ্জ।
‘ কেন ডাক্তারের বউদের অসুখ হতে নেই?
‘ হতে নেই কেন? হতে পারে। তবে আকাশ যুবায়েরের বউয়ের অসুখ হতে পারে না। (বলে কেমন একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে উঠলো আকাশ)
বর্ষার মোটেই ভালো লাগেনি আকাশের হাসি তাও কিছু না বলে চুপ হয়ে যায়। আকাশের সামনে কিছু বলতে ও ভয় লাগে বর্ষার। আকাশ কখন কি বলে, করে, বুঝে উঠতে পারে না বর্ষা
বর্ষার বোন তনিমা বর্ষার কাছে এসে।
‘ আপি তুই না বলেছিলি এনগেজমেন্টে গান করবি! গাইবি না?
বর্ষা চার দিকে তাকিয়ে
‘ তনিমা চুপ কর। তোকে কে বলেছে এখন এই সব বলতে।
আকাশের ভাই আফিফ যুবায়ের
‘ ভাবি একটা গান কিন্তু শোনাতেই পারো।
আকাশ বর্ষার কানের কাছে মুখ নিয়ে
‘ তুমি কিন্তু বলেছিলে একদিন গান শোনাবে। আজকে বেস্ট দিন শুনিয়ে দাও।
বর্ষা মুখ তুলে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশের এখনো মনে আছে ওই দিনের কথা ভেবে।
বর্ষা একদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় আকশের সাথে হাটতে হাটতে বলেছিলো তার বিয়ের অনুষ্ঠানে সে গান গাইবে। আর আকাশকে গান শোনাবে।
‘ কি হলো বর্ষা একটা গান শোনাও না!
সবাই চুপ হতেই বর্ষা আকাশকে ডেডিকেট করে গান শুরু করে
এই চেনা শহর, চেনা সময়
সময় গড়ালে অচেনাও হয়
এই তোমায় নিয়ে আমি ভাবি
তোমায় অনেক চিনে ফেলেছি
আসলে কি করেছি?
তোমায় আমি চিনি না, আবার বোধ হয় চিনি
তোমায় আমি চিনি না, আবার বোধ হয় চিনি ( আকাশের পিছনে ফিরে চোখ মুছে)
এই ভালোবাসা দিলাম তোমায়
কিন্তু একটা কিন্তু থেকেই যায়
যখন দূরে দূরে থাকো তুমি
তখন অনেক ভালোবেসে ফেলি, হায়!
আসলে কি বেসেছি?
তোমায় ভালোবাসি না, আবার বোধ হয় বাসি
তোমায় ভালোবাসি না, আবার বোধ হয় বাসি
এই চেনা রাস্তা, চেনা বাস-ট্রেন
চেনা অচেনায় দেখি
সবাই ছুটে চলে একলা কিংবা
দলে দলে ঠিক কিংবা ভুলে
বইতে বইতে যেমন জল
কেমনে কেমনে কেমনে সব এক হয়ে যায়?
সুখ-দুঃখ কষ্টের পাহাড়ের ঝর্ণার মতো বয়ে চলা মানুষদের
আমি ডাকি না
আমি ডাকি না, নাকি ডাকি?
আমি চিনি না
আমি চিনি না, নাকি চিনি?
কাউকে আমি চিনি না, আবার বোধহয় চিনি
কাউকে আমি চিনি না, আবার বোধহয় চিনি..
🍁🍁🍁🍁🍁🍁
বর্ষাকে কল দিচ্ছে বার বার আকাশ কিন্তু একটা কল ও রিসিভ করছে না বর্ষা। আকাশের ভিষণ রাগ হচ্ছে এখন। এনগেজমেন্টের পর আকাশের সাথে ভালো করে কথা বলেনি বর্ষা। তাহলে কি বর্ষা কিছু আন্দাজ করেছে? কেমন যেন একটা এভয়েট করছে বর্ষা আকাশকে। আর এভয়েট জিনিসটা আকাশ একদম সহ্য করতে পারে। শরীরে থাকা সাদা এফ্রোন টা খুলে ছুড়ে মেরে টেবিলে । বর্ষার কাছে একটা মেসেজ পাঠায়
” আজকেই আমাদের বিয়ে হবে, বিয়ের ডেট এখনো অনেক দেরি তাই আমরা কাজি অফিসে বিয়ে করে নিবো আমি আসছি। রেডি হও”
আকাশ রাগে কটমট করে দ্রুত গাড়িতে উঠে
বর্ষার বাসার সামনে গাড়ি থামায়…………
চলবে……..
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।