বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব-৬০+৬১

0
1650

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৬০.

খুব বেশি ক্লান্ত থাকায় শুয়ে পরার সাথেসাথেই বেশ গভীরভাবেই ঘুমিয়ে পরেছিল অনিমা। গতরাতেও হলুদ, নাচ-গান সব প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে অনেক রাত হয়ে গেছিল, তারসাথে আজ সারাদিনের ধকল। সাড়ে ন’টার পরে মিসেস রিমা প্লেটে করে খাবার নিয়ে এল অনিমার জন্যে। অনিমাকে পরপর তিনবার ডাকার পর ও পিটপিটে চোখে তাকাল। মিসেস রিমাকে বসে থাকতে দেখে একপ্রকার হুরমুরিয়ে উঠে বসল ও। ঘুম ঘুম চোখে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখল যে ন’টা পয়তাল্লিশ বাজে। অনিমা অসহায়ভাবে মিসেস রিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” সরি মামনী। অনেকক্ষণ যাবত ডাকছো না?”‘

মিসেস রিমা মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,

” এতোটা ক্লান্ত ছিলি এতো কম ডাকে উঠে যাবি সেটাই ভাবিনি। যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

অনিমা মাথা নেড়ে উঠে চলে গেল ফ্রেশ হতে। ভালোভাবে ফ্রেশ হয়ে নিল যাতে ক্লান্তি আর ঘুম ভাবটা একটু কমে। ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসতেই মিসেস রিমা ভাত মেখে ওর মুখের সামনে ধরে বলল,

” সেই দুপুরে কী না কী খেয়েছিস। সন্ধ্যায় তো খেলিই না কিছু। শুধু দু চামচ পায়েস। এবার এইটুকু চুপচাপ খেয়ে নে তো। তোকে বেশ ক্লান্ত লাগছে।”

অনিমা হালকা একটু হেসে হা করল। মিসেস রিমা ওকে খাওয়াচ্ছে অনিমা শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে। ছোটবেলা থেকে কখনও মায়ের আদর পায়নি ও। মা কী হয়? কেমন হয়? ও জানেই না। হাসান কোতয়াল ওকে খুব যত্নে মানুষ করলেও মায়ের অভাব তো কখনও পূরণ হয়না। কিন্তু নিজের শাশুড়ির কাছে এতোটা স্নেহ পাবে সেটা সত্যিই ভাবেনি অনিমা। খাওয়ার মাঝে কিছু একটা ভেবে অনিমা জিজ্ঞেস করল,

” আচ্ছা, লিমা আন্টি কোথায়?”

মিসেস রিমা খাবারের লোকমা অনিমার মুখে দিতে দিতে বললেন,

” নিচে আছে রে কাজে ব্যস্ত। বুঝতেই পারছিস কাল রিসিপশন। আমারও তোকে খাইয়ে কাজে লেগে পরতে হবে। চল, তাড়াতাড়ি শেষ কর। যেতে হবে আমায়।”

মিসেস রিমা অনিমাকে খাইয়ে দিয়ে চলে যেতেই স্নিগ্ধা, অরুমিতা, স্নেহা, জাবিন চলে এলো রুমে। স্নিগ্ধার হাতে একটা ব্যাগ। দরজা বন্ধ করে চারজনই দাঁত বের করে নিঃশব্দে হাসতে শুরু করল। অনিমা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

” আবার কী?”

অরুমিতা এসে অনিমার পাশে বসে বলল,

” তোমাকে এখন সাজানো হবে বেবি।”

অনিমা জানে কেন সাজাবে। তবুও জেনে শুনেই বলল,

” কীসের সাজ? আমি একদম সাজতে টাজতে পারব না এখন। খুব ক্লান্ত আছি।”

স্নিগ্ধা ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,

” এসব বলে লাভ নেই। সারাদিন যেসব সেজেছিলি সব নরমাল ছিল। স্পেশাল সাজ তো এখন সাজাবো।”

অনিমা দুঃখী দুঃখী মুখ করে তাকাল ওদের দিকে কিন্তু বিশেষ কোন লাভ হলো না। ওরা তিনজন মিলে অনিমাকে আবার সাজিয়ে দিল। তবে এরারের সাজটা একদম হালকা ছিল। মুখে তেমন মেকআপ ছিল না, চুলগুলোও একটা ক্লিপ দিয়ে স্টাইল করে ছেড়ে দিয়েছে। সাজানো শেষ করে অনিমাকে আদ্রিয়ানের রুমে নিয়ে বসিয়ে দিল। এরপর তিনজনই সেই দাঁত বের করা হাসি দিয়ে ‘অল দ্যা বেস্ট’ বলে চলে গেল। অনিমা একবার সাজানো রুমটায় চোখ বুলালো। ফুলগুলো হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিল একবার। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান আসবে? অদ্ভুতরকম অনুভূতি হচ্ছে ওর। ভয়, লজ্জা দুটোরই মিশ্র অনুভূতি।

এদিকে বাহিরে আদিব, আশিস, নাহিদ, তীব্র চারজনই ভালোভাবে ঠিক করে নিয়েছে কীভাবে আদ্রিয়ানকে বেশ কিছুক্ষণ ডিসটার্ব করা যায়। এরমধ্যে জাবিন, অরুমিতা আর স্নেহাও চলে এলো। স্নিগ্ধা নেই। একটু বেড়িয়েছে ও। ওরা সাতজন আপাতত আদ্রিয়ানকে বাসর ঘরে ঢোকা থেকে আটকানোর জন্যে অপেক্ষা করছে। টাকা আদায় করতে হবে তো। অভ্র আদ্রিয়ানের সাথে আছে তাই আর ডাকা হয়নি ওকে। কিন্তু অনেকক্ষণ যাবত অপেক্ষা করার পরও আদ্রিয়ানের আসার নামগন্ধ নেই। দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে বলে ওরা যে যেভাবে পারল ওখানেই দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পরল। আর আদ্রিয়ানের আসার অপেক্ষা করতে লাগল।

আদ্রিয়ানের আসতে দেরী হচ্ছে দেখে অনিমা হেঁটে হেঁটে রুমে সাজানো জিনিসগুলো দেখছিল। আর হাত দিয়ে নাড়ছিল। হঠাৎ করে হাত টেনে ধরতেই অনিমা চমকে উঠল। চিৎকার করতে করতেও করল না কারণ ততক্ষণে আদ্রিয়ানের ওর ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে দিয়েছে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুঁচকে ফিসফিসিয়ে বলল,

” সমসময় না দেখেই এভাবে চেঁচাও কেন?”

অনিমা আঙুল সরিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল,

” এই আপনি কী কখনও স্বাভাবিকভাবে আসতে পারেন না? হুটহাট কোথা থেকে এসে হাজির হয়ে হাত টেনে ধরেন। এমন কেন আপনি? আর দরজা খোলার আওয়াজ তো পেলাম না? এলেন কীভাবে?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

” ব্যালকনি দিয়ে।”

অনিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে। এরপর একটা হতাশ নিশ্বাস ফেলে বলল,

” বাসর রাতেও ব্যালকনি টপকে আসতে হল?”

” তো কী করব? সব বিচ্ছু বাহিনীর দল বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ঝামেলা করতো অনেক। মাঝরাত অবধি জ্বালাবে ফর শিওর। তাই অন্য প্লান করেছি।”

অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,

” কী প্লান?”

আদ্রিয়ান বাঁকা হাসি দিয়ে ওদের দুজনের ফোনই বেডের ওপর ফেলে অনিমার হাত ধরে বলল,

” চল আমার সাথে।”

বলে অনিমাকে নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখে মই দাঁড় করানো। নিচে অভ্র দাঁড়িয়ে লম্বা লম্বা হাই তুলছে। আদ্রিয়ান বলল,

” চল, নামতে হবে।”

অনিমা চোখ বড় বড় করে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

” নামতে হবে মানে? কোথায় যাবো এখন? এতো রাতে?”

আদ্রিয়ান বিরক্তি নিয়ে বলল,

” গেলেই দেখতে পাবে। আগে চল। অভ্র! মইটা ধরো।”

অভ্র ‘ জি স্যার’ বলে দৌড়ে এসে মইটা শক্ত করে ধরল। আদ্রিয়ান ব্যালকনি টপকে মইয়ে পা রেখে বলল,

” জানপাখি, হাত দাও।”

” পাগল হয়েছেন আপনি? আমি এখন শাড়িটাড়ি পরে এই মই বেয়ে নামব? অসম্ভব!”

” কিচ্ছু হবেনা। আমি ধরে রাখব তো।”

” আমি পারবোনা।”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

” এখানে থাকলে অর্ধেক রাত পন্ড করবে ওরা। এখন তুমি নিজে আসবে নাকি আমি অন্যকোন ব্যবস্থা করব? দেখ তাতে কিন্তু রিস্ক বেশি থাকবে।”

আদ্রিয়ানের কথায় অনেকটা রাগের আভাস পেল অনিমা। এখন এই ছেলের কথামতো কাজ না করলে না জানি এই ছেলে আবার কী করবে। তাই কাঁপাকাঁপা হাতে আদ্রিয়ানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার হাত ধরে আস্তে আস্তে অনেক সাবধানে নেমে গেল। আদ্রিয়ান অভ্রকে বলল,

” এখন যাও। সাতটার দিকে এখানে থাকবে। গট ইট?”

অভ্র হেসে দিয়ে মাথা নেড়ে চলে গেল। অনিমা বলল,

” কিন্তু ওরা সবাই অপেক্ষা করে আছেতো আপনার?”

আদ্রিয়ান চিবুক চুলকে একবার ওপরে তাকিয়ে বলল?

” থাকুক! খুব শখ না ওদের আমায় জ্বালানোর? এবার সারারাত ধরে মশা মারুক।”

বলে অনিমার হাত ধরে বাইরের দিকে হাঁটা দিল। অনিমা হতাশ চোখে তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে। বাসররাতে নাকি বরবউ পালিয়ে যাচ্ছে, তাও একসাথে। ভাগ্যিস এমন একটা স্বামী কপালে জুটেছিল। তাইতো এরকম অভিজ্ঞতাও হয়ে গেল।

_______

রিক ছাদের এক কোণে বসে আছে চুপচাপ। হালকা বাতাসে ওর চুলগুলো কিছুটা দুলছে। উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আকাশের দিকে। বুকের ভেতরটায় খুব জ্বলছে ওর। নিজের ভালোবাসাকে অন্যকারো সঙ্গে দেখতে, নিজ উদ্যোগে তারই বাসরঘর সাজাতে সাহস লাগে। সেই সাহসটা ছিল ওর মধ্যে। কিন্তু বুকের জ্বালাতো কমার নয়। হাতে একটা মদের বোতল। ইচ্ছে করছে খেতে কিন্তু বারবার স্নিগ্ধার বারণ আর অনিমায অপছন্দের ব্যাপারটাই ওকে আটকে দিচ্ছে। বহুদিন যাবত খাওয়া হয়না। কিছু একটা ভেবে ওটা খুলে খেতে নিলেই পেছন থেকে স্নিগ্ধা হাত ধরে ফেলল। এরপর স্হির দৃষ্টিতে রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

” এটা কষ্ট কমাতে পারেনা। বরং ভবিষ্যতে অনেক কষ্টের কারণ হয়। ফেলে দাও ওটা।”

রিক ভ্রু কুচকে বলল,

” তুই এখানে কী করছিস?”

স্নিগ্ধা মলিন হেসে বোতলটা রিকের হাত থেকে নিয়ে ফেলে দিয়ে বলল,

” তোমাকে একা পুড়তে দেই কীকরে?”

রিক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এরপর কিছু না বলেই স্নিগ্ধার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরল। স্নিগ্ধা প্রথমে একটু থমকে গেলেও। পরে আস্তে আস্তে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। অনেকটা সময় চুপ থাকার পর রিক বলল,

” জানিস নীলপরী আর আদ্রিয়ানকে একসাথে দেখলে কতটা কষ্ট হয় আমার? বুক ফেটে যায়। নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয় তখন। নীলপরী যখন আদ্রিয়ানের বুকে মাথা রাখে তখন ইচ্ছে করে মেরে ফেলি ওকে, একদম মেরে ফেলি। আমার না বড্ড হিংসে হয়। জীবনে প্রথম আমি আদ্রিয়ানকে হিংসে করছি। কিন্তু দুজন মানুষই আমার খুব কাছের। নিজের সুখের জন্যে দুজনকে একসাথে কষ্ট দিতে পারব না আমি। কিন্তু আমিও তো কষ্টটা সহ্য করতে পারছি না। একটুও পারছিনা। খুব কষ্ট হচ্ছে। কী করব? কী করব আমি?

হঠাৎ করেই স্নিগ্ধা বলে উঠল,

” আমি তোমাকে ভালোবাসি, রিক দা।”

________

অনিমার চোখে দুহাত দিয়ে আদ্রিয়ান একটা রুমে নিয়ে এলো ওকে। প্রায় আধ ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে ওকে নিয়ে এখানে এসছে আদ্রিয়ান। ভেতরে আসার আগেই চোখ হাত দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। অনিমা বারবার জিজ্ঞেস করেই চলেছে, কী হয়েছে? কোথায় নিয়ে যাবে? কিন্তু আদ্রিয়ান কোন উত্তরই দিলোনা। রুমে এনে চোখটা ছাড়তেই অনিমা আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকাল। এখানেও বেশ চমৎকার করে রুম সাজানো। বিভিন্ন ফুল আর কালারফুল মোমবাতি দিয়ে। একপাশে দেয়াল নেই পুরোটাই কাঁচের। যেটা অর্ধেকের বেশি খুলে রাখা হয়েছে। বাইরে বিশাল ব্যালকনি আর আকাশের পূর্ণ চাঁদ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চাঁদের আলোও বিনা বাধায় রুমে এসে ছড়িয়ে যাচ্ছে। বিছানায় ফুল দিয়ে ওদের দুজনের নামও লেখা আছে। সবটা দেখে অনিমার চোখ ধাঁধিয়ে গেল একপ্রকার। সেইসাথে ভেতর ভেতর একপ্রকার কম্পনও হচ্ছে। আদ্রিয়ান পেছন থেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরল অনিমাকে। ওর কাঁধে থুতনি রেখে মৃদু আওয়াজে বলল,

” কেমন লাগল?”

হঠাৎ করেই অনিমা ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল। লজ্জায় কিছু বলতে পারছেনা। এর আগে যে আদ্রিয়ান ওকে একেবারেই ছোঁয়নি তা কিন্তু না। কিন্তু আজকের ছোঁয়া ওর কাছে সবচেয়ে আলাদা মনে হচ্ছে। ওর সমস্ত রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। তাই চোখ বন্ধ করে শুধু ধীরে ধীরে শ্বাস নিচ্ছে। আদ্রিয়ান অনিমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

” তোমাকে সমস্ত রূপেই আমার কাছে আস্ত মায়াবিনী মনে হয়। তাই আলাদা করে রূপের প্রশংসা করতে পারলাম না।”

বলে অনিমার গলায় ধীর গতিতে একটা লকেট পরিয়ে দিয়ে কাঁধে একটা চুমু খেল। অনিমা কেঁপে উঠল সাথে সাথে। চোখ বন্ধ করে আদ্রিয়ানের হাত খামচে ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করল। আদ্রিয়ান অনিমার কোমর ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। অনিমা চোখ বন্ধ করে রেখেছে এখনো। আদ্রিয়ান হালকা করে মুখে ফু দিতেই অনিমা আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ানের ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ঝুলে আছে। অনিমা সাথেসাথে চোখ সরিয়ে নিল। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

” তোমার উপহার ছিল এটা।”

অনিমা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর অজান্তেই ওর ঠোঁটেও হালকা হাসি ফুটে উঠেছে। আদ্রিয়ান এবার অনিমার দিকে আরেকটু এগিয়ে মোহনীয় কন্ঠে বলল,

” জানপাখি?”

অনিমা কেঁপে উঠল। আদ্রিয়ানের এই ডাকের ওপর ও বরাবরই ভীষণ দুর্বল। তারওপর যদি এভাবে ডাকে! আদ্রিয়ান আবার বলল,

” আজ কী তোমাকে সম্পূর্ণ নিজের করে পেতে পারি? দেবে সেই অধিকার?”

অনিমার একমুহূর্তের জন্যে বলতে ইচ্ছে করছিল, আমিতো পুরোটাই আপনার। কিন্তু বলতে পারলনা শুধু একরাশ লজ্জা নিয়ে আদ্রিয়ানের বুকে মুখ লুকালো। আদ্রিয়ানের ঠোঁটেও মুচকি হাসি ধরা দিল। ওর জানপাখি কিছু না বলেও অনেক কিছু বলে দিয়েছে ওকে। তাই পরম আবেশে দুহাতে আগলে নিলো নিজের মায়াবিনীকে।

_________

এদিকে আদ্রিয়ানের অপেক্ষা করতে করতে যখন ওদের সবার ঘুমে ঢুলুঢুল অবস্থা তখনই অভ্র এসে জানালো যে আদ্রিয়ান ব্যালকনি দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেছে। এটুকু জানিয়ে অভ্র একটা মেকি হাসি দিয়ে রুমে চলে গেল। আসলে এই মিথ্যেটাও আদ্রিয়ানেরই শেখানো। ওরা সবাই বোকা বনে গেল সাথে রাগও হল। নাহিদ বলল,

” প্রথম প্লান ফ্লপ হয়েছে তো কী হয়েছে? এবার দ্বিতীয় প্লান চলবে।”

এবার শুরু হল আদ্রিয়ান আর অনিমার ফোনে ফোন করা। কিন্তু কোন লাভ হল না। ফোন ধরছে না কেউ। দরজায় টোকা থেরাপিও চালানো হল কিন্তু কোন রেসপন্স নেই। ওরা সবাই বেশ অবাক হল। শোনার চেষ্টা করল ভেতরে কী হচ্ছে। কিন্তু কোন লাভ হলোনা। আদিব বলল,

” কী বাসর করছেরে ভাই, নো এফেক্ট? কিন্তু না হাল ছাড়া যাবেনা।”

ওরা আবারও ওদের চেষ্টা চালাতে লাগল। অনিমা আদ্রিয়ানকে ডিস্টার্ব করার নানারকম ফন্দি করতে করতে একপর্যায়ে দরজার সামনেই ফ্লোরে এলোমেলো হয়ে একেকজন একেকভাবে ঘুমিয়ে পরল ওরা।

#চলবে…

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৬১.

রাত তিনটা বাজে। বাইরে থেকে আসা মৃদু বাতাসে রুমের পর্দাগুলো হালকা নড়ছে। মোমবাতিগুলো সব নিভে গেছে। তবুও বারান্দা দিয়ে আসা পূর্ণ চাঁদের উজ্জ্বল আলোয় গোটা রুম হালকা আলোকিত হয়ে আছে। আদ্রিয়ানের উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে পরম শান্তিতে চোখ বন্ধ করে রেখেছে অনিমা। কিন্তু ঘুমায়নি এখনো। যদিও চোখে হালকা ঘুম এসেছে এতক্ষণে। কিন্তু আপাতত ও এখন আদ্রিয়ানের শরীর থেকে আসা মাতাল করা ঘ্রাণে হারিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর অনিমার চুলে আঙুল বুলাতে বুলাতে আদ্রিয়ান বলল,

” কী ব্যাপার ঘুমাবে না? সকাল সাতটার মধ্যে কিন্তু আমাদের আবার বাড়ি পৌঁছাতে হবে।”

অনিমা কিছুই বলল না শুধু আদ্রিয়ানকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। ওর ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলে আছে হালকা। আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে আরও শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলল। আজ ওর শান্তির ঘুম হবে, পরম শান্তির।

________

সকাল আটটার দিকে রিক আর স্নিগ্ধা আবরার মেনশনে ফিরলো। দুজনেই বেশ চুপচাপ হয়ে আছে। সারাপথ কেউ কারো সাথে কথাও বলেনি। অজানা এক কারণে দুজনের মধ্যেই সংকোচবোধ হচ্ছিল। রিক-স্নিগ্ধা সারারাত সেই ফার্মহাউজেই ছিল। স্নিগ্ধা রিককে ভালোবাসার কথাটা বলার পর রিক কিছুক্ষণ চুপ ছিল। এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিল,

” আমি আগেই কিছুটা অনুমান করেছিলাম। কিন্তু ভেবেছিলাম আমার মনের ভুল। দেখ স্নিগ্ধু নীলপরী আমার অনেকটা জুড়ে ছিল, এখনো আছে। ভবিষ্যতের কথা জানিনা। ও এখন অন্যকারো, আমার ভাইয়ের বউ। ও আমার ভাগ্যে ছিলোনা। আমার কষ্ট হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তারমানে এই নয় যে আমি চিরকাল দেবদাস হয়ে জীবন পার করে দেব। আমি মুভ অন করব। অবশ্যই করব। কিন্তু আমার একটু সময় চাই রে। এখনই আমি কিছু ভাবতে পারব না। তবে একটা কথা দিতে পারি, যেদিন আর যখনই হোক না কেন আমার বউ তুই-ই হবি। সেটা তুই আমাকে ভালোবাসি না বললেও আমি ঠিক করে নিতাম। আর রইল আমার ভালোবাসার কথা। দ্বিতীয়বার ভালোবাসা যদি সত্যিই সম্ভব হয়ে থাকে তাহলে আমার দ্বিতীয় এবং শেষ ভালোবাসাও তুই-ই হবি।”

স্নিগ্ধা মনোযোগ দিয়ে শুনছিল রিকের কথাগুলো। চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরেছিল ওর। এ ছাড়া আর কিছুই তো প্রয়োজন নেই ওর। এর চেয়ে বেশি কী চাই? কারো জীবনের প্রথম ভালোবাসা হতে পারা সৌভাগ্যের, কিন্তু কারো জীবনের শেষ ভালোবাসা হয়ে উঠতে পারা পরম সৌভাগ্যের। এমন ভাগ্য কজনের হয়? রিক যদি ওকে এইটুকু দিতে পারে তাতেই ও খুশি।

করিডর দিয়ে হেঁটে ওরা দুজনেই নিজেদের রুমের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। কিন্তু আদ্রিয়ানের রুমের সামনেটা পাস করতে গিয়ে ওরা দুজনেই থেমে গেল। ভ্রু কুঁচকে গেলো দুজনেরই। অবাক হয়ে একে ওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে আবার দরজার দিকে তাকাল। নাহিদ, আদিব, আশিস, তীব্র, জাবিন, অরুমিতা, স্নেহা, তনয়া সব এখনো অনি-আদ্রিয়ানের রুমের সামনে পড়ে আছে। একেকজন একপ্রকার মরার মত করেই ঘুমাচ্ছে। স্নিগ্ধা অবাক হয়ে বলল,

” কেসটা কী হল বলোতো?”

রিক হাত ভাজ করে বলল,

” রাতে ওদের দুজনকে ডিসটার্ব করার প্লান করছিল মনে হয়। আদ্রিয়ানকে আমি যতদূর চিনি ওদের প্লানের আগা টু গোড়া গোটাটাই ফ্লপ হয়েছে। তাই এখানেই ঘুমিয়ে পরেছে সব।”

বলে ফিক করে হেসে ফেলল। স্নিগ্ধা কোমরে হাত রেখে বলল,

” অদ্ভুত! এরা কী কোনদিনও মানুষ হবেনা না-কি? কী সব আজগুবি বুদ্ধি। চল ওঠাই সবগুলোকে।”

এরমধ্যেই অনিমা দরজা খুলল। নাহিদ আর আশিস পুরো দরজার সাথে হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে ছিল। অনিমা দরজাটা খোলায় দুজনেই পেছন দিকে পরে গেছে। আচমকা এভাবে পরে যাওয়াতে দুজনেই হুড়মুড়িয়ে উঠে বসল। রিক আর স্নিগ্ধা দুজনেই হেসে ফেলল ওদের কান্ড দেখে। আর অনিমা পুরোপুরি বোকা বনে গেল। সকাল সকাল এরা রুমের দরজার কাছে বসে কী করছে? নাহিদ আর আশিস বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। রিক আর স্নিগ্ধার হাসির আওয়াজ শুনে আদিব, তীব্র, জাবিন, অরুমিতা, তনয়া, স্নেহা সব উঠে পরল। সবগুলোই চারপাশে একবার তাকিয়ে বোঝার চেষ্টায় ছিল যে, কী হল? কিছুক্ষণের মধ্যেই সবটা মনে পড়তেই গোলগোল চোখে অনিমার দিকে তাকিয়ে আছে অনিমা এখনো চোখ ছোটছোট করে দেখছে ওদের। এরমধ্যেই আদ্রিয়ান উঠে এলো। পরনে একটা সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি আর জিন্স। চোখ কচলাতে কচলাতে দরজার কাছে এসে লম্বা একটা হাই তুলে, কপালে পরা এলোমেলো চুলগুলো নেড়ে ফ্লোরে বসে থাকা বাকিদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল। তারপর দরজায় একহাত রেখে বলল,

” সকাল সকাল সব আমার রুমের সামনে ফ্লোরে বসে আছিস কোন দুঃখে? ধর্মঘট করার প্লান করছিলি নাকি?”

ওরা সবাই দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। আদিব চোখ কচলে একটু ভালোভাবে তাকিয়ে বলল,

” ওই শালা! তুই চিটিং করে ভেতরে ঢুকলি কেন?”

আদ্রিয়ান নাকে আঙুল ঘষে বলল,

” ভাষা ঠিক কর। আমার রুমে আমি কীভাবে ঢুকবো সেটা টোটালি আমার ব্যাপার! তাইনা?”

নাহিদ বলল,

” বাট কানে কী তুলা গুজে নিয়েছিলি? নাকি টেম্পোরারি শুনতে পাওয়ার ফিচারস্ আনস্টল করে দিয়েছিলি?”

অরুমিতা বলল,

” সেটাই! মনে হচ্ছিলো এরা এই দুনিয়াতেই নেই।”

জাবিনও বলল,

” একদমই। হচ্ছিল টা কী ওখানে?”

অনিমা এবার বুঝতে পারছে কাল রাতে আদ্রিয়ান কেন এসব বলছিল। সত্যিই কী দুষ্টু পরিকল্পনা ছিল এদের। কাল এখানে থাকলেতো অনিমা বারবার লজ্জা পেয়ে পেয়ে মরেই যেত। তবে ওর বরটার মাথায়ও কম বুদ্ধি নেই। মানতেই হবে। দেখতে হবেতো বরটা কার! এসব ভেবে আপন মনেই হাসল অনিমা। আদ্রিয়ান বলল,

” সবগুলো গাধার দল! বাসর রাতে যা হয় সেটাই হচ্ছিল। সিম্পল! আমার কথা ছাড়। তোদের কথা বল। আমার রুমের সামনে ফ্লোরে এভাবে পড়ে ছিলি কেন? পাহারা দিচ্ছিলি বুঝি? এই না হলে বন্ধু! বন্ধুর বাসর ঘরের সামনে বসে সারারাত বসে মশা মারতে মারতে পাহারা দিচ্ছিল। যাতে কেউ ডিসটার্ব করতে না পারে। বাহ! এই কাজের পুরস্কার হিসেবে আজ আমাদের বাড়িতে তোদের খাওয়া ফ্রি করে দিলাম যা।”

ওরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। এটা কোন কথা হল? ওরাতো এমনিতেই ইনভাইটেড। ওদের এত অবাক চাহনীকে পাত্তা না দিয়ে আদ্রিয়ান বলল,

” জানপাখি, জামা বের করে দাও তো। আমিও শাওয়ার নেব। তেরে জেস্যা ইয়ার কাহা, কাহা এইসা ইয়ারানা?”

গুনগুনিয়ে গাইতে গাইতে আদ্রিয়ান ভেতরে চলে গেল। অনিমা একবার হতাশ চাহনী দিয়ে নাহিদ ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে ভেতরে চলে গেল। ওরা এখনো বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে। রিকের দিকে ওদের চোখ পড়তেই রিক মেকি হেসে বলল,

” আরও মশা মারো বসে বসে।”

বলে চলে গেল নিজের রুমের দিকে। স্নিগ্ধাও হাসতে হাসতে চলে গেল। আর বাকিরা এখনো থ মেরে আছে। কী হল ব্যাপারটা? ওরা এখনো এই রহস্যই উদ্ঘাটন করতে পারছে না যে সারারাত এদের এতোভাবে জ্বালানোর চেষ্টা করেও কোন লাভ হলোনা কেন?

_________

আবরার মেনশনে আজ লোকজনের ভীর অনেক বেশি। প্রথমত একটা বিয়ে বাড়ি। দ্বিতীয়ত একজন সেলিব্রিটির রিসিপশন। তাই মিডিয়ার লোক, বিভিন্ন সিঙ্গার, এক্টর, ডিরেক্টর অনেকেরই আসার কথা। অনেকে এসেও গেছে। সকলেই এইমুহূর্তে কাজে ভীষণ ব্যস্ত। অনিমাকে আজও আবার সাজতে হচ্ছে। আজ একটু বেশিই বিরক্ত হচ্ছে অনিমা। এই তিনদিনে কতবার সাজতে হয়েছে ওকে হিসেব নেই। একেক রিচুয়ালসের জন্যে একেকরকম সাজ। মাথা ধরে যাচ্ছে ওর একপ্রকার। স্নিগ্ধা, অরুমিতা, স্নেহা, জাবিন, তনয়া পাঁচজনেই অনিমার রুমে বসে আছে। স্নিগ্ধা আর অরুমিতা সাজাচ্ছে। বাকিরা সাহায্য করছে। তখনই আশিস এলো রুমে। স্বর্ণের চুড়িগুলো দিতেই এসছিল ও। কিন্তু এগুলো দিয়ে যাওয়ার সময় অরুমিতার দিকে কয়েকপলক স্হির দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছিল। অপরদিকে আশিসকে দেখেই অরুমিতার হাসিখুশি মুখ কালো হয়ে গেছে। যেটা অনিমা খুব ভালোভাবে খেয়াল করেছে। আশিস চলে যেতেই অনিমা বলল,

” কী ব্যাপার বলত? আমি কয়েকমাস যাবতই খেয়াল করছি যে তোদের মধ্যে কিছু একটা চলছে। প্রথম থেকেই তোরা একে ওপরের প্রতি কেমন একটা বিহেভ করছিস। আগে থেকেই চিনতিস তোরা একে ওপরকে?”

ওরাও উৎসুক চোখে তাকালো অরুমিতার দিকে। অরুমিতা কিছু বলার আগেই অনিমা বলল,

” দেখ তুই কথা ঘোরাবিনা একদম! আমি আগেই তোকে জিজ্ঞেস করতাম। কিন্তু করিনি। ভেবেছিলাম তুই নিজেই বলবি। কিন্তু বলিস নি। এবার জিজ্ঞেস করছি, তাই সরাসরি বলে দে।”

অরুমিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবটা বলল ওদের। কলেজ লাইফে অশিসের প্রথম মেসেজ। অরুমিতার রিপ্লে করা। কথা বলতে বলতে একে ওপরের প্রতি দুর্বল হয়ে পরা। ওদের ছয়মাসে চলতে থাকা সম্পর্ক সবটাই বলল। অনিমা অবাক হয়ে বলল,

” সম্পর্কটা ভাঙলো কীকরে?”

অরুমিতা মলিন হেসে বলল,

” ও নিজেই ভেঙ্গে দিয়েছে। হঠাৎ একদিন ফোন করে বলল ওর পক্ষে এই সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। কেন? কী কারণে? কিচ্ছু বলেনি। শুধু বলেছে ও এই সম্পর্ক রাখতে পারবে না।”

স্নিগ্ধাও অবাক হয়ে বলল,

” শুধুশুধুই এভাবে ‘না’ করে দিল?”

অরুমিতা বলল,

” না, কারণ ছিল। সেটা পরে জেনেছিলাম। ওর প্রেমা নামের একটা মেয়ের সাথে আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল। আমার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর আগে থেকেই। ঠকাচ্ছিল আমাকে ও। ভালোই বাসেনি কোনদিন আমায়। আমিই বোকা ছিলাম যে ওকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবেসেছি।”

স্নেহা আগে থেকেই জানতো সব তাই কোন প্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু সবাই বেশ অবাক হয়ে গেছে কারণ আশিস এমন করেছে ওরা ভাবতেই পারছেনা। তনয়া বলল,

” তাহলে এখন উনি কী চায়?”

অরুমিতা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

” কী জানি! এখন হঠাৎ ওনার আমার প্রতি ভালোবাসা আবার উতলে উঠেছে মনে হচ্ছে। বারবার ফোন করা, দেখা করতে চাওয়া, মেসেজ করা, এসবই চলছে কয়েকমাস যাবত। কিন্তু আমি কখনও ওনাকে ক্ষমা করতে পারবোনা, আর না ওনার কাছে ফিরব।”

বলে অরুমিতা চোখের কোণে জমা জলটা মুছে ফেলল। অনিমা কিছু বলবে তার আগেই মিসেস রিমা এসে তাড়া দিল ওদের সাজিয়ে নিচে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। ওরা সবাই একে ওপরের দিকে তাকিয়ে একটা শ্বাস ফেলল। এসব নিয়ে পরেও আলোচনা করা যাবে।

_________

নিমন্ত্রিত অতিথিরা সব চলে এসছে। অনিমাকেও সাজিয়ে নিচে নিয়ে আসা হয়েছে। অনিমা নীলের মধ্যে অ‍্যাশ রঙের ডিজাইন করা একটা শাড়ি পরেছে আজ। সাইড সিঁথি করে খোপা করে ফুলের গাজরা লাগিয়েছে চুলে। আদ্রিয়ানও অ‍্যাশ কালার একটা পাঞ্জাবী পরেছে যার বোতাম আর কলারের বর্ডার নীল রঙের। চুলগুলো বরাবরেই মতই কপালে পরে আছে। অনিমাকে নিচে নামতে দেখে আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে বুকের বা পাশে হাত দিয়ে ঘাড় হালকা বাঁকা করল। অনিমা ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আদ্রিয়ান চোখ টিপ মেরে দিল। অনিমা আদ্রিয়ানের এমন কাজে লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে ফেলল। লোকটা এমন কেন?

অনিমা নিচে নামার পরেই একটা মেয়ে এসে হালকা করে জড়িয়ে ধরল ওকে। অনিমা প্রথমে অবাক হলেই পরে তাকিয়ে দেখল এটা গায়িকা স্মৃতি। স্মৃতি হেসে বলল,

” তুমিই অনিমা তাইতো?”

অনিমা মুচকি হেসে বলল,

” জি আপু, ভালো আছেন?”

স্মৃতিও উচ্ছসিত কন্ঠৈ বলল,

” একদম। এডি তোমার কথা অনেক বলেছে। সরি হ্যাঁ, আমার জন্যে তোমাদের মধ্যে মিসআন্ডারস্টন্ডিং হয়েছিল। চড় মেরে দিয়েছিলে এডিকে? ভাবা যায়!”

অনিমা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। কী কান্ডটাই না করেছিল ও। ছিঃ। স্মৃতি অনিমার কাঁধে হাত রেখে বলল,

” এমন স্বামীকে অবিশ্বাস করতে নেই ডার্লিং। মরে যাবে, তবুও অন্যকোন মেয়েকে নিয়ে কখনও কিছু ভাববে না। আমি জানি, সেটা তুমিও জানো। খুব লাকি তুমি, যে এরকম একটা আদ্রিয়ান পেয়েছো।”

অনিমা মুচকি হাসল শুধু। সবাই নানারকম কাজে ব্যস্ত। হঠাৎ জাবিনের চোখ পরল অভ্রর দিকে। অভ্র ফোনে কথা বলতে বলতে ওপরের দিকে যাচ্ছে। জাবিন কয়েকদিন যাবতই খেয়াল করছে যে অভ্র ওকে বেশিই এড়িয়ে চলে। বিশেষ করে জাবিনের ভালোবাসি কথাটা বলার পর থেকে। জাবিন কিছু একটা ভেবে অভ্রর পেছন পেছন গেল।
অভ্র ছাদে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল ফোনে। কথা বলা শেষ করে পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে জাবিন দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র পাত্তা না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু জাবিন আটকে নিল। ভ্রু কুঁচকে বলল,

” সমস্যা কী তোমার? ইগনোর করছো কেন আমাকে?”

অভ্র স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,

” তোমার সাথে রেগুলার কথা বলার মত সম্পর্ক মনে হয় আমার নেই। আমি তোমার বড় ভাই এর পিএ, তোমার না।”

জাবিন মুচকি হেসে বলল,

” রেগুলার কথা বলার সম্পর্কই তো তৈরী করতে চাইছি। কিন্তু তুমিতো এখনো উত্তরই দিলে না।”

অভ্র আবার চলে যেতে নিলেই জাবিন অভ্রর কলার ধরে বলল,

” একদম না। আজ চলে যাওয়ার চেষ্টাও করবে না। আগে আমার উত্তর দিয়ে তবে যাবে। না হলে ছাড়বোনা।”

” জাবিন ছাড়ো!”

” বললাম না। আগে আমার উত্তর চাই।”

অভ্র এবার একটু রেগে গেল। দু হাত দিয়ে জাবিনের কাছ থেকে কলারটা ছাড়িয়ে বলল,

” আমার উত্তর হল ‘না’। আমাদের মধ্যে এমন কোন সম্পর্ক হতে পারেনা। কারণ আমি কমিটেড। আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে