বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব-৫৮+৫৯

0
1639

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৫৮.

আদ্রিয়ান একদম গম্ভীর মুখে বসে আছে গাড়ির স্টেয়ারিং ধরে। আর অনিমা পাশের সিটে মুখ কাচুমাচু করে বসে আছে। কিছুক্ষণ পরপর আদ্রিয়ানের দিকে তাকাচ্ছে আর শুকনো ঢোক গিলছে। আজ বিকেলে একটু ঘুরতে বেড়িয়েছিল অরুমিতা, তীব্র, স্নেহা তিনজনের সাথে। কিন্তু রেস্টুরেন্ট থেকে বেড় হওয়ার সময় একটা ছেলে অনিমার সামনে সোজা হাঁটু ভেঙ্গে বসে প্রপোজ করে বসে। অনিমা কিছু সময়ের জন্যে ব্লাঙ্ক হয়ে গেছিল পুরো। তীব্র, স্নেহা, অরুমিতা তিনজনই প্রচন্ড শকড ছিলো এই ঘটনায়। আর কপাল গুনে আদ্রিয়ানও ওকে পিক করার জন্যে তখনই ওখানে এসেছিল। আর এসেই এই দৃশ্য। যদিও অনিমা সাথেসাথেই রিজেক্ট করে দিয়ে চলে এসছে। কিন্তু সামনে এগিয়ে আদ্রিয়ানকে দেখে ওর গলা শুকিয়ে গেছিল একদম। কারণ আদ্রিয়ানের চোখে-মুখে স্পষ্ট রাগ ছিলো। অনিমা এটাই বুঝতে পারছেনা ঐ উটকো ছেলেটা কোথা থেকে এসে জুটলো! ও কী জানেনা অনিমা কার বউ? না জানার কথা কী? যারা মিডিয়া জগতের সাথে একটু এটাচড তাদের অনেকেরই জানার কথা। যদিও শুধুমাত্র ওদের বিয়ের দিনটাতেই অনিমাকে নিয়ে আর্টিকেলস বেরিয়ে ছিল, এরপর আর বের হয়নি। তাই হুটহাট দেখে নাও চিনতে পারে। কিন্তু তাই বলে এমন কাজ করবে? আর করল তো, করলো একদম সিংহের সামনেই করল! কী ভয়াবহ ব্যাপার! আদ্রিয়ান বলল,

” ছেলেটা কে?”

অনিমা মাথা নিচু করে ইতস্তত করে বলল,

” চিনিনা তো!”

আদ্রিয়ান স্টেয়ারিং এ জোরে একটা আঘাত করে বলল,

” অপরিচিত একটা ছেলে তোমাকে প্রপোজ কেন করবে? তাও হাঁটু ভেঙ্গে বসে? ফিল্মি স্টাইলে? হুয়াই? ঐ স্টুপিড জানেনা তুমি আমার ওয়াইফ? মিসেস আদ্রিয়ান আবরার।”

অনিমার নিজেরও এবার একটু রাগ লাগল। সবসময় সব রাগ ওর ওপর ঝাড়ার কোন মানে হয়না। ও কী আদ্রিয়ানের রাগের স্টোর রুম নাকি? আজব! অনিমাও এবার কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

” হয়তো জানে! কিন্তু এটা জানেনা যে আমি একটা মাফিয়ার বউ। তাও আবার গ্যাং এর লিডার। জানলে ভুল করেও করতোনা। আর তাছাড়াও বউতো থাকবোনা। আমি তো বলেছিলাম আপনাকে ডিভোর্স দেবো। সোজা ডিভোর্স!”

আদ্রিয়ান অনেকটা ক্ষিপ্ত চোখে তাকাল অনিমার দিকে। তারপল দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” দেওয়াচ্ছি ডিভোর্স!”

বলে পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে একটা ফোন দি অনিমা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টায় আছে যে ঠিক কী হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ওপাশ থেকে ফোন ধরতেই আদ্রিয়ান বলল,

” এক্ষুনি মাকে নিয়ে সিনিয়রের বাড়িতে চলে এসো। এক্ষুনি মানে, এক্ষুনি!”

এরপর বেশ রেগেই গাড়ি স্টার্ট দিলো। অনিমা পুরো বোকা বনে গেছে। এই ছেলে করতে কী চাইছে?

__________

অনিমাদের বাড়ির সকলেই বেশ অস্বস্তিকর অবস্থায় বসে আছে। অনিমা বাড়ি ফিরে দেখে মানিক আবরার, মিসেস রিমা দুজনেই এসছেন। ওর বাবাও গম্ভীর মুখে বসে আছেন। আদিব, আশিস, রিক, নাহিদ চারজন একই স্টাইলে হাত ভাজ করে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। আদ্রিয়ান এসে সোজা বলে বসল যে ও এই সপ্তাহের মধ্যেই ওদের বিয়ের অনুষ্ঠানটা সেড়ে অনিমাকে নিয়ে যেতে চায়। হাসান কোতয়াল বললেন,

” দেখো, সবেতো পরীক্ষা শেষ হলো। তারওপর এখন আবার ঝড়-বৃষ্__”

কিন্তু তাঁকে কথা শেষ করতে না দিয়েই আদ্রিয়ান শক্ত গলায় বলল,

” আমি আর কোন কথা শুনবোনা। তোমার কথা শুনে অলরেডি এতোগুলো মাস দেবদাস হয়ে কাটিয়ে দিয়েছি আর পারবোনা। ইদানীং আবার তোমার মেয়ের পাখনা গজিয়ে যাচ্ছে। সো তুমি এখন রাজি না হলে আমি কিন্তু এ বাড়ি থেকে নড়ছিনা। যতদিন রাজি না হবে আমি এখানেই আছি! এক কথায় ঘরজামাই। এবার ডিসিশন ইজ ইউরস।”

সবাই বোকার মত তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। অনিমার তো লজ্জায় একদম মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। সবার সামনে কী শুরু করে দিলো এই ছেলে? রিক ওরা সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে আর মজা নিচ্ছে। কেউ কোনভাবেই আদ্রিয়ানকে বোঝাতে পারল না। সে তাঁর সিদ্ধান্তে অটল। তাই আদ্রিয়ানের জেদের কাছে হার মানে। হাসান কোতয়াল আর মানিক আঙ্কেল মিলে সামনের শুক্রবারই ওদের বিয়ের দিন ঠিক করে সবকিছু পাকা করল। বিয়ের দিন ঠিক হতেই ওদের মধ্যে আনন্দের হৈ হুল্লোড় পরে গেল। অনিমা ওখান থেকে সরে সোজা ছাদে চলে এলো। ছাদে এসে রেলিং ধরে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলো। কী কান্ডটাই না করল আদ্রিয়ান! এরকম বাচ্চামো করার কোন মানে হয়? পাগল একটা। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে এখন আবার। আকাশের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবতে ভাবতে কেউ একজন হ্যাঁচকা টানে ওকে নিজের দিকে টেনে শক্ত করে কোমর জড়িয়ে ধরল। অনিমা না দেখেও জানে এটা কে। তাই বিরক্তি নিয়ে আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তাকাল। আদ্রিয়ান ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

” কী যেন বলছিলে? ডিভোর্স দেবে? এবার দিয়ে দেখাও? আর এক সপ্তাহ। এরপর সোজা আমার ঘরে নিয়ে যাচ্ছি।”

অনিমা একটা ভেংচি কেটে বলল,

” চিন্তা করবেন না। বিয়ের আগে ঠিক পালিয়ে যাবো। দেখি কীকরে নিয়ে যান।”

” যদি পালানোর অপশনই না রাখি তাহলে?”

” কী করবেন?”

আদ্রিয়ান অনিমার একদম কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

” এখনতো জাস্ট ফরমালিটি করে অনুষ্ঠান করা সবে। আমাদের আসল বিয়ে তো হয়ে গেছে। তো এখন আমি কিছু করলেও সেটা অন্যায় হবে না। রাইট?”

কথাটা শোনার সাথেসাথেই অনিমা কেঁপে উঠল। এতক্ষণ শান্ত থাকলেও এবার নড়চড়া শুরু করে দিলো। সাথেসাথে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টিও শুরু হল। আদ্রিয়ান আরেকটু শক্ত করে অনিমার কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,

” এতো ছটফট করছো কেন বেবি? হাজবেন্ড হই আমি তোমার? খুব শখ ডিভোর্স দেওয়ার তাইনা?”

বৃষ্টির বেগ এতোটাই বেশি ছিলো যে ওরা একদম ভিজে গেছে। বেশ ঠান্ডা জল। তারওপর আদ্রিয়ানের এমন স্পর্শ। অনিমা একরাশ অস্বস্তি নিয়ে বলল,

” দেখুন ভিজে যাচ্ছি আমরা। প্লিজ ছাড়ুন না।”

আদ্রিয়ান যেন অনিমার কথা শুনতেই পায়নি। একদম মোহনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। অনিমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,

” বর্ষণ হোক না। ক্ষতি কী?”

” আমি কি__”

আর কিছু বলার আগেই অনিমা চুপ করে গেল। কারণ আদ্রিয়ান অনিমার কথা বলার উপায়ই রাখেনি। কয়েকসেকেন্ড পাথরের মত দাঁড়িয়ে থেকে আবেশে ধীর গতিতে চোখ বন্ধ করে ফেলল ও। এরকম স্পর্শের সাথে অনিমা প্রথমবার পরিচিত হল তাই সমস্ত শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে ওর। বেশ অনেকটা সময় পর আদ্রিয়ান অনিমাকে ছাড়লো। বৃষ্টির শব্দের সাথে দুজনের ভারী নিশ্বাসের শব্দও আসছে। অনিমা এখনও চোখ খোলেনি। আদ্রিয়ান অনিমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলল,

” তুমি যতো দূরে সরতে চাইবে। আমি ঠিক ততটাই কাছে টেনে নেব। তুমি দূরে যেতে চাইলেও আমি যেতে দেবোনা জানপাখি।”

অনিমা আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। দুজনের দৃষ্টিই দুজনের চোখের দিকে। একে ওপরের দৃষ্টির গভীরতায় হারিয়ে যাচ্ছে ওরা। অনেকটা সময় এভাবে দৃষ্টি বিনিময়ের পরে অনিমা ধীর কন্ঠে বলল,

” আই লাভ ইউ।”

এই তিনটে শব্দ শোনার সাথেসাথেই আদ্রিয়ানের সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অনিমার দিকে। কিন্তু আদ্রিয়ানকে এতো অল্প অবাক করে অনিমা যেনো তৃপ্তি পেলোনা। তাই একটা অসম্ভব কাজ করে বসল। আদ্রিয়ানের গালে হাত রেখে পা উঁচু করে আদ্রিয়ানের গালে গভীর এক কিস করে বসল। আদ্রিয়ান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। অনিমা হঠাৎ করেই আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরল। আসলে এমন কান্ড করেছে যে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেও লজ্জা করছে এখন। পারলে এখন আদ্রিয়ানের বুকের মধ্যে ঢুকে যেতো ও। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আদ্রিয়ান হেসে ফেলল। অনিমাকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল, নিজেকে আজ পূর্ণ মনে হচ্ছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে ফিসফিসে আওয়াজে বলল,

” ধন্যবাদ বর্ষণের রাত।”

_________

বিয়ের বিভিন্ন আয়োজন করতে করতে দেখতে দেখতেই এক সপ্তাহ কেটে গেল। আজ অনিমা আর আদ্রিয়ান দুজনেরই হলুদ সন্ধ্যা। আদ্রিয়ানের হলুদের ব্যবস্হা আদ্রিয়ানদের বাড়িতে আর অনিমার হলুদের ব্যবস্হা অনিমার বাড়িতেই করা হয়েছে। দুই বারেই চমৎকারভাবে সাজানো হয়েছে। রাত হয়ে গেছে। হরেক রকম লাইটিং এর আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। এতোবড় একজন সেলিব্রিটির বিয়ে এরকমটাই স্বাভাবিক। অনিমাকে বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। হলুদ শাড়ি, গায়ে বিভিন্ন কাঁচা ফুলের হালকা গয়না দিয়ে সাজিয়েছে ওকে। যেগুলো আদ্রিয়ান নিজে পছন্দ করে কিনে লোক দিয়ে নিজের পছন্দ মতো ডিজাইন করে বানিয়েছে। বেশি মেকআপ করানো হয়নি। ওপাশে আদ্রিয়ানের হলুদ হচ্ছে তার মধ্যেই ও অরুমিতা আর স্নেহাকে ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছে কীভাবে অনিমাকে সাজাবে। এটা নিয়ে দুপাশ থেকেই দু দলের হাসির শেষ নেই। আদিব, রিক ওরা একটু পরপরই এইজন্য আদ্রিয়ানকে পঁচাচ্ছে এজন্য। আর এপাশ থেকে স্নেহা আর অরুমিতা দাঁত বের করে করে হাসছে। অনিমা শুধু অসহায়ের মতো বসে বসে দেখছে এদের পাগলামো আর একটু পরপর লজ্জায় লাল হচ্ছে। ও বাড়িতে আদ্রিয়ানের হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে রিক, স্নিগ্ধা, আদিব, রাইমা, অভ্র, জাবিন, আশিস, নাহিদ, তনয়া আরও আদ্রিয়ানদের পরিচিত ইয়াং সকলের গিফটস, হলুদ আরও বিভিন্ন জিনিস নিয়ে এসছে। সব রেখে অনিমার সাথে দেখা করার জন্যে ওর রুমে এসে দেখে। স্নেহা আর অরুমিতা অনিমার হাতে মেহেদি পরাচ্ছে। তীব্র কাজে ব্যস্ত। রিকের দৃষ্টি অনিমার ওপর পরতেই কয়েকসেকেন্ড তাকিয়ে রইল ও। খুব সুন্দর লাগছে আজ মেয়েটাকে। বুকের মধ্যে কোথাও একটা কষ্ট হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এটাও খেয়াল করল যে কোন আফসোস বা হিংসে হচ্ছেনা ওর। বরং ওর নীলপরীর মুখে সুখের ঐ হাসি দেখে মনে হচ্ছে, ব্যস এটুকুই তো চাই। অনিমার দৃষ্টি রিকের ওপর পরতেই অনিমা মুচকি এক হাসি দিল। রিক এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” বেশ সুন্দর লাগছে কিন্তু, ভাবিজান।”

অনিমা অনেকটা দুষ্টুমির ছলেই বলল,

” কেনো? এমনিতে সুন্দর লাগেনা?”

” নাহ! কালো পেত্নীর মতো লাগে। আদ্রিয়ানের চোখে নিশ্চয়ই ডিফেক্ট আছে। তাই তোমাকে এতো পছন্দ হয়েছে।”

অনিমা একটা বালিশ ছুড়ে মারল রিকের মুখের ওপর। রিক বালিশটা ধরে শব্দ করে হেসে ফেলল। কিছুক্ষণ মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে থেকে শেষে অনিমাও হেসে ফেলল।

হলুদের প্রোগাম শেষ হতে হতে বেশ রাত হয়ে গেল। অনিমা বেশ ক্লান্ত হয়েই ঢূকলো নিজের রুমে। অনেকটাই ধকল গেছে আজ ওর। বিয়ে করতেও যে এতো ঝামেলা সেটা জানতোনা। জানলেই বা কী? করতে তো হতোই! রুমে ঢুকে লাইট অন করার সাথেসাথেই আদ্রিয়ান টেনে ওকে দেয়ালের সাথে আটকে ধরে ফেলল। অনিমা অবাক চোখে তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে। হঠাৎ আক্রমণে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আদ্রিয়ানের ঠোঁটে মুচকি হাসি ঝুলে আছে। দু গালে, কপালে, গলায় হলুদ লাগানো, চুলগুলোও আচড়ায় নি, স্যান্ডো গেঞ্জি আর জিন্স পরেই চলে এসছে। অনিমা জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলল,

” আপনি? আপনি এখানে কী করে এলেন?”

” বাহ রে! আমার বউয়ের হলুদে সবাই হলুদ লাগাবে আর আমি লাগাবোনা? সেটা হয় না-কি?”

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

” আপনি এখানে আমায় হলুদ লাগাতে এসছেন? কেউ দেখেনি তো? দেখে ফেললে কী হবে? এমনিতেই সাজানোর সময় যে কান্ড করেছেন লজ্জায় মাথা তোলা দ্বায় হচ্ছিল আমার।”

আদ্রিয়ান হেসে বলল,

” আরে কুল মাই ডিয়ার ওয়াইফ। ব্যালকনি দিয়ে এসছি। মই!”

অনিমা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে। এই ছেলে ব্যালকনি টপকাতে একদম ওস্তাদ। অনিমা এসব ভাবতে ভাবতেই আদ্রিয়ান ওর নিজের হলুদ মাখা গাল অনিমার হলুদ মাখা গালে ঘষে দিলো। শুধু গাল, গলা পুরোটাতেই দুজনের হলুদ মিলেমিশে একাকার করে তবেই ছাড়ল। এরপর অনিমার কপালে একটা চুমু দিয়ে কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে বলল,

” দ্রুত ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরো। বেশিক্ষণ শাওয়ার নেবেনা কিন্তু। ঠান্ডা লাগবে। বাকি কথা কাল হবে। বাসর রাতে!”

বলে অনিমাকে একটা মোহনীয় হাসি উপহার দিয়ে আবারও ব্যালকনি দিয়েই চলে গেল আদ্রিয়ান। অনিমা বোকার মত তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের যাওয়ার দিকে। ওর কানে শুধু আদ্রিয়ানের বলা শেষ বাক্যটাই বাজছে। উফ! কী ভয়ংকর!

# চলবে…

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৫৯.

আদ্রিয়ান এই মুহুর্তে বেশ বিরক্ত। কারণ ওকে নাকি সবাই মিলে গোসল করাবে তেল-হলুদ দিয়ে। আবার মিডিয়ার লোকেরাও বসে আছে সেই দৃশ্য শুট করবে বলে। আদ্রিয়ানতো কিছুতেই যাবেনা নিচে। সবাই মিলে এতো করে বলছে, বেলাও হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আদ্রিয়ান যেতে নারাজ, রুমে চুপচাপ বসে আছে খাটের ওপর। তাও আসাম করে। আদ্রিয়ান মুখ ফুলিয়ে বলল,

” কাম অন ইয়ার! এভাবে সবার সামনে আমি স্নান করব? তাও আবার মিডিয়ার লোকজন দেখবে, আবার বড় নিউসও করবে? আমি পারবোনা।”

আদিব ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে বলল,

” বাচ্চাদের মত করছিস কেন? তোর বস্ত্রহরণ করবে না কেউ। জাস্ট হলুদ লাগিয়ে গায়ে একটু পানি ঢালবে। গোসলটা তুই ভেতরে এসেই সেড়ে নিস।”

আদ্রিয়ান রাগী কন্ঠে ঝাড়ি মেরে বলল,

” কোন দরকার নেই।”

” দরকার আছে! একদম বাদরামো করবেনা আদ্রি। একটা দিনে তোমার আহামরি কোন সমস্যা হবেনা। এতো ধুমধাম করে বিয়েটা যখন করছো তখন এটুকুও করতে হবে।”

কথাটা বলতে বলতে মিসেস আবরার ভেতরে ঢুকলেন। আদ্রিয়ান মুখ ফুলিয়ে বলল,

” কিন্তু মা..”

মিসেস রিমা বেশ অনেকটা রাগ দেখিয়ে বললেন,

” কোন কিন্তু না। চুপচাপ নিচে চলো। তোমার আন্টিরা সব অপেক্ষা করছে। তাড়াতাড়ি কাজ সাড়তে হবে।”

বলে উনি চলে গেলেন। আদ্রিয়ান চোখ মুখ কুঁচকে বসে রইল। আজব সব নিয়ম। এগুলো কে বানিয়েছে? এখন ওর মত একটা ছেলেকে কি-না এতোগুলো বুড়ো মহিলা মিলে গোসল করাবে। ভাবা যায়? নাহিদ বলল,

” আরে এতো হাইপার হচ্ছিস কেন? পাঁচ মিনিটে হয়ে যাবে। চল আয়।”

” হ্যাঁ সেটাই। আমরা নিচে আছি তুই আয়।”

আদিব, আশিস আর নাহিদ চলে গেলো নিচে। শুধু রিক রয়ে গেল। গোসলের করাবে তাই আদ্রিয়ানকে এখন লুঙ্গি পরতে হবে। বেচারার মোটেই অভ্যেস নেই তাই বিরক্তি নিয়ে এদিক ওদিক মোচড়াচ্ছে খালি। রিক এগিয়ে গিয়ে লুঙ্গি গিট দিতে দিতে বলল,

” অভ্যাস নেই একদমই?”

” না। কীকরে থাকবে? সেই ছোটবেলাতে টানা এক সপ্তাহ পরেছিলাম, তাও বাধ্য হয়ে।”

রিক হালকা আওয়াজ করেই হেসে ফেলল। লুঙ্গি গিট দেওয়া শেষ করে বলল,

” মামার কোন খবর জানিস?”

” উমহুম! আপাতত সামনে আসবে বলে মনে হচ্ছেনা।”

রিক অনেকটা চিন্তিত হয়ে বলল,

” আড়ালে থাকা শত্রুগুলোই খুব ভয়ংকর হয়। আঘাতটা কোন দিক থেকে ঠিক কীভাবে আসবে বলা যায়না। সাবধান থাকতে হবে আমাদের।”

আদ্রিয়ান একটা সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি নিয়ে পরতে পরতে বলল,

” আমার মনে হয়না এখনই ওদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হবে। খালু জেলে। মামার পক্ষে এখন কিছু করা সম্ভবও না। কারণ ওনাদের সব বিজনেসে তালা পরে গেছে। আর টাকা ছাড়া কোন পাওয়ারই কাজ করেনা। ওনাদের একেকজনকে এমনভাবে ভেঙ্গেছি যে ঘুরে দাঁড়াতে কম করে হলেও দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে।”

রিক গম্ভীর স্বরে বলল,

” কিন্তু যেদিন দাঁড়াবে সেদিন কিন্তু এমনিতে ছেড়ে দেবেনা। আর ওনাদের প্রধান লক্ষ্য থাকবে আমাদের সবার দুর্বল জায়গায় আঘাত করা। আমাদের সবার দুর্বল জায়গা মানে বুঝতে পারছিস তো!”

আদ্রিয়ান একটু অন্যমনস্ক হয়ে বলল,

” ভাবতে খুব অবাক লাগে তাইনা? যেই মামার কোলে-পিঠে চড়ে আমরা দুজন শৈশবের এতোটা সময় কাটিয়েছি, বড় হয়েছি। সে আমাদের মেরে ফেলতেও দুবার ভাববে না।”

রিক একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

” যেখানে নিজের জন্মদাতা বাবাই.. যাই হোক, এসব নিয়ে যথেষ্ট মন খারাপ করা হয়েছে এতোদিন। আজকের দিনে এসব কথা ভাবার দরকার নেই। চল নিচে চল।”

” হুম চল!”

আদ্রিয়ানকে তেল হলুদ-মাখাচ্ছে সবাই আর আদ্রিয়ান বিরক্ত হলেও মেকি হাসি মুখে ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদিব, রাইমা, নাহিদ, তনয়া, আশিস সব মিটমিটিয়ে হাসছে ওর অবস্থা দেখে। স্নিগ্ধা বড় একটা ঝুড়িতে একগাদা ফুল নিয়ে হেঁটে হেঁটে আসছে। রিকও দুটো চেয়ার হাতে নিয়ে আসছিল। কিন্তু দুজনেই তাড়াহুড়োর মধ্যে থাকায় রিকের সাথে ধাক্কা লেগে ঝুড়ি উল্টে নিচে পরে যায়। স্নিগ্ধা রেগে গিয়ে বলে,

” আজব তো! দেখে হাঁটতে পারোনা?”

রিক চেয়ার দুটো রেখে বলল,

” চোখতো তোরও আছে। তুই কী করছিলি?”

স্নিগ্ধা কিছু না বলে বসে পরল ফুল তোলার জন্যে। রিকও ওকে হেল্প করার জন্যে বসে পরল। ফুল তুলতে তুলতে স্নিগ্ধা রিকের দিকে তাকালো,

” সময়ের সাথে সাথে তীব্রভাবে ভালোবেসে ফেলছে ছেলেটাকে। নিজের মনকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। কিন্তু রিক? সে কী ভাবে? রিক কী ভালোবাসতে পারবে ওকে কখনো?”

রিক স্নিগ্ধার মুখের সামনে গিয়ে তুড়ি বাজাতেই ওর হুশ ফিরলো। রিক ভ্রু নাচিয়ে বলল,

” এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? হয়ে গেছে ওঠানো।”

স্নিগ্ধা কিছু না বলে ঝুড়ি নিয়ে উঠে চলে গেল। রিক ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকাল স্নিগ্ধার দিকে। মেয়েটাকে হলুদ শাড়ি আর খোলা চুলে বেশ লাগেতো! কই আগেতো এতো সুন্দর লাগে নি কখনও?

__________

প্রায় এক ঘন্টার লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এলো অনিমা। প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে এখন। কাল প্রায় রাত তিনটা অবধি জেগে ছিল। তার ওপর সকাল সকাল উঠে পরতে হয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই তেল-হলুদ মাখার ঝামেলায় পরতে হয়েছে। উফ, কী ঝামেলা। ক্লান্ত শরীরটাকেই বিছানায় এলিয়ে দিলো একটু ঘুমানোর আশায়। কিন্তু সেটা আর হলোনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই অরুমিতা আর স্নেহা চলে এলো খাবার নিয়ে। কারণ একটু পরেই ওরা ওকে সাজাতে বসাবে আর সাজার পর নাকি কিছু খাওয়া যাবেনা। অনিমা অসহায় ভাবে উঠে বসে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল অরুমিতা আর স্নেহার দিকে। অরুমিতা হেসে দিয়ে বলল,

” আহালে আমার বাবুটা। বিয়ে করবে এইটুকু কষ্ট করবেনা সেটা কী হয়?”

স্নেহা চোখ মেরে বলল,

” সেটাই! আজ সারাদিনের ধকল। রাতে দুলাভাইও রেস্ট করতে দেবেনা। নো টেনশান।”

অনিমা কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলল,

” আমার ঘুম পাচ্ছে।”

অরুমিতা আর স্নেহা আবারও শব্দ করে হেসে ফেলল। অনিমা বিরক্ত হল। এতো হাসার কী আছে এতে? অনিমাকে খাইয়ে দিয়ে একটু গল্প করার পর ওরা আবার অনিমাকে সাজাতে বসল। লাল বেনারসি, গহনাগুলোও বেশ সুন্দর ছিলো। গেস্টদের মধ্যে অনেকে এসেও মাঝেমাঝে দেখে যাচ্ছে কথা বলে যাচ্ছে। হাসান কোতয়াল এমনিতে আজ ব্যস্ত। তবুও কয়েকবার দেখে গেছেন মেয়েকে। কিছুক্ষণ পরেই বাইরে থেকে হালকা আওয়াজে শোনা গেল ‘বর এসে গেছে’। কথাটা শুনতেই অনিমার মধ্যে কেমন একটা করে উঠল। ভেতরে ভেতরে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে যা ব্যাখ্যা করা যায়না। তীব্র এসে দরজায় উঁকি দিয়ে বলল,

” দুলাভাই এসে গেছে। তাড়াতাড়ি চল।”

অরুমিতা আর স্নেহা চলে গেল। আর অনিমা চুপচাপ বসে রইল ওখানে। একটু পরেই ওর বিয়ে হয়ে যাবে। যদিও বিয়েতো ওর হয়েই গেছে। কিন্তু তবুও অকারণেই খুব অস্থির লাগছে ওর।

গেট আটকানো থেকে শুরু করে জুতো চুরি কোন কিছুই বাদ রাখেনি অরুমিতা, তীব্র আর স্নেহা মিলে। সবচেয়ে মজা তো হয়েছে যখন আদ্রিয়ানের জুতোজোড়া অনিমার কাছেই লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। আর বুদ্ধিটাও স্বয়ং অনিমারই ছিলো। অনেক মজা আর রসিকতার পর বিয়ে কাজ শুরু হল। হাসান কোতয়াল মেয়ের একদম পাশে বসে দুই হাত মুঠোয় ধরলেন। কাজী যখন ‘কবুল’ বলতে বলল তখনই অনিমা হালকা অস্বাভাবিক হয়ে উঠল। কেমন অদ্ভুত অনুভূতিগুলো ঘিরে ধরল ওকে। বিয়ে পরানোর সময়টায় হাসান কোতয়ালের ছলছলে চোখ দেখে অনিমাও কেঁদে ফেলেছে। দীর্ঘ পাঁচবছর পর আব্বুকে ফিরে পেয়েও কয়েক মাসের মাথায় আবার ছেড়ে যেতে হবে।রোজ সকালে চা করে ওর আব্বুর ঘুম ভাঙানো হবেনা, রোজ রাতে আব্বুর হাতে খাওয়া হবেনা। মাঝরাতে ঘুম না আসলে দু কাপ চা করে আব্বুর রুমে বলা হবেনা, ঘুম আসছেনা আব্বু। চলোনা গল্প করি’। আদ্রিয়ানের মত স্বামী আর ওরকম শশুর শাশুড়ি পাওয়ায় বিয়ের পরও ওর শখ-আল্লাদ, স্বাধীনতা, বায়না কোন কিছুরই পরিবর্তন আসবে না ও জানে। ওনারা আসতে দেবেনা। কিন্তু তবুও বাবা তো বাবাই হয়। হুটহাট দেখতেও পাবেনা। তাছাড়াও সেদিনতো আদ্রিয়ানের ধমকে আর আচমকা শকের মধ্যে কবুল বলে দিয়েছিল। কিন্তু আজতো নিজের সম্পূর্ণ অনুভূতি নিয়ে আদ্রিয়ানের নামে ‘কবুল’ বলবে। নিজের অস্তিত্বকে আদ্রিয়ানের সাথে জুড়ে দেবে। আদ্রিয়ানের হয়ে যাবে ও। দুটো অনুভূতি মিশে কান্না হয়ে বেড়িয়ে আসছে। ফুপিয়ে কেঁদে উঠছে। হাসান কোতয়াল, অনিমার মামী, অরুমিতা সবাই অনেকে অনেকটা সময় বোঝানোর পর অনিমার মুখ দিয়ে ‘কবুল’ বেড় হল। ওদিকে কাজী বলার এক সেকেন্ডের মধ্যেই আদ্রিয়ান ‘কবুল’ বলে দিয়ছে।

বিদায়ের সময় অনিমাকে দিয়ে নিচে নামার সময় নিরবে কাঁদছিল অনিমা। কিন্তু দরজার বাইরে সিঁড়িতে আসতেই অনিমা কাঁদতে কাঁদতে সিঁড়ির ওপর বসে পরল। আদ্রিয়ান একটু আগে হাটছিল। অনিমার কান্নার আওয়াজে থেমে গিয়ে পেছন ঘুরে তাকাল। অনিমাকে ওভাবে কাঁদতে দেখে মন বিষাদে ভরে উঠল ওর। হাসান কোতয়াল দ্রুত এগিয়ে এসে মেয়ের পাশে বসতেই অনিমা ওনাকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করল। সবাই বোঝাচ্ছে কিন্তু অনিমাকে সামলাতে পারছে না। অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও অনিমা উঠছেনা। এদিকে সন্ধ্যাও হয়ে আসছে। এদিকে আদ্রিয়ানের অনিমার কান্নাও সহ্য হচ্ছেনা। আর এখানে যতক্ষণ থাকবে ও কাঁদবেই। তাই আদ্রিয়ান এবার এগিয়ে এসে অনিমাকে কোলে তুলে নিল। অনিমা কান্না থামিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে হাটা শুরু করল। সবাই বেশ অবাঈ হয়েছে, অনেকে ঠোঁট চেপে হাসছেও।গাড়ির কাছে এসে অনিমাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আদ্রিয়ান পেছন ঘুরে হাসান কোতয়ালের দু হাত ধরে বলল,

” চিন্তা করোনা, ওকে নিজের সবটা দিয়ে আগলে রাখব।”

হাসান কোতয়াল তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলল,

” এইজন্যই আমি এতোটা নিশ্চিন্ত।”

অরুমিতা তীব্র আর স্নেহা ওদের সাথেই গেল। আদ্রিয়ানই অনেকটা জোর করে নিয়ে যাচ্ছে ওদের। গাড়ি স্টার্ট করার পর অনিমা আবার ফুপিয়ে কেঁদে দিলো। আদ্রিয়ান ওকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

” কেঁদোনা জানপাখি। আমার কষ্ট হয়তো!”

কিন্তু অনিমার এখনও মৃদু আওয়াজে কেঁদেই চলেছে। আদ্রিয়ান সযত্নে অনিমার চোখ মুছে দিতে দিতে বলল,

” কেঁদোনা প্লিজ। আমরা কদিন পরপর এসেই সিনিয়রের সাথে দেখা করে যাবো। সিনিয়রও তো আসবে আমাদের বাড়িতে তাইনা? আর যদি তবুও তোমার কষ্ট হয় তো তোমার বাবাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে চলে আসবো। প্রমিস!”

কান্নার মধ্যেও অনিমা হালকা হেসে ফেলল। আবরার মেনশনে পৌঁছতেই অনিমার কাছে মিসেস রিমা আর লিমা একপ্রকার দৌঁড়ে চলে এলো। যেনো নতুন বউকে ঘরে তোলার জন্যে এতক্ষণ অধির আগ্রহে বসে ছিল। প্রচলিত সব নিয়ম রীতি মানার পর বসার ঘরে তরুণরা সবাই মিলে বসল। বাকিরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। এরমধ্যেই রিককে বাইরে চলে যেতে দেখে আদিব বলে উঠল,

” কী ব্যাপার আমরা সবাই এখানে আড্ডা দিচ্ছি তুই কোথায় যাচ্ছিস। আসল মজাটাই তো রাতে হবে গুরু!”

রিক মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,

” আমার আসলে একটু কাজ আছে। ফার্মহাউজে যাবো একটু। সমস্যা নেই কাল সকাল সকাল চলে আসবো। তোরা এনজয় কর।”

তীব্র বলল,

” কিন্তু ভাইয়া আজকেই যেতে হবে? আজ না গেলে হয়না।”

” সরি ইয়ার, থাকতে পারছিনা। রাতে তো একদমই না। যাওয়া সত্যিই আর্জেন্ট। গাইস সরি হ্যাঁ! যেতে হলো।”

বলে রিক চলে গেল। আদ্রিয়ান কিছুই বলল না আর রিককে থেকে যেতেও বলল না। শুধু ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলল।

নাহিদ আপেল চিবুতে চিবুতে বলল,

” যাক! অবশেষে তোদের বিয়েটা কম্প্লিট। এতোদিন যা চলছিল।”

আদিব বলল,

” হ্যাঁ সেটাই। ব্যালকনি টপকে দেখা করা, লুকিয়ে দেখা করা, ফোনে ফোনে প্রেম। মানে বিবাহিত দম্পতিদের টিনেজার স্টাইলের প্রেমটাও দেখে নিলাম।”

ওদের কথা শুনে একদফা হাসির রোল পরে গেলো। আশিস বলল,

” তবে যাই বলো মামা, আজ রাতে তোমার শান্তি নেই। সবসময় সবার হাড় জ্বালানোর ফন্দি আটতে থাকো তাইনা? এবার তোমার পালা!”

আদ্রিয়ান বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসে বলল,

” অল দ্যা বেস্ট।”

আদ্রিয়ানের এরকম চিল মুড দেখে নাহিদ কপাল কুচকে বলল,

” চিল করো আর যাই করো আমরা কিন্তু ছাড়ছি না।”

” সামনে কিন্তু তোর আর তনয়ার বিয়েও আসছে!”

” ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা সিদ্ধান্তে অটল!”

ওরা সবাই হাসিমজা করলেও অনিমা চুপচাপ বসে আছে একদম। একে নতুন বউ তারওপর ওদের এসব কথায় ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে।কিছুক্ষণ এরকম হাসি মজা করার পর মিসেস রিমার কথায় অনিমাকে জাবিনের রুমে নিয়ে গেল একটু রেস্ট করার জন্যে। অনিমা সব গহনা খুলে, চুল খুলে একটু হালকা হয়ে বসল। যেই বিছানায় একটু গা এলাতে যাবে। তখনই আদ্রিয়ান এসে হাজির হল। অনিমা উঠে বসে শাড়ি ঠিক করে নিল। আদ্রিয়ান পকেটে হাত গুজে এগোতে এগোতে বলল,

” টায়ার্ড খুব?”

অনিমা নিচু কন্ঠে বলল,

” হুম।”

আদ্রিয়ান ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে বলল,

” এখন সাড়ে সাতটা বাজে। সাড়ে ন’টার আগে কেউ তোমাকে ডিসটার্ব করতে আসবে না। তাই আপাতত একটু ঘুমিয়ে নাও। ভালো লাগবে।”

এটুকু বলে চলে যেতে নিয়েও এগিয়ে এসে অনিমার দিকে একটু ঝুঁকে বলল,

” রেস্ট করার জন্যে কিন্তু এই সময়টুকুই পাবে। রাতে কিন্তু টায়ার্ড বললেও আমি শুনছিনা।”

বলে অনিমার চোখে চোখ রেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে চোখ মেরে চলে গেলো। আর অনিমা বোকার মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা শুকনো ঢোক গিলল।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে