বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব-৫৬+৫৭

0
1613

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৫৬.

আদ্রিয়ানদের বাড়ির ড্রয়িংরুমে একটা ছোটখাটো মিটিং বসেছে। সকলেই বেশ কৌতূহলী হয়ে চিন্তিত মুখ করে বসে আছে। রঞ্জিত চৌধুরীর অ‍্যারেস্ট হয়ে যাওয়াটা যেমন দেশজুড়ে সাড়া ফেলেছে ঠিক তেমনই আবরার মেনশনের সবাইও বেশ অবাক হয়েছে। রঞ্জিত চৌধুরী এবাড়ির আত্মীয় হয়। সে এরকম কিছু করেছে সেটা সত্যিই ভাবা যায়না। তার সাথে কবির শেখও না-কি যুক্ত! এটা শুনে মিসেস রিমা বেশ অবাক হয়েছেন। তার নিজের ভাই এরকম কিছু করেছেন সেটা চিন্তাও করতে পারেননি তিনি। রিক, স্নিগ্ধা, মিসেস লিমাও এসছেন আবরার মেনশনে। মিসেস লিমা ভেঙ্গে পরলেও অবাক হননি। কারণ উনি হয়তো জানতেন ওনার স্বামীর দ্বারা কী কী সম্ভব। এক ছাদের নিচে থেকে এতোগুলো বছর সংসার করেছেন। তাই এইটুকু তো জানেনই। এসব নিয়েই আলোচনা চলছে সন্ধ্যা ধরে। অনিমা বিকেল থেকেই অবাকের পর অবাক হচ্ছে। এরকমটা কীকরে সম্ভব হতে পারে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেনা ও। কিন্তু কিছুক্ষণ যাবত ও রিকের দিকে তাকিয়ে আছে। রিককে একদম স্বাভাবিক লাগছে। যেনো কিছুই হয়নি। কিন্তু অনিমা ঐ একবছরে যতটা দেখেছে রিক তো ওর বাবা আর মামার জন্য পাগল ছিল। বিশেষ করে ওর মামার অন্ধ ভক্ত ছিলো ও। কিন্তু এতোকিছু হয়ে যাওয়ার পরেও রিকের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া নেই কেন? সব কেমন একটা গুলিয়ে যাচ্ছে ওর কাছে। তাই ও আপাতত চুপচাপ বসে বসে দেখছে সবটা। মিসেস রিমা বলে দিয়েছেন যে এসব ঝামেলা মিটে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মিসেস লিমা, রিক, স্নিগ্ধা ওরা সব এ বাড়িতেই থাকবে। ওরাও আর না করেনি কারণ রিমা শুনতেন না। অনিমা আর হাসান কোতয়াল আজ রাতটা এখানে থাকবেন। তাই রাতে ডিনার সেড়ে যে যার যার রুমে চলে গেলো।

রাত প্রায় সাড়ে বারোটার মত বাজে। পাশে শুয়ে থাকা জাবিন ঘুমিয়ে পরেছে কিন্তু অনিমার ঘুম আসছে না। বারবার মাথায় শুধু এসবই ঘুরছে যে কীকরে হঠাৎ করেই রঞ্জিত চৌধুরী আর কবির শেখকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল? ডকুমেন্টগুলো তো সব মাদারের কাছে আছে। তাহলে কী নতুন কোন প্রমাণ? এতোরকম প্রশ্ন মাথায় জেকে বসেছে যে সবগুলোর উত্তর না পাওয়া অবধি ও কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা। আর এতো চিন্তা করতে করতে মাথাটাও ধরে আসছে। আদ্রিয়ান বলেছিল সব ক্রেডিট ওর বাবার। যদি তাই হয়! তাহলে নিশ্চয়ই ওর বাবা সবটাই জানে। অনিমা আর নিজের ধৈর্য্য রাখতে পারল না। উঠে বেড়িয়ে পরল ওর বাবার রুমের উদ্দেশ্যে। ওকে সবটা জানতেই হবে আর সেটা এখনই। কিন্তু ঐ রুমের সামনে গিয়ে দেখল বাইরে দিয়ে লক করা। তারমানে ভেতরে নেই? এতোরাতে কোথায় যাবে? তাও এই বাড়িতে এসে। অনিমার মাথায় সবার আগে ছাদের চিন্তাই এলো। ও কোন কিছু না ভেবেই আস্তে আস্তে ছাদের দিকে চলে গেলো। ছাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখল ওখানে ওর বাবার সাথে আদ্রিয়ান, রিক দুজনেই আছে ঐখানে। আদ্রিয়ান বলছে,

” তোমার মেয়েকে আমি খুব ভালো করেই চিনি। দেখো গিয়ে কীভাবে কী হল সেসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে এখনো না ঘুমিয়ে জেগে আছে। দেখো, ওর জন্যে এতো প্রেশার নেওয়া এমনিতেই খুব রিস্কি। অলরেডি অনেকটা রিস্ক নিয়ে নিয়েছি আমি, আর পারবোনা।”

রিক থুতনিতে হাত রেখে খানিকটা চিন্তিত স্বরে বলল,

” আই অলসো থিংক এখন ওকে সবটা বলে দেওয়াই ঠিক হবে। কারণ বেশি মানসিক চাপে থাকলে একসময় ডক্টরের কথাটাই সত্যি হতে বেশি সময় লাগবেনা।”

অনিমা ভাবছে কীসের কথা বলছে ওরা? কীসের মানসিক চাপ? আর ডক্টর কী বলেছেন? কী হতে পারে ওর? অনিমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে হাসান কোতয়াল বলল,

” কিন্তু ও সবটা একসাথে নিতে পারবে?”

অনিমার মনে হল আর আড়াল থেকে শোনা ঠিক হবেনা। তাই হালকা গলা ঝেড়ে বলল,

” আব্বু।”

তিনজনেই হালকা চমকে উঠল অনিমাকে দেখে। এরকম সময় অনিমাকে এখানে আশা করেনি ওরা। হাসান কোতয়াল নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

” তুমি ঘুমাও নি এখনো?”

অনিমা হাত কচলাতে কচলাতে এগিয়ে এসে নিচু কন্ঠে বলল,

” আসলে তোমার সাথে কথা বলতে তোমার রুমেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু ওখানে পাই নি তাই__”

” এতো রাতে কী কথা?”

তখনই আদ্রিয়ান বলে উঠল,

” আমি বলেছিলাম না এই মেয়ে না ঘুমিয়ে এসব নিয়েই চিন্তার পাহাড় সাজিয়ে বসে ছিলো। দেখলে? এখানেও চলে এসছে।”

রিক একবার অনিমা আরেকবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসল। অনিমা মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এভাবে বলার কী হল? হাসান কোতয়াল আঙুল দিয়ে নাক ঘষে হয়তো হাসিটাই নিয়ন্ত্রণ করলেন। তারপর অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” কী বলতে এসছিলে?”

অনিমা গম্ভীর দৃষ্টিতে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,

” এসব কীকরে হলো আব্বু? আই মিন, ওরা অ‍্যারেস্ট কীকরে হল? এটাতো একপ্রকার অসম্ভব ছিলো তাইনা? সবগুলো প্রুভ এতো তাড়াতাড়ি! কিন্তু কোথায় পেলে?”

হাসান কোতয়াল একবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে তারপর অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” তাড়াতাড়ি নয়! দীর্ঘ পাঁচবছরের মিশন এটা!”

অনিমা অনেকটা অবাক হয়ে গেল। পাঁচ বছরের মিশন? মানে কী? অনিমাকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্রিয়ান বলল,

” প্রায় ছয়বছর আগে মিস্টার সিনিয়রের এক্সিডেন্ট হয়নি। এক্সিডেন্টটা প্রি- প্লানড ছিল। আসলে সিনিয়র তার একজন সিআইডি বন্ধুর সাথে মিলেই একটা গ্যাংএর লোকেদের ব্যাপারে ইনফরমেশন কালেক্ট করছিল। যারা ড্রাগস স্লাপ্লাই দেয়। এন্ড ঐ গ্যাং এর মাথা রঞ্জিত চৌধুরীই ছিল। যেটা লাস্ট মুমেন্টে জানতে পারেন ওনারা। রাজশাহীতে একটা গোডাউন ছিল। ওখানেই কিছু প্রুভ কালেক্ট করতেই গিয়েছিল সিনিয়র। কিন্তু ওখানে গিয়েই এক্সিডেন্টটা হয়। আসল কথা হচ্ছে ওটা করানো হয়। ওনারা জানতেন যে সিনিয়র কেন গেছে ওখানে। তাই আগেই সরিয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন।”

অনিমা স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে। এর পেছনে এতো ভয়ানক ষড়যন্ত্র চলছিল? হাসান কোতয়াল বললেন,

” সেদিন আমি পাঞ্জাবী পরে ছিলাম। তাই আমার আইডি কার্ডটা খুলে দেলওয়ার নামের একজনের কাছে দিয়েছিলাম। আসলে আমি যেখানে উঠেছিলাম সেই বাড়ির বাগান দেখাশোনা করত ও। ঐদিন ওকে আমার সাথে নিয়ে বেড়িয়েছিলাম। আমার শার্টই পরেছিল ও। ওই চালাচ্ছিল বাইকটা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঐ এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিল ও। আর সবাই ভেবেছিল ওটাই আমি।”

আদ্রিয়ান আবার বলতে শুরু করল,

” আর তুমি হয়তো জানোনা আমি নিজেও একজন গ্যাং লিডার। যদিও ছিলাম না। স্টুডেন্ট লাইফে আমার এক প্রফেসর ছিলেন। খুব ভালোবাসতেন আমাকে। গ্যাংটা ওনারই ছিলো। এসব গুপ্ত গোডাউন খোঁজা, যেসব জায়গায় অবৈধ ব্যবসা হচ্ছে, নারী পাচার হচ্ছে এইসবকিছুর তথ্য গুপ্ত থেকে সংগ্রহ করাটাই এই গ্যাং এর কাজ। আমিতো শুরুতে জাস্ট হেল্প করতাম। কিন্তু স্যার নিজে হাতে তৈরী করেছেন আমাকে। ধীরে ধীরে। আস্তে আস্তে ভালো লাগতে শুরু করল কাজটা। তাই টিমের পাকাপোক্ত মেম্বার হতে সময় লাগেনি। কিন্তু বাকি মেম্বাররা আমাকে স্যারের জায়গাতেই দেখতো। আর ঐ ঘটনার পর মিস্টার সিনিয়র স্যারের কাছেই ছিল। কারণ ওনার এখানে ফিরে আসাটা রিস্কি ছিল। শুধুমাত্র ওনার জন্যে নয় তোমার জন্যেও। রঞ্জিত চৌধুরী ঐ মুহূর্তে ওনাকে পেলে ঠিক মেরে ফেলতেন। আর ওনার কথাতে তোমার খোঁজ নিয়ে তুমি তোমার মামু বাড়িতেই আছো। তাই আমরা এ ব্যাপারে তেমন মাথা ঘামাই নি। তবে বছরে দু একবার খোঁজ নেওয়া হতো তোমার। মনে হয়নি যে কোন সমস্যায় আছো। কিন্তু হঠাৎ একবার জানতে পারি তুমি ও বাড়িতেই নেই। আর থাকোও না এখন। তখন মাথায় একপ্রকার আকাশ ভেঙ্গে পরেছিল আমাদের। তোমার এমন হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে চমকেছিলাম। এটা জেনে আরও অবাক হয়েছি যে প্রায় একবছর হয়ে গেছে তুমি নিখোঁজ। এক প্রকার চিরুনী তল্লাশি চালানোর পর জানতে পারি যে তুমি রঞ্জিত চৌধুরীর বাড়িতেই ছিলে এতোদিন। কিন্তু সে চার ঘন্টা আগে তোমাকে এক পাচারকারী দলের হাতে তুলে দিয়েছে। কয়েকঘন্টার মধ্যে ওখানে পৌঁছানো সহজ হয়নি আমার পক্ষে। অফিসার সোহাগ আমার কলেজ ফ্রেন্ড ছিল। ও আমাদের ব্যাপারে সবটা জানতো। ওরই সাহায্য নিয়েছিলাম। আর ভাগ্যক্রমে ঠিক সময় পৌঁছে গেছিলাম সেদিন ওখানে। বাকিটাতো তোমার জানা।”

সবটা শুনে প্রায় অনুভূতিশূন্য হয়ে গেছে অনিমা। ওরই অজান্তে ওকে ঘিরে এতোকিছু হয়ে গেছে? আর ও জানতো অবধি না। তারমানে আদ্রিয়ানের সেদিন ওখানে পৌঁছানো, ওকে বাঁচানো কাকতলীয় ছিলোনা। আদ্রিয়ান চিনতো ওকে? দীর্ঘসময় পর এবার রিক বলল,

” বাবার রাজনীতির অনেক কাজে থাকলেও, এসব বিজনেস সম্পর্কে আমার ধারণা ছিলোনা। কিন্তু তোমার মুখ থেকে ওনাদের এসব কার্যকলাপের কথা শুনে প্রচন্ড রাগ হয়েছিল আমার। তবুও তখন কিছুই বলিনি। কিন্তু যখন আদ্রিয়ান নিজেই ওনাদের কিছু ইলিগাল বিজনেসের কথা আমায় বলল। তখন নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি। হতে পারে তাঁরা আমার বাবা, আমাদের মামা। কিন্তু তারআগে একজন ক্রিমিনাল। তাই বাকি প্রমাণ জোগাড়ের কাজটা আমিই করেছি। নিয়মিত পার্টি অফিসে গিয়ে ওনাদের পার্সোনাল ইনফরমেশন ঘেটে ঘেটে সবটা কালেক্ট করেছি। একটা করে প্রুফ হাতে আসছিল আর একটা করে ওনাদের সাধের গোডাউন বন্ধ করছিল। ওনারা সেই অজানা শত্রুকে বাইরে খুঁজে মরেছে ঠিকই। কিন্তু নিজের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখতে ভুলে গেছে। সেইজন্যই ফেঁসে গেলো। আর বাকিটাতো মাদারের কাছে ছিলো।”

অনিমা আরও একবার চমকে গেলো। মাদার? মাদারের খবরও আছে ওদের কাছে? অথচ ও এসবের কিছুই জানতো না? আদ্রিয়ান এগিয়ে এসে অনিমার কাঁধে হাত রেখে বলল,

” চিন্তা করোনা। মাদার একদম ঠিক আছে। উনি আমাদের কাছেই সুরক্ষিত আছেন। কোর্ট থেকে রায় বেড় হওয়াদ আগে ওনাকে লুকিয়েই রাখব আমরা। ওনার কিচ্ছু হবেনা। আর হ্যাঁ আমার সেই স্যার কয়েক মাস আগেই মারা গেছেন। সেজন্যই আমি আর সিনিয়র মর্গে ছিলাম সেদিন।”

অনিমা এতক্ষণ সবটা অবাক হয়ে শুনলেও এবার বাচ্চাদের মতো করে ঠোঁট ফুলিয়ে ফেলল। কাঁদোকাঁদো মুখ করে তিনজনের দিকে একে একে তাকিয়ে বলল,

” তোমরা সবটা জেনেও আমাকে কিচ্ছু বলোনি। আর আমি একের একের চমক পেয়ে গেছি শুধু।”

অনিমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিনজনই হেসে ফেলল। হাসান কোতয়াল বললেন,

” আমার ঘুম পাচ্ছে খুব। আমি গেলাম তোমরা থাকো।”

বলে উনি হাসতে হাসতেই চলে গেলেন। অনিমার দৃষ্টি পরল এবার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা আদ্রিয়ান আর রিকের দিকে। হঠাৎ করেই ওর মনে নাড়া দিল যে আদ্রিয়ান সবই জানতো! তারমানে কী রিকের ব্যাপারেও জানে? এটা কী জানে যে রিকের সাথে ওর বিয়ে ঠিক ছিল? জানলে আদ্রিয়ান কিভাবে নিয়েছে ব্যাপারটা? রিক অনিমা আর আদ্রিয়ানের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বলল,

” তোমরা গল্প করো। আমি আসছি। আমারও বেশ ঘুম পাচ্ছে।”

বলে রিক চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান বলে উঠল,

” তোর নীলপরীকে কিছু বলার নেই?”

রিক থেমে গেলো। পেছনে ঘুরে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলল,

” যা বলার ছিলো আগেই বলে দিয়েছি। এখন আর কিছু বাকি নেই।”

বলে অনিমার দিকে একপলক তাকিয়ে চলে গেল ওখান থেকে। অনিমা স্হির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারমানে আদ্রিয়ান সবটা জানে? রিকের অনুভূতি, নীলপরী ডাক সবটাই তাহলে আদ্রিয়ানের জানা? তবুও এতোটা স্বাভাবিক কীকরে আছে দুজন? শুধু মাত্র একে ওপরের ভাই বলেই কী এতো সহজে সবটা মেনে নিতে পারল দুজন? না-কি এটাই ভালোবাসা?

#চলবে…

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৫৬. [ বর্ধিতাংশ ]

রিকের চলে যাওয়ার দিকে অনিমা কিছুক্ষণ খুব মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে রইল। এরপর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখল আদ্রিয়ান শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। চারপাশটা একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে। হালকা বাতাস আসছে মাঝেমাঝে। শীত পরতে শুরু করেছে। তারই আভাস এটা। অনিমার মনের সকল সংশয় এখনো দূর হয়নি। আদ্রিয়ানের কাছে এখনো অনেক কিছু জানার বাকি আছে ওর। অনিমার দৃষ্টি সেটাই বলছে আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান ঘুরে দাঁড়িয়ে রেলিং এর ওপর হাত রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

” এটাই জানতে চাও তো যে আমি রিক আর তোমার সম্পর্কের ব্যাপার‍ে কতটা জানি?”

প্রশ্নটা করে ঘাড় ঘুরিয়ে অনিমার দিকে তাকাল আদ্রিয়ান। অনিমার মনের মধ্যে মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। কৌতূহল তার সাথে ভয়। কৌতূহল হচ্ছে সব সত্যিটা জানার জন্যে। আর ভয় হচ্ছে এটা ভেবে যে আদ্রিয়ান কোনভাবে ওকে ভুল ভাববে না তো? মনে অনেকটা সংশয় নিয়েই আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে চোখের ইশারায় বলল, হ্যাঁ ও জানতে চায়। আদ্রিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

” সবটাই! সবটাই জানি আমি। ভালোবাসতো ও তোমাকে আর এখনো বাসে। তাইনা?”

অনিমা মাথা নিচু করে ফেলল। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,

” তোমাকে ভুল বোঝার সাহস আমার নেই অনি। তাই ভয় পেওনা। তবে শুরুতেই সবটা জানতাম না। জানলে হয়তো__”

কিন্তু অনিমা কিছুই বলছেনা। শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে। আদ্রিয়ান এগিয়ে এসে অনিমার দুহাতের বাহু ধরে বলল,

” বাই দা ওয়ে। এরকম ভয়ানক একটা গ্যাং এর লিডারের সামনে দাঁড়িয়ে আছো! তোমার ভয় করছেনা?”

হঠাৎ করেই অনিমা মনে পরে গেল আদ্রিয়ান ওর কাছ থেকে এতোদিন এতো এতো কথা লুকিয়ে গেছে। কিছুই বলেনি! তারপর এ না-কি একজন গ্যাং লিডার? অথচ ও কিছুই জানতোনা? এভাবে ওকে বোকা বানিয়ে যাওয়া? আর সবটা জেনে ও এভাবে ছেড়ে দেবে! নাহ, কক্ষণো না। অনিমা এবার ভ্রু কুচকে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। অনেকটা রাগ দেখিয়ে ঝাড়ি দিয়ে ছাড়িয়ে বলল,

” এই! একদম ছোঁবেন না আমাকে। ঠকবাজ লোক একটা।”

হঠাৎ অনিমার এমন রেগে যাওয়াতে আদ্রিয়ান হতভম্ব হয়ে গেল একপ্রকার। ঠকবাজ? ও আবার কখন কাকে ঠকালো? আদ্রিয়ান কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” ঠকবাজ?”

অনিমা আরও বেশি রাগ দেখিয়ে বলল,

” একদমই তাই। ঠকিয়েছেন আপনি আমাকে। শুরু থেকেই ঠকিয়ে আসছেন। প্রথমত আপনি আমাকে বলেন অবধি নি যে আপনি আমাকে আগে থেকে চিনতেন। আপনার কাছে আব্বুর কত কাহিনী বলেছি আমি। একবারও বলেন নি এ আব্বু আপনার কাছেই ছিল। বেঁচে ছিল। আর মাদার? ওনার খবরও জানতেন আপনি অথচ কিছুই বলেন নি। আর লাস্ট বাট নট দ্যা লিস্ট, আপনি নিজের আইডেনটিটি আমার কাছ থেকে লুকিয়েছেন। আমি তো জানতাম আপনি শুধুই একজন রকস্টার! কিন্তু না! আপনিতো একজন মাফিয়া রাইট? যেটা জানার অধিকার আমার বিয়ের আগেই ছিলো! কিন্তু না! আপনি সেটা জানতে দেনই নি আমাকে। তো মিস্টার, এতো এতো কথা লুকিয়ে আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন। এটাকে কী ঠকানো বলেনা? দ্যাট মিনস আপনি একজন ঠকবাজ।”

কথাগুলো বলে অনিমা লম্বা লম্বা কয়েকটা শ্বাস নিলো। বাপড়ে! একবারে কতগুলো কথা বলে ফেলেছে। নিজেই নিজের ওপর অবাক হচ্ছে ও। আদ্রিয়ান এতক্ষণ বোকার মত তাকিয়ে অনিমার কথা শুনছিল। এরপর মাথা চুলকে বলল,

” বাপড়ে! তুমিতো আমার গত কয়েকমাসের ক্রাইম স্টোরি এনে সামনে তুলে ধরলে।”

অনিমা ভাজ করে বিরক্তি নিয়ে বলল,

“এটা শুধু ক্রাইম নয়। ভয়াবহ ক্রাইম বলে এটাকে। একটা মেয়েকে ঠকিয়ে বিয়ে করেছেন আপনি। কত আশা ছিলো আমার স্বামীকে নিয়ে আমার। কিন্তু অবশেষে সে কী বেড় হল? একটা মাফিয়া? তারওপর মিথ্যেবাদী? ঠকবাজ? কী হবে আমার এখন? আমার জীবনটাই শেষ হয়ে গেল।”

বলেই ঠোঁটে ফুলিয়ে কেঁদে ফেলল অনিমা। এটাকে একপ্রকার ন্যাকাকান্না বলে। চোখে কোন অশ্রু নেই। শুধু মুখের ভঙ্গিটাই কান্নার মতো করে রেখেছে, আর আওয়াজ করছে। আদ্রিয়ান দ্বিতীয় দফা বোকা বনে গেল অনিমার ব্যবহারে। আদ্রিয়ান এগিয়ে গিয়ে অনিমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,

” আরে বাবা আমি কোন ক্রাইম-ট্রাইম করিনা। যেগুলো করি সব ভালো কাজ। শুধু পদ্ধতিটা একটু ভুল। আর তোমাকে সবটা বলতে পারিনি তার পেছনে যথেষ্ট কারণ ছিলোরে বাবা! অনেক ঝামেলার মধ্যে গেছি আমি। নাউ স্টপ ক্রাইং।”

অনিমা আবার ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

” একদম বাহানা দিতে আসবেন না। আপনি ইচ্ছে করেই কিছু বলেন নি। ঠক, জোচ্চোর লোক একটা। আব্বুও__”

বলে আবার আওয়াজ করে কান্না করতে শুরু করে দিলো। আদ্রিয়ান পরল মহা জ্বালায়। এই মেয়ে আগেও বাচ্চা ছিলো। এখন আরও বাচ্চা হয়েছে। আদ্রিয়ান এবার নিজেও একটু বিরক্তি হল। কিন্তু নিজের বিরক্তি দমন করে বিচলিত কন্ঠে বলল,

” আচ্ছা হয়েছেটা কী? এভাবে ন্যাকাদের মতো কাঁদছো কেন? আমি কী তোমার সাথে কিছু করেছি? এইটুকুর জন্যে এভাবে__”

অনিমার মনে মনে বেশ লাগছে ব্যাপারটা। ওর কাছ থেকে এতোকিছু লুকানো? এবার বুঝুক মজা। তাছাড়া ওদের বিয়ের পর এখনো কোন ঝগড়া করা হয়নি। এই সুযোগে একটু ঝগড়াও করে নেওয়া যাবে। ও নিজের শুকনো চোখ মোছার ভান করে এরপর কোমরে হাত দিয়ে বলল,

” হ্যাঁ এখনতো আমার কান্না ন্যাকা ন্যাকাই লাগবে। আর এইটুকু হ্যাঁ? আপনার কাছে যেটা এইটুকু আমার কাছে সেটা অনেক কিছু। আপনি আগা টু গোড়া পুরোটাই ঠক। আমি এমন ঠকবাজের সাথে থাকব না। করবনা আপনার সাথে সংসার। আমি কালকেই আব্বুকে বলব আই ওয়ান্ট ডিভোর্স। হ্যাঁ আমার ডিভোর্স চাই।”

আদ্রিয়ান এবার রেগে গেল অনেকটা। ডিভোর্সের কথা শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো ওর। রক্তিম চোখে অনিমার দিকে তাকিয়ে ওর দুবাহু শক্ত কে টেনে নিজের কাছে এনে বলল,

” এই মেয়ে সমস্যা কী তোমার? ডিভোর্স কী হ্যাঁ! ডিভোর্স কী? এই সামান্য ব্যাপারে কেউ ডিভোর্সের কথা বলে? বিয়েটা কী এতোই সহজ? আর তুমি ভাবলে কীকরে তুমি বললেই আমি ডিভোর্স দেব? ঠ্যাং ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রেখে দেবো একেবারে। স্টুপিড।”

অনিমা বেশ আদ্রিয়ান চোখমুখ আর রাগ দেখে অনেকটা ভয় পেলেও সেটা প্রকাশ না করে তোতলানো কন্ঠে বলল,

” একদম রাগ দেখাবেন না আমাকে। আমার কথায় দেবেন না। কিন্তু আব্বুর কথায় তো দেবেন? আমি আব্বুকে ঠিক মানিয়ে নেব।”

আদ্রিয়ান ভাবল সত্যিই এর বাপ যেই পরিমাণ মেয়ে পাগল। মেয়ের ন্যাকা কান্না দেখে রাজি হয়েও যেতে পারে। আর হাসান কোতয়ালেকে উপেক্ষা করতে পারবেনা ও। মোটকথা বাপ রাজি হওয়া মানেই ওর কপাল পুড়বে সেটা সুনিশ্চিত। তাই রাগ না কমলেও অনেক কষ্টে নিজের রাগটুকু নিয়ন্ত্রণ করে আলতো করে অনিমার গালে হাত রেখে বলল,

” জানপাখি? এইটুকুর জন্যে কেউ ডিভোর্সের কথা বলে হ্যাঁ? আর তাছাড়া আমাদের বিয়ের একবছরও হয়নি এখনো ইয়ার। তোমাকে অফিশিয়ালি এখনও নিজের ঘরে অবধি তুলতে পারিনি। এরমধ্যেই ডিভোর্স? লোকে কী বলবে বল? দ্যা গ্রেট রকস্টার এডির প্রথম বউ তাকে বিয়ের কয়েকমাস পরেই ডিভোর্স দিয়ে চলে গেল? সো স্যাড না?”

অনিমা জেদ ধরে বলল,

” এসব বলে আমায় মানাতে পারবেন না। আমি আব্বুকে বলবোই।”

আদ্রিয়ান আবারও নরম স্বরে বলল,

” আবার বাচ্চামো করে। আরে বাবা তুমি বড় হয়েছো না? সবকথায় আব্বুকে টানার কী দরকার? আব্বু আব্বুর মত থাকুক না। লক্ষ্মী বউ আমার, এমন করেনা সোনা।”

অনিমা সেসবে তোয়াক্কা না করে আদ্রিয়ানকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

” ডোন্ট টাচ মি। আপনি এখন থেকে আমার এক্স স্বামী বুঝলেন? আপনাকে আমি ডিভোর্স দিচ্ছি। মনে মন অলরেডি দিয়েও ফেলেছি। বাই।”

বলে উল্টো ঘুরে অনিমা ঠোঁট চেপে একটু হাসলো। তারপর হনহনে পায়ে চলে গেল। আদ্রিয়ান বলল,

” আরে আমার কথাটাতো শুনে যাও?”

কিন্তু কে শোনে কার কথা? অনিমা চলে গেল নিচে। আদ্রিয়ান হতাশভাবে দাঁড়িয়ে রইল। পুরো ব্যাপারটাই মাথার অনেকটা ওপর দিয়ে গেল ওর। এই মেয়ের হঠাৎ হলোটা কী?

এরপরের দিন সকালে হাসান কোতয়ালের সাথে অনিমা আবার চলে গেল ওর নিজের বাড়ি। এরমধ্যে আদ্রিয়ান আর কথা বলতে পারেনি। আসলে অনিমাই সুযোগটা দেয়নি।

________

দেখতে দেখতে একমাসের মতো কেটে গেছে। কয়েকদিন আগেই কোর্টে ফাইনাল হিয়ারিং ছিলো। যতরকমের ইনফরমেশন ছিলো সব কিছু ভালো করে খুঁটিয়ে দেখার পর দেখা গেছে বেশিরভাগ ব্যবসাই রঞ্জিত চৌধুরী লোকেরা সামলাতেন। প্রমাণ অনুযায়ী তারাই অবৈধ মারামাল ঢুকিয়েছে ব্যবসাতে। রঞ্জিত চৌধুরী অধিকাংশ সম্পর্কেই জানতেন না। ওনার পক্ষের উকিল এটাই প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু যেহেতু ব্যবসা ওনার সুতরাং উনি এটার দ্বায় এড়াতে পারবেন না। তাই ওনার দুই বছরের জেল হয়েছে। তারসাথে ওনাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। অবাক করা ব্যাপার ছিলো। কোন ডকুমেন্টেই কবির শেখের ইনভলমেন্টের কোন প্রমাণ ছিলোনা। কারণ উনিতো শুধু রঞ্জিত চৌধুরীকে চালাতেন। কাজগপত্র কিছুই ওনার নামে নয়। তাই ওনাকে মুক্তি দিয়ে দেওয়া হয়। আদ্রিয়ান, রিক, হাসান কোতয়াল কেউই তেমন অবাক হয়নি। ওরা জানতো এরকমই হবে। ওদের উদ্দেশ্য ছিল আপাতত কিছুদিনের জন্যে ওই দুজনকে থামিয়ে দেওয়া। যেটা ওরা করতে পেরেছে। কবির শেখ মুক্ত থাকলেও, পাওয়ার ছাড়া আপাতত উনি কিছুই করতে পারবেনা। সুনানির পরপরই কবির শেখ বেড়িয়ে কোথাও একটা চলে গেছিল। কারো সাথেই দেখা বা কোন কথা বলেন নি। কিন্তু বাড়ির সকলে জানতো উনি এসবের সাথে জড়িত থেকেও মুক্তি পেয়ে গেলেন।

রাতটা দেড়টা বাজে। অনিমা একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে নিয়ে চুপচাপ বসে বসে পড়ছে। প্রচন্ড শীত পরেছে। এক মাস পর পরীক্ষা তাই একটু পড়াশোনা করে নিচ্ছে। এই একমাসে আদ্রিয়ানের সাথে একপ্রকার তুমুল ঝগড়া করে গেছে ও। ঠিকভাবে কথাই বলেনা। যতটুকু কথা হয় একটা কথাই বলে, ‘ডিভোর্স!’ আর হাসান কোতয়ালকে বলেতো আদ্রিয়ানের এ বাড়িতে আসাটাকে নিষিদ্ধ করেই দিয়েছে। পড়ার চোখ ভেঙ্গে আসছে ঘুমে অনিমার। তাই টেবিলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করল কিছুক্ষণের জন্যে। চোখ লেগেই আসতে নিলেই ও ভাবল যে না এবার বিছানাতেই গিয়ে শুয়ে পরা যাক। রাতও অনেক হয়ে। কিন্তু চোখ খুলেই এমন কিছু দেখবে সেটা মোটেও আশা করেনি। আদ্রিয়ান গালে হাত দিয়ে শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ও প্রথমে ভাবল যে হ্যালুসিনেট করছে হয়তো। তাই চোখ ঝাপটা দিতে শুরু করল। আদ্রিয়ান বলল,

” এভাবে চোখ ঝাপটালে চোখ কোটর ছেড়ে বাইরে বেড়িয়ে চলে আসবে। আমি সত্যিই এসছি। ভ্রম নয়।”

অনিমা হতভম্ব চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। মুহূর্তেই সব ঘুম পালিয়ে গেলো ওর। অবাক কন্ঠে বলল,

” আপনি এখানে কীকরে এলেন?”

আদ্রিয়ান চোখেল ইশারায় ব্যালকনির দিকে দেখালো। অনিমা উঠে দাঁড়িয়ে একপ্রকার দৌড়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখল যে ব্যালকনির সাথে মৈ হেলান দিয়ে রাখা। আর নিচে ওদের দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে। অনিমাকে দেখেই দাঁত বেড় করে একটা হাসি দিলো সে। আদ্রিয়ানও ব্যালকনিতে এসে দারোয়ানকে বলল,

” কাকা! আপাতত কজ শেষ। তুমি আসতে পারো।”

উনি এবারও দাঁত বেড় করে হেসে মাথা নেড়ে চলে গেলেন। আদ্রিয়ান আবার ভেতরে চলে গেল। বিছানায় গিয়ে আয়েশ করে বসলো।অনিমা এবার ভেতরে গিয়ে আদ্রিয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলল,

” আপনি এখানে কী করছেন হ্যাঁ?”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকাল একপলক। এরপর হ্যাঁচকা টান দিয়ে ওকে নিজের কোলে বসিয়ে দিল। অনিমা চোখ বড়বড় করে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই আদ্রিয়ান ওর কোমর শক্ত করে চেপে ধরে বলল,

” সমস্যা কী তোমাদের হ্যাঁ? বাপ-বেটি মিলে আমাকে মার্ডার করার প্লান করেছো না-কি? যা ইচ্ছা করে যাচ্ছো? তোমার ধারণা আছে আমার দিনগুলো কীভাবে কাটছে? রোজ তোমাকে না দেখলে, তোমার গলার আওয়াজ না শুনলে আমার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় সেটা বোঝ তুমি? কেন বুঝবে? তুমিতো আর আমায় ভালোবাসোনা। শুধুমাত্র আমিই বাসি। একদম দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল আমার। মরে যাচ্ছিলাম। একটুও মায়া হয়না আমার জন্যে?”

অনিমা থমকে গেল একদম। এবার ও ভালোভাবে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে, গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িয়েগুলো হালকা ঘন হয়েছে, চোখটা লালচে হয়ে আছে। জ্যাকেট খুলে কোমরে বেঁধে রেখেছে কিন্তু এই শীতেও টিশার্ট হালকা ভেজা। চোখমুখ শুকিয়ে একদম ক্লান্ত লাগছে আদ্রিয়ানকে। অনিমা আদ্রিয়ানকে এভাবে দেখে কেঁদেই ফেলল। আদ্রিয়ান অনিমাকে কাঁদতে দেখে ক্লান্ত কন্ঠে বলল,

” আরে পাগলী কাঁদছো কেন? আমিতো জাস্ট এমনিই বলেছি। আচ্ছা তুমি আবার রাগ করো আমার ওপর কিন্তু কেঁদোনা প্লিজ।”

অনিমা সাথেসাথেই জড়িয়ে ধরল আদ্রিয়ানকে। ওর বুকে মুখ গুজে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিয়ে বলল,

” এতো কেন ভালোবাসেন আমায়? আমি খুব খারাপ। সবসময় কষ্ট দেই আপনাকে তাইনা?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

” আমিতো তোমারি। যত ইচ্ছে কষ্ট দাও। কিন্তু যা করবে কাছে থেকে করবে। কখনও দূরে যাওয়ার কথা ভাববেও না।”

অনিমা অস্ফুট স্বরে বলল,

” কীকরে যাবো? আপনিতো আমার স্মৃতির প্রতিটা পাতায় আছেন। যে স্মৃতি জুড়ে থাকে তার থেকে দূরে যাওয়া যায়না।”

#চলবে…

[ রি-চেইক করা হয়নি।]

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৫৭.

অনিমার কথা শুনে আদ্রিয়ান কিছুক্ষণের জন্যে থমকে গেলো। ওর হাত আলগা হয়ে এলো। কিছুক্ষণের জন্যে যেন জমে এলো ওর শরীর। অনিমা আদ্রিয়ানের বুকে মুখ গুজে রেখে দিয়েছে তাই বুঝতে পারছেনা। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারবে আমায়?”

অনিমা ভ্রু কুচকে ফেলল। আদ্রিয়ানের বুক থেকে মুখ তুলে বলল,

” এভাবে কেন বলছেন?”

আদ্রিয়ান অনিমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। এরপর ওর মাথাটা আবার নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল। বুক ভরে একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,

” কিছুনা। জানো কতটা মিস করছিলাম। দুপুরের পরে শো করতে গেছিলাম। যেতে সাড়ে তিন ঘন্টা, শো এ নষ্ট হয়েছে দু ঘন্টা, ফিরতে সাড়ে তিন ঘন্টা। এরমাঝে এক সেকেন্ডও রেস্ট করিনি। এরপর সোজা চলে এসেছি এখানে। আজকে তোমাকে দেখতে না পেলে মরেই যেতাম।”

অনিমা কিছু বলল না, শুধু হালকা ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। আদ্রিয়ানও কোন শব্দ না করে অনিমার চোখ মুছে দিচ্ছে। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে অনিমা মাথা তুলে তাকিয়ে বলল,

” আপনি তাহলে নিশ্চয়ই দুপুরের পর থেকে আর কিচ্ছু খান নি?”

আদ্রিয়ান না বোধক মাথা নাড়ল। অনিমা অসহায় দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। এরপর অস্হির কন্ঠে বলল,

” এইজন্যই আপনাকে এরকম লাগছে। এতক্ষণ না খেয়ে থাকে কেউ? আপনি বসুন আমি এক্ষুনি আসছি।”

অনিমা আদ্রিয়ানের কোল ছেড়ে উঠে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে ফেলল। এরপর ভ্রু কুচকে বলল,

” এতোরাতে কিচেনে তেমন কোন খাবার পাবেনা, জানপাখি! চুপচাপ বসো। আমার ক্ষিদে পায়নি। শুধু তুমি কাছে থাকলেই হবে।”

অনিমা কপট রাগ দেখিয়ে হাত ছাড়িয়ে বললেন,

” আপনার রোমান্টিক ডায়লগ আপাতত আপনার পকেটে রাখুন। একদম চুপচাপ এখানে বসে থাকবেন আমি আসার আগ পর্যন্ত একদম নড়বেন না বলে দিচ্ছি।”

বলে অনিমা হনহনে পায়ে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে। এরপর আস্তে আস্তে কিচেনে গিয়ে পরলো আরেক মুশকিলে। রান্নাকরা খাবার শেষ। এখন কিছু করেই দিতে হবে। মাছ বা মাংস রান্না করা অনেক সময়ের ব্যাপার। লোকটা এতক্ষণ না খেয়ে থাকবে? অনিমা একটু ভেবে দ্রুত কয়েকটা পরোটা আর বেশ ঝাল করে আলুর তরকারি করল। আদ্রিয়ান ঝাল খেতে বেশ ভালোবাসে। রান্না করে খাবারটা নিয়ে আস্তে আস্তে আবার নিজের রুমে গিয়ে দেখল আদ্রিয়ান আসাম করে বসে আছে। ওপরের টিশার্ট খুলে ফেলেছে। অনিমার আসার আওয়াজ পেয়ে আদ্রিয়ান তাকালো অনিমার দিকে। কী করে এসছে সেটাই বোঝার চেষ্টা করছে। অনিমা গম্ভীর মুখে দরজা লাগিয়ে আদ্রিয়ানের সামনে এসে বসল। ঢাকনা সরাতেই আদ্রিয়ান বলল,

” এতোরাতে এগুলো কোথায় পেলে? রান্না করেছো? কী দরকা___”

অনিমা চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আদ্রিয়ান থেমে গেলো। এই মেয়ে কবে থেকে আবার ওকে চোখ রাঙাতে শুরু করলো? তবে বউয়ের চোখ রাঙানী খাওয়ার এক্সপিরিয়েন্সটা মন্দ নয়। অনিমা চুপচাপ পরোটা ছিড়ে আলু দিয়ে আদ্রিয়ানের মুখের সামনে ধরল। আদ্রিয়ান একটু অবাক হলেও অনেক খিদে পেয়েছে তাই চুপচাপ অনিমার হাতেই খেতে শুরু করে দিলো। আদ্রিয়ান একদম শান্ত-ভদ্র বাচ্চার মতো আসাম করে বসে অনিমার হাতে খাচ্ছে। আল অনিমা গম্ভীর মুখ করে ওকে খাইয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ অনিমা বলল,

” এমন করে কেউ? সেই দুপুর থেকে এখন অবধি কত ঘন্টা জানেন? এমনিতেতো টাইমের খুব হিসেব রাখেন। এমনিতেই আপনার সুগার ফল হয়। যদি কিছু হয়ে যেতো? সবকিছুতেই আপনার অতিরিক্ত কিছু করা লাগবে। নিজেকে সবসময় স্পেশাল এন্ড এক্সেপশনাল দেখাতে হবে। ঐ ডায়লগটার মত, প্রাণ যায় পার এটিটিউড না যায়। আর ভুগতে হয় আমাকে।”

আদ্রিয়ান মুচকি মুচকি হাসছে আর বউয়ের শাসন উপভোগ করছে। আদ্রিয়ানকে হাসতে দেখে অনিমা রেগে বলল,

” একদম হাসবেন না বলে দিচ্ছি। মজা হচ্ছে না?”

আদ্রিয়ান সাথেসাথেই মুখটা সিরিয়াস করে নিয়ে বলল,

” আমি কী হাসছি? কই নাতো! আমিতো খাচ্ছি।”

অনিমা আর উত্তর দিলোনা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আদ্রিয়ান বলল,

” আজকে না তোমাকে একদম বউ বউ লাগছে, বউ!’

আদ্রিয়ানের বউ ডাকটা অনিমার মধ্যে হালকা কাঁপন ধরালেও ও বিরক্ত হওয়ার ভান করে বলল,

” তো এতোদিন কী বোন বোন লাগতো না-কি?”

” না। এতোদিন প্রেমিকা, প্রেমিকা লাগত। একদম পিওর প্রেমিকা ইউ নো।”

অনিমা আর কথা না বাড়িয়ে মুখ ফুলিয়ে রেখে আদ্রিয়ানকে খাওয়ানো শেষ করল। এরপর বিছানা করে নিলো। কারণ ও জানে এই ছেলে আজ রাতে আর যাবেনা। অনেক রাত হয়েছে তাই কথা না বাড়িয়ে দুজনেই শুয়ে পরল। আজ আদ্রিয়ান বলার আগেই অনিমা ওর বুকে মাথা রেখে শুয়েছে। এতোদিন পর আদ্রিয়ান অনিমাকে কাছে পেয়ে কিছু বলনি না শুধু শক্ত করে বুকে জড়িয়ে রেখে দিয়েছে।

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অনিমা দেখলো আদ্রিয়ান ওর পাশে নেই। আর ব্যালকনির দরজা খোলা। ঘুম ঘুম চোখেই দ্রুত ব্যালকনিতে গিয়ে দেখলো মই টাও সরিয়ে রাখা। বুঝতে পারল যে ভোর ভোরই আদ্রিয়ান চলে গেছে। এখন ওরও ভালো লাগছে না। কবে শেষ হবে এই পরীক্ষা? আর ওর অপেক্ষাই বা কবে শেষ হবে।

________

সকাল সকাল স্নান করে জাবিন কাপড় মেলে দিতে ছাদে এসছে। কিন্তু ছাদে এসে দেখে অভ্র ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। এতো সকাল সকাল এভাবে নিরবে এসে কার সাথে কথা বলছে ভাবতেই কপাল কুচকে এলো ওর। এই কয়েকমাসে একটু একটু দুর্বল হয়ে পরেছে অভ্রর প্রতি। এখন এটা শুধু দুর্বলতা নয়। ও এখন এটা নিশ্চিত যে ভালোবেসে ফেলেছে ও অভ্রকে। কাপড় মেলতে মেলতে বারবার সরু চোখে দেখছে অভ্রকে। কিন্তু অভ্রর সেদিকে খেয়াল নেই ও একমনে কথা বলে চলেছে। এতো মনোযোগ? কার সাথে কথা বলছে? গার্লফ্রেন্ড? জাবিন আর ধৈর্য্য রাখতে পারল না। কাপড় মেলা শেষ করে জাবিন হাত ঝাড়তে ঝড়তে অভ্রর পেছনে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালো! অভ্রর কথা ততক্ষণে শেষ। ও ‘আচ্ছা বাই’ বলে ফোনটা রেখে পেছনে ঘুরতেই চমকে উঠল। পরে যেতে নিয়েও পিলার ধরে নিজেকে সামলে নিলো। কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থেকে গলা ঝেড়ে বলল,

” এভাবে সামনে এসে দাঁড়ায় কেউ? আরেকটু হলেতো আমার ওপরের টিকিট বুকড হয়ে যেতো।”

অভ্রর কথায় কোনরকম কর্ণপাত না করে জাবিন বলল,

” কার সাথে কথা বলছিলেন?”

অভ্র একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে তারপর জাবিনের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

” সেটা জেনে তুমি কী করবে?”

” গার্লফ্রেন্ড?”

জাবিনের কথা শুনে অভ্রর ভ্রু আরও কুচকে গেল। ইদানীং মেয়েটা ওর পেছনে বেশিই ঘুরঘুর করছে। ওর যেটা মনে হচ্ছে, ও যেটার ভয় পাচ্ছে সেটা হলে ভীষণ সমস্যা। ও আবার একটু গলা ঝেড়ে বলল,

” যদি হয়েও থাকে। তো? আমার গার্লফ্রেন্ড থাকতে পারেনা।”

হঠাৎ করেই জাবিন একটা ভয়াবহ কাজ করে বসল। অভ্রর টিশার্টের কলার ধরে বলল,

” না, থাকতে পারবে না। তোমার কোন গার্লফ্রেন্ড থাকবে না। আর যদি থেকে থাকে এখনই সব ডিসমিস করে দাও। আমি ছাড়া অন্যকারো দিকে তাকালে না চোখ তুলে ফেলবো একদম। আমি কোন ন্যাকামি ট্যাকামি করতে পারব না। তাই ডিরেক্টলি বলছি, আই লাভ ইউ। সো এসব গার্লফ্রেন্ড এন্ড অল সব ঝেড়ে ফেলে দাও। একদম ঝেড়ে ফেলে দাও।”

বলে অভ্রর কলার ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। অভ্র অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল জাবিনের যাওয়ার দিকে। এটা মেয়ে না অন্যকিছু? কিন্তু রেগে গেলে দারুণ লাগে তো! দূর! কী ভাবছে এসব ও? চোখ বন্ধ করে বড় বড় দুটো শ্বাস নিয়ে অভ্র বলল,

” কন্ট্রোল অভ্র! কন্ট্রোল!”

__________

দেখতে দেখতে আরও দুটো মাস কেটে গেছে। অনিমার পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। সব ঝামেলা মোটামুটি শেষ। শীতকাল কেটে গিয়ে আবারও বসন্ত এসেছে। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হচ্ছে আবার। সবকিছু বদলে গেলেও বদলায় নি ওদের জীবনযাত্রা। অনি-আদ্রিয়ান এখনো বেশ লম্বা দূরত্বেই আছে। সীমিত যোগাযোগ, আর সাক্ষাৎ এতেই ওদের দিন কেটেছে। রিক ওপর দিয়ে একদম স্বাভাবিক হলেও ভেতর ভেতর এখানো গুমরে মরে। তবে স্নিগ্ধার সংস্পর্শে ওর কষ্টগুলো অনেকটাই লাঘব হয়ে যায়। বাকি সব সম্পর্কের সমীকরণও একই রকম আছে। তবে কবির শেখকে ওরা দেখতে পায়নি, আর কোথায় আছে সেটাও জানেনা। তবে আপাতত ওরা সেটা নিয়ে মাথাও ঘামাচ্ছেনা কোনরকম।

মিসেস রিমার আজ প্রচন্ড শখ হয়েছে বাড়ির সবাইকে একসাথে আনতে। নিজে রান্না করে খাওয়াবে। তাই আবরার মেনশনে অনেকদিন পর আজ আবারও সবাই ইনভাইটেড হয়েছে। অনিমা আর আদ্রিয়ানের বন্ধু বান্ধবদেরও। অনিমার মামা-মামি অর্ককেও বলা হয়েছে। হাসান কোতয়ালের কঠোর ব্যবহারে ওনাদের অবস্থা শোচনীয়। এমন মনে হচ্ছে যেন পাঁচ বছরের জমে থাকা সব রাগ মেটাচ্ছেন ওদের ওপর।

রাতে বেশ ভরপেট খাওয়াদাওয়া করার পর ওরা সবাই ছাদে গিয়ে বসেছে কিছুটা আড্ডা দিতে। এরমধ্যে আরেকটা খুশির খবর হচ্ছে রাইমা প্রেগনেন্ট। মানে আদিব বাবা হতে চলেছে। এটা নিয়ে সবার হৈ হুল্লোড়ে রাইমা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিল একদম। আদ্রিয়ান গিটার নিয়ে গান গাইছে সবাই বেশ চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে শুনছে। তীব্র-স্নেহা আজ বেশ মাখোমাখো মুডে আছে। কারণ কালকেই ওদের প্যাচ আপ হয়েছে। আশিস বারবার অরুমিতার দিকে আড়চোখে তাকালেও অরুমিতা ভুল করেও তাকাচ্ছেনা। কিন্তু ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড অস্হির লাগছে ওকে। নাহিদ গান শুনতে শুনতে তনয়ার সাথে চ্যাট করছে। অনিমা, রিক, স্নিগ্ধা তিনজনেই চুপচাপ গান শুনছে। বেশ অনেকক্ষণ হাসি-ঠাট্টা করার পর আস্তে আস্তে সব চলে গেলো নিচে। তখনও আদ্রিয়ান, অনিমা, রিক আর স্নিগ্ধা আছে। এরমধ্যে আদ্রিয়ান বলে উঠল,

” রিক, তুই হসপিটাল জয়েন করছিস কবে?”

রিক চমকে উঠল। কিছুক্ষণ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে অপ্রস্তুত হয়ে পরল বেশ। স্নিগ্ধা বলল,

” দু-মাস যাবত বুঝিয়ে যাচ্ছি কিন্তু শুনছেই না।”

অনিমা একবার রিকের দিকে তাকালো। কেন জানি মাঝেমাঝে এসবের জন্যে ওর নিজেকে দায়ী মনে হয়। যেখানে ও নিজেই পরিস্থিতির স্বীকার। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ রিকের দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে গিয়ে ওর পাশে বসলো। এরপর বলল,

” কোনকিছুর জন্যে নিজের প্যাশেনকে ছাড়তে নেই। যখন তোর পাশে কেউ থাকবেনা। একদম একা হয়ে যাবি। তখন এই একটা জিনিস তোর সাথে সবসময় থাকবে, প্যাশন! এটাকে ছাড়িস না।”

রিক একপলক তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। এরপর মুচকি হেসে বলল,

” আরেকটু সময় লাগবে।”

আদ্রিয়ান চট করেই খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল রিককে। কয়েক সেকেন্ড পর রিকও ধরল। অনিমা আর স্নিগ্ধা দুজনেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে এই দুজনকে। এই দুই ভাইয়ের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার জন্যে অনেকগুলো বিশাল বিশাল কারণ ছিলো। কিন্তু ওরা একটা কারণকেও ওদের সম্পর্কের মধ্যে জায়গা পেতে দেয়নি। এরকমটাই হওয়া উচিত। সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কারণগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে সম্পর্কটাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আর এটার জন্যেই হয়তো এতো কিছুর পরের ওদের দুই ভাইয়ের বন্ধন এখনো মজবুত।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে