বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব-৬২+৬৩

0
1579

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৬২.

সকালের মিষ্টি মৃদু রোদের আলো চারপাশে ছড়িয়ে পরেছে। সারারাত বৃষ্টি হয়েছিল তাই সকালটা একটু বেশিই উজ্জ্বল। থাই গ্লাস দিয়ে আসা আলোয় রোদের সেই উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পরেছে আদ্রিয়ানের রুমে। অনিমা গোসল করে বের হয়ে দেখে আদ্রিয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে। অনিমা চুল থেকে টাওয়েল টা সরিয়ে চেয়ারে মেলে রেখে আস্তে আস্তে গিয়ে আদ্রিয়ানের বরাবর ফ্লোরে বসল। আদ্রিয়ান খালি গায়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে, চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপাল অবধি পরে আছে, খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির সাথে এই এলোমেলো রূপ, বেশ লাগছে দেখতে। একদম ইনোসেন্ট। অনিমা মুচকি হেসে আদ্রিয়ানের চুলে হাত বুলিয়ে, কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। চোখ বন্ধ রেখেই আদ্রিয়ান ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে হাসল। চোখ না খুলেই বলল,

“একটা অবলা ছেলেকে এভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় পেয়ে সুযোগ নিচ্ছো? এটা কী ঠিক, জানপাখি?”

অনিমা হালকা চমকে উঠল। আদ্রিয়ান জেগে ছিল? ও বুঝতেই পারল না? কী সাংঘাতিক লোক! ও মুখটা কাচুমাচু কর‍ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

” সাড়ে আটটা বেজে গেছে। আজ না আপনি স্টুডিওতে যাবেন? আমাকেও তো ভার্সিটিতে ড্রপ করে দেবেন না-কি। উঠুন লেট হয়ে যাবে।”

বলে চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরে টেনে নিজের বুকের ওপর ফেলে দিলো। অনিমা প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে।আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

” সকালটা বউয়ের এমন মিষ্টি আদর দিয়ে শুরু হল। বউকে আদরটা রিটার্ন না করলে খুব খারাপ দেখাবে ব্যাপারটা।”

বলে আদ্রিয়ান অনিমার গালের কাছে থেকে ভেজা চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে শব্দ করে একটা চুমু দিল। এরপর অনিমার নাকে নাক ঘষে বলল,

” এবার ঠিক আছে।”

অনিমা চোখ ছোট ছোট করে কিছুক্ষণ আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

” আপনি দিন দিন চরম অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন রকস্টার সাহেব।”

” বউয়ের সাথে করব না তো কী অন্যকারো সাথে করব?”

অনিমা আদ্রিয়ানের পেটে হালকা আঘাত করে বলল,

” মেরে ফেলব কিন্তু!”

আদ্রিয়ান শব্দ করে হেসে দিল। অনিমা গাল ফুলিয়ে আদ্রিয়ানের তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে।

_______

ন’টার দিকে আবরার মেনশনে সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট টেবিলে খেতে বসছে। সবাই বসার পর অভ্র এসে বসল। সবাই টুকটাক কথা বললেও অভ্র অনেকটা চুপচাপ বসে আছে চোখমুখ শুকনো দেখাচ্ছে। যেটা আদ্রিয়ানের চোখ এড়ায়নি। কারণ ও অভ্রকে খুব ভালোভাবেই চেনে। গত দুই সপ্তাহ যাবতই দেখে আসছে, অভ্র আগের মত কথাবার্তা বলছে না। তাই কথার মাঝে বারবার অভ্রর দিকে তাকাচ্ছিল। কিন্তু জাবিন এখনো নামেনি আজ। মিসেস রিমা কয়েকবার ডাকার পর জাবিন নিচে নেমে এলো। রোজকার মত ওর চোখ দুটো আজও লালচে হয়ে আছে। মিসেস রিমা বললেন,

” কী ব্যাপার? কয়েকদিন যাবত দেখছি প্রায়ই সকালবেলা তোর চোখ লাল হয়ে থাকে। কী হয়েছে?”

কথাটা শুনে সবাই তাকাল জাবিনের দিকে। কিন্তু অভ্র তাকায় নি। জাবিন একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

” তেমন কিছু না মা। আসলে কয়েকদিন যাবত একটু রাত জেগে পড়ছিতো তাই।”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলল,

” কীসের পড়া? এখনো তো এডমিশনই নিস নি।”

” আরে টেক্সট বুক না গল্পের বই পড়ছিলাম আরকি।”

বলে জাবিন দ্রুত খাওয়ায় মনোযোগ দিল। আদ্রিয়ান আর কিছু বলল না। অভ্র এবার একপলক তাকাল জাবিনের দিকে। সেদিন ছাদে অভ্র ভালোবাসার কথা বলার পর জাবিন থমকে গেছিল কিছুক্ষণের জন্যে। ও তো বিশ্বাসই করতে চায়নি যে অভ্র কারো কাছে কমিটেড। ও কিছুক্ষণ স্হির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলেছিল,

” তুমি মিথ্যে বলছো।”

অভ্রর সোজাসাপ্টা উত্তর ছিল যে,

” তোমাকে শুধু শুধু মিথ্যে বলার কোন কারণ নেই আমার কাছে। আমি সত্যিই কমিটেড।”

জাবিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সেখান থেকে সরে আসে ও। এরপর দুদিন চলে যায়। এই দুদিন জাবিন অভ্রর সাথে কয়েকবার কথা বলেছে কিন্তু অভ্র শুনেও শোনেনি, আবার কখনও বলতে চাইলেও অভ্র জাবিনকে সেই সুযোগটা দেয়নি। রাতে বাড়ি ফিরে অভ্র ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখে জাবিন বসে আছে ওর বিছানায়। জাবিনকে এভাবে নিজের রুমে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে জিজ্ঞেস করেছিল, এখানে কী করছে? জাবিন সেদিন পাগলামোর সব সীমা পেরিয়ে গেছিল। পাগলের মত কান্নাকাটি করছিল। বারবার অভ্রকে জড়িয়ে ধরে শুধু একটা কথাই বলছিল, শুধু একবার বল তুমি মিথ্যে বলছ। এরকম হতে পারেনা। তুমি অন্যকারো হতে পারোনা। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো। ভালোবাসি আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি!” অভ্র কোনভাবেই বোঝাতে পারছিল না জাবিনকে। শেষে বাধ্য হয়েই একটা চড় মেরে দেয় জাবিনের গালে। জাবিন একদম চুপ হয়ে যায়। অভ্র ঝাঝালো কন্ঠে বলেছিল,

” লজ্জা করছেনা তোমার? আমি বারবার বলছি আমি কমিটেড, কেউ আছে আমার জীবনে তবুও তুমি এসব বলছ? আর হঠাৎ তুমি তুমি কেন করছ? পার্মিশান নিয়েছ আমার? আমি তোমার ভাইয়ের পিএ তোমার না। কতবার বলব? তুমি আদ্রিয়ান আবারার জুহায়েরের বোন জাবিন! এরকম হ্যাংলামো তোমাকে মানায় না। প্লিজ যাও এখান থেকে। যাও!”

জাবিন কিছুক্ষণ চুপচাপ অভ্রর দিকে তাকিয়ে থেকে বেরিয়ে এসছিল রুম থেকে। এরপর ও আর ইচ্ছাকৃত অভ্রর সামনে যায়নি। আর না কোন কথা বলেছে। দু সপ্তাহেই চেহারাটাই বদলে গেছে মেয়েটার। নিজেরই খারাপ লাগছে এখন অভ্রর। অপরাধবোধ হচ্ছে ভীষণ। কিন্তু এটাই ভালো হয়েছে। কদিন হয়তো কষ্ট পাবে। এরপর এমনিই সব ঠিক হয়ে যাবে।

________

অনিমাকে ভার্সিটি ড্রপ করে দিয়ে সোজা স্টুডিওতে গেল আদ্রিয়ান। ওখানে আদিব?আশিস আর নাহিদ আগে থেকেই বসে ছিল। আদ্রিয়ান আগে নিজের নতুন গানের রেকর্ডিং টা সেরে নিল। বরাবরের মত আদ্রিয়ানের এবারের পার্ফরমেন্সেও ডিরেক্টর বেশ খুশি হল। লাঞ্চ করার জন্যে ওদের বসানো হয়েছে ওখানেই। ওরা তিনজন হাসি আড্ডায় মেতে থাকলেও আশিস একটু অন্যমনস্ক আছে। আদ্রিয়ান কথা থামিয়ে আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল,

” কয়েকমাস যাবতই খেয়াল করছিস এমন দেবদাস টাইপ হয়ে বসে থাকিস হঠাৎ হঠাৎ। সমস্যা কী?”

আশিস একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

” কী আর সমস্যা হবে এমনিই।”

আদিব বলল,

” বললেই হলো এমনি? তোকে চিনিনা আমরা? তুই এরকম মোটেই ছিলিস না।”

নাহিদ বলল,

” সেটাই আমি ইউ এস থেকে ফিরে একদম অন্যরকম আশিসকে দেখছি। সমস্যা কোথায়?”

আদ্রিয়ান চোখ ছোট ছোট করে বলল,

” শোন, আমার শুরু থেকেই তোর কিছু কিছু কার্যকলাপ পছন্দ নয়। আমি তোকে আগেও অনেক বোঝাতাম যে এমন কিছুই করে বসিস না যার ফল ভুগতে হয় পরে। আমার চোখ এড়ানো এতো সহজ নয়। আমি চাইলে এমনিই জেনে নিতে পারি কী ঘটিয়েছিস। কিছু বলার থাকলে এখনই বলে দে।”

আশিস মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। কীকরে বলবে ও অরুমিতার সাথে এতোটা জঘন্য অন্যায় করেছিল। আদ্রিয়ানের সামনে কনফেস করার মত সাহস ওর নেই। তাই চুপ করে রইল। আদ্রিয়ানও আপাতত আর কিছু জানতে চায়নি। ওদের সবাইকে পাঠিয়ে দিয়ে আদ্রিয়ান গাড়ি ঘোরালো। ওকে এখন একবার ওর গ্যাং এর কাছে যেতে হবে। কিছু কাজ বাকি আছে। অভ্রকে সকালেই পাঠিয়ে দিয়েছে সেখানে। হাসান কোতয়ালকেও কল করে বলে দিয়েছে আসার জন্যে। কিন্তু কিছু কেনাকাটা প্রয়োজন ওখানে যাওয়ার আগে তাই ওর গার্ডদের নিয়েই একটা মলে ঢুকলো। আদ্রিয়ানের মলে থাকার সময়টুকু অনেককের সাথেই সেলফি নিতে হয়েছে। যদিও সীমিতই দিয়েছে। পরে গার্ডরা সবাইকে সরিয়ে দিয়েছে। ঐ শপিং মলের সাথেই জয়েন্ট একটা রেস্টুরেন্ট আছে। আদ্রিয়ান বেড় হয়ে আসার সময় হঠাৎই সামনে কবির শেখ পরল। দুজনেই দুজনকে দেখে থমকে গেছে প্রায়। কবির শেখ হালকা ঘাবড়ে গেছেন আদ্রিয়ানকে দেখে। তবে আদ্রিয়ান মুহুর্তেই সামলে নিয়েছে নিজেকে। আদ্রিয়ান কবির শেখকে আগা গোড়া একবার স্কান করে নিল। বেশ শুকিয়ে গেছে চোখ-মুখ। আদ্রিয়ান বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,

” আরে মা_মা! কেমন আছো? হঠাৎ এতোদিন পর মুখদর্শন করানোর ইচ্ছে হল তাহলে?”

কবির শেখ কিছুক্ষণ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

” নিজেরই মামাকে এভাবে হেনস্তা করে তার মুখদর্শন করার ইচ্ছে ছিল বুঝি? এখন আর মামা ডাকটা তোমার মুখে মানায় না।”

আদ্রিয়ান একটু শব্দ করে হেসে দিয়ে বলল,

” আরে মা__মা। অনেককিছু তো তোমার মুখেও মানায় না। কিন্তু কী আর করার বল? রক্তের টান! যাই হোক, জেল তো আর হয়নি তোমার। আমার খালুজানের মতো। খোলাই আছো! শুধু ক্ষমতায় একটু ভাটা পরেছে তাইনা?”

কবির শেখ একটা কুটিল হাসি দিয়ে বলল,

” ভাটা যেমন পরে, সময়মতো জোয়ারও কিন্তু আসে ভাগ্নে! আর প্রবল জোয়ার কিন্তু সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সময় সমান যায়না। তোমার দুর্বল জায়গা, আর সেই দুর্বল জায়গায় আঘাত করার সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গাটা কিন্তু আমার চেয়ে ভালো কেউ জানেনা। সেটা তুমিও জানো।”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ গম্ভীর মুখে কবির শেখের দিকে তাকিয়ে থেকে একটু এগিয়ে গেল ওনার দিকে। কবির শেখ আদ্রিয়ানের চেয়ে হাইটে অনেকটা কম হওয়ায় আদ্রিয়ান হালকা ঝুকে বলল,

” জোয়ারের তেজ যতবেশিই থাকুক না কেন, শেষমেশ তাকে সমুদ্রের সীমাতেই ফিরে আসতে হয়। বেশিক্ষণ ভাসাতে পারেনা। কারণ এটাই ওর আসল জায়গা। ঠিক সেভাবেই নিজের জায়গাটা বুঝে নাও। যতক্ষণ আঘাতটা আমার ওপর থাকবে ততক্ষণ শুধু ততটুকুই শাস্তি পাবে যতটা অন্যায় করেছো। কিন্তু ওর গায়ে যদি একটু আচড় লাগে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা। এটা মাথায় রেখো। মা__মা।”

বলে আদ্রিয়ান টিশার্ট থেকে সানগ্লাসটা বের করে চোখে দিয়ে চলে গেল। কবির শেখ ক্ষীপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেদিকে।

_______

রাত এগারোটা বাজে। অনিমা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে লোশন লাগাচ্ছিল হাতে। তখন পেছন থেকে আদ্রিয়ান আলতো করে জড়িয়ে ধরল ওকে। কাঁধে থুতনি রেখে বলল,

” বিয়ের পর থেকে অদ্ভুত সুন্দর লাগে তোমাকে। একদম অন্যরকম।”

অনিমা চোখ ছোট ছোট করে আয়নায় আদ্রিয়ানের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে বলল,

” কেন? বিয়ের আগে সুন্দর লাগতোনা বুঝি? ওও তা কেন লাগবে? আশেপাশের এতো সুন্দরী সুন্দরী হিরোয়িন আর গায়িকা ঘুরে বেড়ালে আমার মত একটা শ্যামবর্ণের মেয়েকে সুন্দর কেন লাগবে? স্বাভাবিক! ঠিকই আছে। কিন্তু এখনো তো ওমনই আছি। আমার স্কিনটোন তো আর ব্রাইট হয়নি। ওও বুঝেছি সারাদিন সুন্দরী মেয়ে দেখে চোখের ব্রাইটনেস বেড়ে গেছে তাইনা?”

বলে ঝাড়া দিয়ে আদ্রিয়ানকে ছাড়িয়ে আওয়াজ করে লোশনের টিউবটা টেবিলে রাখল। আদ্রিয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। ও বোকার মত তাকিয়ে থেকে বলল,

” আরে আমি সেটা মিন করেছি নাকি? আমিতো জাস্ট বললাম __”

অনিমা আদ্রিয়ানকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল,

” হয়েছে! আর বাহানা দিতে হবেনা। সব বুঝেছি আমি। এতোই যখন সুন্দরী পছন্দ তখন আমায় জোর করে বিয়ে করেছিলেন কেন শুনি?”

আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই বাইরে থেকে আওয়াজ এলো কথাবার্তার। অনিমা আর আদ্রিয়ান দুজনেই ভ্রু কুঁচকে ফেলল। একে ওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে কী ব্যাপার সেটা দেখার জন্যে দুজনেই নিচে গেল। নিচে গিয়ে দেখে রিক নেশা করে এসছে বাড়িতে। শরীর একদম ছেড়ে দিয়েছে। স্নিগ্ধা আর মিসেস লিমা একসাথে ধরেও দাঁড় করিয়ে রাখতে পারছেনা। মানিক আবরার, রিমা, নাহিদ, জাবিন, অভ্র সব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অনিমাও অবাক হয়ে গেল। ও তো জানে রিক ড্রিংক করা ছেড়ে দিয়েছে। আদ্রিয়ান দৌড়ে গিয়ে ধরল রিককে। মিসেস লিমা আর স্নিগ্ধা ছেড়ে দিল। আদ্রিয়ান অনিমাকে সহ সবাইকে রুমে যেতে বলে রিককে নিয়ে ওর রুমে এলো। পেছন পেছন স্নিগ্ধাও এলো। রিক নিজে নিজেই আবোলতাবোল বলে চলেছে। আদ্রিয়ান রিককে শুইয়ে দিতেই রিক চোখ বন্ধ রেখেই একটা ঢোক গিলে ভাঙা গলায় বলল,

” আ’ম সরি স্নিগ্ধু। আমি নেশা করতে চাইনি। খেতে চাইনি এসব। কিন্তু__ কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছিল। বুকে ভীষণ ব্যাথা হচ্ছিলো। আমি পারছিলাম না। নীলপরীকে আদ্রির সাথে দেখলে এতো কষ্ট কেন হয় আমার? কেনো সহ্য করার ক্ষমতা পাচ্ছিনা? কেন? কবে পারব আমি? কবে? আমি পারতে চাই। খুব করে পারতে চাই! পারতে__ চাই।”

বলে একদম চুপ হয়ে গেল। স্নিগ্ধার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। এতোদিন রিকের এই আহাজারি শুধু ও দেখতে পেতো। আজ আদ্রিয়ানও দেখে ফেলল। কী ভাবছে আদ্রিয়ান? অস্বস্তি কাটাতে ও তখনই চলে এলো ঐ রুম থেকে। আদ্রিয়ানের চোখ ছলছল করছে। এক অদ্ভুতরকম কষ্ট হচ্ছে ওর এখন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিককে চেঞ্জ করিয়ে, ঠিককরে শুইয়ে দিয়ে, লাইট অফ করে চলে এলো ঐ রুম থেকে। সাথে করে নিয়ে এলো চরম মানসিক অশান্তি।

#চলবে…

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৬৩.

অনিমা রুমে দাঁড়িয়ে পায়চারী করছে আর বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। আদ্রিয়ান এখোনো আসছেনা কেন? রিকেরই বা কী হয়েছে? হঠাৎ এতোদিন পর আবার ড্রিংক করল কেন? এসবই ভেবে চলেছে। রিকের অনুভূতি অনিমার জানা থাকলেও সেই অনুভূতির গভীরতা অনিমার জানা নেই। রিক সেভাবে কোনদিন প্রকাশই করেনি ওর সামনে। আদ্রিয়ান অনেকটা অন্যমনস্ক হয়ে ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে নিজের রুমে এসে ঢুকলো। চোখে রয়েছে একরাশ বিষন্নতা। অনিমা হালকা চমকে উঠল। একটু দ্রুত পদে আদ্রিয়ানের সামনে গিয়ে বলল,

” আপনি এসে গেছেন?”

আদ্রিয়ান রিকের বলা কথাগুলো গভীরভাবে ভাবছিল। অনিমার ডাকে ও ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো। কোনরকম ইতস্তত করে বলল,

” হুম?”

” রিক__”

এইটুকু বলে অনিমা থেমে গেল। ঠিক কী জিজ্ঞেস করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। তাই ইতস্তত বোধ করছে শুধু। আদ্রিয়ান পাশ কাটিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। এরপর অনিমার দিকে না তাকিয়েই বলল,

” ও ঠিক আছে এখন‍, ঘুমাচ্ছে।”

অনিমা আদ্রিয়ানের পাশে বসে কিছুটা অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করল,

” ও হঠাৎ করে এভাবে ড্রিংক কেন করল?”

আদ্রিয়ান বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” ও এখনো তোমাকে ভুলতে পারেনি অনি। আজও পাগলের মত ভালোবাসে ও তোমাকে। আমাদের একসাথে দেখলে ওর খুব কষ্ট হয়। এতোদিন কষ্টটাকে বুকে চেপে রেখে দিয়েছিল। কিন্তু আজকে আর পারেনি। ওও তো একটা মানুষ, সহ্যের একটা সীমা আছেতো।”

অনিমা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে। এরকমটা ও মোটেই আশা করেনি। ও ভেবেছিল রিক সব মেনে নিয়েছে। হ্যাঁ হয়তো খানিকটা কষ্ট হচ্ছে কিন্তু ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা এতোটা? এতোগুলো মাস কেটে যাওয়ার পরেও? আদ্রিয়ান কম্পিত কন্ঠে বলল,

” মাঝেমাঝে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় জানো? আমার ভাই এতোটা কষ্টে আছে শুধুমাত্র আমার জন্যে। এভাবে ভেতরে থেকে গুমরে গুমরে মরছে। এসব কিছুর জন্যে শুধুমাত্র আমিই দায়ী। কী করব বল? তোমাকে ছাড়ার ক্ষমতা তো আমার ছিলোনা। আর না এখন আছে। এক্ষেত্রে আমি বড্ড বেশি স্বার্থপর। যদি আমি তোমাকে ভালো না বাসতাম। বা আগেই সবটা জেনে যেতাম। তাহলে হয়তো__”

অনিমা এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে শুনছিল আদ্রিয়ানের কথাগুলো। চোখ ছলছল করে উঠছিল ওর। নিজেকে সামলে অনিমা শক্ত কন্ঠে বলল,

” তাহলে? বাসতেন না আমায় ভালো? তুলে দিতেন নিজের ভাইয়ের হাতে?”

কিছুক্ষণের জন্যে হলেও আদ্রিয়ান চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলল। দুহাতে মুখ চেপে ধরে একটা শ্বাস ফেলে বলল,

” আমি জানিনা।”

আদ্রিয়ানের উত্তরটা শুনে অনিমা প্রচন্ড রেগে গেল। ওকে কী মনে করে আদ্রিয়ান? ও এতোই সস্তা? মন চাইলেই কারো হাতে তুলে দিতো? ওর ইচ্ছে অনিচ্ছের কোন দাম নেই? অনিমা চোখ মুছে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” ও, তারমানে আপনার এখন আফসোস হচ্ছে আমায় ভালোবেসেছেন বলে? বিয়ে করেছেন বলে? খুব পস্তাচ্ছেন বুঝি?”

আদ্রিয়ান মুখ থেকে হাত সরিয়ে অনিমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে অনিমাকে ছুঁতে নিয়ে বলল,

” অনিমা তুমি ভুল__”

অনিমা কথাটা শেষ করার আগেই দূরে সরে গিয়ে বলল,

” ছোঁবেন না আপনি আমায়। আমার বোঝা হয়ে গেছে। আফসোস হচ্ছেতো আমায় ভালোবেসে নিজের বউ করেছেন বলে? ঠিক আছে। চলে যাবো আমি। কালকেই চলে যাবো আব্বুর কাছে। তখন আর আপনার আফসোস থাকবেনা।”

বলে অনিমা উঠে ওয়াসরুমে চলে গেলো।আদ্রিয়ানের ভেতরটা হঠাৎ করে কেমন কেঁপে উঠল। অনিমাকে ছাড়া তো ও ওর জীবন কল্পনাও করতে পারে না। রিকের কষ্ট দেখে মানসিক চাপে পরে কী সব বলছিল ও? যেকোন মেয়ের জন্যেই এটা অপমানের। আর এটাতো অনিমা। মেয়েটাকে অযথাই কষ্ট দিয়ে ফেলল। নিজের ওপরই রেগে গিয়ে বেডে ভীষণ জোরে একটা ঘুষি মারল।

প্রায় দশমিনিট পর অনিমা ওয়াসরুম থেকে বের হল। অনিমার বের হওয়ার আওয়াজ পেয়ে আদ্রিয়ান চোখ তুলে তাকালো অনিমার দিকে। তবে অনিমা তাকালো না আদ্রিয়ানের দিকে। কিন্তু দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওয়াসরুমে গিয়ে কান্নাকাটি করেছে। চোখ হালকা লালচে হয়ে আছে। শ্যামবর্ণ হওয়া সত্ত্বেও নাক আর গালে লালচে আভা ফুটে উঠেছে। আদ্রিয়ানের ভেতরে অপরাধবোধ কাজ করছে। কী দিয়ে অনিমার সাথে কথা বলা শুরু করবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেনা। অনিমা একটা বালিশ নিয়ে সোজা সোফায় গিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ল। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে অনিমার কার্যকলাপ দেখছিল। ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই ওর ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল। ছোট ছোট চোখে অনিমার দিকে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে গেলো সোফার কাছে। এরপর বলল,

” এখানে এসে শুলে কেনো?”

অনিমা কোনরকম উত্তরই দিলোনা। আদ্রিয়ান হাঁটু ভেঙ্গে ফ্লোরে বসে অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

” আ’ম সরি, জানপাখি। আসলে তখন কী হয়েছিল নিজেই জানিনা। বলে ফেলেছি।”

কিন্তু অনিমা তবুও কিছু বলল না। আদ্রিয়ান এবার কানে হাত দিয়ে বলল,

” এই দেখ, কান ধরেছি।”

অনিমা এমন ভাব করছে যেন কিছু শুনতেই পায়নি ও। আদ্রিয়ান বুঝতে পারল যে অনিমা এভাবে উত্তর দেবেনা। যা করার ওকে ওর মতো করেই করতে হবে। তাই অনিমাকে সোজা কোলে তুলে নিলো আদ্রিয়ান। অনিমা প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও পরে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে অনিমাকে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিল। অনিমা উঠে পরতে নিলেই দুহাত দিয়ে ওকে বিছানার সাথে চেপে ধরে নিজেও শুয়ে পরল। এরপর অনিমাকে নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে বলল,

” বিশ্বাস করো, আমি ওভাবে বলতে চাইনি। জানিনা তখন কী হয়ে গেছিল। প্লিজ ফরগেট দিস। আ’ম সরি।”

অনিমা ইতিমধ্যে আদ্রিয়ানের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্যে ছটফট করে চলেছে। কিন্তু আদ্রিয়ানের শক্তির সাথে কিছুতেই পেরে উঠছে না। আদ্রিয়ান এতো করে বোঝাতে চাইছে যে ওর ভুল হয়ে গেছে। ও এভাবে বলতে চায়নি। কিন্তু অনিমা কোন কথাই কানে নিচ্ছেনা। ও ওর মতো করে ছটফট করে চলেছে ছাড়া পাওয়ার জন্যে। একপর্যায়ে আদ্রিয়ান ধমক দিয়ে বলল,

” এই মেয়ে! বলছিতো ভুল হয়ে গেছে। এমন করছো কেন? সরি বলছিতো। কান ধরেছি। এবার কী পায়ে পড়ব? এরকম আর কখনও বলব না, বলেছিতো! তখন কী হয়েছিল নিজেই জানিনা।”

অনিমা এবার অভিমানী কন্ঠে বলল,

” ঘোরের মাঝে মানুষ মনের কথাই বলে। আপনিও বলে দিয়েছেন। চিন্তা করবেন না আপনার গিল্টনেস বাড়াবোনা আমি। তবে এটা ভাববেন না যে আমি আপনার ভাইয়ের সাথে কোন সম্পর্কে জড়াবো। সেটা সম্ভব নয়। আমি পারবোনা অন্যকাউ__”

অনিমা আর কিছু বলতে পারলনা। কারণ আদ্রিয়ান পরম যত্নে নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছে ওর ঠোঁটজোড়া। অনিমা সাথেসাথেই একদম স্হির শান্ত হয়ে গেল। আদ্রিয়ান জানতো এটাই হবে। অনিমাকে শান্ত করার এখন এটাই একমাত্র উপায় ছিল। কিছুক্ষণ পর অনিমাকে ছেড়ে দিয়ে ওর কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে বলল,

” আজ বলেছো বলেছো। ভবিষ্যতে আর কোনদিন এই ধরণের কথা বলবেনা। তোমার কী মনে হয় তুমি চাইলেই আমি অন্যকারো হতে দেব তোমাকে? প্রয়োজনে তোমাকে খুন করে এরপর নিজেকেও শেষ করে দেব। কিন্তু তোমাকে অন্যকারো হতে দেখতে পারব না আমি। কোনদিন না।”

অনিমা এবার আদ্রিয়ানের বুকে মুখ গুজে ফুপিয়ে কেঁদে দিল। আদ্রিয়ানের ভেতরটা কেঁপে উঠল অনিমার কান্নায়। ও অস্হির কন্ঠে বলল,

” জানপাখি প্লিজ কেঁদোনা। সরি বলেছিতো আমি। প্লিজ!”

অনিমা ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

” প্লিজ আমায় ছেড়ে দেবেন না কখনও। আমি পারব না আপনাকে ছাড়া থাকতে। আমি জানিনা কে আমাকে ভালোবাসে। আমি জানতেও চাইনা। আমি শুধু জানি আমি ভালোবাসি আপনাকে। নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। আপনিই আমার প্রথম আর শেষ ভালোবাসা। রিকের সাথে একই বাড়িতে একটা বছর থেকেও, এতোটা সময় একসাথে কাটিয়েও ওকে বন্ধু ছাড়া অন্যকিছু ভাবতে পারিনি আমি। কিন্তু ক্ষনিকের আলাপেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম আপনাকে। আপনাকে ভুলে যেতে পারবনা আমি। আপনি প্লিজ কোনদিন আমায় ছেড়ে দেবেন না। যাই হয়ে যাক না কেন। পরিস্থিতি যতই বদলাক না কেন। প্রয়োজনে আপনি আমায় জোর করে আটকে রাখবেন, নিজের অধিকারে আটকে রাখবেন। নিজের বুকে আগলে রাখবেন কিন্তু আমায় ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাববেনও না। আর না আমায় ছাড়তে দেবেন। কথা দিন?”

অনিমার কথাগুলো এতক্ষণ বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছিল আদ্রিয়ান। চোখের কোণ হালকা ভিজে এসছিলো ওর। কিন্তু দ্রুতই নিজেকে সামলে নিয়ে অনিমাকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

” কথা দিলাম। যত যাই হয়ে যাক না কেন। যদি সমস্ত পৃথিবীর সাথেও লড়তে হয়, লড়ব। কিন্তু তোমাকে ছাড়ার কথা ভাববোও না। তোমাকে সারাজীবন এভাবেই বুকে আগলে রাখব।”

আদ্রিয়ানের কথা শুনে অনিমার মন শান্ত হল। ওতো শুধু এটুকুই চায়। আদ্রিয়ান ওকে এভাবেই বুকে আগলে রাখুক। শেষ নিশ্বাসও যেন ও আদ্রিয়ানের বুকেই ত্যাগ করতে পারে। আদ্রিয়ান অনিমাকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে চোখদুটো ভালোভাবে মুছে দিলো। এরপর কপালে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে নিজের খুব কাছে টেনে নিলো।

_________

বিকেল চারটে বাজে। স্নিগ্ধা মেডিকেল থেকে বেরিয়ে অপেক্ষা করছে গাড়ির জন্যে। তখনই রিকের ডাক শুনে ঘুরে তাকাল। তাকিয়ে দেখে রিক গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছে। স্নিগ্ধা তাকাতেই রিক হাতের ইশারায় ডাকল ওকে। স্নিগ্ধা গাল ফুলিয়ে হনহনে পায়ে গেলো গাড়ির কাছে। এরপর রিকের দিকে না তাকিয়েই গাড়িতে উঠে বসল। রিকও অপেক্ষা না করে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসল। স্নিগ্ধা কপাল কুঁচকে বাহিরে তাকিয়ে আছে। রিক একটু গলা ঝাড়ল, কিন্তু এতে কোন লাভ হলোনা। স্নিগ্ধা কথা বলল না। রিক গোমড়া মুখ করে বলল,

” আচ্ছা সরি বলেছিতো কতবার। সেদিন ভুল করে ড্রিংক করে ফেলেছিলাম। বলেছিতো আর করব না। এতো রাগ করছিস কেন?”

স্নিগ্ধা বিরক্তি নিয়ে বলল,

” তুমি জানো তুমি আদ্রিয়ান ভাইয়ের সামনে কী কী বলছিলে? ধারণা আছে তোমার? লোকটার মনে এসব কথার কী এফেক্ট পরেছে জানো?”

রিক একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্টেয়ারিং এর দিকে। ও জানে সেদিন ভুল করে ফেলেছে। এরকম করা ওর উচিত হয়নি। ওর আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। শুধু শুধুই আদ্রিয়ানকে মানসিক চাপে ফেলেছে। ও একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,

” যা হয়েছে তাতো আর বদলাতে পারব না। তবে কথা দিচ্ছি যে আর কখনও এরকম ভুল করব না। ড্রিংকস এর ধারেকাছেও যাবোনা। আই প্রমিস!”

স্নিগ্ধা আড়চোখে তাকাল রিকের দিকে। তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলল,

” সত্যি তো?”

রিক স্নিগ্ধার মাথায় একটা চাটা মেরে বলল,

” একদম সত্যি!”

স্নিগ্ধা মাথায় হাত বুলিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,

” ভালো হচ্ছেনা কিন্তু!”

রিক হাসতে হাসতে গাড়ি স্টার্ট দিল। তবে রিক না মানতে চাইলেও এটা সত্যি যে রিক বদলাচ্ছে। স্নিগ্ধা অজান্তেই রিকের মনের অনেকটা জায়গা দখল করে নিয়েছে। কারণ এখন একমাত্র স্নিগ্ধাই আছে যার কাছে রিক নিজের সমস্ত দোষ, অপারগতা স্বীকার করে। সব বলে। রিকের অজান্তেই স্নিগ্ধা রিকের খুব স্পেশাল একজন হয়ে উঠেছে। এসব ভাবতে ভাবতে স্নিগ্ধা মুচকি হাসল তবে সেটা রিকের আড়ালে।

#চলবে…

[ রি-চেইক করা হয়নি।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে