বধূবরণ পর্ব-০২

0
607

#বধূবরণ -২য় পর্ব
#অবন্তিকা_তৃপ্তি

সাঈদ ছেড়ে দিল না, বরং হৈমীর গলায় ক্রমাগত নাক ঘষে উইস্কি স্বরে বলে,
-প্লিজ ডোন্ট গো, না! আই ওয়ানা ফিল ইউ এভ্রি সেকেন্ড অব মাই লাইফ,হৈমন্তী!

হৈমী স্তব্ধ হয়ে শুয়ে রইল বরংচ! গলায় খোঁচা দাড়ির স্পর্শ শরীরের প্রতিটা লোমকূপ অব্দি দাঁড়িয়ে দিচ্ছে। হৈমী আলগোছে হাত তুলে বুকের উপর শুয়ে থাকা সাইদের চুলে হাত বুলিয়ে দিল। খানিক পর ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,
-যেতে হবে। এই অল্পবয়সে আব্বা রাজি হবেন না মোটেও! জেদ দেখাবেন না!

সাঈদ কথাটা শোনামাত্রই বেশ জোরেশোরে কামড় বসিয়ে দিল হৈমীর গলার দু ইঞ্চি নিচে থাকা কালো তিলে। ব্যথায় আহ্ করে উঠল হৈমী! সাঈদ মাথা তুলে ত্যারা করে বলল-
-তুই কচি খোকি নাকি? আজ বিয়ে হয়েছে কাল বাচ্চাও হয়ে যাবে। আসছে অল্পবয়স! তোর বাপেই তো তোর মাকে আরও অল্পবয়সে বিয়ে করেছে। আর আমি করলেই তোর বাপের গায়ে লেগে গেল? ধান্দাবাজ!

হৈমী রাগ দেখাল।শুরু হয়েছে আবার বাপ নিয়ে কথাবার্তা! অসভ্য! হৈমী রেগে সাঈদের চুল থেকে হাত সরিয়ে নিল। সাঈদ টের পেতেই জোর করে হাত আবার নিজের চুলে রেখে দিল। হৈমী অগ্যতা সাইদের চুল ব্রাশ করতে করতে বলল,
-বেশি বলবেন না। আব্বাদের সময় এসব চলত। এখন যুগ বদলেছে।
-তাই? তা তোর বয়স কত বলত? ১৭ তো হবে!
-কেন?
-আমি যতদূর জানি তোর মায়ের ১৬ বছর বয়সে তুই এক বছরের ছিলি। আসছে যুগের কথা বলতে আমাকে! যুগ বদলে নাই। তোর বাপ আমার বিরুদ্ধে চ ক্রা ন্ত করছে। নিজে এই বয়সে বাপ হয়েছে, আর আমাকে এখন বাপ হতে সুযোগ দিচ্ছে না। আনবিলিভেবল!

সাঈদ কথাটা বলে সোজা হয়ে উঠে বসে বিছানায়! বিছানায় হেলান দিয়ে কোলে বালিশ রেখে হাতের তালু চিবুকে ঠেকিয়ে ঠাঁই চেয়ে রইল হৈমীর দিকে। হৈমী উঠে বসল। কানের পেছনে চুল গুঁজে ইতিওতি চেয়ে বলল,
-খেতে চলুন, আমরা চলে যাব!

সাঈদ হামি তুলে রুমের একপাশটা ভালো করে দেখে নিল।কী দেখল সে-ই নিজে জানে। তারপর হঠাৎ করেই বলল,
-বাচ্চাদের থাকার জন্যে রুমটা কাল থেকেই সাজানো শুরু করে দিতে হবে। ছয় মাস লেগে যাবে পুরো রুম সাজাতে। আর চারমাস ওয়েট করলেই বেবি হাজির। আইডিয়া কেমন বুচি?

হৈমী অবাক হল খানিকটা। প্রশ্ন করল,
-বাচ্চা, এক বছর কী বলছেন? এক বছরের মধ্যে কার বাচ্চা আসবে ঘরে? আপনার আত্মীয়ের? আপনার বড় আপু বিদেশ থেকে ফিরছেন নাকি?

সাঈদ বাকা হাসল! বিছানা ছেড়ে উঠে কাভার্ড থেকে টাওয়াল আর ট্রাউজার নিয়ে হৈমীর পাশে দাঁড়িয়ে হুট করে হৈমীর গালে চুমু খেয়ে চলে গেল বাথরুমে। হৈমী গালে হাত দিয়ে থম করে বসে রইল, বাথরুম থেকে শুনতে পেল সাঈদ বলছে-
-আমার নিজের বাচ্চা ল্যান্ড করিয়ে তোর বাপের সকল আজগুবি শর্ত আমি ভেঙে ফেলব জেনে রাখ হৈমন্তী! সো বি রেডি ফর মাই বেবিস, বেবী!
————————-
হৈমীরা রাতে খাওয়াদাওয়া করে চলে গেল বাড়িতে। সাঈদ হৈমী বেরিয়ে যেতেই উপরের ঘরে যাচ্ছিল। পথে পেছন থেকে ওবায়দুল্লাহ বলে উঠেন,
-উকিলের কাগজগুলো নিয়ে রিডিং রুমে আসো সাঈদ! কাজ করতে হবে আমার সঙ্গে! অনুর মা, চা পাঠিয়ে দিয়ো আমাদের বাপ ছেলের জন্যে!
-আম্মু, আমার জন্যে কফি!

সাঈদ কথাটা বলে কাগজ আনতে চলে গেল। মনেমনে সাঈদ বাবার উপরে ফুলে আছে। বারবার তার তীক্ষ চোখ ঘুরেফিরে উবায়দুল্লার উপরে পরছে! ওবায়দুল্লাহ এসব অগ্রাহ্য করে মৃদু হেসে রিডিং রুমে চলে গেলেন।এতদিনে ছেলের বি ষ দাঁত ভাঙতে পেরে তিনি যারপরনাই খুশি, আনন্দিত! তার বেপরোয়া ছেলেকে একটা শিক্ষা দেওয়া উচিত ছিল। এ পৃথিবীতে চাইলেই সবকিছু পাওয়া যায় না, এটা তার ছোট ছেলে প্রায় ভুলতেই বসেছিল। এবার তার সুবুদ্ধি হলে হয়!

রিডিং রুমে বাপ ছেলে অনেকরাত ভর কাজ করল। নতুন বাড়ি কিনে ভাড়া দিতে চাইছেন ওবায়দুল্লাহ! কাগজ পত্রের হিসাব সেটার জন্যে মেলানো। আজকাল বাড়ি ভালো লাগলে কাগজ ঠিক থাকে না। একটা ঝুট ঝামেলা লেগেই থাকে কাগজে। সাঈদ উকালতি নিয়ে পড়াশোনা করছে। তাই বাড়ির সব উকিল সম্পর্কিত কাগজ পত্র সেই দেখাশোনা করে। কাজের ফাঁকে সাঈদ কফির কাপে চুমুক দিয়ে মাথা নিচু করে কাগজে চোখ বুলিয়ে বলল,
-আমাকে ফাঁসিয়ে কী মজা পেলে? বিয়েটা হয়েই গেছিল!

ওবায়দুল্লাহ এ প্রশ্নেরই অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি হেসে ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন। তারপর বলেন,
-দরকার ছিল! মেয়েটা এখনো অল্পবয়সী! তোমার কাছে আসার বয়স তার হয়নি!
-আমার বয়স হয়েছে এটাই যথেষ্ট ছিল! ঝামেলা কেন করলে? নাতি নাতনী দেখার শখ নেই তোমার?

ওবায়দুল্লাহ ছেলের লাগামহীন কথা শুনে বিষম খেলেন বোধহয়! পরপর কাগজ এর আরেকটা ফাইল ঠাস করে সাইদের সামনে রেখে রেগে বললেন,
-অসভ্য ছেলে, কাজ কর বসে। কাজের সময় উল্টাপাল্টা কথা বলে মাথা খাবে না!

সাঈদ এ কথা শুনে কলমটা দুই আঙুলের মাঝখান থেকে ছেড়ে ঠাস করে টেবিলের উপর রেখে দিল। চেয়ারের দু হাতলে আরাম করে হাত রেখে বসে সরাসরি চোখ রাখল ওবায়দুল্লাহর দিকে। তারপর বলল,
-আম নট ইন মুড এনিমোর! অ্যাই হ্যাভ এ ডিসিশন! এখন, এই মুহূর্ত থেকে বাড়ির কোনও কাগজ পত্র দেখাশোনা করব না আমি! আমার মাথা গরম, বউ ঘরে না আসা অব্দি মাথা ঠান্ডা হবে বলে মনে হচ্ছে না। আমি মাথা গরম অবস্থায় কাগজ দেখা মানে কোটি টাকার লোকসান! উল্টো সিদ্ধান্তে তোমার ক্ষতি! ঘরে বউ আসুক, মাথা ঠান্ডা হলে তারপর আমি আবার কাগজ পত্র দেখাশোনা করব। বাট ফ্রম নাও, ইটস ক্লোজড! বাই! গুড নাইট বা-ব্বা!

বাবা উচ্চারণ একটু টেনেটুনে বলে সাঈদ সাঈদ জ্যাকেট চেয়ারের হাতল থেকে নিয়ে গায়ে জড়াতে জড়াতে চলে গেল নিজের রুমে! উবায়দুল্লাহ হা হয়ে দেখতে লাগলেন জেদি ছেলের চলে যাওয়া! সাঈদ একবার বলেছে কাজ করবে না, তাঁকে হাজার বলেও কাজ করানো যাবে না! জেদ যেন রন্ধ্রে রন্ধ্রে বহমান! কার থেকে পেয়েছে এত জেদ? হাসলেন উবায়দুল্লাহ! যৌবল কালে তার নিজের মধ্যেও তেমন উত্তপ্ত জেদ ছিল! বটে! জেদের বশে পরিবারের অমতে জড়িয়েছেন রাজনীতিতে! আজ গ্রামের মুখপাত্র তিনি! সবই এই জেদের ফসল!
জিনঘটিত ব্যাপারস্যাপারে ছেলেকে দোষারোপ করে খুব লাভ নেই ভেবেই দমে এলেন উবায়দুল্লাহ!
————————————-
হৈমী বিছানায় বসে স্কুলের হোমওয়ার্ক পড়ছে। পাশে নয় বছরের বোন কেয়া শুয়ে মোবাইলে কার্টুন দেখছে। বেশ রাত হয়েছে! হৈমী বই পাশে রেখে বালিশ ঠিক করে শুয়ে পড়ল! কেয়া এখনও মোবাইল দেখছে,হৈমী হাত থেকে টান দিয়ে মোবাইল নিজের হাতে নিয়ে নিল! কেয়া রেগেমেগে তাকালে হৈমী বাঁকা চোখে চেয়ে বলল,
-কী? এভাবে তাকাস কেন? আম্মাকে ডাকব? এত রাতেও মোবাইল দেখিস? ঘুমা!

কেয়া ধমক খেয়ে ঠোঁট উল্টাল! তারপর বলল,
-ঘুম আসে না আপু! আরেকটু দেখি না কার্টুন! দাও।

হৈমী হাসল! পরম মমতায় বোনের ছোট্ট দেহ নিজের সঙ্গে চেপে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-আপু মাথায় হাত বুলাচ্ছি! ঘুম চলে আসবে, হুঁ?

কেয়া হৈমীর বুকের সঙ্গে মিশে গেল একদম। হৈমী আলতো হাতে কেয়ার মাথায় হাত বুলাচ্ছে! কেয়া নাকে হৈমীর গায়ের গন্ধ শুঁকে বলল,
-আপু, তোমার গতরে কেমন আম্মা আম্মা গন্ধ করে! আম্মার স্নো পাউডার তুমি মাখো? আমাকেও একটু মাখিয়ে দিবে?

হৈমী হাসল! বলল,
-কালকে সকালে দেব! এখন ঘুমা! এ্যাই, চোখ বন্ধ!

কেয়া খানিক কথা বলতে বলতে একসময় ঘুমিয়ে পরল! হৈমীর ছোট্ট মাথায় তখনো ঘুরছে রাতে সাঈদের কথা! বাচ্চা? ওদের তো বিয়ে মানা হয়নি! বাচ্চা এখন কোথা থেকে আসবে? ধুর! সাঈদ ও না! একদম যা তা! তবুও—-উম, তবুও তো সে হৈমীর বড্ড শখের পুরুষ!

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে