বজ্জাত বর পর্ব ২০ ( শেষ পর্ব)

0
3650

বজ্জাত_বর
পর্ব ২০ ( শেষ পর্ব)
লেখক বিলকিস

.
হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় আরাধ্য ওর বাবাকে নিয়ে পরশদের বাড়িতে হাজির। তখন পরশ রুমে বসে, ছিলো আর মিষ্টি দিশার রুমে বসে ওর সাথে গল্প করছিলো।
হঠাৎ বাইরে ড্রোয়িংরুমে কারো কথায় শব্দে মিষ্টি দিশার রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে আরাধ্য একজন বয়স্ক লোকের সাথে বসে আছে। আর মামনি আর বাবার সাথে কথা বলছে।
মিষ্টি, মনটা ধুক করে উঠলো। হঠাৎ এই সময় আরাধ্য এখানে কি করছে? এমনিতেই আজকাল পরশের অবহেলার পরিমানটা বেড়ে যাচ্ছে। ও কি পরশকে হারিয়ে ফেলছে। এরকম নানান কথা মিষ্টির মাথায় এসে জট পাকাচ্ছিলো। তখনই দেখলো পরশ ড্রোয়িং রুমে এসে সোফায় ঠিক আরাধ্য র পাশেই বসলো। তারপর ওরা কি যেনো সব আলোচনা করছিলো। যার কোনোটাই মিষ্টি শুনতে পেলোনা।
এক পর্যারে দেখলো আরাধ্যর বাবা, আর পরশের বাবা দুজন কোলাকোলি করছে।
কি হচ্ছে ওখানে কিছুই বুঝতে পারছেনা মিষ্টি। তখন দেখলো আরাধ্য আর পরশ ও খুব হেসে হেসে কথা বলছিলো। মিষ্টি,কি হচ্ছে বোঝায় জন্য নিচে নামতেই বাড়ির কাজের মেয়ে নিলুফা বললো যে
ভাবিগো খুশির খবর । বাড়িতে বিয়া। আমার তো এখনই লাফাইতে ইচ্ছা করতেছে।
এই কথা শোনার পর যেনো মিষ্টি মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। মাথাটা ভিষন ঝিমঝিম করছিলো। সবকিছু ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। ওকি কিছুই করতে পারবেনা। পরশের দিকে তাকিয়ে দেখলো দেখে মনে হচ্ছে পরশের যেনো খুশির সীমা নেই। ও দৌড়ে ঘরে চলে গেলো। খুব কান্না পাচ্ছিলো। ওর তাই অঝেরে কাদছিলো।
এই মধ্যে আরাধ্য আর ও বাবা পরশের বাড়ির থেকে বিদায় নিলো। পরশ নিচ থেকে উপরে রুমে গিয়ে দেখে মিষ্টি সোফায় বসে মাথা নিচু করে কান্না করছে। পরশ বুঝতেই পরলো মিষ্টির কান্না কারন। তাই মিষ্টি দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
পরশ: মিষ্টি এই সময় কি হয়েছে তোমার? কান্না করছো কেনো?
হঠাৎ। পরশের এই কথায় যেনো মিষ্টি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। আর বললো,
মিষ্টি: তো কি করবো এখন। ধেই ধেই করে নাচবো।
পরশ: তুমি না কখনো শোধরাবার নয়। এই বলে পরশ চলে যাচ্ছিলো।
হঠাৎ করেই মিষ্টি পরশের কলার চেপে ধরে আর বলে।
মিষ্টি: কি করে করতে পারলেন এটা?
পরশ: কি করেছি আমি? আর তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো?
মিষ্টি: হ্যা এখনতো আমার সব কথাই। এরকম লাগবে। ঘরে যে নতুন বউ আসছে। আমিতো পুরনো হয়ে গেছি তাইনা?
পরশ’ : ওয়েট ওয়েট কি বলছো তুমি এসব? বউ আসছে মানে?
মিষ্টি: একদম ন্যাকামি করবেব না বলে দিলাম। কি ভেবেছেন টা কি। আমি কিছু শুনিনি। নিচে তো দেখছিলাম আরাধ্য কে নিয়ে খুব রং তামাশা চলছে।
একটা বউ থাকতে আবার বিয়েও ঠিক করে ফেলা হলো। বলোই মিষ্টি খুব জোড়ে জোড়ে কাদছিলো।
এবার পরশ কিছুটা বুঝতে পারলো মিষ্টি র এই কান্নার, পেছনে লুকায়িত রহস্য। ওর খুব হাসি, পাচ্ছিলো তখন। তাই বললো,
পরশ: কেনো। আমার বিয়ে শুনে তো তোমার খুশি হওয়ার কথা। আমি আর কতোদিন বউ ছাড়া একা একা থাকবো। তুমি তো আর আমার কাছে আসোনা।
মিষ্টি: আমি আপনাকে ঠিক চিনেছিলাম। আপনি একটা চরিএহীন লুচু টাইপের ছেলে। ঘরে বউ রেখে বাইরে প্রেম করে বেরান। আর এখনতো open marrege. হচ্ছে। বলেই কাছেই টি টেবিলে রাখা ফুলের টবটা ভেঙ্গে ফেরলো।
পরশ: কি করছো এসব তুমি। আর তুমি সবসময় ওলটো বোঝো বুঝেছো।
এবারতো মিষ্টির। রাগ আকাশ চুন্নি হয়ে গেলো। মিষ্টি কিছু বলতে যাবে তখনই। মাথাটা ঝিম ধরে এলো। আর সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে গেলো।
মিষ্টির অজ্ঞান হয়ে যাওয়া দেখেই পরশ যেনো দিশেহারা হয়ে গেলো। মিষ্টির গালে হাত দিয়ে বার বার ডাকা সত্রের যখন কেনো রেসপন্স পাচ্ছিলো না ওকে কোলে করে বাইরে নিয়ে আসছিলো হাসপাতালে নেওয়ার জন্য।
পরশের মা ড্রোয়িং রুমেই ছিলো। মিষ্টিকে পরশের। কোলে দেখেই ছুটে এলো।
মা: কি হয়েছে মিষ্টির পরশ।
পরশ: জানিনা। হঠাৎ করেই সেন্সলেছ হয়ে গেলো। এখনই হাসপাতালে নিতে হবে।
তারপর পরশ মিষ্টিকে কাছের একটা হাসপাতালে নিয়ে এলো। সাথে পরশের মা, বাবা, আর দিশা, এসেছে।
তারপর ডাক্তার মিষ্টিকে চেকাপ করার, জন্য। ভেতরে ঢুকলো। পরশ তো প্রায় কান্না করে ফেলছে। সবাই চিন্তায় পাইচারি করছিলো। বেশ কিছুক্ষন পর ডাক্তার যখন বাইরে আসলো
তখন পরশ ডাক্তারের কাছে দৌড়ে গেলো আর বললো,
পরশ: আঙ্কেল মিষ্টি এখন কেমন আছে? আর ওর কি হয়েছে। হঠাৎ এভাবে অজ্ঞান হয়ে গেলো কেনো।
ডাক্তার: Relax and congratution. তুমি বাবা হচ্ছো। আর এই সময় এমন হয়ই। চিন্তার কিছু নেই। একটু carefully থাকলেই হবে।
ডাক্তারের কথা শুনে পরশতো আনন্দে পাগলপ্রায়। আনন্দে ডাক্তারকে জড়িয়ে ধরলো। আর বারবার thanks জানাচ্ছিলো। ওর পেছনেই ওর বাবা, মা আর। দিশা তো ওর কান্ড দেখে হাসছিলো।
তারপর বাবা, মা আর দিশা মিষ্টির সাথে দেখা করে কেবিনের বাইরে এলো। তখন পরশ কেবিনে ঢুকলো। পরশকে দেখে মিষ্টি অন্যপাশে ঘুরে শুলো। পরশ মিষ্টির কাছে গিয়ে ওকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে করলো। তখন দেখলো মিষ্টির চোখে পানি। পরশ বললো
পরশ: তুমি কাদছো কেনো মিষ্টি? তুমি খুশি, হওনি? জানো একটা পুরুষমানুষ কখন বেশি খুশি হয় যখন সে শুনে যে সে বাবা হতে চলছে। I am. so happy মিষ্টি।
মিষ্টি’ পরশের কেনো কথায় উওর না দিয়ে নিজের পেটের উপর হাত দিয়ে বললো
মিষ্টি: দেখেছিস তোর বাবা আমাদের ছেড়ে অন্য একটা ডাইনিকে বিয়ে করছে। আমরা দুজন মিলে তোর বাবাকে খুব জ্বালাবো এখন
। পরশ মিষ্টি কথা শুনেই হেসে দিলো। আর। বলল,
পরশ: তুমি সত্যিই একটা পাগলী।
মিষ্টি: আমি তো পাগলী। আর ঐ আরাধ্য খুব ভালো তাইনা।
পরশ: বুঝেছি আমার বাবুর আম্মু এখন খুব রেখে আছে। তাকে তো এখন সত্যিই। বলে দিতে হয়।
মিষ্টি: কিসের সত্যি?
পরশ: আমার চাচাতো ভাই তাওহীদ। ছোটোবেলার, ওর বাবা মা দুজনই রোড এক্রিডেন্ট মারা যায়। আমরা সেম বয়সের। ও দুবছর আগে ভারতে গিয়েছিলো একটা কাজে। ওখানে আরাধ্য ও বেড়াতে গিয়েছিলো। ওখানেই ওদের পরিচয়। তারপর আস্তে আস্তে ভালোলাগা আর ভালোবাসা। হঠাৎ আমি একদিন ওদের, রেস্টুরেন্টে, দেখে ফেলি। পরে আরাধ্য আমাকে ওদের সম্পকের কথা বলে।
মিষ্টি: আমি তো একবারও ওনাকে দেখিনি।
পরশ: ওর আলদা একটা ফ্ল্যাট আছে। ও ওখানে থাকে। তুমি এখানে আসার পর ও কাজের চাপে আসতে পারিনি। আমি ওদের বিয়ে কথা, বললে তাওহিদ আরাধ্য কে মা, বাবার সাথে কথা বলতে বলে। তাই আরাধ্য ওর বাবাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছিলো। বুঝেছো পাগলী।
মিষ্টি: তাহলে আরাধ্য সাথে আপনার এতো মাখামাখি কিসের আর আপনার girl friend বললো কেনো নিজেকে।
পরশ: ওটা আমাদের প্ল্যান ছিলো তোমাকে jealous করানো জন্য। যাতে তুমি আমাকে ভালোবাসো।
মিষ্টি: লাভ কি হলো।
পরশ: লাভ কি হলো মানে আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো।
আচ্ছা আমি যে, বাবা হতে যাচ্ছি আমাকে কিছু gift করবেনা।
মিষ্টি: কিসের gift? উল্টো আমার। gift পাওয়া কথা।
পরশ: ok তাই বলে মিষ্টির ঠোটে কিস করতে থাকলো। পিছন থেকে দিশা বললো আমি কিছু দেখিনি। এটা শুনে মিষ্টি পরশকে জোড় করে ছাড়িয়ে দিলো।
তারপর ওরা মিষ্টিকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো। দেখতে দেখতে বিয়ে দিন চলে এলো। মিষ্টি আজ অনেক সুন্দর করে সেজেছে। তাই দেখে পরশ বললো
পরশ: চলো আমরা আবার বিয়ে করি।
মিষ্টি: কেনো? আবার বিয়ে শখ কেনো।
পরশ: কারন আমাদের বিয়ে দিন কোনে বাসর করতে পারিনি। শুধু একদিনে তোমাকে কাছে পেয়েছিলাম তাও, আবার অজ্ঞানে। এখন তোমাকে সজ্ঞানে পেতে চাই, তাই বলে পরশ মিষ্টির ঠোটের দিক এগুতেই মিষ্টি পরশের গায়ের উপর বমি করে দিলো।
পরশ: কি করলে এটা?
মিষ্টি: আপনার গায়ের perfume. এর জন্ আমার খুব বমি আসছিলো। আপনি এতো কাছে আসতে আর থাকতে পারলাম না।
পরশ: মিষ্টির পেটে হাত রেখে তো আমার romance টা সহ্য হলোনা।
তারপর মিষ্টিকে নিজ হাতে ফ্রেস করে বিয়ের অনুষ্ঠানে নিয়ে গেলো।
৫ বছর পর
আরাফ সারা ঘর দৌড়াচ্ছে আর মিষ্টি ওর পেছন পেছন ঘুরছে। হ্যা আরাফ হলো পরশ আর মিষ্টির ছেলে। ভিষন দুষ্টু। একটু খেতে চায়না। মিষ্টি ওকে খাওয়ানোর জন্য ওর পেছন। পেছন দৌড়াচ্ছে।
আরাফ দৌড় ওর দাদুর পেছনে গিয়ে লুকালো। সন্ধ্যায় পরশ বাড়ির ফিরলে আরাফ দৌড়ে পরশের কাছে গিয়ে বলেলো
আরাফ: বাবাই বাবাই জানো মাম্মাম আমাকে মেরেছে।
পরশ: কেনো মেরেছে? তুমি কি করেছো?
আরাফ: আমি তো কিছু করিনি। শুধু ভাত খাইনি। তুমি মাম্মামকে একটু বকা দিওতো।
পরশ: ঠিক আছে। আমি তোমার মাম্মামকে খুব বকা দিবো। এখন তুমি দাদুর কাছে থাকো। ok
আরাফ: ok
পরশ ঘরে গিয়ে দেখলো মিষ্টি বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। পরশ ওকে পিছন থেকে কোমড়ে হাত দিয়ে জোড়িয়ে ধরলো। মিষ্টির চুলগুলো হাত। দিয়ে খুলে দিয়ে চুলের মধ্যে নাক ডুবিয়ে দিলো।
হঠাৎ ওর ছোয়াতে চমকে উঠলাম। কিন্তু খুব ভালো লাগছিলো। তাই বললাম, এখন অসময়ে পাগলামো করছো কেনো?
পরশ: ঘাড়ে চুমো দিতে দিতে বললাম, Romance এর কি কোনো সময় অসময় থাকে। আর তাছাড়া তোমার শশুর বাবা কি বলেছে জানো?
মিষ্টি: কি বলেছে?
পরশ’ : বলেছে আমার একটা দিদিভাই লাগবে।
মিষ্টি: কি?
পরশ: হুম। এইটা বলোই মিষ্টিকে কোলে তুলে নিলো। আর বললো
বেশি দেরি করে লাভ নেই। এখন থেকেই processing শুরু করে দেই।
এই কথায় মিষ্টি লজ্জায় পরশের বুকে মুখ লুকালো।
মিষ্টির লাজুক মুখটা দেখে পরশ বরবারে মতোই উম্মাদ হয়ে গেলো।
তারপর মিষ্টিকে বিছানায় শুয়েই দিয়ে ওর ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দিলো আর। ভালোবাসায় মেতে উঠলো। এভাবেই ভালোবাসা ভরে থাকুক ওদের জীবন।
( সমাপ্ত)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে