প্রেয়সীর শব্দপ্রেম পর্ব-১৩+১৪

0
360

#প্রেয়সীর_শব্দপ্রেম
#ফারজানা_মুমু
[১৩]

রোদের উত্তাপে ঘরে থাকা দায়। কৃষ্ণকালো মেঘের ছিটেফোঁটা নেই আকাশ জুড়ে। সূর্যের তেজে জ্বলছে দেশ। গরমে অতিষ্ট জনগন। ট্যাংকির পানি ফুটন্ত গরম। চা পাতা দিলেই গরম-গরম চা হয়ে যাবে। বিদ্যুতের কথা না বললে নয়। ঘণ্টায় আসে মিনিটে থাকে এমন অবস্থা। খাঁ-খাঁ গরমের উত্তাপ বিষাক্ত করে তুলে শরীর। শান্তি নেই কোথাও। শহরের প্রতিটি ফ্ল্যাট জ্বলন্ত আগুনের ন্যায় উত্তাপ। ঘরে-বাইরে কোথাও শান্তিতে থাকা যাচ্ছেনা। ঝুমঝুমি ঘেমেনেমে একাকার। শরীরের ঘাম বোরকায় দেখা যায়। রুমাল দিয়ে মুখ মুছে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে বাসের জন্য। তৃষ্ণায় বুক ফেঁটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কত যুগ ধরে পানি পান করছে না।
-” পানি খাও,ঠান্ডা পানি ভালো লাগবে।

আষাঢ়কে দেখে ঝুমঝুমির রাগ হলো না। মনে-মনে আষাঢ়কে খুঁজছিল সে। এতদিনে আষাঢ়ের হাবভাব দেখে অভ্যস্ত সে। পানির বোতল হাতে নিয়ে এক চুমুকে অর্ধেক শেষ করে বলল, ধন্যবাদ।
-” শুধু ধন্যবাদ? ভালোবাসা নয়?
-” বলেছি তো সময় লাগবে।
-” আজ দশদিন হয়ে গেল। সময় শেষ হয়নি?
-” আরো লাগবে।
-” ব্যাস আরো দিলাম সময়। সময়ের শেষ তিথিতে উত্তর কিন্তু ‘হ্যাঁ’ চাই।

আষাঢ়ের বাচ্চামো কথা শুনে মুচকি হাসলো ঝুমঝুমি। এক হাসিতেই কাবু আষাঢ়। বুকের ভিতরে ঢিপঢিপ শব্দ করছে। প্রসারিত হাসলো নিজেও। ঝুমঝুমির ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে বলল, তুমি আমার প্রেমে পরে গেছ তেজপাতা।
-” মোটেও নয়।

নিজের মনোভাব আড়াল করার চেষ্টা করল ঝুমঝুমি। আষাঢ় বাঁধ মানলো না। নিজের মতো করে কথা বলতে লাগলো। ঝুমঝুমি বিরক্ত না হয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনলো আষাঢ়ের কথা। ঠোঁটে লেগে আছে মিষ্টি হাসি, আনন্দের হাসি, তৃপ্তির হাসি।

এদিকেই বাইক নিয়ে আসছিল মেঘ। হঠাৎ ওর চোখ যায় বেঞ্চে বসা দুজন কপোত-কপোতীর পানে। মেয়েটিকে সে চিনে কিন্তু ছেলেটি? এই প্রথম কোনো ছেলের সাথে ঝুমঝুমিকে হেসে-হেসে কথা বলতে দেখে পুরো শরীর কেঁপে উঠল। রাগ বাড়লো দ্বিগুণ। শরীরের শিরা-উপশিরায় রক্ত দ্বিগুণ গতিতে বইতে লাগলো। হাতের মুষ্টি শক্ত হলো। চোখ দুটো জ্বলন্ত আগুনের ফুলকি। দু’হাত চেপে ধরলো মাথার চুল। হিংস্র রূপের মেঘকে দেখতে পেলো না ঝুমঝুমি। সে তখন আষাঢ়ের কথাতেই মত্ত। ঝড়ের বেগে বাইক চালিয়ে পিছন রাস্তা ধরল। ইচ্ছে করেই ঝুমঝুমির সামনে দাঁড়ালো না। ঠোঁটে শয়তানি হাসি। ঘাড় নেড়ে লোকিং গ্লাসে নিজেকে দেখে বিড়বিড় করল, খুব শীগ্রই বিয়ের পিঁড়িতে বসবি ঝুমঝুমি।

______________

রুমের ভিতরে টিশার্ট পরে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে নীরা। খানিক পূর্বেই তৃষ্ণা পানি-পানি করে মুচেছে ফ্লোর। জানালায় ভিজা গামছা রাখা । বাড়িওয়ালি আন্টিদের ফ্রিজে কয়েক বোতল পানি রেখে ওইগুলো পানি ভর্তি বালতিতে ভিজিয়ে রেখেছে জানালার ধারে। ফ্যান চালু করায় রুমের ভিতরে শীতল হাওয়া বইছে। ঝুমঝুমির বুদ্ধিকে বারবার বাহবা দিচ্ছে তৃষ্ণা-নীরা। দেওয়ালে পা রেখে উপন্যাসে দৃষ্টি রেখেই তৃষ্ণা বলল,
-” ঝুমি তোর বাসার সব ঠিকঠাক?
-” হুম ।
-” শয়তান মেঘ আর ওর মা ঝামেলা করছে না কেন? ওরা এত শান্ত কেন? ডালমে কুছ কালা হে।

চিন্তার ভাঁজ পড়ল ঝুমঝুমির কপালে। নীরার কথাগুলো ফেলে দেওয়ার মতো নয়। বেশ কয়েকদিন ধরেই ব্যাপারটা ওর কাছে সন্দেহজনক লাগছে। মেঘের হুমকি, মামীর কড়া বাক্য সবকিছুরই মুচন ঘটেছে। শান্ত পরিবেশ। রাস্তায় মেঘের সাথে দেখা না হওয়া, ফোনে বিরক্ত না করা এমনকি মায়ের সাথেই এনিয়ে কথা হয় না আর। সত্যিই কী সবকিছুর ইতি টানা হয়েছে নাকি জীবনে আসতে চলেছে কঠিন ঝড়।

ঝুমঝুমিকে ভাবতে দেখে তৃষ্ণা-নীরার পিঠে চড় বসালো। রাগী গলায় বলল, নীরা তুই আসলেই বলদ। শয়তান মেঘ বিরক্ত করছে না ব্যাপারটা ভালো নয়? ঝুমি এখন আরামসে সময় কাটাতে পারে। কষ্ট পায় না। আমরা তো চেয়েছিলাম মেঘ বিরক্ত না করুক।

নীরা ঠোঁট বাঁকিয়ে ঝুমঝুমির কোলে মাথা রাখলো। দুহাতে ঝুমঝুমির মুখটা চেপে ধরে বলল, আপদ বিদায় হয়েছে। এখন থেকে আমি রেগুলার মন থেকে নামাজ পড়ব আলসেমি করব না। আচ্ছা ঝুমি তুই কি আষাঢ় ভাইকে ভালোবাসিস?
-” বিয়ের আগে কীসের ভালোবাসা? ভালোবাসা শব্দটি পবিত্র। পবিত্র সম্পর্ক প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্য থাকতে পারে না থাকতে হয় স্বামী-স্ত্রীর মাঝে।
-” তুই ডিরেক্ট বিয়ের কথা বলছিস?

তৃষ্ণার কথা প্রতিউত্তরে ঝুমঝুমি চুপ রইল কিছুক্ষণ। মন, বিবেকের তাড়নায় এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। বিবেক বলে আষাঢ় ছেলেটা ভালো তোর সাথে জড়িয়ে ভালো ছেলেটার ভবিষ্যত্ নষ্ট করিস না। অন্যদিকে মন বলে, আষাঢ় তোর সবকিছু জেনেই ভালোবেসেছে। ছেলেটাকে কষ্ট দিস না।

দুইয়ের মধ্যে ঝুমঝুমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। ‘হ্যাঁ’ বলবে নাকি ‘না’ বলবে বুঝতে পারছে না। মাথায় হাত রেখে বলল, এখনও জানি না।

তৃষ্ণা-নীরা কথা বাড়ালো না। ঝুমঝুমির মন অন্যদিকে ঘুরানোর জন্য নানান ধরনের আলাপ-আলোচনা করল। হাসলো কিছুক্ষণ। মনকে সতেজ রাখার জন্য হাসির প্রয়োজন। হাসলে শরীর ও মন সুস্থ থাকে।

______________

ডিভানের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে নাজিম। ভোঁতা মুখটি ফোনের স্ক্রল করা লাস্ট ম্যাসেজে। কঠিন মন খারাপ ওর। সদ্য প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে মুখটা চুপসে পাকা লিচুর মতো দেখতে হয়েছে। দুহাতে গাল চেপে ধরে ব্লক করা আইডিকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রিচেক করে আহত সুরে বলল,
সাত দিনের প্রেমে তুমি ছিলে আমার জীবনসঙ্গিনী,
কে জানতো তুমি মেয়ে নও বরং আস্ত এক কালনাগিনী।
দুধকলা দিয়ে আমি পুষেসি কালনাগিনী তোমায়,
সাতদিনে দশ হাজার টাকা আমার গেল নর্দমায়।।

কবিগুরু নিজামের টাকার শোক পালন করতে দেখে হিরণ হেসে গড়াগড়ি। ফোনটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে মেয়েটির পিকগুলো বের করে আবারও হাসলো। মিরাজ হিরণের পাশে দাঁড়িয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল, বারবার বলেছি মেয়েটা প্রতারক। ছবিগুলো গুগোল কালেক্টেড। কিন্তু আমার কথা শুনিস নি ভালো হয়েছে দশ হাজার টাকা গচ্চা করে।

মুখ ফুলালো নাজিম। কাঁদো-কাঁদো মুখ নিয়ে বলল, পৃথিবীটা ভরে গেছে ছলনাময়ীর ভিড়ে,
মনটাকে আমার চিন্ন-ভিন্ন করে।

ধমকে উঠল আষাঢ়। সে নাজিমের উপর বেশ বিরক্ত। নাজিমের ধোঁকা খাওয়া দেখে নয় বরং ঝুমঝুমিরকে অস্বস্তিতে ফেলে দেওয়ার জন্য।

আজ সকালে ঝুমঝুমি যখন ছাদ থেকে নেমে তৃতীয় তলায় আসছিল তখনি আষাঢ় পথ আটকায় ঝুমঝুমির। তাদের মধ্য বিনিময় হয় ফুলের পাঁপড়ি। আষাঢ় পাঁপড়ি ঝুমঝুমির দিকে ছুঁড়ে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করে ঠিক তখনি নাজিম এসে কবিতা বলে,বিড়াল ডাকে ম্যাওম্যাও, কুকুর ডাকে ঘেউ,
আষাঢ়-ঝুমঝুমির ভালোবাসা জানবে না তো কেউ।

কবিতা শেষ করে আবারও বলে, প্রিয় আষাঢ় এক্ষুনি চলো ঘরে, মনটা আমার কেমন-কেমন করে, থাকেনা তো ঘরে, চায় শুধু একজনারে।

নাজিমের কবিতা শুনে লজ্জায় ঝুমঝুমি দ্রুত হেঁটে চলে যায়। আষাঢ়ের ইচ্ছে ছিল আরো কিছুক্ষন সময় কাটানোর কিন্তু হাদারাম নাজিমের জন্য তা আর হলো না। দাঁত কিড়মিড় করে রুমে ঢুকে আষাঢ়। সেই থেকে নাজিমের উপর সে বেশ ক্ষেপা। এখন আবার ছ্যাকাখোর কাহিনীর বিস্তার আলাপ।

দু-ঘন্টা নাজিম দেবদাস জীবন পার করলো। মনের দুঃখে ফেসবুকে ঢুকতেই দেখল সুন্দরী এক মেয়ে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। খুশিতে আত্মহরা নাজিম ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে ম্যাসেজের উত্তর দিল,

“তুমি আমার মন আকাশে উড়ে চলা বার্ড
তুমি আমার মোবাইল ফোনের ছয়শো টাকার কার্ড,
তুমি আমার ফুলদানীতে জমে থাকা ছাই
তুমি আমার গলার মাঝে ফাঁ’স লাগানো টাই ।”(কালেক্টেড)

নাজিমের আবারও প্রেমে পড়া দেখে বাকিরা অবাক হলো না। কারণ অনেক বছরের বন্ধুত্ব ওদের। কতবার যে ছ্যাকা খেয়েছে তার অন্ত নেই। মেয়েরা টাকার কথা বলতে দেরি ওর দিতে দেরি হয় না। বন্ধুর মতিগতি সুবিদার না ওরা জানে। ছোট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে নাজিমকে ছেড়ে দিয়ে বাকিরা নিজেদের কাজে মগ্ন হলো।

__________

মেয়র হান্নানের মুখোমুখি বসেছে হিরণ। হান্নানের চোখ জোড়া লাল টুকটুকে। কেঁদেছে বুঝা যাচ্ছে। হিরণ বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, আমাকে শান্ত করে আপনি ভেঙে পড়ছেন আব্বা? আপনিই তো আম্মার মৃ’ত্যু’র পর আমাকে নিজের হাতে গড়েছেন।

মেয়র হান্নান কান্না গিলে নেওয়ার চেষ্টা করল। স্ত্রীকে হারিয়েছে বিশ বছর আগে। হিরণ তখন অনেক ছোট। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি ওনি। তার উপর স্ত্রীকে অসম্ভব ভালোবাসার ফলে দ্বিতীয় নারীর প্রতি মন কিংবা শরীর কিছুই টানেনি। ছোট্ট হিরণ যখন মা-মা করতো তখন মেয়র হান্নান বন্ধুর মত হিরণের পাশে থেকেছে। একমাত্র ছেলে ছাড়া জীবন অন্ধ ওনার। নিজের হাতে মানুষ করা ছেলেটি ওনার একমাত্র ভালো বন্ধু। সেজন্যই হয়তো হিরণ সবকিছুই বাবাকে বলে ফেলে। মেয়র হান্নান ওনার অতীত সম্পর্কে সবকিছুই হিরণকে শেয়ার করেছেন। মেয়র হান্নানের প্রেমের বিয়ে। অনেক কষ্টে প্রিয় মানুষটিকে নিজের করে পেয়েও কয়েক বছর সংসার করে হারিয়েছে জীবন-সঙ্গিনীকে।

বাবাকে কাঁদতে দেখে হিরণ চুপ করে রইল। আজ ওর মায়ের মৃ’ত্যু বার্ষিকী। এই দিনটায় দুজনেই একান্ত নিজেদের মধ্যে সময় কাটায়। হিরণের খুব কষ্ট হচ্ছে আজ। বুকটা কষ্টে ছিঁড়ে যাচ্ছে তবুও নিজেকে শক্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। ও ভেঙে পড়লে যে বাবাও আরো কষ্ট পাবে।

নিজেকে সবদিক থেকে শক্ত করে বাবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য লাগাম ছাড়া কথা শুরু করল নিজ থেকে,
-” আব্বা আপনার বয়সে সবাই নাতি-নাতনী দেখে ফেলেছে আপনি এখনও বউমা ঘরে তুলেন নাই।

ছেলের কথায় হাসলো হান্নান। বুঝতে পারে ছেলের উদ্দেশ্য। নিজেকে সামলে বলে, আব্বা আর কয়েকটা দিন ধৈর্য্য ধরেন। জানেন না সবুরে মেওয়া ফলে।
-” সবুরে মেওয়া ফলতে-ফলতে বউ চলে যাবে অন্যর ঘরে। ভোটের আগেই বিয়েটা ঠিক করলে হয় না?
-” চিন্তা করবেন না আব্বা। আফনের যে মেয়েটা পছন্দ হইছে আমি তারেই বউমা বানামু। ইলেকশন শেষ হোক খালি।
-” আচ্ছা যা ভালো বুঝেন। আসেন আজ আমি রান্না করব আপনি আমায় সাহায্য করবেন।
-” চলেন তাইলে।

বাপ ছেলে মিলে রান্নায় ব্যাস্ত হলো। মনের কষ্ট মনেই চেপে রেখে মুখে ফুটিয়ে তুলল খুশির হাসি। এভাবেই খারাপ মুহূর্তকে মুছে এগিয়ে যেতে হয় সামনের দিকে। পিছুটান থাকবে, মনের কষ্টও থাকবে তাই বলে জীবন থেমে থাকবে না। জীবনকে এগিয়ে নিতে হবে।

##চলবে,

#প্রেয়সীর_শব্দপ্রেম
#ফারজানা_মুমু
[১৪]

আষাঢ়ের মন ভালো নেই। এমপি আসাদুল্লাহ জেওয়াদ চৌধুরীর ফোন এসেছিল খানিক পূর্বে। তিনমাসের জন্য আষাঢ়কে দেশ ছেড়ে ইতালি থাকতে হবে। বিজনেস পার্টনার মিস্টার জেনের সাথে ইম্পর্টেন্ট মিটিং আছে। নতুন কোম্পানি খুলা হবে। কাজটি শেষ করতে তিনমাস সময় লাগবে। আষাঢ় যদি তিনমাসের পূর্বেই শেষ করতে পারে তাহলে তিনমাস থাকতে হবে না ওর। এতগুলো দিন ঝুমঝুমিকে না দেখে থাকতে হবে বলেই আষাঢ়ের বুক ব্যাথা শুরু হয়েছে। নানানভাবে অজুহাত সৃষ্টি করেছে কিন্তু এমপি সাহেব এক কথার মানুষ। কথার নড়চড় করবেন না। বাধ্য হয়েই আষাঢ় যেতে রাজি হলো।

বন্ধু এতগুলো দিনের জন্য চলে যাবে শুনে মন খারাপ নাজিম,মিরাজ ও হিরণের। ঠিক করা হলো জমজমাট আড্ডা দিবে আজ। ছেলেদের পার্টি যেমন হয় তেমনই আয়োজন করা হলো। খাওয়া-দাওয়া,গান-বাজনা, আ্য’ল’কো’হ’ল না হলে পার্টি জমে না। হিরণ সব ব্যাবস্থা করেছে। আষাঢ় সবসময় আ্য’ল’কো’হ’ল, হু’ই’স্কি এসব থেকে দূরে থেকেছে। আজও ব্যাতিক্রম নয়। টালমাটাল অবস্থা বাকি তিনজনের। নিজেদের মধ্যে ধিরো শব্দে গান বাজিয়ে ড্যান্স করে সোফায় এলোমেলো করে ঘুমিয়ে পড়েছে তিনজন। আষাঢ়ের চোখে ঘুম নেই। মনের ভিতরে অশান্তি। হঠাৎ অদ্ভুদ ভয় তাকে ঘিরে ধরল। ভয়ে জর্জরিত হয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালো। অদ্ভুদ ব্যাথায় বুক ধড়ফড় করে উঠল। চোখের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য ফোনটা বের করে ঝুমঝুমির ছবিতে চোখ বুলালো। বেঞ্চে বিরক্তি নিয়ে বসা ঝুমঝুমি। ছবিতে চোখ সরিয়ে ঠোঁট ডুবালো। দীর্ঘ সময় ঠোঁট চেপে ধরল স্ক্রীনে। হৃদয়ের ব্যাথাটা কমেছে কিঞ্চিৎ। বুক ভরে নিঃশ্বাস ছেড়ে ব্যালকনি থেকে দ্বিতীয় তলার ব্যালকনিতে দৃষ্টি বুলালো। ঝুমঝুমিকে সশরীরে দেখার সাধ জাগল। ইচ্ছেটা ধামাচাপা দিল। রাত-বেড়াতে প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের রুমে যেতে নেই বলে মনকে শাশালো। তবুও বেয়াড়া মন মানতে নারাজ। কিছু সময় ওভাবেই ঠাঁই মেরে দাঁড়িয়ে থেকে ব্যালকনির রেলিং এ দুহাত চেপে ঝুঁকে পড়ল নিচ দিকে এই আশায় যদি দেখা পায় প্রাণ প্রিয় মানুষটির।

চোখের পাতায় ঘুম নেই ঝুমঝুমির। অবাস্তব স্বপ্নচারী স্বপ্নে দেখা দিচ্ছে। এতগুলো দিনের গড়ে উঠা পাষাণ হৃদয় প্রেমের পরশে শীতল হচ্ছে। বিরহের উপন্যাসের বইটি কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে টেবিলের উপরে রেখে ব্যালকনিতে দাঁড়াল। চন্দ্রহীন আঁধার রাতের আকাশে আজ তারার মেলা বসেনি। শীতল হাওয়া গরমের দাপট কমাতে উঠেপড়ে লেগেছে। ওড়না ভালো করে মাথায় দিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে বাতাসে নিঃশ্বাস নিলো। ফোঁটা-ফোঁটা বৃষ্টি মুখে এসে ঠেকছে। মেঘের দলেরা কেঁপে-কেঁপে জানান দিচ্ছে আজকের রাত বৃষ্টিময় রাত। গরমের অতিষ্ট করা ধরণীকে সতেজ করতে আগমন ঘটেছে তাদের।

আষাঢ়, ঝুমঝুমির ওড়না দেখতে পেয়ে প্রসারিত হাসলো। রুম থেকে কয়েকটি ছোট-ছোট মারবল এনে ঝুমঝুমির গায়ে ছুঁড়ে দিলো। আচমকা গায়ে কিছু পড়তে ভয় পেল ঝুমঝুমি। কিঞ্চিৎ ব্যাথাও পেল। রাগী দৃষ্টিতে মাথা সামনে ঝুঁকে উপরে তাকিয়ে আষাঢ়কে দেখতে পেয়ে চোখ রাঙালো। আষাঢ় হেসে দিল। বৃষ্টির পানিতে দুজনের ভিজে যাচ্ছে তবুও তাদের মধ্য চলে যাওয়ার তাড়া নেই। আষাঢ় চিল্লিয়ে বলল,
-” ঘুমাওনি? আমাকে নিয়ে ভাবছিলে বুঝি?
-” আপনাকে নিয়ে ভাববো কেন? আমার সময়ের দাম আছে।
-” তুমি অদ্ভুদ তেজপাতা। আমাকে কষ্ট দিতে বড্ড ভালোবাসো তাই না? খুব খারাপ তুমি।

মাথা নিচু করে হাসলো ঝুমঝুমি। আষাঢ়ের শেষ বাক্য বাচ্চাদের মত শুনতে লাগলো। ঝুমঝুমি চলে যেতে চাইলে ডাকলো আষাঢ়। মোহনীয় কণ্ঠে বলল,
-” তোমাকে দেখার তৃষ্ণা আমার বুকে আজীবন থাকবে তেজপাতা। তোমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা ঠেকিয়ে যদি আমার বুকের তৃষ্ণা মিটে। চোখের তৃষ্ণা তো আজীবন থাকবে প্রেয়সী। কানের তৃষ্ণা মিটবে তোমার কণ্ঠ থেকে প্রেমের শব্দযোগ শুনলে। তুমি নামক মানুষটি আমার আজীবনের তৃষ্ণা ঝুমঝুমি।

ঝুমঝুমি সরে আসলো। অনুভূতির জানালা আপনাআপনি খুলে গেল। সৃষ্টির মাঝে সৃষ্টি হলো একঝাঁক অনুভুতি। আষাঢ়কে না পারছে কাছে টানতে আবার না পারছে দূরে ঠেলতে। এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে, অশান্ত হচ্ছে মন। ব্যালকনির দরজা আটকে দিয়ে বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে চোখ বুজলো। কানে ফিসফিস করে শুনতে পেল আষাঢ়ের প্রতিটি বক্তব্য। ‘তুমি নামক মানুষটি আমার আজীবনের তৃষ্ণা ঝুমঝুমি।’

আষাঢ় সোজা হয়ে দাঁড়াল অনুভব করল ব্যাথাটা আর নেই। শান্তি পাচ্ছে খুব। গটগট পা ফেলে রুমের ভিতরে প্রবেশ করল। তখনই মনে পড়ল ঝুমঝুমিকে বলা হয়নি ইতালি চলে যাওয়ার কথা। আচ্ছা সে যদি চলে যায় তাহলে কি ঝুমঝুমি খুব কষ্ট পাবে? আটকানোর চেষ্টা করবে? কাঁদবে? না অনুভূতিহীন হয়েই থাকবে। উত্তর আসলো না। ব্যাথাটা আবারও থরথর করে বেড়ে উঠল। বালিশ মাথায় চেপে ধরে নাজিমকে জড়িয়ে ধরতেই ঘুমঘুম কণ্ঠে নাজিম বলে উঠল,
-” আমি এখনও পিউর ভার্জিন,আমাকে জড়িয়ে ধরে করো না তো শার্লিন।”

হেসে দিল আষাঢ়। শার্লিন নাজিমের নতুন গার্লফ্রেন্ড। স্বপ্নের ঘোরে কবিতা তবুও থামেনা। ভুঁড়ি যুক্ত পেটে মাথা রেখে বালিশ চেপে কিছুক্ষণ চুপ রইল শুনতে পেল নাজিমের পেট থেকে ঘড়ঘড় শব্দ। সোজা হয়ে বসে সন্দিহান নজরে নাজিমকে দেখে ঠিকমতো শুয়ে কপালে হাত রেখে চোখ বুজলো। ঘুম কখন চোখে হানা দিয়েছে টের পেলো না। ঘুমের রাজ্যয় নিজেকে হারিয়ে শান্তিতে নিঃশ্বাস ছাড়লো আষাঢ়।

____________________________

অনেকগুলো দিন পর গতকাল রাতে মুষল ধারে বৃষ্টি হয়েছে। ভ্যাপসা গরমের মুচণ ঘটিয়ে শীতল স্পর্শে ছুঁয়ে আছে ধরণী। সূর্যের দাপট হার মেনেছে বৃষ্টির সাথে। আষাঢ় ছাদে ব্যায়াম করতে ব্যাস্ত। অনেকদিন হলো শরীরের যত্ন নেওয়া হচ্ছে না। পেটের ভুঁড়ি এক দেড় ইঞ্চি বেড়েছে। শরীরের বেহাল অবস্থা। সবসময় ফিটনেস নিয়ে কেয়ারিং থাকা ছেলেটা একজনের মাঝে ডুবে থেকে সব ভুলে বসেছে। নাদুস-নুদুস নাজিম তখন কবিতার বই নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। হিরণ ও মিরাজ আষাঢ়ের সাথে তাল মিলিয়েছে। চ্যালেঞ্জ চলছে পুশআপ কে কতবার করতে পারে।

মিরাজ ষাট বারেই ক্লান্ত হয়ে হার মানলো। হিরণ ও আষাঢ়ের আরো কয়েকদফা শেষ করে হিরণও হার স্বীকার করে নিল। আষাঢ়ের ঠোঁটে জয়ীর হাসি লেপ্টে আছে।

হিরণ, নাজিমের দিকে তাকিয়ে পেটে গুতো দিয়ে বলল,
-” মালটাকে কমা ভাই। প্রেগনেন্ট লাগে তোরে।
-” তোর সমস্যা? প্রেগনেন্ট লাগলে লাগুক।
-” মেয়ে পাবি না। তোরে দেখলেই ভয়ে দৌড় লাগাবে।
-” মেয়ে পাব না ক্যান? যে ভালোবাসবে সে এমনিই বাসবে। মোটা-চিকনের তফাৎ খুঁজবে না।
-” তোর পেটের ভারেই বাসর রাতে বউ চ্যাটকা হয়ে যাবে। ( হাসতে হাসতে মিরাজ বলল)

নাজিম রেগে গেল। ভারী হাতের খিল বসালো মিরাজের পিঠে। মিরাজ ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠে নাজিমের পেটে চিমটি কাটলো। ঠেস মেরে বলল, টুইনস বেবির আব্বা। আপনার কি বারো মাসের পেট? সেই কখন থেকে দেখছি এখনো বাচ্চা পয়দা হচ্ছে না। হয় বাচ্চা পয়দা করুন নয় পেট কমান।

নাজিম হেসে দিল। তলতলে পেটের দিকে তাকিয়ে হাত বুলিয়ে বলল, আমার দ্বারা ব্যায়াম-ট্যায়াম হবে না রে। চিকন হওয়ার মেডিসিন যেদিন বের হবে সেদিন থেকেই আমি চিকন হবো ।

নাজিমের কথায় আষাঢ় ঠোঁট চুকা করে বলল, তোর আর চিকন হওয়া হলো না। আচ্ছা বাদ দে চল রেস্টুরেন্ট যাই। আজকের ট্রিট আমার পক্ষ থেকে। অনেকদিন একসাথে থাকা-খাওয়া হবে না।

আষাঢ় চলে যাবে শুনে বন্ধুদের মন আবারও খারাপ হলো। তবে ট্রিটের কথা শুনে হুলস্থূল শুরু করল। আষাঢ়ের ট্রিট মানে অনেককিছু। সেই সাথে ইংলিশ পানি। লাজাবাব অবস্থা তিনজনের। আষাঢ় মুচকি হাসলো বন্ধুদের চকচক চোখ দেখে। ঠোঁটের কোণায় মৃদু হাসি চেপে রেখেই বলল, পানির কথা ভুলেও মাথায় আনবি না। গতরাত খেয়েছিস অনেক। তোদের জ্বালায় ঘুমাতে পারিনি।

বন্ধুরা পাত্তা না দিয়ে ছাদ থেকে নামার জন্য অগ্রসর হলো। দরজার কাছে আসতেই দেখল তিন-তিনজন রমণী কথার ছন্দে ব্যাস্ত পায়ে উপরে উঠছে। হিরণ দু-পা পিছিয়ে আষাঢ়কে ডাকলো। বিড়বিড় করে বলল,
-” ওরা এসেছে।

আষাঢ় তখন গায়ে শার্ট জড়িয়েছে। পুরো শরীর ঘেমে টুইটুম্বর। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে দরজার পানে তাকাতেই চোখ জোড়া চমকে উঠল। খলখল হাসির শব্দ কানে বাজলো। ঝুমঝুমি আজ হাসছে। শব্দ করে হাসছে।

ঝুমঝুমির হঠাৎ মনে পড়ল পুরনো কুসংস্কারের কথা, বেশি হাসলে কাঁদতে হয়। কিন্তু নীরার আলোভুলো কথা শুনে হাসি কন্ট্রোল করতে পারলো না।

হাসতে-হাসতে ছাদে পা দিয়েছে ঝুমঝুমি এখনো খেয়াল করেনি আষাঢ় তাকিয়ে আছে ওর পানে। হাতে ঝুড়ি। সবজি তুলতে এসেছে।

প্রথমেই তৃষ্ণার খেয়াল হলো ছেলেদের দেখে। বুড়ো আঙুল দিয়ে নীরাকে খোঁচা মেরে বলল, তোর প্রেমিক মশাই দাঁড়িয়ে আছে। ফাটা বাঁশের গলা বন্ধ কর।

নীরা, হিরণকে দেখে লজ্জায় চুপ মারলো। হিরণ ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটিয়ে ইশারায় নীরাকে সাইডে আসতে বলল। নীরা তখন বান্ধবীদের দিকে তাকালো। ঝুমঝুমি ইশারায় বলল যেতে। ছেলে হিসেবে হিরণ মন্দ নয়। নীরার জন্য পারফেক্ট। আষাঢ়ের কাছ থেকে শুনেছে নির্বাচনের পর হিরণের বাবা বিয়ের সম্বন্ধ পাঠাবে নীরার বাসায়। বিয়ের আলাপ-আলোচনার আগে দুজনের মধ্যে সমবোঝতা থাকলে মন্দ হয় না। একজন আরেকজনের সাথে থাকতে পারবে কিনা সেটাও বুঝতে হবে। ঝুমঝুমির সম্মতি পেয়ে নীরা সাইডে চলে গেল পিছন-পিছন হিরণও।

নাজিমকে দেখেই ঝুমঝুমির হাসি পেল। হাসি চেপে তৃষ্ণার হাত চেপে মরিচ গাছের সামনে দাঁড়ালো। গাছ থেকে মরিচ তুলার সময় আষাঢ় পিছন দাঁড়িয়ে নিজের উপস্থিতি বুঝানোর জন্য গলা ঝেড়ে বলল,
-” আমার ঝুমঝুমির সাথে ব্যাক্তিগত কথা আছে।

তৃষ্ণা ভ্রু কুচকালো। ঝুমঝুমির দিকে তাকালো। ঝুমঝুমি তখন চোখের ইশারায় না করল। ঠাঁই মেরে দাঁড়াল তৃষ্ণা। আষাঢ়ের চেহারায় কপট রাগ ফুটে উঠল। তৃষ্ণাকে ধমক দিতে গিয়েও দিল না। মিষ্টি হেসে বলল, তৃষ্ণা তুমি যদি একটু ওদিকে যাও ভালো হতো।
-” কেন? আমার যেতে হবে কেন? আপনি যা বলবেন আমার সামনেই বলবেন। আমরা বান্ধবীরা হলাম একজন আরেকজনের কলিজা,ফুসফুস, কিডনি,মন,হৃদয়,আত্মা।
-” তাহলে একজনের সাথে বিয়ে হলে বাকি দুজন বউ ফ্রী পাব, বুঝাতে চাইছ?

আষাঢ়ের কথাখানি অন্য রকম শুনালো। তৃষ্ণা মুখ বাকালো। ঝুমঝুমিকে বলল, আমি আসছি।

ঝুমঝুমি আটকাল না। তৃষ্ণা সরে যেতেই আষাঢ় পাশে দাঁড়ালো। অভিমানী কণ্ঠে বলল, রাতে এমন করলে কেন ?
-” এমনি।
-” তুমি সত্যিই কি আমায় ভালোবাসো না?

ঝুমঝুমির শরীর কেঁপে উঠল। ইচ্ছে করল বলতে, আমি আপনাকে পছন্দ করি, ভালোবাসতে ইচ্ছে করে কিন্তু বলল না।
শুধু বলল, জানি না। বলেছি সময় চাই।
-” একমাস হয়ে গেল ঝুমি। আর কত সময় চাও তুমি?
-” ধৈর্য্য ধারণ করতে না পারলে ভুলে যান। ঝুমঝুমি ধ’র্ষি’তা হতে পারে কিন্তু সস্তা নয়।

ঝুমঝুমির রাগ বুঝতে পারলো আষাঢ়। এক মিনিট নীরবতা পালনের করে বলল, আজ রাতে আমায় ইতালি যেতে হবে ঝুমঝুমি তিনমাসের জন্য। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে আমাদের আর দেখা হবে না। তুমি হারিয়ে যাবে। আমার কাছ থেকে তুমি অনেক দূরে হারিয়ে যাবে। ঝুমঝুমি চলো না আজ আমরা বিয়ে করে ফেলি। হৃদয়ের বিশাল ঢেউ আমার সহ্য হচ্ছে না। ঢেউ থামাতে হলে তোমাকে আমার হতে হবে। আমার মন কু ডাকছে ঝুমঝুমি। আচ্ছা বিয়ে করতে হবে না শুধু কথা দাও তুমি আমার হয়ে থাকবে?

ঝুমঝুমির ইচ্ছে হলো কথা দিতে কিন্তু বিবেকের কাছে হেরে গিয়ে চুপ রইল। ঝুমঝুমির চুপ থাকা সহ্য হলো না আষাঢ়ের। চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই জড়িয়ে ধরল। বুকের সাথে একদম চেপে রাখল ঝুমঝুমির মাথা। মিরাজ,হিরণ,নাজিম, তৃষ্ণা ও নীরা সকলে অবাক হলো। মিরাজ,হিরণ ও নাজিম এই প্রথম দেখল প্রিয় বন্ধুর পাগলামি। গতরাত থেকেই বন্ধুর চেহারায় কষ্টের দহন ছিল কিন্তু প্রকাশ করেনি।

তৃষ্ণা-নীরা আসতে চাইলে হিরণ ও মিরাজ ওদের হাত ধরে রাখে। ঝুমঝুমি ছটফট করছে ছুটে আসার জন্য কিন্তু আষাঢ় শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরেছে। ঘনঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে উঠল,
-” আমাকে কাঁদিও না তেজপাতা। আমি কাঁদলে তুমি জীবনে কোনোদিন হাসতে পারবে না। তুমি আমার ছিলে, আছো, থাকবে। তিনমাস পর আমি তোমাকে আমার হয়েই দেখতে চাই। আমার মনে তোমার জন্য তৈরি ভালোবাসাকে ঘৃণায় পরিণীত করো না। তোমার যদি কোনো অসুবিধে থাকে বলতে পারো আমায়। সকল সমস্যার সমাধান করে তারপর যাব তবুও তোমাকে অন্যকারো দেখতে পারব না।
-” আমাকে ছাড়ুন। অস্বস্তি হচ্ছে।

আষাঢ় ছেড়ে দিল। ঝুমঝুমি এক মুহুর্ত দেরি না করে নেমে পড়ল। তৃষ্ণা-নীরা ছুটল ওর পিছু। আষাঢ় দেখল ঝুমঝুমির চলে যাওয়া। খাঁচা থেকে ছাড়া পেয়ে পাখি যেমন আনন্দে ছুটে বেড়ায় তেমনি ঝুমঝুমি ছাড়া পেয়ে পালিয়েছে। হৃদ মাঝারে আ’ঘা’ত হানলো।

##চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে