প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-০৯

0
496

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_৯
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

দেখতে দেখতে নুহাশ ছোয়ার বিয়ের ছয়মাস কেটে গেছে।পরিবর্তন ঘটেছে নুহাশ ছোয়ার সম্পর্কেও।কোনো বৃষ্টির রাতেই তাদের প্রনয় হয়েছে।মেনে নিয়েছে দুজন দুজনাকে।নুরকে এখন প্রায়ই রোহিত কলেজ থেকে নিয়ে আসে।মাঝে মাঝে দুজন ঘুরতে চলে যায়।সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই পালটে গেছে।

গত কাল ছোয়ার শরীর টা খুব খারাপ লাগছিলো। তাই আসার সময় মেডিকেলে কিছু টেস্ট করিয়ে এসেছে।সে যেটা সন্দেহ করছে যদি সেটাই হয় তবে এই মুহূর্তে তা কাউকে জানানো যাবে না।এমনকি নুহাশকেও না।তা না হলে তার অসম্পূর্ণ কাজ আর শেষ করতে পারবে না।তার যে এখনো বাবাকে দেয়া কথা রাখা বাকি।

আজ ছোয়া কোর্টে যায়নি।নুহাশও এখনো বাড়িতেই।সবাই মিলে ড্রয়িং রুমে নিউজ দেখছিলো।হঠাৎ কিছু একটা শুনে ছোয়া টিভির দিকে খুব উৎসাহ নিয়ে তাকালো।ছোয়ার দেখা দেখি নুহাশও লক্ষ্য রাখলো টিভিতে।

* দীর্ঘ দশ বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখলো সাবেক মন্ত্রী এরশাদ শিকদার। এক সময় রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও দীর্ঘ দশ বছর আগেই তার ইতি ঘটিয়েছেন এই নেতা।তাকে বরন করে নিতে সাধারণ মানুষের ভির এয়ারপোর্টে।*

মুহুর্তেই ছোয়ার চোখমুখ লাল হয়ে উঠলো। নুহাশ ঠান্ডা মাথায় সবটা পর্যবেক্ষণ করছে।ছোয়া আর বসে থাকলো না।নিজের ঘরে চলে গেলো।নুহাশও কিছু একটা ভেবে ছোয়ার পিছু পিছু গেলো।

“অনেকদিন পর আমার সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষের খোজ আমি পেয়ে গেছি।ছাড়বো না কাউকে ছাড়বো না আমি।রক্তের নেশা পেয়ে বসেছে আবার।এই নরপিশাচ এর রক্ত না পেলে কিছুতেই মাথা কাজ করবে না। কিছুতেই না।

” ছোয়া!

“কে! ও আপনি।

” হ্যাঁ। ওভাবে চলে এলে যে কিছু হয়েছে?আর এভাবে ভয় পেয়ে গেলে যে আমি আসায়?

“না। আসলে অনেক সময় এক যায়গা বসে ছিলাম তো তাই ভালো লাগছিলো না।আপনি এলেন যে কিছু লাগবে?

” আমিও বউকে দেখতেই এসেছি।

সকাকের নিউজ দেখার পর থেকেই ছোয়া একটু কেমন করছিলো। অন্য সময় হলে নুহাশ প্রশ্ন করতো একের পর এক।কিন্তু আজ করছে না।ও শুধু ছোয়াকে লক্ষ্য করছে।ও যেটা সন্দেহ করছে সেটা যদি সত্যি হয় তবে আজ অনেক বড় কিছু হতে চলেছে।

“আলমারিতে একটা ব্যাগ ছিলো পাচ্ছি না।আপনি কি দেখেছেন নুহাশ?

” কিসের ব্যাগ বলতো? আমি তো কোনো ব্যাগ দেখিনি।

“আরে তাহলে যাবে কোথায়?

“এতো রাতে তুমি ব্যাগ দিয়ে কি করবে সেটাই তো বুঝতে পারছি না। এসো শুয়ে পরো কাল সকালে না হয় খুজো আবার।

ছোয়া অপেক্ষা করছে নুহাশ কখন গভীর ভাবে ঘুমিয়ে যাবে।আজ এতো দেরি কেন করছে ঘুমোতে?

” কি ভাবছ?

“কিছু না।

” ঘুমোওনি কেন এখনো?

” সেটাতো আরও প্রশ্ন আপনি কেন এখনো জেগে আছেন।

“বউ না ঘুমোলে আমি কি করে ঘুমাই।

অনেক অপেক্ষার পর ছোয়া লক্ষ্য করলো নুহাশ ঘুমিয়ে গেছে।তাই চুপি চুপি খুব সাবধানে খাট থেকে নামলো ছোয়া।আবারও সেই ব্যাগটা খুজছে।এবার আর বেশি কষ্ট কর‍তে হলো না।

” কি আশ্চর্য তখনো তো এখানে খুজলাম পেলাম না কেন?যাই হোক এবার আমায় বেরুতে হবে খুব সাবধানে। নুহাশ বুঝতে পারলে আমি আর বেরুতে পারবো না।

ছোয়া বের হওয়ার পর নুহাশও তার কাজে লেগে পরলো।ছোয়াকে কেউ ফলো করছে এটা ছোয়ার অজানা।সবটাই নুহাশের কথা অনুযায়ী হচ্ছে।যাতে ছোয়ার কোনো রকম বিপদ না হয়।

রাতের আঁধারে একা একা হাটছে ছোয়া।সে মুলত গিয়েছিলো এরশাদ শিকদারের ডুপ্লেক্স বাংলোতে।রাতের সিকিউরিটির জন্য যার জন্য গিয়েছিলো তাতে সফল হতে পারেনি।তবে একটা খবর সে শুনেছে যেটা শুনে তার এখন অন্য চিন্তা ঘুরছে মাথায়।যদি ওই কথাগুলো সত্যি হয় তবে নুহাশের অনেক বিপদ।
না এটা হতে দেয়া যাবে না।নুহাশকে এদের থেকে বাঁচাতেই হবে।

রুমে গিয়ে ছোয়া চমকে গেলো।নুহাশ বসে আছে।দেখে মনে হচ্ছে তার অপেক্ষায় ছিলো।ছোয়ার গলাটা শুকিয়ে এলো। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।

“আপনি জেগে আছেন!

” কেন ঘুমিয়ে থাকলে সুবিধা হতো বুঝি?

“ম…মানে?

“কোথায় গিয়েছিলে?

“………

” এতো কিছুর পরেও চুপ করে থাকবে?

“আমি আসলে।

” অনেক হয়েছে।ওই খুন গুলো তুমিই করেছিলে তাই না?আমি ভাবতে পারছি না আমার স্ত্রী একজন খুনি।

“আপনি এসব কি বলছেন নুহাশ?

” কেন মিথ্যা বলেছি কিছু? তুমি অস্বীকার করতে পারবে ওই খুন সম্পর্কে তুমি কিছুই জানো না।সেদিন তোমার হাত ফল কাটতে গিয়ে কেটে যায়নি বরং কেউ কেটে দিয়েছে তাই না?তোমার ওই বিশেষ পোশাক আমি দেখে নিয়েছি ছোয়া।একমিনিট।
দেখতো এটা চিনতে পারছো কিনা?

“এটা তো।

” হ্যাঁ এটা তোমার হাতের ব্রেসলেট। যেটা আমি বাবা মারা যাওয়ার পরদিন গেটের একটা কোনায় পেয়েছিলাম।এবার বলো না যে এটা তোমার নয়।আমি সবকিছু জেনে তবেই তোমাকে বলছি।তোমার ফোনের ওয়ালপেপারের ছবিটাতে এই ব্রেসলেট টাই তো পরে আছো তুমি তাই না?
কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে এটা আমাদের বাড়ির সামনে কি করে এলো।তার মানে খুনের রাতে তুমি এসেছিলে?
চুপ করে থাকবে না ছোয়া বল প্লিজ।

নুহাশের চিৎকারে মনে হলো পুরো বাড়িটা কেপে উঠেছে। ভাগ্যিস রুমটা সাউন্ড প্রুভ তাই কেউ কিছু শুনতেই পেলো না।

“আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন নুহাশ।

“তবে ঠিকটা বুঝাও আমাকে!
হয় তুমি আমাকে সবটা খুলে বলবে নয়তো আমি ধরে নিবো আমার বাবাকে তুমিই খুন করেছো।আর আমি তোমাকে নিজের হাতে শাস্তি দেবো।নুহাশ চৌধুরী কি এটা এখন বুঝবে তুমি।বলো।

” আমি আমি আপনার বাবাকে মারিনি নুহাশ আমি তো সেদিন।

“কি থেমে গেলে কেন? তুমি সেদিন কি?

” বেশ সব যখন জেনেই গিয়েছেন আমিও আর কিছুই লুকোতে চাই না।আমিও হাপিয়ে গেছি লুকোতে লুকোতে।

“সেদিন মা বাবার ১৬ তম বিবাহ বার্ষিক ছিলো।আমি মামার বাড়িতে সিলেট ছিলাম।মা বাবাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।তাই তাদেরকে না জানিয়েই মামার সাথে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য এসেছিলাম।বৃষ্টির থাকায় আমাদের যেতে একটু দেরি হয়ে যায়।গিয়ে কি দেখেছিলাম জানেন নুহাশ?আমি ভাবিনি যে বাবা মাকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে আমি নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে যাবো।

“আমি দেখেছিলাম আমার বাবার নিথর শরীরটা। জানোয়ার গুলো মুখটাও থেতলে দিয়েছিলো।বাবাকে শেষবার বাবা বলেও ডাকতে পারিনি।
আপনি তো আম্মাকে খুব ভালোবাসেন তাই না? আপনি নিজের মায়ের নগ্ন শরীর দেখলে কি করতেন? বা এমন কিছু দেখে সহ্য করতে পারতেন? আমি দেখেছি।ওরা আমার ফুলের মতো মাকেও ছাড়েনি।খুবলে খেয়েছিলো।আমার মায়ের সতিত্ব নষ্ট করেছিলো।এটুকু করেই শান্ত হয়নি মাথায় গুলি করেছিলো।ভাগ্য ভালো হওয়ায় গুলিটা মাথার সাইডে লেগেছিলো।তবুও তিন বছর কোমায় ছিলেন তিনি।সেই যাত্রায় মাকে বাঁচাতে পারলেও বাবাকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলি।তখন মামাই আমাদের দায়িত্ব নেন।আমার মা মামার খুব আদরের ছিলেন। ভাবুন তো যদি তখন মামা আমাদের পাশে না থাকতো কোথায় যেতাম আমি।মা কে বাঁচাতে পারতাম।১২ বছরের একটা মেয়ে কোথায় যেত?

“সেদিনই ঠিক করেছিলাম কাউকে ছাড়বো না।এর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো।বাবার একটা ডায়েরি পেয়েছিলাম আমি সেখানে অনেক কিছুই লেখা ছিলো।সেখান থেকেই রহিম, বিপ্লব আর তাহের এর বিষয় জানতে পারি।রহিম, বিপ্লবকে আমি আগে থেকে চিনতাম না।কিন্তু তাহের ছিলো আমার বাবার এসিস্ট্যান্ট। বাবাকে শেষ করতে ও শেষপর্যন্ত ওই পশুদের সাথে হাত মিলায়।তার একটাই কারন টাকা।টাকার কাছে গুরু নামক মানুষটাকে খুন করতেও ওর হাত কপেনি তাই ওকেও শেষ করে দিয়েছি।বেইমানের শাস্তি তো পেতেই হতো তাই না।

“তার জন্যই হয়তো ওর ডে*ড বডির পাশে ওই লেখাটা ছিলো?

” হ্যাঁ।

“যখন মা কোমায় চলে যায় আর বাবাকে হারানোর কষ্ট আমি মেনে নিতে পারছিলাম না।প্রতিশোধ নিবো সেটা তো ভেবেছিলাম কিন্তু কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।তখন মামাকে বলে আমি ক্যারাটে শিখি।অনেক ভেবে দেখলাম আইনের কাছাকাছি থেকে যদি আমি আমার কাজগুলো করি তাহলে কেউ আমাকে সন্দেহ করবে না।তাই বাবার পেশাকেই বেছে নিলাম।

তারপর একে একে পেন ড্রাইভ লকারের কথা সবকিছু নুহাশকে খুলে বললো ছোয়া।

” এরশাদ শিকদারকে আমি আগে কখনো দেখিনি।কিন্তু শুনেছি তার কথা।আর আজ সকালে ওই নিউজ টা দেখে আমার মধ্যে প্রতিশোধের নেশা টা আবার জেগে ওঠে। যাদের মেরেছি তারা কেউ ভালো মানুষ নয়।আমায় একটু পানি দিবেন?

নুহাশ ছোয়াকে পানি এগিয়ে দিলো।ছোয়া পানি পান করলো।

“এবার বলো বাবাকে তুমি কিভাবে চিনো?

” আসলে আংকেল আমার বাবার ছোট বেলার বন্ধু ছিলেন।একদিন আংকেল আমাকে ফোন করে বললেন আমার সাথে দেখা করতে চান।কিছু একটা দিবেন কিন্তু তার আগেই কেউ তাকে।
আমি যখন এসেছিলাম তখন আংকেলকে যেমন আমার বাবাকে দেখেছিলাম ঠিক তেমনভাবেই দেখে আমি অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম।তখন তারাহুরোই সেখান থেকে পালাতে গিয়েই ব্রেসলেট টা পরে যায়।
এরশাদ শিকদার এর বাংলোতে গিয়েছিলাম।ওকে শেষ করবো বলে।কিন্তু যেখানে ওরা আপনার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে সেখানে আমি কি করে চুপ থাকতে পারি।

নুহাশ ওরা ক্ষতি করতে চাইছে।আপনি জানেন আপনার এক্সিডেন্টের পিছনে ওদেরই হাত আছে?আর শামসুল রহমান এর আসল নাম শামসুল শিকদার। ওরা আপন ভাই।

“আমি সবটাই জানি ছোয়া।আর আমি এটাও জানি তুমি বাবাকে মারোনি।এটা তো আমার একটা ছিপ ছিলো যাতে তুমি সবটা শিকার করো।তুমি আমার বাচ্চার বিষয় টা আমার থেকে গোপন করে ভুল করেছো।

” আপনি জানেন?

“তুমি কি ভেবেছো নুহাশ চৌধুরী ঘাসে মুখ দিয়ে চলে?তোমার ব্যাপারে আমি এমন কিছু জানি যা তুমি নিজেই জানো না।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে