প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-০৬

0
567

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_৬
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

ছোয়ার আগেই নুহাশ ঘুম থেকে উঠে গেছে।নুহাশ অপেক্ষা করছে ছোয়া কখন উঠবে।বেশি অপেক্ষা করতে হলো না।ছোয়া উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ২ মিনিটের মাথায় আবার ফিরে এলো।
নুহাশ বলে একটা চিৎকার করলো।

“কি হয়েছে সকাল সকাল এভাবে চিল্লানোর মানে কি?

” আপনি বুঝতে পারছেন না কেন এমন করছি?

“না। আশ্চর্য আমি কি করে বুঝবো তোমার কি হয়েছে!

” এটা কি।কি এটা এখানে এমন হলো কি করে?

“কই দেখি দেখি।এসব কি ছোয়া?

” মানে ইয়ারকি হচ্ছে নাকি।আপনি জানেন না আমি জানবো।

“ছিঃ ছিঃ তুমি এটা কি করলে বলতো।এবার আমি লোকের সামনে মুখ দেখাবো কি করে।

” দেখুন আমি খুব ভালো করেই জানি এটা আপনার কাজ।এই আর কি কি করেছেন আপনি সত্যি করে বলুন।

“কেন তুমি বুঝতে পারছো না। নিজের মধ্যে কি কোন পরিবর্তন বুঝতে পারছো?
বাই দ্যা ওয়ে কি করেছি বলতো?

” কামড়ের…

“থেমে গেলে কেন বলো?

” বুঝেও কেন বুঝতে চাইছেন না আপনি।দেখি সরুন সামনে থেকে।

ছোয়া আর কথা বাড়ালো না।এই লোকের সাথে কথায় পেরে ওঠা অসম্ভব। তাই চুপ করে যাওয়াটাই উপযুক্ত বলে মনে হলো ছোয়ার।

সেদিনের পর কেটে গেছে অনেকগুলো দিন। ছোয়া নুহাশের সম্পর্কে একটু পরিবর্তন এসেছে।ছোয়াও নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে।মিলি প্রথমে নুহাশের বিয়ের কথা শুনে অনেক কষ্ট পেয়েছে এমন ভাব করলেও ছোয়ার সাথে বিয়ে হওয়ায় খুশিও হয়েছে।ছোয়ার বাবার সেই বাক্স এ এমন কিছু ছোয়া পেয়েছে যেটা ছোয়া এতোদিন খুজছিলো।এই বাক্স এ এমন কিছু আছে যেটা থেকে জানা যায় একসময় কার খুব নামি দামি একজন নেতা যার নাম এরশাদ শিকদার ইনিই ছোয়ার বাবার আসল খুনি।যার নির্দেশনা অনুযায়ী সোলাইমান সাহেবকে খু*ন করা হয়েছিলো।
খোজ নিয়ে জানা গেছে আজ থেকে ১০ বছর আগে সবকিছু ছেড়ে তিনি পরিবার সহ আমেরিকায় পারি জমিয়েছে কিন্তু বাকিরা এখনো রয়ে গেছে এদেশেই।এই খুনে ছোয়া এতদিন জানতো ৬ জন যুক্ত আছে কিন্তু বক্সের ভিতর কিছু চিঠি এবং একটা ভিডিও ক্লিপ দেখে জানা গেছে ১২ জনের হদিস। এখন ছোয়া তাদের খুজছে।

ছোয়া কোর্ট থেকে ফিরে শাশুড়ী ননদের সাথে কথা বলে ঘরে গেলো।সময় তখন সন্ধ্যা ৭ঃ৩৪ মিনিট। হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢোকে নুহাশ।পরনের সাদা পাঞ্জাবীটা হাতা অনেকটা র*ক্তে লাল হয়ে আছে। খুড়িয়ে হাটছে নুহাশ। এই অবস্থা দেখে সাথে সাথে আল্লাহ বলে এগিয়ে যায় ছোয়া।

“একি এসব কিভাবে হলো আপনার?

” এক্সিডেন্ট করেছি।ভাগ্য ভালো এবারের যাত্রায় বেঁচে গেছি।

“কিন্তু এক্সিডেন্ট হলো কি করে।গাড়ি কে ড্রাইভ করছিলো?

ছোয়ার চিৎকার শুনে নাহার বেগম ছুটে এলেন ওদের ঘরে। ছেলের এই অবস্থা দেখে তিনি বিচলিত হয়ে ছেলেকে আগলে নিলেন।

” একি এসজব কি করে হলো আব্বা।তোমার এই অবস্থা কেন।নুর ডক্টর খানকে আসতে বল এক্ষুনি।

“আম্মা আমি ঠিক আছি বিচলিত হবেন না।

” হ্যাঁ তা তো দেখতেই পাচ্ছি কেমন ঠিক আছো।আমার আর ভালো লাগে না এসব।একবার মেয়ে এক্সিডেন্ট করে আসছে। একবার স্বামী তো এখন তুমি।আমাকে কি তোমরা শান্তি দেবে না?

এরি মধ্যে ডক্টর খান চলে এলেন।গাড়ি থেকে পরে যাওয়ায় হাতে এবং হাটুতে লেগেছে খুব।পার্টি অফিস থেকে গাড়িতে করে ফেরার সময় এই দুর্ঘটনা।গাড়িতে বিপুল ও ছিলো।দুজন কথা বলছিলো এমন সময় দেখলো সামনের দিক থেকে একটা বড় ট্রাক ওদের গাড়ির দিকেই আসছে।রাস্তা ফাকা থাকায় ড্রাইভার গাড়ির ডোর খুলে পাশেই জোরে ব্রেক করে। তখন রাস্তার পাশে নুহাশ এবং বিপুল ছিটকে পরে এবং ড্রাইভার গাড়িসহ একটা গাছের সাথে বারি খায়।ড্রাইভার সেখানেই সেন্স হারিয়ে ফেলে।বিপুলকে দিয়ে তাকে হসপিটালে পাঠিয়ে দেয় নুহাশ।নিজে একটা সি এন জি ধরে বাড়িতে আসে।ঘটনা যে এক্সিডেন্টলি নয় বরঞ্চ ইচ্ছাকৃত তা নুহাশের বুঝতে বাকি নেই।এটা বিরধী পক্ষের কাজ।বেশ কিছুদিন ধরেই নুহাশকে পদত্যাগ করার জন্য বলছিলো আরো একজন নেতা শামসুল রহমান। তবে এমন কিছু ঘটাবে সেটা নুহাশ টেরই পায়নি।

নাহার বেগম ছেলের পাশে বসে কেঁদেই যাচ্ছেন।ডক্টর চলে গেছে একটু আগেই।বিপুল এলো প্রায় ১ ঘন্টা পরে।বিপুলের তেমন কিছু হয়নি কিন্তু ড্রাইভারের অবস্থা তেমন সুবিধার নয়।

“আপনার সন্দেহ ঠিক ভাই এইডা ওই শামসুল এর কাম।
ভাই আপনি শুধু একবার অনুমতি দেন ওই শামসুলরে আপনার সামনে হাজির করুম।

” বিষয় টা এতোটাও সহজ নয় বিপুল। আমরা সন্দেহ করেছি কিন্তু প্রমাণ নেই আমাদের কাছে।আর একজন নেতার বিরুদ্ধে প্রমাণ ছাড়া কোনো অভিযোগ আনা বোকামি।তবে ছেড়ে আমি দিবো না।এর হিসাব আমি করায় কন্ডায় বুঝে নেবো।

রাত ১ টা বাজে।নহারা বেগম নুর নুহাশের রুম ছেড়ে মাত্রই ঘরে গেলো।ছোয়া নুহাশের কি লাগে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখছে।এটা মেঘ না চাইতেই জলের মতো। এতদিন টুকটাক কথা হলেও এভাবে কখনো কাছাকাছি আসেনি কেউ কারো। আজ নুহাশের মনে হচ্ছে এই এক্সিডেন্ট টা আগে হলে ভালোই হতো।কে না চায় তার ভালোবাসার মানুষটা তার কাছাকাছি থাকুক।নুহাশও চায় খুব করে চায়।

“ঘুমিয়ে পরো আমার আর কিছু লাগবে না।

” কিন্তু।

“তোমার তো খুশি হবার কথা তাই না।তাহলে ছেড়ে দাও আমাকে আমার মতো।

” কি সব উল্টো পালটা কথা বলছেন খুশি কেন হতে যাবো আজব।

“না হবারও তো কোনো কারণ নেই।তুমি তো আমাকে সহ্যই করতে পারো ন্স।

“আমার ভুল হয়েছে।ভুলেই গিয়েছিলাম যে আপনি নুহাশ চৌধুরী। কথায় আপনার সাথে আমি পারবো না।


ইদানীং নুর লক্ষ্য করছে তাকে কেউ ফলো করে কিন্তু কে করে সেটা তার চোখে পরেনি।আজ বাইরে প্রচুর রোদ।ছাতাটাও আনতে ভুলে গেছে নুর।রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে থেকে এখন প্রায় বিরক্ত সে।এখন মনে হচ্ছে গাড়ি নিয়ে এলেই ভালো হতো।এখান থেকে তাদের বাড়ি অনেকটা দুরেই তা না হলে হেটেই যেত নুর।হঠাৎ করেই সামনে একটা বাইক এসে দাঁড়ালো।নুর প্রথমে তাকায়নি কিন্তু লোকটা বাইকের হর্ন দিলো যাতে ছোয়া তাকে লক্ষ্য করে।লোকটা আর কেউ নয় রোহিত।

“আপনি এখানে!

” কেন এদিকে কি আমার আসা বারন?

“আমি সেটা বলতে চাইনি।তাছাড়া আমি এখানে রোজ রিক্সার জন্য অপেক্ষা করি আপনাকে তো কখনো দেখি না।

” গাড়ি থাকতে কেন রিক্সায় যাতায়াত করো সেটাই তো বুঝতে পারি না।যাই হোক চলো তোমাকে ড্রপ করে দিই।

নুর কিছুটা অবাক হলো।সে ঠিক শুনছে তো নাকি ভুল? রোহিত যেখানে নুরকে পাত্তাই দিতো না সেখানে নাকি তাকে আবার ড্রপ করে দেবে ভাবা যায়?

“সরি!

” এই মেয়ে বাংলা বুঝতে পারো না? বলেছি ড্রপ করে দিবো উঠে এসো।

“তার কোনো দরকার হবে না স্যার। আমি রোজ যেভাবে যাই আজও সেভাবেই যাবো। তাছাড়া আপনার সাথে আমার সম্পর্ক টিচার স্টুডেন্ট সেখানে আমাকে ড্রপ করে দেয়া আপনাকে মানায় না।

বলতে বলতেই একটা রিক্সা এসে পরলো।চেনা জানা।নুর প্রায়ই এই রিক্সায় যাতায়াত করে।

” নুর প্লিজ তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাই।

নুর কোনো জবাব দিলো না।রিক্সা মামাকে যাওয়ার তারা দেখিয়ে যেতে বললো।

রোহিতের একটু খারাপ লাগলো।তবে নুরের তুলনায় খুবই কম।সেদিন নুরদের বাড়ি থেকে এসে অনেক ভেবেছে রোহিত।ছোয়াকে সে ভালোবাসলেও ছোয়া কখনো তাকে বন্ধু ছাড়া অন্য কিছু ভাবেই নি।এমনকি ছোয়ার চোখে রোহিতের জন্য কোনো ভালো লাগা দেখেনি।যখনই কথা হতো নর্মাল বন্ধুদের মতই এর বাইরে কিছুই নয়।কিন্তু নুরের চোখে অনেকবার সে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখেছে।এমনকি আজ অনেকগুলো দিন পর দেখেও এটাই মনে হয়েছে।তারপর প্রায় দুটো মাস চলে গেছে। এই কয়েকটি দিন শুধু নুরকে নিয়েই ভেবেছে রোহিত।আশ্চর্যের বিষয় ছোয়ার কথা তার একবারও মনে পরেনি।সমীকরণ মিলাতে সময় লাগলো না রোহিতের।সে বুঝে গেছে তার আসল ভালোবাসার মানুষ কে।কিন্তু কথা হচ্ছে নুর এতো সহজে সবটা মেনে নেবে না।ওকে মানাতে অনেক সময় লাগবে রোহিতের।তাতে কোনো সমস্যা নেই।নুরের কষ্টের কাছে রোহিতের এটুকু সামান্যই মনে হলো।রোহিত আদোও পারবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। নুরের মতো মেয়েরা খুব আত্নসম্মানী হয়ে থাকে।একবার সেখানে আঘাত লাগলে সেই ক্ষত সারাতেও অনেক সময় লাগে।

নুর বাড়িতে ফিরে অনেকটা মন খারাপ করে।ছোয়া বসে বসে মিলির সাথে কথা বলছিলো।নুরের সাথে মিলির আগে থেকেই পরিচয় ছিলো।নুরের কলেজের জুনিয়র ছিলো মিলি।এখন অবশ্য মিলি অনেকটা এগিয়ে গেছে।এখন তারা দুজনেই সেম ইয়ারে।

“আরে নুর আপু এসো না বসো।

” না তোমরা কথা বলো আমার ভালো লাগছে না।

“কি হয়েছে নুর কোনো সমস্যা। টায়ার্ড লাগছে।শরবত করে দিই?

” না ভাবি আমি ঠিক আছি।বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবো।

নুর আর কাউকে কোনো কথা বলার সুযোগ দিলো না।ও ভালোই বুঝতে পারছে ছোয়ার এভাবে বিয়ে করায় রোহিত এখন একা হয়ে গেছে।যেহেতু নুর রোহিতকে ভালোবাসে তাই এখন নুরকে রোহিত দয়া করতে চাইছে।কিন্তু নুর তো কারো দয়া চায় না।

“যা বাবা এর আবার কি হলো!

” আমিও বুঝতে পারছি না মিলি।কিন্তু কিছু তো একটা হয়েছে।যাই হোক তুমি এবার এসো।আর তিন দিন পর যেহেতু কেসটা কোর্টে তোলা হবে তাই তোমাকে সব কিছু চেক করতে হবে।আর হ্যাঁ যাওয়ার পথে একবার ক্লায়েন্ট এর বাড়ি থেকে ঘুরে যাবে কেমন।

“ঠিক আছে ম্যাম।

বিকাল থেকেই আকাশ টা মেঘলা হয়ে ছিলো।সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই পাল্লা দিয়ে বৃষ্টির আগমন। আজ নুরের মনটা ভালো নেই।স্বল্পভাষী, শান্ত মানুষের একটাই সমস্যা। ওরা মনের অনুভূতি কষ্টগুলো কারো সাথে শেয়ার করতে পারে না।

বৃষ্টি নুরের তেমন একটা পছন্দ নয়।কিন্তু আজ কেন জানি মনে হলো ভিজতে।যেই ভাবা সেই কাজ। নুরের বারান্দায় ছোট ছাদ আছে।সেখানেই আকাশে পানে মুখ করে ভিজছে নুর।মনে হচ্ছে বৃষ্টির সাথে সাথে তার মনের দুঃখও কিছুটা কমেছে।

ছোয়া বিকাল থেকেই নুরকে নজরে রাখছিলো।কিছু যে একটা হয়েছে এটা বেশ বুঝতে পারছে।ছোয়ার প্রথম থেকেই নুরের প্রতি কিউরিওসিটি একটু বেশিই।নুরের অদ্ভুত একটা ক্ষমতা আছে নিজের বিষয় গুলো অন্যদের থেকে লুকানোর।

” একা একাই ভিজছো আমাকে কেন ডাকলে না ননদিনী?

“তুমি কখন এলে?

” অনেক্ষন হলো।তুমি এতোটাই মগ্ন ছিলে যে আমাকে খেয়ালই করনি।তা কি এতো ভাবছিলে শুনি।আম্মার কাছে শুনেছিলাম তুমি বৃষ্টি পছন্দ কর না।

“হ্যাঁ তেমন একটা পছন্দ নয় তবে আজ কেন যেন ইচ্ছে হলো।

” তোমার কি কিছু হয়েছে আমাকে বলতে পারো নুর।

“না তো।আমার আবার কি হবে।তুমি বেশিই ভাবছ ভাবি।

” সত্যি বলছো তো?

“একদম।

রাতে নুরের কাপনি দিয়ে জ্বর হলো। ছোয়ার অভ্যস্ত থাকায় তেমন সমস্যা হলো না।নাহার বেগম ইচ্ছে মতো নুরকে বকাবকি করছেন।যখন অভ্যাস নেই তখন কেন অবেলায় ভিজলো ।এই নিয়ে মায়ের সাথে রাগ করে আছে নুর।সে জানে তার রাগ করাটা বেমানান। কিন্তু মনের অবস্থা তার মোটেই ভালো নেই।সেটা তো কাউকে বুঝাতে পারছে না।

তিনদিন ভার্সিটি যায়নি নুর।রোহিত এই তিন দিনে এসে ঘুরে গেছে।তাহলে কি মেয়েটা আবারও হারিয়ে গেলো।আর রোহিতের সামনে আসবে না? কিন্তু রোহিতকে অবাক করে দিয়ে আজ নুর এলো।দেখে বুঝাই যাচ্ছে কিছুটা পরিবর্তন। চোখমুখ কেমন শুকিয়ে গেছে।নুর রোহিতকে লক্ষ্য করেছে কিন্তু তবুও পাশ কাটিয়ে চলে গেলো সে।রোহিত পিছনে থেকে ডাকলেও ফিরে তাকায়নি।

” এমন কেন করছো নুর।শেষ বারের মতো কি একটা সুযোগ পাবো না?

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে