প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-০৫

0
564

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_৫
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

সকালে কারো চিৎকারে ঘুম ভাঙে ছোয়ার।মথাটা একটু বেশিই ব্যাথা করছে।প্রথমে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে আবারও শুয়ে পরলো।পরক্ষণেই আবার সেই চিৎকার।গলাটা কেমন চেনা চেনা লাগছিলো।
“রোহিত!

“আরে কে তুমি বাবা।এভাবে আমার ছেলের বউকে ডাকছো কেন? কি হও তুমি ছোয়ার?

” আপনার ছেলের বউ?

“হ্যাঁ নুহাশ চৌধুরী। কালই ওদের বিয়ে হয়েছে।কিন্তু তুমি কে?

” আন্টি প্লিজ একবার ছোয়াকে ডেকে দিন।আমার ওর সাথে কথা আছে।

“রোহিত!

” ছোয়া আমি যা শুনলাম তা কি সত্যি?
তুমি বিয়ে করে নিয়েছো।হ্যাঁ কি না?

“হ্যাঁ তুমি যা শুনেছ সব সত্যি। কিন্তু

” তুমি এটা করতে পারলে?তুমি জানতে না আমি তোমায় কতটা পছন্দ করি। তুমি জানতে না তুমি আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কেন এমন করলে ছোয়া।একবার বলতে পারতে আমায়।আমি জানি তুমি আমায় ভালোবাসো না।ভেবেছিলাম এখন ভালোবাসো না কিন্তু একদিন ঠিক বাসবে।এভাবে ঠকালে আমায়?

“তুমি ভুল বুঝছো রোহিত।আমার কোনো উপায় ছিলো না এই বিয়েটা ছাড়া। প্লিজ।

” তাহলে কেন বিয়েটা করেছো বল?

“কারন আমরা একে অপরকে ভালোবাসি তাই।
হাই আমি নুহাশ চৌধুরী। মিট মাই ওয়াইফ ছোয়া চৌধুরী।

” ছোয়া তুমি শুধু একবার বলো মিথ্যে।এসব মিথ্যে তাই না?আমি তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবো।

“শান্ত হও রোহিত।এসব সত্যি।আমি তোমার সাথে যেতে পারবো না।আমায় তুমি ক্ষমা করে দিও।

ছোয়া আর দাঁড়াল না।রোহিত যেন পাথর হয়ে গেছে।কতো স্বপ্ন সাজিয়ে ছিলো ছোয়াকে নিয়ে।এভাবে সব স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে তা কি সে ভেবেছিলো?
স্বপ্ন ছিলো তাদের ছোট্ট একটা সংসার হবে।ভালোবাসা ভরপুর থাকবে সে সংসারে। কিন্তু হলো কি?
আসলেই বুঝি মেয়েরা ছলনাময়ী হয়?

” আমার মনে হয় আপনার আর কিছু বলার নেই মিঃ রোহিত।এবার আপনি যেতে পারেন।
নুহাশ আবারও ছাদের দিকে গেলো।

এতক্ষন সবকিছু আড়াল থেকে দেখছিলো নুর।সামনে আসার সাহস হচ্ছিলো না।ঠিক কতগুলো দিন পর মনের পুরুষটিকে দেখলো সে।আগের চেয়ে অনেক সুন্দর হয়ে গেছে।এই বুঝি তার সেই ভালোবাসার মানুষ যার জন্য নুরের মতো মেয়েকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো রোহিত।
তার জীবনে অন্য কেউ আছে যাকে সে খুব ভালোবাসে তাই অযথা যেন রোহিতকে বিরক্ত না করে নুর।এটাই তো বলেছিলো রোহিত।

রোহিতের প্রত্যাখ্যান মন থেকে মেনে নিতে পারেনি নুর।কারো সাথে বিষয় টা শেয়ার ও করতে পারছিলো না।প্রথম ভালোবাসা, ভালো লাগা খুব ভয়াবহ হয়।কেউ কেউ পরিনতি মেনে নিতে পারলেও অনেকেই সেটা পারে না।নুরও সেই দলের একজন।মানুষিক ভাবে অনেকটাই ভেঙ্গে পরেছিলো। পর পর দুবার ফেল করে নুর।সেই হতাশায় একদিন রাস্তা পারাপারের সময় অসাবধানে রোড এক্সিডেন্ট করে নুর।ক্ষত খুব গভীর হওয়ায় সেগুলো ঠিক হতে অনেক সময় লাগে।ছোট বেলায় সমবয়সী বন্ধুদের সাথে খেলা করতে গিয়ে এক তলার ছাদ থেকে পরে গিয়েছিলো নুর।এক পা ভেঙ্গে গেছিলো এবং হাতে অনেক জখম হয়েছিলো।সেবারই তার প্রথম স্কুলে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু মেয়ের ওই অবস্থায় আর স্কুল যেতে দেয়নি বাবা আলহাজ্ব চৌধুরী। দু বছর বাদে ফের স্কুলে ভর্তি হয়।সবকিছু মিলিয়ে পড়াশোনায় অনেক পিছিয়ে যায়।তারপর নতুন করে আবার শুরু করতে অনেকটা সময় লেগে যায়।এসব নিয়ে আর ভাবতে চায় না নুর।ভাবলেই কেমন গা শিউরে ওঠে।

ভেবেছিলো এই লোকটার সামনে আর কোনো দিন আসবে না। কিন্তু আজ এই অবস্থায় এভাবে দেখে থাকতে পারছে না।

রোহিত এখনো সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।ফিরে যাওয়ার জন্য মাত্রই ঘুরছিলো সে।এমন সময় খুব পরিচিত এক কন্ঠস্বর থামিয়ে দিলো তাকে।আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে এই কন্ঠস্বর শুনেছিলো।হুট করেই মেয়েটা কোথায় হারিয়ে গেলো।তারপর কেটে গেছে অনেকগুলো দিন।সময়ের সাথে সাথে ভুলেই গিয়েছিলো সব।আজ হঠাৎ আবার কেন যেন সব কিছু চোখের সামনে ভেসে উঠলো।

“তুমি এখানে!

” হ্যাঁ। আমি এই বাড়ির মেয়ে।আর নুহাশ চৌধুরী আমার ভাই।

কথাটা শোনা মাত্র যেন বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো রোহিত।নুর এই বাড়ির মেয়ে?কই কখনো তার চালচলন দেখে এটা মনে হয়নি যে নুর এমন বাড়ির মেয়ে হতে পারে।কথা বার্তায় কেউ বুঝবে না।যেখানে আজকাল কার দিনে এমন পরিবারের ছেলেমেয়েরা দাম্ভিক একটা ভাব নিয়ে চলাফেরা করে সেখানে নুরকে দেখে এটা বোঝার উপায় নেই।বরাবরই দেখে এসেছে সাধারণ পোশাক, সাধারণ ভাবেই থাকতে।তার থেকেও বড় কথা নুর চাইলেই তাকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য ভাইয়ের পাওয়ার কাজে লাগিয়ে তাকে অনেক কিছুই করতে পারতো। তাহলে নুর কেন এসব করলো না।সবকিছুই কি তার নাটক নাকি সত্যি সত্যিই নুর এমন? প্রশ্নটা আর প্রকাশ করলো না রোহিত।

“বসুন না স্যার আপনাকে ঠিক লাগছে না।

“আমি এখানে বসতে আসিনি। এতো বছর পর পুরনো প্রতিশোধ নিলে তাই না নুর?

“এসব আপনি কি বলছেন স্যার। আমি কেন আপনার থেকে প্রতিশোধ নিতে যাবো?

” হ্যাঁ প্রতিশোধ নিচ্ছো তুমি,তোমার ভাই মিলে।তোমার ভালো মানুষের যে মুখোশ পরে ঘুরে বেরাও না এটা আসলে তুমি নও।

“যদি প্রতিশোধ নেয়ারই হতো তাহলে তার জন্য তিন বছর অপেক্ষা করতাম না স্যার। প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করুন আমি সত্যি জানতাম না যে ভাবিই আপনার সেই ভালোবাসার মানুষ।

” বিশ্বাস! আমি কাউকে বিশ্বাস করি না।তোমাকেও না।

ভালোবাসায় মানুষ এতো বেহায়া কেন হয়? কষ্ট আছে জেনেও কেন মানুষ বার বার সেই দিকেই অগ্রসর হয়? এই যে নুর,সে তো ভেবেছিলো আর কোনো দিন রোহিতের সামনে যাবে না।ভুলে যাবে তাকে।সামনে যায়নি ঠিকই কিন্তু ভুলতে কি পেরেছে? মানুষটাকে ওভাবে দেখেই তো নিজেকে আর আড়ালে রাখতে পারেনি নুর।কিন্তু এবার ও বরাবরের মতোই লোকটা তাকে ভুল বুঝলো। সে কি জানে নুরের ওপর দিয়ে তিনটা বছর কি কি গেছে? এক্সিডেন্ট, মানসিক যন্ত্রণা এই সব কিছুই নুর নিজের মধ্যে রেখেছে।যদি প্রতিশোধ নিতেই চাইতো তাহলে কি এতদিন চুপ করে থাকতে পারতো।একজনকে পাগলের মতো ভালোবাসে অথচ যে তাকে ভালোবাসে তার কোনো মুল্যই নেই।

“না আর ভাববো না আমি এই লোকের কথা।কেন ভাববো সে কি আমাকে বুঝতে চেয়েছে? আমি তো শুধু তাকে একটু সঙ্গ দিতে গিয়েছিলাম।উল্টো আমাকেই কথা শুনিয়ে দিলো।

সকালে সবাই খেতে বসলেও ছোয়া আসেনি।রোহিত যাওয়ার পর থেকে ছোয়া আর নিচে নামেনি।নুহাশ ও তখন কিছু বলেনি তবে এখন মনে হচ্ছে একটু বেশি বেশিই করে ফেলছে ছোয়া।এদিকে নুর চুপচাপ বসে আছে খাচ্ছে না কিছুই।

” তোর আবার কি হলো খাচ্ছিস না কেন?

ভাইয়ের কথায় ভাবনা থেকে বের হলো নুর।একটু আমতা আমতা করে খাওয়ায় মনযোগী হলো।

বারান্দার কাট ফাটা রোদে দাঁড়িয়ে আছে ছোয়া।জীবনটা কেমন এক দিনেই পালটে গেলো।এমন জীবন সে চায়নি।নিজের ফোনটাও নেই।নুহাশ এখনো তা ফেরত দেয় নি।মায়ের সঙ্গে কাল দেখা করিয়ে এনেছিলো বিয়ের পর।
এভাবে চলতে থাকলে তো বাবাকে দেয়া কথা রাখতে পারবে না সে।

“খেতে যাওনি কেন ছোয়া?

নুহাশকে দেখেই বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে ফেললো ছোয়া।তার জীবনের যত সমস্যা যত বিপত্তি সব এই লোকটার জন্য।

” কেন আমি কি আমার মতো একটু থাকতে পারি না।এতেও কি আপনার পারমিশন নিতে হবে?

“তুমি ঠিক কি চাইছো বল তো?কাল যা যা না করেছি সেগুলো করি? আমার কিন্তু কোনো সমস্যা নেই।

” অসভ্যতার সব পিএইচডি করে ফেলেছেন তাই না।

ছোয়াকে কোমড় ধরে কাছে টেনে নিলো নুহাশ।এতে রাগের মাত্রা আরো বেড়্ব গেলো ছোয়ার।
তাই নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতেই নুহাশের গায়ে আবারও হাত তুলে ফেললো।নুহাশ ক্ষিপ্ত হয়ে চোখ দিয়েই মনে হলো ছোয়াকে গিলেই ফেলবে।

“সমস্যা কি আপনার। হুটহাট গায়ে কেন হাত দিয়ে বসেন।শুনুন আমি এখনো এই বিয়েটা মানি না।তাই আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টাও করবেন না।

” খুব বার বেড়েছে তাই না।দেখাচ্ছি ঘরে চলো।

একপ্রকার টেনে হিচরে নিয়ে এলো ছোয়াকে।হাতে খুব ব্যাথাও করছে।কিন্তু রাগের চেয়ে ব্যাথার পরিমাণ কম।

“এখানে যত খাবার আছে ১০ মিনিটে শেষ করতে হবে।যদি শেষ না হয় আমি নিজ হাতে খুব ভালো করে আপ্যায়ন করে খাইয়ে দিবো।নাও ফাস্ট।

খাবারের দিকে তাকিয়ে ছোয়ার গলা শুকিয়ে এলো। ১০ মিনিট কি সারাদিনেও এই খাবার শেষ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।এতো খাবার সে খাবে কি করে।তাও আবার ১০ মিনিটে।ভাবতে ভাবতেই যে সময় শেষ হয়ে গেছে ছোয়া তা টেরই পেলো না।টের তখনই পেলো যখন মুখে নুহাশ খাবার পুড়ে দিলো।ছোয়াকে মুখের খাবার শেষ করার সময়টুকু দিচ্ছে না নুহাশ।একের পর এক লুকমা দিয়েই যাচ্ছে।এক সময় সইতে না পেয়ে ছোয়া মুখের খাবার গুলো ফেলে দিলো।যা দেখে নুহাশ হাত উচু করে মারার জন্য থেমে গেলো।সেই মুহূর্তে নাহার বেগম উপস্থিত হলেন।

” এসব কি আব্বা মেরে ফেলবে নাকি মেয়ে টাকে?

ছোয়া খাবার ফেলে অনবরতই কেশে যাচ্ছে।দম কেমন আটকে আসছে তার।নাহার বেগম দ্রুত ছোয়ার কাছে এগিয়ে এলো।

“আম্মা ওকে বলে দিবেন ২য় বার যেন এমন জেদ আমাকে না দেখায়।আমার একটা কাজ আছে আসছি।

নাহার বেগম ছোয়ার বুক ডলে দিচ্ছেন।মেয়েটাকে দেখে খুব মায়া হলো তার।নুহাশ হঠাৎ করে এমন কেন করছে।সেটাই বুঝতে পারছেন না তিনি।তার ছেলে তো এমন নয়।

” ঠিক আছো বউ মা?

“যার ঘরে এমন একজন স্বামী আছে সে ঠিক না থেকে পারে? খুব ভালো আছি আমি।

” আমার ছেলেটা এমন নয় কিন্তু। তুমি চলো আমি তোমাকে খাইয়ে দেই।

“আমার খিদে নেই আন্টি প্লিজ।

” আন্টি!কেন আমি তোমার মা নই?

“আমার সময় লাগবে।আমি একটু একা থাকতে চাই।

” ঠিক আছে তবে কিছু লাগলে আমায় বলবে কেমন? মা না ভাবো বন্ধু ভাবতেই পারো।

বিকেলে ছোয়া বসে বসে বই পড়ছিলো।ছোয়ার মতো নুহাশেই ঘরেও প্রচুর বই আছে সেখান থেকেই বই নিয়ে পড়ছিলো ছোয়া।
বাইরে নুর দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে আসবে কি আসবে না সেটাই ভাবছে।ছোয়ার সাথে এখনো দেখা বা কথা হয়নি নুরের তাই এসেছে আলাপ করতে।

“ভেতরে আসবো?

” কে?এসো।

“আমি নুর। নুহাশ ভাইয়ার ছোট বোন।

” আমি ছোয়া।আমার যে একটা ননদ আছে জানতাম না তো?

“কারন তুমি এখনো আমায় দেখই নি।বাই দ্যা ওয়ে তুমি করে বলছি তাই কিছু মনে করছো না তো?আসলে আমার মনে হয় আমরা সমবয়সী তাই।

” মনে কেন করবো।আমার আরো ভালো লাগবে।এমনিতেই আমার সমবয়সী কোনো ফ্রেন্ডস নেই।

“তাহলে সকালে যিনি এসেছিলেন?

” রোহিত ও আমার থেকে দু বছরের বড়।কিন্তু ক্লাস সেম ছিলো।যাই হোক বাদ দাও।তুমি কি করো এখন?

“আমি ইংলিশ এ অনার্স করছি এবছরই ফাইনাল এক্সাম। আসলে ছোট বেলায় একটা ছোট্ট এক্সিডেন্টে পিছিয়ে গিয়েছি।
মাঝের ঘটনা গুলো আড়াল করলো নুর।

” কোনো ব্যাপার না।

এক কথায় দুই কথায় অনেকটা সময় কেটে গেলো।নুহাশের কথা ছোয়া প্রায় ভুলেই গেলো।যাক দুটো মানুষ এবাড়িতে আছে যারা অন্তত ওই লোকটার মতো নয়।ছোয়া এটুকু বুঝেছে নুহাশের হাত থেকে ওর রেহায় নেই।তাই আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে সেই সাথে তার লক্ষ্য পুরনের জন্য হলেও আপাতত কোনো ঝামেলা করা যাবে না।
এরি মধ্যে লুবনা বেগম মেয়ের সাথে দেখা করে গেছেন।মেয়ে যে তার একমাত্র বেঁচে থাকার কারন।

বিকেলে নাহার বেগম কিচেনে রান্না করছিলেন।এবাড়িতে কাজের লোকের অভাব নেই।তবে ছেলে মেয়ে মায়ের হাতের রান্না ছাড়া খেতে পারেন না।

“আম্মা আসবো?

” আরে ছোয়া মা এসো।কিন্তু তুমি এখানে কেন এলে?আমাকে ডাকলেই পারতে।কিছু লাগবে?

“আসলে ঘরে থেকে বোর হচ্ছিলাম তাই।আমি আপনাকে হেল্প করবো?

” এমা তুমি তো সবে কাল এলে।এখনই এতো কাজ করতে হবে না।চলো তোমাকে আমি আমাদের ফ্যামিলি ফটো দেখাই।

তারপর একে একে সবার ছবি দেখালেন নাহার বেগম।নুহাশের ছোট বেলার কিছু ছবি দেখে শাশুড়ী বউমা একটু হাসাহাসি করলো।হঠাৎ একটা ছবি দেখে ছোয়া প্রশ্ন করলো এটা কার ছবি।কারন ছবিটায় ফেসটা ভালো করে বুঝা যাচ্ছিলো না।তাছাড়াও মুখের অনেকটা অংশ নিয়েই ব্যান্ডেজ করা।

“এটা কে আম্মা।চেহারা তো বুঝা যাচ্ছে না।

” এটা আমার নুরের।আসলে মেয়েটার ছোট বেলা থেকে কোনো না কোনো বিপদ হয়েই থাকতো।ছোট বেলায় ছাদ থেকে পরে গিয়েছিলো।তারপর প্রায় তিন বছর আগে জানি না আমার মেয়েটার কি হয়েছিলো।পর পর দুবার এইচএসসি তে ফেল করে। হতাশায় রাস্তা পার হতে গিয়ে। আমার মেয়েটার জীবন থেকে তিন টি বছর চলে যায়।তবে আমার মনে হয় মেয়েটা অন্য কোনো কিছু নিয়ে চিন্তায় ছিলো।ও নিজে থেকে কিছু না বললে জোর করেও লাভ হয় না।আগে আমার মেয়েটা অনেক চঞ্চল ছিলো এখন অনেকটাই চুপচাপ হয়ে গেছে।

“নুর দু- দুবার এক্সিডেন্ট করেছে কই তখন তো কিছুই বললো না? তাহলে কি সত্যিই অন্য কোনো কারন আছে?
এরা ভাই বোন এতো রহস্যময় কেন?

নুহাশ বাড়িতে ফিরেছে অনেক রাতে।প্রতিদিনের ন্যায় আজও নাহার বেগম ছেলের অপেক্ষায় ছিলেন।ছেলেকে না দেখে ঘুমোতে পারেন না তিনি।দুশ্চিন্তায় কাটে সারা রাত।

” আম্মা এখনো জেগে আছেন কেন?

“এটা তোমার কেমন কাজ আব্বা।আচ্ছা এখন তো তোমার ইলেকশন নেই তবুও কেন এত রাত করে ফেরো?

” একটু কাজ ছিলো আম্মা।আপনি খেয়েছেন।

“তুমি তো জানো রাতে তোমাকে খাইয়ে না দিলে আমিও খেতে পারি না।

” বলেছি তো আম্মা যেদিন আমার ফিরতে দেরি হবে আপনি খেয়ে নিবেন।

মা ছেলে খাওয়ার পর্ব চুকিয়েছে অনেক আগেই।তবুও বসে আছে।

“নুরটা কেমন যেন হয়ে গেছে আব্বা।সেই আগের মতো চুপচাপ। আজ সারাদিন ঘর থেকেই বের হয়নি মেয়েটা।

” হয়তো পড়াশোনা নিয়ে ব্যাস্ত আম্মা।আপনি তো জানেন এমনিতেই কতগুলো বছর ও পড়াশোনা থেকে দূরে ছিলো।

ছোয়া ঘুমে।নুহাশ সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর পানে চেয়ে।ঘুমোলে সবাইকে বুঝি এমন নিষ্পাপ লাগে? এই মেয়ে জানেও না যে তার ঘুমন্ত চেহারায় ও নেশা কাজ করে ।নুহাশের মাথায় একটা সয়তানি বুদ্ধি এলো।সকালে নিশ্চিত ছোয়া এটা দেখলে তুলকালাম বাধিয়ে ছাড়বে।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে