প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-০২

0
561

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_২
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

সামনে ইলেকশন। নুহাশ খুবই ব্যাস্ত ইদানীং সবকিছু নিয়ে।এদিকে শহরে একের পর এক খুন হয়েই চলেছে।

ছোয়া অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো।পিছন থেকে ছোয়ার মা লুবনা বেগম মেয়ের খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায়।

“কিছু বলবে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?

” বললেই কি তুই শুনবি? সেই কপাল কি আমার আছে?

“কি বলবে বলো না মা। বের হবো আমি।

” বলছি এভাবে আর কতদিন থাকবি তুই। দেখ আমার তো ইচ্ছে করে তোর সুখের সংসার দেখতে।

“মা কতবার বলেছি এসব না বলতে।আমার তুমি ছাড়া কে আছে বলো।এসব বিয়ে টিয়ে আমাকে দিয়ে হবে না।

” তাই বলে সারাজীবন আইবুড়ো হয়েই কাটিয়ে দিবি। আমার ইচ্ছার কি কোনো দাম নেই তোর কাছে ছোয়া?

“অবশ্যই আছে মা তবে এই কথাটা আমি রাখতে পারছি না।আমি যাচ্ছি ফিরতে লেট হবে।

খাবার টেবিলে বসে আছে নুহাশ।মা বোনের সাথে সকালের ব্রেকফাস্ট করছে।নুর আগের থেকে এখন স্বাভাবিক। নুহাশ বোনের দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভাবলো।অল্পদিনেই চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল বসে গেছে।পড়াশোনার চাপ তো আছেই বাবা মারা যাওয়ার শোকটা নুরের ওপর একটু বেশিই প্রভাব ফেলেছে।বাবার আদরের রাজকন্যা বলে কথা।

” নুর তোর এক্সাম কবে?

“অনেক দেরি ভাইয়া।কেন?

“এমনি।চাইলে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে পারিস আম্মাকে নিয়ে।মন ভালো হবে।

” আমি ঠিক আছি ভাইয়া চিন্তা করো না।এখন আমি কোথাও যেতে চাইছি না।

“ঠিক আছে তবে যখন ইচ্ছে হবে আমায় বলবি আমি সব ব্যবস্থা করে দিবো।
আম্মা নানু বাড়ি থেকে ঘুরে আসুন।

” না আব্বা আমিও ঠিক আছি।তাছাড়া সামনে তোমার ইলেকশন তোমাকে একা রেখে কোথাও যাবো না আমি।তুমি এমনিতেই কাজের চাপে খাওয়া দাওয়া ছেড়েই দিয়েছো প্রায়।আমি না থাকলে সেটা আরো বেরে যাবে।

“আম্মা আমি ভাবছি নুরের বিয়ে দিয়ে আমি আর আপনি একটা ট্যুর দিয়ে আসবো ভালো হবে তাই না?

” ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু। আমি এখন বিয়ে করতে চাই না।
তুমি যে দিন দিন বুড়ো হচ্ছো সেটা একবার আয়নায় দেখেছো আসছে আমাকে বিয়ে দিতে।

নুর আর থাকলো না সেখানে।মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মালিহা বেগম হেসে ফেললেন।

“সত্যিই মেয়েটা কত তারাতাড়ি বড় হয়ে গেলো।এখন না হয় মজা করে বলছো যখন সত্যিই বিয়ে দিবে তখন থাকতে পারবে তো তাকে ছাড়া।

” দরকার পরলে জামাইকে ঘরজামাই করে রাখবো আম্মা আমার পুতুলকে আমি হারাতে চাই না।আসলে ও মন মরা হয়ে থাকলে কেমন শূন্য শূন্য লাগে তাই এসব বলে রাগিয়ে দিলাম।

“ভাই বোনে পারোও তোমরা।তবুও আমার শান্তি লাগে।

পার্টি অফিসের কাজ শেষ করে ফিরতে নুহাশের দেরি হয়ে গেলো।এখন রাস্তার এই জ্যাম। বৃষ্টির জন্য রাস্তার আনাচে কানাচে পানি কাদায় মাখামাখি।ছোয়াও জ্যাম এ আটকে গেছে।উপায় না পেয়ে সে রিক্সা থেকে নেমে হাটা ধরলো।হঠাৎ গাড়ির লুকিং গ্লাসে নুহাশ ছোয়াকে দেখতে পেলো একটা সাদা শাড়ি পরা ছোয়া।চুলগুলো ক্লিপ দিয়ে আটকানো এতেই যেন নুহাশ খুন হলো।মুখে তার চাপা হাসি।

” বাহঃ এমন সাধারণ রুপেই এতো মারাত্মক লাগে বউ রুপে কেমন লাগবে কে জানে।খুব তারাতাড়ি এটাও হয়ে যাবে মিস ছোয়া।

“ভাই এটা সেই মাইয়াডা না আমায় যে থাপ্পড় দিছিলো আজ ওরে আমি।

” বিপুল এখানেই থেমে যা।উনি তোর ভবিষ্যৎ ভাবি।

“মানে!

” মানে ‘তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ’ বুঝলি।অনেক অপেক্ষার পর খুজে পেয়েছি আর হারাতে দিবো না।

“ভাই আপনি কি কইতাছেন আমি তো কিছুই বুঝতাছি না।

” তোর এতো কিছু বুঝতে হবে না।এখন থেকে দেখে শুনে রাখবি আমার প্রান ভোমড়াকে।

কিছুদূর হাটার পর জ্যাম ছেড়ে দিলো। ছোয়া দেরি না করে আবার একটা রিক্সায় চড়ে বসলো।যাক শেষমেশ এই জ্যাম তো গেলো।

এর মধ্যে ঘটলো আরেক বিপত্তি। নুহাশের গাড়ির সামনে ছোয়ার রিক্সাটা হুট করে এসে পরায় ড্রাইভার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললো যার ফলে ছোয়া রিক্সা থেকে ছিটকে পরে গেলো।এতক্ষণে নুহাশের হুস ফিরলো।ড্রাইভারের কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও কিছুটা রেগে গেলো নুহাশ কিন্তু প্রকাশ করলো না।গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে গেলো নুহাশ।এগিয়ে গেলো ছোয়াকে তোলার জন্য কিন্তু ছোয়া তাকে সরিয়ে নিজেই উঠে গেলো।প্রচন্ড ব্যাথা পাওয়ায় হাটার শক্তি হলো না। পরে যেতে নিলেই নুহাশ হাত ধরে ফেললো।

“আপনি ঠিক আছেন।মনে হচ্ছে অনেক লেগেছে।

” বুঝতেই যখন পারছেন লেগেছে আবার জানতে কেন চাইছেন অদ্ভুত। মামা আমাকে একটু সামনের ফার্মেসীতে নিয়ে চলুন তো।

“আমি হেল্প করছি। গাড়িতে উঠে বসুন।

ছোয়া গোল গোল চোখে নুহাশের দিকে ফিরে তাকালো।তাকালো বললে ভুল হবে মনে হচ্ছে গিলে খাবে।

” দেখুন এভাবে তাকিয়ে কোনো লাভ নেই। যেহেতু আমার গাড়িতে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে তাই এর দায়ভার ও আমার। আপনি প্লিজ চলুন।

“আপনাকে আমি বলেছি দায়ভার নিতে! বলিনি তো। তাহলে যেচে কেন এসেছেন?

” এই মাইয়া।না মানে আপা আপনি কেন ভাইয়ের লগে এমন করতাছেন।গাড়িতে উঠেন আপনার হাত পা থেকে রক্ত বাইর হইতাছে।

“আপনি সেদিনের ওই অসভ্যটা না? যে রিক্সা চালক মামাকে মারতে যাচ্ছিলেন? তার মানে আজ ইচ্ছে করেই এমনটা করেছেন প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাই না?

” আস্তাগফিরুল্লাহ।ভাই এ কয় কি।আপনি থাকতে আমি নাকি প্রতিশোধ নিমু।কই এই মাইয়ার উপকার করতে আইলাম আর উল্টো অপবাদ দিয়া দিলো!

“বিপুল তোর মুখটা বন্ধ কর। আমি কথা বলছি।
দেখুন ও কিছুই করেনি।আর আপনি হয়তো এটা ভালো করেই দেখেছেন যে আমার ড্রাইভার কিছুই করেনি উল্টো আপনাদের রিক্সাটা হুট করে গাড়ির সামনে এসে পরেছে।শুধু শুধু ঝগড়া করে তো কোনো লাভ হচ্ছে না।আপনার এখন ট্রিটমেন্ট এর প্রয়োজন।

ছোয়া ভেবে দেখলো আসলেই কোনো লাভ নেই।এতে বরং তারই ক্ষতি হচ্ছে।একা একা যেতেও পারবে না।তাই ঠিক করলো নুহাশের হেল্প নিতে হবে তার।তাছাড়া তিন দিন পর তার একটা জটিল কেস আছে।তার আগেই তাকে সুস্থ হতে হবে।

” আপনাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই তো?

“এক কাজ করুন আপনি আপনার ফোন থেকে লাইভ হোন।কিছু যদি করিও তাহলে সবাই সেটা দেখতে পাবে।

” ঠিক আছে চলুন।কিন্তু আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বসবেন আপনি।আপনার মতো নেতাদের আমার একদম পছন্দ নয়।

“ঠিক আছে মেডাম আপনি যা বলছেন তাই হবে এবার চলুন।

ছোয়াকে তার এপার্টমেন্ট এ নামিয়ে দিয়ে গেছে নুহাশ।মেয়ের এই অবস্থা দেখে বিচলিত লুবনা বেগম। নুহাশ সবটা বুঝিয়ে বলে গেছে যাওয়ার সময়।বলা বাহুল্য প্রথম বারেই নুহাশ ছোয়ার মায়ের মন জয় করে নিয়েছে।এটা নুহাশের প্ল্যানের একটা অংশ ছিলো।

” মা এতো চিন্তার কিছু নেই।ঠিক হয়ে যাবো আমি।

“এই জন্যই বলি একটা বিয়ে কর। আমার কথা তো তোর ভালো লাগবেই না।

” উফফ আবার সেই বিয়ে টেনে আনছো কেন।খেতে দাও তো খুব খিদে পেয়েছে।

বাড়ি ফেরার পর থেকে নুহাশ ছোয়ার কথাই ভেবে যাচ্ছে।চাইলেও কাজে মন দিতে পারছে না।অথচ তার কাজের শেষ নেই।ইলেকশন নিয়ে মন্ত্রী, অন্যান্য নেতাদের সাথে অনলাইনে একটা মিটিং ছিলো তার।সেটাও ঠিক মতো করতে পারেনি।অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুতই সেই মিটিং কোনো মতে শেষ করেছে নুহাশ।এখন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকছে আর ছোয়ার কথাই ভাবছে।

“উফ নুহাশ একটু সামলা নিজেকে।সামনে ইলেকশন এখন উল্টো পালটা চিন্তা না করে সেদিকে ফোকাস কর।ছোয়াকে নিয়ে আপাতত আর ভাবিস না।

নিজের মনকে নিজেই বুঝাচ্ছিলো নুহাশ।

সকালে ছোয়ার বাসায় মিলির আগমন। ফোনে শুনেছে ছোয়া এক্সিডেন্ট করেছে তাই সে দেখতে এসেছে ছোয়াকে।ছোয়ার মায়ের সাথে মিলির ভালোই ভাব রয়েছে।রুগী দেখতে এসে রুগীর মায়ের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে।এটা দেখে ছোয়া খুবই বিরক্ত বোধ করে।

” তুমি কি আমায় দেখতে এসেছো মিলি নাকি আমার মাকে?

“আরে ম্যাম কি বলছেন আপনার জন্যই আমি এসেছি।আপনি তো জানেন আন্টিকে আমি মায়ের চোখে দেখি।তাই আর কি।

” হয়েছে।এদিকে এসো কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে।মা মিলির জন্য নাস্তা কিছু বানাও।

“সেটা কি তুই বললেই আমায় করতে হবে? তুই বলার আগেই আমি শুরু করে দিয়েছি।শোনো মিলি আজ তোমার যাওয়া হবে না।এখানেই থাকবে।

” আমার কোনো সমস্যা নেই আন্টি।

ইদানীং নুহাশ একটু বেশিই ব্যস্ত। দিন রাত সব ভুলে গেছে সে।খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম বেড়েই চলেছে।এই যেমন সকালের খাবার দুপুরে মাঝে মাঝে সারাদিন না খেয়েই কাটিয়ে দিচ্ছে।গত দুদিন নুহাশের ঠিকঠাক দেখা পায়নি নাহার বেগম।আজ পেয়ে ইচ্ছেমতো বকে যাচ্ছে ছেলেকে আর নিজ হাতেই খাইয়ে দিচ্ছে।

“বাহঃ নিজের ছেলেকেই শুধু খাইয়ে দিবে মা। আমি বুঝি তোমাদের কেউ না।

” এটা কেমন কথা নুর।ছেলেটা দুদিন ঠিক মতো খায়নি।আর তুই আছিস তোর কথা নিয়ে।

“এই জন্যই বলেছি আম্মা আমি বিয়ে করার আগে এই পেত্নিকে বিদায় করবো।

” তুমি সবসময় এমন করো ভাইয়া।

“তোদের ঝামেলা এখানেই থামা নুর।আমার আর ভালো লাগে না।এমনিতেই ছেলেটাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই আমার।

বলতে বলতেই চোখ ভিজে এলো নাহার বেগমের।যা দেখে নুর এবং নুহাশ দুজনেই ঘাবড়ে গেলো।

” কি হয়েছে আম্মা?

“মা এমন কেন করছো?

” তোমার বাবারো এই পথেই জীবন দিতে হয়েছে আব্বা।আমি আমার বুকের মানিককেও হারাতে চাই না।আমার কথায় তো রাজনীতি তুমি ছাড়বে না।কিন্তু তোমাদের দুই ভাই- বোনকে নিয়ে আমার অনেক চিন্তা হয়।

নুহাশ মা বোনকে জরিয়ে নিলো নিজের সাথে।
“চিন্তা করবেন না আম্মা।আমার কিচ্ছু হবে না।আপনার দোয়া আছে তো আমার সাথে।বাবার খুনিকেও আমি খুব তারাতাড়ি খুজে বের করবো দেখবেন।শুধু আপনার ছেলের জন্য দোয়া করুন যেন এই ইলেকশনে জিতে ফিরতে পারি।

” আমার দোয়া সবসময় তোমার সাথেই আছে আব্বা।

গত এক সপ্তাহে ছোয়ার সাথে দেখা হয়নি নুহাশের।কফিশপে এক ছেলের সাথে হাসতে হাসতে কফি খাচ্ছিলো ছোয়া।এটা দূর থেকে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে মনযোগ দিয়ে দেখছিলো নুহাশ।ব্যস এতেই যেন শরীরে জ্বালা ধরে গেলো তার।

“কে এই ছেলে কিছু জানতে পেরেছো?

” এর নাম রোহিত।পেশায় একজন প্রফেসর। মেডামের কলেজের বন্ধু।

“কলেজের বন্ধু!এর বেপারে সব কিছু জানতে চাই আমি। খোজ নাও।
নাও ইউ গো।ছোয়া কাজটা একদম ঠিক হয়নি।নুহাশ ছাড়া তোমার জীবনে অন্য কোনো পুরুষ থাকবে না।একবার ইলেকশনটা যেতে দাও।তারপর তোমাকে আমার আসল রুপ দেখাবো।আই প্রমিজ।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে