প্রেম পর্ব-১৯

0
1265

#প্রেম
#পর্বঃ১৯
#Tanisha Sultana

জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে মিষ্টি। কৃশ গাড়ি ডাইভ করছে

“মিষ্টি

” হুম

“বলো না কি হয়েছে?

” আপনি কেনো আমাকে বিয়ে করতে চান

“এটা কেমন প্রশ্ন

” এটাই প্রশ্ন। যখন আমার লাইফে আপনি ছিলেন না তখন অন্য রকম ছিলো। কতো ভালো ছিলাম। জীমের সাথে আপনার জন্য আমার সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে

“মিষ্টি আমার দোষ কোথায়? আমি তো জোর করি নি। তোমার জীমই তো আংকেল কে সুট করলো

” আপনি আমাকে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে না লাগলে এমনটা হতোই না

কৃশ জোরে গাড়ি ব্রেক করে। মিষ্টির মুখের কাছে গিয়ে বলে

“ভালোবাসি তোমায়। আমার #প্রেম তুমি। তোমাকে জীমকে ভুলতে হবে। এছাড়া আর কোনো অপশন নেই। সো তুৃমি যত বেশি জীমের কথা শরণ করবে আমাদের বিয়ের দিন ও ততো কাছে চলে আসবে।

মিষ্টি কিছু বলে না। কারণ কিছু বলে লাভ নেই।

মিষ্টির বাবা ডিভোর্স পেপার তৈরি করেছে। মিষ্টি বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাবার রুমে যায়

” বাবা ডাকছিলে

“হুম

মিষ্টির হাতে পেপারটা ধরিয়ে দিয়ে বলে

” তুমি সাইন করে জীমকে দিয়ে দিও।

মিষ্টি পেপারটা নিয়ে রুমে চলে আসে। আজ ভালোবাসার শেষ দিন। সাইন করতেই হবে মিষ্টির। এতোদিন জীম আর মিষ্টির সম্পর্কের একটা নাম ছিলো আজ থেকে সেই নামটাও থাকবে না।

কাঁপা কাঁপা হাতে মিষ্টি সাইন করে।
কেনো এমন হয়? কেনো এতো ভালোবেসেও পাওয়া হবে না? খোদা যদি জীমের জন্য মিষ্টিকে নাই বানায় তাহলে কেনো ওর প্রতিই দুর্বল করলো?

সকালে আজ একটু আগেই মিষ্টি ভার্সিটির উদ্দেশ্য বের হয়। গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে জীম আসার অপেক্ষা করছে। জীম বাইক চালিয়ে আসে। হেলমেট খুলে দেখে মিষ্টি ওর দিকে এগিয়ে আসছে

“এই নিন

” কি এটা

“ডিভোর্স পেপার। একটা মিথ্যে সম্পর্ক কে আমি আর বইতে পারছি না। একটা ভুল করেছিলাম এখন সেই ভুলটা সুধরে নিয়েছি। আমি সাইন করেছি আপনিও কইরেন

জীম মিষ্টির কথা গুলো শুনছিলো। মিষ্টির হাত থেকে ডিভোর্স পেপারটা নিয়ে ছিড়ে ফেলে

” এসব কি নাটক হচ্ছে মিষ্টি?

“আপনি এটা ছিরলেন কেনো?

” বিয়েটা আমার ইচ্ছেই হয়েছে ডিভোর্স টাও আমার ইচ্ছেই হবে।

মিষ্টির গালে হাত দিয়ে বলে

“এই মিষ্টি কেনো এমন করছো? আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। খুব ভালোবাসি তোমায়। আর আমি জানি তুমিও আমায় খুব ভালো বাসো। তাহলে কেনো এমন করছো?

” বাসি না ভালো

জীম মিষ্টিকে ছেড়ে দেয়

“তাহলে কেনো নাটক করলি আমার সাথে? কেনো আমাকে শেষ করে দিলি? তোর জন্য সব করেছি। সিঙ্গার হয়েছি। শুধু তোকে পাবো বলে। নিজের বাড়ি কিনেছি তোকে নিয়ে থাকবো। গাড়ি কিনেছি। আর তুই শুধু নাটক করে গেলি আমার সাথে কেনো?

চিৎকার করে বলে জীম। মিষ্টির চোখ দিয়ে পানি পরছে

” কয়েকদিন পরে কৃশ আর আমার বিয়ে।

“কয়ডা লাগে তোর। লজ্জা করে না হাজবেন রেখে অন্য ছেলেকে বিয়ে করতে চাইছিস।

মিষ্টি মাথা নিচু করে আছে।

” ওই ফুলটুসি আমি আর তুমি মিলে তোমার বাবা কে বুঝাবো উনি ঠিক বুঝবে। প্লিজ এমন করো না

“বাবা বুঝবে না। দয়া করেন আমার ওপর। প্লিজ মুক্তি দেন আমার। আমি আর পারছি না। একটু শান্তি চাই আমি। প্লিজ

মিষ্টি দৌড়ে চলে যায়। জীম ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। পাগল পাগল লাগছে জীমের। এমনটা কেনো হলো?

ভার্সিটির সামনে জীম আর মিষ্টিকে কথা বলতে দেখে কৃশ ভিষণ রেগে যায়। মিষ্টির বাবাকে বলে

” আংকেল আমি এই মাসের মধ্যেই মিষ্টিকে বিয়ে করতে চাই

“কিন্তু ওর পড়ালেখা

” বিয়ের পরও পড়ালেখা কর যায়

“কিন্তু

” কোনো কিন্তু না

জীম চলে যায়।

“মিষ্টি কে আমি ছাড়তে পারবো না। বড্ড বেশি ভালোবাসি আমি ওকে। ও হয়ত এখম আমাকে ভালোবাসে না। কিন্তু বিয়ের পারে ঠিক ভালোবাসবে।

কৃশ মনে মনে বলে

কৃশ মিষ্টি রুমের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। এই রুমে কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে মিষ্টি জীমের।

” কেনো এমন করলে মিষ্টি? কি করবো আমি? খুব অসহায় লাগছে আমার? মরে গেলে হয়ত এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতাম। কিন্তু মরবো কি করে আমি মরে গেলে বাবা মা ভাই ওদের কি হবে। কিন্তু এভাবে আমি বাঁচবো কি করে? মানুষ এতো নিষ্ঠুর কেনো
মিষ্টির বেডে বসে জীম এগুলো বলে

মিষ্টি জীমের ছবি জড়িয়ে কাঁদছে। একটু আগেই ওর বাবা বলে গেছে আর পনেরোদিন পরে ওর বিয়ে

“জীম কি করবো আমি? বাবা মাকে ছেড়ে তোমার কাছে কি করে যাবো আবার তোমাকে ছাড়া কি করে থাকবো? বেঁচে থাকাটা কঠিন হয়ে গেছে। মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার।

আজ আর মিষ্টির ভার্সিটিতে যেতে ইচ্ছে করছে না। রুমে শুয়ে আছে কৃশ আসে

” কি করছো?

“কিছু না

” মন খারাপ

“আমার মন কখনো ভালো থাকে না

“ঠিক আছে চলো ফিউচার প্লান করি তোমার মুড ভালো হয়ে যাবে

” যার ফিউচারই নেই তার আবার প্লাজ

“মিষ্টি প্লিজ এভাবে বলো না
আচ্ছা চলো টিভি দেখি

টিভি চালু দিতেই দেখে তৌহিদ আফ্রিদির শো হচ্ছে আর আজ ওখানের গেস্ট জীম

” আপনার এই জীবনে আসার কি স্পেশাল কারণ আছে

“হুম।আমার এই সাফল্যের একমাত্র কারণ আমার সে। সে আমাকে একটা গিটার কিনে দিয়েছিলো সেটাই আমার গানের হাতেখড়ি

” সে কি এখনো আছে

জীম একটু হেসে বলে

“সে আছে কিন্তু আমার নেই। অন্য কারো হয়ে গেছে। তাকে আটকে রাখার জন্য বিয়েও করেছিলাম কিন্তু এই যে কপাল। কাপালে না থাকলে কিচ্ছু হয় না। আমার কপালটা খারাপ। #প্রেম আমাকে সাফল্য এনে দিয়েছে ঠিকি কিন্তু #প্রেম আমাকে মেরে ফেলেছে। তাই আমি সবাইকে হাত জোর করে বলবো তোমরা #প্রেম করো না। ভালো থাকতে পারবে

” তাকে ডেডিকেট করে একটা গান হয়ে যাক

জীম গিটার হাতে নেয়

“যদি আরেক জনম আমি পাই গো সে জনমে তোমাকে চাইবো

এ জনমে তুমি হলে না আপন
প্রমের নামে শুধু ভেঙে দিলে মন
বিধির কাছে সবই কইবো

কৃশ আর মিষ্টি দুজনই শোটা দেখছিলো। কৃশ লাথি মেরে টিভি ভেঙে ফেলে। মিষ্টি কেঁপে ওঠে

” আর কখনো টিভি দেখবা না

কৃশ বেরিয়ে যায়। মিষ্টি কাঁদছে। #প্রেম শুধু কাঁদায়।

অনেক দিন পরে আজ জীম আবার সিগারেট আর মদ নিয়ে এসেছে। আজ মন ভরে নেশা করবে। মিষ্টি যোগ্য হওয়ার জন্য এগুলো ছেরেছিলো। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে এগুলোই ওর একমাত্র সাথি।

একহাতে মদের গ্লাস অন্য হাতে সিগারেট। মিষ্টির রুমের দিকে তাকিয়ে আছে। একদিন এই রুমটাই আলো জ্বলতো কিন্তু আজ অন্ধকার। কোথাও একটু আলোর ছিটেফোঁটাও নেই।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে