প্রেম তুমি পর্ব-১১

0
1523

#প্রেম_তুমি
#part:11
#Mishmi_muntaha_moon

সকাল হতেই অর্নিল হোয়াইট টিশার্টের উপর ব্লু জিন্সের শার্ট পরে রেডি হয়ে গিটার নিয়ে বাহিরে যায়।অর্নিলকে বাহিরে যেতে দেখে অর্পা বেগম হাসি মুখে বলল

–অর্নি কোথায় যাচ্ছিস?

অর্নিল ডায়নিং টেবিলে বসে অর্পা বেগম কে বলল

–ভার্সিটি তে যাচ্ছি।দাও খাবার দাও

অর্নিলের কথা শুনে অর্পা বেগম খাবার বেরে খুশি হয়ে বলল

–আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

অর্পা বেগম অর্নিল কে নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দিলো। অর্নিল খাবার খেয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে।
ভার্সিটি তে গিয়ে অর্নিল খালি ক্লাস রুম টাতে যায় যেখানে ওরা সব ফ্রেন্ড রা বসে আড্ডা দেয়।অর্নিল কে দেখতেই ফারহা খুশি হয়ে অর্নিলের দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু অর্নিল ফারহাকে এড়িয়ে তুশার রোহান আর জেবার কাছে গিয়ে ওদের পাশে বসে।অর্নিল কে দেখে তুশার বলে

–এতোদিন পর কোথা থেকে উদয় হইলি?

তুশারের কথা শুনে জেবা বলল

–ওয়াও তোকে দেখে খুব ভালো লাগছে।

অর্নিল গিটারে টুংটাং সুর বাজিয়ে বাকা হেসে এক চোখ টিপে বলল

–ইয়াপ নাও দি অল্ড অর্নিল ইস বেক।

অর্নিলের কথা শুনে সবাই চিল্লিয়ে উঠলো। অনেকক্ষন বিভিন্ন বিষয়ে গল্প করল সবাই।কথার মাঝেই রোহান বলল

–অনেক দিন হয়ে গেলো আমরা কেউই গান গাই নি।অনেকে রিকুয়েষ্ট ও করছে। তাই ভাবছি কাল আমাদের সেই আগের জায়গায় হয়ে যাক?

রোহানের কথায় সকলে সহমত প্রকাশ করে।অর্নিল ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল

–কাল পারবো না পরশু। কাল একটা কাজ আছে।

–আচ্ছা।

তুশার ফারহার দিকে তাকিয়ে মজা নিয়ে বলল

–কিরে ফারহা আজ এতো চুপ কেন?তোর বাপে বিয়া টিয়া ঠিক কইরা ফালাইসে নি?

তুশারের কথায় ফারহা হেসে বলল

–একদমই না। কিন্তু অতি শীগ্রই হবে ডোন্ট ওয়ারি।

ফারহার কোথায় রোহান ফারহার কাধে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে জোরে হেসে বলল

–যাহ তাহলে আমাদের অর্নিল বাদ।

–এইটা তো দেখাই যাবে।

আয়রা সন্ধ্যা বেলায় বাড়ি ফিরে সরাসরি ওর মার রুমে যায়।জুহি বেগম আয়শা খাইয়ে দিচ্ছে।আয়রাকে দেখে বলল

–কিরে কোথা থেকে ফিরলি?কত চিন্তা হচ্ছিলো।

আয়রা খোলা চুল গুলো হাত খোপা করে বলল

–না আমি আসলে ভাবছিলাম যে এখানে কয়েকটা টিউশনি করালে ভালো হতো।তাই বাহিরে গিয়েছিলাম কিন্তু,,,

আয়রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে রইল। জুহি বেগম আয়শাকে খাইয়ে হাত ধুয়ে রান্নাঘর থেকে আবার ভাত নিয়ে মেখে আয়রাকে খাইয়ে দিতে লাগল।তারপর বলল

–থাক এখন এইসব চিন্তা বাদ দে।

আয়রা খেতে খেতে আবারও বলল

–মা আমি আরেকটা ব্যাপার ভাবছিলাম।

জুহি বেগম ব্রু কুচকে বলল

–হুম বল কি ভাবছিলি?

আয়রা হাত দিয়ে মুখটা মুছে বলল

–মা আমি ভাবছিলাম যে এইখানে আমাদের কেউই নেই আর তাছাড়া আমার পড়া ও হবে না আর কোনো জব পাওয়ার ও সম্ভব না।আমরা যদি ঢাকায় চলে যাই।ওখানে আমি একটা জব করতাম ক্যাফে তে রিমুর মামার ক্যাফে খুব ভালো উনি।আর একটা রুম ভাড়া নিবো তাহলেই হবে। তুমি কি বলো?

আয়রার কথা শুনে জুহি বেগম কিছুক্ষন ভেবে বলে

–না আয়ু আমি এখান থেকে যেতে চাচ্ছি না।এখানে কেউ থাকুক অথবা না থাকুক আমাদের স্মৃতি তো সব এখানেই।আমি যেতে চাই না ঢাকা।

জুহি বেগম আয়শাকে ভালো করে ঘুম পারিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।আয়রা ওর মার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে উঠে ছাদে চলে যায়। মাথায় বিভিন্ন চিন্তা ঘুরছে আয়রার।আয়রা আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজে নিজেই বলে

–উফ কি করবো আমি।মা ও রাজি হতে চাচ্ছে না।কিন্তু এখানে থাকলে তো আমার জব করাও হবে না আর যেইটার জন্য বিয়ে থেকে পালালাম সেইটা ও হবে না।
আর মা আমাকে কখনো অভাবের কথা বলবেনা কিন্তু আমি তো চুপ করে বসে থাকতে পারবো না।

আয়রা মনখারাপ করে গালে হাত দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।

অর্নিল বাড়িতে গিয়ে দেখে অর্পা বেগম রেগে সোফায় বসে আছে আর উনার অপসাইট সোফায় অর্নব আর ওর বাবা চুপ করে বসে আছে।অর্নিল গিটার টা রুমে রেখে এসে অর্পা বেগমের সাথে সোফায় বসে পরল।তারপর অর্নবকে ইশারায় জিজ্ঞাস করল কি হয়েছে। অর্নব কিছু বলার আগেই অর্পা বেগম অর্নিলের দিকে ফিরে বলল

–দেখ না অর্নি ওরা কেউই আমার কথা শুনছে না।তোর বাবাকে তো আমি দেখে নেবো কিন্তু অর্নব,,,ও আমার কথা একদমই মানছে না তুই কিছু বল।

অর্পা বেগমের কথা শুনে অর্নব বড় বড় চোখ করে বলল

–ও আমায় কি বলবে আমি ওর থেকে বড় বুঝলা।

অর্নিল একপলক অর্নবের দিকে তাকিয়ে বলল

–আচ্ছা হয়েছে টা কি বলবি তো?

অর্নিলের কথা শুনে অর্নব কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে বলল

–মা তুলির সাথে দেখা করতে বলেছিলো আমি দেখা করেছি মা বলল তুলিকেই বাড়ির বউ করবে আচ্ছা ঠিক আছে এইটা ও মানলাম আমারও পছন্দ হয়েছে।কিন্তু এখন উনি বলছে এই কয়েকদিনেই বিয়ে করাতে চায়।মানে কি এর?

অর্নবের কথা শুনে অর্পা বেগম কাদো কাদো হয়ে বলল

–দেখলি কেমন করছে আমার সাথে।এই পরিবারে আমার কথার কোনো মূল্যই নেই।

অর্পা বেগমের কথা শুনে অর্নিল বলল

–মা তুমি কি বলছো তোমারই তো এই পরিবার কিন্তু অর্নব এর লাইফ ওর ডিসিশন জানা টাতো প্রয়োজন তাই না।

অর্নিলের কথা শুনে অর্পা বেগম মনখারাপ করে উঠে উনার রুমে চলে যায়। অর্পা বেগমকে এভাবে চলে যে দেখে অর্নব দীর্ঘশ্বাস ফেলে অর্নিলের দিকে তাকায়।

অর্নিল আর অর্নব একটা গাছপালা ভরা পাকা রাস্তায় গাড়ির উপর বসে আছে। অর্নিল আকাশের দিকে তাকিয়ে অর্নবের উদ্দেশ্যে বলল

–তুই এতো অভার রিয়েক্ট কেনো করছিস।তুলিকে যেহেতু তোর পছন্দ হয়েছে তাহলে মার কথায় রাজি হয়ে যা।

অর্নিলের কথা শুনে অর্নব ব্রু কুচকে বলল

–তুই ও মার কথায় সহমত?

অর্নবের কথায় অর্নিল নেমে নিচের থেকে ইট তুলে ডানে থাকা নদীতে ছুরে মেরে বলল

–সমস্যা কোথায় তোর?বিয়ে করে বাসর সেরে ফেলবি শেষ। এতে এতো চিন্তা ভাবনার কি আছে।

অর্নব ও গাড়ির উপর থেকে নেমে অর্নিলের পাশে দারিয়ে বলল

–মজা না করে একটা উপায় বল।

–রাজি হয়ে যা।

অর্নব কিছুক্ষন ভেবে গাড়িতে বসে বলল

–আচ্ছা ঠিক আছে।চল বাড়িতে।

সকাল হতেই অর্নিল রুম থেকে বের হয়ে সোফায় গিয়ে বসল। একটু পরেই অর্নব ও এসে বসল। অর্পা বেগম মনখারাপ করে চুপচাপ সবাইকে খাবার বেরে দিয়ে চলে যেতে নিতেই অর্নিল ডাক দিয়ে পাশে বসতে বললো। অর্পা বেগম চুপ থেকেই অর্নিলের পাশে বসে। অর্নিল চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল

–মা তুমি এখনো মুখ ফুলিয়ে বসে আছো।আচ্ছা বাদ দাও তোমার জন্য খুশির খবর আছে শুনবে?

অর্নিলের কথা শুনে অর্পা বেগম অর্নিলের দিকে তাকালো। অর্নিল কিছু বলার আগেই অর্নব চায়ের কাপ এ চুমুক দিয়ে বলল

–আমি রাজি বিয়েতে তোমার যখন ইচ্ছে তখনই।

অর্নবে কথা শুনে অর্পা বেগম খুশি হয়ে অর্নবের গাল চেপে ধরে রুমে চলে যায় তুলির মা বাবাকে খবর দিতে হবে তাই।

আয়রা মনমরা হয়ে বারান্দায় বসে আছে।কিছুই ভালো লাগে না।কোনো কাজ ও নেই খুব বোরিং কাটে সারাদিন।আয়রা গালে হাত দিয়ে রাস্তায় তাকিয়ে আছে জুহি বেগমের ডাক শুনে পিছে ঘুরে তাকায়।
জুহি বেগম আয়রার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

–কি হয়েছে এতো মনমরা হয়ে থাকিস কেনো সারাদিন?

আয়রা মুচকি হেসে বলল

–নাহ কিছু না এভাবেই বাসায় এভাবে বন্ধি হয়ে থাকতে ভালো লাগে না।

জুহি বেগম হেসে বলল

–ওহ আচ্ছা শুন আমি অনেক ভেবে দেখেছি তোর কথা গুলো।

জুহি বেগমের কথা শুনে আয়রা খুশি হয়ে বলল

–কি ভেবেছ?

–তুই যা বলেছিস ঠিকই বলছিস। আমরা তাহলে ঢাকায় শিফট হবো

জুহি বেগমের কথায় আয়রা খুশি হয়ে জুহি বেগমকে জরিয়ে ধরলো।

আজকের পুরো সময় অর্নিল অর্নবের সাথেই কাটিয়েছে।
এখন অর্নিল আর অর্নব বসে টিভি দেখছে তখনই অর্পা বেগম এসে টিভি বন্ধ করে দেয়।
টিভি বন্ধ কিরে দিতেই অর্নব বিরক্ত হিয়ে বলে

–কি হলো আবার?

–শুন একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলার ছিল।

অর্নিল অর্পা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল

–বলো কি বলবে শুনছি আমরা।

অর্পা বেগম অর্নবের দিকে তাকিয়ে, খুশি মনে বলে উঠলো

–পরশু তোর বিয়ে।

অর্পা বেগমের কথা শুনে অর্নিল আড়চোখে অর্নবের দিকে তাকালো। অর্নবের মুখ দেখার মত।অর্নব অসহায় হয়ে বলল

–এতো তাড়া কিসের।

–তুলির ভাই দিহান কানাডা যাচ্ছে না।পরশুই ওর ফ্লাইট তাই।আমি তোর বাবাকেও বলে দিয়েছে উনার তো কোনো আপত্তি নেই। আর অর্নি তুই কাল কোথাও যাবি না সময় খুব কম সব রেডি করতে হবে তো পরশুই গায়ে হলুদ আর বিয়ে দুটোই হবে। আচ্ছা আমার অনেক কাজ আছে আমি যাই।

অর্পা বেগম কথা শেষ করে চলে যায়।উনি চলে যেতেই অর্নিল অর্নবের দিকে তাকিয়ে দাত কেলিয়ে বলল

–যাক ভালোই হলো। আচ্ছা আমি যাই সবাইকে ইনভাইট ও তো করতে হবে।আর কাল তো শপিং ও করতে হবে।

অর্নিল সোফা থেকে উঠে ওর রুমে চলে যায়।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে