প্রেমের বৈঠা গেছে খুলে পর্ব-০১

0
813

#প্রেমের_বৈঠা_গেছে_খুলে
#সূচনা_পর্ব
#নূন_মাহবুব

-“তোর সাহস হলো কি করে কন্ট্রাক্ট পেপার ছিঁড়ে ফেলার? খুব সাহস বেড়ে গিয়েছে তোর তাই না?ডানা গজিয়েছে তোর? কিছু সময়ের ব্যবধানে কাজের মেয়ে থেকে নিজেকে এই বাড়ির মালকিন ভাবতে শুরু করেছিস? তোকে আজ আমি মে”রে”ই ফেলবো বলে চুলের মু’ঠি ধরে টা’নতে টা’নতে ফুলে সজ্জিত বিছানা থেকে নামিয়ে নিয়ে এলো সদ্যবিবাহিত নববধূ কে তার স্বামী নামক নির্দয় ব্যক্তি।”

-“আহ্! অঙ্কন ভাই লাগছে আমার।মনে হচ্ছে মাথা থেকে সব চুল উপ্রে যাচ্ছে ,মাথা ব্যাথায় টনটন করছে। প্লিজ চুলের মু’ঠি ছাড়ুন অঙ্কন ভাই। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।দম বন্ধ হয়ে আসছে। বিশ্বাস করুন আমি কোন পেপার ছিঁড়ি নি। আমি তো জানি ও না আমাদের কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ হয়েছে।গত রাতে আপনি যখন আমার হাতে পেপার ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন ঝটপট সাইন করে দিতে,ব্যাস আমি কিছু না পড়েই সাইন করে দিয়েছিলাম। তবে এখন বুঝেছি সেই পেপার টা কোন সাধারণ পেপার ছিলো না, ছিলো আমাদের বিয়ের কন্ট্রাক্ট পেপার। যেইখানে আমাদের সম্পর্ক টাই একটা চুক্তির সম্পর্ক, ভিত্তিহীন , শুধু মাত্র কাগজের একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য আমি কেন কন্ট্রাক্ট পেপার ছিঁড়ে ফেলার দুঃসাহস দেখাতে যাবো?দাদীমা যখন আমাকে আপনার রুমে নিয়ে আসে,তখন বড়বাবা কে আপনার রুম থেকে বের হতে দেখেছি আমি।”

-” তুই ঠিক কি মিন করছিস অজান্তা? তুই বলতে চায়ছিস ড্যাড এই কাজ করেছে?”

-” দোহায় আপনার বিশ্বাস করুন আমার কথা ।আমি সত্যিই কিছু করি নি।”

-“একদম চুপ।আর একটা কথা বলবি তো একদম গু’লি করে মাথার খু’লি উড়িয়ে দিবো। অঙ্কন চৌধুরীর ব‌উ হ‌ওয়ার খুব শখ ছিলো তোর তাই না? তুই কি ভেবেছিলি একটা কাগজে নিজের নাম লিখে আর তিন কবুল বললেই তুই এই বাড়ির কাজের মেয়ে থেকে বাড়ির বউ হয়ে যাবি?মম ড্যাড , সুইটহার্টের মতো আমার উপর ও নিজের রাজত্ব দায়ের করতে পারবি? তোর এই আশা কখনো পূরণ হবে না অজান্তা। ভুলে যাস না তুই এই বাড়ির কাজের মেয়ে ।আর সারাজীবন কাজের মেয়ে হয়েই থাকবি। তোর মতো নর্দমার কীট অঙ্কন চৌধুরীর পায়ের তলায় থাকার যোগ্য ,বুকে নয়।না জানি কার না কার পাপের ফসল মম ড্যাড আমাদের বাসায় এনে রেখেছে। যেন এটা কোন আশ্রয় কেন্দ্র। ইশ্ নেমপ্লেটে চৌধুরী মঞ্জিল না লিখে আশ্রয় মঞ্জিল লিখে দিলে বেশ ভালো হতো।এতে তোর মতো হাজারো অজান্তা, নামহীন পরিচয়হীন ,বাবা মা ছাড়া মেয়েগুলো এইখানে আশ্রয় নিতে পারতো। ড্যাড শুধু মাত্র তোকে আশ্রয় দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি। এখন আবার আমার ঘাড়ে ও ঝুলিয়ে দিয়েছে।”

-” আপনি আমাকে যা ইচ্ছা হয় বলুন, মা”রু”ন , কা”টু”ন , আমি কিছু বলবো না। কিন্তু আমার বাবা মা সম্পর্কে কোন বাজে কথা বললে,আমি কিন্তু আপনাকে ছেড়ে কথা বলবো না অঙ্কন ভাই। ”

-” অজান্তার কথা শুনে অঙ্কন ক্ষিপ্ত হয়ে এসে অজান্তার গাল চেপে ধরে বললো, ওহ্ রিয়েলি? তুই সিআইডি অফিসার অঙ্কন চৌধুরী কে থ্রেট করছিস?যার নাম শুনে শহরের অলিগলি তে থাকা প্রত্যেকটা ক্রি’মি’না’ল ভয়ে কেঁপে উঠে তুই তাকে ভয় দেখাচ্ছিস? ওহ্ শিট আমার তো প্যান্ট ভিজে গেছে রে অজান্তা তোর থ্রেট শুনে।”

-“অঙ্কন এমন ভাবে অজান্তার গাল চেপে ধরেছে যেন মনে হচ্ছে চোয়াল ভেঙ্গে যাচ্ছে।অজান্তা কোনমতো অঙ্কন কে ছাড়িয়ে অশ্রুভেজা নয়নে বললো, হ্যাঁ স্বীকার করছি আমি অজান্তা,আমার কোন পরিচয় জানা নেই। কিন্তু আমি ও কোন বাবা মায়ের সন্তান। তাই কথায় কথায় আমার পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না অঙ্কন ভাই।আমি সত্যিই আপনার মতো একজন সৎ, ন্যায়বান, সিআইডি অফিসার যাকে এই তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা নিজেদের আইডল মনে করে,তার মতো একজন হতে চায়,যাকে নিয়ে প্রেস মিডিয়ার লোকেদের গঞ্জনার শেষ নেই, অত্যন্ত তার মুখ থেকে এমন কুরুচিপূর্ণ কথা কখনো আশা করি নি। তারা হয়তো জানে না তারা যাকে নিজেদের আইডল মনে করে‌ সে সবার সামনে যতটা ভালো মানুষ ঠিক ততটাই নোংরা কুৎসিত অহংকারে জর্জরিত তার ভেতর টা।”

-” বাহ্ বাহ্!তোর দেখি খুব উন্নতি হয়েছে অজান্তা। যে অঙ্কন চৌধুরী কে দেখলে ক্রি’মি’নালদের মতো তোর ও কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়,এতোগুলো বছর আমাদের বাড়িতে থাকার পরও যার সম্মুখে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারিস নি।আর আজ তুই তার চোখে চোখ রেখে কথা বলছিস । রিয়েলি আই কান্ট বিলিভ দিস।নাকি তুই নিজেকে আমার বউ ভাবতে শুরু করেছিস?”

-“বামন হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার সাধ থাকলে ও সাধ্য নেই আমার ।বড় বাবা রাস্তা থেকে তুলে এনে আমাকে নতুন একটা জীবন দিয়েছে।ফ্রিতে খাচ্ছি , থাকছি ,পড়ছি এটাই অনেক। আর কোন চাওয়া নেই আমার।”

-“লাইক সিরিয়াসলি? তোর সত্যিই আর কোন চাওয়া নেই?তাহলে ম”র”তে ম”র”তে আমার রুমে কেন এসেছিস তুই? বেরিয়ে যা আমার রুম থেকে। তোকে সহ্য হচ্ছে না আমার।”

-” আমাকে নিয়ে যদি আপনার এতোই সমস্যা, তাহলে কেন বিয়ে করলেন আমাকে? কেন বিয়ে নামক একটা চুক্তির মিথ্যা সম্পর্কে জড়িয়ে দিয়ে আমার জীবন টা নষ্ট করে দিলেন? কেন অঙ্কন ভাই কেন?”

-” এসব প্রশ্ন আমাকে না করে তোর নিজেকে কর , উত্তর পেয়ে যাবি।ড্রামাবাজ মহিলা,নিজে নাটক সাজিয়ে বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে, শহরের নামকরা একজন সিআইডি অফিসারের গলায় ঝুলে পড়ে এখন আবার আমাকে জিজ্ঞেস করছে, কেন বিয়ে করলেন? ইটস্ অল বিকজ অফ ইউ।”

-” আমি কোন না….

-“স্টপ অল দিস নসসেন্স।ডোন্ট সে এনিমোর। জাস্ট গেট আউট ফ্রম মাই রুম বলেই অঙ্কন অজান্তার টান ধরে টানতে টানতে দরজার কাছে নিয়ে এসে দেখলো দরজা বাইরে থেকে লক করা। মূহুর্তের মধ্যেই অঙ্কনের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো। কপালে চিন্তার স্পষ্ট ছাপ দেখা গেল। নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে দরজায় পরপর দুই তিন টা লা’থি মে’রে দিয়ে বললো, ড্যাম ইট! কার এতো বড় সাহস হলো আমার রুম বাইরে থেকে লক করার?”

-” অঙ্কনের কর্মকান্ডে আ’ত’ঙ্ক হয়ে অজান্তা বললো, আপনি দয়া করে শান্ত হোন অঙ্কন ভাই।আমি বড়মা বা দাদীমা কে ডাকছি তারা এসে দরজা খুলে দিলে আমি এক্ষুনি বেড়িয়ে যাবো রুম থেকে।অজান্তা সবে বড় মা কে ডাক দিতে যাবে তার আগেই অঙ্কন ড্রয়ার থেকে একটা পি’স্ত’ল বের করে অজান্তার কপালে ঠেকিয়ে বললো, ভুলে ও এই কাজ করতে যাবি না অজান্তা। এই চার দেয়ালের মধ্যে যা হয়েছে ভুলে ও যদি মম , ড্যাড বা সুইটহার্টের কর্ণপাত হয়ে ট্রাস মি একদম গু’লি করে তোর মাথার খু’লি উড়িয়ে দিবো।তারা যেন ক্ষুনাক্ষরে ও আমাদের কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের বিষয়ে,এমনকি আমাদের মধ্যেকার দূরত্ব বুঝতে না পারে। ”

-” অজান্তা চোখের পানি মুছে ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ঝুলিয়ে বললো, ড্রামাবাজ আমি না অঙ্কন ভাই,ড্রামাবাজ তো আপনি। নিজেকে কি আময়িক ভাবে প্রেস মিডিয়া, পরিবারের সদস্যদের কাছে উপস্থাপন করেন। অথচ সামান্য একটা মেয়েকেই সম্মান দিয়ে জানেন না। আবার বলছেন আপনি যেভাবে সবার সামনে ভালো মানুষ হয়ে থাকার নাটক করেন, ঠিক একই ভাবে আমাকে ও আপনার পরিবারের সদস্যদের সামনে সুখী কাপলের নাটক করতে।এসব নাটক আপনার সাথে যায় অঙ্কন ভাই, আমার মতো কাজের মেয়ের সাথে না।”

-” লিসেন ? তোর ঐ ননস্টপ বকবক শোনার টাইম বা ইচ্ছা কোনটাই আমার নেই।তুই বিছানায় বসে আমার বিছানা নোংরা করে দিয়েছিস।এখন ঝটপট বেডশিট চেন্জ করে দিয়ে আমার চোখের সামনে থেকে সরে যা।”

-“অজান্তা বেড শিট চেন্জ করে দিয়ে বললো, আপনি নিজেই তো দেখলেন দরজা বাইরে থেকে লক করা।তাহলে আমি রুমের বাইরে যাবো কিভাবে?আর কোথায়ই বা ঘুমাবো আমি?

-” নান অফ মাই বিজনেস বলে অঙ্কন লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো।অজান্তা কি করবে বুঝতে না পেরে ঠাঁই সেখানে দাঁড়িয়ে র‌ইল।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে