প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৩৬+৩৭+৩৮

0
2404

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৬
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা মন খারাপ করে সেই কখন বাসার ভেতর চলে গেছে শান্তর সেদিকে খবর নেই
সে গেট সামলাতে ব্যস্ত,অনেক ঝগড়া করে শেষমেষ ৫হাজার টাকা দিয়ে সবাইকে থামালো শান্ত,নওশাদ আর সূর্য মিলে
ভিতরে গিয়ে সবাই চেয়ার টেনে বসতেছে এক এক
করে
শান্ত রিয়াজের সাথে স্টেজে এসে বসেছে,মেয়েরা বারবার নওমিকে জিজ্ঞেস করতেছে শান্ত সিঙ্গেল কিনা
কণা ভ্রু কুঁচকে কাছে এসে বললো”শান্ত শুধু আমার,ওকে??কেউ নজর দিবা না ওর দিকে”
.
নওমির ছোট বোন আরবি বললো”কিন্তু শুনেছিলাম আহানা আপুর সাথে নাকি উনার এঙ্গেজমেন্ট ও হয়ে গেছে?”
.
হয়েছে তো কিছে?বিয়ে তো আর হয়নি,সেটা না হলেই হলো,আর সেটা হবেও না,আমি হতে দিব না
.
একটা মেয়ে বললো”এই আহানাটা কে?আজ এসেছে?”
.
আরবি বললো সে আহানাকে গেট দিয়ে ঢুকতে একবার দেখেছিলো এরপর আর দেখেনি
কণা ততক্ষণে আহানাকে খুঁজতে বেরিয়ে গেছে,আহানাকে বুঝাতেই হবে যে শান্ত শুধু আমার,ওর না,ও যেন বিয়েটা ভেঙ্গে দেয়
.
শান্তর এবার আহানার কথা মনে পড়লো,দেরি না করে স্টেজ থেকে নেমে সে আহানাকে খুঁজতে লেগেছে
.
ইস একদম ভুলে গিয়েছিলাম আহানার কথা
কোথায় মেয়েটা!উফ!!!
.
আহানা একটা রুমের কোণায় চুপ করে বসে আছে
তার আশেপাশে মানুষে ভর্তি,সম্ভবত এরা নওমি আপুর আত্নীয় স্বজন,মন খারাপ থাকায় আহানা এখানে চুপ করে বসে আছে
কণা অবশেষে আহানাকে খুঁজে পেলো,ওর সামনে এসে ওকে ধরে টেনে নিয়ে গেলো বাড়ির সেকেন্ড ফ্লোরে
.
আহানা বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো” কি হইছে কণা আপু?আমাকে এভাবে এখানে নিয়ে আসছো কেন?”
.
তুমি একটা কথা কেন বুঝতেছো না আহানা?শান্তকে আমি ভালোবাসি,ও আমার,তুমি মাঝখানে আসতে চাইছো কি জন্যে?আর শান্ত তো তোমাকে পছন্দ করে না তাহলে কেন তুমি পড়ে আছো?
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”আমাদের এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে,তার পরেও তুমি এসব কেন বলতেছো?”
.
বিয়ে তো আর হয় নাই,সময় আছে,ভেঙ্গে ফেলো এখনই
.
আহানা বলতে গিয়েও পারলো না,সে দাবি করতে পারবে না যে সে শান্তর লিগালি ওয়াইফ কারণ শান্ত নিজের মুখেই বলেছে এটা একটা চুক্তি ছিলো
আহানা মাথা নিচু করে চুপ হয়ে আছে
কণা আহানাকে ঝাঁকিয়ে বললো”আমি কিছু শুনতে চাই না,তুমি এই সম্পর্ক শেষ করে দাও,নাহলে কাউকে শান্তিতে থাকতে দিব না আমি”
.
কণা চলে গেলো কথাগুলো বলে
.
শান্ত পাগলের মতন আহানাকে খুঁজতেছে,শেষে আরবি জানালো সে আহানাকে আর কণাকে সেকেন্ড ফ্লোরের দিকে যেতে দেখেছে
শান্ত সেদিকে ছুটলো,তারপর সেখানে এসে দেখলো আহানা করিডোরের শেষে যে জানালাটা আছে সেটার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে চেয়ে আছে আনমনে
.
আহানা?তুমি এখানে?আমি তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম,আমাকে না বলে কোথাও যাবা না একদম
.
আহানা চোখ মুছে পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকালো তারপর স্বাভাবিক গলায় বললো”আমাকে খুঁজতে খুঁজতে পাগল হচ্ছিলেন কেন?”
.
এটা কেমন প্রশ্ন!তুমি আমার সাথে এসেছো যখন তখন আমার সাথেই তো থাকবা
আমি যখন তোমাকে দেখলাম না কোথাও তখন আমার তো ভয় লেগেছিলো,না জানি সাইমন,রতন এসে পড়লো এই ভেবে
.
আহানা মুচকি হাসলো,তারপর বললো””ওহহ,এটারই ভয় বুঝি”
.
হুমম,চলো এখন
.
শান্ত আহানার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে,আর আহানা এক দৃষ্টিতে শান্তর দিকে চেয়ে আছে,কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার
আরেক হাত দিয়ে চোখ মুছে থেমে গেলো সে
.
আবার কি হলো?
.
কতদিন পর্যন্ত সেফটি দিবেন আমায়?
.
যতদিন রতন আর সাইমন চিরতরে না যাচ্ছে,আই মিন তোমার পিছু না ছাড়ছে ততদিন
.
তার পর?
.
তার পর তুমি তোমার পথে আর আমি আমার পথে,সিম্পল!
.
আহানা থ হয়ে শান্তর মুখের দিকে চেয়ে রইলো
শান্ত হেসে বললো”আসলেই আহানা আমি ভেবেছি,আমি তোমাকে জোর করে বিয়ে করার আগে আমার বুঝা উচিত ছিলো তোমারও তো স্বপ্ন থাকতে পারে,তোমার ও তো পছন্দ থাকতে পারে,তাই আমি এই সিধান্ত নিয়েছি,এরপর তুমি তোমার মতো থাকবে”
.
ওহ
.
শান্ত আবার গিয়ে রিয়াজের পাশে বসেছে,আহানা মন খারাপ করে সামনে সব চেয়ার রাখা ছিলো ওগুলোর মধ্যে একটাতে গিয়ে বসে আছে
শান্ত যা বলেছে এসব শুনে আমার তো খুশিতে নাচার কথা তাহলে আমি কেন কষ্ট পাচ্ছি?আমি তো উনাকে ভালোবাসি না,আর উনি তো আমাকে ভালো রাখার জন্যই কথাগুলো বললেন,আমার ভালো ভেবেই
শরীর খারাপ লাগতেছে,এখান থেকে তো শান্তদের বাসা কাছেই,আমি বরং বাড়ি ফিরে যাই,এখানে ভালো লাগছে না
.
আহানা উঠে শান্তকে বলতে যাবে “যে সে চলে যাচ্ছে” তখনই শান্তর ফোন আসলো,সে কথা বলতে বলতে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে
আহানা ৫মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু শান্তর কথাই শেষ হচ্ছে না,বিরক্তি চরম পর্যায়
উপায় না পেয়ে আহানা এগিয়ে রিয়াজের কাছ এসে বললো”ভাইয়া আমার শরীর ভালো লাগতেছে না,আমি বাসায় ফিরে যাচ্ছি,আপনি প্লিস উনাকে বলে দিবেন এই কথা,উনি ফোনে কথা বলতেছেন সেই কখন থেকে”
.
কিন্তু আহানা বিয়ের খাবার তো খেয়ে যাও
.
না ভাইয়া,আমার একটু রেস্ট দরকার
.
ঠিক আছে,সাবধানে যেও
.
আহানা চলে গেলো সাথে সাথে
শান্ত কথা শেষ করে পিছন ফিরে চেয়ারটার দিকে তাকালো যেটাতে এতক্ষণ আহানা বসে ছিলো
ওকে আবারও দেখতে না পেয়ে শান্তর ভীষণ ভয় হলো
ছুটে এসে এদিক ওদিক তাকালো সে
.
রিয়াজ নওশাদ আর সূর্যর সাথে গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে তোলা ফটো গুলো দেখতেছে
.
মেয়েটা গেলো কই,,আমি বলেছিলাম আমাকে না বলে কোথাও না যেতে,এখন আবার কই খুঁজবো ওরে
.
আহানা একটা সিএনজিতে উঠে বাসায় ফিরতেছে,কান্না পাচ্ছে খুব,একটা সময়ে কেঁদে ফেললো,আর কান্না থামাতে পারলো না সে
সিএনজির ড্রাইভার বারবার জিজ্ঞেস করতেছে আহানা কেন কাঁদছে,আহানা কিছু বলছে না
বাসায় ফিরে দেখলো রিপা বুয়ার সাথে গল্প করছে সোফার রুমে,আহানাকে দেখে সে একটু অবাক হলো
.
আহানা?তুমি এত তাড়াতাড়ি চলে এলে?
.
এমনি,শরীর ভালো লাগতেছিলো না তাই চলে এলাম
.
আহানা আর কিছু বললো না,সোজা রুমে চলে গেলো,দরজাটা লাগিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো সে
যে লোকটাকে আমি পছন্দ করি না,আমার হাজার মানার পরেও যে আমাকে বিয়ে করেছে
যে বিয়েতে আমি খুশি ছিলাম না আজ সেই বিয়ের পরিণতি কি হতে পারে সেটা জেনে আমার কেন এতো কষ্ট হচ্ছে,আমি তো উনাকে ভালোবাসি না,স্বামী হিসেবে মানি না তাহলে কেন আজ আমার এমন লাগতেছে
.
আহানার ফোন বাজতেছে,শান্তর কল,আহানা ধরলো না,জানালার দিকে চেয়ে বসে রইলো সে
.
শান্ত পুরো বাড়ি খুঁজেও কোথাও আহানাকে পেলো না,চিন্তা হচ্ছে ওকে নিয়ে,রতন সাইমন আসেনি তো?
আমি কি করবো এখন,কোথায় পাবো ওকে,মূহুর্তেই চলে গেলো চোখের সামনে থেকে,কি করছে,কেমন আছে,কোনো ক্ষতি হয়নি তো?
এতক্ষণে আহানার মা আর শান্তর মাও এসে গেছেন সবার সাথে,আহানার আম্মু তো শান্তকে দেখেই ডেকে জিজ্ঞেস করলেন আহানা কোথায়
শান্ত চুপ করে থাকলো,উত্তর দিতে পারলো না,কাজের বাহানা দিয়ে সরে আসলো সে

রিপা কাজ সেরে চলে গেছে
বুয়া রাতের রান্না করে সেও চলে গেছে,বাসা পুরো খালি এখন
আহানা ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সোজা শান্তর রুমে আসলো
রুমটা খালি,আলো নিভানো
আহানা আলো জ্বালিয়ে এক কদম এক কদম করে ভিতরে এসে ল্যাম্পশ্যাডের টেবিলটার উপরে রাখা তার আর শান্তর ছোটবেলার ছবিটা হাতে নিয়ে বিছানার এক কোণে গিয়ে বসলো
ছবিটা দেখে কিঞ্চিত হাসলো সে,ছবিটায় হাত বুলিয়ে আবারও আগের জায়গায় রেখে দিলো
তারপর গিয়ে শান্তর আলমারিটা খুললো,সুন্দর করে সব সাজিয়ে রাখা সেখানে
আহানা একটা পেস্ট কালারের জ্যাকেট হাতে নিলো
শান্তর গায়ের গন্ধ আসতেই তার সারা শরীরে নেশা ধরে গেছে হঠাৎ করে
জ্যাকেটটা পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাসলো সে,একদম শান্তর মতোই লাগতেছে তাকে
.
শান্ত রিয়াজের কাছে এসে বললো যে সে আহানাকে খুঁজতে যাচ্ছে তাকে কোথাও পাচ্ছে না
রিয়াজ অবাক হয়ে বললো”আরে আহানা তো আমাকে বলেই গিয়েছিলো,তার নাকি শরীর ভালো লাগতেছে না তাই সে বাড়ি ফিরে গেছে,তুই ফোনে কথা বলতেছিলি বলে তোকে ডিস্টার্ব করেনি”
.
না বলে একাই বাড়ি চলে গেলো?
.
হুম,আমি মানা করলাম,শুনলো না,এবার তুইও যাবি না খবরদার বলে দিচ্ছি
.
শান্ত গাল ফুলিয়ে রিয়াজের পাশে বসে থাকলো,বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই এবার বউকে নিয়প যাওয়ার পালা,শান্ত দূরে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,ওর মা আর আহানার মা রিয়াজদের সাথেই যাবেন কিছু রীতিনীতি আছে সেসবে রিয়াজের আম্মু অনেক রিকুয়েস্ট করলেন যাতে তারা থাকে
শান্ত পথ কেটে সোজা তার বাসার দিকে যাচ্ছে,তার জানামতে আহানা বাসায় একা,এই রিস্ক সে নিতে পারে না,রিয়াজের শত মানার সত্ত্বেও সে চলে যাচ্ছে বাসার দিকে
আহানা শান্তর একটা ছবি দেখতে দেখতেই ওর বিছানার এক কোণে শুয়ে পড়েছে
শান্ত বাসায় এসে দরজায় নক করতেই দরজা খোলা পেলো
বুয়া ভাবলো আহানা আছে যেহেতু তাই সে দরজা কোনোমতে লাগিয়ে চলে গিয়েছিলো
শান্তর তো বুক কেঁপে উঠেছে,এই ভর সন্ধ্যাবেলায় দরজা খোলা কেন??
আহানার কিছু হয়নি তো??
এক ছুটে সে আহানার রুমের দিকে গেলো
সেখানে আহানাকে না পেয়ে ভয় আরও বেড়ে গেলো তার,এদিক ওদিকে ওকে খুঁজতে খুঁজতে মনে পড়লো তার নিজের রুমেই দেখা হয়নি
এক দৌড়ে নিজের রুমে আসলো সে
এসেই আহানাকে দেখতে পেয়ে কলিজা ঠাণ্ডা হলো তার
আহানা ওর জ্যাকেটটা গায়ে দিয়ে বিছানায় গুটিশুটি দিয়ে ঘুমাচ্ছে
শান্তর রাগ প্রচণ্ড রকম ভাবে বেড়েছে
হনহনিয়ে এসে সে আহানার দুহাত ধরে ওকে ঘুম থেকে টেনে তুলে ফেললো
আহানা চোখ ডলতে ডলতে বলতে গেলো”যে কি হয়েছে”
তার আগেই গালে এক চড় খেয়ে তার সমস্ত ঘুম ঘুম ভাব পালিয়ে গেলো
গালে হাত দিয়ে সে অসহায়ের মতন শান্তর মুখের দিকে চেয়ে আছে
শান্ত এগিয়ে এসে ওর দুহাত ধরে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বললো”কি সমস্যা তোমার??আমাকে না বলে চলে এসেছো কোন সাহসে?কতবার ফোন করেছি আমি?আমার কি কোনো অধিকার নেই তোমার প্রতি?আমার চিন্তা হয় না তোমাকে নিয়ে?যে চিন্তার জেরে তোমাকে বিয়ে পর্যন্ত করে নিয়েছি সেখানে তুমি এরকম সাহস দেখাও,আনসার মি!”
.
আহানা চুপ করে তাকিয়ে আছে কিছু বলছে না
শান্তর রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে,এই মূহুর্তে আহানার এক লাইন হলেও কিছু বলা উচিত কিন্তু তা না করে সে চুপ করে আছে এটাতে আরও রাগ উঠতেছে শান্তর
.
কি হলো বলো!কিছু বলছো না কেন,কেন এসেছিলে তুমি?আমাকে বললে কি হতো তোমার?
.
হাত ছাড়ুন
.
কেন ছাড়বো?আমার কথার উত্তর দিয়েছো তুমি?
.
এরকম আর কতো করবেন?আপনি তো বলেই দিয়েছেন,রতন, সাইমন চলে গেলে আপনিও সব সম্পর্ক শেষ করে দিবেন তাহলে এসবের মানে কি?
.
এসবের মানে কি আবার বলতেছো,তুমি আমার স্ত্রী
.
কয়েকদিনের জন্য
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৭
#Writer_Afnan_Lara
🌸
তুমি কি চাও আহানা?কি বুঝাতে চাও তুমি?তুমি যদি চাও আমার স্ত্রী হয়ে থাকতে তো আমি তোমাকে সারাজীবনের জন্য আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিতে রাজি আছি,তুমি ঠিক কি চাও সেটা বলো আমাকে
.
আহানা মুখ আরেকদিকে ফিরিয়ে নিয়ে বললো”আমাকে একা থাকতে দিন”
.
না দিব না!তোমাকে আজ সব ক্লিয়ারলি বলতেই হবে,কেন তুমি আজ আমাকে না বলে একা একা এই বাসায় চলে আসলে,কেন তোমার মুখের ভাবগতি বদলে গেলো হুট করেই,আমি আজ শুনতে চাই!তুমি এই বাসায় কোন সাহসে একা একা এলে,হাসবেন্ড হিসেবে তা জানার পুরো অধিকার আছে আমার
.
না নেই,চুক্তির বিয়েতে আপনার কোনো অধিকার নেই আমার থেকে এসব জিজ্ঞেস করার
আমি আমার মতন আছি,আমাকে আমার মত থাকতেও দিয়েছেন আপনি
আজ তা পরিষ্কার করে বলেও দিয়েছিলেন তাহলে এখন কেন স্বামীর অধিকারের প্রসঙ্গ উঠতেছে?
.
আহানা আমি নিজ থেকে এই বিয়েটাকে ছোট করে দেখতে চাইনি,তুমি সেদিন বিয়েতে বিন্দুমাত্র রাজি ছিলে না বলেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন তুমি এটাতেও নারাজ,তাহলে তুমি ঠিক কিসে খুশি?
.
আপনি প্লিস আমার হাত ছেড়ে দিন,আমার কিছু ভাল্লাগতেছে না,আমি একটু একা থাকতে চাই
.
ফাইন!!চলো আমার সাথে
.
কথাটা বলে শান্ত আহানার শাড়ীর উপরে থাকা ওর জ্যাকেটটা টেনে খুলে ওর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো
.
কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে,হাত ছাড়ুন!
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে একটা রিকসা নিলো
আহানা বার বার জিজ্ঞেস করতেছে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওকে কিন্তু শান্ত একটু টু শব্দ ও করছে না,শুধু আহানার হাতটা খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে সে
বাসার থেকে ১০মিনিট দূরে একটি মসজিদ,সেখানে আসতেই রিকসা থামাতে বললো শান্ত
তারপর ভাড়া দিয়ে আহানাকে টেনে নামিয়ে ওখানে দাঁড় করিয়ে মসজিদের ভিতরে চলে গেলো সে
আহানা কিছুই বুঝতেছে না, শান্ত ওকে কেন এখানে নিয়ে এসেছে
শান্ত ৫মিনিট পর বেরিয়ে এসেছে,এসেই ওকে ধরে মসজিদের পাশে হুজুরের বাড়ির দিকে নিয়ে গেলো
.
আপনি একটু বলবেন আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
.
শান্ত হাঁটতে হাঁটতে বললো”একটা কাজ বাকি রইলো সেটা পূরণ করতে”
.
হুজুরের বাসায় ঢুকে শান্ত আহানাকে সোফায় বসিয়ে দিলো তারপর ওর মাথায় গোমটা টেনে দিয়ে ওর পাশে নিজেও বসে পড়লো
হুজুর চেয়ার টেনে বসেছেন ততক্ষণে
.
আহানা শান্তর দিকে তাকাচ্ছে আবার হুজুরের দিকে তাকাচ্ছে,হুজুর দোয়া পড়া শুরু করলেন ইতিমধ্যে
এবার আহানা বুঝলো এখানে ঠিক কি হচ্ছে,এখানে তাদের বিয়ে হচ্ছে
আহানা শান্তর দিকে অবাক চোখে তাকালো
শান্ত শুধু কিছু কথা বললো আহানার চাহনি দেখে আর সেটা হলো”যেটা নিয়ে তোমার ভয়,যেটার জন্য তুমি না বলে একা বাড়ি ফিরলে,যেটার জন্য তোমার মন খারাপ ছিলে ঠিক সেই ভয়টা আমি এখন দূর করবো,ধর্ম মতে তোমাকে বিয়ে করবো”
.
শান্ত কাগজে আহানার বাবার আর মায়ের নাম লিখে দিলো,সাথে নিজেরটাও লিখলো তারপর হুজুরের হাতে কাগজটা দিলো সে
হুজুর শেষে বললেন শান্তকে কবুল বলতে,শান্ত বললো,এবার আহানাকে বলতে বললেন তিনি
আহানা শান্তর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,খুশি হবে নাকি কাঁদবে
সে কি চেয়েছিলো সে নিজেও জানে না
হুজুর আবারও বললেন কবুল বলতে
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে “তিন বার কবুল বলেই দিলো”
.
আলহামদুলিল্লাহ,,

শান্ত হুজুরের সাথে দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলতেছে
আর আহানা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে রোবটের মতন চেয়ে আছে শান্তর দিকে
মূহুর্তেই কি থেকে কি হয়ে গেলো,তার সামান্য মন খারাপ যে এত বড় একটা ঘটনা ঘটিয়ে দিবে তার কল্পনার বাইরে ছিল এটা
শান্ত হুজুরের সাথে কথা শেষ করে আবারও আহানার হাত ধরে টেনে উনার বাসা থেকে বেরিয়ে চলে আসলো,এবার আরেকটা রিকসা নিলো তাদের বাড়ি ফেরার জন্য
আহানা শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে এখনও
শান্ত সামনে জ্যামের দিকে চেয়ে থেকে বললো”বিয়ে তো সব রীতিতেই হয়ে গেছে,তোমার আর কোনো ভয় থাকার কথা না নিশ্চয়??দেনমোহরে এমন একটা আমাউন্ট লিখেছি,তুমি চাইলেও আমি তোমাকে ছাড়বো না মিস আহানা,সরি সরি,মিসেস আহানা
.
আহানা মুখটা সরিয়ে আরেকদিকে ফিরে তাকালো
১০/১২মিনিটেই তারা বাসায় চলে এসেছে
আহানা রোবটের মত করে হেঁটে তার রুমের দিকে যাওয়া ধরতেই শান্ত ওর হাতের কব্জি ধরে ওকে আটকে ফেললো
আহানা ওর দিকে জিজ্ঞাসু চোখে চেয়ে আছে,মুখ দিয়ে তার কোনো কথা বের হচ্ছে না
শান্ত স্বাভাবিক গলায় বললো”আজ থেকে তুমি আমার সাথে আমার বিছানায় ঘুমাবে,আমার রুমে থাকবে”
.
আহানা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো”আমি এটা চাইনি”
.
শান্তর মেজাজ গেলো বিগড়ে
রেগে দরজায় একটা ঘুষি মেরে আহানাকে ঝাপটে ধরে কাছে নিয়ে আসলো সে
চিৎকার করে বললো”কি চাও তুমি?”
.
আহানার চোখের পানি টপটপ করে পড়তেছে,তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না আর
.
শান্ত আহানার কোনো উত্তর না পেয়ে ওকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে আসলো
তারপর বিছানায় ছুড়ে ফেলে বললো”আমি যেটা বলবো সেটাই হবে,এখন থেকে তুমি সেই সব কিছু করবে যা একজন স্ত্রীর দায়িত্ব”
কথাটা বলে শান্ত নিজের আলমারি খুলে একটা টিশার্ট নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো
আহানা চোখের পানি মুছে চুপ করে আছে,তারপর পা তুলে বিছানার মাঝখানে গিয়ে গোল হয়ে বসলো সে
মনে হচ্ছে শান্তকে ভয় লাগছে,তার কথা না শুনলে আরেকটা চড় খেতে হবে এখন
তাহলে সমান সমান হবে,সেও শান্তকে ২টি চড় দিয়েছিলো
আর শান্ত ও?না না সমান সমান হতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই
রাত ৮টা বেজে গেছে,পুরো বাড়ি খালি,অন্ধকার নেমে এসেছে
এই প্রথম সে আর শান্ত এত একা একা একসাথে এক বাসায় যেখানে কেউ নেই
আহানার ভয় করে না,কারণ সে শান্তকে চিনে,শান্ত ওর সাথে এসব নিয়ে জোরজবরদস্তি করবে না
তার পরেও একসাথে এক রুমে এক বিছানায় থাকতে কেমন যেন লাগতেছে
কাল এক সাথে এক রুমে ছিলো তারা কিন্তু সেটা সোফায় আর বিছানায় ছিলো
এখন তো এক বিছানায়,আহানার গা গুলিয়ে আসতেছে শুধু
ভাবতে ভাবতে শান্তকে দেখতে পেলো সে
শান্ত গায়ের পাঞ্জাবিটা বদল করে টিশার্টটা পরে এসেছে
চোখে মুখে রাগের ছাপ,রাগ এখনও কমেনি তার,আহানার দিকে না তাকিয়েই তার ল্যাপটপটা খুঁজে সেটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো সে
তারপর বিন ব্যাগে বসে কাজ শুরু করে দিলো
আহানা ওর দিকে চেয়ে আছে,এরকম ১০মিনিট চেয়ে থেকে আহানার মাথাটাই ব্যাথা হয়ে গেছে
বিছানা থেকে নেমে সে রুম থেকে চলে গেলো সোজা নিজের রুমে
নিজের একটা থ্রি পিস বের করে সেটা পরে আসলো তারপর গেলো রান্নাঘরে,বুয়া সব রেঁধে তারপর চলে গেছে
ইলিশ মাছের আইটেম বেশি,আহানা ব্রু কুঁচকে খুঁজতে খুঁজতে চিকেন ও পেলো,তাই সেটা দিয়ে পেট পুরে ভাত খেলো সে
সকালে যে ঐ বাড়িতে নাস্তা করেছিলো আর কিছু মুখে দেয়নি সে
তাই এখন পেটুকের মত খেলো,তারপর মুখ মুছে চা বসালো
চা খেলে মাথা ধরাটা যাবে,সারাদিনের ক্লান্তি ও যাবে
.
শান্ত বাসায় ঢুকে দরজা লক করে চাবি পকেটে রেখেছে,এই আহানাকে একটুও বিশ্বাস নেই,একটা পাগল মেয়ে,যদি আবার বেরিয়ে যায়?
.
আহানা চায়ের কাপ দুটো হাতে নিয়ে শান্তর রুমের দিকে চললো
শান্ত মাথা টিপতে টিপতে কাজ করতেছে
আহানা কাছে এসে বারান্দায় থাকা টি টেবিলের উপর চায়ের কাপ রেখে আবার বিছানায় ফেরত আসলো
নিজের চা খেতে খেতে টিভি অন করলো সে,কার্টুনের চ্যানেল এনে একটা বালিশ কোলে রেখে কার্টুন দেখায় মনোযোগ দিলো এবার
তার দুবার বিয়ে হয়েছে,এই লোকটার সাথে
যে ল্যাপটপ দেখতে দেখতে তার বানানো চা খাচ্ছে এখন
অথচ আমার কি কপাল,এই দুই বিয়েতে একবারও বাসর রাত হয়নি
অবশ্য আমার মত নেই,আর উনার তো একদমই নাহহ
বাসর রাত নিয়ে কত স্বপ্ন বুনেছিলাম আমি,আসলে যারা বেশি স্বপ্ন দেখে তাদের সাথেই এমনটাই হয়
আমি তার প্রমাণ,বাসর না করি,একটু গল্প গুজব তো করতে পারি?না সেটাও না,বরং এখন দু লাইন বললে ঝাড়ি খেতে হবে উল্টো
যা হয়েছে তার সবটা দোষ ঐ কণার
আমার শান্ত,আমার শান্ত করে মাথা খাচ্ছিলো আমার
বেশ হয়েছে!উনি আমাকে আবারও বিয়ে করেছে,এবার ঐ কণা মেয়েটা আর কিছু করতে পারবে না হুহ
আর একদিন আমাকে যদি ধরে তো বলবো দুইবার বিয়ে করেছি,এখন থেকো এটা আমার শান্ত,আমার আমার আমার!
আহানা হেসে দিলো,পরে শান্তর মুখের দিকে তাকাতেই তার হাসি উধাও
আমার শান্ত না!এমনি
সে আমার শুধু স্বামী,আর কিছু না
তাও আমি আজ অনেক খুশি
আমাকে আর ছাড়তে পারবেন না উনি,ঐ কণা আমাকে উনার থেকে আলাদা করতে পারবে না কোনোদিন
ঐ বার বিয়েতে এত কেঁদেছিলাম কষ্টে আর এবারের বিয়েতে খুশিতে মন চাঙ্গা হয়ে গেছে
আমার সামান্য মন খারাপ আর রাগ করে বাড়ি ফেরাতে এত বড় সারপ্রাইজ পাবো জানলে ডেইলি এমন করতাম
.
এই তুমি আমার বিছানায় বসে কি ভাবতে ভাবতে হাত পা এমন নাচাচ্ছো?
একটু যদি চা ফালাইসো আমার বিছানায় তো খবর আছে তোমার!
.
আহানা মুচকি হেসে বললো”কেন?কি করবেন?আবার বিয়ে করবেন বুঝি?”
.
শান্ত কাজ থেকে মন উঠিয়ে অবাক হয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ
কি বললো মেয়েটা??সে কি খুশি হয়েছে আজকে করা আমার এই কাজে?নাহলে এটা বললো কেন?
.
আহানা চায়ের কাপ রেখে শান্তর বিছানার চাদর টেনে শুয়ে পড়েছে,সাথে সাথে চোখে রাজ্যের ঘুম এসে গেলো তার
এদিকে শান্তর ফোনে বারবার আহানার মায়ের কল আসতেছে
শান্ত রিসিভ করে বললো আহানা রুপাদের বাসায় গেছে,রুপা অসুস্থ
কোনোরকম এটা বুঝিয়ে দিলো সে
আহানার মা তাই আর কিছু বললেন না
শান্ত ফোন রেখে আবারও কাজে মন দিলো,একেবারে রাতের ১টায় কাজ শেষ করে তারপর উঠেছে সে
কোমড় ঘষতে ঘষতে ল্যাপটপটা নিয়ে ওয়ারড্রবের উপরে রেখে একটা মলম নিয়ে আহানার দিকে তাকালো
আহানা সুন্দর করে চাদর মুড়িয়ে বিছানার এক কোণে ঘুমিয়ে পড়েছে
শান্ত ২মিনিট ধরে ওর ঘুম দেখলো তারপর ব্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে আহানার হাত ধরে টেনে ওকে তুলে ফেললো
আহানা চোখ ডলতে ডলতে বললো”আমি ঘুমালে আপনাকে কেউ খোঁচায়?সুন্দর করে নাম ধরেও তো ডাকতে পারেন,এভাবে হাত ধরে টেনে তুলেন কেন আপনি?”
.
আমার কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে,একটু মলম লাগিয়ে দাও
.
এটার জন্য তুলেছেন আমায়?
.
বউ হও না তুমি আমার?স্বামীর সেবা করো ঠিক করে
.
শান্ত টিশার্টটা একটু উঠিয়ে সামনের দিকে মুখ করে আহানার পাশে এসে বসলো
আহানা চোখ ডলা শেষ করে মলমটা নিয়ে লাগিয়ে দিচ্ছে শান্তর কোমড়ে
লাগানো শেষে শান্ত এবার আহানার হাত ধরে টেনে ওকে বিছানা থেকে নামালো
.
আবার কি?
.
ডিনার করিনি আমি সে খেয়াল আছে তোমার?যাও খাবার নিয়ে আসো আমার জন্য
.
আহানা মাথার চুল টানতে টানতে রান্নাঘরের দিকে গেলো,তারপর খাবার নিতে নিতে বললো”ইলিশ মাছ খান?”
.
শান্ত তখন সোফার রুমে এসে বসেছে,আহানার কথা শুনে সামান্য হেসে বললো”ইলিশ থাকলে জাস্ট ইলিশই দাও,”
.
আহানা ইলিশ প্লেটে নিতে নিতে বললো “কি ছেলেরে বাবা,ইলিশ মাছ কেমনে খায়,আমি তো একটুও খেতে পারি না
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৮
#Writer_Afnan_Lara
🌸
শান্তর সামনে খাবারের প্লেট রেখে আহানা গালে হাত দিয়ে বসে আছে সোফার উপর
শান্ত খেতে খেতে গভীর মনযোগ দিয়ে টিভি দেখতেছে
আহানা হাই তুলতে তুলতে শেষমেষ ঘুমিয়েই গেলো সোফার উপর
পরেরদিন যখন চোখ খুললো তখন আবারও নিজেকে শান্তর রুমে শান্তর পাশে,শান্তর বিছানায় আবিষ্কার করলো
লাফ দিয়ে উঠে বসলো সে,শান্ত পাশেই ঘুমাচ্ছে,ঘড়িতে ভোর ৫টা বাজে তখন
আহানা শান্তর দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো
এ সময়ে ঝগড়া করার মনমানসিকতা নেই তার,পরে সকালে ৮/৯টার দিকে উঠে ঝগড়া করা যাবে এই নিয়ে,এখন আপাতত এই সুন্দর সময়ে ঘুমাই একটু,পরেরটা পরে দেখা যাবে
সকাল হতেই যখন সে চোখ খুললো সেই শান্তকেই দেখলো
হাতে তার একটা নীল রঙের শাড়ী আরও গয়না গাটিও আছে
সে দাঁত কেলিয়ে বললো”ম্যাডাম বউ আপনার কি খবর আছে আজ বৌভাত??”
আহানা আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বললো”কার আমার??”
.
শান্ত হেসে ফেললো তারপর বললো”জি না,রিয়াজ আর নওমির,এখন উঠে জলদি করে তৈরি হয়ে নাও,লেট হয়ে যাবে,তোমার আম্মু বারবার ফোন করে তোমার কথা জিজ্ঞেস করতেছে,আমি একবার বলছি তুমি বাথরুমে আবার বলছি রুপার মাথায় পোটি দিচ্ছো,আর কি বলবো?”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে উঠে বসলো তারপর শান্তর হাত থেকে শাড়ীটা নিয়ে বাথরুমে যেতে যেতে বললো”এই শাড়ীটা পেলেন কই”
.
আম্মুর,আলমারি থেকে আনছি,এ সময়ে শাড়ী পাবো কই?
.
আন্টি তো আমার গায়ে শাড়ীটা দেখলো চিনে ফেলবে,তখন কি হবে?
.
আরে আমি একটা কিছু বলে বুঝিয়ে দিব,সমস্যা নাই
.
আহানা ১৫মিনিট বাদে তৈরি হয়ে এসে দেখলো শান্ত ও রেডি হয়ে গেছে ততক্ষণে
.
চলুন যাই
.
নাস্তা তো করবা,যাত্রামুড়া যেতে এখনও অনেক দেরি আছে
.
কই নাস্তা?কে বানালো?
.
বুয়া বানিয়ে দিয়ে গেছে,আসো খেতে আসো,আর শুনো আজ আমি মাকে বলবো আমাদের বিয়ের কথা
.
কি জন্যে?আপনি না বললেন মুডের উপর ডিপেন্ড করে বলবেন!
.
আরে আজ মায়ের মুড ভালো থাকবে আমি জানি,আর আজই সবটা জানাবো তাকে

বুবু আমার মনে হয় এদের এক করার জন্য আমাদের কিছু একটা করতে হবে যাতে করে দুজনেই হিট খায় তারপর মিল হবে দেখিও
.
শান্তি রহমান হাত নাড়িয়ে বুঝালেন তিনি কথাটা শুনতে চান
.
তাহলে শুনো আমার পরিকল্পনা…(……)

আহানা আর শান্ত চুপচাপ হয়ে আছে,কারে একসাথে বসেছে প্রায়ই ১ঘন্টা হতে চললো আর ওরা একটাও কথা বলেনি দুজনে
যেন প্রয়োজন হলেই কথা বলবে তারা, এমনি এমনি বলবে না
শেষে শান্তই মুখ খুললো
“শুনো মাকে বলবা না যে বিয়ে দুবার হয়েছে,বলবা হয়েছে,লিগালি এন্ড ধর্ম মতেও,দুবার আলাদা করে করসি এটা বলতে যেও না,যা বলার আমি বলবো,মোট কথা তুমি চুপ থাকবা,ওকে?”
.
হুম
.
যাত্রামুড়া এসে গেছে,শান্ত আর আহানা রিয়াজের বাসার দিকে হেঁটে চলছে মাটির পথটা ধরে
মাটির পথটার পাশে থাকা গাছগুলো ঝিলিক বাতি দিয়ে সাজানো পুরোটা,লাল নীল সবুজ বাতি
সুন্দরই লাগতেছে দেখতে তবে শান্ত আর আহানার মধ্যে দুজনের একজনও এই সৌন্দর্য দেখতেছে না,তাদের মাথায় শুধু ঘুরতেছে ২টো মাকে সত্যিটা বলার পর কি ঘটবে
নেগেটিভ নাকি পজেটিভ?
অবশেষে বাসার মেইন দরজার সামনে এসে দুজনে দাঁড়ালো
মানুষ যতজন আছে তারা সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত
শান্ত তার মাকে খুঁজে বের করলো,উনি নিতুর চুল ঠিক করে দিচ্ছেন,আর আহানার মা চা খাচ্ছেন
শান্ত সেদিকে গেলো সোজা
তারপর শক্ত গলায় বললো”মা!!!”
.
শান্তি রহমান নিতুর চুল থেকে হাত সরিয়ে শান্তর দিকে তাকালেন
আহানার মাও তাকালেন ওর দিকে
.
মা আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই
.
আহানার মা মুচকি হেসে স্বাভাবিক গলায় বললেন”তার আগে আমার আর বুবুর ডিসিশন কি হয়েছে সেটা শুনো”
.
কি?
.
কি?
.
আমরা দুজন মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি,যেটা শুনলে আশা করি তোমরা দুজনেই অনেক খুশি হবে,আসলে তোমরা যেটা চাও সেটাই করবো আমরা এখন
.
কি করবা মা?
.
শান্ত আর আহানা বুঝতেছে না উনারা কিসের ডিসিশন নিয়েছেন
.
আহানার মা চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে হাতের আঙ্গুল গুলো নাড়াতে নাড়াতে বললেন”শান্ত তোমার জন্য আমরা মেয়ে একটা ঠিক করেছি,তার নাম কণা,সে নাকি তোমাকে অনেক ভালোবাসে,আর আহানা তোর জন্য ও আমরা ছেলে একটা ঠিক করেছি,সে এখানকারই ছেলে,নাম রামিম,এবার বলো তোমরা খুশি তো?
.
কথাটা শুনে শান্ত আর আহানা হা করে চেয়ে রইলো,মুখ দিয়ে যে কথা বের হওয়ার কথা সেটা ভেগে গেছে,এখন তারা ভাবতেছে তারা আসলেই কি শুনলো এটা
এবার যদি আবারও বিয়ে করে তাহলে এই নিয়ে ৩বার??
.
দুজনে দপ করে পিছনে থাকা সোফায় বসে গেলো,একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতেছে
তাদের এখন কি বলা উচিত?
মায়ের মুখের হাবভাব দেখে বুঝা যাচ্ছে তাদের নিজেদের বিয়ের কথা এখন বললে তুলকালাম লাগবে
আহানাকে শান্ত বলে দিয়েছিলো মুখ না খুলতে তাই সে আপাতত চুপ করে বসে আছে
শান্ত কি বলবে সেটাই ভাবতেছে
ওদিকে আহানার মা আর শান্তর মা তাদের দিকে চেয়ে আছে উত্তরের আশায়
শান্ত হালকা কাশ দিয়ে পানি এক গ্লাস নিয়ে খেলো
আহানা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে
.
কি হলো?তোমরা দুজন মুখ বাংলার পাঁচ করে রেখেছো কেন? আমাদের ডিসিশন তোমাদের ভালো লাগে নি নাকি?
.
আসলে আন্টি!!
.
শান্তি রহমান আঙ্গুল তুললেন শান্তর দিকে,চোখ রাঙিয়ে চেয়ে রইলেন,চোখের আগুন দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল!

বৌভাতে সব মেহমানরা আসতেছে এক এক করে,বেলা ১২টা বাজে তখন
দূরের একটা মাঝারি সাইজের নারকেল গাছের সাথে আহানা আর শান্ত হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,বিরহ লুক নিয়ে
কিসের বিরহ!দুবার বিয়ে করে আবার বিয়ে করার বিরহ!
আহানা দুম করে শান্তর গায়ে কিল বসিয়ে দিয়ে বললো”খুব তো ডেং ডেং করে আমাকে জোর করে ২বার বিয়ে করেছিলেন তো এখন এত চুপ কেন আপনি?”
.
আমি কি বলবো?মায়ের মুখ দেখোনি?কেমন আঙ্গুল তুলেছিলো,এর ভিতরে যদি শুনে পালিয়ে বিয়ে করেছি তো রেগে আজীবনের জন্য আমার মুখ ও দেখবে না উনি
.
তাহলে এখন কি করবো?বিয়ে করবো আবার?
.
চুপ থাকো একটু প্লিস,আমাকে ভাবতে দাও,পারলে মায়ের মুডটা ঠিক করো একটু
.
আজব,আমি কি ঠিক করবো এখন?আন্টি ভাববে এতদিব তার ছেলেকে বিয়ে করতে চাইনি এখন তার ছেলের জন্য মেয়ে খুঁজে পাওয়ায় সংসার ভাঙ্গতে চাচ্ছি
.
তুমি এক কাজ করো আমার মাথায় একটা বাড়ি দাও
.
আমি কিছু জানি না,আপনি ঐ কণাকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবেন না ব্যস!মনে রাখবেন আমাকে দুবার বিয়ে করেছেন
.
উফ!এর ভিতরে আরেক টপিক আনো কেন?কে বিয়ে করবে?এক বউকে সামলাতে ২বার বিয়ে করতে হয় তাকে
আবার বুঝি আরেক ঝামেলা ঘাড়ে আনবো আমি?
.
তো কি করবেন তাহলে?
.
ভাবতে দাও,যাও এক গ্লাস শরবত নিয়ে আসো আমার জন্য
.
হুহ
.
আহানা বাসার দিকে যেতেই পড়লো কণার সামনে
কণা হাতে লাগানো নতুন নেইলপলিশ ফু দিতে দিতে বললো”আহানা শুনেছো নিশ্চয়?শান্তি আন্টি আই মিন আমার হবু শাশুমা, উনি নাকি আমার আর শান্তর বিয়ে ঠিক করেছেন?”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে এদিক ওদিক তাকালো একবার
নাহহহ আশেপাশে শুনে লাগানোর মতন কোনো আন্টি-টুন্টি নাই
আহানা এবার তার দু হাত ভাঁজ করে একটু এগিয়ে এসে দাঁড়ালো তারপর মুখ বাঁকিয়ে বললো”তোমার খুব শখ না আমার শান্তর সাথে সম্পর্ক করার??
তো ফাইন!আমার ছেলের ফুফু বানাবো তোমাকে”
.
কথাটা বলে আহানা চলে গেলো
কণা ভাবনায় পড়ে গেলো,আহানার ছেলের ফুফু সে হওয়া মানে আহানার হাসবেন্ডের বোন সে,তার মানে শান্তর বোন??
বেয়াদব মেয়ে কোথাকার! আমার শান্তকে আমার উড বি ভাই বানিয়ে দিয়েছে!!
স্টুপিড!!
.
আহানা শরবত এক গ্লাস নিয়ে আবারও শান্তর দিকে যেতে নিতেই মা ওর হাত ধরে আটকে ফেললো
.
আহানা?সত্যি করে বল!শান্তর কণা মেয়েটার সাথে বিয়ে ঠিক শুনে তোর কি একটুও খারাপ লাগছে না??তুই কি কিছুই বলতে চাস না?তুই ঐ রামিম ছেলেটাকেই বিয়ে করে নিবি?
.
আহানা চুপ করে আছে,কিছু বলছে না
.
মা ওর হাত থেকে শরবতের গ্লাসটা নিয়ে নিলো তারপর বললো”এটা নিশ্চয় শান্তর জন্য?
নিবি না,যাকে বিয়ে করার কথা শুনে বাড়ি মাথায় তুলেছিস তার প্রতি তোর এত কিসের দরদ?যাকে দেখতে পারিস না
সারাদিন ঝগড়া করিস তার জন্য তোর এত কেয়ার আসে কোথা থেকে?
.
আহানা স্বাভাবিক গলায় বললো”আমি তো দূরে থাকতে চেয়েছিলাম মা!!
তুমিই তো সবসময় আমাকে উনার কাছে কাছে রাখতে,তাহলে এখন এই প্রশ্ন কেন?একটা মানুষের সাথে থাকতে থাকতে একটা সময় ভালো লাগা কাজ করে,আমার ঠিক সেটাই হয়েছে
.
কথাগুলো বলে আহানা ওর মায়ের থেকে গ্লাসটা নিয়ে চলে গেলো

কি হয়েছে?এত দেরি?
.
একবার কণা ধরেছে আবার মা ধরেছে
.
আচ্ছা শুনো!আমি ভেবে নিয়েছি মাকে কি বলবো!
.
কি বলবেন?
.
তাহলে শুনো!তোমাকে এখন যা যা বলবো সব তুমিও আমার মা আর তোমার মায়ের সামনে রিপিট করবা,জাস্ট নাম চেঞ্জ,ওকে?
.
মানে?
.
মানে আমি আহানা বলবো,তুমি শান্ত বলবে,আমি যে ক্যাপশন দিব সেটা কপি পেস্ট করবা আর নামের জায়গা চেঞ্জ হবে,ওকে?
.
ওকে!
.
চলো এখন
.
শান্ত শরবত খেয়ে আহানার হাত ধরে হেঁটে চললো মায়ের কাছে
এর ভিতর রিয়াজ,নওশাদ আর সূর্য মিলে ওকে ঝাপটে ধরে ফেলেছে,আহানাকে বলেছে ১০মিনিট পর ছাড়বে ওকে
আহানা তাই চলে গেলো বাসার ভেতর

তোরে কাল কত করে মানা করছি যে যাইস না??
.
সরি রিয়াজ,আহানা একা ছিলো তো তাই
.
তাই মানে কি?জানিস নওশাদ সূর্য কত মজা করেছে?সব মিস করেছিস তুই
.
দায়িত্ব আগে পরে মজা মাস্তি
.
নওশাদ শান্তর কাঁধে হাত রেখে ফিসফিস করে বললো সে রিয়াজের বাসর ঘরে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিল
.
সূর্য শান্তর আরেক কানে ফিসফিস করে বললো”ক্যামেরা লাগানোর পরই আবার ধরাও খেয়েছে😂”
.
রিয়াজ নিজের ক্রিম কালারের পাঞ্জাবিটা টেনে বললো”তোরা যে এত এত শয়তানি করিস আমার সাথে
মনে রাখিস আমি কিন্তু তোদেরই বেস্টফ্রেন্ড,তোদের কীর্তিকলাপ হারে হারে জানা আছে আমার”
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে