প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-২৪+২৫+২৬

0
2529

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২৪
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আজব এসব কি!!!সরুন!আমাকে দেখলেই শুরু করেন নাটক!
.
আহানার কথায় শান্তর হুস আসলো,জলদি করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”তোমাকে দেখলেই মানে কি?তুমি দেখে হাঁটতে পারো না সেটা বলো”
.
আমি দেখো হাঁটবো?আপনি যে নিতুর দিকে তাকিয়ে আসতেছিলেন সেটা?
.
যখন দেখলে আমি ওদিকে চেয়ে আসতেছি সরে পড়তে পারোনি?আসলে হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে ইচ্ছে করে সামনে তো দাঁড়াবেই
.
এক্সকিউজ মি!আমি যখন দেখলাম আপনি তেড়ে এদিকে আসতেছেন তখনই আমি ডান পাশে সরে গেছিলাম,কিন্তু আপনি বাম পাশ থেকে ঘুরে ডানপাশেই এসে পড়লেন,আমি কি করতে পারি?
.
আহানা আপু,শান্ত ভাইয়া তোমরা থামো প্লিস,আমার কাজই তো হলো না
.
আহানা শান্তর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিলো
আহা!বাঙালি ক্ষেতে চাষাবাদ করা কৃষকের মতন লাগতেছে
এই ভেবে আহানা ফিক করে হেসে দিলো
শান্ত আহানার হাসি দেখে লুঙ্গিটা ধরে সোজা চলে গেলো নিজের রুমের দিকে
.
হুহ!নিতু যাও পড়তে বসো,আজ তোমার কত পড়া বাকি আছে খবর আছে তোমার?
.
আপু পড়া বাদ দাও,কাল আমার স্কুলে সিন্ড্রেলা কম্পিটিশন,আমাকে জিততেই হবে যে করেই হোক
.
তাহলে তোমার ভাইয়াকে বলো যে শিখায় দিতে,আমি পারবো না কিন্তু
.
আপু প্লিস প্লিস,এ্যা😭
.
আহানা পড়লো মহা ঝামেলায়
সে এখন কি করবে,এদিকে নিতু ড্রেস পাল্টিয়ে এসে আহানার হাতে দিয়ে বললো এটা পরে অভিনয় করে দেখাতে
আহানা বাধ্য হয়ে হ্যাঁ তো বলে দিলো কিন্তু এখন সে নিতুর রুমে সিন্ড্রেলার ড্রেসটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,নিতু তো ওর বোনের মতনই,তার উপর পুচকে একটা মেয়ে, ওর কথা না রাখে কি করে
জামাটা একটু টাইট হবে তবে বেশ ফিট হয়ে যাবে গায়ে,সিন্ড্রেলা ড্রেস তো তাই একটু বড়োসড়ো জামাটা
আহানা এসব ভাবতে ভাবতে জামাটা পরে নিলো,আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই হা হয়ে চেয়ে আছে সে
কি সুন্দর,একদম সিন্ড্রেলার মতন লাগতেছে আমায়
আহানা জামাটা ধরে রুম থেকে বাইরে পা রাখতেই শান্তর সাথে এক ধাক্কা খেয়ে গেলো
শান্ত হাতে জুস নিয়ে মায়ের রুমের দিকে যাচ্ছিলো তখন
আহানাকে রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহানাকে এমন বেশে দেখে হা করে চেয়ে আছে সে
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো”দেখে হাঁটতে পারেন না আপনি?কি হলো?কথা বলছেন না কেন,?স্টুপিড!
আহানা চলে গেলো তার সব প্রশ্নের উত্তরে শান্তর নিরবতা দেখে
শান্ত এখনও হা করে আহানাকেই দেখছে,গায়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জামাটা লেগে আছে আহানার
চুলগুলো ও ছেড়ে দেওয়া,এত সুন্দর লাগতেছে যে শান্তর আর দুনিয়ার খবর নেই
পরে নিতু শান্তর হাত ধরে টান দিতেই শান্তর হুস আসলো নিতুর দিকে না তাকিয়েই মায়ের রুমের দিকে চলে গেলো সে
তাকালেই হাজারটা প্রশ্ন করে বসবে নিতু
.
আহানা নিতুকে বেশ ভালোমতন অভিনয় কি করে করতে হবে শিখিয়ে দিয়েছে তাই আজ একটু দেরি হয়ে গেলো
একেবারে ৮টা বেজে গেছে,আহানা ঘড়ির দিকে চেয়ে হা করে বললো”এ মা এত দেরি কি করে হলো,আমাকে তো তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে”
আহানা জামাটা চেঞ্জ করে বাসা থেকে বেরিয়ে এক দৌড় দিলো
তার আগেই কেউ ওর হাত ধরে আটকে ফেলেছে ওকে
আহানা হাতের দিকে তাকিয়ে তারপর যে ধরেছে তার মুখের দিকে তাকালো
শান্ত মুখটা গম্ভীর করে চেয়ে আছে ওর দিকে
.
আমার আজ এমনিতেও দেরি হয়ে গেছে আর আপনি কিনা আমার হাত ধরে আটকিয়ে আমার সময় আরও নষ্ট করছেন?
.
তুমি আবারও একা একা রাত করে বের হয়ে বিপদ মাথায় তুলতে চাও?
.
তো?তাতে আপনার কি?
.
শান্ত আহানার হাত হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে স্বাভাবিক ভাবেই বললো”আমার কিছু না তবে আমার দায়িত্ব বটে”
.
দায়িত্ব?কিসের দায়িত্ব? আমি তো আপনার কিছু লাগি না তাহলে কিসের দায়িত্ব আপনার?
.
আমার!আমার বাবার বেস্ট ফ্রেন্ডের মেয়ে তুমি,তো আমার তো অনেক কিছু লাগো
.
চাপা মারবেন না,হাত ছাড়ুন
.
ছাড়বো না,চলো আমার সাথে
শান্ত আহানার হাত ধরে হেঁটে চললো কারের দিকে
.
আপনি যদি ভেবে থাকেন আপনার সাথে কারে করে আমি বাসায় ফিরবো তাহলে ভুল ভাবছেন
.
আমি তো সেটা ভাবিনি
.
মানেহহহ?
.
মানেটা সহজ,কারে উঠো
.
নো ওয়ে,আমি বাসায় যাচ্ছি রিকসা নিয়ে,আপনি প্লিস দখল দিতে আসবেন না,আমি নিজের রক্ষা নিজে করতে পারি
ঐদিন ও নিজেই করছিলাম সো দূরে থাকেন,নিজের চরকায় তেল দেন,বাই
.
এই!কিসের এত জেদ তোমার?
আমার সামনেই সেন্সলেস হয়েছিলে সেদিন,রতনের সামনে হলে তখন কি হাল হতো তোমার জানো?আমি তোমাকে নিয়ে আন্টির কাছে এনেছিলাম রতন হলে সিধা কি করতো ধারণা আছে?
.
হেল্প করে আবার খোঁটা দিচ্ছেন?
.
খোঁটা বলে না এটাকে,মনে করিয়ে দিচ্ছি আমি জাস্ট!
.
আমি একা বাসায় যাবো!
.
শান্ত চুপচাপ আহানাকে কোলে তুলে সিটে বসিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো হুট করেই
আহানা ভাবতেও পারেনি শান্ত এমনটা করবে
.
আপনি একটা খারাপ লোক,আমাকে টাচ করতে মানা করিনি আমি?
.
শান্ত ঘুরে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে চুইংগাম চিবোতে চিবোতে গাড়ী স্টার্ট দিলো
.
আপনি আমার কোনো কথাই সিরিয়াসলি নেন না কেন বলুন তো?
.
কারণ তুমি একটা বাচ্চা মেয়ে,বাচ্চাদের কথায় এত কান দিতে নাই বড়দের
.
আমার প্রতি এত কেয়ার দেখিয়ে মায়ের সামনে ভালো হতে চান তাই না?তাহলে একটা কথা শুনে রাখুন আমি আপনাকে বিয়ে করবো না
.
তোমাকেও বিয়ে করতে আমার বয়ে গেছে
.
কোন পথ দিয়ে নিচ্ছেন আবার?শুনুন আমি আপনার সাথে আলাদা কোথায় দাঁড়িয়ে বা বসেও কথা বলতে চাই না
.
আমি এখনই কথা শেষ করতে চাই বলে শর্টকাট দিয়ে যাচ্ছি,জলদি বাসায় ফিরতেও পারবা আর আমার কথাও বলা শেষ হবে ততক্ষণে
.
কিসের কথা?
.
রিয়াজের পরেরমাসের শুরুতেই বিয়ে,আমার সাথে যাওয়ার জন্য তৈরি হও
.
আমাকে পাগলে ধরছে তাই না?জীবনেও না, আপনি গিয়ে খান বিয়ে
ঐবার চুমু দিতে চেয়েছেন এবার কি করবেন কে জানে!
.
শুনো,ওটা ভুলবশত ছিলো আর কিছু না,বাদ দাও ওসব,কাল বিকালে আমার অফিসে এসো,একসাথে রিয়াজের বিয়ের গিফট কিনতে যাবো
.
আপনি হুকুম করছেন এমন ভাবে যেন আমি আপনার সব কথা মানি তাই না?এটাও মানবো না,কি করবেন?
.
শান্ত কার থামিয়ে ফেললো
.
কার থামালেন কেন?আমার বাসা তো আশেপাশেও কোথাও দেখা যাচ্ছে না,কোথায় নিয়ে এলেন আমাকে?
.
নামো
.
আমি এখন একা বাসায় ফিরবো?এমন জায়গায় নামতে বলতেছেন যেটার কিছুই চিনি না আমি আজব তো!
.
ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলবো বলে নামতে বলেছি তোমাকে,নামো!!!!!
.
আহানা শান্তর ধমকে ভয় পেলো আবার মাথার মধ্যে রাগের পাহাড় গড়তে গড়তে কার থেকে নামলো সে
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার সামনে দাঁড়িয়ে বললো”শুনো আহানা!সবার আগে একটা কথা বলি আর সেটা হলো তুমি আমার অফিসে কাজ করবা না ভালো,চাকরি পাইসো একটা ছোটখাটো সেটা দিয়ে তুমি অনেক কষ্টে ডাল ভাত জোগানোর কথা ভাবছো সেটাও ভালো বাট এটা ভেবেছো কি যে আন্টি ভালো আছে কিনা?সবসময় নিজে যা ভালো মনে করবে সেটাই করবে এটা কিন্তু রং!
.
আমি কি করবো না করবো সেটাও কি আপনি ঠিক করবেন?
.
হ্যাঁ আমি ঠিক করবো,আর শুনো!তোমার এই সাদাসিধা চেহারা নিয়ে আমাকে ইম্প্রেস করার চেষ্টাও করবা না,এই যে মাঝে মাঝে বলো আমাকে বিয়ে করবা না এটা সেটা
এগুলো বলে কি বুঝাতে চাও?তুমি অচিনপুরের রাজকুমারী?
বাট তুমি আসলে একটা গাঁইয়া ভূত!তোমার চেয়ে তো কণা ভালোই স্মার্ট
.
তো আরও ভালো,রিয়াজ ভাইয়ার বিয়েতে গিয়ে ওর সাথে বিয়েটা পাকা করে আসেন,আমাকে মাফ করেন,সবসময় আমাকে নিয়ে টানাটানি না করে ওকে নিয়ে টানাটানি করেন বরং
.
বিয়ে কাকে করবো সেটা আমার পার্সোনাল ম্যাটার,আমি জাস্ট ৩টা কথা বলার জন্য তোমাকে এখানে এনেছি
.
কি?
.
তুমি কাল সকালে আন্টিকে নিয়ে আমাদের বাসায় ফেরত আসবা
তারপর আমার অফিসে জয়েন হবা আর সবার শেষে আমার সাথে শপিং মলে যাবা,রিয়াজের বিয়েতে কিছু গিফট দিব সেসব কিনবো,আর রিয়াজের বিয়েতেও তুমি আমার সাথেই যাবা
.
বাপের বাড়ির আবদার পেয়েছেন তাই না?
.
তুমি হয়ত জানো না আমি মজনু আঙ্কেলের বিপক্ষে একটা কেস লড়তেছি তাও তোমাদের বাড়ি গাড়ী ফেরত আনার উদ্দেশ্যে!সো তুমি ভেবে দেখো তুমি কি চাও
আমি আজ অফিস থেকে ফেরার সময় তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম
বাসার অবস্থা তো অনেক খারাপ,ওরকম একটা পরিবেশে তুমি আন্টিকে রাখতেছো জাস্ট তোমার জেদের বশে?হাউ চিপ ইউ আর!
আমার মা যদি বলে তোমার মত একটা মেয়েকে বিয়ে করলে উনি হাসবেন তো আমিও সেটাতেও রাজি হয়ে যাবো,জঘন্য কাজটা করতে আমি রেডি হয়ে যাবো কারণ আমি আমার মায়ের মুখের হাসির দায়িত্ব নিয়েছি সেদিন থেকে যেদিন তার হাসির মেইন কারণ আমার বাবা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছিলেন
আর তুমি??তুমি তোমার জেদ পূরন করতে গিয়ে তোমার মাকে এত কষ্ট দিচ্ছো,আমার সাথে শত্রুতা নাহয় বুঝলাম বাট আন্টির সাথে কি শত্রুতা তোমার?
.
আহানার চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পড়তেছে অনবরত তারপর চোখ মুছে শক্ত হয়ে সে বললো”আমার কারোর সাথেই শত্রুতা নেই
আমি এমন একটা মেয়ে যে বিনা পরিশ্রমে কোনো টাকা,সাহায্য নিতে চাই না কারোর থেকে,আমি চাই আমার মা ভালো থাকুক ভালো কাজের টাকা দিয়ে
.
এক মিনিট!আমি আন্টিকে আমাদের বাসায় রাখবো এটাতে খারাপের কি দেখছো তুমি?
.
আমার মা অন্যের বাড়িতে কেন থাকবে?
.
এই চিন্তাভাবনা তোমার অনেক খারাপ!এই লজিক উঠাতে গিয়ে তুমি এটাই ভুলে গেছো যে আন্টি সেখানে ভালো আছেন নাকি নাই,বাট তুমি তো তুমিই,তোমার জেদ এত বেশি যে তুমি নিজেও না খেয়ে থাকতে পারবা আর আন্টিকেও না খাইয়ে রাখবা,এত জেদ তোমার
.
ব্যস একটা কথাও না,অনেক বলেছেন,আমাকে আমার মতো থাকতে দিন না,আমার মায়ের ভালো খারাপ আমাকে বুঝতে দিন
.
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার দুকাঁধ চেপে ধরে কাছে এনে বললো”কিসের ভালো খারাপ??আমি তো সবটাই খারাপ দেখি!তুমি ইচ্ছে করে আন্টিকে কষ্ট দিচ্ছো,আমার মাকে যিনি বুবু ডাকে তাকে তুমি কষ্ট দিচ্ছো,যে ছোটবেলায় আমার জন্য সুয়েটার বানাতে গিয়ে হাতে বড় সুই ঢুকিয়ে ফেলেছিল সেই আন্টিমণিকে কষ্ট দিচ্ছো তুমি!”
.
আহানা ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো”সেই মহিলাটি আমার মা,আমার অধিকার সব চাইতে বেশি”
.
তোমার মা বলে তুমি যা নয় তাই করবা আমি তা হতে দিতে পারি না,আন্টি নিজে আজ মাকে ফোন করে কেঁদেছে
আমার সামনে বসে কেঁদেছে,আমি এটা আর হতে দিতে পারি না ব্যস!!তুমি আমার কথা সোজা সাপটায় বুঝো নয়ত আমি কাল গিয়ে আন্টিকে নিয়ে আসবো
.
আহানা হাতের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বললো”আপনার কথায় হবে,হাত ছাড়ুন,আমি নাহয় আসলাম না,কিন্তু মা আসবে”
.
শান্ত আহানার হাত ছেড়ে দিলো,তারপর কিছুদূর গিয়ে থেমে বড় একটা নিশ্বাস ফেলে নিচু স্বরে বললো”আন্টি তোমায় ছাড়া থাকবে না,তুমি সহ আসবা”
.
আহানা চিৎকার করে বললো”আপনি কি চান বলুনতো”
.
আহানার কথার জবাব না দিয়ে শান্ত সামনের দিকে তাকিয়ে আছে,লম্বা লম্বা সবুজ ঘাস,বাতাসে নড়তেছে,শীতল হাওয়া এসে গায়ে লাগে বারবার
দূর দূরান্তেও মানুষ দেখা যায় না,নির্জন একটা এলাকা
আহানা যখন বলে কি চান তখন নিজের মনের ভিতর কি চলে তা যদি সে দেখতো তাহলে সে কখনও এটা জিজ্ঞেস করতো না,আমি ওর সাথে একবার ভুলবশত জোর করতে গিয়ে অনেক বড় ভুল করেছি,সেদিন চড়ের জন্য না চরিত্রহীনের এওয়ার্ডটা খারাপ লেগেছে অনেক
তবে আহানাকে আমার ভাল্লাগেনা আবার তাকে ছাড়া একটা দিনও ভালো লাগে না,আজব অনুভূতি,কবিরা বলবে এটা ভালোবাসা
তবে আমি মানি না,ওকে ভালোবাসতে যাবো কেনোই বা??
কি আছে ওর মধ্যে?
সাজগোজের মধ্যে কপালে একটা টিপ,আর কিছুই না
না ক্রিম,না পাউডার, না কোনো ভালো ড্রেস আপ
সবসময় হালকা রঙের থ্রি পিস পরে থাকে
গলায় ওড়না ঝুলিয়ে চুলগুলো সামনে দিয়ে রাখে,হাতে জামার সাথে মিলিয়ে ১ডজন চুড়ি সবসময় থাকে
তারপরেও ওকে দেখলে মনে হয় সে আমার মায়ের পরে সবচাইতে আপন মানুষ!যার সামনে আমি অপেন বুক
সে আমাকে পড়ে দেখতে পারবে,সে যদি নিজ থেকে এসেও জড়িয়ে ধরে আমাকে হয়তবা আমি তাকে বাধা দেওয়ার শক্তি পাবো না
হ্যাঁ এটা অবশ্যই ভালোবাসা নয়

এই লোকটা আমাকে কখনও সম্মান দেয়নি,দিবেও না জানি
লোকটা খুব খারাপ,এরকম খারাপ চরিত্রের লোক আমি আর দেখিনি,অথচ কেয়ার করার সময় ঠিকই করে আবার মুহুর্তেই ধাক্কা দিতেও পিছুপা হবে না
আমি বুঝি না আসলেই সে চায় টা কি?
আমাকে তো ভালোটালো বাসে না সাফ সাফ বলে দেয় তাহলে এসবের কারণ কি?আমি একা বের হলে তার কি যায় আসে?
এত বছর পর তার সাথে আমার বান্দরবনে দেখা হয়েছিলো
সেদিন থেকেই আমাকে এক দিক দিয়ে বাঁচাচ্ছে তো আরেক দিক দিয়ে অপমান করছে
এত অপমান যে তাকে শুধু ঘৃনা করতে ইচ্ছে করে আমার
আর আমিও কেমন যেন হয়ে গেছি,সেদিন কি দরকার ছিল উনার ক্ষতে মলম লাগানোর!
আমি উনাকে ভালোবাসি না,পছন্দ ও না,কিছু করি না
ঘৃনাও না!
ছোটবেলায় কি হইছে না হইছে সেটা আগের কথা,এখন এসব ভেবে লাভ আছে?দয়া করবে বলে কি মাথা কিনে খাবে আমার?
না এটা কোনোমতেই ভালোবাসা নয়,অন্য কিছু হতে পারে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২৫
#Writer_Afnan_Lara
🌸
কি হলো?কারে এসে বসো,ইনবাইট করতে হবে নাকি?
.
দরকার নেই
.
আহানা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতে গিয়ে প্লাজোর সাথে পা লেগে দুম করে কারের ভিতরে এসে শান্তর উপর গিয়ে পড়লো সে
একদম শান্তর গায়ের উপরই পড়লো
শান্ত চুপ করে আছে,একটাও কথা বের হচ্ছে না ওর মুখ দিয়ে,কারণ ওর ঠোঁট জোড়া আহানার মাথার চুলে ডুবে আছে
আহানা কোনোরকম ঠিকঠাক হয়ে বসে বললো”সরি”
.
ইটস ওকে!
.
শান্ত আহানাকে ওদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে আবার চলে আসলো বাসায়
আহানা জানালার গ্রিল ধরে চুপ করে আছে,মাকে বললেই মা রাজি হয়ে যাবে শান্তদের বাসায় থাকার জন্য,কিন্তু ওর মন যে মানছে না,এভাবে অন্যের ঘরে থাকা একদম পছন্দ না ওর
মায়ের দিকে চেয়ে দেখলো মা বসে বসে ঝিমোচ্ছেন,মন খারাপ তার,কি জন্য মন খারাপ তা জানে আহানা
জানালা থেকে সরে এসে মায়ের হাত দুটি মুঠো করে ধরে বসলো সে
তারপর নরম গলায় বললো”মা কাল সকালে আমরা শান্তদের বাসায় যাবো,এখন থেকে সেখানেই থাকবো,আন্টি নাকি তোমার আর আমার জন্য সারাদিন মন খারাপ করে থাকেন”
.
মায়ের মুখের ভাবগতি মূহুর্তেই বদলে গেলো,এক গাল হাসি দিয়ে বললেন”সত্যি?”
.
হ্যাঁ
.
তাহলে তোর এই দোকানের চাকরিটা ছেড়ে দে,এখন থেকে তোর তো আর আমাদের বাসা ভাড়ার দরকার পড়বে না”
.
দেখি কি করতে পারি
.
আহানা আর কিছু বললো না,কাঁথাটা টেনে একপাশে শুয়ে পড়েছে সে
পরেরদিন অনেক সকাল হয়ে গেলো এখনও আরামসে ঘুমাচ্ছে আহানা,তার ইচ্ছা ছিল ঐ বোরিং চাকরি আর করবে না তাই সে মন দিয়ে ঘুমাচ্ছে,সকালে উঠে চাকরিতে যাওয়ার ও আর কোনো চিন্তা নাই
খালি ঘুম আর ঘুম!
হুট করে গালের মধ্যে কে যেন চিমটি কাটলো,নাহ কে চিমটি কাটবে আবার!হয়ত পিপড়া হবে
আহানা হাত পা ছড়িয়ে আবারও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো
কিন্তু নাহ!কিছুক্ষণ বাদে আবারও সেই চিমটি কাটলো,কিন্তু এবার গালে না একেবারে হাতে
আহানা লাফ দিয়ে উঠে বসতেই দেখলো একজন সুদর্শন পুরুষ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে শক্ত চোখে তাকিয়ে
পরনে কালো শার্ট,কালো জিন্স,হাতে কালো ঘড়ি
আহানা ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত ড্যাবড্যাব করে দেখে যাচ্ছে,সে যে স্বপ্ন ছেড়ে বাস্তবে তা সে জানে না
হাঁট উঁচু করে ভাঁজ করে তার উপর হাত রেখে হাতের উপর থুতনি বসিয়ে মুগ্ধ হয়ে সে শান্তকে দেখে যাচ্ছে
শান্তর বুঝতে বাকি নেই যে আহানা জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে তা নাহলে শান্তকে দেখলেই তার গায়ে জ্বালা দেয় আর সে কিনা মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে পাক্কা ৩মিনিট ধরে
শান্ত হাত বাড়িয়ে আহানাকে ধরে এক ঝাঁকুনতি দিলো
আহানা ঝাঁকুনি খেয়ে চোখ ডলে বুঝলো এটা সত্যি তারপর ওড়নাটা হাতে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে বললো”আপনি?এখানে?এসময়ে?”
.
তোহহহ?কাল রাতে কি কথা হয়েছিলো?সকাল সকাল আমার বাসায় আন্টিকে নিয়ে ফেরত আসবা,তো কয়টা বাজে?
.
তো?যাবো বলসি তো,যখন ইচ্ছা তখন যাবো,আপনি অফিসে যান না,আমার পিছে লেগে আছেন কেন?
.
ওকে ফাইন যখন খুশি তখন যেও,আপাতত আমি আন্টিকে নিয়ে চলে যাচ্ছি,আর তোমাদের বাসার যে সব জিনিসপাতি আছে সেগুলো আমি OLX.com এ বেচে দিব,যে টাকা আসবে ওটা দিয়ে লজেন্স খেও কেমন খুকি?
.
খুকি মানে?কে খুকি?আর বেচবেন কেন?আপনাকে পারমিশন দিসি আমরা?
.
আন্টি দিছে,বাই
.
আরে আরে!
.
শান্ত চলে গেলো আহানার মাকে নিয়ে
আহানা একা বাসায় গাপটি মেরে বসে আছে,সকাল সাড়ে ১০টা বাজে তখন,আহানা অনেকক্ষণ ভেবে কতকিছু ভাবলো তারপর উঠে ফ্রেশ হয়ে ওড়না আর ব্যাগ নিয়ে শান্তদের বাসায় ফিরে আসলো
মা শান্তর মায়ের সাথে বাগানে বসে আছেন
শান্তি রহমান আহানাকে দেখেই হাত বাড়িয়ে ধরলেন
আহানাও ভালো মেয়ের মতন উনার কাছে এসে উনাকে জড়িয়ে ধরে সালাম দিলো,উনার চোখে মুখে আজ যেন হাসির বৃষ্টি ঝরছে
আহানার মাও অনেক খুশি,আহানার মুখেও হাসি ফুটলো তাদের হাসি দেখে
আহানা বাসার ভিতর যেতেই রিপা এসে বললো শান্ত নাকি বলে গেছে আহানা যেন ওর অফিসে আসে
আহানা উত্তরে বললো সে যাবে না
ব্যস তাদের জন্য রাখা রুমে এসে আহানা বালিশ একটা কোলে নিয়ে ধপ করে বসে গেলো

কি হলো রিপা??তুমি কি আহানাকে বলোনি অফিসে আসতে?
.
স্যার বলেছিলাম,কিন্তু আহানা মুখের উপর না করে চলে গেছে
.
ঠিক আছে,আমি আসতেছি,কাঁটা দিয়ে কি করে কাঁটা তুলতে হয় জানা আছে আমার
শান্ত ফোন রেখে বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে
আহানা বসে বসে বিসকিট খাচ্ছে আর বারান্দা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে একবার একটা দেখতেছে,মা আর আন্টি এখনও বাগানে,আর নিতু স্কুলে,রিপা বুয়ার সাথে রান্নাঘরে
দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে আহানা পিছন ফিরে তাকালো
শান্ত রাগী রাগী লুক নিয়ে আহানার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে
.
কি ব্যাপার?বলছি না আমি আপনার অফিসে যাব না,আমাকে যে কি পরিমাণ অপমান করে বের করছেন সেটা মনে আছে?
আমার তো মনে হয় না কিছু মনে আছে আপনার তা না হলে বার বার রিকুয়েস্ট করতেন না
.
শান্ত এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল দরজার কাছে,আহানার কথা শেষ হতেই এখন সে এগিয়ে আসতেছে এদিকে
আহানার অজান্তেই হাত থেকে তার বিসকিটা পড়ে গেলো,ভয়ে কারণ শান্ত উল্টা পাল্টা কিছু করে না বসে এই ভাবনাই সারাদিন আহানার মাথায় ঘুরপাক খায়,এখনও খাচ্ছে
আহানা ফ্লোরের দিকে চেয়ে বিসকিটটা দেখে নিলো,ভেঙ্গে ২টুকরো হয়ে গেছে চকলেট বিসকিটটা
আহানা এবার মুখ তুলে সামনে তাকাতেই খেয়াল করলো শান্ত ওর খুব কাছে এসে গেছে
.
(এখন নায়কদের মতো আমাকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে অফিসে সব জানা আছে আমার)
.
ভুল ভাবছো
.
আমি কি ভাবছি তা জানেন কি করে?
.
তুমি মনে মনে কথা বললে সেটা ভাষণ আকারে আমার কানের কাছে বাজে,বুঝলা
.
আচ্ছা তাহলে কি করবেন শুনি একটু
.
তোমার সব টিউশনি বন্ধ করার দায়িত্ব শুধু আমার
.
মানে কি
আপনি কি করবেন?
.
করবেন না,বলো কি করেছি
.
👿কি করেছেন?
.
আমি চিত্রা/সিয়া আর রিপার বোন রুনা সবার বাসার এড্রেস তোমার মায়ের কাছে থেকে নিয়ে নিয়েছি
.
তারপর?
.
তারপর নাথিং!
তুমি কি চাও সেটা বলো,আমার সাথে আমার অফিসে যাবা নাকি আমি তোমার টিউশনি খাবো
.
মঘেরমুলুক আর কি,বললেই হয়ে গেলো নাকি,কককককককি করবেন কি আপনি?
.
শান্ত হেসে দিয়ে বিছানায় বসলো পায়ের উপর পা তুলে,তারপর আহানার দিকে তাকিয়ে বললো”বেশি কিছু না
শুধু বলবো আহানা আমার উড বি ওয়াইফ,অন্যের বাসায় গিয়ে গিয়ে টিউশনি করায়,কেমন দেখায়,আপনি প্লিস নিজ থেকে আহানাকে মানা করে দেন,ও কিছুতেই মানছে না,আমার তো এনাফ টাকা পয়সা আছে,তাহলে আমার ওয়াইফ কেন এত কষ্ট করবে বলুন
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”আপনার এত মাস্টার মাইন্ডের প্ল্যানটা ফ্লপ হবে দেখিয়েন”
.
তোমার আর আমার ছবি আন্টিকে দেখানোর প্ল্যান কিন্তু সাকসেস হয়েছিলো
.
আহানার এবার কলিজা কাঁপতেছে,ঢোক গিলে বললো”আপনাকে আমি ভয় পাই নাকি?”
.
জানতাম এমনটাই বলবে,দেখো তোমার মনে হয় ফোন বাজতেছে,গিয়ে ধরো
.
আহানা পা টিপে টিপে টেবিল পর্যন্ত গিয়ে ফোন ধরলো,সিয়ার আম্মুর কল
.
হ্যালো আন্টি,আসসালামু আলাইকুম,কেমন আছেন?
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম
তুমি এটা ঠিক করোনি আহানা!
.
কককককি মানে?বুঝলাম না
.
বিয়ে করলা আর একটিবার দাওয়াত ও দিলে না
.
না তো আমি বিয়ে করিনি
.
হইছে হইছে আর বলতে হবে না,যাক যেটার জন্য ফোন করেছিলাম শুনো,তুমি নাকি লজ্জার কারণে বলতে পারো না যে আর পড়াবানা, তাই আমি বলছি আর পড়াতে হবে না
অনেক কষ্ট করেছো এতদিন এবার একটু সুখ করো,স্বামীর টাকায় কেমন?
সিয়ার জন্য নতুন টিচার অলরেডি খুঁজেও নিয়েছি আমরা
.
ব্যস সিয়ার আম্মু কল কেটে দিয়ে পৃথিবীর শেষ সীমানায়!!!
আহানা গাল ফুলিয়ে শান্তর সামনে এসে বললো”আপনাকে এত বড় মিথ্যা কথা বলতে বললো কে?আপনার এত সাহস!!আমার টিউশনি একটা বাদ দিয়ে দিলেন!
.
শান্ত হেসে বললো”সবে তো একটা,এখনও আরও আছে”
.
আপনি আমাকে এত এত অপমান করলেন তার পরেও আমি কি করে আপনার অফিসে যাই?আমাকে ধাক্কা মেরে বের করে দিয়েছিলেন মনে আছে?
আহানা কেঁদে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললো”এটাও বলেছিলেন আমি নাকি আর চাকরি পাবো না কোথাও
কিন্তু!আমি তো পেয়েছি, আপনার কথা ভুল প্রমাণ করেছি
.
কথাগুলো বলতে বলতে আহানা কেঁদেই যাচ্ছে
শান্ত টিসু হাতে নিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে টিসুটা রেখে দিয়ে এগিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো,নিজের বুকে ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে চুপ করে রইলো সে
আহানা কেঁদে কেঁদে শান্তর শার্ট টেনে চোখ মুছতেছে
শান্তর ঠিক মনে আছে ছোটবেলায় আহানা ওকে ধরে ওর জামায় চোখ মুছতো কান্না করার সময় আর তাই সে এখন টিসু নিয়েও রেখে দিয়েছে,আহানা সেই ছোটবেলার আচরণটাই করলো
আহানা কাঁদা শেষ করে মুখ তুলে বললো”জড়িয়ে ধরে কি বুঝাতে চান?”
.
এই যে আমি তোমাকে ইচ্ছে করে অপমান করিনি,তুমি দায়ী
.
আমি দায়ী?
.
হুম!সোজা কথায় হ্যাঁ বলো না কখনও,বললেই তো আর কথা শুনতে হতো না
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে পাশে তাকাতেই চোখ পড়লো তার আয়নায়
সে শান্তকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে,এটা দেখেই চোখ বড় করে দূরে সরে দাঁড়ালো সে
.
শান্ত হালকা একটা কাশ দিয়ে বললো”ওকে আই এম সরি!এবার তো চলো!”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”আমাকে আর ছুঁবেন না”
.
হুহ!হোয়াটএভার,চলো এখন
.
আহানা খুশি খুশি শান্তর পিছন পিছন আসতেছে,শান্ত ওকে সরি বলেছে এটার চেয়ে খুশি আর কিছু হতে পারে নাকি
তার এখন মন চাচ্ছে আকাশে উড়তে
মা আর শান্তি রহমান তো রীতিমত অবাক,শান্ত আর আহানা কিনা বিনা ঝগড়ায় একসাথে কারে করে কোথায় যেন চলে গেলো!
শান্তি রহমান তো আহানার মায়ের হাতে হাত রেখে এক গালি হাসি দিয়ে গেটের দিকে চেয়ে আছেন

তুমিই বলো কি গিফট করা যায়?
.
বাজেট কত?
.
ব্যাপার না,যেটা পছন্দ হবে সেটা নিব,টাকা ব্যাপার না,আমার বেস্টফ্রেন্ড রিয়াজ,নওশাদ আর সূর্য,১/২/৩লাখ বাজেট
.
কিহহহ!
.
শান্ত কার থামিয়ে ফেললো,তারপর বললো”কি?চিৎকার করো কেন?”
.
এত টাকা দিয়ে কি কিনবেন?
.
সেটাই তো ভাবতেছি,কি কিনবো,তুমি বলো তাহলে সেই অনুযায়ী শপিংমলে যাবো
.
নওমি আপুকে গলার নেকলেস টাইপ কিছু দিয়েন
.
না আমি এংগেজমেন্টের দিন দিয়েছিলাম তাই এখন ভিন্ন কিছু দিতে চাচ্ছি
.
তাহলে এক কাজ করেন,টিভি/ওয়াসিং মেশিন/মাইক্রোওয়েভ এসব কিনে দিতে পারেন
.
কাম অন!এসব তো ওর রিলেটিভরা ওকে দিবে,ইউনিক কিছু বলো
.
আইডিয়া!
.
কি?
.
উনাদের জন্য হানিমুন প্যাকেজ আপনি কিনে গিফট দিয়ে দেন,ব্যস হয়ে গেলো
.
ওয়াও জোস আইডিয়া দিলা!এটা বেস্ট হবে,বালি প্যাকেজ কিনে দিয়ে দিব
.
বালি মানে,কক্সবাজার?
.
আরেহ না,ইন্দোনেশিয়ার বালির কথা বলতেছি
.
ওমা তাহলে তো অনেক খরচ
.
আমি নেটে দেখছিলাম,প্যাকেজ ৩/৪লাখ হবে,৭দিনের
.
এত দাম!
.
তাহলে এটাই ফাইনাল,আমি এখনই বুক করছি
.
বাপরে এত টাকা খরচ করে মানুষ নিজের বেস্টফ্রেন্ডের বিয়েতে,আমি আরও ঠিক করসিলাম রুপার বিয়েতে শাড়ী একটা কিনে দিব!৭০০/৮০০ কিংবা বড়জোর ১হাজারের!
টাকা থাকলেই সব হয় আজ তা বুঝলাম
.
তুমি তাহলে এখন আমার সাথে অফিসে চলো,আগের মত কাজ শুরু করে দিবা,আর আমার কথার ভিতর নিজের কথা ঢুকাবা না,ওকে?
.
আপনি ভুলভাল বলে যাবেন আর আমি চুপ থাকবো তা হচ্ছে না হুহ!
.
আমি যা বলি সব ঠিক বলি,তোমার মতন না,তোমার তো আজ পর্যন্ত একটা কথাও ঠিকঠাক লাগেনি আমার
.
মানুষ ঠিকঠাক হলে তার পরে তো সব ঠিকঠাক লাগবে
.
শান্ত শার্টটা একটু টেনে কার পার্ক করতে করতে বললো”আমি তোমার চেয়ে ভালোই”
.
আহানা কার থেকে নেমে তারপর বললো”তা তো হবেই,আপনি তো আমার মতন মেয়ে না,ছেলে”
.
বকবক না করে লিফটের বাটন চাপো
.
হুম😒
.
লিফটে ঢুকে দুজনে দুজনের দিকে কেমন করে যেন চেয়ে আছে
৫১% গালি আসতেছে তো ৪৯%ভালোলাগা
গালিতে ১% বেশি হওয়ার কারণে দুজন মিলে ব্রু কুঁচকালো তারপর একসাথে বললো”জীবনে আর দেখো নি?”
.
না
.
না
.
এক মিনিট!আপনাকে দেখার কি আছে?
.
সেম উত্তর,তোমাকে দেখার কি আছে?আমাকে কপি করো কেন?
.
আপনি আমাকে কপি করছেন
.
তোমার সাথে ভালো মানুষে কথা বলে না
.
আরেহহহ আহানা!
.
আহানা সামনে চেয়ে দেখলো ঊষা হা করে ওর দিকে চেয়ে আছে,চোখেমুখে তার হাসি
.
শান্ত লিফট থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো”ওরে ওর কেবিন বুঝিয়ে দিয়ে আমার অফিস রুমে আসতে বলো”
.
ওকে স্যার!
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২৬
#Writer_Afnan_Lara
🌸
সুহানা!!তুমি যে লেটার পাঠিয়েছিলা আমি তো ধরেই নিছিলাম যে স্যার নির্ঘাত তোমাকে জেলে নিয়ে ছাড়বে
বাট এখন দেখি তুমি আবার ব্যাক করেছো,আই এম সো হ্যাপি!বাই দ্যা ওয়ে তোমার বাচ্চাগুলো কেমন আছে?
.
ইয়ে মানে!ভালো আছে সবাই
.
ওকে!! তাহলে স্যারের কাছে যাও,আমি আমার কাজে যাই
আহানা হাসি মুখে শান্তর রুমের দিকে যেতে নিতেই দেখলো তার পাশ দিয়ে নওশাদ,রিয়াজ আর সূর্য স্টাইল করে হেঁটে যাচ্ছে সেদিকে
আহানা তাই আর গেলো না,নিজের কেবিনেই ফেরত আসলো সে
.
স্যার আসবো নাকি?😜
.
শান্ত ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে দেখলো তার পুরো গ্যাং দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওপারে,শান্ত মুচকি হেসে ফোনটা টেবিলে রেখে দিয়ে বললো”জি স্যাররা আসেন আসেন”
.
নওশাদ দাঁত কেলিয়ে ঢুকেই টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো আর সূর্য রিয়াজ চেয়ার টেনে বসেছে ততক্ষণে
.
তা কি ভেবে আমাকে স্মরণ করতে মন চাইলো আপনাদের?
.
শুনলাম তুই নাকি ইদানিং আহানার সাথে বেশি সময় কাটাস,তা এত কিছু হলো আর আমরাই জানলাম না?
.
সময় কাটানো মানে কি আবার,তোরা তো জানিস ও আমার রিলেটিভ তো সে অনুযায়ী তো আমার সাথে ওকে দেখা যাওয়াটা স্বাভাবিক
.
জি অবশ্যই,তবে অতিরিক্ত দেখা যাওয়াটা অস্বাভাবিক, তাই না রিয়াজ?
.
হ্যাঁ তা তো বটেই
.
এটা বলতে এসেছিস তোরা?তাহলে শুনে রাখ আমার আর আহানার মধ্যে ঝগড়া ছাড়া জীবনে কিছু হয়নি আর হবেও না
.
সে যাই হোক এখন শুন মেইন কথা
.
জি বলেন দুলা সাহেব
.
হুম,বিয়ের আগে একটা ব্যাচেলর পার্টি করবো,অনলি বয়েজ,তুই রাতে আসবি,এই মাসের ৩০তারিখ রাত ১০টা টু যতক্ষন ইচ্ছা ততক্ষণ
.
সেটা আসবো,তবে মা আর নিতুর কানে যেন কথাটা না যায়
মা মদ গাঁজা এসব খাওয়া দুচোখে দেখতে পারে না আর ব্যাচেলর পার্টিতে এসবই মেইন শুনলে আমার যাওয়া বন্ধ
.
সেটা জানি,এমনকি আমাদের ফ্যামিলির লোক ও জানে না যে আমরা একটা ব্যাচেলর পার্টি থ্রো করেছি
.
দ্যাটস গ্রেট!বস তোরা,আমি কফি অর্ডার করছি
.
তা কর,আরও কথা আছে তোর সাথে
.
হ্যালো ঊষা!৪টা কফি আর “নাচোস”পাঠাও আমার রুমে
.
ওকে স্যার
.
নওশাদ শান্তর রুমের পর্দা সরিয়ে বললো”তোর রুমের এই ভিউটা জাস্ট অসাধারণ!!আমার অফিসের সামনে ইয়া বড় একটা বিল্ডিং, ভাবছি রুম চেঞ্জ করবো
.
নওশাদ!!রুম কেমনে চেঞ্জ করবি তোর অফিসের চারপাশেই তো সব বিল্ডিং
.
সেটাই,এই জন্য তোর অফিস বানানোর আগে আমি তোকে বারবার করে বলেছিলাম রোড সাইড দেখে বানা,অন্তত মন মেজাজ খারাপ থাকলে নিজের রুমের জানালার পর্দা সরিয়ে মুডটা সুইং হয়ে যাবে নিমিষেই,আমার কথা তো শুনলি না
.
শান্ত তোর কথা শুনতাম আমি বাট বাবা এমন জায়গায় জমি কিনে বসেছিলো আমার হাতে কিছু ছিলো না তখন
.
রিয়াজ বলপয়েন্ট ঘুরাতে ঘুরাতে বললো”ভাই আমি বেঁচে গেছি,উত্তরায় খোলামেলা জায়গায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বানিয়ে আরামসে সারাদিন কিউট পরিবেশ উপভোগ করার শান্তি!
.
তোর তো টাকা আর টাকা!
.
সূর্য!টাকা আর টাকা মানে কি,আমার সব একসাথ করলেও শান্তর সমান হবে না,শান্ত ২হাতে খরচ করে আবার আল্লাহ ওরে সেই পরিমাণ দিয়ে দেয়,ওর ব্যবসায় জীবনে আমি লোকসানের নাম শুনি নাই
.
দেখে শুনে ক্লাইন্ট সিলেক্ট করতে হয়,আমি আমার একটা ক্লাইন্টকেও ফালাছড়া করি না,আমি নিজে গিয়ে মিট করি,এই হলো টিপস বুঝেছো চান্দুরা
.
আমাদের এত ধৈর্য্য নাই ভাই রে ভাই,তা সূর্য তোর কি খবর সেটা বললি না
.
আমার আর কি,আমিও শান্তর মতন বাবার বিজন্যাস নিয়ে আছি
.
এবার বিয়ে করে নে
.
তা হচ্ছে না নওশাদ,রিয়াজ করুক তারপর তুই তার পর শান্ত,সবার শেষে আমি
.
হেহে,আমি রুপাকে কদিন ঘুরাবো,তারপর বিয়ে করবো,আমার দেরি আছে
.
শান্ত রিয়াজের হাত থেকে বলপয়েন্ট নিয়ে হাতে নাড়াচাড়া করতে করতে বললো”আহানার বেস্টফ্রেন্ড বলে কথা,দেখিস আবার তোকে না ঘুরায়”
.
আহানার মত ঝগড়া পারে না তাই একটু বাঁচলাম,তবে তোর তো অবস্থা বেহাল
.
নওশাদ কি বলিস এসব,শান্ত কম যায় নাকি?গ্রামীণ মহিলাদের মতন পায়ে পা রেখে ঝগড়ায় লাগে আহানার সাথে,বাপরে বাপ একদিন আমি নিজের চোখে ওদের ঝগড়া দেখছিলাম,তারপর দেড় মাস পাগল ছিলাম
.
সূর্য নওশাদের পাশে দাঁড়িয়ে নিচে চলন্ত বাস একটার দিকে চেয়ে বললো”শান্ত বাসর ঘরেও এমন ঝগড়া শুরু করে দিবে আহানার সাথে”
.
সেটা আর বলতে!
.
থাম তোরা!আহানার সাথে বিয়েই হবে না আবার বাসরের কথা ভাবোস তোরা
.
দেখা যাবে!
.
স্যার আসবো?
.
হ্যাঁ আসো!
.
ঊষা ভিতরে এসে একটা লোককে দিয়ে কফি আর নাচোস আনাচ্ছে,এনে এনে টেবিলে রাখতেছে লোকটা
.
আহানা গালে হাত দিয়ে পুরো অফিসটা ড্যাবড্যাব করে দেখতেছে,পুরো অফিসে একটাই নাম লেখা আর সেটা হলো “শান্তি গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ”
.
স্যার!মিঃ মজনু এসেছে আপনার সাথে মিট করতে
.
হোয়াট!!তুমি আমাকে আগে বলোনি কেন?আহানা কোথায়?
.
সুহানা?সে তো তার কেবিনে
.
মাই গড!মজনু আঙ্কেল যদি আহানাকে দেখে ফেলে তাহলে তুলকালাম বাঁধবে
শান্ত কফির মগ হাত থেকে টেবিলে রেখে দৌড় অফিস রুম থেকে চলে গেলো
অফিসে ঢুকতেই গেস্টদের বসার একটা সোফা থাকে,সেখানে মিঃ মজনু বসে তার ফোন দেখতেছেন তার কিছুদূরেই আহানা কেবিনে গালে হাত দিয়ে পুরো অফিস দেখতেছে,দুজন দুজনকে দেখেনি এখনও
শান্ত করিডোর পেরিয়ে কর্মচারীদের কেবিনগুলোর সামনে এসে দাঁড়িয়ে দেখলো আহানা উপরের ছাদের দিকে চেয়ে আছে আর দূরেই সোফায় মজনু আঙ্কেল ফোন টিপতেছেন
শান্ত হাঁপ ছেড়ে বেঁচে এগোতে যেতেই আহানা ওকে দেখে ডাক দিলো
.
এই যে!আমাকে যে অফিস রুমে ডেকেছিলেন?কি জন্যে?আপনি এখনও ফ্রি হোন নাই?
.
আহানার কথা শুনে মজনু আঙ্কেল মাথা তুলে সেদিকে তাকালেন
শান্ত কি করবে ভেবে না পেয়ে আহানার কেবিনে ঢুকে ওর মুখ চেপে ধরে ফেললো
ওদিকে মজনু আঙ্কেল সোফা থেকে উঠে এদিকে আসতেছেন কারণ উনি শান্তকে দেখেছেন মাত্র,উনি আজ এখানে এসেছেন শান্তর সাথে মিট করতে
.
আহানা চোখ বড় করে ইশারা ইঙ্গিতে জিজ্ঞেস করতেছে শান্ত ওকে এমন করে ধরে আছে কেন
.
শান্ত ফিসফিস করে বললো”শুনো,আমি যতক্ষন না বলবো এখান থেকে বের হবা না,ঠিক আছে?”
কথাটা বলে শান্ত আহানার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো
.
কিন্তু কেন?
.
মজনু আঙ্কেল বাহিরে
.
কিহহহহ!
.
উনি তোমাকে দেখে ফেললে আমার এতদিনের প্ল্যান ফ্লপ হয়ে যাবে সো প্লিস এখানে লুকিয়ে থাকো
.
ঠিক আছে

শান্ত?তুমি কোথায়?
.
শান্ত আহানাকে বুঝিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে বললো”আরে মিঃ মজনু যে,চলুন চলুন,কতদিন পর আসলেন”
.
আহানা লুকিয়ে মজনু চাচাকে দেখতেছে,এ লোকটাকে ছোট থেকেই সে দেখতে পারে না কারন উনি সবসময় ওর বাবার সাথে উঁচু গলায় কথা বলতো, বাবার সব কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতো
.
শান্ত মজনু চাচাকে নিয়ে সোফায় এসে বসলো পায়ের উপর পা তুলে
.
শান্ত আই নিড ইউর হেল্প
.
হুম বলুন,কি করে হেল্প করতে পারি?
.
কোথাকার একটা লোক আমাকে নিয়ে কেস করেছে যে আমি ৭বছর আগে কার না কার সম্পত্তি আত্নসাৎ করেছি যার কারণে সে ঐ সম্পত্তি ব্যাক নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে
আমার যতদূর মনে আছে ঐ সম্পত্তি আমার মৃত ভাই আয়াতের,সে আমার নামে করে দিয়েছিলো,তাহলে এখন কার এত সাহস আমার বিরুদ্ধে কেস করে
.
যিনি মারা গেছেন তার কোনো ছেলে ছিলো নাকি?
.
আরে না,ছিল একটা মেয়ে,সেই মেয়ে এখন কোন চুলোয় গেছে আমার কি!!তার এত সাহস হবে না আর আমি খোঁজ নিয়েছিলাম তারা সায়দাবাদে থাকে
তাহলে আমার বিরোধিতা কে করছে!!
.
ডোন্ট ওয়ারি!আপনি এক কাজ করুন আপাততর জন্য সেই সব সম্পত্তি অন্য কারোর নামে দিয়ে রাখেন নাহলে বুঝেনই তো আপনার একটা নাম আছে সমাজে,স্টেটাস আছে
.
হুম সেটাই!কিন্তু কাকে দিব তাই ভোবে পাচ্ছি না,আমার আপন মানুষ বলতে আমার স্ত্রী আর দুটো ছেলে,ঐ ছেলেগুলো আমার শত্রুকেও হার মানাবে,স্ত্রীকে দিলে ঘুরেফিরে ছেলেদের কাছেই যাবে
তাই ঠিক ভেবে পাচ্ছি না,তার উপর যে কেস করেছে সে উঠে পড়ে লেগেছে,কোর্টে একের পর এক প্রমাণ আনতেছে
.
নাম জানেন.চেনেন?
.
আরেহ না,সেই পড়েছি আরেক বিপদে,আমি নাকি তারে দেখলে খুন করে ফেলবো তাই সে আমার সামনে আসবে না আর পুলিশ ও এতে সাঁই দিয়েছে,তবে নাম শুনলাম শামসুর আলী,চিনি না জানি না,কে এই শামসুর আলী?
.
হুমমম!ভাববার বিষয়,তবে যতদূর জানি শামসুর নামের লোকেরা অনেক ডেঞ্জারাস হয়
.
সেসব বাদ,আমি তোমার কাছে হেল্পোর জন্য এলাম,অন্য বিজনেস পার্টনারদেন তেমন বিশ্বাস করতে পারি না
তোমাকে পারি কারণ তুমি এক মাসেই আমার এত উপকারে এসেছো,এত আপন হয়ে গেছো
আমার আর আমার স্ত্রীর বিবাহবার্ষিকীতে তুমি কিনা ব্র্যান্ড নিউ কার গিফট করেছিলে তুমি আমার আপন মানুষ হয়ে গেছো শান্ত!!
তোমাকে অবিশ্বাসের কথাই আসে না
.
তাহলে আপনি একটু ভেবে দেখুন কি করবেন,আমি তো আমার পরামর্শ দিলাম
.
হুম,আসি আজ তবে,ভেবে তোমাকে জানাবো
.
ওকে
.
আহানা লুকিয়ে চেয়ে আছে এখনও,শান্ত মজনু চাচাকে বিদায় দিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেছে,সেখানে নওশাদ রিয়াজ আর সূর্য মিলে শয়তানি করতেছে,তারপর শান্তকে দেখে বললো”কিরে কই চলে গিয়েছিলি?”
.
ক্লাইন্ট একটা আসছিলো
.
কে এসেছিলো রে?তুই যেভাবে দৌড় মেরেছিলি আমরা তো ভাবলাম আহানার কিছু হলো নাকি
.
আহানার কথা মাথায় আসতেই শান্ত আবারও ছুটলো সেদিকে
আহানা পা টিপে টিপে দরজা পর্যন্ত এসে তার চাচাকে দেখতেছে
অমি আর অর্নব জানি কেমন আছে কে জানে!ওদের একবার দেখার অনেক ইচ্ছা আহানার
চাচাকে সে দেখে নিলো ভালো করে,চাচা আগের চেয়েও একটু স্মার্ট হয়েছেন তবে মাথার কটা চুল পেকে গেছে একদম,হাতে দামি ঘড়ি,পরনে কোট, মনে হয় কোনো বিশাল বিজনেসম্যান,আর এসব তার বাবার টাকায় হয়েছে
আহানা তারপর নিজের দিকে তাকালো,হালকা গোলাপি রঙের একটা জামা তার গায়ে,মাত্র ৫০০টাকার জামাটা
আজ তারা বাবা বেঁচে থাকলে হয়ত তার ও এরকম দামী জামা থাকতো,এরকম ৫০০টাকার জামা পরে থাকতে হতো না
আহানা মন খারাপ করে ওর চাচার দিকে চেয়ে আছে,চাচা লিফটে ঢুকে গেলেন ব্যস আর দেখা গেলো না তাকে
আহানা পিছন ফিরতেই শান্তকে আচমকা দেখে ভয় পেয়ে দুম করে ফ্লেরে পড়ে গেলো
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো”তোমাকে মানা করলাম না কেবিন থেকে বের হবা না”
.
আপনি বলেছিলেন চাচা গেলে বের হতে,তাই তো বের হলাম
.
কই গেছে?আমি তো দেখছিলাম তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে উনাকে দেখছিলে
.
সরি!কিন্তু উনি আমাকে দেখেননি
.
যাই হোক,আর এরকম করবা না,আমি কোনো বাহানা চাই না,উঠো এখন,অফিসের লোকেরা কি বলবে?এরকম ফ্লোরে গোল হয়ে বসে আছো কেন?আর আমি বাঘ না ভাল্লুক যে দেখেই পড়ে গেলা
.
এরকম চোরের মতন পিছনে এসে দাঁড়ালে যে কেউই ভয়ে হার্ট এটাক করবে আমি তো জাস্ট পড়ে গেলাম
.
শান্ত আর কিছু না বলেই আহানাকে তুলার জন্য হাত বাড়ালো
আহানা ওর হাত ধরে উঠে আসতেই টাইলসে পিছলিয়ে আবারও পড়ে যেতে নিতেই শান্ত ওকে টেনে ধরে ফেললো
আহানা শান্তর কাঁধে হাত রেখে চুপ করে ওর দিকে চেয়ে আছে
শান্ত ও চুপ,নওশাদ আর রিয়াজ সূর্য মিলে ওদের দুজনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বললো”চাই না মেয়ে তুমি অন্য কারো হও,পাবে না কেউ তোমাকে! তুমি কারো নও!!!!”
.
ওদের গান কানে আসতেই শান্ত আহানাকে ছেড়ে দিলো
আহানাও নিচের দিকে তাকিয়ে সোজা তার কেবিনের দিকে দৌড় দিয়েছে
আর শান্ত পকেটে হাত ঢুকিয়ে তার রুমের দিকে চললো
.
আরে আরে যাস কই??এত সুন্দর একটা রোমান্টিক সিন দেখালি সাথে ট্রিট ও দিয়ে যা
.
শান্ত চেয়ার টেনে বসে নাচোস মুখে দিয়ে বললো”কিসের ট্রিট?”
.
ওমা!তোর প্রেম প্রেম ভাব শুরু হলো সেটার,আর কিসের
.
কিসের প্রেম,আহানা পড়ে যাচ্ছিলো বলে ধরছিলাম আর কিছু না
.
আহানা তার কেবিনের কাঁচের দেয়ালে হেলান দিয়ে চুপ করে আছে,আজ ২সেকেন্ডের জন্য কিসের একটা ভ্রমে চলে গিয়েছিলো সে,হাত কাঁপতেছে এখনও
শান্তকে জোর গলায় বলে দিতে হবে আমাকে যেন না ছোঁয় আর
এমন ভাবে ছুঁলে আমার গায়ে কাঁটা দেয়
স্টুপিড একটা,শুধু আমাকে ছোঁয়ার বাহানা লাগে তার
.
শান্ত তার রুমের পর্দার পাশে গিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে চুপ করে
নওশাদ রিয়াজ আর সূর্য হাসির হট্টগোল শুরু করে দিয়েছে,টপিক হলো রিয়াজের বিয়ের আলোচনা
আর শান্ত আনমনে আহানাকে নিয়ে ভাবছে,আহানাকে টাচ করলেই কিরকম যেন ফিল হয় মন চায় হাত ধরেই রাখি,ভালো লাগে এক অন্য রকম
.
কিরে শান্ত?
.
হুম বল
.
শান্ত পিছন ফিরে সবার দিকে তাকালো,সবাই এবার কথা বলবে গায়ে হলুদে কিরকম মজা করবে তারা,কি গানে নাচবে সেসব নিয়ে
.
শান্ত চুপিচাপি ল্যাপটপটা অন করে গেমসে ঢুকেছে,কারণ বিয়ে নিয়ে এরকম বোরিং আলোচনা তার ভাল্লাগে না
গেমসই ভালো
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে