#প্রেমময়_আসক্তি_২
#পর্ব_১৩
#নন্দিনী_চৌধুরী
১৩.
আশরাফের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান। আর হাজার বছর যুগ পরে বাবা ছেলে মুখামুখি দাঁড়ানো। দুজনের চোখেই বিক্ষভের আগুন জ্বলছে। আশরাফ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে হাঁসছে আর আদ্রিয়ান শুধু তাকিয়ে আছে। আশরাফ আদ্রিয়ানকে দেখে বললো,
আশরাফ:ওয়েলকাম মাই সান ওয়েলকাম। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম আমি। এখন তো আমার আর কোনো সন্দেহ নেই যে তুমিই আদ্রিয়ান।
আদ্রিয়ান আশরাফের কথায় হালকা হাঁসলো। আদ্রিয়ান আশরাফকে বললো,
আদ্রিয়ান:হ্যা আমিই আদ্রিয়ান। আমিই আদ্রিয়ান খান আমান। যাকে আপনি মারতে চেয়েছিলেন তারই ভালোবাসার মানুষের হাতে। কিন্তু কথায় আছেনা রাখে আল্লাহ মারে কে। আমাকেও আল্লাহ বাঁচিয়েছে আপনাকে আমার হাতে মারবার জন্য।
আশরাফ:আমাকে মারবে তুমি! বাহ বেশ ভালো বলেছো। আসলে ঠিকই বলেছে আল্লাহ তোমাকে বাঁচিয়েছে আবার আমার হাতে মরার জন্য।
আদ্রিয়ান: হা! তো মারুন আমায়। দেখুন একদম অস্ত্র বীহিন আছি। নিন মারুন।
আশরাফ ওর লোকেদের ইশারা করতেই তারা আদ্রিয়ানের উপর হামলা করার জন্য ঝাপিয়ে পরে কিন্তু তার আগেই আদ্রিয়ানের গার্ডসরা সবাইকে মেরে দেয়। কিছু সময়ের মাঝেই আশরাফের লোকেদের লাশ বিছিয়ে পরে সব মাটিতে। আশরাফের সব লোকেদের একে একে মাটিতে ফেলে দেওয়া হলো মেরে।আদ্রিয়ান এবার একটা চেয়ার টেনে বসলো আশরাফের সামনে। আশরাফ তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান সিগারেট জ্বালাতে জ্বালাতে বললো,
আদ্রিয়ান:তো এবার বলুন আর আছে কি কেউ বাকি?
আশরাফ কিছু বলছেনা। আদ্রিয়ান আবার বলতে লাগলো,,,
আদ্রিয়ান: আপনাকে ঠিক কোন কারনের জন্য মারবো বুঝতেছিনা। আমার মায়ের খুনের কারনে,আমার বোনকে আমার থেকে কেড়ে নেওয়ার কারনে,আমাকে মারার চেষ্টা করার জন্য,আমার স্ত্রীকে কিডনাপ করার জন্য ঠিক কোনটার জন্য মারবো বলেন আপনি।
আশরাফ চুপ হয়ে আছে গা দিয়ে কপাল দিয়ে ঘাম ঝরছে তার। আদ্রিয়ান সায়মনদের ইশারা করতেই ওরা রোদেলার আদ্রিতার বাঁধন খুলে দেয়।
আদ্রিয়ান: আদ্রিতাকে ধরে আনার কারন কি? ওকেও কি মেরে ফেলতে চাইছিলেন নাকি? আচ্ছা কেমন বাবা আপনি। মানলাম আমি আপনার নিজের ছেলে না কিন্তু আদ্রিতা! ওতো আপনার সন্তান আপনার নিজ সন্তান। তার সাথে এমন কিভাবে করতে পারলেন আপনি। ছোট থেকে মা হারা করে দিলেন তাকে। নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে বড় করলেন। না সঠিক যত্ন নিয়েছেন না দিয়েছেন ভালোবাসা। কি অবাক হচ্ছেন আমি কিভাবে জানি ও আমার বোন। আমি জানি সেই আরিয়ান হয়ে ফিরে আসার পরেই। যে আদ্রিতা আমার সেই হারিয়ে যাওয়া ছোট পাখিটা। জেনেও আমি ওর কাছে ধরা দেইনি।
আদ্রিয়ান উঠে দাঁড়ায় আর রোদেলার কাছে গিয়ে বলে,,,
আদ্রিয়ান:যার কারনে তুমি আমাকে মারতে চেয়েছিলে আজ জানতে পারলেতো আসল কথা আসল সত্যি। যে আমি তোমার বাবা মাকে মারিনি। আর না লিজার সাথে আমার কিছু ছিলো।
আশরাফ আদ্রিয়ানকে রোদেলার সাথে কথা বলতে দেখে পালাতে নিলে সায়মন জন ওকে ধরে ফেলে।
সায়মন:স্যার পাখি দেখি পালাচ্ছে।
আদ্রিয়ান:একেও আরেক পাখির কাছে নিয়ে যা।
সায়মন:আচ্ছা।
সায়মন আশরাফকে বেধে নিয়ে এলো বড় ফা্ঁকা মাঠে। এখানে একটা নদীও আছে। আদ্রিয়ান আদ্রিতা রোদেলাকে নিয়ে আসে এখানে। এখানে আগে থেকেই লিজাকেও এনে রাখা হয়েছে। আশরাফকে এনে লিজার পাশে রাখা হমো।
আদ্রিয়ান এসে দুজনের সামনে দাঁড়ালো। আদ্রিয়ান সায়মনকে বললো,
আদ্রিয়ান:সায়মন এলেক্স রেইনের খাচা খুলে দে।
সায়মজ এলেক্স রেইনের খাচা খুলে দিলো। আদ্রিয়ান লিজার কাছে এগিয়ে এসে ওর চুলের মুঠি ধরে বললো,
আদ্রিয়ান:কি বলেছিলি তুই আমি তোকে ব্যবহার করেছি। তোকে আমার বিছানায় নিয়েছি। তোর পেটে আমার সন্তান। শোন আদ্রিয়ানের চয়েজ এতো বিশ্রি না। তোর মতো পতিতা আদ্রিয়ান হাত দিয়ে ধরেনা। বাবার বয়সি লোককে বিয়ে করে সংসার পেতেছিস আমার রোদেলাকে আমার বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়ে। ভালো করে তাকিয়ে দেখ। আদ্রিয়ান তার পুরো জন্মে একজনকেই ভালোবেসেছে একজনকেই ছুঁয়েছে আর সেই আমার বাচ্চাদের মা হতে চলেছে। তোকে আগেও বলেছিলাম রোদেলার থেকে দূরে থাক। কিন্তু তুইতো সিমাই ছাড়িয়ে গেলি। আজ তোকে দেখাবো মৃত্যু কি।
আদ্রিয়ান লিজাকে ধাক্কা মেরে এলেক্স রেইনের খাচায় ছুড়ে মারে। এলেক্স রেইন ঝাপিয়ে পরে লিজার উপর। লিজার মরণ চিৎকার শুনে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছে যেনো আদ্রিয়ান। রোদেলা আদ্রিতা দেখেই যাচ্ছে। ভয়ে কিছুই বলতে পারছেনা।
আদ্রিয়ান এবার আশরাফের কাছে যায়।
আশরাফের কাছে এসে দাঁড়িয়ে জনকে বলে,
আদ্রিয়ান:জন টুইংকেল টাইগারকে নিয়ে আসো।
জন ওদের দুজনকে এনে পানিতে ছাড়ে। আদ্রিয়ান পাশে রাখা বড় তোলয়ারিটা হাতে নেয়। আশরাফ তা দেখে বলে,
আশরাফ:আদ্রিয়ান আমি তোমার বাবা। তুমি এমন করতে পারোনা।
আদ্রিয়ান এটা শুনে এক কোপ মারে আশরাফের ডান হাতে আর বলে,
“সে আমার জন্মদাত্রী মা ছিলো।”
আশরাফ এক কোপ খেয়ে ছটফটাতে লাগে। আদ্রিয়ান আরেকটা কোপ দেয় আশরাফের হাতে আর বলে,
“সে আমার স্ত্রী ছিলো।”
আশরাফ এবার মাটিতে বসে পরলো আর ধরফাতে লাগলো। আশরাফের চিৎকারে আসমান ভাড়ি হয়ে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান আবার কোপ মারে আশরাফের পা দুটোতে আর বলে,
“আমার থেকে সব কেড়ে নেওয়ার শাস্তি এগুলা।”
আশরাফ এবার নিস্তেজ হয়ে গেছে। আদ্রিয়ানের চোখে পানি আদ্রিয়ান বিড়বিড় করে বলছে,
“আমি পেরেছি মা তোমার খুনিকে শাস্তি দিতে পেরেছি মা।’
আদ্রিয়ান নিজের হাতে টাইগার টুইংকেল কে আশরাফের শরীলের টুকরা গুলা ওদের খেতে দিলো। আদ্রিয়ান খুব মজা করে ওর ৪বাচ্চার খাওয়া দেখছে। আজ ওরাও তৃপ্ত আদ্রিয়ানও তৃপ্ত। আদ্রিয়ান উঠে রোদেলা আদ্রিতার কাছে গেলো। আদ্রিয়ান বোনের দিকে দুই হাত ছড়িয়ে দিতেই আদ্রিতা ভাইয়ের বুকে হামলে পরে কেঁদে দিলো। এ যে সুখের কান্না। কত বছরের মিলনের কান্না।
আদ্রিতা:ভাইয়া আমি তোমার আপন না। আমি ওই উচ্ছন্ন লোকটার মেয়ে।
আদ্রিয়ান:চুপ! তুই আমার বোন আর এটাই তোর সব থেকে বড় পরিচয়। এর থেকে বেশি কোনো পরিচয় আর নেই। আর কোনোদিন এসব বলবিনা।
রোদেলা আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতে পারছেনা। অপরাধবোধ, লজ্জা সব মিলে আজ সে অপরাধি। চরম অপরাধি সে আজ।
রোদেলা আদ্রিয়ানকে কিছু বলতে যাবে তার আগে আদ্রিয়ান বলে,
আদ্রিয়ান:গাড়িতে গিয়ে বস তোরা। আমি আসছি।
কথাটা বলে আদ্রিয়ান হাঁটা দিলো। আদ্রিতা রোদেলা গিয়ে গাড়িতে বসলো। তার একটু পর আদ্রিয়ান এসে বসলো আর গাড়ি সটার্ট দিলো।
আদ্রিয়ান রোদেলাকে নিয়ে ওদের বাসায় আসলো। এখন রাত হয়ে গেছে অনেক। আদ্রিয়ান রোদেলা আদ্রিতাকে নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে বেল দিলো।
~এদিকে~
বেলের আওয়াজ পেয়ে রুবা গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আদ্রিতা রোদেলা আদ্রিয়ানকে দেখে অবাক হলো রুবা। রুবা অবাক হয়ে বললো,
রুবা:আদ্রিতা, রোদেলা তোরা আসছিস!
আদ্রিয়ান:ওদের ভেতরে নিয়ে যাও।
রুবা রোদেলাকে ধরে ভিতরে নেয়। আদ্রিয়ান আদ্রিতা ভিতরে আসে। সোফায় বসে থাকা সবাই আদ্রিতা রোদেলাকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
রাফসান রোদেলার কাছে এগিয়ে এসে বলে,
রাফসান:রোদ তুই ঠিক আছিসতো। কই ছিলি তোরা। জানিস আমরা কত ভয় পেয়েগেছিলাম। কোথায় ছিলি তোরা?
রাফসানের প্রশ্নের উত্তর আদ্রিতা দেয়। যে ওদের সাথে কি কি হয়েছে এমনকি আদ্রিয়ানর পরিচয়ও দেয়।
সব শুনে সবাই অবাক। সবাই যেনো তব্দা খেয়েগেছে শুনে।
মুন:তার মানে আপনিই আদ্রিয়ান। কিন্তু আপনি বেঁচে ছিলেন তাহলে কেন ফেরত আসেননি। কেন এই ছদ্মবেস?
আদ্রিয়ান:আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর দেবে রোদেলা। কি রোদেলা তাইতো?
রোদেলা আদ্রিয়ানের কথা শুনে কিছু বলেনা।
রাফসান:বল রোদেলা আদ্রিয়ান কি বলছে?
রোদেলা একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে বলে,,
রোদেলা: উনি মারা যাননি। ওনাকে মেরে মেরা ফেলা হয়েছিলো।
রোদেলার কথা শুনে সবাই আরো অবাক।
মুন:মেরে ফেলা হয়েছিলো। কে মেরেছিলো?
রোদেলা:আমি! হ্যা আমি,, আমিই সেই যে ওনাকে বান্দরবনের পাহাড় থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি ইচ্ছে করে করিনি। আশরাফ লিজা আমাকে মিথ্যা বলেছিলো। বাবা মাকে আশরাফ মেরেছিলো কিন্তু মিথ্যা ভিডিও করে আদ্রিয়ানকে ফাঁসিয়েছিলো। আমি জানি আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি। লিজা আশরাফের কথা বিশ্বাস করে আমি আদ্রিয়ানকে অবিশ্বাস করেছি।
রোদেলার কথা ষেষ হতেই কারো পাঁচ আঙ্গুল এসে পরলো রোদেলার গালে। রোদেলা সামনে তাকিয়ে দেখে রাফসান তাকিয়ে আছে অগ্নিচোখ নিয়ে। রাফসান চিৎকার দিয়ে বলে,
রাফসান:ছিহ! ছিহ! ছিহ! আমি ভাবতেও পারছিনা তুই এমন কিছু করতে পারিস। যে তোকে তার সব দিয়ে ভালোবাসলো তুই তাকে অবিশ্বাস করে একটা ভিডিওর ভিত্তিতে ওকে মারলি।
মুন:যে তোকে পাগলের মতো ভালোবাসলো। তোর জন্য মরতে পর্যন্ত বসলো তুই ভাবলি কেমন করে সে তোকে ধোকা দিবে। সে মা বাবাকে মেরেছে। কি ভালোবাসা তোর এটা?
রুবা:আমি ভাবতেও পারছিনা তুই এসব করেছিস। কিভাবে পারলি রোদু তুই এটা করতে।
রোদেলা সবার কথা শুনে চুপ করে অশ্রু ফেলছে। আজ যে তার বলার কিছু নেই।
#চলবে