প্রিয় স্বর্ণলতা – Orshiya Shohid Anu

0
486

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
~চিঠিঃ-০৬

প্রিয় স্বর্ণলতা,

তোর থেকে ভালো আমাকে যে আর কেউ চেনেনা আরো একবার প্রমাণ করলি চিঠিতে! তুই তো জানিসই আমি কেমন আছি। জিজ্ঞেস না করে সত্যিই খুব ভালো করেছিস, আরো কতক মিথ্যে বলার হাত থেকে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিস, যদিও তার সাথে আমাকে পীড়ন দিতে ছাড়িসনি। আমার নাকি খারাপ থাকার কারণ নেই! জানি এ তোর অভিমানের কথা, তবুও তো তুই বলেছিস, বড্ড বেশি লাগে রে তোর কথাগুলো। একেবারে বুকের ভিতরে তীরের মতোন এসে বিধে যায় এক একটা শব্দ।

সেদিনের বিচ্ছেদ কি সত্যিই প্রয়োজন ছিলনা? তুই ই বলনা- যাকে ভালোবাসি, তাকে সুখী করতে না পারলে কেমন ভালোবাসলাম আমি? আমি জানতাম আমি হারিয়ে গেলে আমাকে তুই ঠিক খুঁজে বের করবি, কিন্তু হারিয়ে যাওয়া থেকে আঁটকানোর ক্ষমতা যে তোর হাতে ছিলনা। থাকলে হয়তো হারিয়ে যেতে পারতাম না। জানিস- আমি তোর থেকে লুকিয়ে ছিলাম ঠিকই, তবে প্রতিনিয়ত আঁড়াল থেকে দেখে গেছি আমার স্বর্ণলতা একটু একটু করে নিজের জন্য বাঁচতে শিখছে! যেদিন তোর বিয়ের খবর পেয়েছিলাম কেন জানিনা, হৃদয় ভাঙার কষ্টের থেকেও তুই সুখী হতে চলেছিস ভেবেই ঠোঁটের কোণে হাসি এসেছিল!

হয়তো সেদিন কান্না আমাকে ছুটি দিয়েছিল! আমার স্বর্ণলতা অন্য কারো হয়ে যাচ্ছিলো, আর আমি আঁড়ালে বসে নিজেকে সামলানোর এক বৃথা প্রচেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। আজ তুই বিশাল অট্টালিকার আলিশান বাড়ির বৌমা। তোর জীবনসঙ্গী এই সমাজে, এই বিলাশবহুল পৃথিবীতে তোকে সমস্ত সুখ দিতে প্রস্তুত, যা আমি কোনদিনই চাইলেও তোকে দিয়ে উঠতে পারতাম না! ইচ্ছেতে অনিচ্ছেতেও আজ তোর বায়না গুলো পুরণ হয়ে যায়, আমার কাছে আসলে যে তুই বায়না করতেই ভুলে যেতিস স্বর্ণলতা!

আমি চায়নি সেই দিনটা আমার জীবনে কোনদিন আসুক যেদিন আমার স্বর্ণলতা নিজে থেকেই আমাকে দূরে ঠেলে দিবে, তাই তো নিজেই সরে এসেছিলাম তোর সুন্দর ভবিষ্যৎ এর কামনা করে। তুই তো জানিস- তোকে ছাড়া আমি কতখানি অসহায়, তবুও এই বাস্তবতার কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে তোর থেকে বিচ্ছেদকেই বেঁছে নিয়েছিলাম সেদিন।

আমি জানি তোর ভালোবাসার শক্তি অনেক, তাইতো আমাকে এতো প্রস্তুতি নিয়ে হারিয়ে যাবার পর ও তুই খুঁজে নিয়েছিস। আমি কোনোদিন ভাবিনি যে তুই আমার সাথে সংসার করতে পারবিনা। তুই হয়তো ঠিকই আমার সাথে কুড়েঘরে কাটিয়ে নিতে পারতিস, হাজার অভাবকে আমার ভালোবাসা দিয়ে ভরাট করে নিতিস, কিন্তু আমি? আমি কি পারতাম আমার ভালোবাসার মানুষটাকে এই অভাবের বাঁধনে বেঁধে রাখতে? কি করে পারতাম আমি, তোকে আধপেটা খাইয়ে রাখতে? মুখ ফুটে হয়তো তুই সেদিন আমাকে তোর কোন ইচ্ছের কথায় বলতিস না। আমি যে তোকে ভালোবাসি! তোর সব কথা কি আমাকে মুখে বলে দিতে হবে?

একদিন ঠিক আসতো যেদিন আমার অগোচরে তুই কাঁদতে বসতিস, হয়তো এই ভেবে নয় যে আমার কাছে এসে তুই ভুল করেছিস, ভাবতিস আমাকে নিয়ে! এতো কষ্ট করেও আমি তোকে সুখের সন্ধান দিতে পারছিনা এই ভেবে তোর চোখে পানি আসলে, সেই পানি দেখার পর বেঁচে থাকার ক্ষমতা যে আমার আর রইত না স্বর্ণলতা! আমি সেদিন হেরে যেতাম, হারিয়ে দিতাম তোর ভালোবাসাকে।

তার থেকে এই তো ঢের ভালো আছি, দীর্ঘ নিশী আমার রোজ কেটে যায় তোকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে। আমার স্বপ্নের অলিতে গলিতে তোরই বিচরণ চলে সর্বদা। স্বর্ণলতার ভালোবাসায় যে আর কারো ভাগ বসানোর অধিকার নেই, নেহালের হৃদয়জুড়ে সারাজীবন এইভাবেই হেসে খেলে বেঁচে রইবি তুই।

যে রাস্তায় নেহাল কে দেখে স্বর্ণলতাকে চোখ সরাতে হয় সেই রাস্তায় নেহাল ভুলেও পা দেবেনা রে! সশরীরে তোর কাছে যাওয়ার অধিকারকে নিজেই হারিয়েছি জীবন থেকে, তবুও মনের বাঁধনে তো আজীবন আমি জড়িয়ে রইবো তোর সাথেই। স্বর্ণলতা নেহাল কে ছেড়ে বাঁচতে না পারলেও দায়িত্বে বাঁধা সংসারে মুড়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখেছে । আজ দু’জন দু’প্রান্তে বসবাস করলেও ভালোবাসার কমতি নেই। বাস্তবতা আমাদের কে মাঝে মাঝে এতোটাই প্রস্তুত করে দেয়, যাতে আমরা এমন মুহুর্ত গুলোতেও সহজে মানিয়ে নিতে পারি যে মুহুর্তগুলো কোন একসময় আমাদের কাছে হয়তো অভাবনীয় ছিল।

শুধুমাত্র পুণর্জন্ম নয়, যতবার নেহাল জন্ম নিবে ততবারই স্বর্ণলতার জন্যই নিবে। নেহালের হৃদয়ের উপর যে স্বর্ণলতারই একচ্ছত্র অধিকার রয়েছে, সকল জন্মেই সে অধিকার স্বর্ণলতার জন্যই বরাদ্দ রইবে!

ইতি
“তোর নেহাল”

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে