#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#১২তম_পর্ব( দ্বিতীয় সিজন)
– আজ সবাই কোর্টে উপস্থিত ছিলো। আপনি কেন বাসায় বসে ছিলেন! আপনার মনে কি বিন্দু মাত্র মায়া নেই!
বাসায় ফিরেই দাদুর রুমে এসে দাদুকে কথাগুলো বললাম।
– আমি গিয়ে কি করবো! তোমরা সবাই তো সেখানে ছিলেই।
– শুনেছিলাম আপনার আদরেই আরশকে বিগড়ে দিয়েছে। বিশ্বাস করুন ও বের হয়ে সব থেকে বেশি ঘৃণা আপনাকেই করবে।
– তুমি তো ঘৃণা করোই। এরপর থেকে না হয় আরশ ও করবে।
– ঘৃণা! আমি! সেটাও আপনাকে! হাহাহা। অসম্ভব, এমন কিছু কখনো কল্পনাও করবেন না। আপনি মানুষটা আমার জীবনের সব থেকে নিকৃষ্টতর মানুষ। যে ঘৃণার ও অযোগ্য। শুধু মাত্র রক্তের সম্পর্ক জন্য কথা বলতে না চেয়েও কথা বলি। নয়তো যেদিন সবটা শুনেছি ঐ দিনই আপনার জন্য পৃথিবীর আলো বাতাস নিষিদ্ধ করে দিতাম। তবে দশদিন পর দ্বিতীয় শুনানি ঐদিন যেন আপনাকে সেখানে দেখি। আমি চাই না এরপর এই পরিবারে বিন্দু মাত্র কোনো বিভেদ থাকুক।
রুমে চলে আসলাম। সাধারণত কোনো বিষয় নিয়ে আমরা যখন খুব চিন্তিত থাকি, আমাদের মস্তিষ্ক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না ঠিক সেই সময় আমাদের এমন কাউকে প্রয়োজন পড়ে যাকে আমরা ইচ্ছে অনুযায়ী কিছু কথা শুনিয়ে দিতে পারি। এতে যে খুব বেশি কিছু উপকার হয় তেমন কিছু না। সাময়িক একটু পৈশাচিক শান্তি পাওয়া যায়। একটু আগেও সেটাই হলো।
দু’হাতে মাথা চেপে বসে আছি। চন্দ্রিমা রুমে কখন আসছে সেটা খেয়াল করিনি।
– এভাবে বসে আছো কেন!
– মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে।
“আরশ ভাইয়াকে নিয়ে তুমি একটু বেশিই চিন্তা করছো তো তাই এমনটা হচ্ছে “- কথাগুলো বলতে বলতেই চন্দ্রিমা আমার মাথা টিপে দিতে লাগলো।
আমি শক্ত করে চন্দ্রিমার কোমড় জড়িয়ে ধরে আমার মাথা সেখানে চেপে ধরলাম।
– তুমি শুয়ে পড়। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। কিছুটা আরাম হবে।
চন্দ্রিমা হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মাঝে মাঝে একটু একটু চুল টানছে। অদ্ভুত এক প্রশান্তি।
– কিছুটা কমলো কি!
– হ্যাঁ কমছে ধীরে ধীরে।
– তোমায় একটা কথা বলি!
– কি কথা!
– আম্মুর চেইন টা মায়া আপুকে দিয়েছে। আন্টির চেইনটা অবন্তী নিয়েছে আজ।
– হ্যাঁ , তো!
– তোমার কাছেও তো একই রকম একটা চেইন আছে ঐটা আমায় দিবে!
– তোমার বালিশের নিচেই আছে নিয়ে নাও।
চন্দ্রিমা তাত্ক্ষণিক বালিশের নিচে হতে চেইনটা বের করলো- তুমি পড়িয়ে দিবে নাকি আমি পড়বো!
– তুমি নিজেই পড়ো।
আমি এতক্ষণ চোখ বন্ধ করেই কথাগুলো বললাম। কিন্তু হঠাৎই চন্দ্রিমা বললো- এই চেইনটাতে একটা পাথর কম আছে।
চন্দ্রিমার কথা শুনে চোখ খুললাম – কি বলছো এসব! চেইনের মাঝে আবার পাথর কোথায় পেলে!
– তুমি দুই মিনিট অপেক্ষা করো আমি আসছি।
চন্দ্রিমা দৌড়ে বাইরে গেলো। একটু পরেই আবার অবন্তী কে নিয়ে রুমে আসলো। আমি তখনও চোখ বন্ধ করেই শুয়ে আছি।
– এই চোখ মেলো।
– কি হয়েছে!
– এখানে তাকাও, এই দেখো এই চেইনে পাঁচটা হীরের মতো চকচকে পাথর বসানো। কিন্তু এটাতে চারটা। মানে একটা নেই। তুমি এই একটা পাথর বসিয়ে এনে দিবা।
তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম। চন্দ্রিমার হাত থেকে চেইনটা নিয়ে সোজা ছোট মা’র রুমে চলে আসলাম।
– তুমি এমন নক না করেই হনহন করে রুমে চলে আসলে কেন!
– আপনি আরশ কে ছাড়ানোতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না কেন!
– কারণ বাইরে ওর বিপদ আছে তাই।
– আপনি কিভাবে বুঝলেন ওর বিপদ আছে! বিপদ কি নিজে এসে আপনাকে বলে গিয়েছে?
– কি বলতে চাচ্ছো তুমি?
– সত্যি করে বলবেন, আপনার বড় ভাই যে একটু এবনরমাল ছিলো, উনি কি সত্যি মারা গিয়েছে! নাকি এখনো বেঁচে আছে?
– তুমি একজন মৃত মানুষ কে নিয়ে এভাবে কথা বলছো কেন!
– কারণ আমার ধারণা যদি সত্যি হয় তবে ঐ মৃত মানুষই কিছু দিন আগে রাতে চোরের মতো চুপিচুপি আপনার কছে এসে আপনাকে ভয় দেখিয়ে গিয়েছে।
– এমন কিছুই হয় নি। আমার কাছে কেউ আসে নি।
– এইরকম চেইন আপনারা পাঁচ টি বানিয়েছিলেন। আম্মুটা মায়ার কাছে এবং বাকী চারটা আপনাদের চারজনের কাছেই আছে। তবে আমি গত দিন চাদরসহ যে চেইনটা পেলাম সেটা কার! বাকী তো থাকে শুধু আপনার মৃত ভাই। তাহলে ঐদিন উনি এসেছিলো। তবে উনি জীবিত আছেন। আপনারা সকলকে মিথ্যা জানিয়েছেন।
– এমন কিছু না। ও মারা গিয়েছে আজ অনেক বছর হলো।
– তবে এটা কার!
– আমি জানি না। আমার ভাই তো সাতার জানতো না। পানিতে পড়ে মারা গিয়েছে। ওর চেইন নদীতেই পড়ে গিয়েছে।
– আর বাহানা বের করতে হবে না। তবে আমি উনাকে খুঁজে বের করবোই। আপনি যতোই লুকিয়ে রাখুন না কেন।
সেদিন রাতে কারো সাথেই কথা হয়নি তেমন। পরের দিন সকাল সকাল রাফির বন্ধুর কাছে চলে আসি। গতবার যখন এসেছিলাম আরশের ফাইলটা দেখতে সেখানে একটা এমন পাথর ছিলো যেটা মেয়েটার নখের ভিতর থেকে পাওয়া গিয়েছে।
– তোমার কি মনে হয় এই পাথর এখানে সুট করবে!
– স্যার, এখানে সুচ করবে না শুধু এই সাদা পাথরটা এই জায়গাতেই ছিলো।
– সব কিছু তো ঠিক আছে তবে উনারা মিথ্যা বলছেন কেন! যে উনি মারা গিয়েছে।
– স্যার ঐ হত্যার আগে মারা গিয়েছে নাকি পরে!
– মে বি পড়ে।
– তাহলে তো হয়েই গেলো। কিন্তু স্যার একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে!
– কি কথা!
– লোকরার সাইকো সমস্যা ছিলো এই জন্য হত্যা করছে মানলাম। কিন্তু এতটা এক্সপেন্সিভ ড্রাগস কোথায় পাবে উনি!
– এমনিতেই অনেক চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তুমি আর নতুন করে মাথায় প্রেসার দিও না।
– ঠিক আছে স্যার। তবে বিষয়টা ভেবে দেখবেন।
– সে ভাবা যাবে, তবে এতটুকু তো শিউর যে আরশ হত্যা করে নি তাই না!
– জ্বি স্যার। আপনিও এতোদিন কনফিউশানে ছিলেন!
– নেশার ঘোরে মানুষ কত কিছুই তো করে পরে আবার ভুলে যায়।
সেখানে থেকে বাসায় ফেরার পথে কয়েকবার ভাবলাম ” একজন অস্বাভাবিক মানুষ এতো এক্সপেন্সিভ ড্রাগস কোথায় পাবে! আসলেই তো। তাছাড়া যতদূর জানি উনাকে বাইরে তেমন বের হতেও দেওয়া হতো না। তবে কি ছোট মা সত্যি বলছে! নাকি তিনি মিথ্যা বলছেন! কিন্তু মায়ের কাছে তো সন্তান সব থেকে আগে। তবে তিনি মিথ্যা কেন বলবেন!
দেখতে দেখতেই শুনানির দিন চলে আসলো। রোজকার নিয়মে কোর্টের কাজ শুরু হলো।বিচারক মহোদয় প্রথমেই লইয়ারকে সর্তক করে দিলেন আজ উপযুক্ত সাক্ষী পেশ করতে না পারলে মামলা ক্লোজড করে দিবেন।
ক্রিমিনাল লইয়ার- সেটার প্রয়োজন হবে না মাননীয় বিচারক। কারণ আজ আমি এমন একজন কে পেয়েছি যে একাই সবটা মিটমাট করে দিতে পারবে।
ভাগ্যগুনে সেই সময় আরশের যে সব বন্ধু ছিলো সবাইকে আমরা ইনফর্ম করি এবং সেদিন আরশের সাথে থাকা একজন বন্ধু আমাদের ডাকে সারা দেয়। যে নিজের জীবীকার জন্য শহরের বাইরে ছিলো দীর্ঘদিন।
To be continue….