প্রিয় চন্দ্রিমা ২ পর্ব-০৩

0
461

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#দ্বিতীয়_সিজন(#৩য়_পর্ব)
অবন্তীর কল কেটে রাফিকে ডাকলাম আমার কেবিনে। কিছুক্ষণের মাঝেই রাফি আমার কেবিনে আসলো- আসবো স্যার!
– হ্যাঁ আসো।
– কিছু বলবেন!
– মায়া কোথায়!
– ওকে তো আমি আপনাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসলাম কিছুক্ষণ আগেই।
– মায়াকে কল দাও।
রাফি মায়াকে কল দিলো। কিন্তু রাফির ফোন থেকে আমি মায়ার সাথে কথা বললাম – মায়া কোথায় তুমি!
– আমি তো ভাইয়া বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।
– বাসার বাইরে কেন!
– অবন্তী বা ভাবী কেউ দরজা খুলছে না। আমি নাকি মায়া নই। তাই জন্য ভিতরে আসতেই দিচ্ছে না।
– আচ্ছা তুমি বাসার দরজার সামনেই থাকো। তুমি কি রং এর ড্রেস পড়ছো?
– কালো।
– আচ্ছা ।
রাফির হাতে ফোনটা দিয়ে আমি অবন্তীকে কল করলাম।
– ভাইয়া কোথায় তুমি! তুমি কি আসছো বাসায়?
– আচ্ছা বাসার সামনে যে মায়া আছে ও কি কালো রং এর ড্রেস পড়ে আছে!
– আমি তো ঠিক খেয়াল করিনি। একটু অপেক্ষা করো দেখে জানাচ্ছি।
অবন্তী জানালা একটু ফাক করে দেখলো- হ্যাঁ ভাইয়া। কালো একটা জামা পড়ে আছে।
– ঐটা তোমার মায়া আপু। দরজা খুলে দাও।
– সত্যি তো?
– হ্যাঁ।
– তাহলে ঐদিন কে ছিলো! যার সাথে আমরা এতো আনন্দ করলাম সময় কাটালাম।
– তোমরা আপাতত তোমাদের আপুকে ভিতরে নিয়ে আসো। আমি পরে তোমায় জানাচ্ছি।
কল কেটে দিলাম। রাফি আমার দিকে থ হয়ে তাকিয়ে আছে।
– কিছু হয়েছে কি?
– তুমি তো জানোই অবন্তী আর চন্দ্রিমা আমাদের বাসায় আসছে।
– হ্যাঁ ।
– আচ্ছা যেদিন অবন্তী আর চন্দ্রিমা আমাদের বাসায় আসছে ঐদিন মায়া কোথায় ছিলো?
– বাসাতেই ছিলো। আমার ঐ দিন কাজ অল্প ছিলো জন্য ওকে নিয়ে আমি একটু বাইরে ঘুরতে গিয়েছিলাম।
– মায়া ঐ দিন আমাদের বাসায় যায় নি?
– না। এটা বলার জন্য তো ও আপনাকে কয়েকবার কল করেছিলো কিন্তু আপনি তো কল উঠান নি।
– ঐদিন মায়ার নাম করে কেউ একজন আমাদের বাসায় এসেছিলো। আম্মুর রুমে কিছু খুঁজেছে।
– কি বলছেন?
– হ্যাঁ। তবে একটা বিষয় কিন্তু ক্লিয়ার হচ্ছে না।
– কি বিষয় স্যার!
– মায়া আমাদের বাসায় আসবে এটা হাতে গুনা আমরা কয়েকজন জানতাম। যে মহিলা বা মেয়ে মায়া নাম নিয়ে বাসায় এসেছিলো সে কিভাবে জানলো ঐ দিন মায়া বাসায় আসার কথা ছিলো কিন্তু মায়া বাসায় আসবে না।
– এটা তো ঠিক। বাসায় কি কোনো সমস্যা চলছে?
– বাসায় সব কিছু কেমন যেন একটু অদ্ভুত রকমের অগোছালো মনে হচ্ছে। তবে এটা খুব শীঘ্রই গুছিয়ে নিতে হবে নয়তো পরবর্তীতে অনেক বড় একটা ফাঁদে আটকে যাবো মনে হচ্ছে।
– আমার কোনো সাহায্য প্রয়োজন হলে অবশ্যই বলবেন।
– আচ্ছা। আপাতত তুমি আমার কাজ গুলো কভার করো। আমি কয়েকদিন একটু বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।
– সেখানে আমার বন্ধু আছে ডিউটি অফিসার। যদি সাহায্য লাগে তবে ওকে বললেই যে-কোন সাহায্য করবে।
– সেটার প্রয়োজন হবে না।

বাসায় আসলাম।
অবন্তী আর চন্দ্রিমা এক রুমে মায়া একাই আম্মুর রুমে বসে আছে।
– ভাইয়া আমার না যাওয়াই মনে হয় ভালো হবে।
– কেন!
– ভাবী অবন্তী দু’জনেই আমায় এখনো ভয় পাচ্ছে।
– আমি তো সিউর করলাম এটাই মায়া। এরপর ও ভয়ের কি আছে!
এতক্ষণে অবন্তীর ভয় কিছুটা কেটে গেলো – সরি আপু। আমাদের সাথে প্রথম দিনেই এমন হওয়ায় একটু বেশি ভয়ে ছিলাম।
– তোমরা কি শপিং শেষ করছো?
– শপিং কিভাবে করবো ওরা দুজন তো আমার সাথে কথাই বলেনি।
– ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছ?
– আমার ব্যাগ তো বাসা থেকেই গুছিয়ে এনেছি।
– আমাদের ব্যাগ ও গুছিয়ে রাখা আছে।
– রান্না হয়েছে নাকি সেটাও বন্ধ ছিলো!
কেউ কথা বলছে না চন্দ্রিমা অবন্তী দু’জন শুধু দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
– বুঝতে পারছি। ঠিক আছে বাইরে খেয়ে নিবো সবাই। আমি ফ্রেশ হতে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে আসলাম। সবাই আম্মুর রুমে গল্প করছে দেখে কাউকে ডাকলাম না। বারান্দায় গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর মায়া চা নিয়ে হাজির হলো।
– তুমি চা করতে গেলে কেন!
– ভাবী তো নতুন আসছে। আমি তো ছোট থেকে আছি। ভাবী না জানলেও আমি তো জানি অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে তোমার চা প্রয়োজন হয়।
মায়ার হাত থেকে চা নিয়ে চুমুক দিতে দিতে বললাম- এখন আর সেই অভ্যাস নেই। অফিস থেকে এসে চা বানানোর মতো ধৈর্য হয় না।
– আচ্ছা ভাইয়া কি হচ্ছে এসব?
– আমি নিজেও সেটা বুঝতে পারছি না। সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। তবে সব কিছুর মাঝে গভীর একটা গোলমেলে সম্পর্ক আছে মনে হচ্ছে।

পরদিন সকালে অবন্তীদের বাসায় এসে পৌঁছালাম। তবে গতবারের তুলনায় এইবার বাসায় ছোট মা’র ব্যাবহারে একটু ভিন্নতা লক্ষ করলাম। নিজে থেকে আমায় এগিয়ে নিতে এসেছে।

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। দুচোখের পাতায় কেবল ঘুম এসে ভাব জমিয়েছে। তখনই অবন্তী চন্দ্রিমা কে নিয়ে আমার রুমে আসলো।
– কি হয়েছে! ওকে এভাবে টেনে নিয়ে আসছো কেন?
– ভাইয়া তোমার বউকে তোমার কাছেই রাখো। ও আমার রুমে কেন যাবে?
– আমি তো এতোদিন ঐ রুমেই ছিলাম।
– তখন তোমার বর ছিলো না।
– আচ্ছা ঠিক আছে নিজেদের মাঝে ঝগড়া বাদ দাও। চন্দ্রিমা তুমি আমার কাছে আসো। এখন খুশি?
– হ্যাঁ। আমি আসি তাহলে।
– অবন্তী, মায়ার দিকে একটু খেয়াল রেখো।
– আচ্ছা ভাইয়া।

সেদিন তেমন আর কোথাও বের হওয়া হয়নি। সন্ধ্যায় চা হাতে ছোট মা রুমে আসলো। চন্দ্রিমা আমার পাশেই বসে ছিলো। ছোট মা কে দেখে উঠে দাঁড়ালো। – তুমি চা নিয়ে আসলে কেন! আমায় ডাকতে আমি আসতাম।
– আমি বানালাম তাই ভাবলাম নিয়ে যাই। তুমি অবন্তীর রুমে যাও। আমি সুমনের সাথে কিছু কথা বলবো।

ছোট মা’র কথা শেষ হবার আগেই চন্দ্রিমা চলে যেতে লাগলো। আজকেই ছোট মা’র থেকে জেনে নিতে হবে আম্মুর সাথে তার কি সম্পর্ক ছিলো এবং তাদের মাঝে দূরত্বের কারণ কি ছিলো।

To be continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে