#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#দ্বিতীয়_সিজন (#২য়_পর্ব )
রাতে বারান্দায় বসে ফেসবুকিং করছিলাম, চন্দ্রিমা এক কাপ চা হাতে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। চা’য়ের কাপটা আমার হাতে এগিয়ে দিয়ে বললো- রাত তো অনেক হয়েছে, ঘুমাবে কখন?
– তুমি শুয়ে পড় আমি কিছুক্ষণ পরেই আসছি।
– শুনলাম তুমি নাকি আমাদের ঐ দিকে যাবে।
– হ্যাঁ। এখানে কিছু কাজ আছে সেগুলো শেষ করে পরশু হয়তো যাবো।
– কেন যাবে?
– অবন্তীকে ওর ভাইয়ার সাথে দেখা করাতে। আমিও আমার ছোট ভাইয়াকে দেখে আসবো।
– ওহ আচ্ছা। আমি কিন্তু যাবো না।
– কেন?
– আমি কিভাবে আন্টির সামনে গিয়ে দাঁড়াবো?
– তুমি কি এমন অপরাধ করছো যে উনার সামনে দাঁড়াতে পারবে না?
– আমি এই প্রথম উনার কথার অবাধ্য হয়েছি।
আমি উঠে দাঁড়ালাম- এতো কিছু চিন্তা করতে হবে না। আমরা সবাই যাচ্ছি। তাছাড়া আমি আছি তো তোমার সাথে। কোনো সমস্যা হবে না।
ছোট মা’কে নিয়ে কথা বলতে না বলতেই ছোট মা কল করছে। কিন্তু ছোট মা’র নাম্বার আমার ফোনে সেইভ ছিলো না। চন্দ্রিমা নাম্বার দেখে বললো এটা ছোট মা’র নাম্বার।
– হ্যালো।
– আমায় চিনছো?
– হ্যাঁ। চন্দ্রিমা নাম্বার টা চিনিয়ে দিলো।
– চন্দ্রিমার তাহলে আমার নাম্বার মনে আছে! আমি তো ভেবেছিলাম ভুলেই গেছে। নয়তো একদিন হলেও কল করতো।
– আসলে ও একটু ভয়ে আছে তাই কথা বলার সাহস পাচ্ছে না।
– শুনলাম তুমি নাকি অবন্তী কে আরশের সাথে দেখা করতে নিয়ে যাবে।
– হ্যাঁ।
– তুমি সেদিন জিজ্ঞেস করেছিলে আমি সেন্ট্রাল জেলে কার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। মনে আছে!
– হ্যাঁ ।
– আমি আরশের সাথেই দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার শুধু শুধু গিয়ে ওখানে অপেক্ষা করাই হয় আরশ আমার সাথে দেখা করে না।
– কেন!
– ও তোমার মতোই জেদি। বাসার কেউ ওকে বের করতে চেষ্টা করেনি জন্য ও কারো সাথে দেখা করে না। তুমি কিভাবে ওর সাথে দেখা করবে!
– আমি হয়তো আগামী পরশু রওনা দিবো। তখন গিয়ে যেভাবে দেখা করা যায় সেভাবেই দেখা করবো।
– তুমি আমার সাথে দেখা করিয়ে দিতে পারবে! ( ছোট মা’র কন্ঠ ভেজা ভেজা লাগছে। মনে হচ্ছে কান্না করছে)
– আচ্ছা ঠিক আছে। চেষ্টা করবো।
কিছুটা সময় নিরব থেকে নিজেকে সামলে নিলেন। তারপর চন্দ্রিমার সাথে কথা বলতে চাইলেন। কিন্তু চন্দ্রিমা কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। জোরপূর্বক চন্দ্রিমার হাতে মোবাইল টা দিলাম।
– এই মেয়ে এতো ভয়ের কি আছে! আমি কি তোমায় কখনো বকেছি! তুমি তোমার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করছো। ছেলে আমাদের পরিবারের। তুমি ছোট থেকে আমাদের পরিবারের একজন ছিলে এখন আরও গভীর ভাবে আমাদের পরিবারের সদস্য হয়ে গেলে।
চন্দ্রিমা কান্না করছে। কোনো কথাই বলতে পারছে না। আমি চন্দ্রিমার হাত থেকে ফোন নিয়ে নিলাম – আপনার সাথে পরশু দেখা হচ্ছে। এখন রাখলাম।
চন্দ্রিমা আমায় শক্ত করে জড়িয়ে আছে।
– এভাবে কান্না করতে করতে তুমি তো আমার টিশার্ট ভিজিয়ে দিবে। এবার তো কান্না থামাও।
কে শোনে কার কথা! চন্দ্রিমাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে আসলাম।
পরের দিন সবটা সময় অফিসেই কেটে গেলো। সন্ধার দিকে চন্দ্রিমা কল করলো- বাসায় আসবে কখন?
– আজকে ফিরতে একটু দেরি হবে তুমি খাওয়া করে শুয়ে পড়।
– কতটা দেরি হবে!
– অনেক বেশি দেরি হতে পারে। আমি এখনো ক্রাইম জোনে আছি। এখানে থেকে অফিসে যাবো তারপর বাসায়।
কাজের চাপে মুখ ফশকে ক্রাইম জোন বলে দিয়েছি সেটা খেয়াল করিনি। চন্দ্রিমা যখন জথাটা রিপিট করলো- ক্রাইম জোন মানে! তুমি কিসের ক্রাইম জোনে আছো?
এতক্ষণে মনে পড়লো বাসায় কেউ আমার প্রফেশন সম্পর্কে অবগত নয়।
– তেমন কিছু না। তুমি খাওয়া করে শুয়ে পড় আমি বাসায় এসে কথা বলছি। এখন অনেক ব্যাস্ত আছি।
রাতে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় একটা বেজে গেলো। দরজায় দুই বার নক করতেই দরজা খুলে দিলো।
– তুমি এখনো জেগেই আছো?
– ঘুম আসছিলো না।
– অবন্তী ঘুমিয়ে গিয়েছে?
– হ্যাঁ।
চন্দ্রিমার হাতে টিকেট গুলো ধরিয়ে দিলাম- কাল রাতে আমরা বাসে উঠবো।
চন্দ্রিমা হাতের টিকেট গুলো গুনতে শুরু করলো – এখানে চারটা টিকেট কেন! আমরা তো তিনজন।
– মায়া আমাদের সাথে যাচ্ছে। ওর হাসবেন্ড কিছু দিন খুব ব্যাস্ত থাকবে তো। তাই ও আমাদের সাথে গিয়ে ঘুরে আসুক। রক্তের না হোক কিন্তু আমাদের বাড়ির মেয়ে তো।
– যেমনটা আমি। তাই না!
– সব কিছুতেই নিজেকে টানবেন না বুঝলেন! আপনি তো এই বাড়ির রাণী।
– আর তুমি বুঝি রাজা!
চন্দ্রিমার কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে বললাম – আমি রাজা জন্যই তো তোমায় রাণী করে রাখতে পারছি ।
– তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি খাবার দিচ্ছি।
– তুমি খেয়েছ?
– একসাথেই খাবো জন্য অপেক্ষা করছি।
– আচ্ছা আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
খাওয়া শেষ করে বারান্দায় সিগারেট জ্বলালাম। কিছুক্ষণ পর চন্দ্রিমা আসলো- তুমি আবার সিগারেট ধরিয়েছ?
– মাত্র জ্বলালাম।
– দিনে কয়টা লাগে?
– কতটা প্রেসারে থাকি সেটার উপর ডিপেন্ড করে।
– এটা যে ক্ষতিকর সেটা কি জানো?
– আমাদের ভালো লাগে এমন কাজের মাঝে বেশির ভাগ কাজেই আমাদের জন্য ক্ষতিকর। তুমি ভিতরে যাও নয়তো তোমার ও ক্ষতি হবে।
– আমারই তো ক্ষতি করছে। তুমি খাচ্ছো এটা আমার ক্ষতি না? তার থেকে আমিও কাল থেকে শুরু করবো যাতে একসাথে মরে যাই।
চন্দ্রিমার কথা শুনে অবাক হয়ে চন্দ্রিমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দিলাম- তুমি এমন ছোট বাচ্চাদের মতো কথা বলছো কেন? আচ্ছা ঠিক আছে এই যে ফেলে দিলাম। চলো ঘুমিয়ে পড়বো।
চন্দ্রিমা আমায় জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ নিরবতার পর চন্দ্রিমা বললো- ঘুমিয়ে গিয়েছ?
– না। কিছু বলবা?
– তুমি রোজ অফিসে যাও। কিন্তু তুমি কি কাজ করো! সেটাই তো কখনো জানালে না!
– সেইটা জানা কি খুব জরুরি!
– অবশ্যই। আমার হাসবেন্ড আমি জানবো না তো কে জানবে?
– আমি একজন ডিটেকটিভ।
চন্দ্রিমা আমার কথা শুনে একটু জোরেই চিল্লিয়ে বললো- ডিটেকটিভ!
চন্দ্রিমার মুখে হাত চেপে ওকে শান্ত করলাম- অবন্তী ঘুমাচ্ছে ও জেগে যাবে।
– তুমি তো আরশ ভাইয়াকে বের করতে পারবে। পারবে না!
– চলো গিয়ে একটা শেষ চেষ্টা করে দেখি। আমারও তো ভাই। যদি নির্দোষ হয় তবে অবশ্যই বের করবো।
– আচ্ছা।
– কাল সকাল সকাল আমি বেরিয়ে যাবো। মায়া এগারোটার দিকে আসবে ও তোমাদের নিয়ে শপিংয়ে যাবে।
পরের দিন অফিসে যাওয়ার পর অবন্তী ফোন দিয়ে বললো- ভাইয়া একটা অপরিচিত মেয়ে এসে বলছে ও নাকি মায়া।
– কি বলো! তোমরা মায়া কে চিনো না! ওর সাথে তো তোমাদের দেখা হয়েছিল।
– হ্যাঁ। কিন্তু সেই দিন তো অন্য কেউ ছিলো। এই মেয়েকে আমি আজকেই প্রথম দেখলাম। কিন্তু এই মেয়ে বলছেন এই মেয়েই নাকি মায়া আপু।
To be continue….