প্রিয় চন্দ্রিমা পর্ব-০১

0
488

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#১ম_পর্ব

– মেয়ের ব্রেইন টিউমার আছে এতো বড় একটা সত্যি লুকিয়ে আপনার বিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন! এটা কি আপনারা ঠিক করছিলেন?
পাত্র পক্ষের এমন কথায় থ’ হয়ে ছেলের বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো রাদিয়ার বাবা।
– আপনি এসব কি বলছেন! তাছাড়া আপনাকে এসব বললো কে?
– যেই বলুক না কেন আমি আমার ছেলের জীবন নষ্ট করতে পারবো না। তাছাড়া আপনার থেকে এমন কিছু আমি আশা করিনি।

বিষয়টা পুরোটা খোলাসা করে না বলেই ছেলের বাবা প্রস্তান করলেন।

চোখেমুখে রাজ্যের চিন্তা নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে রাদিয়ার বাবা। তার পাশে পরিবারের সবাই নিজেদের মতো আলোচনা করে যাচ্ছে। সকলের একটাই প্রশ্ন কে সেই ব্যাক্তি যে এমন মিথ্যা রটনা রটালো! তাদের ফুলের মতো মেয়েটার জীবন এভাবে নষ্ট করে দিলো।

বাসার সদর দরজায় দাঁড়িয়ে সকলের এমন সব কথোপকথন অবাক হয়ে শুনছি আমি। তারা আলোচনায় এতটাই নিমজ্জিত যে, কেউ খেয়াল করে নি অপরিচিত একটা ছেলে তাদের বাসায় এসে তাদের সব কথোপকথন শুনছে।
ঠিক অপরিচিত বললে ভুল হবে। তাদের সাথে আমার সম্পর্ক আছে, রক্তের সম্পর্ক। শুধু যোগাযোগ নেই। এখানে যারা আলোচনা করছে কেউ আমার চাচ্চু, কেউ ফুফু, কেউ চাচী। কিন্তু আমি তাদের কাউকেই চিনি না। জন্মের পর এই প্রথম তাদের সাথে আমার দেখা হচ্ছে।

এতক্ষণে কেউ একজন আমায় খেয়াল করলো। আমার কাছে এসে বললো- কে তুমি! এখানে দাঁড়িয়ে কি শুনছো?
আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই কলার ধরে টেনে সকলের সামনে নিয়ে গেলো- ভাই এটাই মনে হয় সে মানুষ যে আমাদের মেয়ের ব্যাপারে গুজব রটিয়ে এখন মজা নিতে আসছে।

আমি অবাক হয়ে লোকটার চোখের দিকে তাকালাম। রাগের কারণে মানুষ যে তার সাধারণ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে তার বাস্তব উদাহরণ দেখছি।

লোকটার কথায় সবার আলোচনা বন্ধ হয়ে গেলো এখন সবার প্রধান আকর্ষন আমি। সবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নিজেকে জেল পলাতক খুনীর মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মনে হচ্ছে।

লোকটা তখনও আমার কলার ধরেই আছে যাতে করে আমি পালিয়ে যেতে না পারি। একজন বৃদ্ধমতো লোক এসে আমার কলার থেকে উনার হাত সরিয়ে জিজ্ঞেস করলো- কে তুমি!

এতক্ষণে তাদের আচরণ দেখে রিতীমত আমার গলা শুকিয়ে কাঠ খড়ি হয়ে গেছে। কাঁপা কাঁপা গলায় শুধু এতটুকু বললাম – আমি সুমন। আমায় এক গ্লাস পানি দিবেন! গলা শুকিয়ে গেছে।

একজন অল্প বয়স্ক মহিলা পানি ভর্তি একটা গ্লাস আমার দিকে এগিয়ে দিলো।
কলার ধরে নিয়ে আসা লোকটার চোখে এখনো আগুন ঝরছে। কর্কশ শব্দে জিজ্ঞেস করলো- গলা ভিজেছে! এখন বল কে তুই!আমাদের বাসায় কেন!
– আমি সুমন, আমার আম্মু সুলতানা।
– সেটা তো জানলাম কিন্তু আমাদের বাসায় আসার কারণ কি!
পাশে থেকে একটা মেয়ে বললো- তুমি কি আপুর বন্ধু! বিয়ের দাওয়াতে আসছো?
মেয়েটার দিকে তাকালাম মেয়েটার বয়স খুব বেশি হলে পনেরো হবে। মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মহিলা ধমক দিয়ে মেয়েটিকে চুপ করিয়ে দিলো – সব সময় বড়দের কথার মাঝে কথা বলা।
বৃদ্ধ লোকটা আবার আমায় জিজ্ঞেস করলো- এখন তুমি বলো আমাদের বাসায় কেন এসেছো!
– জনাব কাশেম সাহেব আছেন?
– উনি বাইরে গেছেন। কিছু বলার হলে আমাদের বলো আমরা উনাকে বলে দিবো।
– আমি উনার ছেলে। ঢাকা থেকে এসেছি।
আমার এই একটা লাইন পুরো মহলকে পরিবর্তন করে দিলো। সবাই নিরব হয়ে আমার দেখছে। কারো মুখে কিচ্ছুটি বলছে না।
– গত সপ্তাহে আমার কাছে একটা ডাক আসে সেখানে ঠিকানা দেওয়া ছিলো আর ২০ তারিখের আগেই আসতে বলা হয়েছিলো। আমি কখনো ওনাকে দেখিনি তাই একনজর দেখার জন্য আসলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি ভুল দিন চলে আসছি।
– তেমন কিছু না।
চোখ রাঙিয়ে কথা বলা লোকটা এবার শান্ত গলায় বললো- তুমি অনেকটা জার্নি করছো ফ্রেশ হয়ে রেষ্ট নাও।
ছোট মেয়েটাকে বললো আমায় গেস্ট রুমে নিয়ে যেতে।

– ভাইয়া এইটা তোমার রুম। তুমি এখানেই আরাম করো।
– এই শোনো।
– কিছু বলবা!
– তোমার নাম কি?
– রাফছি।
– নিচে কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে!
– তেমন কিছু না। ২০ তারিখে আপুর বিয়ে ছিলো। কিন্তু কেউ একজন পাত্র পক্ষকে বলেছে আপুর নাকি ব্রেইন টিউমার আছে। তাই তারা আর বিয়ে দিবে না। এটা নিয়েই কথা বলছে সবাই।
এতটুকু বলে মেয়েটি আমার কানের কাছে এসে বললো- আমি কিন্তু জানি কে বলেছে।
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম – তুমি কিভাবে জানো! জানোই যখন তাহলে সবাইকে বলে দিচ্ছো না কেন!
– বাইরের কেউ যদি বলতো তবে তো সেই কবেই বলে দিতাম কিন্তু আপু নিজেই পাত্র পক্ষের কাছে এগুলো বলিয়েছে তার বন্ধুদের দিয়ে।
-মারাত্মক ভয়ংকর মেয়ে তো, নিজের বিয়ে নিজেই ভেঙে দিচ্ছে।
– ছেলেটাকে আপুর একদম পছন্দ হয়নি। সত্যি বলতে আমার ও ভালো লাগেনি। তাই বাসায় কাউকে কিছু বলিনি নয়তো আপুর প্রতি আমার অনেক প্রতিশোধ নেওয়া বাকী আছে। আমি তো শুধু সুযোগের অপেক্ষা করছি।
– বনে বনেই শত্রুতা। আচ্ছা কাশেম সাহেব তোমার কে হন?
– বড় আব্বু।
– উনার ছেলে মেয়ে নেই!
– আছে তো অবন্তী আপু। ওনারা সবাই শপিংয়ে গেছে আসলে সবার সাথে পরিচিত হতে পারবে। আমি তাহলে এখন আসি ভাইয়া তুমি রেষ্ট করো।

রাফছি চলে গেলো। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিজেকে বিছানায় বিলিয়ে দিলাম। দীর্ঘ জার্নির পর দুচোখের পাতায় রাজ্যের যত ঘুম এসে জমাট বেঁধেছে। একটা কাঁথা পুড়ো শরীরে মুড়িয়ে শুয়ে পড়লাম।

নিশ্বাস ক্রমশ কম হয়ে আসছে নিজেকে মেলে ধরতে পারছি না, খুব অস্বস্তি লাগছে। মনে হচ্ছে আমায় শক্ত কোনো রশি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। চোখ খুললাম কিন্তু আমি তখনও সম্পূর্ণ কাঁথার নিয়ে। নিজেকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই পারছি না। এমন সময় একটা কন্ঠ ভেসে আসলো- যতোই চেষ্টা করো ছাড়াতে পারবে না আজ তোমার নিস্তার নেই।
কথাটা ঠিক আন্দাজ করতে না পারলেও আমার পুরো শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। গলাতেও বিন্দু মাত্র লালার অবশিষ্ট নেই।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে