#প্রাপ্তির শহরে সিজন০২
#পর্ব-০৫
#তাহরীমা
তাহুর পরীক্ষা শেষ।আপাতত এ কয়েকদিন কলেজ যাবে না।আলো প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর ই অনেকটা পরিবর্তন এসেছে।আগের মতো কাজে অবহেলা করেনা।মায়ের অমান্য সত্ত্বেও তাহুর সাথে কাজ করে।একটুয়াধটু হেল্প করে।যদিও তাহু বলে সে একাই সব পারবে।আলো তবুও করে।আলোর ব্যবহারে আলোর হাসবেন্ড ও খুব খুশি হয়।আলো হাসবেন্ড কে বলেছিলো সে আলাদা বাসায় থাকবে।সে ও সংসারি হবে।কিন্তু এ সময়ে প্রায় মেয়েরা বেশিরভাগ বাপের বাড়ি থাকে।তাছাড়া আলো প্রথম মা হচ্ছে দেখাশুনা করার মত কেউ থাকবেনা।তাই বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকবে।
.
.
আকাশ নিজের রুমে বসে বসে ফোন ইউজ করছে।হঠাৎ তার ফোনে কল আসলো।ফোনের অপর পাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসলো।
–“কি ব্যপার?তুমি না জব পাইছো আর কতদিন আমরা দূরে থাকবো?এবার তোমার বাবা মা কে বলে বিয়ের ব্যবস্থা করো?”
আকাশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
–“দেখছি আম্মু আব্বুকে বলে।”
মেয়েটি খুশি হয়ে বলে,
–“লাভিউ,উম্মাহ।”
এই বলে কল কেটে দিলো।আকাশ বাবা মার রুমে গেলো।সকালের নাস্তা করে সবাই যে যার রুমে চলে গেছিলো।বাবা মা বিছানায় বসে থাকতে দেখে আকাশ বলে,
–“আসবো আম্মু?”
আদ্রর মা বলে,
–“আয়।কিছু বলবি?”
আকাশ চোখ স্থির করে বলে,
–“অনেকদিন ধরে তোমাদের একটা কথা বলবো ভাবছি।”
–“কি কথা?”
–“আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি আম্মু,তাকে বিয়ে করতে চাই।”
আদ্রর বাবা মা দুজনেই চমকে উঠে।আদ্রর বাবা বলে,
–“তুই নিজের পছন্দে বিয়ে করবি?আমাদের তো মেয়েটিকে পছন্দ না ও হতে পারে?”
আকাশ তখন বলে,
–“তোমরা তো পছন্দ করে এক ছেলেকে বিয়ে করিয়েছো ই।না হয় আমার টা আমি পছন্দ করলাম?”
আদ্রর বাবা আর কিছুই বলল না।এইদিন টাও দেখার বাকি ছিলো।
আদ্রর মা বলে,
–“তুই যখন পছন্দ করেই রেখেছিস কি আর বলবো?”
আকাশ তখন তার জিএফ মেঘার ব্যাপারে সব বলে।মেঘা পরিবারের একমাত্র মেয়ে।তারা উচ্চবিত্ত।আদ্রর মা মেঘার ব্যাপারে এসব শুনে খুশি হয়।এক বউ এনে তিনি সন্তুষ্ট নন।অন্তত এই বউটা মনে হয় মনের মতো আনতে পারবেন।
________
তাহু আর আলো পাশাপাশি বসে গল্প করছে।
–“ভাবি!বলছি কি ভাইয়া তো কিছুদিন পরে দেশে আসছে।তোমরা ও বাচ্চা একটা নিয়ে নাও না?”
তাহু চুপ করে থাকে,
–“অনেক মেয়ে দেখি আমি, বাচ্চা নিয়েও সংসার পড়াশোনা সামলায়।”
তাহু তখন লজ্জালজ্জা ভাব এনে বলে,
–“আল্লাহ চাইলে অবশ্যই হবে।”
_____________
কিছুদিন পর আকাশের বিয়ে ঠিক হয়।আদ্রর মা এবারেও একা গিয়ে বউ দেখে আসে।উনার বেশ পছন্দ হয়েছে।মেয়েটা মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে।তাহুর চেয়ে হাজারগুণ সুন্দরী।মনের মতো বউ যাকে বলে।তাছাড়া অনেক মডার্ন ও।
আদ্র পরিবারের বড় ছেলে।তাই তাকে এ বিষয়ে জানানো হয়।যেহেতু তার মা রায় দিয়েই ফেলেছে সেহেতু সে কি আর বলবে?তাছাড়া তার ভাইয়ের পছন্দ বলে ও কথা।
।
।
ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে আদ্র দেশে ফিরছে।
সকাল থেকেই তাহু আদ্রর পছন্দের সব রান্না করে।আবার কতদিন পর তাদের দেখা হচ্ছে।খুশিতে কান্না চলে আসতেছে তাহুর।
আদ্রকে ইয়ারফোর্ট থেকে আকাশ আনতে যায়।বাড়ি এসে আদ্র প্রথমে বাবা মাকে সালাম করে।তারপর আলোকে জড়িয়ে ধরে।আলোর হাসবেন্ড কে ও জড়িয়ে ধরে।
তারপর এদিক সেদিক তাকালে আলো বলে,
–“তোমার বউ তোমার রুমে।”
আকাশ মুচকি হাসে।সাথে আদ্র ও।
.
তাহু একটা কালো কালারের শাড়ি পড়ে।শাড়িটাতে তাকে এত ভালো মানিয়েছে।লজ্জালজ্জা মুখ করে অপেক্ষা করে থাকে ভালবাসার মানুষটার জন্য।
আদ্র দরজার সামনে আসতেই ঘোমটা দেয়া বউকে দেখতে পায়।
–“এইতো আমার বউ।ভাল আছে আমার বউটা?”
তাহু সালাম দেয়।আদ্র সালাম নিলেই তাহু বলে,
–“সবকিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ।”
আদ্র তাহুকে জড়িয়ে ধরে।আর বলে,
–“মনে হচ্ছে যুগ যুগ পর আমাদের আবার দেখা হইছে।”
তাহু হাসে।
তাহু আদ্রকে আর বাড়ির সবাইকে খেতে দেয়।সবার খাওয়াদাওয়া শেষে তাহু সব গুছিয়ে রাখতে যায়।
আদ্র বিদেশ থেকে সবার জন্য পছন্দের জিনিস নিয়ে আসে।আলো,মা আর তাহুর জন্য শাড়ি নিয়ে আসে।আদ্রর মায়ের টার চেয়ে তাহুর শাড়ি সুন্দর বেশি,কালার টাও উজ্জ্বল।বউ মানুষের শাড়ি উজ্জ্বল তো হবে ই এটা স্বাভাবিক।কিন্তু দাম একই।
আদ্রর মা তাহুর শাড়ি দেখে মন খারাপ করে বলে,
–“তুই নিশ্চয় বউয়ের জন্য দামিটায় কিনেছিস?যা সব তোর বউকে পড়া।”
আদ্র তখন বুঝিয়ে বলে।কিন্তু তিনি বুঝার পাত্রী নন।
তিনি বলেন,
–“ও জীবনে এত দামি জিনিস দেখেছে?তাহলে কি দরকার ওকে এসব দেয়ার?যে যেমন তাকে তেমন ই মানায়।”
কিন্তু আলো দাঁড়িয়ে ছিল,সে বলে–“ভাইয়া ঠিকই বলেছে ভাবি যেহেতু বউ ওর টা সুন্দর হতে হবে।তাছাড়া এ সামান্য শাড়ি নিয়েও অশান্তি কেন করছো আম্মু?”
দূর থেকে তাহু এসব শুনে।চোখ ছলছল করে উঠে তার।সে রুমে চলে যায়।
আদ্র অনেক বলে কইয়ে মায়ের থেকে তাহুর শাড়িটা নিয়ে আসে।রুমে গিয়ে তাহুর সামনে তার গিফট টা মেলে ধরতেই তাহু বলে,
–“আলমারি তে শাড়ি ভর্তি।এসব অযতা খরচ কেন করছেন?”
আদ্র বলে,
–“তুমি খুশি হওনি?”
তাহু চুপ।গিফট পেতে কার না ভাল লাগে,আর সেটা যদি হাসবেন্ডের হাতের গিফট হয়।কিন্তু তাহু যে কথাগুলো শুনেছে মন টা তো ভেঙ্গে গেলো।কিন্তু আদ্রকে এসব দেখাতে চায়না সে।তার জন্য এমনিতে মা টা অসন্তুষ্ট।আর মন খারাপ দেখিয়ে আরো অশান্তি সে করতে চায়না।
–“কি হলো?”
–“খুশি হয়েছি।কিন্তু আমার অনেক শাড়ি।আমার জন্য এসব অযতা খরচ করতে যাবেন না আর।সব গিফটের চেয়ে আপনি আমার কাছে সেরা গিফট।আপনাকে সারাজীবন কাছে পেলেই চলবে।”
আদ্র তখন দুষ্টু হেসে বলে,
–“তাই বুঝি কতটুকু কাছে হুম?”
তাহু তখন হাসে।
–“জানিনা।”
___________
বাড়িতে বিয়ের ধুম লেগেছে।তাহুর মেজাম্মু রিয়াদ রিপা ও বিয়েতে এসেছে।তাদের পেয়ে তাহু খুব খুশি।তাহু চাচিকে জড়িয়ে ধরে রাখে।
–“কেমন আছিস তাহু?”
–“আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো।”
–“আলহামদুলিল্লাহ।তোকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম।পড়ালেখা কেমন চলে?”
–“ভালো মেজাম্মু।”
–“আমি আল্লাহকে বলেছি তোর সব স্বপ্ন আল্লাহ পূরণ করুক।”
তাহুর ভাইবোনদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে।রিপা বলে,
–“তোকে খুব মিস করি আপু।”
–“আমিও।তুই ত এখন বড় হচ্ছিস।ভাই আর মেজাম্মুকে দেখে রাখিস?”
–“আম্মু মাঝেমাঝে অসুস্থ হয়ে যায়।শুধু বলে কবে রিয়াদ বড় হবে।আমাদের বড় করে মরে যেতে পারলেই শান্তি নইলে যে কি হবে?শুধু এসব বলে।”
তাহুর চাচি বলে,
–“হয়ছে পেটের সব কথা ঝেড়ে ফেল বোনকে।”
তাহু গাল ফুলিয়ে বলে,
–“এত চিন্তা কেন করো মেজাম্মু।আল্লাহ ভরসা।”
তাহুর চাচি ও বলে,
–“আল্লাহ ভরসা।”
তাহু তাদের জন্য নাস্তা পানি নিয়ে আসে।আদ্র চাচিকে দেখে সালাম দেয়।টুকটাক কথা বলে।আদ্রর ব্যবহারে তাহুর চাচি সস্থি পায়।মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে ভুল করেন নি তিনি।আদ্রর মা ও তাহুর চাচির সাথে ভাল ব্যবহার করেন।যেন তাহুকে তিনি মাথায় তুলে রেখেছেন।
আদ্র তাহুর মেজাম্মু আর কাজিন দের জন্য ও গিফট আনে।যদিও এ ব্যপারে আদ্রর বাবা জানে কিন্তু মা জানেন না।সব ব্যপার না জানানো ই ভালো।তাহুর চাচি হিসেবে উনার ও তো মেয়ে জামাইর উপর অধিকার থাকে নাকি?
।
।
আদ্রর মা নিজ হাতে আকাশের বউকে ঘরে তুলে।বিয়ে শেষে তাহুর চাচি কাজিনরা চলে যায়।
.
মেঘা বাসায় এসে আদ্রর বাবা মাকে সালাম করে।তাহুর সাথে পরিচিত হয়।তাহুর নিজের বোনের মত করে কথা বলে।যদিও বয়সে মেঘা তাহুর বড় ই হবে।কিন্তু সম্পর্কে ছোট জা।
তারপর মেঘার সাথে আদ্র আলোর আর তার হাসবেন্ডে কথা বলে।
মেঘা অনেক সুন্দরী।নিয়মকানুন শেষে আকাশের ঘরে মেঘাকে দিয়ে আসে।রাতের খাবার খাওয়ার জন্য মেঘাকে ডাকলে সে জানায় সে কিছু খাবে না।
.
আকাশ খেয়েদেয়ে রুমে ডুকে যায়।দরজা বন্ধ করতেই মেঘা দৌড়ে এসে আকাশকে জড়িয়ে ধরে।আকাশ হেসে বলে,
–“আস্তে ধরো ধম বন্ধ হয়ে না যায়।”
–“উহু ভালবেসে আমরা বিয়ে করেছি।অবশেষে এক হতে পেরেছি।আমি অনেক হ্যাপি।আজ আপনাকে ছাড়ছি না মি:”
–“অহ তাই?”
–“সিউর।”
_______
তারপর বাকিরা যে যার মতো খেয়ে রুমে চলে যায়।আদ্র তাহু কিছুক্ষণ গল্প করে ঘুমিয়ে পড়ে।পরেরদিন ভোরে আদ্র তাহু নামাজ পড়তে উঠে,আদ্র আবারো ঘুমায়।
আর তাহু সবার জন্য চা বানায়।তারপর যারা যারা উঠেছে সবাইকে খেতে দেয়।কিছুক্ষণ পরে আদ্র ও আসে।
চা পান করতে করতে তাহুকে বলে খেয়ে নিতে।
তাহু বলে,
–“সবার খাওয়া হলেই খাব।তাছাড়া আলো আপু ও খায়নি।আপু উঠোক একসাথে খাব।”
সকাল দশটা।আকাশ আসে টেবিলে বসে।আদ্রর বাবা আকাশকে বলে,
–“তোর বউকে দেখছি না?”
–“ও এখনো ঘুম।দশটার আগে নাকি ও ঘুম থেকে উঠেনা।”
আদ্রর বাবা আদ্রর মায়ের দিকে তাকায়।
তারপর পাশে গিয়ে ছোট করে বলে,
–“তুমি এবার কিছু বলবে না?”
আদ্রর মা বলে,
–“নতুন বউ ঘুমাক।”
আদ্রর বাবা অবাক হয়ে বলে ‘একদিন এই অন্যায়ের জন্য বিরাট শাস্তি পাবে দেখে নিও’
বাড়ির পুরুষরা সবাই খেয়ে যে যার মতো রুমে চলে যায়।
আরো কিছুক্ষণ পর মেঘা আসে।মেঘা তাহুর সাথে কাজে সাহায্য করতে নিলে আদ্রর মা বলে,
–“একি নতুন বউ হয়ে তুমি কেন কাজ করবে?তাহু ও তেমন কাজ করেনা পুরাতন হয়ে।আর সেখানে তুমি?”
মেঘা খুশি হয় এমন ভাল শাশুড়ি পেয়ে। মেঘাকে চা এগিয়ে দেয়।
মেঘা বলে,
–“আমি ও তেমন কাজ পারিনা।আমাদের বাড়িতে অনেক কাজের মহিলা।”
আদ্রর মা বলে,
–“এখানে ও ছিল যেহেতু তাহু কাজ মোটামুটি পারে তাই বিদায় করে দিয়েছি।”
মেঘা তাহুকে খেয়াল করে।মেয়েটা শান্ত স্বভাবের কেমন যেন।আর মুখটা ও কেমন মায়াবি।কিন্তু যতই মায়াবি হোক তাহুর চেয়ে মেঘা এগিয়ে, রূপের দিক দিয়ে।
আর এতেই শাশুড়ির মন জয় করবে।
মেঘা তারপর শাশুড়ি কে বলে,
–“আম্মু আপনার মাথাটা আজকে আমি আছড়ে দিবো।”
আদ্রর মা মহাখুশি হয়ে তাহুর দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আসলে ই নতুন বউ তোর চেয়ে অনেক ভালো।তোকে বলে বলে এটা সেটা করাতে হয় আর একে দেখ কেমন ভাল মানুষের মন পড়তে পারে।আসলেই তুই কোনো কাজের না।তাও ভাগ্যগুণে আমাদের পরিবারে এসেছিস আরকি।”
তাহু মনে মনে খুব কষ্ট পেলো তবে কাউকে কিছুই বলল না।তার জীবন নিয়ে সে হতাশ নয়।তার ধর্যের পরীক্ষা চলছে।পরীক্ষা শেষে সে জিতবে।তবে সে তার আল্লাহকে বিচার দিলো।নিশ্চয় তিনি উত্তম বিচারকারী।
চলবে………….