#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৫
ফরাজী পরিবারের সকলে টেনশনে আছে ইশানকে নিয়ে। রাত সাড়ে দশটা বাজতে চলল কিন্তু ইশানের কোন হদিস নেই। ইশানকে অনেক বার কল করা হয়েছে কিন্তু বার বার ওই একই কথা ফোন থেকে ভেসে আসছে “আপনার কাঙ্খিত নাম্বারটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার ডায়াল করুন”। নেহা বেগম তো আজহারী শুরু করে দিয়েছেন ছেলেকে নিয়ে বার বার এক কথাই বলে যাচ্ছেন “কেন ইশানকে জোর করে আটকাইনি তখন”। কেয়া শাশুড়ির পাশে বসে শাশুড়িকে আশ্বাস দিয়ে বলে।
–মা আপনি চিন্তা করবেন না ইশানের কিছু হবে না। এত চিন্তা করলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
–আমি কি করবো ছেলেটাকে নিয়ে বলতো বৌমা? আগে তো এমন ছিল না ও। কিন্তু যেদিন বিয়ে বাড়ি থেকে মারামারি করে এসেছে সেদিন থেকে আমার শান্ত ছেলেটা বেপরোয়া স্বভাবের হয়ে গেছে।
সোহেল ফরাজী বলে।
–আমি বরং ড্রাইভারকে নিয়ে দেখে আসি কোথায় গেলো তোমার সুপুএ।
নেহা বেগম এই কথাটা শুনে তেঁতে উঠেন।
–হুম এখন তো বলবেই তোমার সুপুএ। যখন ছেলে ভালো কিছু করবে তখন তোমার ছেলে আর যখন ছেলে খারাপ কাজ করবে তখন আমার ছেলে।
সোহেল ফরাজী আর কিছু বলেন না এখন আর এখানে কথা না বলা-টাই শ্রেয়। তাই চুপ চুপ বের হয়ে যান ছেলের খুজে।
_____
এগারটা নাগাদ ইশান বাড়ি ফিরে। গাড়ির আওয়াজ শুনার সাথে সাথেই নেহা বেগম বের হোন বাড়ি থেকে। ইশানকে দেখার সাথে সাথে দ্রুত পায়ে ইশানের কাছে গিয়ে বলে।
–কোথায় ছিলি তুই বাবা? তোর ফোন বন্ধ কেন? জানিস কতটা চিন্তায় ছিলাম আমরা।
–মা আমি ঠিক আছি।
–কোথায় ঠিক আছিস চোখ মুখের এই অবস্থা কেন? কি হয়েছে তর? সব ঠিক আছে তো!
–সব ঠিক আছে মা তুমি একটু বেশিই ভাবচ্ছো।
তখনেই নেহা বেগমের নজর যায় ইশানের বা হাত ব্যান্ডেজ করা। ব্যান্ডেজ করা দেখে নেহা বেগমের আত্মা কেঁপে উঠে। টি-শার্টেও রক্তের দাগ লেগে আছে। নেহা বেগম চিন্তিত কন্ঠে বলে।
–তর হাতে কি হয়েছে ইশান?
–মা তুমি শান্ত হও আমি ঠিক আছি।
–ইশান তুই আমার কাছ থেকে কি…কি লুকাচ্ছিস বল।
–মা তুমি ভেতরে চলো আমি সব বলছি।
ইশান মাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বাড়ির ভেতরে পা বাড়াতে নিলেই থেমে যায়। ইশানের মনে হচ্ছে যেন ওর দিকে কেউ তাকিয়ে আছে খুব গভীর ভাবে। কিছু একটা মনে করে ইশান তীরের বেলকনির দিকে তাকায়। কিন্তু না বেলকনিতে কেউ নেই। ইশান দীর্ঘ এক নিশ্বাস ফেলে ঘরের ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
ইশান চলে যেতেই আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে তীর। তীর জেগেই ছিলো বাইরে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। আর যখনেই কর্ণপাত হয় ইশানের হাত ব্যান্ডেজ করা আর গায়ে রক্তের দাগ তখনেই মনের মাঝে ঝড় বইতে শুরু করে। আর এত রাতে লোকটা নিজের এমন অবস্থা করে কোথায় থেকে ফিরেছে? সেই চিন্তায় তীর অস্থির হয়ে পড়ে। মন চাইছিলো ছুটে ইশানের কাছে চলে যেতে কি হয়েছে তার প্রেমিক পুরুষটার দেখার জন্য খুব বেশি ব্যাথা পেয়েছে কি হাতে। কিন্তু তা তো আর হওয়ার নয় তাই তড়িৎ বেগে ঘরে ডুকে ইশার কাছে যায়।
ইশা টেবিলের উপর মেলে রাখা ফিজিক্স বইয়ের উপরে মাথা রেখে কুম্ভকর্ণ এর মতো নাক ডেকে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। তীর বিরবির করে বলে।
–পড়ালেখার কোনো নাম গন্ধ নেই! এতক্ষন বয়ফ্রেন্ডর সাথে কথা বলে এখন পড়ে পড়ে ঘুমানো হচ্ছে দাঁড়া তর ঘুম বের করছি আমি।
তীর বিছানার উপর থেকে ওয়াটার বোতলটা নিয়ে বোতলের কেপ খুলে যেই পানি ঢালতে যাবে ওমনি নজর পরে ইশার ফোনের দিকে ফোনটা টেবিলের উপর থেকে সরিয়ে বেডে রেখে দেয়। পুনরায় ইশার কাছে এসে বোতলে যতটুকু পানি ছিলো সবটুকু পানি ইশার মুখের উপর ঢেলে দেয়। ইশা ধরফরিয়ে উঠে কাঁচা ঘুম এভাবে ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। ইশা ওড়না দ্বারা মুখটা মুছে রাগী গলায় বলে।
–এটা কি করলি তুই তীর? এভাবে পানি দিয়ে কেউ ঘুম ভাঙ্গায়?
তীর বেডে বসতে বসতে বলে।
–আমি ভাঙ্গাই।
–আমাকে ডাকলেই তো আমি উঠে পড়তাম। এভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে কি করেছিস দেখেছিস?
–বাড়ি যা।
–মানে।
–বলছি এখনেই তুই তর বাড়ি যা।
–তর মাথা ঠিক আছে এত রাতে বাড়ি যাবো এতক্ষনে সবাই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।
–কেউ ঘুমাই নি!
ইশা দু হাত কোমড়ে রেখে বলে।
–তুই কি করে জানলি?
–কারন একটু আগে তর ছোট ভাই বাড়িতে এসেছে তাও আবার রক্ত ঝরিয়ে।
ইশা বাকরুদ্ধ! কি বলছে এসব তীর তার ভাই এত রাতে রক্ত ঝরিয়ে এসেছে মানে কি?
–কিহ বলছিস তুই এসব? ভাইয়া!
–হুম। আন্টি খুব চিৎকার চেঁচামেচি করছিলো তখন শুনলাম।
–তো তুই এখন বলতে চাইছিস ভাইয়া কেমন আছে সেটা জেনে এসে তকে জানাই।
তীর ছোট করে উত্তর দেয়।
–হুম।
–বাব্বাহ এত চিন্তা ভাইয়ার জন্য। তাহলে তখন এমন করলি কেন?
–প্লিজ ইশা জেনে আয় না ওনার কি হয়েছে? আমার খুব টেনশন হচ্ছে।
–পারবো না যেতে। একে তো তুই পানি দিয়ে আমার আরামের ঘুম ভেঙ্গেছিস আর তার উপর আমার জামা কাপড় ভিজিয়ে দিয়েছিস, সাথে বই খাতা গুলাও ভিজালি। তাই আমি পারবো না যেতে, যেতে হলে তুই যা।
–প্লিজ ইশু এমন করিস না আমার খুব টেনশন হচ্ছে।
ইশা তীরের মুখের দিকে তাকায়। মেয়েটার মুখটা দেখে ইশার খুব মায়া হলো আসলেই তার ভাইকে নিয়ে চিন্তা করছে সামনের রমনীটা। তাই ইশা বলে।
–এখন এত রাতে বাড়ি যেতে পারবো না আমি ভাবির কাছে ফোন করে জেনে নিচ্ছি ভাইয়ার কি অবস্থা। তুই বরং আমার জন্য তর একটা ড্রেস বের কর চেইন্জ করতে হবে ঠান্ডা লাগছে খুব।
_____
ইশান সোফায় বসে আছে আর তার পাশে বসেই মা বকর বকর করেই যাচ্ছে। মা তো তাই হয়তো এমন করছে, সন্তানের জন্য মায়েদের একটু বেশিই চিন্তা করে। কিন্তু ইশানের আর ভালো লাগছে না মাথা ধরে গেছে। হাতে দু’টা সেলাই লেগেছে আর কাটা স্থানটা যেন এখন একটু বেশিই ব্যাথা করছে। পেটেও ভীষন খুদা লেগেছে মনে হচ্ছে যেন দু তিন যাবত পেটে কিচ্ছু পড়ে নি। শরীর কেমন যেন নেতিয়ে আসছে ক্রমাগত। কথায় আছে না “পেট ঠান্ডা তো দুনিয়া ঠান্ডা”। তাই দুনিয়া ঠান্ডা করতে হলে ইশানকে এখন খেতে হবে। তাই মাকে ক্লান্ত কন্ঠে বলে।
–মা খুব খিদে পেয়েছে আমাকে খেতে দাও।
নেহা বেগম থমকে যায়। সত্যি তো তার ছেলে তো খায় নি কোথায় ছেলে আসার সাথে সাথে খাওয়াবে তা না করে ননস্টপ কথা বলেই যাচ্ছে। অনুতপ্ত বোধ করেন নেহা বেগম। ছেলেকে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে বলে ছুটে চলে যায় রান্নাঘরে। প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে এসে ছেলের পাশে বসে বলে।
–নে বাবা খা।
ইশান কোমল কন্ঠে বলে।
–খাইয়ে দিবে মা। তোমার হাতে আজকে খেতে খুব ইচ্ছে করছে।
নেহা বেগম বেজায় খুশি হোন সাথে অবাকও হোন। ছোট থেকেই ইশান নিজের কাজ নিজে করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকেই নিজেই একা সব কিছু করার চেষ্টা করত। নেহা বেগম মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়। সাদা ভাত আলু চিংড়ি ভাজি দিয়ে মাখিয়ে ভাতের নলা ছেলের মুখের সামনে ধরে ইশানও চুপচাপ তৃপ্তি ভরে খেয়ে নেয়।
মা ছেলের এমন মুহূর্ত দেখে সোহেল ফরাজী খুব খুশি হোন। ছেলেকে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে নি। কেয়ার ফোনে কল আসাতে চলে যায় ঘরে আর সোহেল ফরাজীও মুচকি হেসে ঘরে চলে যায় রাত অনেক হয়েছে। ইহান বাড়িতে নেই এখনও হসপিটালে আসতে দেরি হবে।
খাওয়া শেষে ঔষধ খেয়ে ইশান নিজের ঘরে চলে যায়। ঘরে যাওয়ার আগে মাকে বার বার বলে গেছে যাতে চিন্তা না করে সে ঠিক আছে। খুব ক্লান্ত লাগছে নিজেকে আজ। ঘুম প্রয়োজন গায়ে পরিহিত টি-শার্টটা সাবধানে খুলে সোফায় রেখে দেয়। ফ্রেশ হওয়ার শক্তিটুকু পাচ্ছে না। তাই না ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পড়ে। শোয়ার সাথে সাথে রাজ্যের ঘুম এসে হানা দেয় দু চোখে। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বিরবির করে বলে।
–আজ আমার স্বপ্নে এক বার হলেও আসিস তীর। তর জন্য আমি অপেক্ষা করবো। খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখতে চাই তকে নিয়ে আমি। যে স্বপ্নটা বাস্তবে পরিণত হবে। খুব বেশি ভালোবাসি তকে খুব। যার পরিমাণ আমি কখন তকে বলে বুঝাতে পরবো না। জানি না তুই আমার হবি কি না! তবে তকে নিজের করার জন্য যা করা দরকার সব করবো সব।
#চলবে________
#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৬
সময় আর স্রোত কারো জন্য থেমে থাকে না। তারা তাদের নিজের গতিতে প্রবাহিত হতেই থাকে। এর মাঝে দেখতে দেখতে কেটে গেছে তিন তিনটে দিন। এই তিন দিনে অনেক কিছু বদলে গেছে। এই তিন দিন তীর বাড়িতেই ছিলো বাইরে বের হয় নি অসুস্থতার জন্য। মাঝে মাঝে পড়ার বিষয় জানার জন্য ইশার সাথে দেখা করতে ফরাজী ভিলাতে এসেছে। ইশানও অফিসে যেতে পারছে না। মায়ের কড়া আদেশ যত দিন না পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছে ততদিন বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না। অগত্য ইশানও মায়ের কথা শুনতে বাধ্য হয়। তাই বাড়িতে বসেই অফিসের সকল কাজ করে। যে কাজ গুলো বেশি ইম্পরট্যান্ট সেগুলা বাবাই অফিসে গিয়ে দেখে। তাই বাড়িতে থাকার কারনে ইশান তীরের দেখা হয়। কিন্তু যত বারেই ইশান তীরের মুখোমুখি হয়েছে ততবারই ইশানকে ইগনোর করেছে তীর। ইশান যত বার কথা বলতে চেয়েছে তত বারেই কোনো না কোনা বাহানা দিয়ে তীর কেটে পড়েছে। ইশানের যেন সহ্য হচ্ছে তীরের এই ইগনোর। তাই আজকে ইশান নিজের কাছে শপথ নিয়ে রেখেছে আজকে যে করেই হোক তীরকে ওর কথা শুনতে হবেই। পারলে হাত পা বেঁধে রেখে তার কথা শুনাবে।
সন্ধ্যার দিকে তীর ফরাজী ভিলাতে আসে। আগামীকাল থেকে কোচিংয়ে যাওয়া শুরু করবে তার পড়াই ইশার কাছ থেকে নিতে এসেছে। তীরকে দেখে নেহা বেগম বলে।
–তীর এখন কেমন আছিস?
তীর মুচকি হেসে জবাব দেয়।
–ভালো আছি আন্টি। তুমি কেমন আছো?
–ভালো আছি।
–ইশু কোথায়?
এমন সময় ইশা কিচেন থেকে চিৎকার করে বলে।
–তীর তুই আমার রুমে যা আমি কফি বানাছি সেটা নিয়েই একটু পর আসছি।
–আচ্ছা।
অন্যদিকে ইশান কফি নেওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে নিচে আসতে নিলে ইশার কথা কর্ণপাত হতেই পা জোড়া থেমে যায়। তীরের আসার কথা শুনে ইশান আবারও নিজের ঘরে চলে যায়। ইশানের ঘর পেঁরিয়ে তারপর ইশার ঘরে যেতে হয়। তাই ইশার ঘরে যাওয়ার আগেই তীরের পথ আটকে দিবে ইশান আর তার সমস্ত কথা শুনতে হবে।
ইশান পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছে কখন তীর যাবে এই পথ দিয়ে আর কখন ও পথ আটকাবে। তীর ধীর পায়ে হেঁটে আসছে। আজকেও যদি ইশান ওর সামনে আসে তাহলে প্রত্যেক বারের মতো আজকেও ইগনোর করবে।
তীর যেই ইশানের ঘর পার হতে নিবে তখনেই ইশানের কন্ঠ ভেসে আসে। কিন্তু তীর ইশানকে পাত্তা না দিয়ে হেটে চলছে। ইশানের রাগ যেন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেচ্ছে তাই তীরের সামনে এসে দ
দাঁড়িয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে।
–তকে আমি দাঁড়াতে বলেছি কথা কানে যায় না।
তীরও সাথে সাথে উত্তর দেয়।
–না যায় না।
–খুব বেশি সাহস বেড়ে গেছে তর ইদানিং দেখা যায়।
তীর নিঃশব্দে হেসে উত্তর দেয়।
–সাহসটা বরাবর আমার সবসময় ছিলো। কিন্তু সেটা প্রয়োগ করতাম না আমি।
–ওহ রিয়েলি! তা এখন সাহস প্রয়োগ করার কারনটা কি জানতে পারি?
–আপনাকে তা বলতে আমি বাধ্য নই। সামনে থেকে সরুন।
তীর ইশানের পাশ কেটে চলে যেতে নিলেই ইশান আবেগময় কন্ঠে বলে উঠে।
–তীর!
সেই ডাক যেই ডাক তীরের ভেতরের সব কিছু ওলট পালট করে দেয়। না চাওয়া শর্তেও পা দুটি থমকে যায়। ইশান তীরের অস্তিত্ব টের পেয়ে বলে।
–তর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
তীর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে।
–আমার কোনো কথা নেই আপনার সাথে।
ইশান আবার তীরের মুখোমুখি হয়ে বলে।
–কিন্তু আমার কথা আছে। যত বারেই আমি তর সাথে কথা বলতে চাইছি তত বারেই আমাকে ইগনোর করে যাচ্ছিস কেন? হোয়াই?
তীর ইশানের দিকে না তাকিয়ে বলে।
–কারন আপনার কথা শুনতে আমি ইন্টারেস্টেড নই।
ইশান কোমল স্বরে বলে।
–প্লিজ তীর একটি বার আমার কথাটা শুন।
ইশানের কোমল কন্ঠ শুনে তীরের ছোট হৃদয়টা কেঁপে উঠে। চলে যেতে মন চাইছে কিন্তু ইশান কি বলতে চায় সেটাও শুনতে মন চাইছে। দু টানায় পড়ে গেছে তীর কি করবে ভেবে পাচ্ছে না! এক বার ভাবচ্ছে চলে যাবে তো আরেক বার ভাবচ্ছে ইশানের কথা শুনবে। তাই শেষমেষ সিদ্ধান্ত নিলো ইশানের কথা শুনবে। তীর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে।
–বলুন! কি বলবেন?
ইশান স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। এ্যাট লাস্ট মেয়েটা তার কথা শুনতে রাজি হলো। কিন্তু সে কি তার মনের কথা বলতে পারবে না। সেটা ভেবে ইশান ঠোট দুটো গোল করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে আমতা আমতা করে বলা শুরু করে।
–আ.. স.. লে আমি,, আমি তকে বলতে চাইছি যে…
তীরের ছোট মনটা ভয়ে কেঁপে উঠে। কি বলবে তাকে ইশান? তার সন্দেহ কি তবে সত্যি হতে চলেছে। বুকের ভেতরে মনে হচ্ছে যেন কেউ ড্রাম বাজাচ্ছে তার শব্দ নিশ্চিত ইশান শুনতে পাবে কিছুক্ষন পরেই। জিভ দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নেয় তীর। শুকনো ঢোক গিলে। ওড়নার কোণা দু হাত দিয়ে চেঁপে ধরে। নিঃশ্বাসের গতি ঘন হয়ে আসছে বুকের কাঁপন বাড়ছে ক্রমশ। লজ্জা লাগছে ভীষন ইশানের দিকে মুখ তুলে তাকাতে কিন্তু তারপরও তীর আঁড় চোখে ইশানের দিকে তাকায়। ঘন পাঁপড়ি জোড়া দু তিন বার ঝাঁপটায়। বেচারা ইশানকে খুব নার্ভাস লাগছে। বার বার কথা বলার সময় ঠোঁট জোড়া চেপে ধরছে। মনে হচ্ছে যেন বড় কোনো যুদ্ধে নেমেছে। ইশানকে এই প্রথম এমন রুপে দেখছে তীর এর আগে এমনট কখনো দেখেনি। দেখবে কি করে দেখার সুযোগেই আসে নি কখনো। কিন্তু আজ এসেছে সেই মহেন্দ্রক্ষণ। রাগী, গম্ভীর, রগচটা লোকটা যেন নিমিষেই বদলে অন্য একটা রুপে চলে গেছে। তীরের ভীষন হাসি পাচ্ছে এতক্ষন লজ্জা পাওয়াটা যেন নিমিষেই উবে গেছে ইশানের এমন বেহাল অবস্থা দেখে। একটা সামন্য কথা বলার জন্য এতটা নার্ভাস হওয়ার কি আছে ভেবে পাচ্ছে না তীর। ইশানের এমন তোতলানো দেখে তীর বলে।
–কি বলতে চাইছেন বলুন!
–আসলে তীর আমি তকে….
তীর মিনমিন করে বলে।
–আমাকে কি?
ইশান দু হাত দ্বারা চুল গুলা পিছনে টেলে দিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে কিছু একটা বলতে যাবে ওমনি ইশা চলে আসে। ইশার কন্ঠস্বর শুনে ইশান আশাপাশে মাথা দুলিয়ে বলে উঠে।
–কিছু না যা।
তীর বেক্কেল হয়ে যায়। এই লোকটা কি তার মনের কথা বলবে না কোনো দিন, নাকি সারা জীবন এভাবে চেঁপে রাখবে। এতটা ভীতু কি করে হতে পারে ইশান ভেবে পাচ্ছে না তীর। দেখে তো মনে হয় সাহসের বস্তা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু না আসলে একটা ভীতুর ডিম। যে নিজের মনের কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না। ইশান নিজের ঘরে দ্রুত পায়ে চলে যেতে নিলে ইশা বলে।
–ভাইয়া তোমার কফিটা নিয়ে যাও।
ইশান ট্রে-র উপর থেকে কফির মগটা নিয়ে টাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। ইশা তীরের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে।
–কি রে ভাইয়া কিছু বলল?
–নাহ কিছু বলে নি শুধু তোতলে গেছে।
–কিহ ভাইয়া তোতলেছে এত নার্ভাসেই ছিলো।
এমন সময় নেহা বেগম উপরে উঠে দুটোকে এমন ফিসফিস করে কথা বলতে দেখে বলে।
–কি রে এখানে কি করছিস তরা দুটো?
ইশা মেকি একটা হাসি দিয়ে বলে।
–কিছু না মা। তীর চল ঘরে যাই।
ওরা চলে যেতে নেহা বেগম ভ্রুদ্বয় কুচকে বলে।
–এরা আবার কি গন্ডগোল পাকাছে।
______
ইশান দরজা বন্ধ করে ডেস্কের উপরে কফির মগটা রেখে বিরবির করে উঠে।
–এতটা নার্ভাস এতটা নার্ভাস হওয়ার কি ছিলো এখানে! সামান্য একটা কথা বলতে পারলাম না। মনে হচ্ছিলো যেন পৃথিবীর সকল অসস্তি আমার উপরে ভর করেছে।
ইশান ধপ করে বেডে বসে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে। পরক্ষনে আবার শুয়া থেকে উঠে বসে বুকের বা পাশটায় হাত রাখে। কিছুক্ষন আগে মনে হচ্ছিলো যেন হার্টটা এক্ষুনি বেরিয়ে যাবে। ইশান আনমনে বলে উঠে।
–এতটা দুর্বল কি করে হতে পারি আমি। সত্যি কি ভালোবাসার মানুষটার সামনে দুর্বল হয়ে পড়ে সকল প্রেমিক পুরুষ।
_____
–এত দিন ইগনোর করার পরও যখন ভাইয়া রেগে তকে কিচ্ছু বলতে পারে নি তাহলে এবার মেইন চাল চালতে হবে।
তীর অবাক হয়ে ইশাকে প্রশ্ন করে।
–এবার কি চাল চালবি?
–সকাল হওয়ার অপেক্ষা কর। কালকের মধ্যে যদি ভাইকে দিয়ে স্বীকার না করিয়েছি তকে যে ভালোবাসে তার কথা তাহলে আমার নামও ইশা নয়।
#চলবে______
#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৭
রাত বাজে বারটা একুশ। ইশান সারা ঘর জুড়ে পায়চারি করছে একবার এদিক তো ওদিক আর কিছু একটা নিয়ে বিরিবর করছে। ইশানের মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে কি করে তীরকে তার মনের কথা বলবে। এক বার ভাবচ্ছে চিঠি লিখে জানাবে কিন্তু এর পরক্ষনে ভাবচ্ছে চিঠি তো আদি কালে প্রেমিক তার প্রেমিকাকে দিতো। কিন্তু এখন কি সেই আগের যুগ আছে নাকি যে চিঠির মাধ্যমে প্রেম নিবেদন করবে। কিন্তু তীরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে গেলেই যে সব ওলট পালট হয়ে যায়। কি এক জ্বালায় পড়লো বেচারা। না পারছে সইতে আর না পারছে মুখ ফুটে কিছু বলতে। ইশান বা হাতটা একটু টান করতেই ব্যাথায় উফ করে। ইশান বেডে বসে ব্যান্ডেজের উপর অন্য হাতটা দিয়ে চেঁপে ধরে রাখে কিছুক্ষন। পাশেই পড়ে থাকা সেল ফোনটা হাতে তুলে নেয় কয়টা বাজে দেখার জন্য। সময় দেখে ফোনটা বেডে রাখতে যাবে সাথে সাথে বেজে উঠে ফোন। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে রিফাত কল করেছে। ইশান ফোন পিক করে বলে।
–এত রাতে কল দিলি কেন?
–কেন দিতে পারি না আমি বুঝি তকে কল!
–এত ড্রামা না করে বল কেন কল দিয়েছিস?
–বলেছিস?
–কি বলবো?
–আরে তীরকে তর মনের কথা বলেছিস? আজকে না বলার কথা ছিলো!
–নাহ বলে নি মানে বলতে পারি নি।
রিফাত অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে।
–আমি তো ভেবেছিলাম এখন হয়তো তুই তর পুচকে প্রেয়সীর সাথে প্রেমালাপ করছিস। কিন্তু এখন যা শুনলাম তুই তর মনের কথা এখনও বলিস নি মেয়েটাকে। তা দোস্ত তুই কবে বলবি কথাটা?
–যখন মন চাইবে তখন বলবো।
–হো! তীরের বিবাহ হয়ে গেলে তারপর বলবি। আর তীরের সো কল্ড হাসবেন্ড এসে তর নাক বরাবর একটা ঘুষি দিবে।
–এই তুই ফোন রাখ তো। তর ফালতু কথা শুনতে ভালো লাগছে না আমার।
–আরে আরে আমার কথাটা শুন। একদম ফোন কাটবি না আমার কথাটা আগে শুন।
ইশান বিরক্তবোধ করে। একে তো তীরের চিন্তায় মাথা কাজ করছে না। তার উপর এখন এই আধ পাগলটা মধ্যরাতে তাকে ফোন করে তার মাথাটা খারাপ করতে চাইছে। ইশান তারপরও বলে।
–তাড়াতাড়ি বল কি বলবি!
–শুন তকে আমি একটা সাজেশন দেই কি করে তীরকে ভালোবাসার কথা বলবি। শুন….
–এত শুন শুন না করে মেইন কথাটা বল।
–আরে চেঁতোস ক্যান? বলছি তো তাহলে শুন, প্রথমে তুই তর ছয়এিশ ইঞ্চি বুকটা ফুলিয়ে একজন সাহসী বীরের মতো হয়ে তীরের সামনে গিয়ে দাঁড়াবি আর টুস করে বলে দিবি “তীর আমি তকে খুব ভালোবাসি”। ব্যস্ হয়ে গেলো কেল্লাফাতে।
–হয়েছে তর?
–আমার আবার কিহ হবে?
–আমাকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তর? যদি হয়ে থাকে তাহলে তর মুখটা বন্ধ করে ফোনটা রাখ।
–শালা তকে ভালো কথা বললেও তুই শুনিস না।
ইশান রেগে বলে উঠে।
–এই তকে না আমি বলেছি আমাকে শালা বলে ডাকবি না।
–একশো বার ডাকবো তর কোনো সমস্যা? শালা নিজের মনের কথা বলতে পারিস না একটা পুচকে মেয়েকে আর এখন এসেছে আমার সাথে রাগ দেখাতে।
–রিফাতের বাচ্চা তকে সামনে পেলে তর খবর করে ছাড়বো কিন্তু আমি।
–ওকে দেখা যাবে।
ইশানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিলো রিফাত। না হলে দেখা যাবে কলের মাঝেই ইশান রিফাতের গলা চেঁপে ধরেছে। এই ছেলেকে একদম বিশ্বাস করে না রিফাত খুব ডেঞ্জেরাস একজন মানুষ।
________
–দোস্ত ভয় লাগছে তোর ছোট ভাই যেই ডেঞ্জেরাস লোক ধরা খেলে আমার গর্দান আর গর্দানের জায়গাতে থাকবে না। মাটিতে গড়াগড়ি খাবে।
ইশা রাহুলের কথা শুনে রাহুলকে আশ্বাস দিয়ে বলে।
–আরে কিচ্ছু হবে না। তুই মুখে কালো মাস্ক আর হেলমেট পড়ে থাকবি তাহলে তকে ভাইয়া চিনতে পারবে না।
ইশার কথা শুনে তীর বলে।
–কিন্তু তারপরও ভয় লাগছে। এটা একটু রিস্ক হয়ে যায় না ব্যাপারটা।
–ঠিক আছে এত যখন তোর ভয় লাগছে তাহলে আর ভাইয়ার মুখ থেকে তোর ভালাবাসার কথা শুনতে হবে না। আমি ভাইয়াকে কল করছি না যা।
রাহুল ইশার কথা শুনে বলে।
–হে হে এটাই বেস্ট দরকার নাই এসব করার। আমি বরং বাড়ি যাই। মা আমার জন্য অপেক্ষা করছে বোধ হয়।
ইশা রাহুলের দিকে তাকিয়ে বলে।
–একটা দিবো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক এখানে। মা বোধ হয় অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
ইশা শেষের কথাটা ভেঙ্গিয়ে বলে আবার বলা শুরু করে।
–সবসময় তো বাইরে বাইরে থাকিস জানি না বুঝি আমরা। এখন মা মা করছিস। টাকা গুলা যদি ফেরত না দিতে চাস তাহলে এই কাজটা করে দে।
রাহুলের মুখটা চুপসে যায়। ইশা আর তীরের কাছ থেকে ধার নিতে নিতে প্রায় চার হাজার টাকা হয়ে গেছে। আর এখন যদি একটা কাজ করে দেয় তাহলে এই টাকা আর রাহুলকে ফেরত দিতে হবে না। তাই বেচারা বাধ্য হয়ে কাজটা করতে রাজি হয়েছে। ইশা তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।
–দেখ তীর ভাইয়ার মুখ থেকে যদি ভালোবাসার কথাটা শুনতে চাস তাহলে এই রিস্কটা নিতেই হবে আমাদের। আমি চাই না আমার বেস্টু আর আমার ভাই কষ্ট পাক। আমি সকালে দেখে এসেছি ভাইয়া কেমন মনমরা হয়ে বসে আছে। কিছু একটা নিয়ে প্রচুর টেনশনে আছে। হয়তো তকে নিয়েই টেনশনে আছে।
ইশানের বিষয়ে এমন কথা শুনে তীরের মুখে চিন্তার চাপ ফুঁটে উঠে। সত্যি তো লোকটা গত কাল কত চেষ্টা করলো কিন্তু মুখ ফুঁটে কিচ্ছুটি বলতে পারলো না শুধু আমতা আমতা করে গেল।
–তুই সিউর এমনটা করলে ওনি স্বীকার করবেন।
–আলবাত স্বীকার করবে দেখে নিস।
রাহুল বলল।
–ওই তর ভাই কি সত্যি তীরকে ভালোবাসে।
–হুমমম।
–বিশ্বাস হয় না।
ইশা রাহুলের পিঠে কিল দিয়ে বলে।
–তর বিশ্বাস না করলেও চলবে। তকে যে কাজটা দিয়েছি সেটা ঠিকঠাক মতো করবি।
রাহুল কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে বলে।
–যদি ধরা পড়ে যাই তাহলে কি হবে?
–ধরা পরবি না বললাম তো। যদি ভাইয়া তর পিছু নেয় তাহলে চিপা রাস্তায় ঢুকে যাবি বাইক নিয়ে। ভাইয়া তো আর তার ইয়া বড় গাড়ি নিয়ে ছোট রাস্তায় ঢুকতে পারবে না।
রাহুল ঠোঁট উল্টিয়ে বলে।
–আচ্ছা বুঝলাম।
কিন্তু কিন্তু মনে মনে বলে।
–আমি ফাঁইসা গেছি রে মাইনকার চিপায়। টাকা গুলার জন্য শুধু টাকা গুলার জন্য এই রিস্কমার্কা কাজটা করা না হলে বাপের জন্মেও এই কাজ করতাম না।
ইশা বলল।
–শুন যেভাবে যেভাবে করতে বলেছি সেভাবে সেভাবে করবি।
–করমুনেআগে তুই তোর ভাইকে ফোন লাগা আর বল আসার কথা। দেখি আসে কি না।
–আসবে আসবে আমি জানি।
_____
ইশান নিজের ঘরে বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে। এমন সময় ইশার কল আসে। ইশান কল পিক করে বলে।
–হুম বল?
–কোথায় তুমি ভাইয়া?
–কোথায় আবার বাড়িতেই আছি।
–ভাইয়া আমাকে একটু নিতে আসবে কোচিং থেকে।
–কেন ইকবাল চাচা যায় নি তকে আনতে?
–ইকবাল চাচা তো অসুস্থ তাই আসতে পারবে না।
–ওও! কিন্তু কালকেই না চাচা ভালো ছিলো।
–অসুখ কি বলে কয়ে আসে নাকি ভাইয়া।
–তাও ঠিক কিন্তু কি হয়েছে চাচার?
–পেট খারাপ।
ইশান অবাক হয়ে বলে।
–পেট খারাপ। কই আমাদের তো কিচ্ছু…
ইশানকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ইশা বলে।
–উফফ ভাইয়া এত প্রশ্ন করো কেন তুমি? তোমার যদি আসতে এতটাই সমস্যা হয় তাহলে আমি আর তীর রিক্সা করে চলে আসছি।
ইশান কিছু একটা ভেবে তড়িৎ বেগে বলে।
–এই না না আমি আসছি তরা দাঁড়া কিছুক্ষণ।
ইশান ল্যাপটপ বন্ধ করে সোফার এক সাইটে রেখে গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে পরে। এই সুযোগ তীরকে একা পাওয়ার এই সুযোগের সৎ ব্যবহার করতেই হবে ইশানকে যে করেই হোক।
অন্য দিকে ইশা বাঁকা হেসে বলে।
–দেখলি আমার কথা মিললো তো ভাইয়া আসছে।
তীর ইশার হাত ধরে বলে।
–ইশু রে ভয় করছে।
–ভয় পাস না। ভালোবাসায় একটু রিস্ক নিতেই হয় বুঝলি। তাই বুকে সাহস সঞ্জয় কর।
রাহুল বলল।
–সাহস কি আর বলে কয়ে আনা যায় নাকি। কি যে হবে আমার এক আল্লাই ভালো জানেন।
–রাহুলের বাচ্চা এত ভাব না ধরে তাড়াতাড়ি যা এখান থেকে।
–হুমমম! যাচ্ছি রে বাবা।
রাহুল তার বাইকে উঠে তীরকে ইশারা করে বাইকে উঠার জন্য। তীরও সাবধানে বাইকে উঠে বসে। ইশা বলে।
–শুন আমি তদের মেসেজ দিয়ে সব ইনফর্মেশন দিবো। আমি যখন বলবো ওই সময় তরা চলে আসবি কেমন।
–আচ্ছা।
তীর আর রাহুল চলে যায়। ওরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পরেই ইশানের গাড়ি এসে থামে ইশার সামনে। ইশা ইশানের গাড়ি দেখে মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে বসে। ইশান ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে ইশার দিকে। ভাইয়ের এমন চাওনি দেখে ইশা বলে।
–কি হয়েছে ভাইয়া? এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
–তুই একা কেন? তীর কোথায়?
ইশা নিজের মনে সাহস সঞ্জয় করে দু ঠোঁট গোল করে তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে।
–ভাইয়া! তীর তো চলে গেছে।
–চলে গেছে মানে! কোথায় চলে গেছে?
–আর বলো না ভাইয়া একটা ছেলে বাইকে করে কোথা থেকে আসলো তীরের সামনে আর ও হেসে হেসে বাইকে উঠে চলে গেলো। কত ডাকলাম আমি আমার কথা পাত্তাই দিলো না।
–ছেলে! কোন ছেলে? কোথাকার ছেলে?
–আমি চিনি না ভাইয়া। আমার মনে হয় ওর বয়ফ্রেন্ড হবে।
ইশান ভ্রু কুচ করে বলে।
–বয়ফ্রেন্ড!
–হুমম কিছু দিন যাবৎ দেখছি তীর কার সাথে যেন ফোনে কথা বলে ফিসফিস করে। আমি জিঙ্গেস করলেই বলে কেউ না।
ইশানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। নাকের পাটা ফুলে আসছে রাগে। কপালের রগও ফুলে উঠেছে রাগে। গাড়ির স্টিয়ারিং দু হাত দ্বারা চেপে ধরেছে। তীরের বয়ফ্রেন্ড আছে ইশানের যেন বিশ্বাসেই হচ্ছে না ইশার কথাটা। তাই দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
–তুই সত্যি বলছিস!
–আমি যা দেখেছি তাই বলেছি ভাইয়া।
ইশান জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করে বলল।
–ঠিক আছে আগে বাড়ি চল।
–হুমমম চলো।
#চলবে_________
ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা সরুপ দেখবেন।