প্রনয়ের দহন পর্ব-১৯+২০+২১

0
750

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৯

প্রাপ্ত বয়স্ক একজন পুরুষের সামনে যদি কোনো নারী নিজেকে এমন মোহনীয় আর আবেদনময়ী করে উপস্থিত করে তাহলে যেকোনো ছেলেই নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে আর সে নারী-টার জায়গায় যদি হয় তার ভালোবাসার মানুষ, একান্ত মনের মানুষ তাহলে তো মনের ভেতরের বেসামাল সকল অনুভুতিরা সজাগ‌ হবে এটাই নিশ্চিত।

ঠিক যেমন ইশান নিজের ভালোবাসার মানুষটার এমন কান্নামিশ্রিত মুখশ্রী, ফুলো ফুলো চোখ, টমেটোর মতো লাল হয়ে যাওয়া গাল দুটো দেখে নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছে।

ইশান তীরের মায়াবী মুখশ্রী নিজের দু হাত দ্বারা আবদ্ধ করে নেয়। কিছুক্ষন ধ্যান মেরে তীরের রক্তিম রাঙা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থেকে তীরের চোখের দিকে তাকায়। বুঝার চেষ্টা করে তীর কি চায় কিন্তু মেয়েটা চোখ বন্ধ করে আছে তবে কি তীরও ইশানের ছোঁয়া পেতে চায়।

আচমকা তীরের গাল বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। ইশান নিজের বুড়ো আঙুল দিয়ে সেই জল পরম যত্নে মুজে দেয়। ইশানের ছোঁয়া যেন তীরের গায়ে কাটার মতো বিধছে। গলা শুকিয়ে আসছে, কান দিয়ে গরম ধোয়া বের হচ্ছে। সারা শরীর ক্ষনেক্ষনে কেঁপে‌ উঠছে নাম না জানা ভয়ে। তীরের এমন কাঁপুনি যেন ইশানকে আরও উন্মাদ করে‌ দিচ্ছে। মেয়েটা ইশানকে কেন এভাবে পাগলের মতো কাছে টানছে বাধা দিচ্ছে না কেন?

ইশান এবার ধৈর্য হারা হয়ে আস্তে আস্তে করে নিজের ঠোঁট জোড়া বাড়িয়ে দেয় তীরের কাঁপাকাঁপা অধর জোড়ার দিকে। তীরের মুখের উপর‌ ইশানের গরম নিশ্বাস আছরে পড়ছে তাতে যেন সারা শরীর বরফের ন্যায়ে জমে গেছে। শত চেষ্টা করেও নড়াতে পারছে‌ না পা দুটো, আটকে গেছে যেন ফ্লোরের সাথে। নিশ্বাসের গতি ক্রমশ ভারি হয়ে আসছে তীরের, পেটের ভেতরের রঙিন প্রজাপতিরা সুরসুরি দিয়ে যাচ্ছে ক্ষনেক্ষনে। বা হাতে থাকা কানের দুল জোড়া জোরে চেপে ধরে তীর যার জন্য হাতের তালুতে গেঁথে গেছে দুল জোড়ার ধারালো কোনদ্বয়। কিন্তু তাতে তীরের কোনো হেলদোল নেই সে তো ভাসছে নতুন অনুভুতির জোয়ারে। যে জোয়ার তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে বহুদুর।

ইশান যেই তীরের অধরে নিজের অধর মিলিত করতে যাবে ওমনি প্যান্টের পকেটে থাকা ইশানের ফোনটা বেজে উঠে। চারদিকের পিনপিনে নিরবতা যেন নিমিষেই কোলাহলে পরিনত হলো। ইশান নিজের সম্মতি ফিরে পেয়ে নিজেকে তীরের এতটা কাছাকাছি দেখার সাথে সাথে তড়িৎ বেগে তীরের কাছ থেকে ছিটকে দুরে সড়ে দাঁড়ায়। এটা কি করতে যাচ্ছিলো ইশান। এতটা ইউক কি করে হতে পারে ইশান ভেবে পাচ্ছে না। এতো দিন যেভাবে নিজের আবেগ, ভালোবাসা শামুকের মতো শক্ত গোলসের মাঝে বন্দি করে রেখেছিলো সেটা কিনা আজ এতো সহজে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলো। তীরকে এখন কী জবাব দিবে ইশান ভেবে পাচ্ছে না মেয়েটা যে এখনও টাই দাঁড়িয়ে আছে। কি করে পারলো এমন একটা বাজে কাজ করতে ইশান মাথায় আসছে না। নাহ পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই ইশানকে এই ঘর থেকে প্রস্থান করতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ ইশান ফ্লোর থেকে ফাইলটা তুলে তীরের দিকে একবারের জন্য না তাকিয়েই ঝড়ের গতিতে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। যাওয়ার আগে দরজা শব্দ করে যায় যাতে তীর নিজের সম্মতি ফিরে পায়।

দরজার শব্দে তীর নিজের সম্মতি ফিরে পেতেই হাটু ভাঁজ করে বসে পড়ে ফ্লোরে, বসেই ডুকরে কেঁদে উঠে। কোনো জানি বুকের মাঝে খুব ব্যাথা অনুভব করছে। কি করতে চাচ্ছিলো তীর এটা কেন বাঁধা দিলো না ইশানকে। নিজের কাছে নিজেকে এখন খুব ছোট লাগছে। কি করে এখন ইশানের সামনে পড়বে ভাবতেই লজ্জায় গাঁ শিউরে উঠছে। কি ভাববে এখন লোকটা তাকে নিশ্চয়ই খুব বাজে মনমানসিকতার একটা মেয়ে ভাববে। কিছু ভাবতে পারছে তীর মাথা ভার হয়ে আসছে ওর। এই ঘর থেকে এখন বের হতে হবে যত সম্ভব তাড়াতাড়ি।

তীর বা হাত ফ্লোরের উপরে রেখে যেই উঠতে যাবে ওমনি ব্যাথায় কুকড়ে উঠে। বাথ্যায় চোখ মুখ খিচে বা হাতটা সামনে ধরতেই তীর বড় বড় চোখ করে তাকায়। রক্তে লাল হয়ে আছে হাতের তালু। ভয়ে গুলা শুকিয়ে আসছে এতটা বাজে ভাবে কানের দুল জোড়া গেঁথে গেছে কখন বুঝতেই পারলো না। এবার কি হবে এগুলা হাত থেকে তুলতে গেলে তো আরও রক্ত বের হবে। কিন্তু তারপরও এগুলা হাত তুলতে হবে কেউ দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাই আস্তে আস্তে করে দুল জোড়া হাতের তালু থেকে তুলতেই রক্ত বের হওয়া শুরু হয়। তীর সাথে সাথে গলায় থাকা ওড়নাটা দিয়ে হাতটা চেপে ধরে যাতে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। রক্তের কয়েকটা ফোঁটা ফ্লোরেও পড়ে।

তীর বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে ওয়াশরুমে যায়। ঊদ্দেশ্য কানের দুল জোড়া আর হাত, মুখ ধুয়ো। যাতে কেউ বুঝতে না পারে কি হয়েছে। ওয়াশরুম থেকে বের হয় তীর, কিন্তু হাত থেকে রক্ত পড়া কমছে না তাই ওড়না দিয়ে আবার পেছিয়ে রেখেছে হাত আর কানের দুল জোড়া রেখে দেয় ইশানের টেবিলের উপর। চাইলে দুল জোড়া তীর নিয়ে যেতে পড়তো কিন্তু নিবে না এই দুল জোড়া ইশানকেই দিয়ে গেলো।

তীর আর ইশার সাথে দেখা করে না। ইশার সাথে দেখা করার তেমন মনমানসিকতা নেই এখন। তাই তাড়াতাড়ি ইশানের রুমে থেকে বের হয়ে সিড়ি বেয়ে ড্রয়িং রুম পেরিয়ে যেই তীর বাড়ি থেকে বের হতে নিবে তখনেই নেহা বেগম বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

–তীর কখন এসেছিস তুই? আর এমন তাড়াহুড়ো করে যাচ্ছিস কেন পড়ে যাবি তো।

তীর সাথে সাথে স্টান মেরে দাঁড়িয়ে যায় আর হাতটা সাবধানে লুকিয়ে ফেলে। নেহা বেগমের দিকে তাকিয়ে জোড়া পূর্বক হাসি দিয়ে বলে।

–একটু আগে এসেছিলাম আন্টি।

–ওও ইশার সাথে দেখা হয়েছে?

এবার কি বলবে তীর মাথা কাজ করছেনা ইশার সাথে তো দেখা হয় নি। বরং যা হয়েছে ওর সাথে সেটা নেহা বেগমকে কোনো দিন বলতে পারবে না। তীর ঢোক গিলে বলে।

–না মানে আন্টি আসলে ওর সাথে দেখা হয় নি আমার। ওর ঘরে যখনেই ডুকতে যাবো তখনেই একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ মন পড়ে গেছে যেটা এখন না করলেই নয় তাই তাড়াতাড়ি করে চলে যাচ্ছি আর কি।

নেহা বেগম সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।

–ও আচ্ছা। কিন্তু তর চোখ মুখ এমন লাগছে কেন?

–ও কিছু না আসলে আর কয়েক দিন পরে বোর্ড পরীক্ষা তো তাই একটু টেনশনে আছি।

–ও আচ্ছা।

–তাহলে আসি এখন আমি।

–ঠিক আছে যা।

তীর যেতেই নেহা বেগম বলে উঠে।

–কিছু তো একটা হয়েছে? যেটা তীর আমার কাছ থেকে লুকাছে। ইশানকেও দেখলাম কেমন তাড়াহুড়ো করে চলে গেছে আর এখন তীর। ওদের মাঝে কিছু তো একটা হয়েছে? কথা বলতে হবে আমাকে ইশানের সাথে যত সম্ভব তাড়াতাড়ি।

_______

হাই স্প্রিডে গাড়ি চালাচ্ছে ইশান। মাথায় ঘুড়ছে একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা। নিজেকে এখন বার বার দোষারুপ করে যাচ্ছে কেন গিয়েছিলো বাড়িতে এসময় কেন? আর কেনই বা নিজেকে আটকাতে পারলো না? কেন এভাবে অনুভুতির সাগরে নিজেকে ভাসতে দিলো?

ফাঁকা একটা জায়গাতে এসে গাড়ি থামায় ইশান। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে গেছে দ্বিগুন। চোখ দুটো বন্ধ করে ড্রাইভিং সিটে মাথাটা হেলিয়ে দেয়। কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। এর মাঝেই ইশানের পিএ আবির কল করে। মিটিং এর সময় হয়ে গেছে কিন্তু ইশান চলে এসেছে শহরের বাইরে। বার বার কল করেই যাচ্ছে আবির কিন্তু ইশান পিক করছে না। শেষের কলটা ইশান পিক করতেই ফোনের ওপাশ থেকে আবির তাড়াহুড়ো কন্ঠে বলে।

–স্যার কোথায় আপনি এদিকে তো সিকদার সাহেব অধৈর্য হয়ে পড়েছে আপনার অপেক্ষা করতে করতে। হয়তো এখন রেগে চলেও যেতে পারে।

–আসছি আমি ওনাকে আর দশ মিনিট অপেক্ষা করতে বলো।

–ওকে স্যার। আমি চেষ্টা করছি।

ইশান কল কেটে ঠোঁট দুটো ফাঁকা করে নিশ্বাস ছেড়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। অন্য দিন হলে আজকে এই মিটিংটা বাতিল করে দিতো কিন্তু এখন এই মিটিংটার উপরে কোম্পানির ভালো মন্দ নির্ভর করছে। তাই এক প্রকার মনে উপর জোর ঘাটিয়ে এই মিটিংটাতে সামিল হতে হবে ইশানকে।

#চলবে______

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২০

ঘড়ির কাঁটায় রাত বারটো একুশ বাজে ইশান তখন বাড়ি ফিরে। বাড়ির কারোর ঘুমের ডির্স্টাব যাতে না হয় সে জন্য নিজের কাছে রাখা চাবি দিয়ে তালা খুলে বাড়িতে ডুকে। বাড়িতে ডুকে দরজা লাগিয়ে ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই পা জোড়া থেমে যায় ইশানের। সামনের সোফাতে নেহা বেগম তার মা বসে আছে। ইশান মাকে এত রাত পর্যন্ত সজাগ থাকতে দেখে মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলে।

–মা তুমি এখনো জেগে আছো যে।

–তর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।

–কিন্তু কেন? আমি তো বলে গিয়েছি আমার আসতে লেইট হবে। তাহলে কেন শুধু শুধু জেগে আছো। শরীর খারাপ করবে তো।

নেহা বেগম নরম স্বরে ছেলেকে আবদার করে বলে।

–আমার পাশে বসবি একটু ইশান।

মাকে এমন নরম কন্ঠে কথা বলতে দেখে মায়ের পাশে বসে বিচলিত কন্ঠে বলে।

–কি হয়েছে মা? তোমার শরীর ঠিক আছে তো।

–আমি ঠিক আছি ইশান কিন্তু তুই ঠিক আছিস তো বাবা।

মায়ের এমন কথা শুনে থমকে যায় ইশান। কয়েক পল মায়ের দিকে তাকিয়ে নজর ফিরিয়ে নেয়। কি বলবে মাকে এখন কি বলা উচিত তার, সে কি বলে দিব সে যে একদম ঠিক নেই। তার হৃদয়ে যে #প্রনয়ের_দহন বইছে প্রতি মুহূর্তে যে দহনে পুড়ছে প্রতিনিয়ত। তবে মুখ ফুটে ইশান বলে।

–হে মা আমি একদম ঠিক আছি আমার আবার কি হবে! আই এম পার্ফেক্টলি ওল রাইট।

–আমি তর মা ইশান তকে দশ মাস দশ দিন আমার গর্ভে রেখেছি। তাই আমার থেকে তকে আর কেউ ভালো চিনে না। তাই আমায় বল না তর কি হয়েছে?

ইশান ফ্লোরের দিকে দৃষ্টিতে নিক্ষেপ‌ করে বলে।

–কিছু হয় নি মা আমার।

নেহা বেগম ছেলের বা হাতটা ধরে বলে।

–আমার এত বছর বয়সে যত টুকু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তত টুকু অভিজ্ঞতা থেকে আমি যা বুঝতে পেরেছি তুই কিছু লুকাছিস আমাদের সকলের কাছ থেকে।

ইশান চুপ করে আছে মায়ের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। নেহা বেগম এবার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।

–যদি আমাকে কিছু বলার থাকে তাহলে বলে দিস ইশান। আমি অপেক্ষায় থাকবো। আমি চাইলে আজকে তর কাছ থেকে জোর করে সব জেনে নিতে পারতাম। কিন্তু আমি চাই আমার ছেলে নিজের ইচ্ছেতে তার মনের সব কথা আমাকে বলুক।

নেহা বেগম থামে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে ছেলের মনের কথা। কিন্তু না ছেলে তার সেই গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে বসে আছে। নেহা বেগম বসে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে।

–শুয়ে পড় গিয়ে অনেক রাত হয়েছে।

বলেই নিজের ঘরের দিকে চলে যান। নেহা বেগম চলে যেতেই ইশান চোখ বন্ধ করে নিজের মাথাটা হেলিয়ে দেয় সোফায়। ঘরের ভেতর থেকে নেহা বেগম একবার উঁকি দিয়ে দেখে ছেলে তার কি করে। ছেলেকে এমন ভাবে বসে থাকতে দেখে একবার ভেবেছিলো ছেলের সাথে খোলাসা ভাবে কথা বলতে কিন্তু পরে ভাবলো ছেলের ইচ্ছে হলে মাকে এমনি এসে বলবে সব কথা।

প্রায় বিশ মিনিট ইশান এভাবে বসে থাকে। মাথায় এখনও মায়ের বলা কথা গুলো বাজছে। তবে কি মা সব বুঝে গেছে। হয়তো বুঝে গেছে মায়েরা সন্তানদের চোখ মুখ দেখলেল বুঝে যায় সন্তানদের মনে কি চলছে।

“নেহা বেগম ছেলের মতিগতি দেখে আগেই টের পেরেছিলো তীরের জন্য ইশানের মনে দুর্বলতা কাজ করে। কিন্তু এটা বুঝতে পারছে না ইশান তীরকে কি শুধু পছন্দই করে নাকি মন থেকে ভালোবাসে। তার জন্যই ইশানের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু অস্বস্তির জন্য বলতে পারে নি।”

ইশান অফিসের ব্যাগটা হাতে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে যায় ধীর পায়ে হেটে। ইশান চলে যেতেই নেহা বেগম দীর্ঘ এক নিশ্বাস ত্যাগ করে শুতে চলে যায়। এতক্ষন আড়ালে দাঁড়িয়ে ছেলেকে দেখে গেছেন। চিন্তায় আছে ছেলেকে নিয়ে নেহা বেগম কিন্তু এটা ভেবে আবার নিশ্চিন্তে আছে আর যাই হয়ে যাক না কেন ছেলে তার এতটাও অবুঝ না যে উল্টাপাল্টা কিছু করে বসবে।

ইশান নিজের ঘরে এসে বাতি না জ্বালিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়। আধ ঘন্টা পর বের হয় শাওয়ার নিয়ে। টি-শার্ট আর টাউজার পড়ে উপুত হয়ে শুয়ে পড়ে। খুব ক্লান্ত লাগছে শরীরটা আজকে তাই বেডের সাথে ক্লান্ত শরীর লাগাতেই রাজ্যের ঘুম এসে হানা দেয় চোখে।

_______

সকাল আটটা পঞ্চাশে ঘুম ভাঙ্গে ইশানের। ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে নজর যায় টি-টেবিলের উপরে পড়ে থাকা তীরের কানের দুল জোড়ার দিকে। ইশান ভ্রু-কুচকে নেয় ভেবেছিলো তীর নিয়ে গেছে কানের দুল জোড়া। কিন্তু এই মেয়ে তো দেখা যায় রেখে গেছে এখানে। নিলো না কেন সাথে করে এই জিনিসটা, রেখে যাওয়ার মানে কি?

ইশান আর কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হওয়ার জন্য। ফ্রেস হয়ে এসে কয়েকটা ফাইল নিয়ে বসে যে ফাইল গুলা আজকের মধ্যেই চেক করতে হবে। ইশান সোফাতে বসে টি-টেবিলের উপরে ফাইল গুলা রেখে চেক করা শুরু করে দেয়। লাস্ট ফাইলটা যখনেই চেক করতে যাবে তখনেই নজর যায় সাদা টাইলস করা ফ্লোরের উপরে। কেমন লাল রঙের ফোঁটা পড়ে আছে কিছুটা জায়গা জুড়ে কিন্তু লাল রঙ এখানে আসবে কি করে বুঝতে পারছে না ইশান।

ইশান চেক করার জন্য উঠে দাঁড়ালো, সেখানটায় গিয়ে হাটু ভাঁজ করে বসে তর্জনী দ্বারা এক ফোঁটা রঙ মুজে নিয়ে বুঝার চেষ্টা করে আসলে কি এটা। যখন বুঝতে পারলো এটা রঙ নয় বরং রক্ত তখনেই ইশানের বুকটা ধ্বক করে। মনের মাঝে অজানা ভয় কাজ করছে এটা ভেবে তীরের কিছু হয় নি তো আবার। গতকাল রাতে তো মেয়েটা এখানে দাঁড়িয়ে ছিলো আর হাতে তো কানের দুল জোড়া ছিলো। কোনো ভাবে কি কানের দুল দ্বারা হাত কেটে গেছে। ইশান কিছু একটা ভেবে তড়িঘড়ি করে টি-টেবিলের উপরে রাখা কানের দুল জোড়া হাতে তুলে নেয়। তুলার সাথে সাথে কানের দুল জোড়া থেকে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। টি-টেবিলের যে জায়গাতে দুল জোড়া রেখেছিলো সে জায়গাটায় পানি জমে আছে। যে পানির রঙটা হালকা লাল বর্নের। ইশান বিরবির করে উঠে।

–তার মানে মেয়েটার হাতে কেটে গেছে।

ধপ করে সোফায় বসে পড়ে ইশান।

–এটা কি করে ফেললাম আমি? খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি মেয়েটাকে আমি খুব। ওর হাতটার কি অবস্থা এখন ব্যান্ডেজ করিয়েছে তো নাকি….

ইশান দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকায় নয়টা বিশ বাজে। সাড়ে নয়টায় তীরের কোচিং ছুটি হবে। তাই ইশান আর কোনো কিছু না ভেবেই টি-শার্টের উপরে কালো রঙের একটা শার্ট পড়ে গাড়ির চাবিটা নিয়ে বের হয়ে পড়ে। যাওয়ার পথে বাড়ির সবাই একটু অবাক হয় ইশানের এমন তাড়াহুড়ো করা দেখে প্রশ্ন করে কি হয়েছে? কিন্তু ইশান কিছু হয় নি বলে বের হয়ে যায়।

_______

দশ পনেরো মিনিটের রাস্তা ইশান ছয় মিনিটে ড্রাইভ করে শেষ করলো। কতটা হাই স্প্রিডে ড্রাইভ করেছে এটা একমাএ ইশানেই জানে। গাড়িতে বসেই ইশান অপেক্ষা করছে কোচিং ছুটি হওয়ার আর জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে আর নিচ্ছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। কিছুক্ষন বাদেই কোচিং ছুটি হয় ইশান গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। একে বারে শেষে বের হয় তীর আর ইশা। তীরের মুখটা আঁধার রাতের থেকেও অন্ধকার করে রেখেছে। চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে রাতে ঘুমাই নি। তীরের এমন বিধ্বস্ত চেহারাটা দেখে ইশানের বুকটা চিনচিন করে ওঠে। এক রাতের মধ্যে মেয়েটা নিজের কি করুণ অবস্থা করে ফেলছে এতটা অবুঝ কেন এই মেয়ে।

তীর আনমনে হেটে আসছে তাই ইশানকে এখনো লক্ষ্য করে নি। ইশা ইশানকে দেখার সাথে সাথে বলে উঠে।

–ভাইয়া তুমি এখানে হঠাৎ?

ইশার কন্ঠ শুনে তীর সামনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় ইশানকে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। তীর সাথে সাথে মুখ ফিরিয়ে নেয় অন্য দিকে। তীরের এমন মুখ ফিরানো দেখে ইশান দীর্ঘ এক নিশ্বাস ছেড়ে তীরের ডান হাতের দিকে তাকায়। না ডান হাতটা ঠিকেই আছেই এবার বা হাতের দিকে তাকাতেই দেখে ওড়না পেঁচানো তার মানে এই‌ হাতটা ক্ষ’তবিক্ষ’ত হয়েছে। ইশান গম্ভীর কন্ঠে বলে।

–গাড়িতে উঠ ইশা।

ইশা ভাইয়ের কথামতো গাড়িতে উঠে বসে। কিন্তু তীর ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। তীরকে এমন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইশান আবারও বলে।

–গাড়িতে উঠতে বলেছি আমি।

তীর ইশাকে ঊদ্দেশ্য করে বলে।

–ইশু তুই চলে যা। আমি রিকশা করে চলে যেতে পারবো।

ইশা কিছু বলবে তার পূর্বেই ইশান দাতে দাত চেপে বলে।

–বেশি পাকনামি না করে চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে উঠ। আর আমি যদি তকে গাড়িতে তুলি তাহলে সেটা তর পছন্দ হবে না হয়তো।

তীর ইশানের দিকে রাগী চোখে তাকায় হুমকি দিচ্ছে তাকে এত বড় সাহস। তীরের ইচ্ছে করছে ইশানকে পঁচা ডোবাতে ছুঁড়ে ফেলতে। কিন্তু এই টুকু শরীর নিয়ে এই হাতির মতো মানুষটাকে তীর জীবনেও তুলতে পারবে না আর ছুঁড়ে ফেলা তো দুরের কথা। তাই ইশান আজ বেঁচে গেলো। ইশান চোখ রাঙায় তীরকে। ইশানের চোখ রাঙানো থেকে তীর আর কোনো কথা না বলে বাধ্য মেয়ের মতো গাড়িতে উঠে বসে। ইশান ঠোঁট গোল করে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করা শুরু করে।

তীর চুপচাপ বসে আছে কোনো কথা বলছে না। আসলে‌ এই বদ লোকটার সামনে কথা বলতে একদম ইচ্ছে করছে না তীরের। কিন্তু পাশে বসে থাকা ইশা বকবক করেই যাচ্ছে। ইশার এই বকবকানি সহ্য করতে না পেরে তীর বলে উঠে।

–একটু চুপ করবি তুই ইশু।

তীরের কথা শুনা মাএই ইশার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। সকাল থেকেই ইশা দেখছে তার প্রিয় বান্ধবীটা কিছু একটা নিয়ে আপসেট। কিন্তু কিছু জিঙ্গেসা করলেই বলে কিছু হয় নি। তাই ইশাও চুপচাপ বসে থাকে কোনো রাও করে না। ইশা বাইরের দিকে তাকিয়ে যখন বুঝতে পারে গাড়ি বাড়ির দিকে না গিয়ে অন্য দিকে যাচ্ছে তখনেই চিৎকার করে বলে।

–ভাইয়া কোথায় যাচ্ছি আমার? কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাদের?

ইশা এমন ভাবে কথাটা বলেছে যেন ইশান ওর আপন কেউ না। একজন অপরিচিত লোক ওদেরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোথাও। ইশান গম্ভীর কন্ঠে বলে।

–চুপচাপ বসে থাক ইশু। তদের নিশ্চয়ই বেঁচে দিতে নিয়ে যাচ্ছি না আমি এই ভরসা তো আমার উপরে আছে নাকি।

ইশা চুপ করে যায় ভাইয়ের এমন অসহ্যকর মার্কা কথা শুনে। মনে কোনো রসকষ নেই।

#চলবে_______

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২১

গাড়ি এসে থামে হাসপাতালের সামনে। ইশান গাড়ি থেকে আগেই নেমে গেছে। তীর আর ইশা এক জন আরেক জনের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে হাসপাতালে আসার কারন কি কার কি হয়েছে? ইশান তীরের সাইডের দরজটা খুলে ইশারা করে নামার জন্য। তীর ভ্রু-কুচকে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে। তীরের এমন তাকানো দেখে ইশান বলে।

–কি হলো? নাম গাড়ি থেকে।

তীর বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বলে।

–কেন? কেন নামবো আমি গাড়ি থেকে?

ইশান নাকের পাটা ফুলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

–কারন আমি নামতে বলছি তাই তুই নামবি।

–আপনার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই। তাই নামবো না আমি গাড়িতে বুঝতে পেরেছেন।

বলেই সোজা হয়ে বসে পড়ে। ইশান আশেপাশে তাকিয়ে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। মেয়েটা আজকে একটু বেশিই অবাধ্যতা করছে এর আগে কখনোই এমনটা করে নি। সবসময় ভয়ে ভয়ে চলেছে তার সামনে কিন্তু আজকে যেন ভয়ের “ভ” টাও কাজ করছে না তীরের মনে এক ফোঁটাও।

ইশান নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে রাখে কিছুটা সময়। কিছু একটা ভেবেই আচমকা তীরের ডান হাতটা ধরে হেঁচকা টান মেরে গাড়ি থেকে নামায়। নিজের উপরে হঠাৎ করেই এমন আক্রমণ হওয়াতে তীর নিজের ভারসাম্য সামলাতে না পেরে ইশানের বাহু আঁকড়ে ধরে ভয়ে। নিজেকে ইশানের এতটা কাছে দেখতে পেয়ে রাগে ইশানের কাছ থেকে দুরে সরে গিয়ে বলে।

–এভাবে টানার মানে কি? আমাকে কি গরু পেয়েছেন নাকি হুম যা খুশি তাই করবেন।

ইশান হেসে দেয় তীরের কথাটা শুনে। ইশানের হাসিটা যেন তীরের কাঁটা গায়ে নুনরের ছিঁটার মতো লাগলো। মন চাইছে ইশানের ঠোঁট দুটোতে স্টেপলার মেরে দিতে যাতে দাঁত বের করে না হাসতে পারে। তীর রাগে দুঃখে বলল।

–আপনি হাসলেন কেন?

ইশান তীরের দিকে তাকিয়ে মুঁচকি হেসে বলে।

–আমার মুখ, আমার ঠোঁট, আমার দাঁত তাই আমি হাসবো নাকি কাঁদবো সেটা একান্ত আমরা ব্যাপার তকে বলবো কেন?

তীর তেঁড়ে এসে বলে।

–আপনাকে আমি?

বলেই থেমে যায় তীর আর ইশান দু ভ্রু নাচিয়ে বুকের উপর দু হাত গুজে বলে।

–আমাকে তুই! কি হুম?

–কিছু না। সরুন আমি বাড়ি যাবো আপনার সাথে থাকার বিন্দু পরিমান কোনো ইচ্ছে নেই আমার।

তীর চলে যেতে নিবে সাথে সাথে ইশান তীরের বাহু ধরে আটকে দেয়। তীর রেগে কিছু বলতে নিবে সাথে সাথে ইশান বলে উঠে।

–একদম চুপ বেশি কথা বলবি না।

তীর সাপের মতো হাত মুচরামুচরি করে বলে।

–আমি কথা বলবই আমার মুখ, আমার ঠোঁট আমি হাজারটা কথা বলবো তাতে আপনার কি? আপনার মুখ দিয়ে তো আর আমি কথা বলছি না। তাহলে আপনি কে আমাকে কথা না বলতে বলার?

ইশান আবাক হয়ে যায় তীরের কথা শুনে। তার কথা তাকেই ফিরিয়ে দেওয়া হলো এই মাএ “কি সাংঘাতিক মেয়ে”। এর মাঝে ইশা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ভাই আর বান্ধবীর দিকে। মানে এরা কি শুরু করেছে একে বারে টমেন জেরির মতো। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। কথার পিঠে কথা বলেই যাচ্ছে। ইশান ইশার দিকে তাকিয়ে বলে।

–ইশু তুই একটু বস আমরা আসছি।

ইশা মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় আর তীর ইশানের হাত থেকে নিজের বাহু ছাড়াতে চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেই‌ না। এটা হাত না লৌহা কিচ্ছুই বুঝতে পারছে না একটুও নড়াতে পারছে না বেচারী। না পেরে তীর বলে উঠে।

–আমার হাতটা ছাড়ুঁন।

ইশান কাঁড়া চোখে তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।

–চুপচাপ ভেতরে চল। না হলে কিন্তু…

–না হলে কি হুম না হলে কি করবেন আপনি?

ইশান গাড় বেকিয়ে মুচঁকি হেসে তীরের কানের দিকে ঝুকে আসে। তা দেখে তীর বড় বড় চোখ করে আশেপাশে তাকায়। অন্য দিকে ইশান ফিসফিসিয়ে বলে।

–না হলে তকে কোলে করে নিয়ে যাবো। সেটা কি ভালো দেখাবে বল ভদ্র সমাজে সবার সামনে কোলে নেওয়াটা একটু বেমানান হয়ে যায় না আর তার সাথে তুইও লজ্জা পাবি। পায়ে সমস্যা থাকলে কোলে নেওয়াটা ঠিক আছে কিন্তু তুই তো একদম ফিট তাই কোলে নেওয়াটা কি ঠিক হবে। অবশ্য তুই চাইলে নিতেই….

ইশানের কথা মাঝেই তীর বলে উঠে।

–নাহ! চাই না আমি আপনার কোলে উঠতে আর না ভবিষতে কোনো দিন উঠতে চাই।

ইশান মনে মনে হাসে তীরের কথা শুনে। ভবিষতে কে কার কোলে উঠে সেটা না হয় সময় বলে দিবে। ইশান তীরের কাছ থেকে সড়ে এসে বলে।

–ওকে তাহলে তর এই ভালো পা দু’খানা কাজে লাগিয়ে ভেতরে চল।

–কিন্তু কেন যাবো হাসপাতালে?

–সে তুই গেলেই দেখতে পাবি।

দুজনেই হাঁটা ধরে হাসপাতালের ভেতরে যাওয়ার ঊদ্দেশ্যে। তীরের মনে হচ্ছে ইশান হয়তো জেনে গেছে ওর হাত কে*টে গেছে তাই এখানে নিয়ে আসে। কিন্তু এত চিন্তা করার কি আছে ওকে নিয়ে লোকটা তো আর ওকে পছন্দই করে না তাহলে এত দয়া দেখানোর মানে কি তীর কিছু পাচ্ছে না।

তীর হাটার মাঝে ইশানের বা হাতের দিকে তাকায়। কি সুন্দর করে তার ডান হাতটা ধরে রেখেছে। মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে তীর। আনমনে তীরের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠে। এর মাঝেই ইশানের গম্ভীর কন্ঠ ভেসে আসে।

–হাতটা কাটলি কি করে?

কেঁপে উঠে তীর তার মানে ইশান সত্যিই বুঝতে পেরে গেছে যে ওর হাত কেটেছে। তার জন্যই হাসপাতালে নিয়ে আসা এত চিন্তা ওর জন্য। ইশান আবারও বলে।

–কি হলো বল হাত কাটলি কি করে?

–আমার হাত কিভাবে কেটেছে সেটা আপনি জেনে কি করবেন?

তীরের কথায় স্পষ্ট অভিমান ফুটে উঠেছে। বড্ড অভিমান করেছে মেয়েটা বুঝতে আর বাকি নেই। ইশান মুচঁকি হেসে তীরের অভিমানটা দ্বিগুন করার জন্য বলে।

–তাও ঠিক আমি জেনে কি করবো!

তীরের মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে যায়। জেনে কি করবে মানে তাহলে জিজ্ঞেস করেছে কেন হিটলার ব্যাটা আর হাসপাতালেই বা কেন নিয়ে এসেছে দয়া দেখানোর জন্য লাগবে না এই দু’টাকার দয়া তীরের। তাই রাগী কন্ঠে বলে।

–ছাড়ুঁন বাড়ি যাবো আমি। সবাই চিন্তা করবে।

–কেউ চিন্তা করবে না ফোন করে বলে দিয়েছি আমি তাই চুপচাপ চল।

ইশান তীরকে নিয়ে তার ডাক্তার বান্ধবী আবিরা সেনের কাছে আসে। আবিরা ইশানকে এমন সময় নিজের ওর্য়াডে দেখে একটু আবাক হয় পরক্ষনে হেসে বলে।

–কি রে তুই হঠাৎ এখানে?

ইশান তীরকে অন্য চেয়ারে বসিয়ে নিজে চেয়ারে বসতে বসতে বলে।

–কেন আমি কি আসতে পারি না বুঝি?

–নাহ আসতে পারিস কিন্তু তকে তো হাজার বার বললেও আসিস না তাই একটু অবাক হয়েছি।

–একটা দরকার এসেছি।

–কি দরকার?

–ওর হাতটা ড্রেসিং করার জন্য নিয়ে এসেছি।

আবিরা তীরকে এক নজর দেখে ইশানের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করতেই ইশান বলে।

–পরে বলি আগে তুই ওর হাতটা ড্রেসিং করার ব্যবস্থা কর।

–আচ্ছা।

তীর ভ্যাবলার মতো বসে আছে। কি বলবে ইশান পরে এই মেয়েকে বুঝতে পারছে না। আবিরা হাতটা দেখে অবাক চোখে তাকায় তীরের দিকে।

–এমন বাজে ভাবে হাত কেটেছো কি করে?

তীর কিছু বলছে না শুধু একবার ইশানের দিকে তাকিয়ে নিজের কাটা হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। তীরের ক্ষতটা দেখে ইশানের মাথায় যেন আসমান ভেঙ্গে পড়লো। এত বাজে ভাবে তার তীর ক্ষতবিক্ষত হয়েছে আর এই মেয়ে কিনা এই হাত নিয়ে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুড়ছে। ইশান ঢোক গিলে বলে।

–ওর হাতটা ভালো করে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দে আমি আসছি একটু।

বলেই এখানে থেকে তাড়াহুড়ো করে যায়। ড্রেসিং করার সময় নিশ্চয়ই তীরের কষ্ট হবে সেই কষ্ট ইশান সহ্য করতে পারবে না। তাই চলে যেতে বাধ্য হলো।

আট মিনিট পরে ইশান এসে দেখে তীরের হাত ব্যান্ডেজ করা শেষ। আবিরা ইশানকে দেখে বলে।

–এসে গেছিস।

ইশান তীরের পাশের চেয়ারটাই এসে বসে তীরের ব্যান্ডেজটার দিকে এক নজরে তাকিয়ে থাকে। আবিরা তীরকে বলে।

–ঔষুধ লিখে দিয়েছে নিয়মিত খাবে তাহলে তাড়াতাড়ি ক্ষতটা শুকিয়ে যাবে। আর চেষ্টা করবে ক্ষত জায়গাটা না ভিজাতে কেমন।

তীর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। ইশান তীরকে বলে।

–তুই গিয়ে গাড়িতে বস আমি আসছি।

তীর চলে যায়। তীর যেতেই আবিরা বলে।

–কিহ হ্যান্ডসাম? এই কি সেই জন যার জন্য নিজেকে এখনও সিঙ্গেল বানিয়ে রেখেছেন আপনি। আর আমার বান্ধবী রিয়াকে রিজেক্ট করেছন!

ইশান মুচঁকি হেসে ছোট করে উত্তর দেয়।

–হুম।

–তাই তো বলি রিয়ার মতো এত স্মার্ট একটা মেয়েকে রিজেক্ট করার কারন কি! সামনে যদি এমন একটা মায়াবতী থাকে তাহলে তো অন্য কারোর দিকে নজর পারবেই না সে যতই সুন্দরী আর স্মার্ট হোক।

ইশান কোনো কথা বলছে না চুপচাপ আবিরা বলা কথা গুলা শুনে যাচ্ছে। আবিরাই আবার বলে।

–তো বলেছিস নিজের ভালোবাসার কথা মেয়েটাকে।

ইশান তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে।

–নাহ।

–কেন?

–সময় আসুক তারপর বলবো।

–তর সময় আসতে আসতে দেখিস পাখি না আবার অন্য কেউ নিয়ে চলে যায়।

ইশান ভ্রু-কুচকে তাকায় আবিরার দিকে। আবিরার আর বুঝতে বাকি নেই ভুল জায়াগায় ভুল কথা বলে ফেলেছে। তাই পরিবেশ গরম হওয়ার আগেই ঠান্ডা করতে হবে। আবিরা মেকি হাসি দিয়ে বলে।

–না মানে বলতে চাইছিলাম আসলে…

–আমি আসি এখন আবিরা আর তর নতুন লাইফের জন্য শুভ কামনা রইলো আমার তরফ থেকে।

–থাক আর শুভ কামনা জানাতে হবে না। বিয়েতে না এসে শুভ কামনা জানতে এসেছিস লাগবে না তর শুভ কামনা।

–কাজ ছিলো তাই যেতে পারি নি।

–বুঝতে পেরেছি।

–থেংক্স বুঝার জন্য আর আমি এখন আসি।

আবিরা অবাক হয়ে যায় ইশানের কথা শুনে। মানে এই ছেলে কি বুঝতে পারে নি আবিরা অভিমান করে কথাটা বলছে। এর মাঝে কি কোনো দিন পরির্বতন আসবে না। নাকি কি সবসময় এমনেই থাকবে।

ইশান বের হতেই মুখোমুখি হয় তীরের দিকে। তীরকে দেখে ইশান থতমত খেয়ে যায়। তীরকে এখানে আপতত ইশান একদমেই আশা করি নি। মেয়েটাকে কি ওদের সব কথা শুনে ফেললো নাকি।

ইশান তীরের মুখপানে তাকাতেই চমকে যায়। কেমন অসহায় চোখে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে। নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে রেখেছে, নাকের পাটা ফুলে উঠছে বার বার। মনে হচ্ছে যেন ভেতরের কান্নাটা আটকানোর চেষ্টা করছে। চোখ দুটোও কেমন লাল হয়ে আছে। ইশান কিছু বলতে যাবে তার আগেই তীর তাড়াতাড়ি করে এখান থেকে চলে যায়। ইশান হতভম্ব হয়ে তীরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।

#চলবে_________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে