প্রতারক part 15

0
1410

প্রতারক part 15
#Roja_islam

রাহুল ? আমি সামনাসামনি রেস্টুরেন্ট এ বসে আছি। রাহুলের চোখ মুখ শক্ত সে মাথা নুইয়ে বসে আছে ফোনের দিকে তাকিয়ে। কিন্তু আমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি রাহুলের দিকে। পুড়াই একটা জুইস লাগছে গুন্ডাটাকে। তাই না চাইতেও খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি রাহুল কে। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ছেলেটাকে!ছেলেরাও এতো সুন্দর হয়?? আমার তো যানাছিলোনা!! ছিঃ কি ভাবছি। এতো বড় একটা ছ্যাঁকা শিহাবের থেকে খাওয়ার পড়েও ছেলেদের দিকে তাকাস হীর তোর লজ্জা করেনা ছিঃ। অন্য ছেলে হলেও কথা ছিলো কিন্তু এই গুন্ডার দিকে চোখ দিস না দেখা গেলো চোখ উপরে ফেললো তো তখন কি করবি?? চোখ ছাড়া বাঁচবিতো চলতে পারবিতো?? ছিঃ ছোট বাচ্চার মতো কি সব ভাবছি আমি এসব? উফফ আমি না হয় ভাবছি কিন্তু এই গুন্ডা কি ভাবছে?? চুপ করে আছে কেনো?? ঝড়ের পূর্বাভাষ নাকি এটা!! আমার হাজার চিন্তার মধ্যে রাহুল গম্ভীরতার সাথে বলে উঠলো।
— রাতে কি কথা হয়েছে বলো আমাকে??
.
এতো গম্ভীর কণ্ঠ শুনে আমি আমতাআমতা করে জিজ্ঞেস করলাম।
— ইয়ে মানে আপনি কি রেগে আছেন!! রাতের জন্য???
.
উনি মনে হয় বেশ বিরক্ত হলো আমার কথায়!! ভ্রু কুঁচকে বললো।
— আমি রাগ করলে তোমার কি?? আর হবোইনা কেনো রাগ?? সামান্য কথা বলতে বলেছি সারারাত পার করে দিয়েছো তুমি।আমি কতো চিন্তিত ছিলাম?? ইউ হেভ নো আইডিয়া!!
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


আমি বুঝলাম রাহুল রাতে টেনশন আর অপেক্ষায় ছিলো আমার কলের। আর নিজেও আমায় কল দিয়ে না পেয়ে হাইপার হয়ে গেছে!! তাই আমি মুচকি একটা হাসি দিলাম উনার দিকে তাকিয়ে। তারপর বললাম।
— সরি কথায় কথায় সব ভুলে গেছি!!
.
উনি আমার থেকে চোখ সরিয়ে বলে উঠলেন।
— একদম এভাবে হাসবে না প্রবলেম হয় আমার!! উফফ….!
.
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম।
— সরি?? হাসিতেও প্রবলেম??
.
এবার উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন।
— হ্যাঁ প্রবলেম এই হাসিতে খুন হয়ে যাবো। আমি খুন হতে চাইনা!!
.
বলেই উনি বাঁকা হাসছে। আর আমার অবস্থা খারাপ। ব্যাটা বলে কি আমি আবার চরম অস্বস্তির শিকার হয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছি আর হাত কচলাচ্ছি। আমার অবস্থা দেখে উনি কথা গুরানোর জন্য বললেন।
— রাতে কি হয়েছে ফার্স্ট থেকে লাস্ট বলে ফেলো। কুইক!!
.
আমি অস্বস্তি কাটিয়ে কিছুক্ষণ আমতাআমতা করে। গড়গড় করে সব বলে দিলাম। একদম শুরু থেকে শেষ সব কথা!!
.
সব শুনে রাহুলের যা বুঝার বুঝা হয়ে গেছে কাহিনী কি। রাহুল দ্রুত পদে উঠে দাঁড়ায় আজ সে। ঐ মহিলাকে দেখে নিবে অনেক হয়েছে!! আর না। ভেবেই সে হীরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে।
— হীর চলো বাসায় যাবো আজ ভার্সিটি যেতে হবে না।
.
আমি অবাক হয়ে বললাম।
— কিন্তু কি হয়েছে??
এভাবে উঠে দাঁড়ালেন কেনো??
.
রাহুল রেগে বললো।
— প্রশ্ন করতে বলেনি। গেট আপ কুইক!!
.
আমি আর কথা বাড়ালাম না উঠে দাঁড়িয়ে রাহুলের পিছু হাটা দিলাম! ভয়ে না জানি আবার গর্জন দিয়ে উঠে। চলে এলাম বাসায় সারা রাস্তা রাহুল একটা কথাও বলেনি এদিকে আমার ভয় করছে।রাহুল কি তবে ভাইয়াকে মেনে নিবেনা???
রাহুল নিজের ফ্লাটে ঢুকেছে। আর আমি আমাদের ফ্লাটে চলে এসেছি। রাহুল যাওয়ার সময় ও কিছু বলেনি আমায় চিন্তা হচ্ছে কি হলো আবার এই ছেলের। এদিকে ভাইয়া কে কি বলবো তাও ভাবছি। রাহুল তো কিছুই বললো না। ভাইয়াকে দেখতে দিবে কিনা পূর্নিকে রাহুল?? উফফ এসব ভাবতে ভাবতেই দেখি মা এসে পাশে বসছে বেশ চিন্তিত লাগছে।তাই জিজ্ঞেস করলাম।
— মা কি হয়েছে এমন গুমড়ামুখ করে রেখেছো কেনো??
.
মা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো।
— হীর তোর ভাই কেমন জেনো হয়ে গেছে। খায় না ঘুমায় না ভালোকরে আমি কিছু বললে চেঁচামেচি করে উঠে। তুই এক্টু জিজ্ঞেস করবি কি হয়েছে ওর?? কোনো টেনশ……..!
.
আমি বুঝলাম মা কি বলতে চাইছে। তাই মাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম।
— মা আমি কথা বলেছি সব ঠিক হয়ে যাবে। আর তোমার সঙি আসবে বাড়ী তে।আর ভাইয়ার টেনশন ও নিতে হবে না তোমার……….!
.
এই টুকু বলেই চুপ মেরে মার দিকে অসহায় আর হতভম্ব হয়ে তাকালাম। কি বলে ফেললাম আমি এসব ইশশ এখন কি হবে?? মা নিশ্চয় বোকা না যে কিছুই বুঝবেনা। মা আমার দিকে কপাল কুঁচকে সি আই ডি লুকে তাকালো। আমি ভয়ে দৌড় দিবো মা আমার হাত টেনে ধরলো।আর কর্কশ কণ্ঠে বললো।
— কি বলতে চাইলি তুই কি ঝটলা পাকাচ্ছিস ভাই বোন মিলে আমি দেখেছি কাল রাতে তোরা বাইরে গিয়েছিস কই গিয়েছিস বল আমায়।
.
মার কথা শুনে বুঝতে বাকি নেই মা সব দিক খেয়াল রাখে। আর আমায় এখন সবি বলতে হবে কিন্তু ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার। ভাইয়া যদি জানে মা কে বলে দিয়েছিতো কি হবে উফফ। পড়ছি এক মাইনকা চিপায় কোন দিকে যাই এখন?? উফফ আল্লাহ ঠিক সেই সময় দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলো রাইসা। আমি মার থেকে হাত সরিয়ে ওকে নিয়ে রুমে ঢুকে গেলাম ওর গালে দুইটা চুম্মা দিলাম জীবনে কোনো কাজে তো এলো এই ফক্কিন্নি!!! তাই কিছুতো পাওনা তাই ওধার না রেখে দিয়ে দিলাম কিসস কিন্তু তাতে রাইসা নিরাট ঝটকা খেয়েছে বুঝাই যাচ্ছে।ওর সাথে আড্ডা দিলাম মার ভয়ে আর রুম থেকে বেরুই নি আমি আল্লাহ জানে আবার কোন সময় ঝাপ্টে ধরে।
.
.
এদিকে রাহুল তার মার সামনে কটমট করে তাকিয়ে আছে। তিনি রাহুলের ফেইস দেখে ভয়ই পাচ্ছেন বেশ। রাহুল শান্ত স্বরে। কিন্তু রাগীগলায় জিজ্ঞেস করে উঠে।
— হিরাকে কি বলেছিলে তুমি পূর্নির কথা??
.
এই কথা শুনি উনি হকচকিয়ে উঠেন আর বলেন।
— কেনো কি হয়েছে!!
.
উনার হেলেদুলে কথায়।
রাহুল এবার আর নিজের রাগ নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা। চেঁচিয়ে উঠে।
— মজা করছেন আপনি?? কি হয়েছে আপনি জানেন না? কত বার বলেছি আমার বোনের লাইফ থেকে দূরে থাকুন ভুলে যাবেন না আপনি আমাদের মা নায়ায়া।
.
রাহুলের মা টলমল চোখে বলে উঠে।
— রাহুল আই নো আমি আগে যা করেছি পূর্নির সাথে তোমার সাথে তা ভুল। কিন্তু সৎ মা হলেও আমি তোমাদের মা। আর পূর্নি ঐ সামান্য ছেলেটার সাথে বাজে রিলেশন এ জড়িয়ে যাচ্ছিলো তা আমি ওর ডাইরি পড়ে বুঝেছি।পূর্নিকে বললে ও কষ্ট পেতো। তাই ছেলেটাকেই বলেছি। খারাপ কি করেছি?
.
রাহুল গর্জিয়ে উঠে।
— ওহ প্লিজ স্টপ প্লিজ। আপনার মুখে বাজে বা ভালো রিলেশন এর কথা মানায় না বুঝেছেন!! আর ছেলেটা সামান্য হোক কি অসামান্য তা নিয়ে বলার আপনি কে?? আর কি খারাপ করেছেন বলছেন। পূর্নি আপনার ভালো করার জন্য মরতে বসেছে তা আপনার খবর আছে?? ১ মাস ও এ বাড়ী আসে না খবর নিয়েছেন পূর্নি কই?? এই আপনি ভালোচান ওর।
মেয়ে কই আছে কেমন আছে জানেন আপনি??
— পূর্নি তোমার ফ্লাটে গিয়ে প্রায় থাকে তাই আমি খোজ নেই নি। আর তুমি ঐ সামান্য ছেলের।
— জাস্ট শাট আপ আপনার মিনিমাম লজ্জাও নেই একদম ঐ সামান্য ছেলে ছেলে করবেন না ও আমার বোনে হ্যাসবেন্ড খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের দাওয়াত দিবো খেতে আসবেন ওকে। আর হিরা দের আশেপাশে ও জেনো আপনাকে না দেখি।মাইন্ড ইট!!
.
বলেই রাহুল চলে যায় ফ্লাট থেকে বেরিয়ে।
রাহুলের মা বোকার মতো চেয়ে থাকে রাহুলের যাওয়ার দিকে।তারপর হঠাৎ তিনি রাগে ফেটে পড়েন। পূর্নিকে তিনি নিজে বিয়ে দিবেন তার বোনের ছেলের সাথে এই বিয়ে হতে দিবে না তিনি মনে মনে পন করেন।
সেটা যে ভাবেই হোক। তিনি কথা দিয়েছেন তার বোন কে সেই কথা তিনি রাখবেন যেভাবেই হোক। বলেই কটমট করেন তিনি।
.
.
রাহুল বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে হীর এর বেল কুনিতে তাকায় একবার।একবার দেখতে পেলে ভালো ছিলো হীরকে। ঐ সময় রেগে কথাও বলা হয়নি ভালো করে। কিন্তু এখন পূর্নির কাছে যেতে হবে রাহুলের ভেবেই। গম্ভীর মুখেই চলে যায় সেখান থেকে।
.
.
এদিকে শিহাবের মা বাবা তাড়িয়ে দেয় নিতুকে না না অপমান করে পুরোপাড়া রটে যায় নিতুর কার্যকালাপ। তাকে তারিয়ে দিলে। নিতু কিছু বলতে পারেনা কি বলবে বলার মুখ সে নিজেই রাখেনি তাই চুপচাপ বেরিয়ে যায়। শিহাব কালকে হীরের থাপ্পড় খেয়ে এমনি ভেঙে পড়েছিলো তার উপর নিতুর এসব নিতে পারেনি। শিহাব সেখানেই বমি করে অসুস্থ হয়ে যায়। বিকেলবেলা শিহাবের অবস্থা আরো করুণ হয়ে যায়। একমাত্র ছেলের অবস্থা এমন হতে দেখে শিহাবের মা বাবা ও ভেঙে পরছেন। শিহাবের বাবা তার ভাইকে ফোন দেয়। শিহাবের চাচা শিহাব কে অনেক আদর করেন ছুটে চলে আসেন সব ফেলে শিহাবের কথা শুনে। উনি এসে শিহাবের অবস্থা দেখে ডক্টর এর কাছে নিয়ে যায়।
তাও শিহাবের অবস্থা এক্টু ও ভালো হয়নি।হস্পিটাল এডমিট করানো হয় শিহাবকে।
.
নিতু বাড়ীতে গেলে নিতুর মা নিতুর গালে পাঁচ আঙুর এর ছাপ দেখে।কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।
— কি হয়েছে তোর নিতু কে মেরেছে তোকে?? গালে দাগ কেনো তোর??
.
এই কথা শুনে নিতু ভেতর চুরমার অবস্থা কতটা অপমানিত হয়ে এসেছে নিতু তা নিতুই জানে রাস্তা দিয়ে আসছিলো সময় সবাই ছিঃছিঃ করছিলো ওকে।
নিতু এসব ভেবে মাকে ঝাপটে ধরে কেঁদে দেয়।কাঁদতে কাঁদতে নিতু বলতে থাকে।
— মা আমি অনেক বড় ভুল করেছিমা নিজ হাতে সব শেষ করে দিয়েছি। আমি এতো খারাপ কি করে হতে পারলাম মা
হিংসায় আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম মা। অন্যের সব শেষ করতে গিয়ে আজ আমি নিজেই শেষ মা।
.
.
চলবে?
[ প্যাচ নাই আমার গল্পে কোনো!! তাড়াতাড়ি শেষ করে দিবো।]
Roja Islam

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে