প্রণয়িনী পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0
766

#প্রণয়িনী
#মেহরীমা_তাসমীম
#শেষ_পর্ব

পিনপতন নীরবতা বিরাজমান পুরে ড্রয়িংরুম জুড়ে।আদ্র অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে।কিছুক্ষণ পূর্বে তানিশাকে বিয়ে করবে না জানানোয় ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়েছেন আদ্রের গালে।ওর এই হেয়ালিপনায় বড্ড বিরক্ত তিনি।একবার বিয়ে করবে তো আরেকবার করবে এসব ভালো লাগছে না তাঁর।তাছাড়া মেয়েটা পাগলের মতো ভালোবাসে ওকে।এভাবে মাঝ দরিয়ায় ফেলে দেওয়া কিছুতেই উচিৎ নয়।উনার এমন উড়াল চন্ডী রূপে রীতিমতো সকলেই অবাক।নরম স্বভাবের মানুষ যে এতটা রাগতে পারে সেটা যেন সকলের কল্পনাতীত ছিলো।উনাকে থামাতে আজমল সাহেব এগিয়ে এসে বললেন,

‘আহ!কি করছো এসব?এতবড় ছেলেকে এভাবে কেউ মারধোর করে নাকি’?এবার যেন হুশে আসলেন তিনি।টলমল চোখে চাইলেন ছেলের দিকে।এতক্ষণে কেঁদে কেঁদে আদ্রিতা এসে দাঁড়িয়েছে ভাইয়ের গাঁ ঘেঁসে।আদ্র অবাক হতভম্ব।ওই মেয়েটার জন্য ওর মা ওকে মেরেছে ভাবতে পারছে না সে।তানিশা ন্যাকা কান্না করে বললো,

‘প্লিজ আন্টি ওকে মারবেন না আমার কষ্ট হচ্ছে। ও বিয়ে করতে চায় না ঠিক আছে আমি সব কষ্ট মুখ বুঁজে সহ্য করে নিবো কিন্তু প্লিজ ওকে কিছু বলবেন না’।আদ্রের মা যেন এবার গলে গেলেন মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে বুকে জড়িয়ে ছেলের দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,

‘দেখ মেয়েটার থেকে কিছু হলেও শিখ।তোর জন্য শুধু তোর জন্য মেয়েটা কাঁদছে আর তুই ছিহ!আসলে তুই ওর মতো মেয়ের এতটা ভালোবাসার যোগ্যই নস’!কথাগুলে শক্ত তবুও হজম করে নিলে আদ্র।আদ্রিতা যেন কিছুতেই মানতে পারলো না এসব।কাঁদতে কাঁদতে বললো,

‘আম্মু তুমি মানুষ চিনতে ভুল করছো? আমার ভাইয়া ভুল সিদ্ধান্ত নেয় না।মেয়েটা ভালো না আম্মু তুমি ওর কথা বিশ্বাস করো না সবটাই ওর নাটক।উপরে উপরে ভালো মানুষি দেখাচ্ছে ভিতরটা একেবারে নোংরা’।ধমকে উঠলেন আদ্রের মা।আদ্রিতা ভয়ে চুপ করে রইলো।তানিশার বাবা মা দুজনে চ্যাতে গেলেন।এভাবে তাদের হেনস্তা করার জন্য বেশ কটু কথাও শুনালেন তিনি।তানিশার বাবা বললেন,

‘দেখ আদ্র আমার মেয়ে তোমাকে ভালোবাসে সেজন্য আমরা তোমার সাথে ওর বিয়ের কথা ভেবেছিলাম কিন্তু এভাবে ওকে কষ্ট দেবে বুঝিনি।এখন মুখে বললেও আমি জানি ও সহজে এসব মানবে না।যদি এখান থেকে চলে গিয়ে ও বড় কোনো স্টেপ নেয় তখন ফিরিয়ে দিতে পারবে আমার মেয়েটাকে’?আদ্রের কাছে কথাটা যেন কৌতুকের মতো শুনালো।বেশ শব্দ করেই হাসলো সে।তারপর বললো,

‘প্রথমত আপনার মেয়ে এমন কিছুই করবে না।দ্বিতীয়ত আপনার মেয়ে আমাকে ভালোবাসে না।তৃতীয়ত ও সকলকে যতটা ইনোসেন্ট লুক দেখায় ততটা কেন তার সিকিভাগ ইনোসেন্ট ও সে নয়।ওর উদ্দ্যেশ্য হলো এই বাড়ীর বউ হয়ে সম্পওির মালিক হয়ে আমার বন্ধু আকাশের সাথে পালিয়ে গিয়ে আমাদের কে সমাজে অপমানিত করা। কথাগুলো আমার বলতে ইচ্ছে করছিলো না কিন্তু পরিস্থিতি বাধ্য করেছে।আপনি আপনারা এমনকি আমার মা আমাকে কাঠ গড়ায় দাঁড় করিয়েছেন সেহেতু সবটা জানা উচিৎ সকলের’।

আদ্র কথাগুলো শুনে শুকনো ঢোক গিললো তানিশা।সবটা তো আদ্রের জানার কথা নয়।তাহলে কি করে জানলো সে।অন্যদিকে তানিশার বাবা মা সহ সকলে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।ওর বাবা একটা ধমক দিয়ে বললন,

‘কি যা তা বলছো?মেয়েটাকে বিয়ে করবে না ঠিক আছে।কিন্তু তা বলে এভাবে অপমান করবে ।আমরা এটা মানবো না’।আদ্র হাসে তাচ্ছিল্যের হাসি।তারপর কিছু ফোন কলসের রের্কড শোনায়,এবং আকাশ এবং তানিশা অন্তরঙ্গ কিছু ছবি দেখায়।সবটা দেখে সকলে হতবাক।অবাক নয়নে তাকিয়ে রয় তানিশা নামক নিষ্পাপ মেয়েটির পানে।যে কিনা এতদিন ধরে পাগলের মতো ভালোবেসেছে আদ্র নামক কাটখোট্টা নামক ছেলেটিকে।রাগে ক্ষোভে ঘৃণায় চোখ সরিয়ে নিলো সবাই।তানিশার বাবা রেগে তাকালেন মেয়ের দিকে।তানিশা মাথা নচু করে রইলো।আচমকা একটি ছেলেকে ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে বাসায় ঢুকলো সায়েম।সকলে সেদিকে দৃষ্টি রাখলো।ছেলেটির নাক ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।হাতে পায়ে জায়গায় জায়গায় ছিলে গেছে।ঘাম ঝরছে অনবরত।ওকে এভাবে দেখে তানিশা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।দৌড়ে গিয়ে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘একি অবস্থা তোমার আকাশ কি হয়েছে’?কাঁদতে কাঁদতে অবস্থা খারাপ তাঁর।আদ্র বাঁকা হাসলো।আদ্রের হুমকি ধামকি পেয়ে তানিশা নিজের সকল দোষ স্বীকার করে নিলো এবং ওকে মারার কারণ জানতে চাইলে আদ্র বললো,

‘ও আমার বন্ধু ছিলো কিন্তু কেন এতটা ক্ষোভ আমার প্রতি জানতাম না আমি তবে আজ ও বলুক এবং ওকে মারার একমাএ কারণ মুগ্ধতা’।উৎসুক চোখে তাকিয়ে রইলো সকলে।মুগ্ধতা নামটি আকাশ তানিশা ছাড়া কারো কাছেই পরিচিত লাগলো না।বড্ড অপরিচিত।পাশ থেকে আদ্র বললো,

‘ওহ কাউকে বলা হয়নি আমি মুগ্ধতা নামক একটি মেয়েকে ভালোবাসি।কিন্তু সেটা কীভাবে যেন তানিশা জেনে যায় এবং আকাশকে বলে দেয় তখন আকাশ ভয় পায় যে আমি যদি মুগ্ধতার প্রতি দুর্বল হয়ে যাই তাহলে ওর প্ল্যান ভেস্তে যাবে তাই মুগ্ধতা কে তুলে নিয়ে ওকে সমাজের চোখে আমার কাছে দুর্নাম করতে চেয়েছিলো যাতে আমি ওর দিকে আর ফিরে না তাকাই।তানিশাকেই বিয়ে করি এবং ওরা ওদের প্ল্যানে সাকসেস হয়।’এতগুলো কথা বলে দম ছাড়লো আদ্র।সকলে নিশ্চুপ শ্রোতার মতো শুনে যাচ্ছে কারো মুখে কোনোকথা নেই।আদ্রের মা কাঁদছেন।আদ্রিতা সায়েমের মনে লাড্ডু ফুটছে।আদ্র খানিক চুপ থেকে আবার বলে,

‘সেদিন সৌভাগ্যবশত মুগ্ধতার কোনো ক্ষতি করতে পারেনি আমাদের চেষ্টায় আমরা ওকে সেইফ করি। ওদেরকে এরেস্ট করলে জিজ্ঞাসা বাদে আকাশের নামটা উঠে আসে কিন্তু কিছুতেই হিসাব মিলছিলো না। কে এই আকাশ হঠাৎ করে মেয়ে তুলে ফুর্তি করবে কেন সেটা ভেবে পাচ্ছিলাম না।তারপর সেদিন আমাদের বাসা থেকে যাওয়ার পর তানিশা এবং আকাশকে একসাথে একটি হোটেল ঢুকতে দেখি আর তাদের কিছু কথাবার্তা কানে আসে এবং সেদিনই ফটোগুলো তুলি ব্যস সবটাই পরিষ্কার।এইবার বল বকাশ তুই কেন আমার সাথে এমন করছিস কি ক্ষতি করেছি আমি তোর?

আকাশ এক হাতে নিজের রক্তাক্ত মুখ মুচলো।অতঃপর বললো,

‘আজ লুকানোর মতো কিছু নেই সব বলে দিচ্ছি।তুই আমি আর রাদিফ আমরা তিনজন ছিলাম জানের জিগার দোস্ত।তারপর আদ্রিতাকে দেখে আমার ভলো লাগে ভালোবেসে ফেলি তোকে জানালে তুই খুব
মজা করেছিলিস যখন বুঝলি আমি সিরিয়াস তখন পুরো ভার্সিটির সামনে আমায় অনেক অপমান করেছিস সেজন্য আমি এসব করেছি।যাতে পুরো সমাজের চোখে তোকে তোর পরিবারকে অপমানিত হতে দেখতে পারি।আর তানিশা আমায় ভালোবাসে বলতে গেলে আমি বলতে পাগল।আমিও খুব ভালোবাসি ওকে।তাই আমাকে পাওয়ার জন্য সব কথা মেনে নেয়।ওর কোনো দোষ নেই সব আমার জন্যই করেছে’।

সকলে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।এতসবের পেছনে এত লুকায়িত কাহিনী রয়েছে সেটা কেউই বুঝতে পারে নি।সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে আদ্রিতা কারণ এসবের কিছুই জানে না সে।অথচ তাকে ঘিরে এতকিছু ঘটে গেছে এতদিনে।এজন্যই তানিশা ওকে সহ্য করতে পারতো না।সকলের সাথে ভালো ব্যবহার কীলেও ওর প্রতি ছিলো রাগ ক্ষোভ সে কারণে ও নিজেও সহ্য করতে পারতে না তানিশাকে।আদ্রের মা কাঁদছেন ওই ধুরন্ধর মেয়েটার কারণে ছেলেটাকে কত কথা শুনিয়েছেন আজকে গায়ে পর্যন্ত হাত তুলেছেন তিনি আর সেই কিনা এত বড় ধোকা দিলেন।করুন অশ্রু ভরা চোখে চাইলেন ছেলের দিকে।আদ্র হাসলো হেসে এগিয়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে বললো,

‘কেঁদো না আম্মু!আমি জানি তুমি কেমন।সবাই পরিস্থিতির স্বীকার।তানিশার নমনীয় ব্যবহার ভদ্রতা সবকিছুই তোমাকে ওর প্রতি সদয় হতে বাধ্য করেছে।আমি কিছু মবে করিনি তুমি কষ্ট পেও না’।
আদ্রের মা কিছুটা স্বাভাবিক হলেন।তানিশার বাবা মাথানিচু করে কোনোকথা না বলে বেড়িয়ে গেলেন।তানিশা আকাশ দুজনে কেঁদে কৃষমা চাইলো তাদের অপরাধের জন্য। আদ্র দুজনকে ক্ষমা কে দিলো।এবং পরবর্তী এমন কিছু ঘটলে সেটার শাস্তি কড়ায় গনৃডায় বুঝিয়ে দেবে বলে হুমকি দিতে ভুললো না সে।
——————–

একটি পার্কে পাশাপাশি বসে আছে মুগ্ধতা জামান এবং আদ্র।মূলত আদ্রই ডেকেছে ওকে।মুগ্ধতার এখানে আসার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না কারণ একজন বিবাহিত পুরুষের মুখোমুখি হতে চায় না সে।তাছাড়া যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলো অনুভূতিরা রঙিন হয়েছিল সে অন্য কারো তাই যথা সম্ভব তাকে এড়িয়ে চলতে চায় সে যাতে অনুভূতি গুলো গাঢ় না হয়ে ফিকে হয়।কিন্তু কোথায় কি এইতো আজ চারদিন হয়ে গেলো তবুও তাকে মুছতে পারলো না সে।উল্টো তাকে মনে করে চোখের জল ফেললো।যখন মনে পরতো লোকটা অন্য কারো তখন কি অসহনীয় যন্ত্রণা হতো পীড়া দিতো তা একমাত্র সেই জানে।দুজনে চুপচাপ হঠাৎ মুগ্ধতার সামনে হাঁটু গেরে বসে একটি আংটি হাতে নিয়ে বললো,

‘এই বিবাহিত চার বাচ্চার বাপ আপনাকে বিয়ে করে নিজের ঘরের রমনী করে রেখে দিতে চায়।আপনি কি এই চার বাচ্চার বাবাকে বিয়ে করবেন’? কথাটা শুনেই অবাক হয়ে রইলো মুগ্ধতা।নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না তার।বিস্মিত হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো কিয়ৎক্ষণ তারপর বললো,

‘আপনার লজ্জা করে না এসব বলতে’?আদ্র হাসলো তার কারণ সম্পর্কেও অবগত সে।আফিফ বা সে কেউই তানিশা সেদিন যা বলেছে সে সম্পর্কে কিছু জানায় নি।তাইতো একটা ভুলকে ধরে বসে আছে। আদ্র আবারও বললো,

‘কি হলো একসেপ্ট করলে না এই বাচ্চার বাপটাকে।বাচ্চার বাপকে বুঝি জীবনসঙ্গী করা যায় না’।।মুগ্ধতার রাগটা যেন তিরতির করে বেড়ে গেলো।লোকটা তাকে নিয়ে মজা নিচ্ছে উপহাস করছে।কড়া গলায় বললো,

‘ফাজলামো করছেন?আমাকে এখানে ডেকে এনেছেন ফাজলামো করার জন্য’?
ওর ব্যবহারে আদ্র একটুও অবাক হলো না এসব যেন জানাই ছিলো তার তবুও বললো ‘

‘নাহ আমি সিরিয়াস!’

‘ঘরে বউ বাচ্চা রেখে বাহিরের একটা মেয়েকে এসব বলতে লজ্জা করছে না’।

‘আমার পুরো কথাটা আগে শুনো তারপর বলো’।আদ্র সবকিছু খুলে বললো।মুগ্ধতার অভিব্যাক্তি ঠিক বুঝা গেলো না।আদ্র হাসলো আগে সব ধোঁয়াশায় থাকলেও আফিফের কথায় এখন পরিষ্কার মুগ্ধতা নামক মেয়েটিও ভালোবাসে তাকে।সেজন্য সেদিনের পর আর সামনে আসে নি তার।ওর চোখে মুখে ফু দিয়ে বললো,

‘জানিনা কিভাবে কখন তোমাকে ভালোবেসে ফেললাম নিজেই জানিনা।যেখানে প্রথম দেখাটাই অনাকাঙ্ক্ষিত সেখানে পরবর্তীতে তোমাকে ভালোবাসা যথেষ্ট টাফ ছিলো।অন্যদিকে আমার আর তানিশার বিয়ে ঠিকঠাক।কিন্তু কখনও ওকে সেভাবে দেখিনি।বড় বিরক্ত লাগতো মেয়েটাকে ওর অতিরিক্ত ভালোবাসা কেয়ার অসহ্য লাগতো আমার কাছে।সেখানে তোমার স্পর্শ চ্যাটাং চ্যাটাং কথা রাগ জেদ এই সব কিছুই ভালো লাগতে শুরু করলো।তুমি যতক্ষণ চোখের সামনে থাকতে ততক্ষণ নিজেকে সবচেয়ে খুশী লাগতো।ভালো থাকতাম নিজেরই কাছে।তোমাকে যেদিন বিধ্বস্ত অবস্থায় পেয়েছিলাম তখন ইচ্ছে করছিলো জানোয়ারগুলোকে পুঁতে দেই।কতবড় সাহস আর কত বড় কলিজা আমার মুগ্ধতাকে অপবিএ করার উদ্দেশ্যে হাত বাড়ায়।।আস্তে আস্তে বুঝে গেলাম প্রতিশোধের আশায় যে খেলায় আমি মেতেছিলাম সেই খেলায় গোঁ হারা হেরে সেই মেয়েটির কাছেই ধরা পরেছি আমি।হ্যাঁ মুগ্ধতা আমি ওই দিনের অপমানের বদলা নেওয়ার জন্য তেমার সাথে মিশে ছিলাম কিন্তু পারিনি প্রতিশোধ নিতে তার বদলে পাগলের মতো ভালোবেসে ফেলেছি।প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না’।ওর আকুতি ভরা চাহনী চোখে মুখে কাতরতা ওর ভিতরটা নাড়িয়ে দিলো।ও তো ভালোবাসে লোকটাকে।এই তো গত চারদিন বিষন্নতায় ডুবে ছিলো সে।কিচ্ছু ভালো লাগছিলো না সবকিছু কেমন ঘোলাটে বিষাদময় হয়ে উঠেছিলো।

আদ্র আবারও বললো,

❝ওগো প্রণয়িনী তুমি কি হবে আমার ঘরের রমনী❞
আমার হৃদয়হিণী।কথাটা শুনে চমকে তাকালো মুগ্ধতা। আদ্র হাসলো।ওর হাতটা এগিয়ে এনে ওর হাতে পরিয়ে দিলো ওর নামের আংটি টাকে।মুগ্ধতা না কোনো বাধা দিলো আর না কিছু বললো শুধু আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইলো কিয়ৎক্ষণ ওর হাতের দিকে। আদ্র নিজের ওষ্ঠ ছোঁয়ালো ওর নরম তুলতুলে হাতে।ওর স্পর্শে সমস্ত শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো তার।খানিক্ষন পার হয়ে ধাতস্থ হয়ে বললো,

‘আপনিই সেই’?আদ্র শব্দ করে হাসলো।তারপর বললো

‘কি ভেবেছিলে’?মুগ্ধতা আবারও অবাক হলো বেশ।আজ যেন চমক পাওয়ার দিন তার।চমকের শেষ নেই।

‘ম্যাসেজের ছেলেটাও আপনি?কিন্তু কি করে’?

‘হুম ওই ছেলেটা আমি।প্রথমদিন মাথায় জেদ চেপেছিলো ভেবেছিলাম যেই ম্যাসেজ ফোন কলের জন্য এতসব তখন এসব দিয়েই তোমাকে জ্বালাতন করবো কিন্তু এউ জ্বালাতন করতে গিয়ে যে নিজেই জ্বলে পুড়ে যাবো সেটা বুঝতে পারিনি।দেখ একটা জেদের কারণে আজ তোমায় ভালোবেসে ফেললাম’।মুগ্ধতা অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো নিজের প্রথম অনুভূতি প্রথম ভালোবাসার সুপুরুষটির দিকে।যাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে সে।মুগ্ধতা নিজের অনুভূতি গুলোকে ধামাচাপা দিয়ে বললো,

‘কিন্তু আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না আমি ভালোবাসি হুটহাট ম্যাসেজ দেওয়া,আমার খারাপ ভালো করার,মন রঙিন করা বাক্য ধ্বনির প্রেরককে।তবে আপনার জন্য বিষন দুঃখ হচ্ছে এত ভালোবাসার পরও ভালোবাসা পেলেন না’।আদ্র হাহকারের সুরে বললো,

‘দোয়া করি সেই ম্যাসেজ প্রেরক কে নিয়ে সুখী হন।আমি আপনাদের মধ্যে দেয়াল হয়ে দাঁড়াবো না’।মুখ কালো করে মুগ্ধতাকে রেখে সামনে এগুলো সে।মুগ্ধতা কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না।কিছুটা দূরে যাওয়ার পর মুগ্ধতা দৌড়ে গিয়ে সকল জড়তা লজ্জাকে চাপিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘আমাকে একা ফেলে কোথায় যাচ্ছেন?এই না বললেন ভালোবাসেন’? সটান দাঁড়িয়ে থেকে বললো,
‘এখনও বাসি’।
‘তাহলে আমাকে ফেলে যাচ্ছেন যে’?
‘তুমি তো বললে আমাকে ভালোবাসো না’?
‘আপনি আর সে একই তো তাহলে’?
আদ্র হাসলো উচ্চ সুরে। অতপর নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,

‘এভাবে অভিমানের ছুতোয় প্রিয়জনের একটুখানি ছোঁয়া পেতে হুটহাট অভিনয় করেও অভিমান করতে হয়’।মুগ্ধতা লজ্জা পেলো ভীষণ মাথা নুইয়ে নিলো সে।আদ্র দুহাতে ধরে মাথা তুলে ললাটে গভীরভাবে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিলো।মুগ্ধতা লজ্জায় মুখ লুকালো আদ্রের বুকে।শক্তপোক্ত হাতের বন্ধনীতে বন্দি হয়ে কাটালো অনেক্ক্ষণ।আজ সকল দুঃখ কষ্ট না পাওয়ার বেদনাকে চাপিয়ে এক হলো দুজন।সকলের সিদ্ধান্তে খুব শীঘ্রই একই ছাদের তলায় টোনাটুনির সংসার হবে তাদের। আদ্রের প্রণয়িনী সারাজীবনের জন্য থাকবে তার সাথে তার পাশে।

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে