প্রণয়িনীর হৃদয়কোণে পর্ব-২৪+২৫

0
1403

#প্রণয়িনীর_হৃদয়কোণে
#আফসানা_মিমি
| চব্বিশ তম পর্ব | +|পঁচিশ তম পর্ব |
❌ কোনভাবেই কপি করা যাবে না।❌

আজ ভাইয়ার হলুদ। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে। কাঁচা হলদে রঙের থ্রি পিস পরেছি। শাড়ি পরিধান করে দৌঁড়াদৌঁড়ি করলে দেখা যাবে ভাইয়া, বাবার সামনে শাড়ি ঠুস করে খুলে গেছে। এই রিক্স নেওয়া যাবে না।
মামা-মামী গতকাল রাতে এসেছে।
আর কিছুক্ষণ পর ভাইয়াকে হলুদ দিয়ে গোসল করানো হবে। আমি তো ভাবছি অন্য কিছু। এত সুন্দর একটি দিনে আমি যদি কিছু না করি তাহলে কীভাবে কি? আমার বাড়িতে বিয়ে, আমারই ভাইয়ার বিয়ে একটু তান্ডব না ঘটালে কি আর বিয়ে মনে হবে?

নিজের ঘরে এসে আবুলের ভাই হাবলুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হাবলুকে বিশেষ একটি কারণে বাহিরে পাঠিয়েছি। নিচে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। পাড়ার বাচ্চারা এসেছে। সকলের পরিধানে নিশ্চয়ই নতুন পোশাক! ইতিমধ্যে আবুলের ভাই হাবলু এসেও হাজির হয়। চোখে মুখে তার ভয়। নজর এদিক সেদিক ঘুরিয়ে আমাকে বলে,
” আফা! রং দিয়া কি করবেন? ভাইরে দেখলাম খুব খুশি। এই রং ভাইয়ের উপর ঢাললে,,,,,

আবুলের ভাই হাবলু আসলেই আহাম্মক। ভাইয়ার সাথে দুষ্টুমি করতে যাবো কেন? আমি তো নিচে বাচ্চাদের জ্বালাতন করব। দোতলায় আমার ঘরের বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। ফুটপাতে মানুষের আনাগোনা আজ খুব বেশি। এজন্যই রাস্তার পাশে বাড়ি বানাতে নেই। কোনটা পথচারী আর কোনটা মেহমান বুঝতে পারছি না। আকস্মাত আমার চোখ একজনের উপর আটকে যায়। অন্তর নামক যন্ত্রটি হঠাৎ ধুকপুক আওয়াজ করতে থাকে। রাস্তার ঐ পাড়ে আমার সাদা কইতর হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। সাদা পাঞ্জাবীতে পবিত্র দেখাচ্ছে। ভাইয়ের হাত ধরে নেংটি কইতর। হুবহু ভাইয়ার কার্বন কপি। আমি যেন সম্মোহিত হয়ে যাচ্ছি। হাবলুর হাত থেকে লাল রং গুলানো মগ হাতে নিয়েছি সেই কখন। সাদা কইতর পথ চলছে সাথে আমার দৃষ্টিও নড়ছে। আমাদের বাড়ির নিচে এসেই সে বারান্দার দিকে তাকায়। আমাদের দৃষ্টি মিলে যায় সাথে সাথে সাদা কইতর ওয়াও বলে দাঁড়িয়ে যায়। এই মুহূর্তে আমি সম্মোহিত, সাদা কইতরের দিকে তাকিয়েই না চাইতেও হাতের মগের সব রং নিচে ফেলে দেই।

সাদা কইতরের সমস্ত শরীরে রং মাখামাখি। অসহায় চোখে আমাকে দেখছে। নিচ থেকেই চিল্লিয়ে বলে,
” নতুন বরকে শ্বশুর বাড়িতে এভাবে আমন্ত্রণ জানালে আয়মান?”

ইয়া আল্লাহ্! একি করেছি আমি! বাচ্চাদের উপর না ফেলে সাদা কইতরের উপর রং ফেলেছি! আজ তো আমার রক্ষে নেই। তবে সাদা কইতরকে দেখতে লাল হনুমান লাগছে। এক পলক দেখে না হাসা অসম্ভব। আর আমি যে হাসবো না তা ভাবা পাগলামি। বারান্দায় দাঁড়িয়েই উচ্চস্বরে হাসছি। আমার হাসি দেখে সাদা কইতরও হেসে ফেলে। আমি উপর থেকে হেসে বলি,
” সাদা কইতর আজ লাল কইতর,
উপরে ভালা ভিতরে খচ্চর।”

” কি বললে আয়মান!”

সব শেষ! সাদা কইতর ক্ষ্যাপেছে। এবার রক্ষা নাই। সাদা কইতর বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেছে। আমি জিহ্বা কে’টে এবার নিজের প্রাণ বাঁচাতে দৌড়। কোথাও লুকাতে হবে নয়তো আজ রক্ষা নেই। সাদা কইতর আমাকে হাতের নাগালে পেলে নিশ্চয় রঙের ডিব্বায় গোসল করাবে।
বাড়ি ভর্তি মানুষ। পরিচিত অপরিচিত অনেকেই আছে কোথায় লুকাই! প্রথমে ঢুকলাম বাবার ঘরে। বিশেষ কোন স্থান পেলাম না লুকানোর। এরপর চলে গেলাম ভাইয়ার ঘরে। ভাইয়ার বন্ধুরা দখল করেছে সেথায়। পছন্দ হল না। এখন একটা জায়গাই বাকী আছে, সেটা হচ্ছে ছাদ। সেখানে গেলে সাদা কইতর আমাকে খুঁজেই পাবে না। ছাদের চিলেকোঠা ঘরে গিয়ে দরজা মেরে বসে থাকব। বাহ আমার কি বুদ্ধি! চুপিচুপি সকলের নজরের এড়িয়ে ছাদে চলে গেলাম। চিলেকোঠার ঘরে প্রবেশ করে দরজা আটকে এক জায়গায় বসে পড়লাম। যদি দরজায় করাঘাত করে তাহলে চুপ করে থাকবো। বের হবো না। শেষে সাদা কইতর অসহ্য হয়ে চলে যাবে।

নিজের বুদ্ধি উপর তারিফ করতে ইচ্ছে করছে। আমি এত বুদ্ধি নিয়ে চলি! এজন্যই তো আমি সব জায়গায় জিতে যাই। শুধু সাদা কইতরের সাথে পেরে উঠি না। সে যাই হোক, আপাতত কোন কাজ নাই তাই বসে বসে নখ কামড়াচ্ছি। এটা আমার পূর্ব অভ্যাস। এজন্য সাদা কইতর কতই না বকা দিয়েছে! কিন্তু তাতে কি? আমি তো আমি কারো কথা শুনি না।

আকস্মাত আমার ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাস অনুভব করলাম, পরপর অনুভব করলাম একজোড়া হাত আমার কোমর চেপে ধরেছে। সাথে সাথে আমার চোখ বড়ো হয়ে গেল। চিৎকার দিতে যাব এমনিতেই কেউ একজন আমার গালের সাথে তার গাল মিলিয়ে বলল,

” এবার শাস্তির জন্য তৈরি হও মিসেস ছটফটপাখি!”

সাদা কইতর, তাও আবার এখানে! আমার আগে এসে বসে আছে। ব্যাপারটা রহস্যজনক। আদৌও কী পিছনের মানুষটা সাদা কইতর! নাকি ভূত। ভয় পাচ্ছি, দোয়া দরুদ পড়ছি। মানত করেছি এবার যদি বেঁচে যাই তাহলে সব রকমের দুষ্টুমি বাদ দিয়ে দিবো। একদম ভদ্র বাচ্চা হয়ে যাব।

মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। থরথর করে কাঁপছি। ভাবছি, পিছনের মানুষটা যদি সাদা কইতর না হয়ে ভূত হয়! তাহলে তো এখনই আমার ঘাড় মটকে দিবে। আর আমি মরে যাব। আমার বাসর হবে না, না হবে বাচ্চা। আমি তো এত তাড়াতাড়ি ম’র’তে চাই না। নানন কথা ভেবে খিচে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম। এরপর বিড়বিড় করে বললাম,

” রাগ করে না ভূত বাবাজি
খুঁজবে তোমায় শাকচুন্নি।
বুঝলে তুমি আমার সাথে,
ঘাড় মটকে দিবে সাথে সাথে।
ছেড়ে দাও না ও বাবাজি,
তুমি কচুর লতি আমি ভাজি।
একবার যদি ছাড়া পাই,
পিছনে ফিরব না তোমার দোহাই।”

পিছনের মানুষটা নিরব। একদম নিস্তব্ধ। নিঃশ্বাসের আওয়াজ শুধু অনুভব করতে পারছি। পরপর মাতাল সুরে সে বলছে,

” কথা বলছো এতেই খুশি। অভিমান ভেঙেছে মিলেছে শান্তি। এবার আর ছাড়বো না, দূরে যেতে দেব না। লুকিয়ে রাখব মনের ভেতরে। মিশিয়ে রাখবো বুকের পাজরে।”

সাদা কইতরের হাজারো ইশারা ইঙ্গিত বুঝার ক্ষমতা আমার আছে। যতই পাগলামি করি, যতই দুষ্টুমি করি। সাদা কইতরের মনের অনুভূতি বুঝার চেষ্টা করি। বিষয়টা খুব ভালো লাগে। উপভোগ করি। ইচ্ছে করছে সাদা কইতরের তালে তাল মিলিয়ে বলতে, আমিও তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু বলবো না। তার সামনে পরীক্ষা। এতদিন সে অপেক্ষা করছে আর না হয় একটু অপেক্ষা করুক! বলে না, সবুরে মেওয়া ফলে। অপেক্ষা করলে অবশ্যই ভালো কিছু পাবে।

” সাদা কইতর কি আমাকে শাস্তি দিবে? আমি ইচ্ছে করে করিনি। আমি তো,,,, এই যা কি বলছি! আমি না রাগ করেছি? তোমার সাথে কথা নাই। ছাড়ো আমাকে।”

” একবার যেহেতু ধরেছি আর কোন ছাড়াছাড়ি নাই। বুঝলে আমার চঞ্চল পাখি! এই মন এই প্রাণ সবকিছুই একটা অঞ্চল পাখির জন্যই ছটফট করে। এখন যদি সে ভুল বুঝে, অভিমান করে, তাহলে হৃদপিন্ডের কাজ করা বন্ধ হয়ে যাবে। তুমি কি তাই চাচ্ছো?

” ওই লিজা পিজ্জা যখন তোমাকে জড়িয়ে ধরলো তুমি কিছু বলতে পারলে না? ও এখন বউয়ের কথা মনে পড়েছে? কিন্তু যখন পরনারী সামনে থাকে তখন কিছু মনে থাকে না?”

আমার কথা শুনে সাদা কইতর আমার গালে হালকা করে কামড় বসিয়ে দিল। আমিও আহ করে গালটা ধরে ডলতে শুরু করলাম। পরপর তার সুমধুর সুর কানে আসে,

“তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কি’বা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম”

এই প্রথম সাদা কইতরের কণ্ঠস্বরে গান শুনলাম। সাদা কইতরের গলা শুনে যে কেউ বিমোহিত হয়ে যাবে। পাশ থেকে নড়তে চাইবে না। আমার এখন তাই ইচ্ছে করছে। শরীরের ভার পুরোটাই সাদা কইতরের উপর ছেড়ে দিলাম। সাদা কইতর গুনগুন করে গান গাইছে আর আমার সাথে দুলছে।
বিষয়টা দেখতে সিনেমাটিক হলেও অনুভূতিগুলো গাঢ়, প্রখর। যা কাউকে বোঝানো সম্ভব না। আমি এই অনুভূতির সাথে এই প্রথম হাত মিলাচ্ছি। কখনো হাসছি, তো কখনো কাঁদছি আবার অভিমান করে দূরে সরে যাচ্ছি। আবারও সেই অনুভূতিময় জীবনে পদার্পণ করছি।
———————————

ভাইয়ের হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে অথচ আমি এখনো নিজের ঘরে দরজা আটকে বসে আছি। বাবারা সবাই চলে গিয়েছে। বাবা বারবার করে বলে গিয়েছে যেন তাড়াতাড়ি যাই। বাবারা যখন চলে যাচ্ছিল আমার অবস্থা তখন ছিল খুবই করুণ। সাদা কইতরের সাথে মিশে বসে থাকার কারণে আমার পুরো জামা হলুদের বদলে লাল রং হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য এর জন্য ভাইয়া এবং বাবার অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমি রং লাগিয়েছে বলে কাটিয়ে নিয়েছি। কিন্তু এখন আমার কি হবে! সাদা কইতর আমাকে একটি শাড়ি হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। বলেছে, এই শাড়ি নাকি আজ আমায় পরতে হবে
কিন্তু আমি তো শাড়ি পড়বো না
যখন এই কথা সাদা কইতরকে জানিয়েছি তখন সে নিজে চলে এসেছে আমাদের বাসায়। এই যে এখনো দরজার ঐ পাড়ে থেকে চিল্লিয়ে যাচ্ছে আর আমি ঘরে বসে চুপ করে আছি।

” আয়মান তুমি যদি শাড়ি না পরে থাকো তাহলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। ভালই ভালই শাড়ি পরে বের হও। তোমার ভাই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে তোমাকে সহিসালামতে নিয়ে যেতে। একবার যেহেতু অনুমতি পেয়েছি। সুযোগে সৎ ব্যবহার করব কিন্তু।”

“এই সাদা কইতর আমার পিছু লেগেছে কেন? আমি শাড়ি পরবো না বললাম না?”

” আপা শাড়ি পরতে পছন্দ করে না। আপনি কেন এত জ্বালাইতেছেন?”

বাহির থেকে আবুলের ভাই হাবলুর কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। আবুলের ভাই হাবলু তো আস্ত একটা আহাম্মক উল্টাপাল্টা যা ইচ্ছে বলবে। সাদা কইতরের যা রাগ! দেখা যাবে হাবলুকে ধরে মা’রা শুরু করছে। এখন তো আমার ঘর থেকে বের হতেই হবে, তাই না চাও সত্ত্বেও শাড়িটা ভালোভাবে পরিধান করে নিলাম। এখন আমার এই কাকের বাসাকে গুছাই কীভাবে? মাথা ভর্তি চুল আলগোছে খোপা করে নিলাম সামনে দিয়ে একটু বেশি ছোট ছোট চুল রেখে টিকলি পরে নিলাম। কানে একটু বড়ো দুল পরলাম গলা খালি রেখে ঠোঁটে হালকা লিপিস্টিক, চোখে কাজল দিয়ে দরজা খুলে দিলাম।

সাদা কইতর এবং হাবলু হা করে আমাকে দেখছে। এদিকে লজ্জায় আমার ইচ্ছে করছে দরজা আটকে আবার বসে থাকি। কিন্তু আমি আমার ভাইয়ের অনুষ্ঠান মিস করতে চাই না। অগত্যা দুজনকে হুশে আনার জন্য ঘরে গিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দুজনের মুখে ছিটিয়ে দিলাম।

হ্যাঁ বান্দাদের হুঁশ এসেছে হাবলুকে আদেশ দিলাম আগে আগে চলার জন্য। হাবলু তাই করলো। সে যেতেই সাদা কইতর আমার দিকে এক হাত এগিয়ে দেয় আমিও তার হাতে হাত রাখি। সাদা কইতর টেনে আমাকে জড়িয়ে ধরে পরপর মাথায় শক্ত করে চুমু খেয়ে বলে,

” অসম্ভব আয়মান! তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্তে থাকা অসম্ভব। আমার তো ভয় লাগছে এই মায়া পরীর মায়াতে পড়ে। না জানি আজ কতজন আমার হাতে শেষ হয়। তোমার দিকে নজর দিলে তাদের মেরে ফেলব মনপাখি!”

সাদা কইতরের কথা কানে যাচ্ছে না। আমি তো অপেক্ষা করছি কখন বাহিরে বের হব আর ভাইয়ার কাছে যাব। ভাইয়ার সামনে আজ মজাদার খাবার সাজানো থাকবে। বিশেষ করে আমার পছন্দের চকলেট কেক। কখন আমি ভাইয়ার কাছে যাব আর গাপুসগুপুস চকলেট কেক মুখে পুরে নিব। ভাবতেই জিভে জল চলে আসছে।

” আরে রাখো তোমার কথা। চলো তাড়াতাড়ি যাই। আমার তো তর সইছে না। কখন যে চকলেট কেকটা খাব!”

আমার কথায় সাদা কইতর ভ্রু কুঁচকে নিল এরপর বুকে হাত দিয়ে বলল,

” আমার বউ কবে যে আমায় বুঝবে।”

হলুদের অনুষ্ঠানে এসে আমার চোখ ছানাবড়া। একি এলাহি কাণ্ড! বাবা আমার সকল পছন্দের খাবারের আয়োজন করে রেখেছে। এখন ভাইয়ার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান যা ইচ্ছে হোক যাক। আমি তো খেয়েই যাব। সাদা কইতরকে রেখেই দৌড়ে বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বাবাকে বললাম,

” দেখো তো বাবা আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?”

বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এরপর বললেন,” ঠিক আমার মায়ের মত লাগছে।”

পিছন থেকে কোথায় থেকে ভাইয়া এসে বলল,

” আমি এই মেয়েটাকে খুব মিস করছিলাম। তুই যখন থ্রিপিস পরে ছিলি তখন আমার খুব খারাপ লেগেছিল। মা নেই। আগে তো মা শাড়ি পরে যখন বের হতো মার আঁচল ধরে থাকতে ইচ্ছে করত। আজ তোর আঁচল ধরে বসে থাকবো।”

বাবা এবং ভাইয়া আস্ত পাগল। আমাকে কি বসিয়ে রাখা যাবে? আমি কি বসে বসে থাকার পাত্রী? সুযোগ পেলেই তো উড়াল দিব।

ভাইয়াকে হলুদ ছুঁয়ে দিয়ে খাবারের কাছে এসে দাঁড়ালাম। এক হাতে কোকাকোলা অন্য হাতে টিপস। আমার ঐতিহ্যবাহী খাবার নিয়ে গাপুসগুপুস করে খেতে শুরু করলাম। অনেকক্ষণ যাবৎ হাবলুকে দেখছি না। ছেলেটা কোথায় গিয়ে বসে আছে কে জানে? সে যাই হোক আজকের জন্য ছেলেকে নজর বন্দি করব না।
চিপ্স খেতে খেতে দেখতে পেলাম লিজা দাঁড়িয়ে আছে। পরনে তার গর্জিয়াস লেহেঙ্গা। দেখতে মাশাল্লাহ সুন্দরই লাগছে কিন্তু মুখের এক্সপ্রেশন দেখে মনে হচ্ছে সে বিশ্ব নায়িকা।
আমাকে দেখতে পেয়ে আমার কাছে এসে বলল,

” এই তুবা তুই কি রাদকে দেখেছিস? আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে এখানে আসতে এখন তারই খবর নেই।”
কিছু একটা ভেবে আবার বলল,
” তুই একটা খবর জানিস? রাদ আজ সকালে আমাকে ভালবাসার কথা জানিয়েছে। আর আমার আর রাদের এখন প্রেম চলছে, গভীর প্রেম।”

লিজার কথা শুনে হাসি চলে আসলো। মুখ থেকে কোকাকোলা কিছুটা পড়েও গেলে নিচে। যে ছেলে আমাকে ভালোবাসে বলে বলে ঘুরে বেড়ায় সে নাকি এই পাগলকে ভালবাসবে। কখনোই না। সাদা কইতরের উপর আমার পরিপূর্ণ বিশ্বাস আছে সে কখনো লিজা পিজ্জা নামক বান্ধবীকে ভালবাসতে পারে না। লিজার কাছ থেকে কথা উদ্ধার করতে হবে তাই তালে তাল মিলিয়ে বললাম,

” আরে দোস্ত অভিনন্দন। মিষ্টি খাওয়াবি না? আঙ্কেল আন্টি জানে? আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি তুই তো খাওয়াবি না এই নে আমি তোকে মিষ্টির বদলে কোকাকোলা খাওয়াচ্ছি।”

বলেই কোকাকোলার বোতল লিজার মুখে ঢুকিয়ে দিলাম। বোতলের মধ্যে ইচ্ছেমতো চাপ দিতে লাগলাম যেন কোক ওর মুখের ভেতর ঢুকে নাকে মুখে বের হয়ে যায়। আসলে আমার রাগ সব ঝাড়ছি এই মেয়ের উপর।
পুরো কোকাকোলা শেষ করেছি। লিজা ক্লান্ত। শেষে জোরে নিশ্বাস ত্যাগ করে বলল,

” পাগল হয়ে গেলি নাকি তুই? আমাকে খাওয়াচ্ছিস নাকি মেরে ফেলার ধান্দা করছিস। এই তুই কি রাদকে পছন্দ করিস?”

” সে কী বিশেষ কেউ? নাকি শাহরুখ খান?”

আমার কথা শুনে লিজা কিছুটা ঠিকঠাক হয়ে বসলো। এরপর বুক ফুলিয়ে মুখ ফুটে বলল,

” মিথ্যা বলছিস কেন? এমন একটা হ্যান্ডসাম ছেলেকে তুই পছন্দ করিস না? বিষয়টা সত্যি অবাক হয়েছি। যার সাথে তুই দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা ঝগড়া করিস তাকে পছন্দ করিস না?অবশ্য পছন্দ করবি কীভাবে? তোর তো মন নেই। তোর মাথায় তো শুধু আছে দুষ্টুম। মনে নেই কোন প্রশান্তি। আর তোর মাথায় যা কাকের বাসা! কোন ছেলে তোকে পছন্দ করবে না। আচ্ছা সেসব কথা বাদ দে। তুই থাক এবং কোকাকোলা গিল। আমি তোর ভাইয়ের সাথে কয়েকটা ছবি তুলে আসি। আর রাদকে খুঁজি। আজ রাদের সাথে লং ড্রাইভে যাব।”

লিজা পিজ্জা চলে গেল। এদিকে রাগে ইচ্ছা করছে ওর মাথার মধ্যে ডাব ভাঙতে। হাতের বোতল সজোরে মাটিতে ফেলে বললাম,

” ইস লং ড্রাইভে যাব। দেখিস পেত্নী সাদা কইতর আজ আমার সাথেই থাকবে। তোর মত পেত্নীকে নিয়ে লং ড্রাইভে যেতে তার বয়েই গেছে।”

মাথা নষ্ট,মনে বড়ো কষ্ট। হলুদের অনুষ্ঠান সেই কখন শেষ। অনেকেই বাড়ি চলে গেছে। হাবলু কোথা থেকে দৌঁড়ে এসে বলল,
” হলুদের অনুষ্ঠানে চোর ঢুকছিল। আমি মাইরা বাইর করে দিছি।”

পাগলে কত কথাই বলে। হাবলুর কথা কানে নেই না। লিজা পিজ্জার দেখা নাই সাথে সাদা কইতরেরও। না জানি আমার সাদা কইতরকে ঐ পেত্নি কোথায় নিয়ে গেছে! ভেবেই খারাপ লাগছে।
আমার কাছ থেকে পাত্তা না পেয়ে হাবলু বাবার কাছে চলে গেল। আমি জানি, বাবাকে গিয়েও ঐ চোরের কথাই বলবে। বললে বলুক।
ছবি তোলার জন্য কয়েকটা জায়গা সাজানো হয়েছে। লিজার দেখা মিলল সেখানেরই কোন এক স্থানে। বিভিন্ন স্টাইলে ছবি তুলছে। সদর দরজা দিয়ে তখনই সাদা কইতরকে দেখতে পেলাম। আমি এই মুহূর্তে কি হয়েছে জানি না। আমাদের কে দেখছে পাত্তা দিচ্ছি না। সাদা কইতরের কাছে গিয়ে হাত ধরে ফেললাম। সাদা কইতর অবাক নয়নে তাকিয়ে। চোখে চোখে হাজারো প্রশ্ন করছে সে। আমিও সুন্দর একটা হাসি উপহার দিয়ে সাদা কইতরকে টেনে একটা জায়গায় এসে দাঁড়াই। ক্যামেরা ম্যানের উদ্দেশ্যে বলি,
” আমাদের ছবি তুলুন তো?”
সাদা কইতরকে জড়িয়ে ধরে কয়েকটা ছবি তুললাম। শেষে অবিশ্বাস্যকর একটা কাণ্ডও ঘটালাম। সাদা কইতরের ডাল গালে চুমু দিয়ে বললাম,

” আমি তোমাকে খুব বেশিই ভালবাসি, আমার সাদা কইতর!”

চলবে…………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে