প্রজাপতির রং পর্ব-২৭+২৮

0
1001

#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_27
#Writer_NOVA

সময় এখন ৯ টা বেজে ৫০ মিনিট। যতদ্রুত সম্ভব অফিসে যেতে হবে।আদর কল করে জলদী যেতে বললো।সকালে যা কাজ করেছি তাতে আজ অফিসে যেতেই ইচ্ছে করছিলো না।কিন্তু চাকরী বাঁচাতে হলে এখন অফিসে যেতে হবে।তায়াং ভাইয়ার সাথে দুদিন ধরে কোন কথা হয়নি।সেই যে দুই নাম্বার শ্বশুর বাড়ি থেকে ফিরলাম।তারপর থেকে তায়াং ভাইয়া খুব ব্যস্ত থাকে।কি আর্জেন্ট কাজ ছিলো তাও বলেনি।ওর জন্য ঐ ঠিকানাবিহীন বাড়িতে সবার সাথে সময় কাটাতে পারলাম না।ওর ওপর হেব্বি রেগে আছি আমি।এখন তো আরো বেশি রাগ লাগছে।কোন রিকশা দেখছি না।গাড়ির হর্ণের শব্দে ধ্যান ভাঙলো।একটানা কেউ হর্ণ বাজিয়ে যাচ্ছে। রাগটা এবার সাত আসমানে উঠলো।পেছনে ঘুরে দেখি একটা কুচকুচে কালো প্রাইভেট কার।রাগটাকে হজম করে হাঁটতে লাগলাম। আবারো হর্ণ বাজাচ্ছে। এবার রাগটা হজম করতে পারলাম না।পেছনে ঘুরে দ্রুত গাড়ির সামনে গিয়ে জানলার কাচে টোকা দিলাম।

আমিঃ সমস্যা কি আপনাদের? রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কি নীরবে যেতে পারেন না।সবাইকে কি বাদ্য বাজিয়ে শুনাতে হয় যে আপনি এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন।এত হর্ণ বাজাচ্ছেন কেন?

গাড়ির কাচ খুলে গাড়ির মালিক আমার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে কখন থেকে তাকিয়ে আছে। সেদিকে আমার খেয়াল নেই। আমি একটানা তাকে বকেই যাচ্ছি। আর সে এক হাত গালে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার দিকে নজর যেতেই আমি থমকে গেলাম।এতো দেখছি রোশান দেওয়ান। এই বেটা এখানে কি করে?

রোশানঃ আমার পাখি মনে হচ্ছে অনেক রেগে গেছে। কুল ডাউন বেবী।এত রাগ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।তবে তোমাকে রাগলে অনেক বেশি কিউট লাগে।একদম গুলুমুলু বাচ্চাদের মতো।

কেমনডা লাগে কন তো আপনারা?এমনি আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে এসব গা জ্বালানো পিরিতির আলাপ শুনলে কে বা ঠিক থাকে।রাস্তার মধ্যে কোন সিনক্রিয়েট করতে চাইছি না।

আমিঃ হাতটা কি খুব বেশি নিসপিস করে? এতই যখন হাতটা পিড়পিড় করে তাহলে সেই হাতটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখলেই তো পারেন।হর্ণ বাজিয়ে শব্দ দূষণ করার কি দরকার?কানটা পচিয়ে ফেললেন।

রোশানঃ কখন থেকে তোমাকে ডাকছি।কিন্তু তোমার কোন হুশ নেই। হাত নাড়িয়ে কি জানি বিরবির করছো।তাইতো বাধ্য হয়ে আমাকে এই ব্যবস্থা নিতে হলো।তা যাচ্ছো কোথায়?

আমিঃ মরতে, যাবেন।

রোশানঃ চুপ।(ধমক দিয়ে)

রোশান এতো জোরে ধমক দিয়েছে যে আশেপাশের যতলোক ছিলো সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। রোশান মরার কথা শুনে যে এতটা রেগে যাবে তা আমি বুঝতে পারিনি।ওর মুখটা রক্তিম হচ্ছে। আমি ভয় পেয়ে মানে মানে কেটে পরতে চাইলাম।চলে যাওয়ার জন্য সামনে ঘুরলেই রোশান ডাকলো।আমি জিহ্বায় কামড় দিয়ে পিটপিট করে ওর দিকে তাকালাম।

রোশানঃ এসব কি ধরনের কথাবার্তা? এরপর থেকে উল্টো পাল্টা কথা বললে ভুলে যাবো তুমি আমার কি হও? যত্তসব ফালতু কথা।

রোশানের কথা শুনে আমি বোকার মতো প্রশ্ন করে বসলাম।

আমিঃ আমি আবার আপনার কি হই?

রোশানঃ হবু বউ।

আমিঃ আশায় থাকে কাউয়া, পাকলে খাইবো ডেওয়া।এরে দেখলেই আমার এই প্রবাদ বাক্য মনে পরে যায়।আমার স্বামী বেঁচে না থাকলেই তোমাকে চান্দু বিয়ে করতাম না।আর এখন তো সে বেঁচেই আছে। আহারে, রসুন মহাশয়।আপনার জন্য অনেক খারাপ লাগছে। যেদিন জানবেন আমার জামাই বেঁচে আছে সেদিন আপনার রিয়েকশনটা কেমন হবে?সেটা ভেবে এখন মাথা নষ্ট করতে চাই না।(মনে মনে)

রোশান আমার চোখের সামনে তুড়ি বাজালো।আমি চমকে হুশে ফিরলাম।

রোশানঃ তুমি হুটহাট কোথায় চলে যাও বলো তো?

আমিঃ কোথাও না।আমার যেতে হবে।দেরী হয়ে গেছে। (হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) আল্লাহ, ১০ টা ০৫ বেজে গেছে।

রোশানঃ চলো আমি তোমায় পৌঁছে দিচ্ছ।

আমিঃ না না লাগবে না। আমি চলে যেতে পারবো।

রোশানঃ আমি তোমার কোন কথা শুনছি না।জলদী গাড়িতে উঠো।নয়তো আমি সবার সামনে তোমাকে কোলে তুলে নিতে বাধ্য হবো।

এই পোলা বহুত রেগে আছে আমার ওপর।এরে দিয়া বিশ্বাস নাই।যদি কোলে তুলে ফেলে।তাই আমি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বললাম।

আমিঃ আপনি শুধু শুধু আমার জন্য কষ্ট করছেন।আপনার কাজ আছে তো।

রোশানঃ বর্তমানে তোমার থেকে বেশি ইম্পর্টেন্ট কাজ আমার নেই। চুপচাপ গাড়িতে উঠো।

এমনি দেরী হয়ে গেছে। তাই কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।গাড়ির সিট বেল্ট বেঁধে নিলাম।

রোশানঃ তুমি কি এখন অফিসে যাবে?

আমিঃ হুম।

রোশান কোন কথা না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।ধীর গতিতে প্রাইভেট কারটা চলতে লাগলো আমার জামাইয়ের কোম্পানির দিকে।

🦋🦋🦋

রোশান আমাকে অফিসের সামনে নামিয়ে দিয়ে বিদায় জানিয়ে চলে গেল। আমি একপলক ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে জলদী জলদী ভেতরে ঢুকে গেলাম।নিজের ডেস্কে এসে চেয়ারে বসে বোতল খুলে পানি খেলাম।তখুনি আদরের আগমন।

আদরঃ ম্যাম,স্যার আপনাকে ডাকছে।আজকে বিদেশী ক্লায়েন্টের সাথে কিছু ডিল করা আছে। সেই প্রেজেন্টেশন আপনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেই ফাইলগুলো নিয়ে স্যারের কাছে যেতে বলেছে।

আমিঃ এসে বসতেও পারলাম না। শুরু হয়ে গেছে আমাকে জ্বালানো। একটু শান্তিতে থাকতেও দিবে না। আমাকে না জ্বালালে তার পেটের ভাত বোধহয় হজম হয় না।এতো জ্বালা আমার ভালো লাগে না। ধূর,সবকিছু অসহ্য।এখানে বাপ জ্বালায়, বাসায় ছেলে।দুজন আমার জীবনটা তেজপাতা করে দিলো।থাকবো না আর এখানে।(বিরবির করে)

আদরঃ ম্যাম কিছু বলছেন?

আমিঃ না না কিছু না ভাইয়া।আপনি যান, আমি এখুনি সবকিছু রেডী করে আসছি।

আদরঃ ম্যাম, ডিলটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট আমাদের জন্য। তাই আপনাকে জলদী করে আসতে বলেছিলাম।আপনি আবার আমার ওপর রাগ করেন নি তো?

আমিঃ আপনার ওপর রাগ করবো কেন?আমার যত রাগ সব তো আমার বজ্জাত জামাইয়ের ওপর।

আদরকে মিটমিট করে হাসতে দেখে আমার হুশ ফিরলো।কি বলছিলাম আমি!! নিজের মাথায় নিজেই একটা চাপর মেরে ইচ্ছে মতো নিজেকে বকলাম।

আদরঃ আচ্ছা ম্যাম।আপনি আসুন,আমি যাচ্ছি। তবে বেশি দেরী করেন না।

আমিঃ মিস্টার আদর।

আদর ঘুরে চলে যাচ্ছিলো।আমার ডাক শুনে পেছনে ঘুরে বললো।

আদরঃ জ্বি ম্যাম।

আমিঃ আপনার স্যারের মেজাজ আজ কিরকম? না মানে উনি কি স্বাভাবিক আছে নাকি রেগে আছে?

আদর কিছু সময় কপাল,নাক কুঁচকে স্বাভাবিক স্বরে উত্তর দিলো।

আদরঃ উনি তো স্বাভাবিক আছে ম্যাম।কেন কোন সমস্যা হয়েছে।

আমিঃ না না তেমন কিছু নয়।আপনি এখন আসতে পারেন।

আদরঃ ওকে ম্যাম।

আদর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আমার ভীষণ ভয় করছে।তখন তো বেশ মজা নিয়েছিলাম।কিন্তু এখন কি হবে? এই খবিশ ব্যাটা তো আমাকে ছাড়বে না। আল্লাহর নাম নিতে নিতে ফাইল গুছিয়ে তাজের কেবিনের দিকে ছুটলাম।কেবিনের সামনে আসতেই হাত-পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে।আল্লাহ জানে ভেতরে গেলে কি করে?আমি থাই গ্লাসে কয়েকবার হাত দিয়ে বারি দিলাম।

তাজঃ কাম ইন।

দুই বার আয়াতুল কুসরী পড়ে বুকে ফু দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।উপর দিয়ে নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখেছি।

তাজঃ দরজাটা আটকে দিন, মিসেস আহমেদ।

দরজা আটকানোর কথা শুনে ভয়টা আরো জরালো হলো।বড়সড় একটা ঢোক গিলে অসহায় দৃষ্টিতে তাজের দিকে তাকালাম।কিন্তু সে আমার দিকে ভুলেও নজর দেয়নি।কাচের দেয়ালের সামনে মুখ করে কি জানি পড়ছে।পড়ছে নাকি জানি না। কিন্তু পৃষ্ঠা উল্টাতে দেখছি।আমার দিকে হালকা করে ঘাড় ঘুরিয়ে বললো।

তাজঃ আমি কিছু বলেছি।

আমিঃ জ্বি।

তাজঃ তাহলে সেটা মানছো না কেন?

ওর শান্ত ভঙ্গির কথাতে নিজের বিপদের আভাস পাচ্ছি। অনিচ্ছা থাক সত্ত্বেও দরজা আটকিয়ে তার পেছনে এসে দাঁড়ালাম।

আমিঃ এখানে সব ফাইল কমপ্লিট করা আছে।

তাজঃ টেবিলের ওপর রাখো।

🦋🦋🦋

আমি ফাইলগুলো টেবিলের ওপর রাখলাম।ওড়নার কোণা গিট মারতে মারতে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম।তাজের কোন শব্দ না পেয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে উঁকি মারলাম।তাজ এখনো এক হাতের ওপর বইয়ের আকৃতির কিছু একটা নিয়ে আরেক হাতের মাধ্যমে তার পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে।সম্ভবত কিছু খুঁজছে। ভালো মতো খেয়াল করে দেখতে পেলাম সেটা আমার ডায়েরি। ইহিরে!!!আমার সব গোপনীয় তথ্য জেনে গেলো রে😖।

আমিঃ আমার ডায়েরি। এটা আপনার কাছে ছিলো।আমি সারা বাসা খুঁজে হয়রান হয়ে গেছি।দিন,আমার ডায়েরি দিন।

তাজঃ কে বললো এটা তোমার?

আমিঃ আমি!!!

তাজঃ এটা তোমার ডায়েরি প্রমাণ দেখাও।

আমিঃ দেখুন আপনার সাথে ফালতু পেচাল পারার কোন সময় আমার নেই। আমার ডায়েরি দিন।

তাজঃ রোশান দেওয়ানের সাথে আবার কেন দেখলাম তোমাকে? আমি না বলেছি ওর থেকে তোমাকে দূরে থাকতে।ওকে আমার বেশি সুবিধার মনে হয় না।

আমিঃ সুবিধার তো আমার আপনাকেও মনে হয় না।

ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথাগুলো বলে সামনে তাকাতেই ভয় পেয়ে গেলাম।তাজ রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

তাজঃ ইদানীং একটু বেশি উড়ছো দেখছি।আমার কথার ত্যাড়ামী না করলে তোমার হয় না।

আমিঃ আপনার ফাইল চেক করুন।আর আমার ডায়েরি দিন।আমার কাজ আছে।আজাইরা কথা বলার জন্য আপনার অনেক টাইম থাকতে পারে। কিন্তু আমার নেই।

তাজ রেগে সামনে এগিয়ে আসতেই আমি কেঙ্গারুর মতো দুটো লাফ দিয়ে পিছিয়ে গেলাম।

তাজঃ আমার একটাই আফসোস।তুমি ভালো কথায় কোন কাজ করলে না।সকালে আমার ঠোঁট দুটোর বারোটা বাজিয়ে দিয়েছো।এখন আবার রোশানের সাথে এসে কথার বুলি ফুটাচ্ছো।

আমিঃ আমার যার সাথে মন চায় তার সাথে আসবো আপনার কি?আপনি আমার অফিসের বস, বসের মতো থাকেন।

তাজঃ কি বললে আবার বলো? আমি যখন তোমার বস তাহলে আমার বাসায় গিয়ে আমার খোঁজ কেন নিয়েছিলে?

আমিঃ আমি যেই কোম্পানিতে কাজ করি সেকি আসলেই ভালো নাকি লুচ্চা তা জানতে গিয়েছিলাম।

তাজঃ কি????

আমিঃ আজকাল কি কানে কম শুনেন নাকি?

তাজঃ রোশানের সাথে তোমাকে আমি যেনো আরেকবারও না দেখি।তাহলে আমিও কিন্তু ভুলে যাবো তুমি আমার স্ত্রী।

আমিঃ এ্যাহ আইছে😏!!!(মনে মনে)

তাজঃ সকালে কিন্তু বেঁচে গিয়েছিলে।এখন কে বাঁচাবে? এখন তো আমি তোমার ঠোঁটে চুমু খাবোই।

তাজ এগিয়ে আসতে আসতে কথাগুলো বললো।আমি ভয় পেয়ে শুকনো ঢোক গিললাম।এদিক সেদিক তাকিয়ে কিছু খুঁজতে লাগলাম।তাজ শয়তানি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসছে।তাজের সাথে আমার দুরত্ব মাত্র কয়েক ইঞ্চির তফাৎ।চট করে আমার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল।একটানে থাবা মেরে তাজের থেকে আমার ডায়োরিটা কেড়ে নিলাম।তারপর মাথার মধ্যে ডায়েরি দিয়ে জোরে একটা বারি মেরে আবার ভো দৌড়। দরজা খুলে সোজা বাইরে।আমাকে আর পায় কে?ঘটনার আকস্মিকতায় তাজ পুরো হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।বেচারা,বুঝতে পারেনি আমি এমন কিছু করবো।আমি তার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছি।কিছু সময় বোকাবন থেকে ঘুরে এসে তাজ ফিক করে হেসে উঠলো। আজ ব্যাটাকে যা ডোজ দিয়েছি।তাতেই খুশি লাগছে।এখন আমার ঐ গানটা অনেক মনে পরছে।”আহা কি আনন্দ আকাশে, বাতাসে”। সেটাই এখন আমি ডায়েরি হাতে নিয়ে গুণগুণ করে গাইতে গাইতে আমার ডেস্কে যেতে লাগলাম।

★★

সারা সকালটা তাজের কাজ করতে করতেই গেলো।বিদেশি ক্লায়েন্টের সাথে ডিলগুলো ডিসকাসড করে দুপুরের লাঞ্চ টাইমে একটু অবসর পেলো।তাই ভাবলো লাঞ্চটা আজ নোভার সাথে করবে।যেমন ভাবা তেমন কাজ।কিন্তু নোভার ডেস্কের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলো।কারণ কাচের ওপর পাশের সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। নোভা ডায়েরির ওপর দুই হাত গুজে সেখানে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরেছে।নিশ্চয়ই ডায়েরি লিখতে বসেছিলো। কতদিন পর নোভাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলো সে।তাই কাচে হাত দিয়ে সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে গভীরভাবে নোভাকে দেখতে লাগলো তাজ।একজন শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। আরেকজন তা নিষ্পলক চাহনীতে পর্যবেক্ষণ করছে।

#চলবে

#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_28
#Writer_NOVA

এক দিন পর…….

আজকের সকালটা অন্য পাঁচটা দিনের মতো নয়।সারা আকাশ মুখ গোমরা করে কালো হয়ে আছে।আমাদের ছোট বেলায় মা যখন বকতো তখন মুখটা যেরকম কালো করে রাখতাম।ঠিক তেমনি আজকের আকাশ। ঠান্ডা বাতাস বইছে।আজ যে এক পশলা বৃষ্টি আসবে তা আকাশ দেখলে বলা যায়।তবে আমি তো সিউর করে বলতে পারি না।বৃষ্টির মালিক আল্লাহ।তার ইচ্ছায় সব হয়।আল্লাহর যদি ইচ্ছে হয় তাহলেই তো রহমতের পানি বর্ষিত হবে ভুবনে।আকাশের রং এর সাথে মেয়েদের মনের তুলনা করা হয়।তুলনাটা কিন্তু অযৌক্তিক নয়।মেয়েদের মন আর আকাশের রং বদলাতে কোন সময় লাগে না। এখন আকাশ মেঘলা দেখলে কিছু সময় পর দেখবেন ঝকঝকে রোদ উঠেছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সকালের ওয়েদার উপভোগ করতে আমার বেশ লাগে।সাথে এক কাপ চা হলে তো কোন কথাই নেই। আজ অফিসের অফ ডে।সকালের শো নেই। বিকেলের শো করতে হবে শুধু। আগামীকাল এরিন ও হিমির টিউটোরিয়াল এক্সাম। তাই দুজন আজ সকাল সকাল উঠে পড়তে বসেছে।ওদেরকে জ্বালাতে আমার গুণধর পুত্র তো আছেই। আজ নাভান ঘুম থেকে জলদী উঠে গেছে। ওদের রুম থেকে পড়ার শব্দ পেলেই তাকে এই রুমে আটকে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।সেখানে ছুটে যাবে।তার খাতা, কলম নিয়ে আঁকিবুঁকি করবে।আর মিনিটে মিনিটে এরিন ও হিমিকে জ্বালাবে।আমি জোর করে আনতে চাইলেও আসবে না। কান্না করে মামলায় জিতে যাবে।ঐ রুম থেকে এরিনের চেচামেচির আওয়াজ আসছে। নিশ্চয়ই ওকে জ্বালাচ্ছে। একদম বাপের কার্বন কপি।ঝিরিঝিরি ঠান্ডা বাতাসে হালকা শীত করছে।চুলগুলো সেই তালে মৃদু নড়ছে।

এরিনঃ এই নোভা,নোভা রে।নাভানকে কিছু বলে যা বোইন।আমার কথা শুনছে না।

ওপর রুম থেকে এরিনের ডাক শুনে দৌড়ে ওদের কাছে গেলাম।গিয়ে দেখি এরিন হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হিমি মিটমিট করে হাসছে।নাভান তার সামনের দাঁতগুলো বের করে শয়তানি হাসি দিচ্ছে।

আমিঃ কি রে কি হয়েছে?

এরিনঃ তোর পোলার আজকে কি হয়েছে? সেই কখন থেকে আমার সাথে লেগে আছে।

আমিঃ নাভান, খালামণিকে কি করছো?

নাভান তার ১৪ টা ছোট ছোট ইঁদুরের দাঁত দেখিয়ে আধো আধো কণ্ঠে বললো।

নাভানঃ কাম(কামড়) দিছি😁।

আমিঃ বজ্জাত পোলা।কামড় দিয়ে আবার দাঁত বের করে হাসা হচ্ছে। আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন। এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দিবো।

হিমিঃ ওকে বকছিস কেন?

আমিঃ না কোলে তুলে নাচবো।ও এরকম দুষ্টু হচ্ছে কেন দিনকে দিন।

হিমিঃ ও কি বুঝে?

আমিঃ একদম কথা বলবি না। তোদের আশকারায় এরকম হচ্ছে। একটুও শাসন করতে দিস না আমায়।
এরিন কি হয়েছে ছিলো রে? ও তোকে কামড় কেন দিয়েছে?

এরিনঃ ও আমার বইয়ে মাছ আঁকবে। আমি আকতে দেইনি কেন?তার জন্য হাতটা সুন্দর করে টেনে নিয়ে গেল।আমি প্রথমে ভাবছি হয়তো আমাকে পটানোর জন্য চুমু দিবে।কিন্তু তা না করে জোরে কামড় বসিয়ে দিলো।এই যে দেখ, কি করেছে। ছোট ছোট দাঁতগুলো বসে লাল হয়ে গেছে।

এরিন ওর হাতটা সামনে বাড়িয়ে দেখালো।ওর ফর্সা হাতটা লাল হয়ে গেছে। ছোট মানুষের ছোট দাঁত হলে কি হবে। দাঁতে অনেক ধার আছে। মাঝে মাঝে ওকে ভাত খাইয়ে দেওয়ার সময় আমার আঙ্গুলেও কামড় দেয়।তখন আঙ্গুলটা জ্বলে যায়।মিনিট দুই আঙ্গুল নাড়াতে পারি না।এবার বুঝুন কি কামড় দেয়!!সারা শক্তি লাগিয়ে কামড় দেয়।

আমিঃ এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে হাতে বরফ ধর।নয়তো রক্ত জমে থাকতে পারে। আমি একা ওর কামড় খাবো কেন? তোরাও খেয়ে দেখ।আমাকে যখন কামড় দেয় তখন তো খুব বলতি ছোট বাচ্চা ছেলেটার কামড় সহ্য করতে পারিস না।এখন চিৎকার চেচামেচি করে সারা বাড়ি এক করলি কেন?

হিমিঃ আহারে এরিন!!! খুব লেগেছে।

হিমি মুখ চেপে হাসতে হাসতে কথাটা বললো।তাতে এরিন কটমট করে ওর দিকে তাকালো। তারপর মুখ ঝামটা মেরে বললো।

এরিনঃ তুই একটা খেয়ে দেখ।

আমিঃ নাভান, এদিকে আসো।

নাভান মুখ কালো করে, ঠোঁট ফুলিয়ে আমার সামনে এলো।আমি ওকে বকেছি তাই মুখের এরকম রিয়েকশন।ওর মুখ দেখে আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। কিন্তু হাসলে বিষয়টা ফান ভেবে, ও পরেরবার কামড় দিতে সাহস পেয়ে যাবে।তাই কঠিন গলায় ওকে বললাম।

আমিঃ খালামণিকে সরি বলো।

নাভানঃ 😶

আমিঃ কি হলো বলো? নয়তো তোমাকে হায়নার কাছে দিয়ে আসবো।হায়নাটা তোমাকে থাবা দিয়ে নিয়ে যাবে।তখন আমি তোমাকে একটু আনবো না। হায়নাকে বলবো নাভান পঁচা ছেলেটাকে নিয়ে যাও তোমরা।আমি অন্য একটা বেবী নিয়ে আসবো।এই বেড বয় আমার লাগবে না। সরি বলো।

নাভানঃ সুরি।(আস্তে করে)

আমিঃ জোরে বলো।আমি শুনিনি।

নাভানঃ সুরি-ই-ই-ই-ই-ই-ই(চিৎকার করে)

আমিঃ হইছে,থাম রে বাপ।কানের পর্দা কি ফাটাবি?

হিমিঃ হয়েছে আর বলতে হবে না।

আমিঃ তুমি যদি খালামণিদের সাথে এমন করো তাহলে তো খালামণিরা তোমার কাছে তাদের মেয়ে বিয়ে দিবে না।তুমি না মাঝে মাঝে ওদের শ্বাশুড়ি বলো।

এরিনঃ এমন ছেলের কাছে আমার ভবিষ্যতের মেয়ের বিয়ে দিবো না।

নাভানঃ লাগবে না।(গাল ফুলিয়ে)

আমিঃ বিয়ে হলো না আর তোরা নিজেদের মেয়ের বিয়ের স্বপ্ন দেখিস।তাও আবার আমার হিরোর মতো ছেলের সাথে। যা ভাগ।আগে নিজেরা বিয়ে কর। তোদের মেয়ে হোক।তারপর না হয় আমরা ভেবে দেখবো।কি বলো বাবা?আমি কি ভুল বলেছি?

নাভানঃ হুম।

আমিঃ ঐ পোলা,আমি ভুল বলছি?

নাভানঃ না।

আমিঃ তাহলে হুম বললি কেন?

নাভানঃ এমিনি (এমনি)।

এরিনঃ নোভা, তুই হলি একটা সুবিধাবাদী।

হিমিঃ কতখন আমাদের পক্ষে থাকিস।আবার কতখন নাভানের পক্ষে থাকিস।তোর দল পাল্টাতে এক মিনিটও লাগে না।

আমিঃ 🤣

এরিনঃ হাসিস না।

নাভানকে আরো কতখন শাসালাম। তারপর ফ্রীজ থেকে বরফ এনে এরিনের হাতে ডলে দিলাম।মাঝে মাঝে আমার ছেলের মাথায় বাপের মতো শয়তানি বুদ্ধিতে খোঁচায়। তাই সামান্য কিছুতে বিরাট কান্ড করে বসে।আবার বড় কোনকিছুতে চুপচাপ থাকে।বাপ-বেটা দুইটাই মিচকা শয়তান।আমার জীবনটা ত্যানা ত্যানা করে দিলো।

🦋🦋🦋

জীবনটা না বড় অদ্ভুত।জীবনের চলার পথে যখন আপনি পাশে কাউকে চাইবেন তখন একটা কাকপক্ষীও পাবেন না।আর যখন নিজেকে গুছিয়ে একা চলতে শিখে যাবেন তখন পাশে থাকা মানুষের ভিড় পরে যাবে।আমার জীবনটাও এখন এমন মনে হচ্ছে। যখন আমার নিজের মানুষের প্রয়োজন ছিলো তখন তায়াং ভাইয়া ছাড়া কাউকে পাইনি।এখন একা চলতে শিখে গেছি।এখন মানুষের আকাল নেই।

রোডিও স্টেশন থেকে বিকেলের শো শেষ করে একটা দোকান থেকে নাভানের জন্য চিপস, জুস ও কতগুলো চকলেট কিনে নিলাম।ধীর পায়ে রাস্তার কিনারা দিয়ে হাঁটছি। শরীরে কুলচ্ছে না।সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে।শরীরটা ভালো লাগছে না। সারাটা দিন ভালোই ছিলো।দুপুরের পর থেকে খারাপ লাগছে।আকাশটা আজ অন্ধকারে ঘেরা।গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরছে।সন্ধ্যা নামতে আধা ঘণ্টা বাকি আছে। কিন্তু সবকিছু কালো মেঘে অন্ধকার হয়ে আছে। আশেপাশে একটা রিকশার দেখাও নেই।কিছু সময় পর পর বাস,সিএনজি, প্রাইভেট কার শো শো গতিতে আমাকে ক্রশ করে চলে যাচ্ছে।ছাতাও আনিনি।আজ নির্ঘাত আমার শরীর আরো বেশি খারাপ করবে।পরনে কালো গাউন বলে রক্ষা। সাদা জামা হলে তিল পরে যেতো। হঠাৎ কয়েকটা বাইক আমাকে ক্রশ করে যাওয়ার সময়, শরীরে পলিথিনে করে তরল জাতীয় কিছু ছুড়ে মেরে দ্রুত গতিতে চলে গেল।লোকগুলো আপাদমস্তক কালো পোশাকে মুড়ানো ছিলো।মুখে হেলমেট থাকার কারণে কিছুই বোঝা যায়নি।

আমিঃ কোন শয়তান বাঁদরে রে? রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এসব করে বেড়াস? আমার ড্রেসের মধ্যে কি ছুঁড়ে মারলো।ধূর, ড্রেসটাই নষ্ট। কি ছুড়ে মারলো এগুলো।সামনে পেলে কষিয়ে গালে দুটো চড় মারতাম।ফাজিল পোলাপাইন। বাইক তো চালায় না যেনো স্প্রিড বোট চালাচ্ছে। যত্তসব ফাউল লোক।

সারা শরীরে তরল ছিটছিটে একটা পদার্থ দিয়ে মাখামাখি। আমি ওড়ানাটা নাকের সামনে আনে তার গন্ধ শুঁকেই চোখ দুটো বড় বড় করে ফেললাম।এগুলো তো পেট্রোল। কিন্তু আমার শরীরে পেট্রোল মারলো কেন? মনের মধ্যে ভয় ঢুকে গেলো।এখন যদি আবার ঐ লোকগুলো আবার এসে আমার শরীরে দিয়াশলাইের কাঠি ছুঁড়ে মারে।পেছনে তাকাতে মনে হলো কেউ আড়ালে সরে গেল।

আমিঃ হচ্ছেটা কি আমার সাথে? নতুন কোন শত্রুর আমদানি হলো আমার সাথে। আমারতো ভয় করছে।কি করবো এখন? কি করি?

মাথা কাজ করছে না।এদিকে পেট্রোলের গন্ধে ভেতর থেকে সব উল্টেপাল্টে আসছে।দ্রুত ব্যাগ হাতরে মোবাইল বের করে তায়াং ভাইয়াকে কল করলাম।তায়াং ভাইয়াও কল ধরছে না।

আমিঃ তায়াং ভাইয়া প্লিজ কলটা ধর।কলটা ধর না পাঠা।তোকে যখন আমার প্রয়োজন হয় তখুনি পাই না।আমাকে বাঁচা।

ভীরু পায়ে এগিয়ে যাচ্ছি। কোন রিকশার দেখাও নেই।
আশেপাশে মানুষজন খুব কম।একটা টং দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দুটো লোককে আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে পিলে চমকে গেল।দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলাম।পিছনে তাকিয়ে আৎকে উঠলাম। কারণ লোক দুটো আমার পিছুই আসছে।ততক্ষণে তায়াং ভাইয়া আমার কল ধরেছে।

আমিঃ হ্যালো ভাইয়া কোথায় তুই?

তায়াংঃ কেন কি হয়েছে?

আমিঃ তুই যেখানে আছিস জলদী আয়।

তায়াংঃ কি হয়েছে তাতো বলবি?

আমিঃ আমি বিপদে আছি।আমাকে বাঁচা।

তায়াংঃ কই তুই? জলদী বল কই তুই? তুই ভয় পাস না। আমি আছি তোর সাথে। তোর কিছু হবে না।বল তুই কোথায়? আমি আসছি।

আমিঃ আমি রোডিও স্টেশন থেকে একটু দূরে আছি। দুটো লোক আমার পিছু নিয়েছে। একটু আগে বাইকের থেকে একটা ছেলে পাতলা পলিথিনে করে পেট্রোল ছুঁড়ে মেরেছে। ভাইয়া ঐ লোকগুলো এখন দিয়াশলাই হাতে নিয়ে আমার দিকে আসছে।একজন কিছু সময় পরপর দিয়াশলাই থেকে কাঠি বের করে আগুন ধরাচ্ছে।

তায়াংঃ তুই ভয় পাস না। আমি আসছি।

আমিঃ ভাইয়া,আমার কিছু হয়ে গেলে আমার ছেলেটাকে দেখে রাখিস।ওর কোন ক্ষতি হতে দিস না।ওকে আগলে রাখিস।ওর বাবার কাছে ওকে দিয়ে
আসিস।

তায়াংঃ কিচ্ছু হবে না তোর।আমি আছি তো।এখুনি আসছি আমি।

আমি কানে মোবাইল ধরে দ্রুত পায়ে দৌড়াচ্ছি।তায়াং ভাইয়ার কলটা কেটে মোবাইল ব্যাগে ভরে নিলাম।আমি দৌড়াচ্ছি।পেছনে তাকিয়ে দেখলাম লোকগুলো আমার পিছু দৌড়াচ্ছে। আমি দৌড়ের বেগ আরো বাড়িয়ে দিলাম।শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি পাচ্ছি না।

বৃষ্টির বেগটা আগের থেকে একটু বেড়েছে।আমার ভীষণ ভয় করছে।কিছু দূর গিয়ে এক চিপা গলি দিয়ে ঢুকে আড়ালে লুকিয়ে রইলাম।লোক দুটো সেই গলিতে ঢুকেই আশেপাশে খুঁজতে লাগলো। আমি যথাসম্ভব নিজেকে আড়াল করে রেখেছি।আমাকে না পেয়ে লোকগুলো গলি থেকে বের হয়ে গেলো।আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছারলাম।মাথাটা কচ্ছপের মতো করে একটুখানি বের করতেই আমার মনটা খুশিতে নেচে উঠলো।তায়াং ভাইয়াকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু খুশিটা বেশিকক্ষণ স্থির হলো না।তারপর যেটা দেখলাম তাতে চোখ দুটো আমার কোটর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। তায়াং ভাইয়া ঐ লোকগুলোর সাথে কথা বলছে।তায়াং ভাইয়ার পরনে তখনকার সেই বাইকের লোকগুলোর মতো আপাদমস্তক কালো পোশাক। তবে হেলমেটটা খোলা বলে তাকে চিনতে আমার কোন ভুল হয়নি।তায়াং ভাইয়া তাদের দিকে একটা টাকার বান্ডিল বাড়িয়ে দিচ্ছে।আমার থেকে তাদের দূরত্ব মাত্র কয়েক হাত।যার জন্য আমি স্পষ্ট সব দেখতে পাচ্ছি। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।তায়াং ভাইয়াকে এতো বিশ্বাস করতাম সেই ভাইয়া কি এসব করছে? সবকিছুর পেছনে তায়াং ভাইয়ার হাত নেই তো?মুখ চেপে কান্না করে উঠলাম।ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে।এ আমি কি দেখছি?নিজেকে এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অসহায় মনে হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি না। আমার তায়াং ভাইয়া এমন হতেই পারে না।

—- কি ভাবীজী? সবকিছু নিজের চোখে দেখে কি অবাক হচ্ছেন?

পেছন থেকে একটা পুরুষালি কণ্ঠ পেয়ে পেছনে তাকাতে নিলেই, একটা বলিষ্ঠ হাত এসে আমার মুখে টিস্যু চেপে ধরলো।আমি দুই হাতে তার হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি শুরু করলাম।কিন্তু আমি ব্যর্থ।কারণ টিস্যুতে অজ্ঞান করার ঔষধ স্প্রে করে মেশানো ছিলো।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সারা পৃথিবী আমার ঘুরতে শুরু করেছে।ততক্ষণে পেছনের লোকটা সামনে এসে দাঁড়ালো।ঝাপসা চোখ নিজের সামনে একটা পুরুষের অবয়ব ঠিকই দেখতে পেলাম ।কিন্তু কে সে?তা আমি বুঝতে পারলাম না। তার আগেই তার বুকে ঢলে পরে গেলাম।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে