#পুতুল_ছেলেটি
#Last_Part
#Writer_NOVA
৫ দিন পর………
টিনের ঘেরা দেওয়া এক বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীলাভ ও সাহিয়া।তাদের মনে দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করছে।ঢুকবে কি ঢুকবে না।ছোট টিনের গেইটের সামনে বিগত পাঁচ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ঢোকার সাহস হচ্ছে না। হাতে একটা ছোট ল্যাগেজ।সাহিয়ার এবার রাগ উঠে গেলো।এতদূর যার্নি করে এসে কার ভালো লাগে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে।তাই সাহিয়া কোন কথা না বলে ভেতরে ঢুকে গেলো।পেছনে পেছনে নীলাভ।
মিনারা খাতুন চুলোয় রান্না চড়িয়েছেন।আজ তাদের বাড়ি মেহমান আসবে বলে।পাশের বাড়ির মাইশার মা এসে তাকে হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে। হাবিবুর রহমান ছোট নাগ বারান্দায় পায়চারি করছেন।এতক্ষণে তো ওদের চলে আসার কথা। কিন্তু এখনো আসছে না কেন।হঠাৎ টিনের দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকালো।তাকিয়েই সাহিয়া ও নীলাভকে দেখতে পেলো।অনেকটা দৌড়ে সে ওদের দিকে চলে এলো।এসেই নীলাভকে জড়িয়ে ধরলো।
হাবিবুরঃ তোমরা চলে এসেছো বাবা।আসতে তোমাদের কোন সমস্যা হয়নি তো বাবা।মাহিমের মা, ও মাহিমের মা। কোথায় তুমি? দেখো কে এসেছে।
নীলাভ ও সাহিয়া দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো হাবিবুর রহমানের দিকে।উনাকে অনেক খুশি দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে তার ছেলে ফিরে এসেছে। রান্নাঘর থেকে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বের হলো মিনারা খাতুন।
মিনারাঃ বাজান,তোমরা আইয়া পরছো।মেলা(অনেক) খুশি হইছি তোমগো দেইখা।এরে এমনে দাঁড়ায় রইছো কেন ঘরে চলো।মাইয়াডারে তো চিনলাম না।(বিস্মিত চোখে)
সাহিয়াঃ আসসালামু আলাইকুম আন্টি।কেমন আছেন? আমি সাহিয়া।উনার হবু বউ।
মিনারাঃ ওয়ালাকুমুস সালাম।আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তুমি কেমন আছো মা?মাশাআল্লাহ, আমার বাজান দেহি পরীর মতো একখান মাইয়া পছন্দ করছে।চলো, চলো ঘরে চলো।কতদূর থিকা আসছো।হাত-মুখ ধুইয়া ফ্রেশ হইয়া নেও।
হাবিবুরঃ তোমাদের আইতে কোন কষ্ট হয় নাই তো।আমি ভাবছিলাম তুমি বোধহয় আসবাই না।আমারে হয়তো মাফ করতে পারো নাই।তুমি আমার চোখ খুইলা দিছো বাপ।তাই তোমারে একবেলা দাওয়াত কইরা ভালো-মন্দ না খাওয়াইলে আমি যে মইরাও শান্তি পাইতাম না।কালকে যহন রবিন কল কইরা কইলো তোমরা আমাদের বাড়িতে আসবা।আমার যে কি খুশি লাগতাছিল।তোমার সাথের জন কই?তারে যে দেখতাছি না।(এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে)
নীলাভঃ আকিবের একটু কাজ আছে।তাই আসতে পারেনি।
মিনারাঃ হইছে,এসব কথা এখন রাখেন।পোলা,মাইয়া দুইডারে একটু রেস্ট নিতে দেন।(ধমকের সুরে স্বামীকে কথাটা বললেন তিনি)
নীলাভ গত এক মাস আগের হাবিব সাহেবের সাথে আজকের হাবিব সাহেবকে কিছুতেই মিলাতে পারছে না।আকাশ পাতাল তফাৎ খুঁজে পাচ্ছে।এ যেনো কল্পনীয় ঘটনা।কিংবা স্বপ্ন। ঘুম ভেঙে গেলেই হারিয়ে যাবে বহুদূর। মিনারা খাতুন ওদের ভেতরে নিয়ে গেলো।হাবিবুর রহমান কাউকে ডাকলেন।
হাবিবুরঃ শান্ত ঐ শান্ত কোথায় গেলি?
টিনের চালার ঘর থেকে ২১ বছরের একটা যুবক দৌড়ে তার কাছে এলো।এর নামই শান্ত।
শান্তঃ চাচাজান আমারে ডাকতাছেন?
হাবিবুরঃ কোথায় থাকস তুই? তোরে আজকাল খুইজা পাই না কে?বাড়িতে যে মেহমান আইছে সেই খেয়াল আছে তোর।যা গিয়া বড় পুকুর থিকা মাছ ধরনের ব্যবস্থা কর।বড় পুকুর থিকা সবচেয়ে বড় মাছটা ধইরা আনবি।পুকুরে জাল ফালানের ব্যবস্থা কর।একেবারে টাটকা লাফাইন্না মাছ রান্না করে খাওয়ামু আমার মেহমানরে।আর শোন,ওদের আপ্যায়নের জানি কোন ত্রুটি না হয়।তোরে কসাইয়ের দোকান থিকা যে মাত্র জবাই দেওয়া গরুর গোশত কিইনা আনতে বলছিলাম, তুই আনছস তো?
শান্তঃ জে চাচা আনছি।আপনে যে যে বাজারের লিস্ট দিছিলেন সব আনছি।এহন খালি পুকুরে বড় তাজা মাছটা ধরনের আর রানধনের বাকি।
হাবিবুরঃ কথা না কইয়া জলদী যা।আমিও আইতাছি।তুই জাল ফেলানের ব্যবস্থা কর।
শান্ত তড়িঘড়ি করে চলে গেল পুকুরে মাছ ধরতে।হাবিবুর রহমানও পুকুরের দিকে চললেন।আজ পুকুরের সবচেয়ে বড় মাছ দিয়ে নীলাভ ও সাহিয়ার আপ্যায়ন করবে।
💗💗💗
এই পর্যন্ত হয়তো কিছুই বুঝতে পারেন নি।আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। চার দিন আগে ধুমধাম করেই সাজিয়ার বিয়ে হয়েছে। গত দুই দিন আগে এক বিকেলে রবিন নামের ছেলেটা, যাকে হাবিবুর রহমান একসময় নীলাভকে মেরে ফেলতে বলেছিলো।সেই ছেলেটা নীলাভকে খুঁজে পায়।সে অনেক জোর করে হাবিবুর রহমানের বাসায় যাওয়ার জন্য।
নীলাভ ও আকিব প্রথমে বিশ্বাস না করলেও পরবর্তীতে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে হাবিবুর রহমান সাহেব ভালো হয়ে গেছে। সে এখন গ্রামের মানুষের সেবা করে।যার থেকে যা আত্মসাৎ করেছিলো সব ফেরত দিয়ে দিয়েছে। তাই নীলাভ দাওয়াত রাখে।কিন্তু আকিবের কাজ থাকায় সে আসতে পারবে না। তাছাড়া সে এখন তিশার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে।সাহিয়াকে জানাতেই সাহিয়া এক পায়ে রাজী হয়ে যায়।কারণ সাহিয়াতো গ্রাম অনেক পছন্দ করে।অবশেষে আজ সকাল ভোরে তারা হাবিবুর রহমানের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দেয়।দীর্ঘ ৫ ঘন্টার যার্নি শেষ করে অবশেষে তারা এখানে পৌঁছায়। কি অদ্ভুত তাই না।যাকে মারার জন্য একসময় হন্যি হয়ে খুজতো।আজ তাকেই দাওয়াত করে এনেছে। নীলাভ ও সাহিয়া দুদিন তাদের বাড়ি থাকবে।আপনাদের হয়তো মনে হতে পারে এটা হাবিবুর রহমানের কোন চাল বা শয়তানি।কিন্তু না।তিনি সত্যিই ভালো হয়ে গেছে।
দুপুরে খাওয়ার টেবিলে……..
সবাই একসাথে খেতে বসেছে।মিনারা খাতুন খুশি মনে ওদেরকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। তার কাছে মনে হচ্ছে তার এক ছেলে এক মেয়ে বহুদিন পর বাসায় এসেছে। তিনি দুজনের খাবারের প্লেটে নানা কিছু দিয়ে পুরো ভর্তি করে ফেলেছেন।
মিনারাঃ আরেকটু তরকারি দেই।গ্রামের তাজা সবজি দিয়ে রান্না করছি।তোমরা আসবা শুইনা আমগো গ্রামের সবজি চাষী রফিকের খেতের থিকা তাজা সবজি কিইনা আনছে মাহিমের আব্বায়।সবকিছু তাজা।কোন ফরমালিন নাই।
সাহিয়াঃ আন্টি, এতকিছু কি করে খাবো।আপনি কম করে হলেও ১২-১৫ পদের খাবার রান্না করেছেন।এগুলো দুইদিন খেলেই আমি ফুলে পুরো ঢোল হয়ে যাবো।আপনি চিন্তা করেন না।আমরা অল্প অল্প করে সব খেয়ে নিব।আপনিও বসে পরেন।
হাবিবুর রহমান মাছের তরকারির বাটিটা হাতে নিয়ে বড় রুই মাছের মাথাটা নীলাভের প্লেটে তুলে দিলেন।
নীলাভঃ আরে আরে করছেন কি চাচা?আমি এতবড় মাথা খেতে পারবো না।আপনি নেন,আমাকে কেন দিচ্ছেন?
হাবিবুরঃ কথা কম বলে খেতে থাকো।তোমাদের জন্য পুকুর থিকা ফরমালিন মুক্ত তাজা মাছ ধরছি।আগে ধইরা রাখি নাই।তাজা,ফালাইন্না মাছ রান্নার স্বাদই আলাদা। আর তোমারে দিমু না তো কারে দিমু মাথাডা কও তো।তোমগো বয়সে আমরা এরকম মাছের মাথা দুইডাও একসাথে খাইতে পারছি।আর তোমরা একটা দেখলেই ডরাও।এর জন্যই তো তোমগো শরীরের এই অবস্থা। এর শহরের সবকিছুতো ফরমালিনে ভরপুর।স্বাদ-পদ কিছুই লাগে না। কিন্তু গ্রামের খেতের তাজা সবজি,ঘরের ধানের চাল,পুকুরের তাজা মাছ,বাড়ির পাশের মাচার তাজা পুই শাকের যে কি স্বাদ।তা এখন খাইলেই বুঝবা।
মিনারাঃ পোলাপাইন দুইডারে চুপ করতে কইয়া নিজেই বকবক শুরু করলো।কথা কইয়েন না তো।ওগো রে খাইতে দেন।বাবা,তোমারে আরেকটু ভাত দেই।তুমি দেখতাছি কিছুই খাইতাছো না।এই ভাত কিন্তু আমগো ঘরের ধানের চাউলের।দেখতে মোটা মোটা হইলেও খাইতে অনেক স্বাদ।
নীলাভঃ আপনার চিন্তা করতে হবে না চাচী।আমাদের যা লাগে তা আমরা হাত দিয়েই নিয়ে নিবো।আপনি খেতে বসেন তো।
হাবিবুরঃ রাইতে কিন্তু ঘরের ধানের চাউল দিয়া পিঠা বানাইবা।ওগোরে জিগায় নিয়ো।কি পিঠা পছন্দ করে।আমার মেহমানের কোন অযত্ন আমি কিন্তু সহ্য করুম না।মনে রাইখো মাহিমের মা।
মিনারাঃ আপনে ভাবলেন কেমনে ওগোরে আমি পিঠা না খাইয়া যাইতে দিমু?আমি রাতে ঝাল কইরা হাঁসের গোশত রান্ধুম।আর সাথে থাকবো ছিট পিঠা।
সাহিয়াঃ এতকিছুর কোন দরকার নেই। আমরা তো দুই দিন আছি।গ্রামে ঘুরবো ফিরবো।তাছাড়া আপনাদের খাবারের আপ্যায়ন দেখে আমরা অলরেডি শক খেয়ে আছি।আরো পেলে তো এখান থেকে যেতেই ইচ্ছে করবে না।
মিনারাঃ না গেলে তো আমি খুশি হমু।আমার দুই পোলা-মাইয়া সবসময় আমার সাথে থাকবো।
হাবিবুরঃ বাবা আরেকটু গোশতের তরকারি দেই??
নীলাভঃ আর লাগবে না চাচা।আপনি না খেয়ে আমার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরছেন।
সবাই একসাথে বসে খাবার খেয়ে নিলো।হাবিবুর রহমান ও তার স্ত্রীর ব্যবহার দেখে সাহিয়া, নীলাভ দুজনেই মুগ্ধ হচ্ছে। চিনে না জানে না অথচ আপ্যায়নের কোন ত্রুটি রাখেনি।নীলাভের অনেক ভালো লাগলো।কতদিন পর বাবা-মায়ের মতো করে কেউ এভাবে যত্ন করলো।
💗💗💗
ছোট দুটো টিনের ঘর, আরেকটা টিনসেট পাকা দালান।অথচ বাড়িতে মানুষ মাত্র তিনজন।হাবিবুর রহমান,মিনারা খাতুন আর জমিজমা দেখাশোনার জন্য শান্ত।হাবিব সাহেব পড়ালেখা করিয়ে একমাত্র ছেলে মাহিমকে বড় করেছিলো।তাদের সাথে গ্রামে থাকবে।কিন্তু ছেলে তাদের বিদেশে পড়ালেখা করতে গিয়ে সেখানকার মেয়ে বিয়ে করে স্যাটেল হয়ে গেছে। সপ্তাহে একদিন বাবা-মাকে কল করে। তাও যেনো কথা বলার সময় হয় না।দীর্ঘ কয়েক বছর সন্তানকে না পেয়ে সাহিয়া ও নীলাভকে পেয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই খুশিতে আটখানা। তারা ভাবেনি নীলাভ সব ভুলে এখানে আসবে।কিন্তু আবারো তার ধারণা ভুল প্রমাণ করে নীলাভ এসেছে। সত্যিটা ছেলেটার মধ্যে জাদু আছে। নয়তো এরকম খারাপ মানুষকে ভালো হওয়ার সুযোগ দিতো না।আর সেও হয়তো কখনো ভালো হতো না।
সপ্তাহখানিক আছে সাহিয়া ও নীলাভের বিয়ের।কিন্তু গ্রামে ঘোরার ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখতে পারলো না সাহিয়া।একপ্রকার যুদ্ধ করে সবাইকে রাজী করে নীলাভের সাথে এসেছে। সাজিয়া ও তুরাগ কক্সবাজার গিয়েছে হানিমুনে। তোরাব আর বিয়ে নিয়ে কোন ঝামেলা করেনি।সে হয়তো বুঝতে পেরেছে জোর করে সাহিয়াকে পাবে না। নদীর কিনারা ঘেঁষে হাঁটছে সাহিয়া ও নীলাভ। পড়ন্ত বিকেলে গ্রামটাকে অপরুপ সৌন্দর্য মুণ্ডিত মনে হচ্ছে ।
নীলাভঃ কি অবাক ব্যাপার তাই না?যে মানুষগুলো একসময় আমাকে ও আকিবকে দেখতে পারতো না।তারাই আজ আমাদের কত আদর যত্ন করে আপ্যায়ন করছে।পৃথিবী সত্যি অনেক অনেক অদ্ভুত। তবে আল্লাহ তায়ালার কাছে আমার লাখো কোটি শুকরিয়া। তিনি আমার কথা শুনছেন।আমি তার হেদায়েতের জন্য দোয়া করেছিলাম।আর আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করেছে।
সাহিয়াঃ উনারা এমন খুশি হয়েছে যে আমরা তাদের ছেলে-মেয়ে।গ্রামের মানুষগুলো সত্যিই অনেক আপ্যায়নমুখর হয়।চলো ঐদিকটায় যাই।উঁচু মাটির টিলা দেখা যাচ্ছে। ঐখানকার সবুজ ঘাসে বসে কথা বলা যাবে।
শো শো করে বাতাস বইছে। গ্রামের নিরিবিলি পরিবেশ। মাঝে মাঝে রাস্তার থেকে ভ্যান গাড়ির টুং টাং শব্দ ভেসে আসছে।খেতে কাজ করছে কৃষক। মাঝি নৌকা চালাচ্ছে। দূর থেকে নানা পাখির কিচিরমিচির শব্দ ভেসে আসছে। সাহিয়া চোখ বন্ধ করে বড় করে একটা নিশ্বাস নিলো।যার মধ্যে নেই কোন ভেজাল বা বিষাক্ত ধোঁয়া । চারিদিকে গাছ-গাছালিতে পরিপূর্ণ। নীলাভ মুগ্ধ চোখে সাহিয়াকে দেখছে।এই মেয়েটা এক ঝলকে ওর জীবনে এসে অনেক কিছু বদলে দিলো।একে ছাড়া এখন ওর জীবন অসম্পূর্ণ মনে হয়।হঠাৎ সাহিয়া চোখ খুলতেই নীলাভের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো।
সাহিয়াঃ কি দেখছো?
নীলাভঃ তোমাকে!!!(আনমনে)
সাহিয়াঃ প্রপোজ করলে অজ্ঞান হয়ে যাও আবার আমাকে দেখো।(মুখ টিপে হেসে)
নীলাভঃ একবার অজ্ঞান হয়েছি বলে বারবার হবো নাকি?তুমি সেদিন যে শর্কড দিয়েছিলে যে কোন ছেলে অজ্ঞান হতে বাধ্য। প্রথম থেকেই তুমি শর্কের ওপর রেখেছো।(মুখ গোমড়া করে)
সাহিয়াঃ তুমি বলেই অজ্ঞান হয়েছো।অন্য কেউ জীবনেও হতো না। এই প্রথম নিজের চোখে দেখলাম হবু বউয়ের থেকে প্রপোজ পেয়ে একটা ছেলে মানুষ অজ্ঞান হলো।তোমার যে কি সাহস তা আমার বোঝা হয়ে গেছে। এই সাহস নিয়ে তুমি সাংবাদিকতা করো কিভাবে?কোথায় তুমি আমায় প্রপোজ করবে।তাতো করলেই না।আমি করেছি বলে অজ্ঞান।ভাবা যায় এগুলো।ধূর,আমিও না কি বলছি।তুমি জীবনে আমায় প্রপোজ করতে পারবে নাকি?(ভেংচি কেটে)
নীলাভঃ তুমি কি বোঝাতে চাইছো?আমি তোমাকে প্রপোজ করতে পারবো না।এমন কিছু কি?(কপাল কুঁচকে)
সাহিয়াঃ অবশ্যই।তোমার এত সাহস নেই যে আমাকে প্রপোজ করবে।তাই এত হাইপার হয়ো না।
সাহিয়া অন্য দিকে তাকিয়ে গ্রামের পরিবেশ দেখতে মন দিলো।নীলাভের সম্মানে সাহিয়ার কথাগুলো বেশ লেগেছে। তাই সে কিছু একটা করার চিন্তা করতে লাগলো।সেদিন যখন সাহিয়া নীলাভকে অজ্ঞান অবস্থায় পরে থাকতে দেখলো।দৌড়ে ওকে এসে ধরলো।তারপর পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরিয়েছে।সেদিনের কথা আকিবকে বলতেই আকিব ও সাহিয়া দুজনেই নীলাভকে রাগায়।নীলাভ এতে মনে মনে বেশ অসম্মান হয়।তাই সে মনে মনে ঠিক করে রেখেছে সাহিয়াকে প্রপোজ করবে।কিন্তু সেরকম সুযোগ এর মধ্যে পাইনি।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সেই সুযোগ এসে গেছে। বেচারা কি শর্কড না হয়েছিল যে শর্কডের ঠেলায় অজ্ঞান হয়ে গেছে।
সাহিয়াঃ নীলাভ দেখো ঐ যে একটা নৌকা। চলো আমরা নৌকা দিয়ে নদীতে ঘুরি।আমার অনেক শখ নৌকা দিয়ে ঘোরার।নীলাভ তুমি কি শুনছো?নাকি আবার অজ্ঞান হয়ে ———
সাহিয়া একা একা কথা বলতে বলতে পেছন দিকে ঘুরলো।পেছনে ঘুরে পুরো অবাক।কারণ নীলাভ হাতের মুঠ ভর্তি করে কতগুলো ঘাসফুল নিয়ে হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসে আছে।
নীলাভঃ আমি তোমার মতো মুখের ওপর ভালোবাসি বলতে পারি না।আমি অনেক লাজুক।অন্য দশটা ছেলের মতো নই।আমার অনুভূতিগুলো খুব সহজে সবার মতো প্রকাশ করতে পারি না। আমি খুব চাপা স্বভাবের ছেলে।তবে আমিও তোমাকে অনেক পছন্দ করি।অনেক বেশি ভালোবাসি।আমি এতদিনে এতটুকু বুঝে গেছি,তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছি।সেদিনই আমার মনে ভালোবাসার ঘন্টা বেজে গেছে। তুমি আমাকে পুতুল ভেবে যখন নানা কথা বলছিলে তখন আমি মুগ্ধ হয়ে তোমার কথা শুনছিলাম।না চাইতেও ঘনঘন আমার হৃৎপিণ্ডটা উঠানামা করছিলো।তোমায় দেখলেই আমার মনটা পালাই পালাই করতো।তাইতো না চাইতেও তোমার থেকে পালিয়ে বেড়াতাম।আমি আর কথা বাড়াতে চাইছি না। শুধু বলবো অনেক ভালোবাসি তোমায়।তুমি সারাজীবনের জন্য আমাকে স্বামী হিসেবে ঠিক এরকম করেই ভালোবেসো।আমার আর কিছুই চাই না। ভালোবেসে আগলে রেখো তোমার এই পুতুল ছেলেটি কে।
সাহিয়াঃ হ্যাঁ এরকম করেই তোমাকে ভালোবাসবো।কারণ তুমিই আমার সেই পুতুল_ছেলেটি।যার জন্য আমি নিজের মনে ভালোবাসার দেখা পেয়েছি।তুমিও আমার কাছে আমার পুতুল_ছেলেটি হয়েই থেকো।আমারও আর কিছুর প্রয়োজন নেই।
সাহিয়া, নীলাভের হাত থেকে ঘাসফুল গুলো নিলো।নীলাভ উঠে দাঁড়াতেই সাহিয়া ওকে জড়িয়ে ধরলো। আজ নীলাভ শর্কড হলো না। বরং পরম আবেশে সেও সাহিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। তাদের ভালোবাসা অবশেষে পূর্ণতা পেলো।দুজন দুজনকে ভালোবাসি বলতে পারলো।
___________________(সমাপ্ত)__________________
আসসালামু আলাইকুম। গল্পটা অবশেষে শেষ হয়ে গেলো।গল্পটা এত তাড়াতাড়ি শেষ হওয়াতে অনেকে হয়তো আমার ওপর রাগ করবেন। কিন্তু আমি গল্পটাকে এভাবেই ভেবে রেখেছিলাম।হুট করে শুরু হয়ে হুট করে শেষ। এটা যেহেতু ভিন্ন থিমের গল্প ছিলো তাই ভিন্নভাবে শেষ করেছি।সব গল্পই তো বিয়ে কিংবা বাচ্চা দিয়ে শেষ করি।তাই এই ভিন্ন ভাবে শেষ করলাম।আমি জানি না গল্পটা শেষটা ঠিক কতটা আপনাদের মন মতো হয়েছে। যদি এন্ডিংটা ভালো না হয় তাহলে আমি দুঃখীত।এই গল্পের মুল থিমটা ছিলো পুতুলের মতো দেখতে একটা ছেলেকে নিয়ে। যে কিনা সকল কাজকে শ্রদ্ধা করতে।তাকে গল্পের মধ্যে ছয়টা কাজ করতে দেখা যায়।পিৎজা ডেলিভারি বয়,কফি হাউসের ওয়েটার, চা ওয়ালা,ফ্যাক্টেরীর এজেন্ট, ডেকোরেশনের লোক এবং সাংবাদিক। একজন উচ্চ শিক্ষিত ছেলে হয়েও কোন কাজকে অসম্মান করেনি।কোনটা নিজের অবসর কাটাতে কোনটা অন্যকে সাহায্য করতে সে করেছে। সে অনেক কাজ পাগল ছেলে ছিলো।এক দন্ড নিজেকে বিশ্রাম দিতে না।সে বলতো অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। তাই নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতেই পছন্দ করতো।আমাদের উচিত নীলাভের মতো প্রত্যেক কাজকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করা।কোন কাজই ছোট নয়।
অনেক কথা হলো।ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং ঘরে থাকবেন।বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করবেন।আপনার অসাবধানতায় কিন্তু আপনার পরিবার বিপদে পরতে পারে।নতুন গল্প নিয়ে খুব শীঘ্রই ফিরে আসবে।ততদিন নিজের খেয়াল রেখেন।মনে রাখবেন আপনার কিছু হলে কিন্তু আমার একটা রিয়েক্ট কমে যাবে🥺।যাস্ট ফান।সিরিয়াসলি নিয়েন না।আল্লাহ হাফেজ🥰।
❤️ NOVA❤️
Ami ki vabe je bolbo vasha khuje pacchi na. Mone hocche ai story r admiration korle kom hobe. Kintu na bole o parchi na, story ta dangerous sundor chilo. Thank you so much for the story.