পিয়ানোর সুর পর্ব-১৫

0
518

পিয়ানোর সুর
#১৫পর্ব

ফড়িংয়ের ডানা ধরলে যেভাবে কাঁপে ফড়িংয়ের লেজ ঠিক সেভাবে মিথি পা থেকে মাথা পর্যন্ত কাঁপছে। দেখে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না। একটা জোরসে ধমক দিতে পারলে কাজ হয়। কিন্তু না মায়া লাগছে খুব। গতরাতে সেঝো কাকী সুপ্তি আর নোমান কাকা মিলে আমাদের ঘরে এসে আচ্ছামত মিথির নামে বিচার দিয়েছিল। সে নাকি সৌরভকে সুপ্তির কাছথেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে। আমি বিশ্বাস করিনি। মিথির দ্বারা মশা মারাই সম্ভব না। সে নেবে সৌরভকে। দুইদিনে গ্রাম থেকে উঠে এসে শহুরে একটা ছেলেকে পটিয়ে ফেলার কলিজা মিথির নেই।

— এই ফড়িংয়ের লেজের মত কাঁপছিস কেন? থাম।

ঠোঁট কামড়ে কান্না চেপে ভীতুর ডিম মিথি বলল,
— হাত ছেড়ে দিন তাহলে।

— এতে কাঁপন থেমে যাবে সিওর?

— হুউউ

— ওকে নে ছেড়ে দিলাম। এবার বল এই কাক ডাকা ভোরে তুই ছাদে কেন?

— নাসিম মামা চিলেকোঠায় থাকতে বলল। রাতে এখানে ছিলাম।

— কী! ভয় লাগেনি?

— না।

— ভালই সাহসী হয়েছিস। একেবারে ফড়িং থেকে বোল্লা পিঁপড়া। চেহারা দেখে অবশ্য ফড়িংই লাগছিস।

— আমি মিথি ভাইয়া। ফড়িং না।

— হুম ফড়িং না তো পালাস কেন আমাকে দেখে। বাজে ব্যবহার করেছি কখনো?

— উঁহু।

— আজকে নাকি চলে যাচ্ছিস?

প্রশ্ন শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো মিথি। তারমানে ও জানেই না ওর আড়ালে ওকে নিয়ে এবাড়ীতে কী চলছে। চোখে নির্ঘুম রাতের ক্লান্তি লেপ্টে থাকা মিথির স্নিগ্ধ চেহারা আমার ভেতরে একধরণের অচেনা অনুভূতি জন্ম দিচ্ছে। বললাম,

— সৌর বলে যাকে ডাকলি, সে কে?

— কেউ না। সৌর বলিনি সরো বলেছি।

মিথি মিথ্যে বলছে কিনা বাজিয়ে দেখতে জিজ্ঞেস করলাম,

— “সরো” মানে তুমি করে বলছিলি। তাহলে পরে আপনি হলো কেন?

— সরি শোয়েব ভাইয়া মুখ ফসকে সরো বলে ফেলেছি। আর হবে না।

— সবসময় হোক। তুমি করে বলিস। আমরা সব কাজিনরা তুমি তুই বলে অভ্যস্ত।

— আমি কেউ নই নানুবাড়ীর।

ভীতু মেয়েটির সদম্ভে বলা “আমি কেউ নই” বাক্যটা আমাকে হেলিয়ে ছাড়লো। কী হলো কে জানে। প্রচণ্ড মায়া থেকে ওকে দু’হাতে জড়িয়ে কাছে টেনে নিলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে পাঁজর ছুঁয়ে কাঁপতে থাকা মিথিকে বললাম,

— এই বাড়ীতে তুই আমি সমান। কোথাও যাচ্ছিস না। ছোট কাকুর ঘরে একটু ন্যাপ নিয়ে নে যা। ভয় পাসনে আমি তোর ঘুম না ভাঙা পর্যন্ত ছাদেই বসে থাকব। তুই ঘুম থেকে উঠলে আমরা একসঙ্গে আমাদের বাসায় ব্রেকফাস্ট করব। কেমন?

তর্ক না করে আমার কথা মেনে নিয়ে মিথি নাসিম কাকুর চিলেকোঠায় ঘুমোতে গেল। অনেকদিন হয় ছাদ বাগানের পরিচর্যা করি না। এসেছিলাম ঘন্টা খানেক ওয়ার্ম আপ সহ ফ্রী হ্যাণ্ড এক্সারসাইজ করতে। মিথিকে সামনা-সামনি দেখে আজ অনিয়ম করতে ইচ্ছে হলো। কয়েকঘন্টা ছাদে পাহারাদারের ডিউটি করতে হলে ছাদ বাগান পরিচর্যা করার কাজটা সহজ। সময় কেটে যাবে। উপলব্ধি করছি আমি যতই গাছের আগাছা পরিস্কার করতে সব আগাছা কাঁচি দিয়ে কেটে সাফ করছি গাছগুলোকে শেপ আপ করায় মন দিচ্ছি, ফুপ্পির মেয়ে মিথিটা যেন ততই আমার হৃৎপিণ্ডে গেঁথে বসছে। অথচ গতরাতে মা বলল, আজ সন্ধ্যায় পাত্রীপক্ষ আমাদেরকে ধানসিঁড়িতে ডিনারে ইনভাইট করেছে। আমি যেন ভুলে না যাই। কথা দিয়েছিলাম ভুলব না। এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি সঙ্গে মিথিকে নেবো। নইলে যাবো না।

শোয়েব ভাইয়া ন্যাপ নিতে তো পাঠালো। কীভাবে ন্যাপ নিই আমি! আমার সৌরভের পিয়ানোর সুর যে বাজছে। একটুও ঘুমুতে ইচ্ছে করছে না। মন চাইছে দেয়াল ভেঙে ও বাড়ী ঝাঁপ দিই সৌরভ আগলে নিক আমায়। আজ কী হবে, কী হবে আজ যত ভাবছি ভয়ে হাত পা পেটের ভেতর সেঁধিয়ে যাচ্ছে। একদিকে নাসিম মামার আমার হয়ে প্রতিবাদ অন্যদিকে এসে জুড়েছে শোয়েব ভাইয়া। আমাকে কোথায় পাঠাতে চাইছে ওরা? কেনই’বা শোয়েব ভাইয়া বাঁধা দেবে। আমাকে নিয়ে এতকিছু ঘটছে আর আমিই বেখবর! কী করেছি আমি যে সবার জন্য বোঝা হয়ে গেছি। না দাদার বাড়ী ঠাঁই হলো আর না নানুর বাড়ী। যেখানেই যাই সবার ঝামেলা হয়ে পড়ি। কই যাব আমি এখন?

নানান দুশ্চিন্তায় আর সৌরভের পিয়ানোর সুর শুনতে শুনতে চোখ লেগে এসেছিল। আধো ঘুম আধো জাগরণের মাঝামাঝি বেশিক্ষণ গা এলিয়ে থাকতে পারিনি। অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি তাড়াচ্ছে বুকের ভেতর। মাথায় চিনচিনে ব্যথা নিয়ে ছোট মামার শাওয়ার রুমে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখি সকাল প্রায় দশটা বাজে। মনে পড়লো শোয়েব ভাইয়া আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। ইয়া আল্লাহ বাইরে গনগনে রৌদ। হেমন্ত ঋতুর এই সময়টা ঘরের ভেতর হালকা শীত অনুভব হলেও বাহিরে প্রচণ্ড তাপ।
তড়িঘড়ি করে ছাদে এলাম। শোয়েব ভাইয়াকে দেখে আবারো ভয়ে হাত পা জমে গেল। একটা গাছের টবের মাটি নিড়ানি দিয়ে আলগা করতে ব্যস্ত মানুষটিকে দেখে মায়া হলো। ঘামে ভিজে টি-শার্ট গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। দেখে মনে হবে শাওয়ার করে কাপড় বদলায়নি। ভোরেই দেখেছি সুঠাম দেহী মানুষটির গায়ের রঙ ধবধবে সাদা। স্লিভলেস স্কাই ব্লু টি-শার্ট আর হাঁটু পর্যন্ত অফ হোয়াইট খাদি কাপড়ের হাফ প্যান্ট পরে ছিলেন। এই কয়েক ঘন্টায় শরীরের অনাবৃত অংশ সূর্যরশ্মিতে পুড়ে হালকা ট্যান লুক ধারণ করেছে। কী বলব মাথায় কিছু আসছে না। শোয়েব ভাইয়া এক মনে বেতের মোড়ায় বসে মাটি, গাছ, টব নিয়ে কাজ করছেন আমি ওনার পেছনে খালি পায়ে নিঃশব্দে এসে দাঁড়িয়েছি। তাড়াহুড়োয় স্লিপার পরে আসার কথা মনে ছিল না। ছাদের ফ্লোর আগুন গরম তেতে আছে। ছটফট করছি। বেশিক্ষণ পা রেখে দাঁড়াতে পারছি না।
আমার পিলে চমকে দিয়ে আচমকা শোয়েব ভাইয়ার গুরুগম্ভীর জলদ কন্ঠ গমগমে শব্দের ধ্বনি তুললো। বলল,

— খালি পায়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ফড়িংয়ের বাচ্চা পা দুটো কী শিক কাবাব বানানোর শখ! যা স্যান্ডেল পরে আয়। ক্ষিধেয় পেট চোঁ-চোঁ করছে।

ঝাড়ি খেয়ে আমি দে দৌড় চিলেকোঠায়। স্যান্ডেল পরে আসতে আসতে ভাবছি, পেছনে আমি দাঁড়িয়ে উনি বুঝলেন কী করে? আমিতো কোনো শব্দই করিনি!
ছাদে এসে দেখি উনি নেই। মোড়ার চারপাশে মাটি পড়ে আছে। গাছ সহ টব নেই। এদিক ওদিক চেয়ে দেখি ছাদের পশ্চিম দিকের কাঠের ফ্রেমের ওপর গাছের টব ঠিক করে বসিয়ে দিলেন শোয়েব ভাইয়া। কাজ শেষ করে আমার দিকে ফিরে তাকালেন। ওনার ঐ দৃষ্টিতে কী ছিল জানি না তবে ঐটুকু চাহনি আমার রূহ কাঁপিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
একবারই তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়েছেন। আমি অদূরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছি একজন পরিশ্রমী মানুষ ছাদবাগানের পানির ট্যাপ ছেড়ে হাত পায়ের কাদামাটি ধুয়ে পরিস্কার করছেন। চোখেমুখে পানির ঝাপটা শেষে কোনোদিকে না তাকিয়েই বললেন,

— মিথি এদিকে আয়।

দুরুদুরু পায়ে পায়ে কাছে আসতেই উনি আমার ওড়নার আঁচল দিয়ে নিজের হাতমুখ মুছে নিলেন। ঘটনাটি এতই দ্রুত ঘটলো যে আমি সময়ই পেলাম না চমকে ওঠার। যেন খুবই স্বাভাবিক একটা কাজ এটি। এমনই হবার কথা ছিল। কিংবা এমনই হয় সবসময়।
অপ্রস্তুত চোখে পেছন ফিরে শোয়েব ভাইয়ার দিকে চেয়ে দেখি উনি খুব ক্যাজুয়াল ভঙ্গিতে আমার ডানহাতের কবজি ওনার বা’হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে বললেন,

— আয়।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিজেকে মেজো মামার বাসার ডাইনিং টেবিলে বসা অবস্থায় আবিষ্কার করছি। সিঁড়ি ভেঙে নামলাম কখন এ প্রশ্নের উত্তর হাজার চেষ্টা করেও মনে করতে পারছি না। টেবিলে আমি একাই বসা। মেজো মামা ডাইনিং এটাচ ব্যালকণিতে ইজিচেয়ারে বসে পেপার পড়ছেন আর একটু পর পর নাকের উপর বসে থাকা রিডিং গ্লাসের ফাঁক দিয়ে আমাকে উঁকি দিয়ে দেখছেন। কেমন গম্ভীর সেই দৃষ্টি। স্নেহের লেশমাত্র নেই। বুকটা আমার হু হু করে উঠল অকারণ অভিমানে। চোখের পানি লুকোতে ওড়নায় আড়াল করে চোখ মুছে নিচ্ছি এমন সময় পর পর দুটো ঘটনা ঘটলো। শোয়েব ভাইয়া পোশাক বদলে কখন আমার পাশের চেয়ারে এসে বসেছে টের পাইনি। যেদিকে চোখ ওড়নায় আড়াল করে মুছছিলাম সেইদিকেই উনি আমার পাশে। একদম মুখোমুখি। আমার হাত থেকে ওড়না সরিয়ে নিজেই আমার ভেজা চোখ মুছিয়ে দিলেন ওনার দু’হাতের আঙুলে। তারপর দুই আঙুলে আমার নাক টেনে লম্বা করে ঈষৎ ভৎসনা করে বললেন,

— ফড়িংয়ের বাচ্চা ওড়ে কম কাঁদে বেশি!

নাক তখনও ছাড়েননি মেজো মামা শোয়েব ভাইয়াকে ধমকে উঠলেন,

— আই ওর নাক ছাড় শোয়েব! দেখছিস না ছোট্ট একটা নাক। ওভাবে টানলে বাচ্চাটা ব্যথা পাবে না! যত্তসব…

বলতে বলতে মেজোমামা পেপারে মুখ ঢাকলেন আমাকে কাঁদিয়ে। আমার মামা আমি ব্যথা পাবো বলে ওনার নিজের ছেলেকে ধমকে দিলেন এই সত্য অনুভূতি ব্যাখ্যা করার ভাষা আমি মিথির জানা নেই। নানুবাড়ী এসে বড় মামার তিনতলার ঘর ছাড়া অন্য মামারা কেউ কখনো আমায় কারো ঘরে একমুহূর্তের জন্য ডাকেননি। বিগত কয়েক মাসে এই প্রথম মেজোমামা আমায় নিয়ে কিছু বললেন। ওনার চোখে আমি বাচ্চা। আমার ব্যথা মামাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে কথাটা বিশ্বাস করতে যেয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম। কান্নার শব্দ শুনে তাৎক্ষণিক উঠে এসে মেজোমামা দিলেন ধমক আরো একবার শোয়েব ভাইয়াকে। কলেজ শিক্ষক ভাইয়া তো পুরাই থ বনে গেলেন। চুলায় ফ্রাইপ্যান গরম ডিম ভাজতে ভাজতে মেজো মামী ফ্রাইপ্যান সহ নিয়ে এলেন ডাইনিংয়ে। ভাইয়ার প্লেটে এক পিস ডিম দেয়া হলে আরেক পিস আমার প্লেটে ইশারায় মাকে দিতে বললেন শোয়েব ভাইয়া। মামী চোখ রাঙালেন ভাইয়াকে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও একপিস ডিম আমার প্লেটে দিতে নিলে মামা চেঁচিয়ে উঠলেন,

— আরে শোয়েবের মা করো কী করো কী মিথিকে এই ডিমভাজা দিও না। ওরজন্য মরীচ ছাড়া শুধু পেঁয়াজ লবণ দিয়ে ডিম ভেজে আনো। মিথি ঝাল সহ্য করতে পারে না ছোটবেলা থেকেই। যাও যাও অনেক বেলা হয়ে গেল বাচ্চাটা এখনো না খেয়ে। বড় ভাবীটা কী যে করে না! মেয়েটার দিকে কোনো যত্ন নেই তোমাদের।

মেজোমামা মামীকে অর্ডার করে আমার হাত ধরে নিয়ে এসে ব্যালকণিতে ইজিচেয়ারে ওনার পাশে বসালেন। শোয়েব ভাইয়াও নাশতার প্লেট রেখে মোড়া নিয়ে মামার আরেক পাশে বসলেন। রাগে জ্বলে ওঠা মেজো মামী ভালোমতো বুঝে গেলেন আমার জন্য ডিম ভেজে না আনলে ওনার ছেলেও না খেয়ে থাকবে। উনি কিচেনে গেলেন। অনেক বেলা হয়ে গেছে। ওনার ছেলেকে না খাইয়ে তো রাখা যায় না। কী ঘটছে জানি না। কারণ আমি কাঁদছি তখনো।
কবেই ছোট্ট মিথি বড় হয়ে গেছি। ঝাল খাওয়া শুরু করেছি। সে খবর আমার মেজো মামার জানা না থাকলেও চলবে। এখন এই মুহূর্তটুকু আমার কাছে হীরের চেয়ে দামী।
মেজোমামা পেপার শোয়েব ভাইয়াকে দিয়ে বললেন,

— শোয়েব আজকের খেলার খবর আমাকে পড়ে শোনা তো। মিথিটা কাঁদছে আমি ওর কান্না থামাই। আচ্ছা তার আগে দেখে আয় ফ্রিজে ডেইরী চকোলেট মিল্কের একটা প্যাকেট থাকার কথা। মিথির জন্য নিয়ে আয়। বাচ্চাটার ডেইরী চকোলেট মিল্ক খুব পছন্দ বুঝলি শোয়েব…

ভাইয়ার আনা চকোলেট মিল্কের প্যাকেট সিজার দিয়ে কাটতে কাটতে মেজো মামা সস্নেহে কথাটা বললেন।
শোয়েব ভাইয়া মজা করে বললেন,

— হ্যাঁ বাবা বুঝেছি ফড়িংয়ের বাচ্চাটার চকোলেট মিল্ক খুব পছন্দ।

— কীসের ফড়িংয়ের বাচ্চা! ওর নাম মিথি। কত মিষ্টি মধুর নাম। শুনতেই মনে আরাম লাগে। খবরদার আজেবাজে নামে ডাকবি না আমার বাচ্চাটাকে।

আমি আমার মামার কাঁধে মুখগুঁজে অঝোরে কাঁদছি তখনও।

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে