পারফেক্ট কাপল পর্ব-০৬

0
1463

#পারফেক্ট_কাপল
#পর্বঃ৬
#ইনান

৬ দিন কেটে গেছে বিয়ের আর ৩ দিন বাকী । এই ৬ দিন অগ্নি আমাকে নানা ভাবে জ্বালিয়েছে । রাতের ৩ টা পর্যন্ত ওর সাথে ফোন এ কথা বলা লাগছে নয়তো বাসার নিচে চলে আসতো । আমার সব কাজিন রা চলে এসেছে বিয়ে তে । আমরা কাজিনরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন আমার এক চাচাতো ভাই আকাশ এসে বলে

“নিধি একটু এসে শুনবি ?
“হুম আসছি

আমি উঠে আকাশের পিছন গেলাম । আকাশ আর আমি সমবয়সি । আমাকে আকাশ ছাদে নিয়ে আসে ।

“নিধি তোকে কিছু বলতে চাই
“হুম বল
“আসলে আমি তোকে..
“আমাকে কী ?
“আমি তোকে ভালোবাসি
চোখ বন্ধ করে বলে আকাশ । আমি তার কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বললাম
“এই তোর মজা বন্ধ করতো
ও আমার কথা শুনে সিরিয়াস হয়ে বলে ।
“আমি সত্যিই তোকে ভালোবাসি । মজা করছি না আমি
“হোয়াট! তুই এগুলো কী বলছিস
“যা বলছি ঠিকি বলছি তুই এই বিয়েটা ভেঙে দে । নয় তো চল আমরা পালিয়ে যায় ।

আমি আকাশের কথা শুনে ওর গালে চর মারলাম । পালিয়ে যাবো মানে কী ? আমি ওরে বলছি একবারো যে আমি ওকে ভালোবাসি । আমার রাগ লাগছে প্রচুর ।

“আমার বিয়েতে তোকে যেন আশে পাশে না দেখি ।
“প্লীজ নিধি তুই এই বিয়েটা ভেঙে আমায় বিয়ে করে নে ।
“আরেকটা চর যদি খেতে না চাস তাহলে আমার আশে পাশেও আসবি না

এই বলে ঐখান থেকে চলে আসি । চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরি । রাগে হাত পা কাপছে আমার । রাগে ফুসতে ফুসতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম ।

দুপুর ২টা বাজে আমার ঘুম ভাঙে ফোনের শব্দে । তাকিয়ে দেখি কচ্ছপ ফোন দিছে না মানে অগ্নি ফোন দিছে । ওর নাম্বার কচ্ছপ দিয়ে সেইভ করছি । সে যায় হোক ফোনটা ধরলাম

“হ্যালো
“কী করে আমার বউ টা ?
“আপনার বউটা ঘুমায় ।
“আমার বউটার ঘুম হয়ছে ?
“হুম
“খাইছো কিছু ?
“না! আপনি
“হুম । তুমি খাও নি কেন ?
“মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম
“ওকে যাও ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও । টাটা

আমিও টাটা বলে ফোন রেখে দিলাম । উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম খেতে । নিচে গিয়ে দেখি অত্মীয় স্বজনরা ভরে গেছে বাসা । আমি চুপচাপ রান্নাঘরে আম্মুর কাছে চলে গেলাম ।

“আম্মু
“হুম বল
“ক্ষুধা লাগছে
“তুই যা আমি নিয়ান কে দিয়ে খাবার পাঠাচ্ছি
“আচ্ছা

আমি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে নিজের রুমে যাচ্ছিলাম । তখন কোথা থেকে আকাশ এসে আমার সামনে দাড়ায় । আমি বিরক্ত নিয়ে বলি

“কী
“আমি সরি! আমায় ক্ষমা করে দে
“হুম
“আমি সত্যি আর কখনো বলবো না ঐটা
“ওকে। এটাই লাস্ট
“হুম থ্যাংকস

আমি আর কিছু না বলে মুচকি হেসে ঐখান থেকে চলে আসি । নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় বসলাম । কিছুক্ষণের মাঝেই নিয়ান খাবার নিয়ে রুমে আসে । চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে আছে । ও বিছানায় খাবার প্লেট নিয়ে বসতেই আমি উঠে হাত ধুতে যেতে যাবো তখন ও বলে উঠে

“আপু
“হুম বল
“আজকে আমি তোকে খাইয়ে দেই
“কেন
চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললাম । ও আমার কথায় নিজের ঠোট চেপে আবার বলে
“ইচ্ছে করছে
“আচ্ছা দে

ও মাথা নাড়িয়ে হাত ধুতে চলে যায় । ও যে কিছুক্ষণ আগে কান্না করেছে তা ওর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে । আর ওর কান্নার কারণ হলো আমার বিয়ে । নিয়ান হাত ধুয়ে এসে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে । আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ওর চেহারা দেখে । ও খাওয়ানো শেষ করে হাত ধুয়ে আমার পাশে বসে থাকে । আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি । হঠাত্‍ সে আমায় জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয় ।

“কী হয়েছে ভাই ?
অস্থির হয়ে বললাম । ও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বলে
“আপু আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না । কী করে থাকবো বল তোর সাথে ঝগড়া না করলে আমার ভালো লাগে না , তোকে না জ্বালালে আমার ভালো লাগে না । তুই ই তো আমার একমাত্র সঙ্গী যার সাথে আমি দুষ্টুমি করি, যাকে প্রচুর জ্বালাই কিন্তু তবু সে আমার অনেক ভুল লুকিয়ে আমাকে বকার হাত থেকে বাচায় । তুই চলে গেলে আমায় কে বাচাবে ?

নিয়ানের কথা শুনে আর কান্না দেখে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । কিন্তু কাদতে পারছি না । কাদলে ও আরো বেশি কাদবে । তাই তার মাথাটা আমি তুলে তার গালে হাত রেখে বললাম

“আরে বোকা আমি কী আর আসবো না নাকি । আর যখন তুই বকা খাওয়ার মতো কোন কাজ করবি তখন আমায় ফোন দিয়ে বলবি আর আমি তোকে বলে দিবো কী করতে হবে । এভাবে কেউ কাদে নাকি ?

সে কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরেই বসে আছে । আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি কাদতে কাদতে হেচকি তুলে ফেলছে । আমি সত্যি ওকে খুব মিস করবো । আস্তে আস্তে নিয়ান ঘুমিয়ে যায় আমি ওকে শুইয়ে দিয়ে বারান্দায় চলে গেলাম ।
.
.
.
“হোয়াট! অগ্নির বিয়ে ?
অপর পাশের মেয়েটার চিত্‍কার শুনে ফোন টা কান থেকে দূরে সরিয়ে নেয় আকাশ ।
“হ্যা তাও আবার আমার ভালোবাসার সাথে
“কী বলছো আকাশ ? অগ্নির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এই তিনদিনে আমি দেশে আসতে পারবো না । আমি ৫ দিনের আগে দেশে আসতে পারবো না
“এখন কী করবো ?
আকাশ চিন্তা নিয়ে বলে উঠে । তখন অপর পাশের মেয়েটা বলে উঠে
“চিন্তা করো না । বিয়েটা হয়ে যেতে দাও । ওদের কিভাবে আলাদা করতে হয় তা আমরা দুজনই করবো ।
“ওকে

মেয়েটা ফোন কেটে দেয় । আকাশ আশে পাশে তাকিয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ঐখান থেকে শয়তানি হাসি দিয়ে চলে যায় ।
.
.
.
আমি বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলাম তখন অগ্নি ফোন দেয় ।

“হ্যালো
“রাতে রেডি থেকো
“কেন ?
“ঘুরতে যাবো
“কোথায় ?
“সারপ্রাইজ
“এইবার ও কী নৌকায় উঠানোর প্ল্যান আছে ?
আমার কথা শুনে অগ্নি হালকা হেসে বলে
“না ।
“আচ্ছা
“ওকে টাটা জান
“ওকে

আমি ফোন কেটে পিছনে তাকাতেই দেখলাম নিয়ান দাড়িয়ে আছে । সে আমার দিকে তাকিয়ে একটা শায়তানি হাসি দিয়ে চলে যায় । আমি হাবলার মতো তারা দিকে তাকিয়ে আছি কী হলো কিছুই বুঝলাম না ।

চলবে ?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে