পরিশিষ্ট পর্ব-২২ এবং অন্তিম অধ্যায় দ্বিতীয় / শেষ অংশ

0
1188

#গল্পের_নাম: পরিশিষ্ট
#লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_২২ (অন্তিম অধ্যায়–দ্বিতীয়/শেষ অংশ)

অহি সরে আসতে নিতে রোদ্দুর তার হাত চেপে,চোখ বন্ধ রেখে ঘুমজড়ানো কন্ঠে বলল,

—“আমি তোকে অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি রে অজান্তা!”

অহি রোদ্দুরের নাক আলতো করে ছুঁয়ে দিল।তারপর লজ্জামিশ্রিত মুখে বলল,

—“আমিও এই পাগলটাকে খুউউউব ভালোবাসি!!”

রোদ্দুর চোখ খুলল।পিটপিট করে অহির দিকে চেয়ে বলল,

—“জীবন নামক উপন্যাসের শেষ অধ্যায়ে গিয়ে যখন তোমার শরীরের উজ্জ্বলতা কমে গিয়ে চামড়া ঢলঢলে হয়ে যাবে,রেশমের মতো লেপ্টে থাকা কৃষ্ণ চুলগুলো সাদা হয়ে যাবে,মাতাল করা হাসিতে ঘায়েল করা সব দাঁত ঝরে যাবে,ঘন পল্লবঘেরা চোখের দৃষ্টি যখন ক্ষীণ হয়ে আসবে,ফোলা ফোলা গালগুলো ঝুলে যখন তিল ঢেকে যাবে,একপাশের টোল খাওয়া সুন্দর মুখোশ্রী যখন থলথলে হয়ে যাবে তখন আরো একবার নতুন করে প্রেমে পড়বো তোমার।

প্রথম প্রেমের মতো সেই একটু লজ্জা, অনেকখানি ভালোলাগা নিয়ে তোমায় কল্পনা করো,হুট করে নিশিরাতে ডায়েরি লিখতে বসবো,ক্ষণে ক্ষণে বেসুরো কন্ঠে গান ধরবো,তোমার প্রেমে আবার এলোমেলো হবো!

প্রথম প্রেমের মতো সেই একই অনুভূতি নিয়ে, একই আবেগ নিয়ে রাত জেগে তোমার স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকবো।সেই একই শিহরণ নিয়ে অপেক্ষা করবো তোমার প্রথম হাত স্পর্শের!সেই একই মায়া লুকিয়ে চোখে চোখ রাখবো তোমার।যে মায়ায় তুমি ঘায়েল হতে বাধ্য!

আচ্ছা, তুমিও কি তখন এমন করে আমার জীর্ণ হাড় গোড়ের ‘এই আমি’ তে প্রেমে পড়বে?”

অহি ছলছল চোখে রোদ্দুরের বুকে হাত রেখে বলল,

—“হুঁ!”

বাইরে থেকে শাহিনুরের কন্ঠ কানে আসতে রোদ্দুর হাত ছেড়ে দিল অহির।অহি মুচকি হেসে ইশারায় চা, নুডলস খেতে বলে বাইরে বের হয়ে গেল।

————————-

দুপুরের নামাজের পর পর মিলাদ শুরু হলো।গ্রামের বহু মানুষ এসেছে।দূর দূরান্ত থেকেও অনেকে এসেছে।বদলগাছি গ্রামের পূর্ব পাড়ার মসজিদের ইমাম সাহেব মিলাদের হুজুর।পাঁচ গায়ে হুজুরের নাম ডাক তা শাহিনুরের অজানা নয়!

মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে বাড়ির নিচের পতিত ক্ষেতটাতে।এতদিন ঘাসজাতীয় কিছু ছিল।যা সব গরু খেয়ে ফেলেছে।এখন ফসলবিহীন।সেখানেই চারপাশে ছাউনি তৈরি করে চটের কাগজ বিছিয়ে জায়গা বানানো হয়েছে।শাহিনুরের কাঠের বেঞ্চ, টেবিল আনার ইচ্ছে ছিল।কিন্তু সেগুলোতে তো নামাজ আদায় করা যাবে না।পরে এই ব্যবস্থা!

মিলাদ শেষের দিকে তক্তপোশের উপর বসে থাকা হুজুর মোনাজাত ধরলেন।মোনাজাতে তিনি রোদ্দুরের জন্য দোয়া করলেন।

মোনাজাত শেষে খানাপিনার ব্যবস্থা করা হলো সাদা ভাত,গরুর মাংস,খাসির মাংস, সিদ্ধ ডিম, দই ডালসহ আরো কিছু!কাপড় দিয়ে তৈরি বহির্গমন গেটের সামনে একটা চেয়ারে রোদ্দুরকে বসিয়ে রাখা হলো।একজন একজন করে খাওয়া শেষে রোদ্দুরের মাথায় হাত বুলিয়ে গেল।রোদ্দুর রাগে ফেটে পড়ার মতো অবস্থা!পৃথিবীতে সেই একমাত্র ব্যক্তি হয়তো যার বিয়েতে এসব হচ্ছে।কিন্তু কিছু করার নেই।তার মায়ের কড়া হুকুম।এই নিয়ে রোদ্দুরকে হাজার খানেক মানুষ ছুঁয়ে দিল!

সন্ধ্যার দিকে কাজী ডেকে হৈ হুল্লোড় করে রোদ্দুর আর অহির বিয়ে হয়ে গেল।অহি যখন কাঁদতে কাঁদতে কবুল বলল তখন তার কানে দূর থেকে কোকিলের কুহুকণ্ঠ ভেসে এলো।রাতের বেলা কোকিলের ডাক?সে কি ভুল শুনলো?

——————

রাতের বেলা রোদেলা রুমে ঢুকে দেখল রুম অন্ধকার।সে কি!রুম অন্ধকার কেন?এই রুমটাতেই তো গতকাল সে, ছিনজা আর অহি ঘুমিয়েছিল।রোদেলা অন্ধকার হাতড়ে দেয়াল ধরে সুইচ খুঁজতে নিতে দরজার ছিটকিনি লাগানোর শব্দ কানে আসলো।সে ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,

—“কে?”

সঙ্গে সঙ্গে কেউ একজন তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে নিল।তার গায়ের গন্ধ রোদেলার চেনা।সে থতমত খেয়ে বলল,

—“আপনি?আমাকে একটু বাইরে যেতে হবে।রোদ্দুর এখনো ঘরে ঢোকেনি!ওর আজ বাসর রাত!”

সাদিদ রোদেলার ঘাড়ে চুমু দিয়ে বলল,

—“আ’ম ইন লাভ মিস রোদেলা জান্নাত!আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি!”

রোদেলা ছটফট করতে করতে বলল,

—“ছিনজা কোথায়?আমাকে বাইরে যেতে হবে!”

—“ছিনজা শ্বাশুড়ি মায়ের কাছে থাকবে বলেছে।তুমি আর রুম থেকে বের হতে পারবে না।আজ তুমি সাদিদের হাতে বন্দী।”

রোদেলাকে ছেড়ে সাদিদ সুইচ টিপে লাইট অন করতেই রোদেলা চমকে গেল।কারণ এই রুমটাও ফুলে ফুলে সাজানো।অনিন্দ্য সুন্দর লাগছে পরিবেশটা!একটু ভীতি,একটু অনুভূতি,একটু লজ্জা!সব মিলিয়ে রোদেলা পাগল হয়ে যাচ্ছে।রুমের ডেকোরেশন কি সাদিদ একা করেছে?কেন করেছে?সেজন্যই কি সন্ধ্যার পর থেকে রুমটা লক ছিল?

সাদিদ হাঁটু গেড়ে রোদেলার সামনে বসে পড়তে রোদেলা বাঁধা দিল।মানুষটা তার স্যার!সাদিদ মানলো না।বুক পকেটে থেকে একটা রিং বের করে রোদেলার হাতে পড়িয়ে তাতে চুমু খেল।রোদেলা সরে যেতে চাইতে সাদিদ উঠে দাঁড়িয়ে টেনে ধরলো।ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,

—“তোমার প্রথম দেখার পর থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল বাসর রাতে তোমার সালামের উত্তর দিবো।অবশেষে, পরিশিষ্টে তোমাকে পেয়েছি।আজ সালাম করবে?সালাম করলে আমার সব আনসার পেয়ে যাব!”

রোদেলা ইতি উতি করে দীর্ঘক্ষণ পর ক্ষীণ কন্ঠে বলল,

—“আসসালামু আলাইকুম! ”

সাদিদ মিষ্টি হেসে রোদেলার কপালে চুমু খেয়ে বলল,

—“ওয়ালাইকুম সালাম।”

——————

রোদ্দুর দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকেই সটান দরজার ছিটকিনি লাগাল।তার হাত পাসহ সম্পূর্ণ শরীর মৃগী রোগীদের মতো কাঁপছে।সে শেষ!আজ তাকে কেউ হয়তো বাঁচাতে পারবে না।দ্রুত পাঞ্জাবির পকেট থেকে সাদা রুমালটা বের করে চোখ বেঁধে নিল সে।আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল অহিকে সে বিয়ের সাজে দেখবে না।দেখলেই নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক। বন্দুকের গুলি মিস হতে পারে,কিন্তু আজ অহিকে দেখে তার হার্ট অ্যাটাক মিস হবে না।

তার বুকের ঢিপঢিপ শব্দ ছাপিয়ে কানে ওয়াশরুমের পানি পড়ার শব্দ আসলো।অহি কি ট্যাপটা ভালো করে বন্ধ করতে পারেনি!

সে সামনে হাত বাড়িয়ে এদিক ওদিক হয়ে বলল,

—“ইয়ে মানে অজান্তা আছিস?হাতটা একটু ধরে বেডে বসিয়ে দে তো!”

অহি বসেছিল ফুলের বিছানায়।রোদেলা আপু ভয়ানক সুন্দর করে রুমটা সাজিয়েছে।সে এক হাত ঘোমটা দিয়ে বিছানায় বসে ছিল এই আশায় যে রোদ্দুর ভাই তার ঘোমটা সরিয়ে মুখটা দেখবে।সে শাড়ি পড়েছে।বিয়ের সাজে নাকি তাকে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে।সবাই বলেছে সেটা!কিন্তু রোদ্দুর ভাই তাকে দেখবে না?সে তো এই মানুষটার জন্যই সাজ নিয়ে বসে আছে।

সে উঠে গিয়ে বলল,

—“রোদ্দুর ভাই, এসব কি?চোখ বেঁধে রেখেছেন কেন?”

রোদ্দুর তার চোখ বাঁধার কারণ না বলে বিরক্ত কন্ঠে বলল,

—“রোদ্দুর ভাই কেন শুধু? দাদাভাই, মামাতো ভাই, চাচাতো ভাই,ফুপাতো ভাই, খালাতো ভাই,আম ভাই, জাঁম ভাই, কুত্তা ভাই, বিলাই ভাই সব ভাই বলে ডাক!জগতের যত শব্দ আছে প্রতিটার সাথে ভাই লাগিয়ে দে!যত্তসব!আসছে!রোদ্দুর ভাই?আজকের রাতেও তোর ভাই না বললে চলতো না অজান্তা?”

অহি অবাক কন্ঠে বলল,

—“আপনি আমার সাথে চেঁচিয়ে কথা বলছেন কেন রোদ্দুর ভাই!”

রোদ্দুর হতাশ হলো।নাহ!এই মেয়ে তাকে জীবনেও ভাই বলা বাদ দিবে না।থাক!আজকের রাতে রাগারাগি করে লাভ নেই।ভাই বলুক!যতখুশি বলুক!হাজার বার বলুক!সে সামনে হাতড়ে এগিয়ে যেতেই পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নিল।রোমান্টিক গলায় বললো,

—“অজান্তা!একটু হাতটা ধর না!আমি দু চোখে অন্ধকার দেখছি।প্লিজ!”

অহি উত্তর দিল না।রোদ্দুর বুঝতে পারছে অহি হয়তো মন খারাপ করেছে।সে বেসুরো কন্ঠে বলল,

—“ও বেবি কাম কাম টু মি…..
আমি তোমার স্বামী হলে তুমি স্ত্রী!”

অহি খিলখিল করে হেসে ফেলল।কয়েক পা এগিয়ে এসে রোদ্দুরকে জড়িয়ে ধরলো।তার বুকের ভেতর অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে।মানুষটাকে তার পাশে পেয়েছে।পরিশিষ্টে নিজের করে পেয়েছে।দূরে কোথাও আবারো কোকিলের ডাক শুনতে পেল অহি।যেন সুরে সুরে প্রকৃতির তালে তালে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে যাচ্ছে।সে মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করলো,তার বিবাহিত জীবন যেন ভালোবাসায় পরিপূর্ণ থাকে।রোদ্দুরকে সে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো।

হঠাৎ রোদ্দুর অহিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বাঁধা চোখে ডান হাতটা অহির সারামুখে বিচরণ করলো।অহি মুখটা একটু সরিয়ে বলল,

—“চোখের মধ্যে আঙুল দিচ্ছেন কেন রোদ্দুর ভাই?”

—“ইয়ে মানে তোর ঠোঁট কইরে অজান্তা।একটু চুমু টুমু দিতে চাইলাম।খারাপ ভাবিস না আমাকে!ইয়ে মানে……”

অহি চরম বিরক্তি নিয়ে এক টানে রোদ্দুরের চোখ থেকে বাঁধনটা সরিয়ে ফেলল।রোদ্দুর চোখ খুলে অহিকে বিয়ের সাজে দেখে বড় বড় চোখে বলল,

—“ও মাই গড!কি সাংঘাতিক লাগছে তোকে!দূরে গিয়ে দাঁড়া!”

অহি আরো কাছে এগিয়ে এলো রোদ্দুরের।রোদ্দুরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে মুখটা নিচু করলো তার।তারপর ফট করে রোদ্দুরের ঠোঁটে চুমু খেল।

—————-

#পরিশিষ্ট

‘পাগলের কারখানা’ র নাম পাল্টে “পরিশিষ্ট ভবন” রাখা হয়েছে বছর চারেক হলো!এই বিগত চার বছরে তেমন কিছু পরিবর্তন হয়নি।শুধু নতুন দুটো সদস্য যুক্ত হয়েছে।রোদেলা-সাদিদের ছেলে আর রোদ্দুর-অহির মেয়ে।

রোদ্দুর-অহির পিচ্চি মেয়েটার আজ জন্মদিন।দুই বছরে পা রাখবে সে।সেই উপলক্ষে পরিশিষ্ট ভবনে বড়সড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।দুপুরে কেক কাটা হয়েছিল।ঘনিষ্ঠরা বাদে সবাই খাওয়া শেষ করে চলে গেছে।কিন্তু সমস্যা হয়েছে একটা ছোট্ট বিষয়ে।ফকির পাওয়া যাচ্ছে না।

শাহিনুর কাটা মাছের মতো ছটফট করছে।সে গত পরশু দিন গুলিস্তানের পীরসাহেবের কাছে গিয়েছিল।তার কলিজার টুকরো নাতনিটার জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া চাইতে।পীরসাহেব তাকে বলেছে অনুষ্ঠান শেষে যেন পাঁচ-সাত জন ফকির মিসকিন খাওয়ানো হয়!রোদ্দুর গেছে সেই দুপুরে ফকির খুঁজতে।কিন্তু বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল তার ফেরার নাম নেই!

শাহিনুর ধপ করে সোফায় বসে বলল,

—“কুটি আমার মাথায় আইস ব্যাগ চেপে ধর!”

কুটি রান্নাঘর থেকে আইস ব্যাগ হাতে দৌঁড়ে এসে শাহিনুরের মাথায় ধরলো।তারপর সান্ত্বনা দেয়ার ভঙ্গিতে বলল,

—“বড় মা!বেশি টেনশন কইরেন না তো!ঢাকাত পয়সা আর ফকিন্নি বৃষ্টির ফোঁটার মতো অগুনতি।যেনে হেনে পাওয়া যায়।”

—“তাহলে রোদ্দুর এখনো আসছে না কেন?”

—“আসবে গো বড় মা!”

কুটির কথা প্রমাণ করার জন্যই হয়তো রোদ্দুর সঙ্গে সঙ্গে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল।আজ অনুষ্ঠান উপলক্ষে দরজা খোলা।কিন্তু রোদ্দুরের দিকে নজর পড়তেই শাহিনুর চমকে উঠলো।রোদ্দুরের থুতনিতে ব্যান্ডেজ,এক চোখ ফোলা,কপালের কাছে জখম হয়ে আছে।তাকে দেখে শাহিনুর দৌঁড়ে গিয়ে বলল,

—“বাপ,কি হইছে তোর?এক্সিডেন্ট করছিস?”

রোদ্দুর মায়ের হাত ধরে সোফায় বসে বলল,

—“মা চিন্তা করো না তো।সামান্য মারামারি হয়েছে একজনের সাথে।হালকা চড় থাপ্পড়।”

—“কি কান্ড!কার সাথে?”

—“আজকাল ঢাকা শহরে ফকির পাওয়া দূরুহ দেখছি।ময়লা টিশার্টের গলার কাছে বেশ কয়েক জায়গায় ফুটো দেখে এক লোককে ফকির ভেবে বাসায় ডেকেছি আর সে কি রাগারাগি।তার নাকি ঢাকায় বাড়ি-গাড়ি আছে।প্রচুর টাকা আছে।ফকির বলায় ক্ষেপে যায় আর আমার সাথে মারামারি হয়।আমি তো আর সিনেমার হিরো না যে খালি মেরে আসবো।নিজেও খেয়েছি।তাছাড়া লোকটার গায়ে প্রচুর শক্তি।মতিজান কোথায় মা?”

মতিজান রোদ্দুর আর অহির মেয়ের নাম।এই নাম পীরসাহেব রেখেছে।শাহিনুর পৃথিবী উল্টে গেলেও নাতনির নাম অন্য কিছু রাখবে না।তবে সে বলেছে তারা চাইলে স্কুলে অন্য নাম দিতে পারবে।কিন্তু বাড়িতে সবাইকে মতিজান বলেই ডাকতে হবে।

মতিজানকে ঘুম পাড়িয়ে অহি নিচে নেমে রোদ্দুরকে দেখেই চমকে যায়।রোদ্দুর ইশারায় তাকে শান্ত হতে বলে।তারপর অহিকে ডেকে উপরে উঠে যায়।

—“বড় মা!ফকির আইছে।”

কুটির চিল্লানিতে শাহিনুর সদর দরজার দিকে তাকালো।একে একে আটজন ফকির ঢুকলো।তার পেছনে সাদিদ তার দুই বছরের ছেলে সায়েমকে কোলে নিয়ে আর ছিনজার হাত ধরে ভেতরে ঢুকলো।

—“মা,ওদের নিয়ে পার্কে ঘুরতে গিয়ে এদের পেলাম আর নিয়ে আসলাম।”

সাদিদের কথায় শাহিনুর প্রচুর খুশি হলো।ফকির গুলোকে ডাইনিং এ বসতে বলে সাদিদকে বলল,

—“তুমি অনেক ভালো কাজ করেছো বাবা।এই রোদেলা সাদিদকে আজ নিজ হাতে খাইয়ে দিবি!”

সাদিদ লজ্জা মিশ্রিত চোখে সোফায় গিয়ে বসলো।ফজিলা আর কুটি সবাইকে খেতে দিল।শাহিনুর ঘুরে ঘুরে তদারকি শুরু করলো।হঠাৎ মধ্য বয়স্ক এক লোক প্লেট থেকে হাত সরিয়ে বলল,

—“বাড়িত রান্না করা পোলা খামু না।কাচ্চি খামু!”

শাহিনুর বুকে হাত দিয়ে চিৎকার করে বলল,

—“কুটি আমায় ধর!আমায় ধর!এ কি যুগ আসলো?ওরে কেউ কাচ্চি আনার ব্যবস্থা কর!”

রাতেরবেলা ছোট্ট করে গানের আসর বসানো হলো।বেসুরো কন্ঠে যে যেমন পারলো সে তেমনই গাইলো।ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ুয়া অপূর্ব বলল,

—“এবার রোদ্দুর ভাইয়া আর সাদিদ ভাইয়া ডুয়েট গাইবে।”

রোদ্দুর গান গাইতে নিতেই অহি তার হাতে চিমটি কেটে ফিসফিস করে বলল,

—“রোদ্দুর ভাই,তোমার এই বেসুরো কন্ঠ আমি বাদে আর কাউকে শুনাবে না প্লিজ!”

—“অজান্তা রে!রাতে তোর খবর আছে।তুই আগে রুমে চল!স্যরি,তুমি আগে রুমে চলো বউ!”

অহি হাসতে নিয়েও হাসলো না।প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সাদিদ রোদেলার দিকে চেয়ে আড়ালে তার হাত চেপে ধরে বলল,

—“অ্যাইসা লাগা মুঝে প্যাহলে দাফা
তানহা মে হো গেয়ি ইয়ারা
হোও….অ্যাইসা লাগা মুঝে প্যাহলে দাফা
তানহা মে হো গেয়ি ইয়ারা
হু পারেসান সি…..”

হঠাৎ শাহিনুর এক ধমক দিয়ে বলল,

—“স্টপ!থেমে যাও!গানের কি শ্রী!এই কুটি!তুই গা তো…মায়াবন বিহারিণী, হরিনী……”

সবাই একযোগে হেসে উঠলো।সেই ফাঁকে অপূর্ব ক্যামেরায় চোখ লাগিয়ে “পরিশিষ্ট ভবনের” সবার হাস্যোজ্জ্বল দূর্দান্ত একটা ছবি ক্লিক করে ফেলল।আগামী প্রতিটা সকাল, প্রতিটা দিন তাদের এভাবে হাসিমুখে কাটুক!

★সমাপ্ত★

আসসালামু আলাইকুম।অবশেষে গল্পটি শেষ হলো।সবাই অনেক অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন গল্পটাকে।সবার প্রতি কৃতজ্ঞ!পরিশিষ্ট ভবনের সবার মতো আপনাদেরও প্রতিটা সকাল, প্রতিটা দিন দূর্দান্ত কাটুক।

পরিশেষে, ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে