পরিত্যাক্ত প্রাসাদ পর্ব-০৪

0
301

গল্প: #পরিত্যাক্ত_প্রাসাদ ৪র্থ পর্ব
লেখক: #হাসান

সামনের দিকে চোখ পড়তেই রাকিব দেখতে পায়, একটা ছায়া তার দিকে হেঁটে আসছে। রাকিব ভয়ে শিউরে উঠে। আর ভাবতে থাকে।
তারমানে সেদিনের রাতটা কোনো স্বপ্ন ছিলো না। সেটা সত্যি ছিলো। সত্যিই বাচ্চাটা তার প্রতিশোধ নিতে ফিরে এসেছে। তাকে পুড়িয়ে মারার জন্য শাস্তি দিতে এসেছে। এসব ভাবতে ভাবতেই বাচ্চাটি রাকিবের সামনে এসে দাঁড়ালো। রাকিব বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে দেখে বাচ্চাটা দেখতে সেদিনের মতো কুৎসিত নয়। একদম পরীর মত সুন্দর।

বাচ্চাটি রাকিব কে বললো: বাবা ও বাবা তুমি সেদিন মায়ের জানাজা না পড়িয়েই চলে গেলে কেন??

রাকিব ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে জিজ্ঞেস করলো কে তুমি?? আর সেই ভয়ংকর মেয়েটা কোথায়??

বাচ্চাটি বললো: আমিই তো তোমার সেই ভয়ংকর মেয়ে। আমাকে যদি আগুনে পুড়িয়ে না মারতে। তাহলে আমিও দেখতে এইরকম সুন্দর হতাম। কিন্তু তুমি তো আমায় বাঁচাতে দিলে না। এই পৃথিবীর মুখ দেখার আগেই আমায় মেরে ফেললে।

বাচ্চাটির কথা শুনে রাকিব ভয়ে কাঁপছিলো। কারন আজকে বাচ্চাটার কথা বলার ভঙ্গি অন্যরকম। বাচ্চাটা কে অনেক রাগী মনে হচ্ছে। আর মুহূর্তের মধ্যেই বাচ্চাটির চেহেরাটা ভয়ংকর হতে শুরু করলো। বাচ্চাটার চোখ দুটো আগুনের মতো লাল হয়ে গেলো। চোখ থেকে র*ক্ত বেরুচ্ছিলো। আর বাচ্চাটার শরীর থেকে অদ্ভুত ভাবে র*ক্ত পড়তে শুরু করলো। বাচ্চাটির শরীরের বিভিন্ন অংশের মাংস খসে পড়া শুরু করল। ভয়ে রাকিবের আত্মাটা বেরিয়ে যায় যায় অবস্থা। এতো ভয়ংকর চেহারা, যা বর্ণনা করা অসম্ভব।

বাচ্চাটি রাগী সুরে বললো: কেন মেরেছিলে আমায়?? কি দোষ করেছিলাম আমি?? কেন পৃথিবীর মুখ দেখার আগেই খুন করলে আমায় ?? আমি কি জোর করে মায়ের গর্ভে এসেছিলাম?? নাকি তোমাদের অবৈধ মেলামেশার কারনে আমার জন্ম হয়েছিলো??

আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি ভুল করেছি।

যদি আমাকে সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিতে না পারো। তাহলে কেন মায়ের গর্ভে এনেছিলে আমায়??

এটা ভুল করে হয়ে গিয়েছিলো।

যদি এটা ভুলে হয়ে থাকে। তাহলে বিয়ে করলে না কেন??

আমি নীলাকে বিয়ে করলে আমার মান-সম্মান শেষ হয়ে যেতো। তাই আমি এই অন্যায় করেছি। আমায় ক্ষমা করে দাও।

কেন তুমি জানতে না?? বিয়ের আগে কোনো মেয়েকে স্পর্শ করা হারাম। তুমি কি জানতে না বিয়ের আগে কাউকে স্পর্শ করা অন্যায়। তাহলে কেন স্পর্শ করেছিল আমার মাকে??

আমার ভূল হয়ে গেছে। আর এতে আমার একার দোষ নেই। নীলারও দোষ আছে। সে রাজি না হলে, এসব কিছুই হতো না।

ভুল করেছিলে তোমরা দুজন। তার শাস্তি আমি কেন পেলাম?? আমি তো কোনো ভুল করিনি? তোমাদের অবৈধ মেলামেশার কারণে আমার জন্ম। সেজন্য শাস্তি পাওয়া উচিত ছিলো তোমাদের দুজনের। কিন্তু শান্তি পেলাম আমি। এমনটা কেন করলে?? কেন করলে এমনটা।

আমাকে ছেড়ে দাও। আমাকে মেরো না।

এবার শাস্তির পাওয়ার জন্য তৈরি হও। তোমার ভুলের শাস্তি। তবে আমি নিজের হাতে তোমাকে শাস্তি দেবোনা। তুমি নিজেই নিজেকে শাস্তি দিবে। ঐ ছোড়াটা হাতে নাও।

না আমি নেবো না। আমি মরতে চাই না।

রাকিব না চাইতেও, রাকিবের পা এগিয়ে চলছে ঐ ছোড়াটার দিকে। রাকিব নিজেকে আটকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা। রাকিবের হাত পাশে থাকা ছোড়াটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রাকিব তার হাত কে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু রাকিব তার হাত কে নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না। রাকিবের হাত পাশে থাকা ছোড়াটা তুলে নিলো।

বাচ্চাটি আবারো বললো: এবার এই ছোড়াটা তোমার গলায় চালাও। রাকিবের হাত ধীরে ধীরে রাকিবের গলার দিকে এগিয়ে আসছে। রাকিব ভয়ে আতংকে ঘামছিলো। নিজের হাত কে অনেক চেষ্টা করেও, সে আটকাতে পারছে না। রাকিব তার গলায় ছুরি চালাতে যাবে। তখনই কেউ রাকিবের হাত ধরে ফেললো। রাকিব ঘার ঘুরিয়ে তার বাবাকে দেখতে পেলো। আর সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে রাকিব।

★★
রাকিবের বাবা রাকিবের মুখে পানি ছিটিয়ে রাকিবের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুতেই রাকিবের জ্ঞান ফিরছিলো না। তাই রাকিবের বাবা রাকিব কে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেদিন রাকিবের অবস্থা আরো বেশি খারাপ হয়ে পড়ে। রাত পেরিয়ে সারাদিন চলে যায়। কিন্তু রাকিবের জ্ঞান ফিরেনি। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করে, অবশেষে রাকিবের জ্ঞান ফিরাতে সক্ষম হয়। রাকিব জ্ঞান ফিরতেই বলতে থাকে: মা আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও। নয়তো ঐ বাচ্চাটা আমাকে মেরে ফেলবে।

রাকিবের মা রাকিব কে জিজ্ঞেস করে: কীসের বাচ্চা?? কোথাকার বাচ্চা তোকে মারতে চায়??

রাকিব বলে: ঐই পরিত্যাক্ত প্রাসাদের একটা বাচ্চা আমাকে মারতে চায়। তোমরা আমাকে বাঁচাও।

রাকিব কে এইরকম উত্তেজিত দেখে ডাক্তাররা রাকিব কে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। আর রাকিবের মা বাবাকে জিজ্ঞেস করে গতরাতে কী হয়েছিলো??

রাকিবের বাবা বলে: গতরাতে আমি রাকিব কে দেখতে রাকিবের রুমে জানালা দিয়ে উকি দেই। আর দেখি রাকিব সেদিনের মতো কাঁপছে। আর বলছে আমাকে মেরো না। আমাকে মেরো না। আমাকে ছেড়ে দাও। আর একটু পর ফল কাটার একটা ছুরি নিয়ে রাকিব তার গলা কাটার জন্য হাত বাড়াচ্ছিলো। আর তখনই আমি রুমে ঢুকে রাকিবের হাত ধরে ফেলি। আর রাকিব সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

ডাক্তাররা রাকিবের সব ঘটনা শুনে। রাকিবের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখে, রাকিবের মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে বিকল হতে শুরু করেছে।
তাই ডাক্তাররা রাকিবের মা বাবাকে জানিয়ে দেয় : রাকিব কে সুস্থ করতে হলে, যত দ্রুত সম্ভব রাকিব কে মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। কারন রাকিব কে ২৪ ঘন্টাই দেখেশুনে রাখতে না পারলে, রাকিবের জীবনের ঝুঁকি আছে।

রাকিব তাদের মা বাবার একমাত্র সন্তান। তাকে সুস্থ করতে তারা সব করতে প্রস্তুত ছিলো। তাই তারা রাকিব কে মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি করাতে রাজি হয়ে যায়‌।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় কি জানেন #হাসান ভাই??
রাকিব কে ডাক্তার ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। অথচ রাকিব তখন ঘুমন্ত ছিলো না। রাকিব তার মা-বাবা আর ডাক্তারের সব কথা শুনতে পাচ্ছিলো। কিন্তু চোখ খুলে কিছু বলতে পারছিলো না। রাকিব তখন বলতে চাচ্ছিলো, সে পাগল হয়নি। তার মাথায় কোনো সমস্যা নেই। নীলার পেটে থাকা সেই সন্তান রাকিব কে মারতে চায়। কিন্তু রাকিব তা বলতে পারে নি।

★★
রাকিবের মা বাবা রাকিব কে মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। রাকিব সেখানে সেখানে অনেকদিন ছিলো। কিন্তু ডাক্তাররা তার কোনো উন্নতি করতে পারছিলো না।

আমি তিনমাস পর রাকিব কে দেখতে হাসপাতালে যাই। রাকিব আমায় দেখেই বলে উঠে: বন্ধু তুই এসেছিস। আমাকে এখান থেকে নিয়ে চল। এই পাগলদের সাথে থাকতে থাকতে আমি নিজেই পাগল হয়ে যাচ্ছি।

আমি রাকিব কে বললাম: আর কয়েকদিন এখানে থাক। তুই সুস্থ হলেই আমি তোকে এখান থেকে নিয়ে যাবো‌।

তখন রাকিব আমায় বলে: নাহিদ আমি পাগল না। আমি তোকে সব খুলে বলবো। তবুও তুই আমাকে এখান থেকে নিয়ে চল।

কি বলবি আমাকে??

আমি নীলাকে খুন করেছি। আর নীলার পেটে থাকা সেই বাচ্চা আমাকে মারতে ফিরে এসেছে।

মানে??

তখন রাকিব আমায় তার সাথে নীলার কি সম্পর্ক ছিলো। সে নীলাকে কীভাবে খুন করেছে। আর এতোদিন রাকিবের সাথে কি কি ঘটেছে? আমায় সব খুলে বললো।

জানেন হাসান ভাই, আমি রাকিবের এসব কথা শুনে আশ্চর্যের চরম শিখরে পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমি তখন ভাবতেছিলাম রাকিব নিজের গার্লফ্রেন্ড নীলাকে
কীভাবে খুন করতে পারলো। তাও আবার অন্তরসত্তা গার্লফ্রেন্ড কে। একজন মানুষ কি এতোটা খারাপ হতে পারে।
আর তখনই আমার মনে পড়ে, রাকিবের তো মাথা খারাপ। তাই হয়তো এসব উল্টাপাল্টা বলছে। কারন তখনও আমি রাকিবের এসব কথা বিশ্বাস করিনি। আমি রাকিব কে শান্তনা দিলাম যে, আমি খুব শ্রীঘ্রই রাকিব কে এখান থেকে নিয়ে যাবো।
তাই বলেই আমি সেখানে থেকে চলে আসছিলাম। তখনই কেউ আমার হাত টেনে ধরলো। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কোনো পাগল তো আবার আমায় টেনে ধরলো না। আমি পিছনে তাকিয়ে দেখলাম একজন ওয়ার্ড বয় আমার হাত টেনে ধরেছে। জিঙ্গেস করলাম কিছু বলবেন??

হ্যা আপনাকে কিছু বলবো। রাকিব সম্পর্কে আপনার অনেক কিছু জানা প্রয়োজন।

জানেন হাসান ভাই, ঐ ওয়ার্ড বয় আমাকে যা বললো। তাতে আমার গা শিউরে উঠলো! আমি কয়েক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।
চলবে…..??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে